মেঘের আড়ালে চাঁদ পর্ব ৩৫

#মেঘের আড়ালে চাঁদ❤
#writer: মহসিনা মুক্তি
#পর্বঃ পয়ত্রিশ

কয়েকঘন্টার ব্যবধানে কি থেকে কি ঘটে গেলো। রাতেও তো তুলতুল তাদের সাথে হাসি মুখে কথা বলছিল, তাদের পাশেই ছিল। আর কোথা থেকে কিভাবে হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেলো? তুলতুল দের বাড়ির পরিবেশ এখন থমথমে। রাতে আফসা বেগম তুলতুলের ঘরে গিয়ে দেখে তুলতুল নেই, তিনি ভেবেছেন হয়তো এদিক ওদিক আছে নয়তো ছাঁদে আসে। কিন্তু অনেকক্ষণ পরে যখন মেয়ের কোন দেখা পায় না তখন তার টনক নড়ে। সে পুরো বাড়ি খোঁজে কোথাও তুলতুলকে পায় না। রাত অনেক হয়েছে। সে দ্রুত তিয়াসকে গিয়ে এ কথা জানায়। তিয়াস তা শুনে কিছুক্ষণ চিল্লাচিল্লি করে যে কেনো তুলতুলের খেয়াল কেউ রাখে নি। আর বাইরে সে এতো রাতে কিভাবে গেলো? কেউই কি দেখে নি? তিয়াস রাগ করেই বাইরে বেরিয়ে পড়ে খুঁজতে। কিন্তু কোথাও পায় না তাকে। তুলতুল কোথাও যায়নি, তার সব ফ্রেন্ডের বাসায় ফোন দিয়ে খোঁজ নিয়েছে কিন্তু পায় নি। তিয়াসকে চিন্তা, ভয়ে ঘিরে ধরে। পুরনো ঘটনা আবার পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে না তো? না এ হতে পারে না। সে এবার আর তুলতুলকে হারাতে পারবে না।

-” প্রান্ত, তুই তাড়াতাড়ি বের হ। লোকজন সবাইকে আসতে বল। তুলতুলকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। তাড়াতাড়ি গাড়ি নিয়ে এদিকে আয়।” তিয়াস ফোন পকেটে রেখে দিল। তার গলা কাঁপছে, হাত পাও কাঁপছে। ঠিক চারবছর আগেও তিয়াসা এভাবে রাতের বেলা নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল। হাজার চেষ্টা করেও সে রাতে তাকে খুঁজে পায় নি তিয়াস। তার এত লোকজন, ক্ষমতা কিছুই কাজে আসে নি সেদিন। সকাল পেরিয়ে দুপুর হয়, দুপুর পেরিয়ে বিকাল হয় তবুও পায়নি তিয়াসার খোঁজ। তাও মনে একটা আশা ছিল তার যে বোনকে পাবে তার বোন ফিরে আসবে, এসেছিলও ফিরে কিন্তু লাশ হয়ে এসেছিল। সে সেদিন স্তব্ধ হয়ে শুধু দেখছিল। আর কিছুই করতে পারে নি। সেই ঘটনা আবার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। কিন্তু এবার আর সে তুলতুলকে হারাতে পারবে না। তিয়াস তার লোকজন নিয়ে সারারাত তুলতুলকে খুঁজেছে কিন্তু কোথাও পায়নি। তিয়াস ফেরেনি বলে আফসা বেগম, তাওহী কান্নাকাটি শুরু করেছে এই ভেবে তুলতুলকে পায়নি। তফিজ আহমেদও খোঁজার চেষ্টা করছে। কিন্তু মেয়ে তার মনে হচ্ছে মূহুর্তেই হাওয়া হয়ে গেছে এমন ভাবে হারিয়েছে।

.

আবির দ্রুত পায়ে রাফসানের রুমে ঢোকে। কাল সারারাত মাতলামি করে ভোরের দিকে ঘুমিয়ে গেছে। কোন খবরই তার কানে যায় নি। জানলে কি করবে তার ঠিক নেই । কিন্তু না বলেও তো কোনো উপায় নেই। সে রুমে ঢুকে দেখে রাফসান হাত পা ছাড়িয়ে শুয়ে আছে। সে কিছু না ভেবেই রাফসানকে জোরে জোরে ডাকতে থাকে। কিন্তু রাফসান উঠে না। সে ঘুমে কাতর। আবির উপায় না পেয়ে গায়ে হাত দিয়ে ডাকতে থাকে, রাফসান বিরক্ত হয়। তারপরও কোনোরকমে চোখ খুলে আবিরকে দেখে তার রাগ উঠে যায়। সে আবিরকে কতগুলো ঝারি দিয়ে আবার শুয়ে পড়ে। আবির এবার যেন মহা মুশকিলে পড়েছে।

-” ভাই উঠেন! নাহলে পরে সর্বনাশ হয়ে যাবে।”

-” আবির যা তো সর, মেজাজ খারাপ করিস না সকাল সকাল।” রাফসান বালিশে মুখ গুঁজে বললো।

-” ভাই সকাল না এগারোটা বাজে ওঠেন। সব কিছু উল্টো পাল্টা হয়ে গেছে।” আবির আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু রাফসানের কথায় পারে না।

-” উফফ! কি শুরু করেছিস তুই?” বলে সে উঠে সরাসরি ওয়াশরুমে গিয়ে দরজা ঠাস করে লাগিয়ে দেয়। আর আবির হাবার মতো দাঁড়িয়ে রইল। তারপর সোফায় বসে রাফসানের বের হওয়ার জন্য ওয়েট করতে লাগলো। রাফসান কিছুক্ষণ পরে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে আবিরকে দেখে বিরক্ত হয়। সে কাজের কোনো কথাই শুনতে চাচ্ছে না।

-” কি? তুই..

-” ভাই আগে আমার কথা শুনেন। মেয়েটাকে কাল রাত থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। আরো দেরি হলে বিপদ হতে পারে।” রাফসানকে কথা শেষ করতে না দিয়ে আবির হড়বড় করে বলে। রাফসান ভ্রু কুঁচকে বলে

-” কোন মেয়ের কথা বলছিস?”

-” কালকে রাতের মেয়েটার কথা বলছি। তাকে কারা যেন তুলে নিয়ে গেছে।” আবিরের কথায় রাফসান কালকে রাতের কথা চিন্তা করতে থাকে। কাল রাতেও সে তার ফার্মহাউসে ছিল। তারপর অস্থির লাগতে শুরু করলে ড্রিংক করা শুরু করে। ওভাবেই ঝোঁকের বশে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায় তুলতুলকে দেখতে। আস্তে আস্তে তার সব কথা মনে পড়ে। সে তুলতুলকে ভালোবাসি বলেছে। নিজের ওপর এবার বিরক্ত হলো, মেয়েটাকে এটা বলার কি দরকার ছিল? চট করেই তার আবিরের কথা মাথায় বারি খায়। তুলতুলকে কেউ তুলে নিয়ে গেছে? কিন্তু তার লোকজন কে তো রেখেছিল তুলতুলকে দেখার জন্য। তারা থাকতে মেয়েটাকে কিভাবে কেউ তুলে নিয়ে যায়? রাফসান আবিরের দিকে তাকিয়ে রাগী ভাবে বলে

-” ফাজলামি পেয়েছিস? রাতেও তো আমার সাথে দেখা হলো। আর আমার লোকজন থাকতে ওকে কিভাবে কেউ নিয়ে যাবে? তোর ভুল হয়েছে দেখ কোথাও।” বলে রাফসান ফোন হাতে বিছানায় বসে। সে যে সিরিয়াস ভাবে নেয় নি তা বোঝাই যাচ্ছে। সিরিয়াসলি নিলে এভাবে শান্ত হয়ে বসে থাকতো না।

-” ভাই আমি সত্যি বলছি। কাল রাতে আপনি চলে আসার পরই কেউ মেয়েটাকে তুলে নেয়। আমাদের লোকজন আপনি ওখানে যাওয়ায় একটু বেখেয়ালি হয়ে যায়। পরে বুঝতে পেরে যে গাড়িতে তুলে নিয়েছে ওটার পিছু নেয়। কিন্তু গাড়িটা বুদ্ধি খাটিয়ে চোখের আড়াল হয়ে যায়। ” আবিরে কথা শুনে রাফসানের বুকের ভেতর ধক করে উঠে। মূহুর্তেই চিন্তা চলে আসে তুলতুল ঠিক আছে তো? ওকে আবার তার চোখের সামনে দেখতে পাবে তো? দ্বিতীয় বার ভালোবাসার মানুষটিকে হারানোর ভয় তাকে ঘিরে ধরেছে। সে উঠে দাঁড়িয়ে অস্থির হয়ে আবিরকে বলে

-” গাড়ির নাম্বার দেখে নি ওরা?”

-” ভাই নাম্বার দেখেছিল। খোঁজ নিয়েছি। গাড়ি যার নামে রেজিস্ট্রি করা তার গাড়ি কাল সকালে চুরি হয়েছে। সে থানায় ব্যাপারটা জানিয়েছেও। এখন অনেক খুঁজেও মেয়েটার সন্ধান পাচ্ছি না।” রাফসান দ্রুত উঠে ড্রয়ার থেকে রিভলবার আর অন্যান্য দরকারি জিনিসপত্র নিয়ে দ্রুত বের হয়ে গেলো। বুক কাঁপছে তার। ভেতরে মনে হচ্ছে কলিজায় হাজারো ছুরিকাঘাত করছে। কালকেও তো মেয়েটাকে সে ভালোবাসি বলেছে। যায় ভালোর জন্য সে নিজে দূরে সরে গেলো সেই এখন বিপদে পড়েছে? ঠিক আছে নাকি মেয়েটাকে.. রাফসান আর ভাবতে পারলো না৷ কষ্ট হচ্ছে তার, প্রচুর কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ তার গলাটা চেপে ধরে রেখেছে। এতো কষ্ট কেন তার জীবনে? আর কেনোই বা সে যাদের কে ভালোবাসে তাদেরকে হারিয়ে ফেলে? সৃষ্টিকর্তা বারবার এ কোন পরীক্ষায় ফেলে তাকে। আদৌও কি মেয়েটাকে আর দেখতে পাবে সে? নানারকম কু চিন্তা না চাইতেও তাকে ঘিরে ধরছে। নিজের অবস্থাও তার ভালো না। দুইদিন আগে তার বাহুতে গুলি লেগেছে তার জখমই এখনো শুকায়নি, তারওপর খাওয়া দাওয়া, ঘুম ছেড়ে দিয়েছে। আর কাল রাতে ড্রিংক করার ফলে মাথা ব্যাথা হয়ে আছে। আর এখন এই খবর, কিভাবে সে সামাল দিবে? কিন্তু তুলতুলকে তার খুঁজে বের করতেই হবে যে করেই হোক। ভালোবাসে সে তাকে কি করে তার ক্ষতি হতে দেয়। রাফসান মনের ভেতর হাজারো অস্থিরতা, হরানোর ভয়, দুরুদুরু বুক নিয়ে গাড়িতে ওঠে বসে। তার একমাত্র লক্ষ্য তুলতুলকে খুঁজে বের করা।

.

রাফসান গাড়িতে বসে আছে। দুইদিন হলো এখনো তুলতুলের কোন খোঁজ পায়নি সে। সবকিছু অসহ্য লাগছে তাঁর। ভেঙে গুড়িয়ে দিতে ইচ্ছা করছে সব। কেন সে তার তুলতুলকে খুঁজে পাচ্ছে না? হ্যাঁ তারই তুলতুল। আর কারোর হতে দেবে না সে। কি হবে তার এতো পাওয়ার দিয়ে? যদি তার প্রিয় মানুষকেই রক্ষা করতে না পারে? আর কার এতো সাহস হয়েছে আর এতো বুদ্ধি হয়েছে যে রাফসান তার সাথে পারছে না? আজ দুইদিন ধরে সে তুলতুলকে তন্নতন্ন করে খুজেছে কিন্তু কোথাও পায়নি। রাগে সে জিনিসপত্র সবকিছু ভাঙচুর করেছে চিৎকার করেছে। এতে তার দাদী ছুটে আসে তাকে থামায়। দাদীকে জড়িয়ে ধরে সে চিৎকার করেছে মুখে শুধু একটাই কথা তুলতুলকে যেনো এনে দেয়। সে তো তার ভালোর জন্যই তাকে ছেড়ে দূরে চলে গিয়েছিল। তার যেনো কোন বিপদ না হয় তাই। কিন্তু তাও কেন মেয়েটা বিপদে পড়লো? কেনো দেখতে পারছে না সে তুলতুলকে? মানুষ প্রথম বার নিজেকে সামলে উঠতে পারলেও দ্বিতীয় বার আর তার সেই সাহস থাকে না। সে হয়ে যায় ভীতু, তাইতো রাফসান তুলতুলের কাছ থেকে দূরে থাকতো। কিন্তু তার মন সেই আবার ভালোবাসায় বেঁধে দিল। সকালে কারো ফোন পেয়ে সে সবকিছু ফেলে যেভাবে ছিল ওভাবেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। তার চোখ মুখ ফুলে গিয়েছে, গায়ে সেই দুইদিন আগের ব্লাক কালার শার্ট, যা কুঁকড়ে আছে। চোখ গুলো লাল হয়ে আছে, চুলগুলো সব এলোমেলো হয়ে কপালের ওপর ছড়িয়ে আছে। সে গাড়িতে অপেক্ষা করছে। একবার তুলতুলকে ফিরে পেলে আর তার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবে না। নিজের জীবন থেকেও সরাবে না। এ দুইদিনে তার বোঝা হয়ে গেছে যে সে তুলতুলকে ছাড়া থাকতে পারবে না। ভালোবেসে ফেলেছে তাকে খুব। তার কাছে এনেই রেখে দেবে পেলে আর ছাড়বে না সে। নাহলে পাগল হয়ে যাবে।

রাফসানের গাড়ির পাশ দিয়ে একটা গাড়ি চলে যায়। খুব দ্রুত যাচ্ছে তা বোঝাই যাচ্ছে। সেও দ্রুত গাড়িটার পিছু করতে থাকে এমন ভাবে যেন বুঝতে না পারে। অনেকসময় পর গাড়িটা একটা পুরনো বাড়ির সামনে থামে। সেখান থেকে চারজন লোক বের হয়ে বাড়ির ভেতরে ঢোকে। রাফসান নির্দিষ্ট দূরত্বে গাড়ি পার্ক করে।

-” আবির আমার গাড়ির লোকেশন ট্র্যাক করে দ্রুত সবাইকে নিয়ে চলে আয়।”

-” সব প্রস্তুতি নিয়ে আসবি। এবার যদি কোন ভুল হয় তো সব কটাকে মেরে ফেলব।”

রাফসান ফোন কেটে বাড়িটার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। এখানেই তুলতুলকে লুকিয়ে রেখেছে। তার ভালোবাসার গায়ে একটা আঁচড় পড়লেও এর পেছেনর সবকটাকে একদম মেরে পুঁতে ফেলবে সে। আবির দ্রুতই চলে আসে লোকজন নিয়ে। রাফসান রিভলবার লোড করে গাড়ি থেকে বের হয়। তার লোকজন আগেই বাড়িটাকে ঘিরে ফেলেছে, তারপর অনেকজন ভেতরেও চলে গিয়েছে এতক্ষণ। সে গুলির শব্দ শুনতে পায়। রাফসান দ্রুত বাড়ির ভেতরে ঢোকে, তুলতুলকে তার চাই, সে ভিতরে ঢুকে এদিক ওদিক দেখে। তার লোকজন আর ওপর পক্ষের ভেতর মারামারি লেগেছে, গুলি ছুড়ছে। কিন্তু রাফসান সেদিকে পাত্তা না দিয়ে তুলতুলের খোঁজে সে ওপরে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে লাগে। কিন্তু ওখানে একজন তার দিকে গুলি ছুঁড়তে যায় তার আগেই সে লোকটার মাথায় কপালের মাঝ বরাবর গুলি করে। এতক্ষণে আবির তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।

-” ভাই, আপনি মেয়েটাকে দেখেন। আমি এদিক সামলাচ্ছি।” রাফসান চারপাশে তাকায়। লম্বা করিডোর, আর একসারি হিসেবে বরাবর অনেকগুলো রুম। রাফসান রুমগুলোর সামনে দিয়ে হেঁটে যায়। সবগুলোই লাগানো তবে শুধু ছিটকিনি কোন তালা নেই। রাফসানের নজর যায় দুইরুম পরে একটা রুমের দরজায় যেখানে তালা দেওয়া। সে সেদিকে এগিয়ে যায়। যতো এগোই ততই তার বুক ধড়ফড় করছে, হার্ট বিট করছে জোরে জোরে। হাত-পা ও মনে হয় কাঁপতে শুরু করেছে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে, রাফসান একটা ঢোক গিলে দরজার সামনে দাঁড়ায়। তুলতুলকে সে পাবে তো এখানে? সে ঠিক আছে তো? কোন খারাপ কিছু তার সাথে এরা করেনি তো, কোন কষ্ট দেয়নি তো তার তুলতুলকে? রাফসান জোরে একটা শ্বাস নেয়। তারপর তালার ওপরে গুলি করে। কয়েকটা গুলি করার পরে তালা খুলে যায়। রাফসান তালা সরিয়ে ছিটকিনি খুলে দরজা ধাক্কা দেয়। রুম অন্ধকার হয়ে আছে। সে ভেতরে ঢুকে পাশের দেওয়ালে হাতরিয়ে লাইট অন করে সামনে তাকাতেই থমকে যায়। তার পৃথিবী যেন সেখানেই থেমে গেছে। নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। তুলতুল তার সামনে ফ্লোরে পড়ে আছে। চুলগুলো এলোমেলো ভাবে মুখের ওপর পড়ে আছে। রাফসান অসারের মতো সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here