মেঘফুল ফুটলো মনে পর্ব -০৯

#মেঘফুল_ফুটলো_মনে
#পর্ব – ০৯
#লেখনিতে – আবরার আহমেদ শুভ্র

–তানিম আমি আপাতত আমাদের সম্পর্কের ইতি টানতে চাই এখানে৷ চাই না আমি এমন সম্পর্ক! যেখানে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই আমায় নিয়ে সেখানে থাকাটা নিতান্তই বেমানান।

তানিম তার মায়ের যাওয়ার পরপরই নিজের রুমের দিকে চলে যায়। রুমে ঢুকতেই অথৈয়ের কাছ থেকে এমন কথা আশা করে নি। অবাক চোখে অথৈয়ের দিকে তাকিয়ে রইল সে। যে মেয়ে কিছুদিন পূর্বেও নিজের স্ত্রীর অধিকার নিয়ে তার সাথে অভিমান করেছিলো আজ সেই তার কাছ থেকে ইনডিরেক্টলি ডিভোর্স চাইছে্। ব্যাপারটা হজম হয় না তানিমের। অবিশ্বাসের সুরে বলে উঠল সে,
–আর ইউ কিডিং উইথ মি? অথৈ এটা মজা করবার সময় নয়। তুমি জানো আমি কিছু বিষয়ে ভীষণ আপসেট। তবুও এই সময়ে এমন মজা… মাঝপথেই তানিমকে আটকে দিলো অথৈ।

–মজা আমি একদমই করছি না তানিম। যেটা বলছি সেটাই তেঁতো হলেও সত্য। আমি ডিভোর্স চাই আপনার থেকে। পারছি না আমি আপনার সাথে এই অসম্মানজনক সংসার করতে। যেখানে ভালোবাসা নেই সেখানে থাকাটা জীবন্ত লাশের চেয়েও অধম। মুক্তি দিন আমায়!

শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল অথৈয়ের উপর। চুপ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো সে। উপুড় হয়ে শোয়ে তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠল,

–মুক্তি চাও তো! ওকে, আমার সন্তান জন্ম হওয়ার আগমূহুর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে তোমায়। ব্যস এটুকুই চাওয়া। তারপরই মুক্তি পেয়ে যাবে।

এবার এমন কথা আশা করেনি অথৈ। সে ভেবেছিল তানিমকে হয়তো এমন কথা বললে সে হয়তো নিজের ভুল বুঝে তাকে আবারও আপন করে নেবে। কিন্তু তার কাছ থেকে সে এমন শান্ত স্বরে বিষাক্ত জবাব ক্ষনিকের জন্যেও ডিজার্ভ করে নি। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওপাশ ফিরে শোয়ে পড়ে সে। আর নিঃশব্দে চক্ষুজল বিসর্জন দেয়। কিন্তু তার নাক টানার শব্দ ঠিকই কানে আসছিলো তানিমের। খারাপ লাগা শুরু করে তার। কি করবে সে বুঝতে পারছে না। দোটানায় পড়ে গেল এবার। মন বারংবার তাদের পবিত্র সম্পর্কের কথা মনে করিয়ে দেয়। নিজেকে এবার ছন্নছাড়া লাগছে তার।

কিছুক্ষণ পরে পাশ ফিরে অথৈয়ের দিকে তাকালো সে। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেছে সে৷ অতিরিক্ত কাঁদার কারণে চোখদুটো বেশ ফুলে গেছে তার। ভীষণ মায়া হলো তার। শরীরের মধ্যে মাতৃ ছাপ স্পষ্ট দেখতে পায় সে। পরক্ষণেই মন ভালো হয়ে যায় তার।
______

নিস্তব্ধ রাত্রি পেড়িয়ে দেখা দিলো শুভ্র ও নির্মল কিরণের। ভোরের শুভ্র প্রহরে দেখা দিলো উত্তাপ রৌদ্রময়ী! পূব আকাশে জ্বলজ্বল করছে গোল ঢাকনার মতো রৌদ্রময় সূর্যি মামা। চারদিকে শতশত পাখির আনাগোনা সাথে মনে মাতানো কিচিরমিচির শব্দ। একেবারে মনে ভুলানোর মতো পরিবেশ। এই দেয়াল প্রাচীরের শহরে এইটাই অনেক কিছু মানুষের জন্যে। যেটা সচরাচর চোখে পড়ে না কোথাও।

কিছুক্ষণ আগেই ঘুম থেকে উঠেছে তানজিম। আজ তার প্রখর ঘুম হয়েছে। স্বাভাবিকতো সে এমন দেরীতে কখনও উঠে না। আজ তার ব্যতিক্রম হলো। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতেই তানিমের মুখোমুখি হলো সে। পাশ কাটিয়ে দ্রুত সেই স্থান থেকে সরে এলো সে। চাই না কোনো পিছুটান আর। এখন এমনিতেই বেশ ভালো আছে সে।

তানজিমের এমন করে পাশকাটিয়ে চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে স্ফীত হাসলো তানিম। মনে মনে বলে উঠলো,

–কখনও যদি একটুখানি মনে পড়ে তাহলে ক্ষমা করে দিস আমায়৷ জানি না কখনও নিজেই তোর কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে পারি কিনা।…. বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের রুমে চলে যায় তানিম।

দ্রুত কোনোমতে ব্রেকফাস্টটা শেষ করে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে ছুট দেয় তানজিম। আজ অনেক বেশিই লেট হয়ে গেছে তার। তাই কোনো রকম তাকিয়ে ক্লাসের দিকে ছুটে যেতেই কিছু একটার সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে গেল সে। আবারও কোনোভাবে উঠে দাঁড়ালো সে। সামনের লোকটার দিকে না তাকিয়েই স্যরি ভাই বলে ক্লাসের দিকে ছুটে চলে গেলো সে। আর যে ব্যক্তির সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলো সেই তানজিমের যাওয়ার দিকে একনজর তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলে উঠল,

–অনেক খোঁজার পরে অবশেষে পেলাম তোমায়। তাও কেমন কাকতালীয়ভাবে! ইট’স জাস্ট এ্যা মিরাকল!.. বলে অদ্ভুত হাসলো ব্যক্তিটি। অতঃপর আনন্দের সাথে নিজ কাজে চলে গেলো সে।
_____

আজ আবারও ফুয়াদের জন্য দাড়িয়েছে সারাহ আর তানজিম। ফুয়াদ নিজেই বলছে যেন তারা ভার্সিটির ক্লাস শেষে কোথাও না যায়। তার আদেশই যেন শিরোধার্য। অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু ফুয়াদের আসার কোনো কথায় নেই। তানজিম অধৈর্য হয়ে এদিকে তাকিয়েই রইল। রাগ লাগছে তার ভীষণরকম। দু’জনেই হঠাৎ চমকে উঠলো অপরিচিত কারো কণ্ঠে! সেদিকে তাকাতেই বড়সড় ধাক্কা খেল সে। কারণ তার সামনে মৃন্ময় দাঁড়িয়ে। কিন্তু ব্যাপারটা মোটেও বুঝতে পারলো না সারাহ। তানজিমের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে জিজ্ঞেস করল মৃন্ময়,

–কেমন আছেন তানজিম? আর এখানে অনেকক্ষণ ধরেই দাঁড়িয়ে আছো দেখছি! কারো জন্য কি ওয়েট করছো? কোনো ফ্রেন্ড!

তানজিম কোনো কথা বলছে না দেখে সারাহ ওর হয়ে উত্তর দিলো,

–ভাইয়া একসাথে এত্তগুলা প্রশ্ন করলে কোনটার উত্তর দিবে ও আগে? তার চেয়ে সময় নিয়ে একটা একটা প্রশ্ন করলেই তো হয়।

–আপনি কে? ঠিক চিনতে পারলাম না আপনাকে।.. সারাহ-র দিকে তাকিয়ে বলল মৃন্ময়।

–ওকে চেনার প্রয়োজন নেই তোমার মৃন্ময়। তবে আমি বলছি, ও আমার খালাতো কাজিন। আমার ছোট খালার মেয়ে। আর কিছু লাগবে?

হঠাৎ তাদের মাঝে ফুয়াদ সেখানে উপস্থিত হয়েই কথাটা মৃন্ময়ের উদ্দেশ্যে বলে উঠল। কিন্তু সেই সময় সেখানে ফুয়াদের উপস্থিতি নিয়ে বেশ বিরক্ত হলো মৃন্ময়। সেটা তার চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে। বিরক্ত নিয়ে কপাল কুঁচকালো খানিকটা তার। তা দেখে মনে মনে হাসি পেলো তানজিমের। তবুও ভদ্রতার সাথে বলল মৃন্ময়,

–ওহ, ভাইয়া আপনি হঠাৎ এখানে, তাও এই সময়ে?

–ওদের নিতে এসেছি। তা তুমি এখানে কেন?

–আসলে ভাইয়া আমি আজই তানজিমদের ভার্সিটিতে ফিজিক্সে লেকচারার হিসেবে জয়েনিং করেছি।

–ওহ ভালো। গ্রেট জব! তা তানজিমদের ভার্সিটি না বলে ভার্সিটির নামও তো বলতে পারতে। বাই দ্যা ওয়ে, টিচার হয়েছে ভালো কথা তবে শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষক হিসেবেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করো। অন্য কাজে জড়িত হয়ো না যেটা তোমার মানহানীর পর্যায়ে পরবে! ডু ইউ গেট মাই পয়েন্ট?

মাথা নেড়ে সায় দিলো সে। আর ফুয়াদ মৃন্ময়ের রিয়াকশন দেখে স্ফীত হাসলো। সে বুঝতে পারলো মৃন্ময় হয়তো তানজিমকে পছন্দ করে। কিন্তু সেটা কখনোই সম্ভব নয়। সম্ভব হলেও কখনোই সেটাকে সম্ভব করতে দিবে না সে। অতঃপর তাদের নিয়ে হাটা দিলো তার গাড়ির দিকে।

মৃন্ময় তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। আর মনে মনে বিড়বিড় করে বলে উঠল,

–যতোই আপনি আমাকে তানজিমের কাছ থেকে দূরে সরাতে চান না কেন তাকে আমি নিজের করবোই। যাকে আমি প্রথম দেখাতে ভালোবেসেছি তাকে কখনও হারাতে দিবো না। মৃন্ময় যেটা চাই সেটা নিশ্চিত নিজেরই করে। এট্ এনি কোস্ট! জাস্ট ওয়েইট এ্যা ফিও ডেইজ!.. বলে ভিলেন হাসি দিয়ে নিজের গন্তব্যে চলে গেলো সে।

#চলবে ~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here