#মুহূর্তে
পর্ব-৩
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা
বাস এসে থেমেছে। আবিরকে বকা দিয়ে কবিতা নিজে সারা রাস্তা ঘুমিয়ে কাটিয়েছে। আবির ঘুম থেকে উঠায় কবিতাকে। কবিতা যখন ঘুমঘুম চোখে উঠে দাঁড়িয়ে আড়মোড়া ভাঙে তখনই সে অনুভব করে তার হাত যেয়ে কাউকে লেগেছে। সে নির্বাক হয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখে সে তীর্থ। সাথে সাথে সে হাত সরিয়ে নেয় কিন্তু ক্ষমা চায় না। অন্যকেউ হলে চাইলেও তীর্থের কাছে সে ক্ষমা চাইতেই পারে না। কিন্তু তার পরিবর্তে আবির বলল, “সরি ব্রো আমার বোনের চেহেরার সাথে একটু মাথায়ও সমস্যা আছে। প্লিজ মাইন্ড করো না।”
কবিতার চোখ তো ছানাবড়া। তার ভাই অচেনা কারও সামনে তার মর্যাদার এমন বারোটা বাজাতে পারে না। সে আবিরের হাতে মারে জোরে।
“ভাইয়া এইসব ফাজিল টাজিল ছেলের সামনে কী বলছ তুমি?”
“তো তুই বাসার বাহিরেও এমন বান্দরগিরি করলে কী বলব? স্বাভাবিক মেয়েরা কী এমন বিহেভিয়ার করে।”
“তাই না? দাঁড়াও বড় ভাইয়াকে কল দিয়ে যদি তোমার গার্লফ্রেন্ডের কথা না বলছি আমার নামও কবিতা না।”
তারপর সে তীর্থের দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটে নিজের ব্যাগ নিয়ে নিচে নেমে যায়।
কবিতা যাবার পর আবির হেসে তীর্থের দিকে তাকিয়ে বলে, “ওর কথায় কিছু মনে করবেন না। ওর মাঝে এখনো কিছুটা বাচ্চামি রয়ে গেছে। কথা আগে বলে পরে ভাবে। আর ধন্যবাদ আমার বোনকে তখন যে রক্ষা করলেন। আমি আবির, আপনার সাথে দেখা করে ভালো লাগল।”
আবির হাত বাড়ায় তীর্থের দিকে হ্যান্ডশেকের জন্য। তীর্থও হাত মিলিয়ে বলে, “আমার নাম তীর্থ। আর আমি কিছু মনে করি নি। ডোন্ট ওয়ারি।”
কবিতা বাস থেকে নেমে আশেপাশে তাকাতেই দেখতে পেল একটু দূরেই তাহিরা দাঁড়িয়ে আছে একটি ছেলের সাথে। ছেলেটাকে সে চিনে। তার তাহিরা আপু ছবি দেখিয়েছিলো ছেলেটার। যদিও তাহিরা মানতে রাজি নয় কিন্তু কবিতার সন্দেহ আছে ছেলেটাকে তার বোন পছন্দ করে।
কবিতা দৌড়ে যেয়ে জড়িয়ে ধরে তাহিরাকে, “আপু কত মাস পড়ে দেখা তোমার সাথে। এত্তগুলা মিস করেছি তোমাকে।”
তাহিরা কবিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, “আমিও। কত বড় হয়ে গেছিস কিন্তু তোর বাচ্চামিটা আর গেল না।”
কবিতা তাহিরাকে ছেড়ে উৎসুক গলায় বলে, “আপু জানো আজ সেই লেভেলের ড্রামা হয়েছে বাসে।”
“তাই? কি হলো?”
“বাসায় যেয়ে খেতে খেতে বলব নে। আগে ধ্রুব ভাইয়ার সাথে পরিচয় করাও।”
এই কাজটা তাহিরার করা লাগলো না। ধ্রুব নিজের হাত এগিয়ে দিলো কবিতার দিকে, “নাম তো জানোই কেবল সাথে ভাইয়া লাগানো লাগবে না। এত সুন্দরী মেয়েদের মুখে ভাইয়া শুনলে বুকে ব্যাথা হয়।”
তাহিরা ধ্রুবর দিকে তাকায় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে। আদেশের ভঙ্গিতে বলে, “ও আমার ছোট বোন। ওর সাথে এইসব কাহিনী করলে তোর খবর আছে।”
“আচ্ছা বাবা রাগ করছিস কেন? তোর বোন মানে আমার বোন সিম্পল।” তারপর সে কবিতার দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমার জন্য স্পেশাল ছাড়। তুমি আমাকে অবশ্যই ভাইয়া বলে ডাকতে পারো। সুন্দরী বোন থাকাটাও মন্দ নয়।”
কবিতা হাসলো। সে তাহিরার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল, “দুলাভাইয়ের কথাগুলো কিউট তো। আপু তোমাদের জুটি সেই লাগে।”
“মাইর খাবি তুই।”
“আরে ভাই তুই এইখানে?” ধ্রুবর কন্ঠ শুনে কবিতা ও তাহিরা দুইজনই তাকায় ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব এগিয়ে যায়।
কবিতা দেখতে পায় ধ্রুব যেয়ে জড়িয়ে ধরে তীর্থকে। মুহূর্তে সে মুখ বানায়। ঝাঁজালো গলায় বলে, “ধ্রুব ভাইয়া এই বেয়াদবটাকে চিনে কীভাবে?”
“তুইও তীর্থকে চিনিস না’কি?” তাহিরা উৎসুক গলায় প্রশ্ন করে। কবিতা অবাক হয়ে তাহিরা দিকে, “তুমি এই বেয়াদব ছেলেকে চিনো?”
“ধ্রুবর বন্ধু।”
“দুলাভাই ভালো কাওকে পাইলো না বন্ধু বানানোর জন্য? আস্ত বেয়াদব এই ছেলেটা।”
“তুই তীর্থকে চিনিস?”
“আরো বাসে অর্ধেক ড্রামা তো ওর সাথেই হইল। ফাজিল পোলা। মনটা চাইতেছিলো ওই পোলার সাথে ওরে গালে কয়টা চটাং চটাং করে মেরে দেয়।” এক নিশ্বাসে বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে কবিতা। রাগে ফুলছে সে। তাহিরা কি হয়েছে তা জিজ্ঞেস করতে চাইলো কিন্তু ধ্রুব তীর্থের সাথে আসায় কোনো প্রশ্ন করলো না।
ধ্রুব এসে তাহিরাকে বলল, “ফুলটুসি কোয়েন্সিডেন্স দেখেছিস? আমি তো জানতামও না ও কুমিল্লা গেছে। আর তীর্থ আজ আসবে তাও এই বাসে। কবিতা পরিচিত হও, ও আমাদের বন্ধু তীর্থ।”
কবিতা তীর্থের দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকাল। আবার পরের মুহূর্তে ভেংচি কেটে মুখ ফিরিয়ে নিলো। ধ্রুব তা দেখে অবাক। এমন সময় লিমন বলে, “ভাই তীর্থ ভাই আর এই আপুর আগেই পরিচয় হয়ে গেছে। শুধু পরিচয়টা ভালোভাবে হয় নি।”
“তা বুঝাই যাচ্ছে।”
আবিরও আসে এর মাঝে। তাহিরাকে দেখে বলে, “ও’মা তাহু তুই দেখি এত বড় হয়ে গেছিস।”
তাহিরা আবিরকে দেখে উৎসুকভাবে বলে, “ভাইয়া বড় তো মনে হবেই শেষ দুইবার গেলাম তুমি তো ছিলেই না। বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়েছিলে। আমাকে মনে রেখেছ এইতো অনেক।”
আবির হেসে তাহিরার গাল টেনে বলে, “শেষবার যখন দেখেছি তখন বাচ্চাদের মতো লাগতো তোকে আর এখন কত ম্যাচিউরড লাগছে। আর সুন্দরও।”
ধ্রুব চোখ দুটো ছোট ছোট করে তাকিয়ে থাকে দুইজনের দিকে। বিড়বিড় করে বলে, “ভাই খোঁজ খবর নিলে দূরে থেকে নিবি। এত গালে হাত দেবার কি আছে?”
ধ্রুব দ্রুত যেয়ে আবির ও তাহিরার মাঝে দাঁড়ায়। তারপর আবিরের সাথে পরিচিত হয়ে তার ব্যাগটা নিজে নিয়ে বলে, “ভাই এক কাজ করেন আপনি আমাদের বাসায় থাকেন। এমনিতেও তাহিরদের দুটো রুম আপনাদের সমস্যা হবে।”
তাহিরা বিস্ময় নিয়ে তাকায় ধ্রুবর দিকে। আগে তো তাদের মাঝে এই বিষয়ে কথা হয় নি।
“না, আমাদের কোনো সমস্যা হবে না। আমি আর কবিতা দাদীর রুমে ঘুমাব এই দুইদিনের জন্য।”
“কবিতা আজই এলো আর এখনই ওকে কষ্ট দিবি তুই? একদম না। আবির ভাই আমার সাথে থাকুক। এমনিতেও আজ রাতে ম্যাচ আছে। দেখতে পারব সবাই মিলে। কি বলেন ভাই?”
আবির হেসে উওর দেয়, “আইডিয়া খারাপ না।”
ধ্রুব দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল। এতক্ষণে বোধহয় তার জানে জান এসেছে। সে হাসিমুখে তীর্থের দিকে তাকিয়ে বলে, “ভাই তুইও আয়। এমনিতেও আন্টি তোর মামার বাসায়। হুদাই বাসায় যেয়ে আবার রান্নাবান্না নিয়ে ঝামেলা করবি।”
তীর্থ গম্ভীর গলায় বলল, “প্রয়োজন নেই। তোদের অকারণে কষ্ট হবে।”
“আরে না কীসের কষ্ট? তাহিরা আজ সেই মজার বিরিয়ানি রান্না করছে না খেলেই মিস ভাই।”
“তোদের মেহমান এসেছে, আমি গেলে ঝামেলা আরও বাড়বে।”
কবিতার এই মুহূর্তে তীর্থকে দুই চোখে সহ্য হচ্ছে না। এর উপর সে যাবে তাদের সাথে? বাসের জার্নিটা কী কম ছিলো? কবিতা বিরক্তির সুরে বলল, “ভাইয়া দেখেন আপনার বন্ধু গেলে যাবে, না গেলে এইখানে বসে থাকবে। এইটা আমার দেখার বিষয় না। আমার পেটে ইন্দুররা তুম তুম ধিরুম ধুম ভুড়ুম নাচছে। আমি বাসায় যেয়ে গোসল দিয়ে এই ইন্দুরের নাচ বন্ধ করব। তাই আপনার বন্ধুকে বলেন আসলে আসতে না আসলে আমি আপুর সাথে চলে যাই।।”
তীর্থ সে মুহূর্তে কবিতার কথা শুনে প্রভাবিত হলো কিন্তু কবিতাকে কিছু বলল না।
.
.
বাসায় এসে সবার আগে তাহিরার দাদীর সাথে দেখা করে নেয় আবির ও কবিতা। ভীষণ লম্বা জার্নি করায় সবার খিদে লেগে গেছে তাই দেখা হবার পরই খাবার খেতে বসে যায় তীর্থ ও আবির। আর কবিতা যায় গোসল করতে। খাবার রান্না মজা হওয়ায় তাহিরার বেশ প্রশংসা করে আবির।
তাহিরা রান্নাঘরে আরও খাবার নিতে গিয়েছিলো। এইবার ধ্রুবও তার পিছনে আছে। ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি বের করে বলে, “প্রশংসা শুনে তো আকাশে উড়ছিস।”
তাহিরা হেসে জিজ্ঞেস করল, “তোর কি হলো? আর তুই হঠাৎ করে ভাইয়াকে নিজের বাসায় থাকতে বললি কেন?”
“তো কি সে তোর সাথে এক বাসায় থাকবে?”
“থাকতেই পারে, আমার ভাই হয়।”
“আপন ভাই না, কাজিন হয়। আর আজকাল কাজিনদের মাঝেও প্রেম হয়।”
কথাটা শুনে মেজাজ খারাপ হয় তাহিরার। সে ঝাঁজালো গলায় বলল, “দেখ ধ্রুব এইসব মেন্টালিটি নিয়ে আমার সাথে কথা বলতে আসবি না। আবির ও কবির ভাইয়া আমার আপন ভাইয়ের মতোই। আর ভাইয়ারা সবসময় আমাকে কবিতার মতোই ট্রিট করেছেন।”
তাহিরাকে রাগে দেখেই ধ্রুব সচেতন হয়ে গেল। সে তাহিরার কাছে যেয়ে তার দুই কাঁধে হাত আবদ্ধ করে বলে, “আমার ফুলটুসিটা রাগ করে না। আমি তো এমনিতেই বলেছিলাম। এখন তুই এত সুন্দর হলে আমার কি দোষ। মনে হয় সবাই তোর প্রেমে পড়ে যাবে। ভার্সিটির একেকটা ছেলে যেভাবে তোর পিছনে লেগে থাকতো ভাবতেই মেজাজ খারাপ হয় আমার। মন হয় একেকটাকে ধরে মেরে তক্তা করে দেই। এত গা জ্বলে।”
“কেন? আমার প্রেমে পড়লে তোর কি?”
আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে রইলো তাহিরা ধ্রুবর দিকে। হয়তো এইবার ধ্রুব তাকে উওর দিবে এই আশায়।
কিন্তু ধ্রুবর উওর শুনে আবারও নিরাশ হয় তাহিরা, “অফকোর্স আমার মেজাজ খারাপ হবেই। তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।”
উওরটা শুনে ভীষণ বিরক্ত দেখায় তাহিরাকে। সে ধ্রুবকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে বলে, “তাহলে বেস্ট ফ্রেন্ডের মতোই থাক। আজ হোক বা কাল কেউ আমাকে বিয়ে করে তো নিয়ে যাবেই। যা তুই চেয়েও থামাতে পারবি না।”
তাহিরা বিরক্তি নিয়ে ফিরে রান্না বাড়ার জন্য। কিন্তু ধ্রুব তার বাহু ধরে তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো। ধ্রুব চোখ দুটো তীক্ষ্ণ। তার চোয়াল শক্ত। তার রাগ মুখে স্পষ্ট ফুটে আছে। সে তাহিরার চোখে চোখ রেখে কঠিন গলায় বলল, “কার এত সাহস আছে যে তোকে আমার কাছ থেকে দূরে নিয়ে যাবে? একদম খুন করে ফেলব তাকে। তুই শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত আমার সাথে থাকবি, আমার পাশে থাকবি।”
তাহিরা বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে থাকে ধ্রুবর দিকে। তার দেহ কেঁপে উঠে। সে ধ্রুবর এত কাছে যে ধ্রুবর নিশ্বাসের প্রতিটি ছোঁয়া সে অনুভব করতে পারছে। এই নিশ্বাসের উষ্ণ ছোঁয়া তার হৃদয়ের স্পন্দন বাড়িয়ে দিলো। তার দেহের ঘ্রাণে মাতোয়ারা হতে ইচ্ছা করছে। সে মুচকি হাসি দিলো। হাত দিয়ে ধ্রুবর গালে আলতো করে ছুঁয়ে নরম গলায় বলল, “তুই এমন কেন? না তোর সাথে থাকতে ইচ্ছা হয়, আর না তোকে ছাড়া থাকতে পারি।”
“তোর আমার সাথে থাকতে ইচ্ছা হয় না? কেন?” প্রশ্নটা করার সময় ধ্রুব গলা উদাসীন হয়ে আসে। কিন্তু তাহিরার ঠোঁটের হাসি মলিন হয় না। সে স্পষ্ট উওর দেয়, “তুই আমাকে খুব কষ্ট দিস এই কারণে।”
“আমি? অসম্ভব। আমি তোকে কীভাবে কষ্ট দিতে পারি?”
তাহিরা উওর দেয় না। সে নিজেকে ধ্রুবর বাহুডোর থেকে ছাড়িয়ে খাবার বাটিতে বাড়তে থাকে। উওর না পাওয়ায় ধ্রুব আবারও জিজ্ঞাসা করে, “তুই আমার কোনো ব্যবহারে কষ্ট পেয়েছিস?”
তাহিরা থেমে যায় কিন্তু ফিরে তাকায় না ধ্রুবর দিকে, “কিছু প্রশ্নের উত্তর বাক্যে নয়, সময়ের সাথে পেতে হয়।”
#মুহূর্তে
পর্ব-৪
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা
“কি প্রশ্নের উত্তর আপি?” হঠাৎই প্রশ্নটা আসে দরজার কাছ থেকে। কবিতা ভেতরে ঢুকছে। তাহিরা মৃদু হেসে বলল, “কিছু না। জলদি আয় তোর জন্য খাবার প্লেটে দিচ্ছি।”
“তুমি যাও আমি আসছি।”
তাহিরা যাওয়ার পর কবিতা কুটকুট করে যায় ধ্রুবর কাছে। তারপর মৃদুস্বরে বলে, “আপনারা দুইজন একা এইখানে কী করছিলেন ভাইয়া?”
“দুইজন একা কীভাবে হয়?”
“আরে ভাইয়া শব্দে যেয়েন না। আমার ফিলিংসটা বুঝেন। মানে কেবল আপনি আর আপু, দুইজনে শুধু রান্নাঘরে।”
“কারণ অন্যসবাই বাহিরে খাওয়া-দাওয়া করছে আর আমরা খেয়ে গেছিলাম।”
কবিতার উৎসুক ভাবটা মুহূর্তে হাওয়া হয়ে গেল। সে মুখ বানিয়ে বলল, “বুঝলাম। এত বছরেও আমার বোন কেন সিঙ্গেল। শুনেন ভাইয়া ফ্রী এর একটা এডভাইস দেই। কিন্তু এরপর এডভাইস লাগলে গিফটের পরিবর্তে এডভাইস নিতে পারবেন। সোজাসাপ্টা বললে আপু আমার বারবিকিউ করতে পারে তাই বেঁকাভাবে বলি, আমার বোনের মতো ফুল প্যাকেজ আর কোথাও পাওয়া যাবে না। যেমন সুন্দরী, তার থেকে বেশি ভালো, তেমন সব কাজে পটু, এর উপর পড়াশোনাতেও এক নাম্বার, আর আপুর রান্নার কথা মনে করলেই মুখে পানি চলে আসে। যে তার জামাই হবে তার ভাগ্য খুলে যাবে। বুঝছেন?”
“হ্যাঁ তা তো জানিই।”
“কচু জানেন। বুঝলাম এইখানে থেকে আমার বহু কাজ করতে হবে। কাজ করার জন্য শক্তি লাগে আর শক্তির জন্য ইয়ামি ইয়ামি খাবার। তাই আমি গেলাম খেতে।”
কবিতা যেমন তুফানের মতো এসেছিলো তেমনি চলেও গেল। কিন্তু তার কথা-বার্তা কিছুই মাথায় ঢুকলো না ধ্রুবর। এই নিয়ে সে মাথাও ঘামাল না। সেও গেল ডাইনিং রুমে।
কবিতা ডাইনিং টেবিলে যেয়ে আবারও তীর্থকে দেখে মুখ বানায়। খাবার মুখে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে, “আপু তোমার হাতে জাদু আছে। আমি ছেলে হইলে চোখ বন্ধ করে তোমাকে বিয়ে করে ফেলতাম।”
তাহিরা হেসে কবিতার মাথায় টোকা মেরে বলে, “পাগল।”
“সত্যি বলছি। আবির ভাইয়া আর ধ্রুব ভাইয়া বলো তো অনেক মজা হয়েছে না?”
দুইজনে মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো। কবিতা তীর্থের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করতে নিতেই থেমে যায়। তারপর খোঁটা মেরে বলে, “থাক আর কাউকে না জিজ্ঞেস করি তারপর দেখা যাবে তার খাবারে ডিস্টার্ব হয়েছে বলে উঠে আমাকেও মাইর না দেয়।”
কথাটা শুনে তীর্থ তাকায় কবিতার দিকে। এই মেয়েটা সকাল থেকে এই এক কথা নিয়ে তার পিছনে কেন লেগে আছে সে বুঝতে পারছে না। বিরক্ত হলেও সে কিছু বলল না।
কিন্তু তাদের কথা-বার্তা শুনে মিদুল ঠিকই উঠে গেল। সকালে তাকে ঘুম পাড়ানোর তিন ঘন্টা পরই উঠে যায় তারপর কান্নাকাটি শুরু। তার মা’কে দেখবে। বহু কষ্টে তার কান্না থামিয়ে আবারও ঘুম পড়ায় তাহিরার দাদী। এখন আবার মিদুলের কান্নার কন্ঠ শুনে ভয় পেয়ে যায় তাহিরা। তাকে আবার চুপ করানোটা কঠিন হবে। এখনও ওর মা’য়ের হুশ ফিরে নি। তাহলে জিজ্ঞেস করলে কি বলবে সে?
মিদুল কান্না করতে করতে দাদীর রুম থেকে বেরিয়ে আসে। কবিতা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “আরে আরে আপু তুমি আমাকে না বলে বাচ্চা পয়দা করে নিলে?”
আবির বলে, “এত আজেবাজে কথা কীভাবে বলিস? বাচ্চাটা ওদের প্রতিবেশির। ওর মা হাস্পাতালে তাই তাহিরা নিয়ে এসেছে।”
“হাস্পাতালে কেন?” কবিতার প্রশ্ন শুনে ধ্রুব অপেক্ষা করে তাহিরা মিদুলকে ভেতরে নিয়ে যাওয়া। ভেতরে নিয়ে যাওয়ার পর সে উওর দেয়, “সুসাইড করার চেষ্টা করছে।”
“কেন?”
” তার জামাই অন্য আরেক জায়গায় বিয়ে করে বসে আছে তা সহ্য করতে পারে নাই।”
তীর্থ তরকারি নিচ্ছিলো। কথাটা শুনতেই তীর্থ জোরে চামচটা বাটিতে রাখে। এতটা জোরে রাখতে শুনে সবার দৃষ্টি তার উপর আসে। নিজেকে স্বাভাবিক দেখানোর চেষ্টা করল সে। কিন্তু সে জানে তার চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। যে রাগ সে কিছুতেই প্রকাশ করতে চাইছিলো না। সে তাকাল তার সামনে বসা মেয়েটির দিকে। মেয়েটি তার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। তীর্থ ভাবলো সকাল থেকে যেহেতু মেয়েটি তার পিছনে হাত ধুঁয়ে পড়ে আছে সেহেতু এইবারও কিছু একটা বলবে। কিন্তু তাকে ভুল প্রমাণ করে মেয়েটি খাবার ছেড়েই উঠে গেল৷ বেসিন থেকে হাত ধুয়ে তাহিরার দাদীর রুমে গেল।
কিছু মুহূর্ত কাটে। ছোট বাচ্চাটির কান্নাও বন্ধ হয়ে আসে। তার একটু পরই কবিতা বাচ্চাটাকে কোলে করে এনে নিজের পাশের চেয়ারে বসায়। আর তাকে নিজের প্লেট থেকে খাওয়ানোর চেষ্টা করে। মিদুল মানা করায় কবিতা বলে, “কি বলেছিলাম আমি খাওয়া শেষ হলে তুমি আর আমি একসাথে মিলে চকোলেট আইস্ক্রিম খেতে খেতে ডোরেমন দেখব। না খেলে কিন্তু না চকোলেট আইস্ক্রিম দিব, আর না ডোরেমন দেখব।”
মিদুল ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে কবিতার দিকে। তারপর তোঁতলিয়ে বলে, “তৎপর তেলব।”
মিদুলের কথাটা শুনে খিলখিলিয়ে হেসে উঠে কবিতা, “ঠিকাছে তারপর আমরা খেলব।”
“তৎপর মা’র কাতে যাব।”
“ঠিকাছে এরপর মা’য়ের কাছে যাব। এবার খাবে?”
এরপর মিদুল চুপচাপ খেতে শুরু করে।
তাহিরা এসে দাঁড়িয়েছিলো ধ্রুবর পাশে। সে বলে, “গতকাল রাত থেকে খায় নি। এত চেষ্টা করলাম তবুও না। আর কবিতা এত সহজে মানিয়ে নিলো।”
আবির হেসে বলল, “বাচ্চারা ভালো মতো বুঝে বাচ্চাদের কীভাবে লোভ লাগিয়ে কাজ করাতে হয়। নিজেও চকোলেটের ঘুষ নিয়ে সব কাজ করে আর আধাদিন কার্টুন দেখতে থাকে।”
“ভাইয়া ভালো হচ্ছে না কিন্তু।”
কবিতা অহেতুক বিরক্তি দেখিয়ে আবিরের দিক থেকে দৃষ্টি সরাতেই তার চোখ পড়ে তীর্থের উপর। তীর্থ তার দিকেই তাকিয়ে আছে। তার ঠোঁটের কোণে এঁকে আছে এক চিলতে হাসি। এই প্রথম তীর্থকে হাসতে দেখলো কবিতা। হাসলে তাকে বেশি ভালো দেখায়। একটু বেশিই।
কবিতা ভেবেছিলো এই বুঝি তীর্থ তার দৃষ্টি সরিয়ে নিবে। সে সরায় না। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। অবশেষে কবিতা নিজেই অস্বস্তিতে তার দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।
.
.
“তুই তীর্থের সাথে এমন খোঁটা মেরে কথা বলছিলি কেন?” তাহিরা জিজ্ঞেস করে কবিতাকে। সে কবিতার কাপড়গুলো বের করে নিজের আলমারিতে রাখছে। আর কবিতা বিছানায় বসে খেলছিলো মিদুলের সাথে। রাতের খাবার খেয়ে তীর্থ, আবির ও ধ্রুব চলে যায় ধ্রুবর বাসায়। আর দাদীও রাতের খাবার খেয়েই ঘুমিয়ে যায়।
তাহিরার কথা শুনে কবিতা তাকায় তার দিকে। উওর দেয়, “তোমাকে না একটু আগে বললাম সে বাসে কি করেছে।”
“বলেছিস তো। কিন্তু ও সম্ভবত তোর সাহায্যের জন্যই ছেলেটাকে মেরেছিলো। ধ্রুব প্রায়ই বলে তীর্থ কখনো নিজের মনের কথা অন্যের সাথে শেয়ার করে না। এছাড়া ওর সাথে অযথা খারাপ ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। ও চুপচাপ থাকলেও, ওর কাজগুলো সুবিধার না।”
“সুবিধার না বলতে?”
“ভার্সিটিতে পলিটিক্স হয় প্রায়ই। এর মধ্যে মারামারিও হয় এবং এইসব কাজে তীর্থ জড়িত। যদিও মেয়েদের সাথে কখনো খারাপ কিছু করে নি। মাঝেমধ্যে সাহায্যও করেছে অন্যের। তবুও সচেতন থাকতে দোষ কি?”
এই মুহূর্তে তাহিরার কথা শুনে কবিতার মনে পড়ে দুপুরে তীর্থ তার দিকে কিভাবে তাকিয়ে ছিলো। গভীর দৃষ্টিতে।
কবিতাকে কোথাও হারিয়ে যেতে দেখে তাহিরা বলে, “ভয় পাস না। ধ্রুবর পুরনো বন্ধু, আমি ওকে বলে রাখব তোর কথা। ছেলেটা বখাটে এবং গুন্ডামী করে, কিন্তু মনের এত খারাপ না।”
“হুঁ” কবিতা উঠে দাঁড়িয়ে বলে, “আমি মিদুলকে নিয়ে বারান্দায় ঘুরে আসি।”
বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলো তীর্থ। ভেতরে ধ্রুব ও আবির মিলে ক্রিকেট ম্যাচ দেখছে। তীর্থ বারান্দায় আসে সিগারেট খাওয়ার জন্য। বারান্দায় ঢুকতে ঢুকতে সে ঠোঁটের মাঝে সিগারেট রেখে লাইটার দিয়ে সিগারেট জ্বালিয়ে গভীর টান দেয় এবং নিশ্বাসের সাথে সিগারেটের ধোঁয়া হাওয়ায় উড়িয়ে দেয়। বারান্দায় আসার পর কিছু শব্দ শুনতে পায় সে। পাশে তাকিয়ে দেখে বারান্দায় কবিতা দাঁড়ানো। তার কোলে মিদুল নামক বাচ্চাটি। সে খেলছিলো বাচ্চার সাথে।
তীর্থ তাকিয়ে রয় অপলক কবিতার দিকে। রাতের আঁধারে চাঁদের মৃদু আলো এসে পড়ছে কবিতার উপর।
কবিতা….
যে-ই এই মেয়ের নাম কবিতা রেখেছে সে একদম সঠিক নাম দিয়েছে তার। হ্যাঁ, এটা সত্যি কবিতার দেখতে কবিদের মনের মায়াবতীর মতো নয়, কিন্তু মেয়েটাকে দেখলে কবি হতে ইচ্ছে হয়। তার কাজলমাখা চোখ দেখলে কবিতা লিখতে ইচ্ছা হয়। তার হাসি দেখলেও সে হাসির শব্দে ছন্দ গড়তে মন চায়। তার মনের পবিত্রতা দেখে গীতিকার হতে ইচ্ছা হয়।
আফসোস হচ্ছে তীর্থে সে কাব্য লিখতে পারে না। তার এমন কোনো গুণই নেই।
আফসোস!
সিগারেটের গন্ধ পেয়ে কবিতা আশেপাশে তাকায়। দেখে তীর্থ পাশের বারান্দায় দাঁড়ানো। তার হাতে একটি জ্বলন্ত সিগারেট। এই দৃশ্য দেখে মেজাজ খারাপ হয় কবিতার। সে নিজের নাকের সামনে হাওয়ায় হাত নাড়ায়। তারপর মিদুলকে বলে, “মিদুল বুঝলে আজকাল মানুষের মধ্যে এতটুকুও সভ্যতা নেই যে আশেপাশে মানুষের সিগারেট থেকে সমস্যা হতে পারে। মানে নিজেও মরবে, আশেপাশের সবাইকে মারবে।”
বলেই সে চলে যায় নিজের রুমে।
তীর্থ হাসে কবিতার কথা শুনে। কথাটা তাকে খোঁটা মেরে বলা হলেও তার ভালো লেগেছে। মেয়েটা অন্যরকম।
.
.
সকাল নয়টা বাজে। সারারাত মিদুল ঘুমাতে দেয় নি তাহিরা ও কবিতাকে। জেদ ধরেছে তার মা’য়ের কাছে যাবে। তাহিরা শিল্পা আক্তারকে কল করে জানতে পায় তার মা’য়ের হুশ এসেছে। তাই কবিতা ও তাহিরা দুইজনই মিদুলকে নিয়ে যাচ্ছে হাস্পাতালে। ধ্রুবকে কল করেছিলো তাহিরা। তার খবর নেই।
হাস্পাতালের সামনে রিকশা থেকে নামার পর তাহিরা বলে, “তোরা এইখানে কিছুক্ষণ দাঁড়া। আমি সামনের হোটেল থেকে মিদুলের জন্য কিছু নাস্তা নিয়ে আসি।”
“নিজের ছোট বোনেরও তো চিন্তা করো। একতো সারারাত জেগে ছিলাম, এর উপর পেটেও কিছু যায় নাই।”
“ঠিকাছে বাবা নিয়ে আসবো। তোরা দাঁড়া এইখানে। আশেপাশে কোথাও যাস না।”
কবিতা মিদুলের হাত ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো রাস্তার একপাশে। আর ঘুমে হাই তুলছিলো বারবার। তাহিরা যাওয়ার একটুখানি পরই মিদুল কবিতার জামা ধরে টানতে শুরু করল, “তোলে উতব…তোলে উতব।”
“ভাই তোকে সারারাত কোলে নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে আমার কোমর শেষ। আরেকবার তুললে ভেঙেই যাবে। তোর তাহিরা আপু খাবার নিয়ে আসলে তার কোলে উঠিস।”
“না তোলে উতব।” কান্না করতে শুরু করে মিদুল। কবিতা বুঝতে পারে না সে কি করবে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে তাদের সামনে একটি গাড়ি দাঁড় করানো। বুদ্ধি আসে তার মাথায়। সে মিদুলকে কোলে তুলে বলে, “আরও মজার জায়গায় বসাই তোকে আয়।”
কবিতা মিদুলকে নিয়ে গাড়ির উপর বসায়। মিদুলের কান্না বন্ধ হয়েছে দেখে হাফ ছেড়ে বাঁচে। তৃষ্ণা পেয়েছে তার ভীষণ। ব্যাগ থেকে পানি বের করে পানি পান করতে যাবে তখনই তার সামনে একটি লোক দাঁড়িয়ে বলে,”এক্সকিউজ মি, আপনি আপনার বাচ্চাকে যেখানে সেখানে বসাতে পারেন না।”
কবিতার পানি মুখে ছিলো। সে কথাটা শুনতেই পিক করে মুখ থেকে পানি ফেলে দেয়। পানি যেয়ে পড়ে তার সামনে দাঁড়ানো লোকটার উপর।
“হোয়াট দ্যা হেল! আর ইউ ম্যাড অর সামথিং? চোখ নেই আপনার?”
লোকটার কথা শুনে মাথা গরম হয়ে যায় কবিতার। সে কোথায় পিছনে থাকবে। তাই সেও ঝাঁজালো গলায় বলল, “আপনার তো চোখ আছে। দেখছেন না পানি পান করছিলাম। তারপরও মাঝখানে এসে কথা বলতে হবে তাই না?”
“আপনি আপনার বাচ্চাকে আমার গাড়িতে বসিয়েছেন তো আমি এসে বলব না?”
“তো আপনার গাড়িতে বসালাম দেখে কি আপনার গাড়ির ভর্তা হয়ে গেছে না’কি কোনো তুফান আসছে?”
“আমি এখন গাড়ি পার্ক করতে নিয়ে যেতাম। ভাগ্যিস দেখেছি বাচ্চাটাকে, নাহলে এক্সিডেন্ট একটা হলেই যেত।”
“এই’যে চোখ মাথায় নিয়ে হাঁটেন? দেখছেন না ধরে রেখেছি।”
লোকটার চোখে মুখে বিরক্তির ভাব। সে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলল, “আপনি আপনার বেবিকে গাড়ির উপর থেকে সরান। আমি গাড়ি পার্ক করব।”
“আসতাগফিরুল্লা নাউজুবিল্লাহ আজ পর্যন্ত একটা বয়ফ্রেন্ড বানাতে পারলাম না আর আপনি আমার বাচ্চা কইরা ফেলছেন? এইটা আমার বাচ্চা না। আমি নিজেই তো একটা বাচ্চা, আমার বাচ্চা কীভাবে হবে? ওর নাম মিদুল। ওর মা এই হাস্পাতালে এডমিট তাই দেখা করাতে আনলাম।”
কথাটা শুনতেই লোকটা মুখ বানালো। লোকটাকে বিরাগ দেখাল, “আপনার বেবি হোক অথবা অন্যকারো আমার কিছু আসে যায় না। আপনি কেবল ওকে এই গাড়ি থেকে সরান।”
“তো এত খ্যাঁচখ্যাঁচ না করে সুন্দর মতো বললেই তো হয়।”
লোকটা এরপরও কিছু বলতে চাইলো কিন্তু নিজেকে কান্ট্রোল করল। আর শান্ত গলায় বলল, “মেডাম প্লিজ এই বেবিটাকে আমার গাড়ি থেকে সরান।”
কবিতা এইবার তাকে কোনো পাত্তা না দিয়ে মিদুলকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়। লোকটা ওয়ালেট থেকে একটি কার্ড কবিতার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে, “এইটা রাখুন।”
“দেখেন আমি জানি আমি অনেক সুন্দর এইজন্য যেকেউ দেখলে প্রেমে পড়ে যায়। আপনিও দেখতে ঠিকঠাক, কিন্তু তাই বলে আমি যার-তার সাথে কথা বলি না।”
লোকটা কবিতার হাত ধরে তার হাতে কার্ড দিকে বলল, “এইটা পাগলখানার কার্ড। আপনার অনেক প্রয়োজন।”
কবিতা থ খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর রাগে উঁচু স্বরে বলল, “তুই পাগল। তোর চোদ্দগুষ্টি পাগল।”
লোকটা আর সেখানে দাঁড়ায় না। কবিতার কথার উওর দেয় না। সে গাড়ি নিয়ে হাস্পাতালের ভেতরে ঢুকে যায়।
কবিতা বিড়বিড় করে বলল, “নিজে একটা সাইকো আর আমাকে পাগল বলে গেল। আরেকবার দেখা হলে তার খবর করে দিব।”
চলবে….
[