মোনালিসা
লেখা-ইসরাত জাহান তানজিলা
পর্ব-৩৭
বৃষ্টি’তে ভিজে মোনার অবস্থা বেগতিক।গায়ে প্রচণ্ড জ্বর আর টনসিলের ব্যথা। বিছানায় কম্বল পেঁচিয়ে শুয়ে আছে মোনা। ফোন করে লিলি বেগম’কে আসতে বলে।
নিশান মোনার পাশে বসে আসে।মুখ’টা পাংশু বর্ণ হয়ে আছে নিশানের। একটু পর পর মোনার কপালে হাত দিয়ে দেখছে। কিছুক্ষণ বাদে লিলি বেগম আসে। মোনার শয্যার পাশে বসে, মোনার কপালে হাত দিয়ে চমকে গিয়ে বলে,
-“তুই বৃষ্টি’তে কেন ভিজছিস? শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।”
মোনা এসব কথার জবাব না দিয়ে দুর্বল গলায় বলে,
-“খালা এক কাপ কফি করে দেও না। গলায় প্রচণ্ড ব্যথা।”
লিলি বেগম কফি বানাতে কিচেনে যায়। মোনার কর্মকাণ্ডে নিদারুণ বিরক্ত হয়। রান্না ঘর থেকে উঁচু গলায় বলে,
-“বৃষ্টি’তে ভিজলে সমস্যা হয় তোর,তাও কেন ভিজেছিস?”
মোনা চোখ বুঁজে জড়সড় হয়ে শুয়ে আছে আছে। জ্বরে ঠোঁট দুটো ঈষৎ কাঁপছে।লিলি বেগম কফি নিয়ে এসে মোনার পাশে বসে।মোনার উঠে বসতে কষ্ট হচ্ছে। আধশোয়া অবস্থায় কফির মগে একবার চুমুক দিয়ে রেখে দিলো বেড সাইডে।ক্ষীণ গলায় বলল,
-“খালা শুয়ে শুয়ে কফি খাওয়া যায় না?”
লিলি বেগম ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
-“কি সব আজগুবি কথা বলছিস?”
-“বসে থাকতে পারছি না।”
-“কফি পরে খাস। গলায় মাফলার পেঁচিয়ে নে। ওষুধ খেয়েছিস তুই?”
মোনা মাথা ঝাঁকিয়ে না বলে। লিলি বেগম উঠে গিয়ে ওষুধ নিয়ে আসে।মোনা নিভু নিভু চোখে তাকায় লিলি বেগমের দিকে। আস্তে করে বলে,
-“খালা তোমার বড় ছেলে কোথায়?”
লিলি বেগম রেগে গিয়ে বলল,
-“আমার বড় ছেলে এগুলো কোন ধরণের কথা মোনা?ভাইয়া ডাকা যায় না?”
মোনা ক্লান্ত মুখে হাসলো। খানিকক্ষণ পর বলল,
-“বড় ভাইয়া কোথায়?”
লিলি বেগম আক্ষেপ করে বলে,
-“বাসায় ঘুমায়।দুই দিন ধরে অফিসে যায় না।পরশু দিন ওঁর ল্যাপটপ’টা ভেঙে ফেলেছে। কত দাম দিয়ে কিনে দিয়েছি ল্যাপটপ’টা।”
মোনা কিছু জিজ্ঞেস করতে গিয়েও গিলে ফেলল। কথা বলার জোর পাচ্ছে না। মাথার রগ ব্যথায় দপদপ করছে। চোখ খুলে তাকাতে অসহ্য লাগছে। ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে চোখ বুঁজে শুয়ে আছে। মোনার ডিস্টার্ব হবে ভেবে লিলি বেগম নিশান’কে নিয়ে পাশের রুমে চলে যায়।
মোনা অনেকক্ষণ ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করলো। ঘুমে চোখ লেগে আসছে এমন সময় মোনার কানে বিদ্ধ হয়,
-“মোনা আমার একটু জরুরি কাজ পড়েছে। আমি ব্যাংকে যাচ্ছি। নিশান যাচ্ছে আমার সাথে।”
লিলি বেগম বেশ তাড়াহুড়ো গলায় বলল। বুঝা গেল খুব জরুরি কাজ। দরজা খোলা,বিছানা থেকে উঠে দরজা আটকানো মোনার পক্ষে কিছুতে’ই সম্ভব না এখন। মোনা ঘুমিয়ে পড়ে।
____
ঘুমের ভিতর মোনার মনে হলো কারো কারো উষ্ণ নিঃশ্বাস ওঁর মুখে বিঁধছে।ঘুমে জড়াগ্রস্থ মস্তিষ্কে মোনা কিছু ভাবতে পারলো না। চোখ জুড়ে রাজ্যের ঘুম,মোনা বিরক্তিতে অন্য পাশে ফিরে।আবার সেই নিঃশ্বাস মোনার মুখে বিঁধছে। মোনা পিটপিট করে তাকায়। মুহূর্তেই প্রচণ্ড ভাবে চমকে ওঠে। প্রিয়ম একদম মোনার সম্মুখে। অদ্ভুত এক মোহময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, তীব্র নেশা সে চাহনি’তে। মোনার শরীরের প্রতি শিরায় শিরায় তীক্ষ্ণ এক অনুভূতি বিচরণ করছে। মোনা চোখ বুঁজে ফেলে। ধরা গলায় বলল,
-“আপনি!”
প্রিয়মের মুখ মোনার কানের কাছে।প্রিয়মের উষ্ণ ঠোঁট মাঝে মাঝে কানে লাগছে। মোনা কেঁপে কেঁপে ওঠে। প্রিয়মের ওপর সকল রাগ,জিদ,ক্ষোভ অচিরেই ভুলে যায়।প্রিয়মের গরম নিঃশ্বাস মাখা কথা,
-“ভালোবাসি।”
প্রিয়মের মোলায়েম গলায় বলা একটা শব্দে যেন জগতের সব মোহ, নেশা এসে জড়ো হয়েছে।মোনার পুরো শরীর রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠে।প্রিয়ম পুনরায় বলল,
-“মোনা ভালোবাসো।”
এইটুকু কথায় কি ছিলো মোনা জানে না।কেন এমন ধারালো, তীক্ষ্ণ অনুভূতির সৃষ্টি হচ্ছে মোনা বুঝতে পারছে না। সময়’টা এখানেই থেমে থাক, পৃথিবী’টা এই শব্দের মাঝেই হারিয়ে যাক। পৃথিবীর সব থেকে ভয়ঙ্কর মাদকতা এ সুরে। মোনা যেন মাদকাসক্ত হয়ে যায়।প্রিয়মের চওড়া বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। অসহ্য এক সুখে শিহরিত হচ্ছে প্রতিটি রোমকূপ।প্রিয়মের বুকের মাঝে মিশে থাকে মোনা। মোনার শ্বাস-প্রশ্বাস প্রিয়মের বুকে আছড়ে আছড়ে পড়ছে।প্রিয়ম নিজের ষদুষ্ণ ওষ্ঠ দিয়ে মোনার ঠোঁটের সব উষ্মা শুষে নিলো। প্রেমাবেগে প্রথম ওষ্ঠ চুম্বনে মোনার মাতাল হয়ে গেলো।নিদারুন স্বর্গসুখে মোনা রোমাঞ্চিত হচ্ছে।প্রিয়মের দু হাতের পেশীর মধ্যে আবদ্ধ হয়ে মোনা মোমের ন্যায় প্রিয়মের অতুষ্ণ ছোঁয়ায় গলে যাচ্ছে যেন।প্রিয়ম গভীর আবেগময় গলায় বলল,
-“মোনা তুমি নেশারী। পৃথিবীর সবচেয়ে অগ্নিমূল্যের নেশারী।”
মোনার চোখ আবেশে বার বার বুঁজে যাচ্ছে। মোনা কোন কথা বলতে পারছে না। গলা ধরে আসছে।এরপর কেউই কোন কথা বলে নি।প্রিয়ম নিগূঢ়ভাবে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে রেখেছে মোনা’কে। মোনা পিটপিট চোখে তাকায়। ঘনিষ্ঠরূপে দুই জোড়া নেত্র অনিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রেম বিনিময় করছে।
-“মোনা স্যরি আমি।”
মোনা জড়ানো গলায় বলে,
-“হুঁ।”
-“রাগ আছে আমার উপর?ছেড়ে চলে যাবে?”
মোনা কেবল মন্থর গলায় বলল,
-“উঁহু।”
নিগূঢ় আবেগে প্রিয়ম আরো শক্ত করে জড়িয়ে রাখে মোনা’কে।সময়জ্ঞান নেই কারো, ওভাবে কত সময় অতিক্রান্ত হয়েছে জানা নেই।নতুন এক অনাস্বাধিত অনুভূতি’তে শরীর বেয়ে নামছে তপ্ত প্রস্রবন।
সিঁড়ি বেয়ে রুমের দিকে এগিয়ে আসছে পায়ের শব্দ।খুব দ্রুত রুমের দিকে আসছে। দুইজন আলিঙ্গন থেকে মুক্ত হয় অপ্রস্তুত ভাবে। লিলি বেগম ক্লান্ত ভাবে এসে রুমে ঢুকে।নিশান লিলি বেগমের পিছু পিছু ঢুকে। লিলি বেগম হাতের ওয়ালেট’টা ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে প্রিয়মের দিকে তাকিয়ে কিছু’টা অবাক হয়ে বলে,
-“কিরে তুই আসলি কখন?”
দুই জনের চোখে-মুখে অপ্রস্তুত ভঙ্গি।মোনা অসুস্থতা ভুলে যায় যেন। খাটের এক কোণে জড়সড় হয়ে বসে রইলো অন্যদিকে ফিরে। এখনো রেশ কাটিয়ে উঠতে পারেনি, হৃৎপিণ্ডে হাতুড়ে পেটা করছে যেন কেউ।প্রিয়ম নাস্তানাবুদ মুখে বলল,
-“এই তো পাঁচ মিনিট আগে।”
লিলি বেগম মোনার পাশ ঘেঁষে বসে মোনার কপালে হাত দিয়ে বলে,
-“জ্বর তো কমেছে একটু।তুই বসে আছিস কেন? চেহেরা এমন দেখাচ্ছে কেন?”
মোনা প্রিয়মের দিকে ফিরে না। দৃষ্টি অন্যদিকে আবদ্ধ করে রেখেছে। অপ্রতিভ ভাবে বলে,
-“বড় ভাইয়া আসছে তাই বসে আছি।”
মোনার কথা শুনে প্রিয়ম হেসে উঠে।লিলি বেগম প্রিয়মের দিকে তাকিয়ে বলল,
-“তুই হাসছিস কেন?”
প্রিয়ম উত্তর দিলো না। কয়েক মুহূর্ত পর বলল,
-“বাসায় যাবে কখন?”
লিলি বেগম বেড সাইড থেকে ঠান্ডা হওয়া কফির মগ হাতে নিয়ে কিচেনের দিকে যেতে যেতে বলল,
-“মোনা সুস্থ হোক একটু।”
মোনা লিলি বেগম’কে ডেকে বলল,
-“খালা কফি খাবো না এখন আর।”
লিলি বেগম মোনার কথা অগ্রাহ্য করে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।লিলি বেগম কিচেনে যাওয়ার পর প্রিয়ম দুষ্টুমি ভরা কণ্ঠে বলে,
-“বড় ভাইয়া না?ওদিকে ফিরে আছো কেন?আমার দিকে ফিরো। মাঝে মাঝে এত লজ্জা আসে কোত্থেকে তোমার?”
মোনার ঠোঁটে হাসি হাসি ভাব।প্রিয়মের দিকে তাকায়। প্রিয়মও হেসে ফেলে মোনার অভিব্যক্তি দেখে। মোনার একটা হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,
-“ওষুধ খেয়েছো?”
-“এতক্ষণে মনে পড়ল?”
-“এতক্ষণ তো অমৃত লোকে ছিলাম। মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিবো?”
মোনা গরম চোখে তাকিয়ে আহ্লাদপূর্ণ গলায় বলল,
-“হাত ছাড়ুন।খালা বাসায় জলপট্টি দিতে আসছে।”
-“এভাবে আনন্দোচ্ছল থাকলে তোমায় কত উষসী লাগে তুমি জানো?সব সময় খিটখিটে মেজাজ নিয়ে থাকো।”
-“হাত না ছাড়লে আবার খিটখিটে মেজাজি হয়ে যাবো।”
প্রিয়ম হেসে হাত ছেড়ে দেয়। মোনা প্রিয়মের দিকে আড়চোখে তাকায়, প্রিয়মের চোখাচোখি হলেই দৃষ্টিতে নামিয়ে নেয়। কিছু সুন্দর মুহুর্ত এভাবে কেটে যায়। লিলি বেগম কফি নিয়ে আসে। অনেকক্ষণ ধরে আড্ডা হয়। প্রিয়ম যাওয়ার আগে মোনার কানের কাছে মুখ এনে আস্তে করে বলল,
-“আসি নেশারী।ফোন’টা কি অন করেছো?”
মোনা প্রিয়ম’কে মৃদু ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে সতর্ক করে বলে,
-“ফোন অন করেছি,খালা আসবে যান।”
প্রিয়ম বেরিয়ে যায়। মোনা তাকিয়ে থাকে সে দিকে অনেকক্ষণ। সুমধুর এক অনুভূতি’তে মোনা বার বার রোমাঞ্চিত হচ্ছে। কেউ নিজের ভুল শুধরে একবার সুযোগের আবদার করলে অবশ্যই দিতে হয়।
____
দুইদিন পর মোনা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়।সদ্য জ্বর থেকে সেরে ওঠার কারণে শরীর কিছু’টা ক্লান্ত লাগছে। প্রিয়ম দুই দিনে অসংখ্য বার এসেছে।লিলি বেগম সকালেই চলে গেছে।মোনা ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল শুকাচ্ছে আর গুনগুন করে গান গাচ্ছে।
খাটের উপর থাকা মোবাইল’টা বেজে চলেছে অনেকক্ষণ ধরে। মোনা নিজের চুল শুকিয়ে তারপর ফোনের কাছে যায়। আটবার ফোন দিয়েছে জ্যাক। জ্যাক কখনো দুই বারের বেশি ফোন দেয় না। মোনা কিছু’টা অবাক হলো।কল ব্যাক করার সাথে সাথেই ওপাশ থেকে রিসিভ হলো। যেন এতক্ষণ কলের অপেক্ষায়’ই ছিলো।
-“জ্যাক কেমন আছেন? প্রিন্সেস কেমন আছে?”
ওপাশ থেকে মৃদু গলায় বলল,
-“হ্যাঁ আমি ভালো আছি,প্রিন্সেস ভালো আছে।”
এই টুকু বলে থামলো জ্যাক। খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,
-“মোনালিসা, আপনার সাথে একটু কথা ছিলো।সময় হবে?”
জ্যাকের বলা কথা’টা শোনার সাথে সাথেই মোনার মস্তিষ্কে জুড়ে চিন্তা চলে আসলো কি কথা বলবে জ্যাক?মোনা কয়েক মুহূর্ত পর শঙ্কিত গলায় বলল,
-“হ্যাঁ আছে। কি কথা বলেন তো জ্যাক?এত জরুরি তলব!”
-“বাসায় আসুন তারপর বলব। ভার্সিটি শেষে অফিসে যাওয়ার দরকার নেই। দুই মাস অফিসে না গেলেও এক ডলারও কাটবে না।”
মোনা আচ্ছা বলে ফোন রাখলো। নিশান কে নিয়ে বাসা থেকে বের হলো। নিশান কে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে ভার্সিটি’তে যাবে। মোনা বাসা থেকে বের হয়ে দেখত প্রিয়ম গাড়ি নিয়ে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে। সেদিনের পর থেকে প্রিয়ম জ্যাকের বিষয় কিছু বলে নি আর। প্রিয়ম’কে কালো ছাড়া আর কোন রঙের শার্ট কিংবা টি-শার্ট পড়তে দেখে নি মোনা। হাতের ঘড়ি, গাড়ি সব কালো রঙের। মোনা গাড়ি’তে উঠে প্রিয়মের দিকে তাকিয়ে বলল,
-“কালো ছাড়া আর কোন রঙের শার্ট পড়া যায় না?”
-“তুমি বললে যায়। বলো কি রঙের শার্ট পরবো?”
মোনা একটু ভেবে বলল,
-“হোয়াইট শার্ট, হোয়াইট প্যান্ট।”
-“এখুনি পরবো?গাড়ি থামিয়ে শপিং মলে গিয়ে পরে আসি?”
মোনা তড়িঘড়ি করে বলল,
-“এই না,না। এখন লাগবে না।”
নিশান’কে স্কুলের সামনে নামিয়ে দিলো। গাড়ি আবার চলতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ শব্দহীন কাটলো। নিরবতা ভেঙ্গে প্রিয়ম বলে,
-“মোনা চুমু খেতে ইচ্ছে করছে।”
মোনা শিউরে উঠে।লজ্জা মিশ্রিত এক অনুভূতি মোনার শিরায় শিরায় আন্দোলিত হচ্ছে। মুখে রক্তিম আভা। অন্যদিকে ফিরে বলে,
-“খারাপ হচ্ছে কিন্তু।”
প্রিয়ম হেসে ফেলল। মুখে হাস্যজ্জ্বল ভাব বজায় রেখেই বলল,
-“আচ্ছা খাবো না চুমু।লজ্জা পেয়ো না প্লীজ, তোমার এত লজ্জা পাওয়া দেখলে আমিও লজ্জা পাই।”
মোনা রাগি ভঙ্গিতে তাকালো প্রিয়মের দিকে। কিছুক্ষণ পর ভার্সিটির সামনে এসে গাড়ি থেমে যায়। মোনা চমকে গিয়ে বলল,
-“এত তাড়াতাড়ি এসে গেছি।”
-“প্রেমময় পথ তাড়াতাড়ি শেষ হয় জানো না?”
প্রিয়ম মোনা’কে নামিয়ে দিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে যেতে থাকে।
জ্যাক কি বলবে?মোনার মাথা শুধু এই প্রশ্ন’টা ঘোরপাক খাচ্ছে। ভার্সিটি শেষে জ্যাকের কথা মত অফিসে না গিয়ে সোজা জ্যাকের বাসায় যায় মোনা। প্রিন্সেস এখন হাঁটতে শিখেছে।ছোট ছোট পা দুটো দিয়ে হেঁটে মোনার কাছে আসে।মোনা হৃষ্টচিত্তে প্রিন্সেস’কে জড়িয়ে ধরে চুমু খায়। প্রিন্সেসের জন্য মোনার সব সময় আলাদা টান অনুভুত হয়।মোনার কোলে গিয়ে আধো আধো গলায় মাদার,মাদার বলতে থাকে।
প্রিন্সেস’কে কেয়ারটেকারের কাছে দিয়ে ,জ্যাক মোনা’কে নিয়ে বাসার ছাদে যায়।জ্যাকের আচরণ রহস্যজনক মনে হচ্ছে মোনার কাছে।দুই জন মুখোমুখি বসে। জ্যাক মোনার দিকে তাকিয়ে বলল,
-“মোনালিসা কিছু কথা বলব আপনায়।”
মোনা কিছু’টা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে যায়।জ্যাকের মনের ভিতর টা চলছে বোঝার চেষ্টা করে। ইতস্তত বোধ করে বলে,
-“জ্যাক কি বলবেন?কোন সমস্যা হয়েছে?”
জ্যাক মাথা ঝাঁকিয়ে না বলে। নড়েচড়ে বসে কিছুটা উদাস গলায় বলতে শুরু করে,
-“আমি তখন একটা হসপিটালের ডাক্তার।একদিন এক রোগী আছে। ষাট ঊর্ধ্ব হবে বয়স। রোগীর সাথে তাঁর মেয়ে ছিলো।মেয়ে’টা কে দেখে আমার চোখ আটকে যায়। মায়াময় চেহেরা! আমি আগ্রহী হয়ে উঠি। জানতে পারি মেয়েটার নাম মোনালিসা।ব্যারিংটনে’ই থাকে। মোনালিসার বাবা কয়েকদিন পর সেরে ওঠে। এর পর আর মোনালিসার দেখা নাই। আমি পাগল হয়ে গেলাম মোনালিসা’কে দেখার জন্য। পুরো ব্যারিংটন খুঁজে বের করলাম ও’কে।অদ্ভুত লাজুক ছিলো সে।এমন লাজুক মেয়ে আমি প্রথম দেখি।আলাদা বিশেষত্ব খুঁজে পাই। আমি প্রেমের প্রস্তাব দিই। মোনালিসা না করে দেয়।কারণ জিজ্ঞেস করলে বলে, আমাদের ধর্ম এক না, আমাদের সংস্কৃতি এক না, আমাদের ভাষা এক না। আমেরিকায় তো অধিকাংশ মানুষ ধর্ম বিশ্বাসী না,আমিও ছিলাম সে রকম একজন। ধর্ম কোন ফ্যাক্ট হতে পারে আমার জানা ছিলো না। আর একটা মেয়ে এত’টা রক্ষণশীল হয়, মোনালিসা কে দেখে প্রথম ধারণা পেয়েছিলাম। আমি মোনালিসার মোহে অন্ধ হয়ে যাই।আমি জগত সংসার সব যেন ভুলে যাই। মোনালিসা ছিলো বাঙালি।আমি ধীরে ধীরে ওঁর সংস্কৃতি সম্পর্কে জানি,ওঁর ধর্ম সম্পর্কে জানি, ওর পছন্দ -অপছন্দ সম্পর্কে জানি। আমি দুই বছর ওঁর পিছনে পড়ে ছিলাম। বিশাল এক পরিবর্তন আসে আমার মাঝে।আমি অবশেষে পেরেছিলাম ওর মন জয় করতে।সব বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করে শেষ পর্যন্ত ধর্ম বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। আমি ধর্মে বিশ্বাস না করলেও আমার বাবা-মা খ্রিষ্টান ধর্মের ছিলো। তারা মানবে না কিছুতেই। মোনালিসার জন্য পরিবার ছেড়ে দিই অবশেষে। ইসলাম ধর্ম অনুসারে আমাদের বিয়ে হয়।ছোট সুখের সংসার হয়। বলতে পারেন আমিও তখন মোটামুটি বাঙালি কালচার শিখে যাই। মোনালিসা যখন প্রেগন্যান্ট হয় তখন সুখ গুলো আরো প্রখর হয়। কিন্তু সে সুখ আর স্থায়ী হলো না বেশিদিন। নুদারের জন্মের সময় মারা যায় মোনালিসা। মোনালিসা ছিলো আমার কুইন। তাই নুদার’কে প্রিন্সেস’ই ডাকি। এভাবে সমাপ্তি হয় আমার গল্পের।”
(চলবে)
বিঃদ্রঃ- জ্যাকের বাকি কথা কাল শুনবেন🙆আজ আর সময় নেই🤦জ্যাক কি বলবে এরপর?