মোনালিসা
লেখা-ইসরাত জাহান তানজিলা
পর্ব-৩৯
মোনা মদোন্মত্তের মত বাসায় ঢুকে।অশ্রুপূর্ণ মোনার চোখ দুটি। মোনা দিকভ্রষ্ট হয়ে গেছে যেন। বিধ্বস্ত রূপে বিছানায় শুয়ে পড়ে। মোনার সব ভেঙে চুরে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে। বুকের ভিতরে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে।মোনার এই যন্ত্রনা যত’টা প্রিয়মের কর্মকাণ্ডে জন্য না যতটুকু তার থেকে বেশি প্রিয়ম’কে ভালোবেসে সে প্রায়শ্চিত্তে।আত্মগ্লানি’তে মোনার বুকের ভিতর তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। প্রিয়মের কথা বিশ্বাস করেছে নির্বোধের মত।প্রিয়মের অত পাগলামি মিছে হতে পারে মোনা সেটা অবচেতন মনেও ভাবেনি।প্রিয়ম একটুও পরিবর্তন হয়নি,প্রিয়ম আগের মতই আছে। মোনা বেড সাইডে রাখা কাঁচের জগ’টা বিকট শব্দে ছুঁড়ে মারে। মোনার সাথে পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট জিনিস’টাই ঘটে। মোনা কাঁদতে পারছে না আর, শরীরের সব শক্তি যেন ফুরিয়ে গেছে।এর ভিতর ফোন বেজে ওঠে। মোনা বালিশ থেকে মুখে তুলে কাঁপা কাঁপা ফোন নিয়ে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকায়।প্রিয়ম ফোন দিয়েছে। মোনা ফোন’টা তীব্র রোষে ছুঁড়ে মারে।ফোন’টা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। মোনার খেয়াল নেই সেদিকে। মোনার ইচ্ছে করছে সব যন্ত্রনা’কে অবকাশ দিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে। মোনার বার বার মনে হচ্ছে ওর জীবনে কখনো সুখ ধরা দিবে না।সুখ ওর জন্য অমাবস্যার চাঁদের মত। মোনা চাপা কণ্ঠে তীক্ষ্ণ আর্তনাদ করে উঠছে। কাল এসে প্রিয়ম আবার ক্ষমা চাইবে? অনুতপ্ত হবে? মোনা নিজের প্রতি উষ্মান্বিত হয়ে পড়ে।
আর একটা নির্ঘুম যামিনী কাটে।প্রভাতে পূর্ব অম্বরে রক্তিম আভা নিয়ে অরূণোদয় হয়। মোনার মাথা ভার হয়ে আছে,চোখ দুটো ফুলে ছোট হয়ে গেছে। চোখের ভিতর তীব্র প্রদাহ হচ্ছে।প্রদাহের ফলে চোখ ভিজে যাচ্ছে।নিশান জানালা খুলতেই এক চিলতে আলো এসে মোনার চোখে পড়ে। মোনা নিভু নিভু চোখে তাকাতেই চোখ দুটো জ্বলে ওঠে।নিস্তেজ গলায় বলে,
– “নিশান জানালা বন্ধ করো।”
নিশান জানালা বন্ধ করে।মোনা আরো কিছুক্ষণ শুয়ে থাকে। খানিকক্ষণ পর উঠে বসে।ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে পানি ছিটিয়ে আসে। মোনার ফর্সা মুখ’টা লালচে হয়ে আছে, নাকের ডগা জমাট বাঁধা রক্তের ন্যায় রক্তিম হয়ে আছে। টেবিলের কাছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিশানের জন্য আপেল কাটছে। মোনা অভিনিবেশহীন ভাবে কাজ করছে। মস্তিষ্ক অন্য ভাবনায় নিমজ্জিত। আপেল কাটার বদলে ডান হাতের তর্জনী আঙ্গুল’টা অনেকখানি কেটে যায়। মোনার হাত থেকে ছুরি’টা পরে যায়। ব্যথায় মোনা কুঁকড়ে ওঠে। হাত থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় রক্ত ফ্লোরে গড়িয়ে পড়ছে। মোনা আঙুলে ব্যান্ডেজ পেঁচিয়ে,ছুরি’টা ফ্লোর থেকে তুলে আবার আপেল কাটতে শুরু করে।
পাশের রুমে পুরুষালি গলা শুনা যাচ্ছে। মোনা কাজ বন্ধ করে খান খাড়া করে ভালোভাবে শোনার চেষ্টা করছে শব্দ’টা কোত্থেকে আসছে?পাশের ফ্ল্যাট থেকে নাকি পাশের রুম থেকে? মোনার ভাবনা শেষ হতে না হতেই দেখে মোনা যে রুমে আছে ওই রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়ম। মোনার চোখ মুখ দিয়ে আগুনের ফুলকি ছড়াচ্ছে।রাগে ঠোঁট কাঁপছে ঈষৎ। মোনা চোখ বুঁজে উঁচু গলায় নিশান’কে ডেকে।ক্রোমান্মত্ত গলায় বলে,
– “তোকে দরজা খুলতে না করেনি?তুই কেন খুলেছিস দরজা?”
রাগে মোনার দম বন্ধ হয়ে আসছে। মোনা জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।প্রিয়ম কয়েক পা এগিয়ে আসে।মোনা বন্ধ চোখ মেলে তাকায়। চোখজোড়া যেন ফার্নেসের চুল্লি। প্রিয়ম অপরাধীর মত নিচু গলায় বলে,
– “মোনা আমার রাগ হয়েছিল।আমি নিজেকে সামলাতে পারছিলাম না। আমি অন্তত তোমার বিষয়ে প্রচণ্ড জেলাস মোনা।”
মোনা রোষ,ক্ষোভ দাবিয়ে একটা ক্ষীণ নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
– “আমার সামনে আসতে আপনার লজ্জা করে না? চোখে লজ্জার লেশ মাত্র নেই আপনার!কোন মুখ নিয়ে আমার সামনে আসছেন?”
মোনা একটু থামে। দারুণ ক্রোধে চোখ ভিজে ওঠে। তর্জন করে উঠে বলে,
– “আমি কোন কথা শুনতে চাই না।আমি এই সম্পর্ক রাখবো না।আপনি কি আমায় জোর করবেন?আপনি একটা নিকৃষ্টতম মানুষ! কখনো ভালো হবেন না,কখনো পরিবর্তন হবে না।”
মোনার থাপ্পড়ের কষাঘাতে প্রিয়মের গালে সমান্তরাল কালশিরা তৈরি হয়েছে। পাঁচ’টা আঙ্গুলের ছাপ স্পষ্ট।প্রিয়ম মোনার পাশে দাঁড়ায়।
– “তুমি তখন জ্যাকের বাসায় যাও আমারও তো তখন এমন হয় মোনা। আমি অনেক বার বলেছি আমি তোমায় নিয়ে ঈর্ষান্বিত।আগে কখনো এমন হয় নি।”
মোনা এ পর্যায়ে চেঁচিয়ে বলে,
– “কথায় কথায় জ্যাক’কে টানেন কেন?আমি জ্যাকের বাসায় গিয়েছে।তিন ঘন্টা ছাদে বসে কথা বলেছি।আমাদের মাঝে কম হলেও পাঁচ হাত দূরত্ব ছিলো।সবাই কে নিজের মত চিপ ভাবেন?জ্যাক স্রেফ আমার বন্ধু। আর এখন আমি জ্যাকের বাসায় সারাদিন গিয়ে বসে থাকবো তাতে আপনার কি?আপনার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।আপনার মত কাউকে আমি কখনো প্রত্যাশা করেনি।”
প্রিয়ম চুপ থাকে। অনেকক্ষণ কেউই কোন কথা বলেনি।মোনা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে। প্রিয়ম চিন্তিত মুখে কি যেন ভাবলো। প্রিয়মের সরল স্বীকারোক্তি,
– “মোনা আমি সত্যি বলছি। বন্ধুদের জোরাজুরি’তে আমি মাঝে মাঝেই যাই ক্লাবে। আগে প্রতিদিন যেতাম,এখন মাসে একবার যাই। আমি প্রমিস করছি আর কখনো এমন কিছু হবে না। তোমার উপর যত রাগ হোক কখনো আর যাবো না।আমায় একটু শুধরানোর সুযোগ দেও, ভবিষ্যতে আর এমন হবে না।”
মোনা বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে যায়।কয়েক মুহূর্ত আগেও মোনার ধারণা ছিলো জ্যাকের বিষয় নিয়ে রাগ করে প্রিয়ম এমন করেছে।প্রিয়ম মাঝে মাঝেই যায় ক্লাবে? মোনা হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে থাকে। মোনার বিস্ময়ের রেশ কাটতে সময় লাগে কিছুক্ষণ। বিমূঢ় হয়ে বলে,
– “আপনি প্রায়শ যান? এতদিন মিথ্যা বলেছেন?নিজের মুখে এসব স্বীকার করছেন?”
মোনা চেয়ারে বসে পড়ে।প্রিয়মের দিকে তাকাতে ইচ্ছে হচ্ছে না। প্রিয়ম চেয়ারের হাতলের উপর হাত রেখে অনুশোচিত গলায় বলল,
– “মোনা আমি প্রমিস করছি আর যাবো না কখনো।ওসব ছাড়া আমি বাঁচতে পারব কিন্তু তোমায় ছাড়া বাঁচতে পারবো না।প্লীজ আর একটা সুযোগ দেও, ভবিষ্যতে আর এমন হয়ে না মোনা প্রমিস।”
মোনার চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা অশ্রু বিসর্জিত হলো। মোনা মূর্তির ন্যায় ঠাঁয় বসে থাকে। মোনা কান্না ভেজা গলায় বলল,
– “প্লীজ আপনি আমার সামনে থেকে চলে যান।আসলে আমাদের প্রেম’টা খনিকের বিভ্রম ছিলো। শুধু শুধু আমার মত একটা মেয়ের পিছনে পড়ে আছেন কেন বলুন?এমন কোন মেয়ের সাথে সম্পর্ক করুন যে আপনার জীবনধারা নিয়ে কিছু বলবে না। আপনি আপনার খেয়াল খুশি মত চলতে পারবেন। আপনার শুধু জ্যাক কে নিয়ে সমস্যা। আমার একজন শুভাকাঙ্ক্ষী’কে নিয়ে শুধু আপনার সমস্যা।”
মোনা একটু থামে। চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে সোফায় বসে। অশ্রুপূর্ণ চোখে প্রিয়মের দিকে তাকিয়ে বলে,
– “আপনাকে ভালো না বাসার মত কতশত কারণ ছিল সে আপনি জানেন? আমি সব উপেক্ষা করেছি।আমি আপনার উপর আস্থা,ভরসা রাখতে চেয়েছি।আপনায় বিশ্বাস করতে চেয়েছি।আপনি কি মূল্য দিলেন? আপনি স্যরি বলছেন,আপনি প্রমিস করছেন।আপনি সব রকম অপরাধ করে এসে স্যরি বলবেন, প্রমিস করবেন। আর আমি সব মেনে নিবো? আমার একটু শান্তি দরকার। আমি তিক্ত হয়ে গেছি।এমন হতে থাকলে আমি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হবো।আপনি কখনো আমার সামনে আসবেন না,আর কখনো না।”
প্রিয়ম মোনার একটু তফাতেই দাঁড়ানো।মোনা অগ্নিবর্ণ চোখে তাকিয়ে রয়েছে প্রিয়মের দিকে। প্রিয়ম বলল,
– “মোনা আমি ভুল করেছি।আর কখনো এমন হবে না ।প্লীজ আর একবার সুযোগ দেও আমায়। আমি প্রমিস করছি।”
রাগে মোনার শরীর কাঁপছে। মোনার ছোট বেলায় এত রাগ ছিলো না। মায়ের মৃত্যু,বাবার খুন,বোবা ভাই’কে নিয়ে নতুন এক সংগ্রাম মোনা’কে রুক্ষ, মেজাজি করে দিয়েছে। অল্পতেই মোনা রেগে যায়। রাগে মোনার বিবেক, বুদ্ধি, চিন্তা-শক্তি সব যেন লোপ পেয়েছে।মোনা রাগে কাঁপতে কাঁপতে আপেল কাটার জন্য যে ছুরি’টা মোনার হাতে ছিলো, সেটা প্রিয়মের দিকে ছুঁড়ে মারলো।ছুরি’টা গিয়ে প্রিয়মের বাম কাঁধে লাগলো। ঘটনার আকস্মিকতায় প্রিয়ম শুধু উহ্ বলে উঠে। হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে। কয়েক মুহূর্ত পর ব্যথায় কাতরাতে থাকে। প্রিয়মের গায়ের সাদা শার্ট’টা মুহূর্তেই রক্তিম হয়ে যায়।মোনা বলেছিলে সাদা শার্ট পড়তে।আজ আর সেদিকে খেয়াল ছিলো না মোনার।
প্রিয়ম মোনার দিকে তাকিয়ে তাকালো। এমন আঘাতপ্রাপ্ত হয়েও কোন রাগ,জিদ কিংবা ক্ষোভ প্রকাশ করলো না। অসহায় গলায় বলল,
– “মোনা ব্যথা হচ্ছে খুব।প্লীজ কিছু একটা করো।”
প্রিয়ম ব্যথায় কাতর হয়ে চোখ মুখ কুঁচকে রেখেছে। একটু আগে প্রচণ্ড ক্ষোভে মোনা যে কাজ’টা করেছে , পাঁচ মিনিট না পেরুতেই সে কাজ’টার জন্য মোনার ভেতর কেমন পাপ বোধ জাগলো। প্রিয়মের যন্ত্রনা কাতর মুখের দিকে তাকিয়ে মোনার সকল ক্ষোভ খানিকক্ষণের জন্য উবে গেল। নিশান পায়ের ব্যথা পাওয়ার পর স্যাভলন লিকুইড অ্যান্টাসেপটিপ আর ওষুধ এনেছিল।মোনা ছুটে গিয়ে সেগুলো নিয়ে আসে। এমন একটা নির্বোধের মত কাজ না করলে হয়ত প্রিয়মের দিকে ফিরেও তাকাতো না। প্রিয়ম ক্ষতস্থান হাত দিয়ে চেপে রেখেছে। মোনা প্রিয়মের পাশে চেয়ার টেনে বসে ইতস্তত বোধ করে বলল,
– “দেখি তো।”
প্রিয়ম চোখ খুলে তাকায়। স্বাভাবিক গলায় বলল,
– “শার্ট খুলে দেও নয়ত কিভাবে দেখবে?এত রাগ তোমার! কবে যে আমার তুমি খুন করে ফেলবে মোনা!”
প্রিয়মের কথা শুনে মনা হচ্ছে খুব ছোট খাটো একটা ঝগড়া হয়েছে ওদের মাঝে।প্রিয়মের এমন নির্লিপ্ততায় মোনা বিচলিত হলো।প্রিয়মের গায়ের শার্ট খুলতে গিয়ে অস্বস্তি’তে পড়ে যায় মোনা।খানিকটা লজ্জাও পাচ্ছে।শার্ট খুলে দেখে প্রিয়মের ফর্সা শরীরে ছুরির আঘাত’টা লাল টকটকে হয়ে ফুটে আছে। মোনা ক্ষত দেখে আঁতকে উঠে। মারাত্মক ভাবে কেটে গেছে। একটু আগের সব কিছু ভুলে যায়।প্রিয়ম মোনার দিকে তাকিয়ে কৌতুক ভরা গলায় বলল,
– “যাক অবশেষে পতি সেবায় নিয়োজিত হলে।”
মোনা প্রিয়মের এমন ভাবলেশহীন ভাব দেখে অবাক না হয়ে পারে না। মোনা চুপচাপ রক্ত মুছে দিচ্ছে তুলো দিয়ে। প্রিয়মের কথার প্রত্যুত্তর করছে না। এতখানি কেটে যাওয়ার পর একটা মানুষ কিভাবে এমন স্বাভাবিক থাকে? প্রিয়ম মাথা উঁচিয়ে মোনার দিকে তাকিয়ে অনুনয় করে বলে,
– “মোনা প্রমিস করছি আর কখনো যাবো না ক্লাবে।আর কোন মেয়ে’কে চুমু খাবো না কখনো।তোমার যতক্ষণ রাগ না কমে ততক্ষণ ছুরি দিয়ে আঘাত করো আমায়। তবুও ছেড়ে যাওয়ার কথা বলো না মোনা। শুধু আর একবার সুযোগ দেও।”
মোনার অন্তর্দেশের ক্ষোভ এখনো যায়নি।জ্ঞানহীন মানুষের মত ছুরি ছুঁড়ে মেরে কিছু মুহূর্তের জন্য ওসব ভুলে যায়। মোনা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
– “চুমু খান নয়ত যা ইচ্ছে তাই করেন প্লীজ ওসব আমায় বলতে আসবেন না।আমি নির্বোধের মত একটা কাজ করেছি সে জন্য আমি স্যরি।রাগ হয়েছিল আমার। রিয়েলি আই এম স্যরি।”
– “মোনা কত বার আঘাত করলে তোমার রাগ যাবে বলো তো?তত বার’ই আঘাত করো। তবুও আমায় ভুল শুধরানোর একটা সুযোগ দেও।”
– “মানুষ সজ্ঞানে ইচ্ছাকৃত ভাবে একটা কাজ বার বার করলে সেটা ভুল না। কেউ বিশ্বাস করলে তাঁর বিশ্বাস ভাঙা ভুল নয় প্রতারনা।”
প্রিয়ম চুপ থাকলো খানিকক্ষণ।আহত গলায় বলল,
– “মোনা আমায় একটা সুযোগ দেও অন্তত।মোনা তুমি আমায় ভালোবাসো না?আমায় তুমি মিস করবে না?”
মোনা শক্ত গলায় বলল,
– “বেসেছিলাম ভালো। না মিস করবো না।”
প্রিয়ম অনিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মোনার দিকে। মোনা প্রিয়মের আচরণ নিয়ে সেই শুরু থেকে সন্দিহান। প্রিয়ম’কে কখনো ঠিকঠাক বুঝতে পারেনি,এখনও পারছে না।মোনা ফ্যাকাশে মুখে বলল,
– “ওষুধ খেয়ে নিন।”
প্রিয়ম কি ভেবে যেন হাসলো।বলল,
– “আমায় আঘাত করে পাঁচ মিনিট যেতে না যেতেই তুমি অস্থির হয়ে পড়লে।সেই তুমি আমায় ভুলতে পারবে?তোমার রাগ,জিদ,ক্ষোভের আড়ালে যে ভালোবাসা আছে তাকে তুমি দাবাবে কেমন করে মোনা?আমায় আর একটা সুযোগ দাও। এবারের মত আমায় ক্ষমা করো।”
মোনা এসব কথা কর্ণপাত না করে বিষণ্ণ গলায় বলল,
– “ওষুধ খেয়ে নিন।”
– “কিভাবে ওষুধ খাবো?হাত ব্যথায় নাড়াতে পারছি না।”
– “হাঁ করুন আমি খাইয়ে দিচ্ছি।”
প্রিয়মের ঠোঁটে হাসির চিহ্ন। প্রফুল্ল হয়ে পড়ে।মোনা ওষুধ খাইয়ে দিয়ে বলে,
– “বাসায় যান ব্যথা কমে যাবে।আর কখনো আমার সামনে আসবেন না।”
– “আসবো হাজার বার আসবো। সারাজীবন আসবো।তোমায় নিয়ে সুখের একটা সংসার করবো। আমাদের দুইটা টুইন বেবি হবে। তোমার মত রাগে টুইটম্বুর! একজনে ডান কাঁধে ছুরি মারবে, আরেক জনে বাম কাঁধে। আর তুমি গলায়। ব্যস এভাবেই আমার গল্পেই সমাপ্তি।”
মোনা চিৎকার করে উঠল।প্রিয়মের এমন নির্লিপ্ত ভাব দেখে মোনা তীব্র হতাশ।কেউ যদি সব অপমান এভাবে কৌতুক করে উড়িয়ে দেয়, সিরিয়াস কথায়ও যদি কোন পরিবর্তন না হয় তখন কি করা যায়? মোনার ক্ষোভ ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে যেন প্রিয়মের আচরণে।প্রিয়ম আবার বলে,
– “আমি ব্যথায় হাত নাড়াতে পারছি না, ড্রাইভ করবো কিভাবে? বাসায় কিভাবে যাবো?আজ আমার অফিস জরুরি একটা মিটিং ছিলো, আমার চাকরি’টা ই যাবে।”
খুব স্বাভাবিক আর কৌতুকপূর্ণ গলায় কথা বলতে প্রিয়ম। মোনা তাকিয়ে আছে প্রিয়মের দিকে। কালকে রাতের কথা মনে হতেই এক রাশ ঘৃণায় মোনার চোখ বুঁজে আসে।মোনা ভারি গলায় বলল,
– “আচ্ছা আপনি তো আমায় ভালোবাসেন। তাহলে অন্য মেয়েদের ঠোঁটে কিভাবে চুমু খান?ক্লাবে গিয়ে কিভাবে মেয়েদের নিয়ে ফুর্তি করেন?”
মোনার কথায় শাণিত অভিমান আর কষ্ট। মোনার চোখ দুটো পানিতে ছাপিয়ে ওঠে।প্রিয়ম নিচু গলায় বলল,
– “বন্ধু’রা জোর করে নিয়ে গেছে। আমি নেশাগ্রস্ত ছিলাম। আমার হুঁশ ছিলো না। মোনা আমায় মাফ করে দেও।”
প্রিয়ম বার বার ক্ষমা চেয়ে যাচ্ছে। মোনা প্রিয়ম’কে থামিয়ে বলে,
– “আপনি তো আমায় ভালোবাসেন। তাহলে শুধু এইটুকু বলেন অন্য মেয়েদের প্রতি কিভাবে আপনার ফিলিংস কাজ করে?”
– “মোনা আমি নেশাগ্রস্ত ছিলাম। আমি তোমার বিশ্বাস ভেঙ্গেছি। আমি ভালোবাসা দিয়ে তিলে তিলে সব গড়ে তুলবো মোনা প্রমিস। ভুলে যাও কালকের রাত’টা আমায় সুযোগ দেও।”
মোনা নিরুত্তর। এতক্ষণ আটকে রাখা চোখের পানি টুকু অবাধ্য ভাবে গড়িয়ে পড়ল।প্রিয়ম ডান হাত দিয়ে মোনার চোখের পানি টুকু মুছিয়ে দিয়ে আবেগ জড়ানো গলায় বলে,
– “মোনা পাখি স্যরি আমি।আর কখনো কষ্ট দিবো না।ছুরি দিয়ে আরো আঘাত করো আমার।”
মোনার কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেছে। মনের ভিতর থাকা ক্রোধ টুকু যেন অভিমানে পরিণত হয়ে চোখে পানি হয়ে ঝড়ছে। কান্নায় ধরে আসা গলায় বলল,
– “আপনি চলে যান আমার বাসা থেকে।রাগ হয় আপনায় দেখলে।”
– “কিভাবে যাবো?তুমি আমার হাত কেটে দিয়েছো।ড্রাইভ করবো কিভাবে?
মোনা প্রিয়মের কথা মানতে নারাজ। চোখে আষাঢ়ের ধারা প্রবাহিত হচ্ছে।প্রিয়ম চেয়ার টেনে মোনা পাশে একটু ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে। মোনার হাতের দিকে তাকিয়ে বলে,
– “হাত কেটেছে কিভাবে তোমার?”
মোনা উত্তর দেয় না।প্রিয়ম আবার বলে,
– “দেখো আমি সাদা শার্ট পরে এসেছি আজ। তুমি শার্ট’টা কেটে দিলে।”
প্রিয়মের কোন কথাই মোনার কর্ণপাত হচ্ছে না।এর ভিতর প্রিয়মের অফিস থেকে ফোন আসে।মোনার সামনে বসেই কথা বলে। কথা বলা শেষে প্রিয়ম মোনার দিকে তাকিয়ে বলে,
– “মোনা আমার যেতে হবে।আর কখনো আমার কারণে তোমার কাঁদতে হবে না।আমি সব সময় তোমার হাসির কারণ হবো। আমার যেতেই হবে এই কাটা হাত নিয়ে কিভাবে যাবো?খুব জরুরি!আমি অফিস শেষে আসবো।”
প্রিয়ম চলে গেল। মোনা ঠাঁয় বসেই থাকলো।বার বার রাতের ওই দৃশ্য চোখের উপর ভাসছে।মোনা কিছুতেই মানতে পারছে না। অনেকক্ষণ পর মোনা উঠে গিয়ে দরজা লাগিয়ে আসে। রুমে এসে জানালার গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মুখ’টা শীর্ণ হয়ে আছে।চোখ গুলো ফুলে রয়েছে। তীব্র দোটানায় ভুগছে।জটিল এক ধাঁধায় পড়ে গেছে মোনা।প্রিয়ম’কে আবার সুযোগ দিবে?
___
চার দিন কেটে যায়। মোনা ফোন ভেঙ্গে ফেলেছে সেদিন রাতে।প্রিয়ম ফোনে পায় না মোনা’কে। অসংখ্য বার মোনার বাসায় এসেছে,ভিতর থেকে বাসা লক করা। কত বার কলিং বেল বাজিয়েছে কোন হিসেব নেই। মোনা দরজা খুলে নি। বার বার হতাশ হয়ে ফিরে গেছে প্রিয়ম। মোনা না যায় ভার্সিটি’তে, না যায় অফিসে। মোনা সেদিন রাতের ঘটনা কিছুতেই ভুলতে পারছে না। বার বার মাথা নাড়া দিয়ে উঠছে। মোনা স্বেচ্ছায় বন্দি হয়ে আছে। সব কিছু বিষাদময় লাগে মোনার। বুকের ভিতর এক রাশ হাহাকার। প্রিয়ম কে ভুলতে চাইলে কষ্ট দ্বিগুণ হয় যেন। না পারছে ভুলতে,না পারছে ভালোবাসতে।
পাঁচ দিন পর মোনা ভার্সিটি’তে যায়। পাঁচ দিন পর মোনা কে দেখে শ্রুতি অবাক হয়ে যায়।
– “মোনা তুমি এমন কেন বলো তো?এই তোমার বাসার ঠিকানা দেও। কয়দিন পর পর হারিয়ে যাও কেন? ওইদিন রাতে কি হয়েছিল মোনা?”
মোনা শ্রুতির দিকে তাকিয়ে সহজ গলায় বলে,
– “প্রিয়ম কে চড় মেরেছি।”
– “প্রিয়মের সাথে তোমার রিলেশন?তুমি আমার কাছ থেকে লুকাচ্ছো?”
মোনা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বিষণ্ণ গলায় বলে,
– “তুমি আর ওয়াটস আমার প্রতি কত আন্তরিক অথচ আমি তোমাদের সাথে ঠিক ভাবে মিশতে পারছি না।কোন কিছু শেয়ার করি না। আমার বাবা-মায়ের প্রেম করে বিয়ে হয়েছিল।বাবার ফ্যামিলিও মেনে নেয়নি,মায়ের ফ্যামিলিও মেনে নেয় নি। আত্মীয় স্বজন বলতে কেউই ছিলো না। তাই ছোট বেলা থেকে কারো সাথে মেশার স্বভাব রপ্ত করতে পারেনি। বাবা-মায়ের প্রেম করে বিয়ে হলেও বাবা ধীরে ধীরে বদলে যায়। বাবার বিভিন্ন রকমের অত্যাচার সহ্য করে বড় হয়েছি। ছোট ভাই আছে কিন্তু কথা বলতে পারেনা।ছোট বেলা থেকেই বিষণ্ণতার মাঝে বেড়ে উঠেছি। সে নিয়ে তেমন দুঃখ ছিলো না। কিন্তু একদিন রাতে আমার বাবা আমার মা’কে আমার চোখের সামনে মেরে ফেলে।কিছুই করার ছিলো না। আমি অনুভূতি শুন্য হয়ে পড়ি। সেই থেকে ছোট ভাই’কে আগলে রেখে নতুন যুদ্ধ শুরু হয়। আমেরিকায় আসার আগের দিন বাবাও খুন হয়। আমেরিকা এসে খালার বাসায় উঠি। উঠতে-বসতে খালুর অপমান। আরো কিছু বিশ্রী ঘটনা। আমি অনুভূতি শূন্য হয়ে যাই শ্রুতি।এত আঘাত পেয়েছি জীবনে যে আমি সবকিছু’তে উদাসীন হয়ে গেছি। না কারো সাথে ভালো ব্যবহার করতে পারি,না কারো প্রতি আন্তরিকতা দেখাতে পারি। আমি কিছুই পারি না। তোমরা আমায় এত আপন ভাবো তার মূল্যও আমি দিতে পারি না।”
এসব বলতে বলতে মোনার চোখ নিজের অজান্তেই ভিজে উঠে।মোনা নিজেকে সংযত করে। কোন রকম জড়তা ছাড়া মোনা সাবলীল ভাবে বলেছে।একটা কষ্ট মোনার বুকের ভিতর পাথরের মত চাপা পড়ে আছে। কষ্ট কমাতে শ্রুতি’কে সব বলল।শ্রুতি হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। আহত গলায় বলল,
– “আমি বুঝতে পারেনি তোমার এত খারাপ একটা গল্প আছে।”
মোনা একটা ক্ষীণ নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
– “ওইদিন রাতে আমি প্রিয়ম’কে চড় মেরেছি।প্রিয়মের সাথে আমার সম্পর্ক বেশ কয়েক মাস ধরে।ও বলেছে ও আমার জন্য নিজেকে বদলাবে কিন্তু কথা রাখে নি।
আমার এত সব খারাপ সময়ে,আমার জীবনের এত কষ্টের মাঝে জ্যাক যেন ফেরেস্তার মত আসে আমার জীবনে। আমেরিকায় আসার মে বি তিন দিন পর জ্যাকের সাথে আমার পরিচয়।এখন পর্যন্ত আমার সব প্রবলেমে জ্যাক পাশে দাঁড়িয়েছে। জ্যাক আমার স্রেফ বন্ধু। এটা নিয়েও প্রিয়মের সমস্যা।এখন বলো আমার জীবনের দুঃসময়ে পাশে পাওয়া এই মানুষ’টা কে অবজ্ঞা কিভাবে করি?”
জ্যাক প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে।প্রিয়মের ব্যাপারে সমস্ত কথা শ্রুতি’কে বলল মোনা।শ্রুতি কিছুক্ষণের জন্য থ হয়ে রইল। বিস্ময়ের রেশ কাটাতে বেশ সময় লেগেছে শ্রুতির। অনেকক্ষণ দুই জন চুপ থাকলো। কিছু মুহূর্ত পর শ্রুতি বলল,
– “জ্যাক নিঃসন্দেহে খুব ভালো একজন মানুষ। আর জ্যাক তোমায় ভালোবাসার ব্যাপারে দ্বিতীয় বার বলবে না।খুব ভালো এটা।জ্যাকের ব্যক্তিত্ব অসাধারণ।আর তুমিও তো জ্যাক’কে স্রেফ বন্ধু ভাবো।জ্যাকের সাথে বন্ধুত্ব’টা ভেঙ্গো না। আর প্রিয়ম আর তোমার মাঝে প্রেম হয়েছে ঠিক’ই কিন্তু বন্ধুত্বপূর্ণ কোন সম্পর্ক নেই। তুমি প্রিয়মের ব্যাপারে সন্দিহান, দ্বিধাগ্রস্ত। প্রিয়ম তো আমেরিকায় বড় হওয়া ছেলে। নাইট ক্লাবে যায় এর মানে এই না যে তোমায় ভালোবাসে না। এটা প্রিয়মের কাছে স্বাভাবিক একটা ব্যাপার।আর প্রিয়ম জ্যাকের ব্যাপার জেলাস কারণ প্রিয়ম তোমায় মন থেকে ভালবাসে। শুধু তোমার ব্যাপারে জেলাস এর মানে সে তোমায় মন থেকে চায়। আর দেখো সব মানুষ তো সমান হয়না।একজন একজন মানুষ এক এক রকম। সমীর আমার আর ওয়াটসের ফ্রেন্ডশীপ’কে রিসপেক্ট করে এ জিনিস’টা প্রিয়মের মাঝে খোঁজা বোকামি। প্রতিটা মানুষের ভিতর ভিন্ন ভিন্ন সত্তা রয়েছে, আলাদা আলাদা চিন্তা ভাবনা রয়েছে। তুমি যখন প্রিয়ম’কে ভালোই বেসে ফেলেছ তখন ওর মত চলার চেষ্টা করো। জ্যাকের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করতে হবে না। কোন ভাবে একটু মানিয়ে নেও।প্রিয়ম’কে একটু বেশি অগ্রাধিকার দেও। সমস্ত দ্বিধাদ্বন্দ্ব মুছে ফেলো।আর প্রিয়ম ওইদিন রাতের ঘটনা’টা খারাপ হয়েছে।যেহেতু তুমি তাঁকে ছাড়া ভালো থাকতে পারছো না আর প্রিয়মও এত করে সুযোগ চাচ্ছে একটা সুযোগ দেও। পরবর্তীতে এমন কিছু হলে তখন না হয় অন্য চিন্তা করো।ওসব প্রিয়মের অভ্যাস। ভালোবাসা আর অভ্যাস দুটোই ভিন্ন জিনিস। সুযোগ দিয়ে দেখো।সে নিজেই নিজের দোষ স্বীকার করছে তখন সুযোগ দেওয়া উচিত।”
শ্রুতি কথা গুলো শেষ করে তাকালো মোনার দিকে। মোনার চোখে পানি ছাপিয়ে উঠেছে। একটু পরই গড়িয়ে পড়বে।শ্রুতির দিকে তাকিয়ে ম্লান হাসলো।
মোনা ভার্সিটি শেষে অফিসে যায়।কোন কিছুতেই মন বসছে না।ফোন ভেঙে ফেলেছে প্রিয়মের সাথে যোগাযোগ করবে কিভাবে?প্রিয়ম কে সুযোগ দিবে। যাকে ছাড়া ভালো থাকা কষ্টকর তাঁকে সুযোগ দেওয়া উচিত।মোনা ছটফট করতে থাকে। কিভাবে যোগাযোগ করবে প্রিয়মের সাথে এই চিন্তায় অস্থির হয়ে ওঠে। মোনার বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়। বাসায় ফিরে দেখে লিলি বেগম এসেছে। মোনা’কে দেখেই কর্কশ গলায় বলল,
– “ফোন ভেঙেছিস কেন?এত জিদ কেন?”
মোনা এসব কথার জবাব না দিয়ে বলল,
– “কখন এসেছো? প্রিয়ম ভাই কোথায় খালা?”
– “প্রিয়ম অফিসে। শোন তোর জন্য মোবাইল এনেছি। আমি একটু কেনাকাটা করতে গিয়েছিলাম। এখুনি চলে যাবো।”
মোবাইলের কথা শুনে মোনা আনন্দোচ্ছল হয়ে পড়ে। অন্য সময় হলে হয়তো নিতে চাইতো না। এখন মোবাইলে খুব দরকার আর মোবাইল কেনার টাকাও নেই। লিলি বেগম তাড়াহুড়ো গলায় আবার বলে,
– “আমার এখুনি যেতে হবে। পরশু তোর বড় খালা,খালু আর বিভা আসবে তাই একটু কেনাকাটা করেছি।প্রিয়মের বিয়ের ব্যাপারে।তোর খালু চায় তাড়াতাড়ি বিয়ের কাজ’টা সেরে ফেলতে। আমার কথা না শুনলেও ,প্রিয়ম তোর খালুর কথার অবাধ্য হতে পারেনা।”
(চলবে)