মেঘের আড়ালে চাঁদ পর্ব ২৭

#মেঘের আড়ালে চাঁদ❤
#writer: মহসিনা মুক্তি
#পর্বঃ সাতাশ

-” এই ব্যাটা এই ওঠ! এতো বেলা পন্তো মানষে ঘুমায়? সারারাত কি করিস? এই উঠ নাইলে পানি মারমু মুখে।” বৃদ্ধার কথায় চোখ মুখ কুঁচকে হালকা চোখ খুলে তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে ফেলে, তারপর উপুড় হয়ে শুয়ে পাশ থেকে আরেকটা বালিশ মাথার ওপর দিয়ে বলে

-” উফফ! সাতসকালে ডাকছো কেন? আমি ঘুমাবো ডিস্টার্ব করো না।”

-” ওই তোর কোন দিক দিয়া সাতসকাল মনে হয়? চুল ছিঁইড়া ফেলমু এমনে বিছনায় পইড়া থাকলে। উঠ! উঠবি না তো? খাঁড়া পানি নিয়া আসি।” বৃদ্ধা পান চিবাতে চিবাতে ওয়াশরুমে গিয়ে মগ ভর্তি পানি নিয়ে এসে মুখের ওপর ছুঁড়ে মারে। এতে রাফসান ঝাঁকি দিয়ে হুড়মুড় করে উঠে পড়ে। সে সহ তার বালিশ ভিজে গেছে পানিতে। রাফসানের মেজাজ যা খারাপ হলো বলার বাইরে। ঘন্টা খানিক আগেই সে ঘুমিয়েছে আর এখন তাকে এইভাবে কে উঠালো? সাহস তো কম না।

-” হোয়াট দা হেল! সাহস কি করে হয় আমার গায়ে পানি ফেলার? চড়িয়ে দাঁত… ” রাফসানের কথা অসম্পূর্ণই থেকে যায় সামনে তার দাদিকে দেখে। তার দাদি পান চিবুচ্ছে আর রাগী ভাবে রাফসানের দিকে তাকিয়ে আছে। এতে রাফসান আরো বিরক্ত হলো। এই খিটখিটে বুড়ির তো বিকালে আসার কথা ছিল তাহলে এখন কি করে? ইশশ তার জীবনটা এখন শেষ হয়ে যাবে। বুড়ি ভয় দেখালেও ভয় পায় না উল্টো ইমোশনাল ব্লাকমেইল করে বাপের কথা তুলে। ওফফ!

-” এই ছ্যামড়া তুই কি কইলি? কারে চড়াইতে চাস তুই? চড় কারে কয় চিনিস তুই? আবুলের ঘরের আবুল আয় চড় চিনায় দি। এতক্ষণ বিছানায় থাকা লাগে ক্যান? আইছি কখন একটা মানুষ আশেপাশে দেহি না। মানুষ থাকে এখানে? একটা মশাও পাওয়া যায় না। কেমনে থাকিস এতো বড় বাড়িতে একা একা? বয়স তো কম হইলো না কই বিয়া কর, কানে তুলে না আমার কথা। সারাদিন মারামারি নিয়া পইড়া থাকে। আমি আইছি এইবার তোরে বিয়া দিয়া তারপর যামু।” রাফসানের দাদি রোমানা চৌধুরী বললেন। রাফসান গেঞ্জি গায়ে দিয়ে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে বলে

-“উফফ! বুড়ি কি শুরু করছো? আমাকে একটু ঘুমাতেও দিবা না শান্তিতে? আর আমি বিয়ে করবো না ভুলে যাও ওটা।” বলে ওয়াশরুমের দরজা আটকে দেয়। আর রোমানা চৌধুরী দরজার কাছে গিয়ে দরজায় লাথি দিয়ে বলে

-” তুই বুড়ি কারে কইলি? ওই বেয়াদপ বাইর হ। বুড়ি তোর নানি আমি হমু ক্যান? আর বিয়া তুই করবি তোর ঘারেও করবো। তাড়াতাড়ি বাইর হয়ে নিচে আয় দুপুর পন্তো শুয়ে থাকে না খায়ে।”

রোমানা চৌধুরী নিচে চলে যায়। মাথার অর্ধেকের বেশি চুল পেকে গিয়েছে কিন্তু তিনি নিজেকে বুড়ি মানতে নারাজ। বয়স হলেও গায়ের চামড়া ততোটা কুঁচকায় নি। এখনও চেহারা অনেক টলটলে। আগে যে অনেক সুন্দরী ছিল তা উনাকে দেখেই বোঝা যায়। প্রচন্ড শক্ত মনের অধিকারী তিনি। সেজন্য জীবনে এত কিছু ঘটে যাওয়ার পরও নিজেকে সামলে রেখেছে, ভেঙে পড়েনি কখনো। ছেলে, নাতির এতো সম্পদ থাকা স্বত্তেও তিনি গ্রামের বাড়ি থাকেন, একটা মাঝবয়সি মহিলাকে নিয়ে। নিজের দেখাশোনা, কাজ নিজেই করেন। রাফসান তাকে এখানে থাকতে জোর করলেও তিনি থাকে না। কিন্তু প্রতিমাসেই এখানে আসে। তার কথা বউ হয়ে আসা পযন্ত থেকে তিনি ওই বাড়িতে থেকেছেন, মায়া পড়ে গিয়েছে। কত সুখ দুঃখের স্মৃতি রয়েছে তার সে বাড়ি ঘিরে। ভালবাসার মানুষের ছোয়া রয়েছে এসব ছেড়ে সে অন্য কোথাও যাবে না। আর গেলেও তা কিছুদিনের জন্য তারপর আবার সেই গ্রামে ফিরে যায়। কিন্তু এবার এখানে বেশি সময় নিয়েই থাকবেন। তার নাতির ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করে তারপরই যাবেন।

রাফসান শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে দাদির কথা শুনে মনে মনে হাসে। সে মুখে যতই উল্টা পাল্টা বলুক আর বিরক্ত হোক না কেন সে তার দাদিকে প্রচন্ড ভালোবাসে। এই একটা মানুষের জন্য সে এখনো টিকে আছে। তাকে সবসময় আগলে রেখেছে। দিনে পুরো পৃথিবীর কাছে সে নির্দয়, আবেগহীন, হিংস্র হলেও রাতের বেলায় নিজেকে অসহায়, ভঙ্গুর, দূর্বল লাগতো, মনে হতো এ পৃথিবীর অতল গহ্বরে সে তলিয়ে যাবে। নিস্তব্ধতা ঘিরে ধরতো তাকে চারপাশ দিয়ে। তখন কাছে থাকলে এই মানুষটিই তার সাহস যোগাতো, তাকে আগলে রাখতো। আর দূরে থাকলে ফোন করে এমন কথা বলত যে রাফসান ছলছল চোখে হেসে দিত শব্দ করে। নিস্তব্ধ অন্ধকার রাতে সে হাসির শব্দ প্রতিধ্বনি হয়ে তার কাছেই আবার ফিরে আসতো। রাফসান মাঝে মাঝে অবাক হয় তার দাদিকে দেখে। এতকিছুর পরেও ভেঙে না পড়ে তাকে সামলাতো। সে জানতো মেয়েরা কোমল হয়, একটুতেই ভেঙে পড়ে কিন্তু তার দাদিকে দেখে তার সে ধারনা বদলে গেছে। মেয়েরা কোমল হলেও তারা বেশিরভাগই প্রচন্ড ধৈর্যশীল হয়, পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে পারে। যেমন তার দাদি নিজের কষ্ট ভুলে তাকে সামলিয়েছে। সে জানে এবার তার দাদি এতসহজে ভুলবে না। তাকে বিয়ে দিয়েই যাবে এই চিন্তা করছে। কিন্তু রাফসান বিয়ে করতে চায় না। ‘বিয়ে’ শব্দটা কিছু মানুষের জন্য প্রিয় মানুষকে কাছে পাওয়ার আনন্দ, একরাশ ভালোলাগার অনুভূতি হলেও তার কাছে শুধুই বিরক্তি। অবশ্য কোনো একসময় তারও ভালোলাগার অনুভূতি ছিল। সেও তো তার প্রিয় মানুষকে বিয়ে করতে চেয়েছিল, কিন্তু… রাফসান দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সময় বদলেছে, ভালোলাগা বদলেছে, এমনিকি সে নিজেও বদলে গেছে। আগে যা ভালো লাগতো এখন তা ভাবলেও বিরক্তি লাগে আবার তা বাস্তবায়ন করা দূরে থাক। কি দরকার তার বিয়ে করার? সে বিয়ে করবে না, দরকার নেই শুধু শুধু আরেকটা জীবন নিজের সাথে জড়িয়ে দায়িত্ব পালন করার। সে এখন যেমন আছে তেমনই ঠিক আছে তার দাদিকে বোঝাতে হবে। সে শাওয়ার নিয়ে বের হয় তারপর রেডি হয়ে নিচে চলে যায়। ক্ষুধা লেগেছে প্রচুর, খাওয়া দরকার। কাল রাতে খায় নি, খায়নি বলতে একবারেই যে খায়নি এমন নয়, রাতে বসে বসে ড্রিংক করেছে। এজন্যই এতোবেলা পযন্ত ঘুমিয়েছে। নিচে নামতেই দেখে তার দাদি বসে আছে খাবার নিয়ে। তাকে দেখে বলে

-” আসেন সাহেব আসেন। বসেন কি খাইবেন বলেন আমি দিয়া দি।”

-” বুড়ি তোমার না বিকালে আসার কথা ছিল।”

-” ওই বুড়ি কি হ্যাঁ বুড়ি কি? আর একবার আমারে বুড়ি কবি তো চড়ায়ে গাল লাল করে দিমু। আর আমি এখন আইছি দেখে কি তোর সমস্যা হইতাসে?” রোমানা চৌধুরী কপাল কুঁচকে বললেন। এতে রাফসান কাশি দিয়ে বলে

-” না, তা হবে কেন? তোমার নাতির বাড়ি তুমি যখন খুশি তখন আসতে পারো। চাইলে সারাজীবন ও থাকতে পার।”

-” এইহানে সারাজীবনের জন্য তোর বউরে রাইখা যামু। আমি তোর বিয়া দিয়াই যামু গা।”

-” সে দেখা যাবে। কিন্তু তুমি এই ভাষায় কথা বলছো কেন?”

-” ক্যান আমি কি বাংলা না কইয়া হিন্দি কইতাসি?”

-” না, বাংলাই বলো কিন্তু, ভালো করে বলো। সব মিশিয়ে বলছো এজন্য বুঝতে কষ্ট হয়।”

-” ক্যান ভালো করে কইলে কি হইবো? তুই কি আমারে আরেকখান বিয়া দিবি?”

-” নাউজুবিল্লাহ! কি বলো?”

-” তো চুপ কইরা থাক। আমি এমনেই কথা কমু। এইডাও বাংলা ভাষা।”

-” হ বুঝবার পারছি”।” বলে রাফসান আর কোন কথা না বলে চুপচাপ খেতে লাগলো। কথা বললেও এই বুড়ির সাথে সে পারবে না। উল্টো লজিক দেখাবে। তাই চুপ থাকাই শ্রেয়। এমন সময় আবির তাড়াতাড়ি এসে রাফসানকে বললো

-” ভাই জানেন কি হয়েছে? ”

-” তুই না বললে কিভাবে জানবো?

-” ওইযে..

-” ওই ব্যাটা চুপ যা। আইসাই কোনোদিক না তাকায়ে ভাই ভাই শুরু করছে। পোলাডারে খাইতেও দিবো না। ওই কোই গেছিলি তুই? আমি আইছি কতক্ষণ একটা প্রাণীরেও দেখলাম না। এদিকে আইসা বস।” আবিরে কথা শেষ হওয়ার আগেই রোমানা চৌধুরী খ্যাঁক করে তাকে চুপ করিয়ে দেয়। আবির এনাকে এমনিও ভয় পায়, তাই চুপচাপ চেয়ার টেনে বসে পড়লো। রোমানা চৌধুরী আবিরের সামনে খাবার দিয়ে বলে

-” চুপ কইরা খাইয়া উঠ। এরপর যত কথা। ” আবির রোমানা চৌধুরীর দিকে মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকায়, তারপর খেতে শুরু করে। যতই বকুক তাকে কিন্তু তার সবকিছুর খোঁজ রাখবে। এখন যেমন সে না খেয়ে ছিল, এটাও ওনার নজরে পড়েছে। দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলো রোমানা চৌধুরী। তারপর আবিরের দিকে তাকিয়ে বললো

-” তুই সারাদিন করছ কি? তোর ভাইরে একখান বিয়া দিতে পারোস না?”

-” ভাইতো বিয়ে করবে না।”

-” তুই কোনোদিন কইছোস, যে করবে? আবুল একটা!” রাফসানের ততক্ষণে খাওয়া হয়ে গিয়েছে। সে হাত মুছে উঠে বাইরে যেতে যেতে বললো

-” ও বললে ওর দাঁত একটাও গালে থাকতো না। আর দাদি আমি কখনো বিয়ে করবো না। সো সেই চিন্তা বাদ দাও। আবির রিভলবার টা নিয়ে আসিস তো।” বলে শার্টের হাতা কনুই পযন্ত ফোল্ড করতে করতে রাফসান চলে গেলো। রোমানা চৌধুরী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। নাতি তার কিছুতেই বিয়ে করবে না। কেন করবে না অবশ্য এটাও তার অজানা নয়। কিন্তু এভাবে তো জীবন চলে না। আবিরের খাওয়া হয়ে গিয়েছে সেও উঠে যাবে কিন্তু তার আগে তিনি আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে

-” হ্যারে রাফসান কি এখনো কাউরেই পছন্দ করে না?”

-” পছন্দ দূরে থাক কথাই বলে না কোন মেয়ের সাথে ভালো করে। সবসময় রুড বিহেব করে।”

-” আবির এমন কাউরে খোঁজ যে রাফসানরে ভয় পায়বো না। বা এমন কাউরে যারে দেখলে ও প্রেমে পইরা যাইবো। আগের সবকিছু ভুইলে যাইবো।”

-” দাদি এটা অনেক কঠিন। সে তার প্রিয় মানুষটিকে হারিয়েছে একবার দ্বিতীয় বার কি আর কাউকে চাইবে? আর রাফসান ভাই তাকে প্রচন্ড ভালোবাসতো তুমি তা জানো। তার জীবনের সাথে ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িয়ে আছে। কিন্তু এখন সে অনূভুতিহীন। ভালোবাসার কোনো অনূভুতিই তাকে ছোঁয় না। তার জীবনে একবারই ভালোবাসা এসেছিল।”

-“ভালবাসা মানুষের জীবনে বারবার আসে। কেউ অতীতকে ভুলে তা সাদরে গ্রহণ করে আর কেউ করে না।” রোমানা চৌধুরীর কথা শুনে আবির চোখ বড় বড় করে তাকালো। তা দেখে তিনি জিজ্ঞেস করে

-” কি হয়ছে এভাবে তাকায়ে আছোস ক্যান?

-” তুমি শুদ্ধ ভাবে কথা বলতে পারো?”

-” তুই কি ভাবছিস? আমি পড়ালেখা করছি বুঝছিস। তখনকার আমলের ইন্টার পাস আমি। সো আমি শুদ্ধভাবে কথা বলতেই পারি।” আবির হাবার মতো তাকিয়ে আছে। তা দেখে ওনি আবিরে মাথায় চাটি মারলেন।

-” মেয়ে খুঁজতে লাইগা পড়। আচ্ছা তুই এতো বছরেও এমন কোনো মেয়েরে পাসনাই যারে তার মতো কিছুডা দেকতে বা রাফসান এমন কারো প্রতি দূর্বল?

-” এমন তো কেউ নেই তবে একটা মেয়ে আছে। তার মতো দেখতে না কিন্তু দূর থেকে দেখলে লাগে। গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা তার মতো ফর্সা নয়। রাফসান ভাইকে অতটা ভয় পায় না। রাফসান ভাই তাকে প্রটেক্ট করেছে কিছু সময়। আবার একটু অন্যরকম ভাবেও তাদের দুজনকে দেখেছি। কিন্তু মেয়েটা ছোট। পিচ্চি পিচ্চি দেখতে।”

-” সে যাই হোক! আমি মেয়েটাকে দেখতে চাই। সেটা রাফসানের মাধ্যমে কিন্তু ব্যাবস্থা তুই করবি।” রোমানা চৌধুরীর কথায় আবির মাথা চুলকালো। একবার শুদ্ধ বলে তো আরেকবার আঞ্চলিক। জানে ইচ্ছা করেই বলছে। আর সে কিভাবে ব্যবস্থা করবে? আর রাফসান যদি জানতে পারে তো তার খবর আছে।

.

তুলতুল বারান্দায় বসে আছে বই হাতে নিয়ে। তার একটুও পড়তে ইচ্ছা করছে না। কিন্তু তার মায়ের জন্য জোর করে পড়তে বসেছে। সামনে পরিক্ষা তার এজন্য তাকে পড়তেই হবে। কিন্তু তুলতুল রাতে পড়বে এখন তার একদম ভালো লাগছে না। কলেজে যায় না অনেকদিন। রাফসানের সাথে আনিস স্যারের দেখা হওয়ার পর থেকে সে আর কলেজে যায় না। অবশ্য ক্লাস ও হয় না সামনে পরীক্ষা বাসায় বসেই প্রিপারেশন নিচ্ছে। তুলতুল বারান্দার বাইরে তাকায়। লাল গোলাপ ফুটে রয়েছে সেখানে। একসময় তার লাল গোলাপ একদম পছন্দ ছিল না। কিন্তু কিছু হারিয়ে যাওয়া মানুষের পছন্দে এখন তার নিজেরও ভালো লাগে। ফুল গুলো দেখলেই তার মনের মাঝে একরাশ কালো মেঘ ভর করে তবুও তার ভালো লাগে। তুলতুল বারান্দার গেটের দিকে তাকায়। সেদিনের ঘটনার পর একমাস কেটে গিয়েছে, কিন্তু বারান্দার দিকে আসলে তার সেই ঘটনাগুলো মনে পড়ে। সেদিন যখন কেউ তুলতুলের মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরেছিল তখন সে অনেক চেষ্টাই করছিল নিজেকে ছাড়ানোর। পেছনের মানুষটি তাকে ঘুরিয়ে নেয় রুমের দরজার দিকে। সে পাশ থেকে একটা অবয়ব চলে যেতে দেখে। মানে এখানে একজন ছিল না দুইজন ছিল। সে স্পষ্ট গেট খোলার শব্দ পায়, মানে দ্বিতীয় জন বের হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই লোক তুলতুলের মুখ ছাড়ছে না, তুলতুল আন্দাজই লোকটির পায়ে লাথে মারে কিন্তু কোনো কাজ হয় না। কিছুক্ষন পরে লোকটি দরজার কাছে গিয়ে তুলতুলকে রুমের ভেতরে ছুঁড়ে মেরে বারান্দার দরজা দ্রুত বাইরে থেকে বন্ধ করে দেয়। তুলতুল গিয়ে দিয়ার গায়ের ওপর পড়ে, দিয়া কাউকে দরজা বাইরে থেকে দিতে দেখে তুলতুলকে সরিয়ে দ্রুত দরজার কাছে যায় কিন্তু দরজা খুলে না। সে ওয়াশরুমের ছিল আর বাইরে এসে এ অবস্থা দেখে। দিয়া তুলতুলের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে

-” এই কি হয়েছে? কে ছিল ওখানে? আর তোকে তো মনে হচ্ছে ধাক্কা দিয়েছে। কথা বলছিস না কেন?”

-” আমি চেহারা দেখিনি। দুজন ছিল, আমি বারান্দার দরজা খোলা থাকায় ওখানে গেলে একজন আমার মুখ চেপে ধরে।” বলে তুলতুল কান্না করতে থাকে। দিয়া আবার দরজার কাছে যায় দেখে দরজা খোলা। ও বারান্দায় গিয়ে দেখে বারান্দার গেটে তালা দেওয়া। মানে এই তালার চাবি বানিয়ে কেউ আসে আবার বন্ধ করে চলে গিয়েছে। দিয়া দ্রুত গিয়ে তিয়াসকে ডেকে আনে। তিয়াস সবশুনে রাগ করে কেনো দরজা খোলা রেখছিল। সিসি টিভি ফুটেজ চেক করে কিন্তু কিছুই ধরা পড়ে নি। কেউ কতটা সূচারু হলে এভাবে কাজ করতে পারে। সেদিনের পড় থেকে তিয়াস অনেক সতর্ক থাকে। সে নিজে দরজা আটকে দিয়ে যায় প্রতিদিন। আর তাওহী তুলতুলের সাথে থাকে। তিয়াস খোঁজ শুরু করে কে এমন করতে পারে তা জানার জন্য। তুলতুল কিছুদিন শিউরে উঠতো ঘটনা মনে পড়লে, কিন্তু এখন স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। তুলতুলের পাশে দিয়া এসে বসে। তুলতুলকে ভাবনায় মগ্ন থাকতে দেখে ঝাঁকি দেয়। এতে তুলতুলের হুঁশ আসে। সে দিয়াকে বলে

-” এসে গিয়েছিস, চল বাইরে যাবো। ভালো লাগছে না।”
কিন্তু দিয়ার চোখ পাশের ছোট চেয়ারে থাকা ডায়রির ওপর যায়। সে কৌতুহলী হয়ে তুলতুলকে জিজ্ঞেস করে

-” ওই ডায়রিটা কার? তোর তো নয়, কারন তুই ডায়রি লেখিস না।”

-” ছিল একজনের।”

-“কোথায় সে?”

-” হারিয়ে গেছে।”

-” খুঁজিস নি?”

-” খুঁজলেই কি সবসময় সবাইকে পাওয়া যায়? বাদ দে চল বাইরে যাই।” বলে তুলতুল দিয়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। কিন্তু দিয়ার দৃষ্টি সেই ডায়রির দিকে।

চলবে…

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here