#মেঘের_দেশে_তারার_মেলা 💚
#Mishka_Moon (লেখনীতে)
#পর্ব_৬
আহির কে উদ্দেশ্য করে বলে~ ওটা আবির ভাই না?
~ হ্যাঁ তাইতো কিন্তু ও এখানে কি করছে।
~ এই দিকে দেখ এই মেয়েটা ওর দিকেই যাচ্ছে।
~ আবার তুই?
~ অসহ্য সামনে দেখুন মেয়েটা কে! গার্লফ্রেন্ড নাকি?
~ আরে এটা তো মেহের ম্যাম। উনি আবিরের গার্লফ্রেন্ড?
~ ম্যাম মানে?
~ আমার অফিসের বস বুঝছিস।
~ বুঝেছি চলুন হাতে নাতে ধরি।
~ ঠিক আছে। চল চল!
আচমকা কাউকে সামনে বসতে দেখে আবির আর মেহের চমকে উঠে।
~ আসসালামু আলাইকুম বড় ভাই কেমন আছেন?
~ আহির তুই?
মেহের অবাক হয়ে বলে ~ তোমরা দুজন দুজনকে আগে থেকে চেনো?
পিহু বলে~ আমরা কাজিন কিন্তু আপনি কি আমার ভাবি নাকি?
মেহের কিছুটা ইতস্তত ভাব নিয়ে বলে~ হুম।
আবির বলে তোরা থাম আমি বলছি। মেহেরই আমার গার্লফ্রেন্ড।
~ সা*লা তুই তো বলেছি তোর ব্রেকআপ হয়ে গেছে!
পিহুর সাথে বিয়ের কথা শুনে ও আর ঠিক থাকতে পারেনি। আর আমারও বিয়েতে মত ছিল না। তাই আমাদের সব ঠিকঠাক হয়ে গেছে। কিন্তু একটা কথা বল তোরা দুজন এক সাথে তাও ঢাকায়!
আহির কিছুটা রাগ রাগ ভাব নিয়ে বললো ~ তুই তো পা*লিয়ে বেঁচে গেলি কিন্তু আ*পদ তো আমার কপালেই জুটলো।
~ আহিরের বাচ্চা আহির এবার কিন্তু বেশি বলছিস। এক হাতে কখনো তালি বাজেনা।
~ তোরা ঝগ*ড়া পরে করবি। আগে বিষয়টা খুলে বল”?
আহির সব কিছু আবিরকে খুলে বলে। সব শুনে আহির হাসতে হাসতে বলে ~ সা*প আর ব্যা*ঙের ও তাহলে বিয়ে হয়।
~ মজা নিচ্ছিস নে। তোর বউ ও পুলিশ মনে রাখবি ঝগড়া লাগলেই জে*লে দিয়ে দিবে।
মেহের ভাই বোনদের কথা শুনে হাসতে থাকে। প্রথমে কিছুটা বিরক্ত হলেও এখন তার ভালোই লাগছে। সবাই এক সাথে খেয়ে যে যার গন্তব্যে চলে যায়। আহির পিহুকে ভর্তি করিয়ে বাড়ি চলে আসে। আহির ভাবছে কাজের মহিলাটিকে রাখবে নাকি রাখবে না। পিহুকে জিজ্ঞেস করে ~ তুই কি রান্না বান্না কিছু শিখছিস?
~ কেন?
~ আসলে আমাকে যে রান্না করে দিয়ে যায় উনার আবার হাত টান দেওয়া স্বভাব আছে। কিন্তু এখন তো আর একা থাকি না সাথে একটা বাঁ*দর ও থাকে। যদি চু*রি করে নিয়ে গিয়ে চিড়িয়াখানায় রেখে আসে তখন আমি তোর বাবাকে কি উত্তর দিবো?
~ তুই আমাকে এভাবে অপমান করলি আমি বাঁ*দর? এখন কি আমাকে কাজের লোক বানাবি”!
~ আমি তোকে কখন বাঁ*দর বললাম?
~ আহির ভাই তুই যাতো তোকে আমার দেখতে ইচ্ছা করছে না।
আহির এবার রেগে যায় পিহুর হাত একটু মু*চড়ে ধরে বলে ~ কতবার বলছি ভাই বলবি না? আর তুই তুই করতেও নিষেধ করেছি।
পিহুর হাতে ব্যা*থা লাগায় কান্না করে দেয়। আর আহির কে উদ্দেশ্য করে বলে~ আর বলবো না ছেড়ে দেন।
~ তুই কান্না করছিস কেন আমি তো আস্তেই ধরেছি।
আহির হাত ছেড়ে দিলেও পিহুর আর কিছুতেই কান্না থামছে না। কান্না করতে করতেই বলে~ আপনি একটা পুলিশ হয়েও বউয়ের ওপর অত্যা*চার করেছেন। আমি বড় আব্বুকে বলে দিবো। আহির এবার বি*পদে পরে যায় পিহু যদি একবার ওর বাবাকে বলে দেয় তাহলে আহির শেষ। পিহুকে বলে কান্না থামা প্লিজ আর কিছু বলবো না তোকে সত্যি। পিহু বলে ~ তাহলে আপনার হাতটা দেন।
~ কেনো?
পিহু কিছু না বলে এবার আরো জোড়ে জোরে কান্না শুরু করে দেয়। আহির বাধ্য হয়ে হাত এগিয়ে দেয়। পিহু আহির হাত ধরে কা*মর বসিয়ে ধরে রাখে। আহির কোনো মতো হাত ছাড়িয়ে বলে ~ রা*ক্ষসী একটা কি করলি এটা?
~ বেশ করেছি।
~ তবে রে।
দুজন মিলে কিছু সময় দৌড়াদৌড়ি করে বসে পরে। রাতের খাবার নিয়ে এসেছে বাহিরে থেকে। পিহু রাতের খাবার খেয়ে বাড়িতে ফোন দেয়। মিসেস আহানের সাথে কথা বলে সবার খবর নেয়। অর্পার কথা জিজ্ঞেস করতে বলে~ আর বলিস না মা! তোরা চলে যাওয়ার পরেই সেই বখা*টে গুলো কে ছাড়িয়ে এনেছে কেউ আর তাই অর্পাকে ওর নানার বাসায় রেখে এসেছে। বাসা একদম ফাঁকা দিহান আর বিহান তো এসে তোর বাবার সাথে ঝগড়া লাগিয়ে দেয়। কেনো তোকে বিয়ে দিলো। কেনো অর্পাকে পাঠিয়ে দিলো। ওরাই নাকি তোদের দেখে রাখতো। অনেকটা সময় কথা বলে ফোন রেখে দেয়। পিহুর এবার আরো মন খারাপ হয়ে যায়। সেই রাতেও আহির আর কিছু বলে না দুজনেই ঘুমিয়ে পরে। সকাল সকাল কাজের মহিলা এসে কলিং বেল বাজাতে থাকে। আহির উঠে খুলে দেয় তারপর রুমে গিয়ে পিহুকে ডাকতে থাকে। ~ এই পিহু উঠ আমি বের হবো। তোর কোচিং কয়টায় মনে আছে তো?
পিহু ঘুম ঘুম ভাবেই বলে~ হুম ৮টা থেকে১২টা। এখন যা ঘুমাবো।
~ কি বললি?
~ না কিছু না আপনি যান আমি উঠছি।
সকালে খেয়ে আহির পিহুর সাথে কাজের মহিলার পরিচয় করিয়ে থানার উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায়। থানায় গিয়ে নতুন কে*স বুঝে নিয়ে কাজে লেগে পরে। আহির আর মেহের এমন ভাবে কাজ করছে যেনো কেউ কাউকে চেনে না। অন্যদিকে পিহুর কেনো জানে না কাজের মহিলাটাকে সুবিধার বলে মনে হয় না। উনি দুপুরের আর রাতের রান্না করে একবারে যাবে। কিন্তু পিহুকে তো যেতে হবে তবে মহিলাটিকে একা বাসায় রেখে যেতে ইচ্ছা করছে না। তাই পরীক্ষা করার জন্য মহিলাটিকে দেখিয়ে সোফায় একটা ইমিটেশনের আংটি রেখে ভেতরে চলে যায়। একটু পরে এসে দেখে নাই। যা ভেবে ছিল ঠিক তাই পিহুকে অনেক কিছু দিয়ে দিয়েছে ওর মা। যদি চুরি করে চলে যায় তখন কি হবে? আগে তো আহির একা থাকতো সোনা-দানা ছিল না বাড়িতে। কিন্তু এখন তো আছে! যদিও পিহু আনতে চায়নি কিছু তবুও দিয়ে দিয়েছে। পিহু মহিলাটিকে বলে ~ দুপুরের রান্না করতে হবে না আপনি চলে যান আমি করে নিবো। মহিলাটি রাজি হতে না চাইলেও জোর করে পাঠিয়ে দেয় পিহু। তারপর রেডি হয়ে কোচিং এর উদ্দেশ্য রওনা দেয়।
পিহুর ক্লাস ভালোই চলছে। সেই দিনই মহিলাটিকে আহির কি দিয়ে আসতে নিষেধ করে দিয়ে ছিল। পিহু তেমন রান্না না জানলেও মোটামুটি জানে নিজেই রান্না করে। তবে আহিরকে আগে তুই বললেও এখন আপনি বলে কিন্তু রেগে গেলে আবার তুইয়ে চলে যায়। এখন পিহু নিজেও আহির কে জ্বালায় আগে ভাই ভাই করতো এখন ওগো স্বামী বলে ডাকে। প্রত্যেক কথার সাথে বলে আহির বিরক্ত হয় আর তা দেখে পিহু খুশি হয়।
♪
♪
♪
আজকে পিহু আর অর্পার এইচএসসি রেজাল্ট দিয়েছে দুজনেই প্লাস পেয়েছে। সবাই জানতো ওদের রেজাল্ট ভালোই হবে কারণ ওরা যতই দুষ্টা*মি করুক না কেনো পড়াশোনায় ফাঁকি দেয়না।
রেজাল্ট দেওয়ার আগ মূহুর্তে আহির অবশ্য পিহুকে জ্বালাতে ছাড়েনি। পিহু কে বলেছিল কি রে তুই তো তিন বিষয়ে ফে*ল করেছিস। পিহু প্রথমে বিশ্বাস করে নি কারণ ওর পরীক্ষা ভালো হয়েছে। কিন্তু আহির যখন সিরিয়াস ভাব নিয়ে বললো ~ রোল রেজিষ্ট্রেশন ঠিক লিখছিলি না? তখন পিহু কান্না শুরু করে দিয়েছিল। পরে যখন বললো মজা করেছি তখন পিহু হাতে যা পেয়েছে ছুড়ে মে*রেছে।
পিহু এখন মন দিয়ে পড়াশোনা করছে। আহির কে সে দেখিয়ে দিবে সেও ভালো জায়গায় পড়তে পারে। তার এখন প্রধান লক্ষ ভার্সিটিতে চান্স পাওয়া।
আহির সে তো ব্যস্ত মানুষ মন দিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে আর বাড়ি যাওয়া হয়নি ওদের তবে আহান রহমান এসে আহির আর পিহুকে দেখে গেছে একবার। আহির ছুটি পেলেই বাড়ি যাবে দুজন। পিহু এখন ভালোই রান্না বান্না শিখে গেছে তবে দুজনের সম্পর্কের কোনো উন্নতি হয়নি। সব সময় এক জন আরেক জনের পেছনে লেগে থাকে। রাতে পিহুর পড়া মন বসছিল না তাই গেলো আহির কে জ্বালাতে। আহির একটা কে*স নিয়ে গভীর চিন্তায় ছিল। পিহুর ডাকে দরজার তাকায়।
এক হাত ঘুমটা দিয়ে পিহু ডাকছে ~ ওগো স্বামী আসবো?
~ না তুই এখন যা জ্বালাবি না।
~ স্বামী অনেক জরুরি বিষয়।
~ ঠিক আছে আয়।
~ স্বামী আপনি কি অসুস্থ? এমন শুকনো লাগছে কেন চান্দের লাহান মুখখান?
~ আমি ঠিক আছি তোর ড্রামা বন্ধ করে বল কি বলবি?
~ স্বামী আমি কি কোনো ভুল করে ফেলেছি এতো রেগে আছেন?
~ না আপনি কিছুই করেননি আপনি কি কিছু করতে পারেন নাকি। এখন কি বলবেন নাকি চলে যাবো?
~ বলছি।
~ তো বল!
~!?
#চলবে?