#যদি_দেখা_না_হতো
#পর্ব_০৬
#Tanisha_Esu
আজ তিনি আর অফিসে গেলেন না।তিনি একটু একা থাকতে চায় আমিও আর বাধা দিলাম না।
তাকে নিয়মিত খাবার খাওয়ানো,,এটাই ছিলো আমার কাজ কিন্তু তিনি এখন থেকে আবার পরিমিত কথা বলতে লাগলেন।শশুড়_শাশুড়ী ভাবলেন হয়তো আমিই কিছু করেছি তাই তার ছেলে এমন রুক্ষ হয়ে গেছে। যে টুকু কথা বলতো সেটুকুও আর বলেনা। এখন আর আমার সহ্য করার ক্ষমতা নেই।
এরই মধ্যে নাতাশা আপু আমাকে দেখা করতে বলেছে আমিও ওয়েট করছি তার জন্য।আজ তিনি একাই আসলেন।
তানিশাঃ কেমন আছো তুমি,,আর তিনি কোথায়
নাতাশাঃ ভালোই আছি,,,তিনি অফিসে,,তো কাব্যের কোন পরিবর্তন হলো
তানিশাঃ আমার হয়তো কপাল খারাপ,,এখন তিনি আগের মতো হয়ে গেছে সেইরকম কথা বলেননা।
নাতাশাঃ জানো তানিশা জেদ আর হিংসা একটা মানুষকে ধ্বংস করে ফেলে।আমি ভেবেছিলাম তার সাথে আর কথা বলবো না।বাড়িতে এসে অপমান করে গেছে আমার হাজবেন্ডকে কাব্য
তানিশাঃ কিহহহহ
নাতাশাঃ হুম,,,আমার মাথা গরম হয়ে গেছিলো তাই হয়তো অপমানের পরিমানটা বেশিই করে ফেলেছি।
তানিশাঃ এরই মধ্যে এতো কিছু করে ফেলেছেন তিনি।
নাতাশাঃ হয়তো ফোনে বলতে পারতাম।বাট শেষ দেখা করতে আসলাম
তানিশাঃ শেষ দেখা মানে??
নাতাশাঃ হুম শেষ দেখা,,,কাব্যকে এখন আমি অনেক ঘৃণা করি জানো।এমন কথা বলেছে আমাদেরকে যা হয়তো প্রকাশ করতে পারবোনা।। আমরা ইউরোপে চলে যাচ্ছি আগামী সোমবার এ।জানিনা তানিশা আর কখনো দেখা হবে কিনা,,এতোটুকুই বলবো আমার মনে হয়না তোমাদের সংসারটা আর হবে,,,ও তোমার জীবন শেষ করে দিবে দেখ।
আমি তার কথাটা শুনে কিছুটা হলেও অবাক হলাম,,তিনি এতোকিছু শোনার পরও এমন কান্ডটা করলেন।জানিনা আর কী কী সহ্য করতে হবে আমাকে।
নাতাশাঃ আচ্ছা বোন আজ আসি
তানিশাঃ আচ্ছা,,,চলে যাচ্ছো ভালো কথা কিন্তু যোগাযোগ রেখো এই বোনের সাথে
নাতাশাঃ হুম অবশ্যয়
এই বলে আপু চলে গেলো,,হয়তো তারও শশুড়বাড়ি থেকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে,,কিন্তু আসলেই আকাশ ভাইয়া আপুকে অনেক ভালোবাসে না হলে পরিবার থেকে আলাদা হয়।
আমিও এসব ভাবতে ভাবতে বাড়িতে চলে আসলাম।
প্রায় তিনমাস হতে আসলো আমার বিয়ে হওয়ার,,কিন্তু এখনও কাব্যের কোন পরিবর্তন হলো না।আমি আমার দিক দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছি কাব্য ভাইয়াকে নিজ করে পাওয়ার কিন্তু বিনিময়ে পাচ্ছি শুধু অবহেলা আর অপমান।এর মধ্যে কোন ভাবেই আমি আমার পরিবারের সাথে কন্ট্রাক্ট করতে পারলাম না।আমি বেঁচে আছি কি মরে গেছি তার কোন খোঁজ ই নেয়না।
তানিশাঃ শুনুন
কাব্যঃ কি হয়ছে
তানিশাঃ একটু আমার পরিবারের সাথে কথা বলতে দেন প্লিজ
কাব্যঃ কখনো না
তানিশাঃ আপনি কি সেই কাব্য ভাইয়া যাকে আমি ভালোবাসতাম,,,কি এমন পাপ করেছে এটা বলতে পারেন,,ভালোবাসা কি পাপ ছিলো
কাব্যঃ নিশ্চুপ
তানিশাঃ নাতাশা আপু ওই ঘটনা দেখে বিয়ে ভেঙ্গে দিলো কারণ আপনাকে ভালোবাসতো না।আপনি সেটা নিয়ে আমাকে কষ্ট দিচ্ছেন সব জানার পর।যে আপনাকে ভালোবাসেনা তার জন্য আপনি আপনার ওয়াইফকে কষ্ট দিচ্ছেন।কেন আমার ভালোবাসা দেখচ্ছেন না,,আপনার কি চোখে কালো পট্টি বাধা আছে।না আমাকে বাঁচতে দিচ্ছেন না মরতে,,আপনি আপনার পরিবার দুটোর একজনও আমার সাথে কথা বলেননা কি মনে করেন আমি রোবট
আমার চিৎকার শুনে বাড়ির সবাই চলে আসে।
কাব্যঃ তুমি কি চুপ করবে( দাঁতে দাঁত চেপে)
তানিশাঃ নাহহ আজ আমি বলবো আপনি শুনবেন,,,না করতে দেন পরিবারের কারোর সাথে কথা বলার সুযোগ,,না বাসেন আমাকে ভালো।অনেক হয়ছে,,,নাতাশা আপু ঠিকিই বলেছে আমাদের সংসার কখনো হবেনা হাজার চেষ্টা করলেও।একটা সংসার টিকাতে দুজনের ইচ্ছা লাগে,,যা আপনার ভেতরে নেই।আমি আপনাকে ডিভোর্স দিতে চায়,,আর একটা মিনিটও আপনার বাসায় আর আপনার মুখ দেখতে চায় না।
এই বলে আমি আমার রুমে চলে আসলাম এবং লাগেজ নিয়ে বেরিয়ে পরলাম।।তারাও এইগুলোই চায়তো তাই কোনরকম আটকাতে চায়লো না।আমি এখন কোথায় যাবো,,বাড়িতে যে মানুষগুলো আমাকে বিক্রি করে দিছে তাদের কাছে কখনো না।
আমি নাতাশা আপুকে ফোন করলাম। এসব শুনে তারাও অনেক কষ্ট পেলেন বাট আর কতোদিন এইভাবে চলবো।তিনি একটা ফ্লাটের চাবি দিলেন তার ভাইকে পাঠিয়ে।আমিও সেই বাড়িতেই উঠলাম।আমার দায়িত্ব নিলেন সেই ভাইয়াটা।নাম যতো সম্ভব সৌরভ বলেছে।তার ছেলেও আছে।
আমি রুমে এসে শাওয়ারে চলে আসলাম আর শাওয়ার ছেড়ে কাঁদতে লাগলাম, শুধু মাএ একটা ভালোবাসা আমার জীবনকে শেষ করে দিলো।কি ভেবেছিলাম আর কী হলো। আমি তো এমন ছিলাম না এতো ভালো রেজাল্ট করলাম আর এখন জীবনের লক্ষ্যই ভুলে গেছি।
আচ্ছা যে কাব্য ভাইয়াকে ভালোবাসতাম সে কতো ভালো ছিলো,,নম্র,ভদ্র তার থেকেও ভালো ছিলো তার মুচকি হাসিটা।আর এখন সে কোথায় গেলো,,
আজ অনেকক্ষণ শাওয়ার নেওয়ার পর আমি ড্রেস চেন্জ করে বেলকুনিতে বসলাম খোলা চুলগুলো হাওয়ায় উড়ছে।হঠাৎ মাথায় আসলো আমি একটু ফোন করি কাব্য ভাইয়াকে
ফোন দিলাম প্রথমে টুট টুট করে কেটে গেলো।আবার ফোন দিলাম এইবার ধরে বললো, হ্যালো কে,,কে বলছেন??
আমি ফোনটা কেটে দিলাম,, এতো দিন হয়ে গেলো তার সাথে সম্পর্ক হয়তো ভালো না হলেও তাই বলে, ফোন নাম্বারটাও সেভ করিনাই।
আবার ও ফোন দিলো আমি কেটে সাইলেন্ট করে রাখলাম।তারপর আকাশেদ দিকে তাকালাম আর কিসব ভাবতে লাগলাম আমি।
প্রথম কাজ একটা চাকরি ম্যানেজ করা দেন পরিবারের মানুষগুলো কাছে প্রশ্ন করা কেন করলো এমন??
আমি রাত একটা পর্যন্ত আকাশের দিকেই তাকিয়ে ছিলাম তারপর বিছানায় গিয়ে গা এলিয়ে দিন।হাজার দিনের ক্লান্তি ছেড়ে দিলাম বিছানায়।
সকালে,,,
উঠে ফ্রেস হয়ে আমি ফোনটা হাতে নিলাম,,,কললিস্ট আর মেসেজ দেখে আমি অবাক।১২০ টা ফোন আর ৫৬ টা মেসেজ কাব্যের নাম্বার থেকে।
মেসেজে এমন বলেছে,,,,
” সরি তানিশা,,,আমি কেমন জানি হয়ে গেছিলাম তুমি যখন বললে না তুমি আগের কাব্যকে ভালোবাস।তখন মনে পরলো আমার আগের কথা”
” আজ একটা সত্যি বলতে চায়,,তোমাকে প্রথম যখন দেখেছিলাম তখন একটা আসক্ত হয়ে গেছিলাম যতোই আমি নাতাশাকে ভালোবাসি কিনা,,তাই তখন ওতো মিশতাম তোমার সাথে”
“তুমি যখন বলেছিলে তুমি আমাকে ভালোবাস তখন আমি যেন জমে ফ্রিজড হয়ে গেছিলাম,,সত্যি বলতে আমি তোমাকে এখন ভালোবেসে ফেলেছি আবার ধোকা খেতে চায়না তাই প্রকাশ করিনি”
” আসলে বিয়ে ভাঙ্গার পর আমার পরিবারকে অনেক বাজে কথা শুনতে হয়েছে তার সাথে আমারও,,,তাই আমি মানুষ থেকে অমানুষ হয়ে গেছিলাম।প্লিজ ফিরে এসো,,কোথায় তুনি বলো””
বাকি মেসেজ গুলো ছিলো সরি মাফ করো এই বলে।আমার যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না।হঠাৎ ই কলিংবেল বেজে উঠলো হয়তো ওই সৌরব ভাইয়া এসেছে।আমি গিয়ে গেট খুলে আরেক দফা শকড খেলাম
কারন সৌরব ভাইয়া না কাব্য নীল শার্ট,,কালো পেন্ট,,হাতা ফোল্ড করা,, চুলগুলো উসকো-খুসকো,,,চোখ লাল হয়ে আছে,,হাতে নীল বর্ণ ধারণ করেছে,,আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
কিছুক্ষণ পর আমাকে জড়িয়ে ধরলো এবং গেট আটকে দিলো,,,
তানিশাঃ এই কি করছেন আপনি ছাড়ুন
কাব্যঃ ভালোবাসি আমি তোমাকে,,আমি আগের কাব্য হয়ে যাবো,,প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিও না,,অনেক আশা নিয়ে এসেছে।আর যদি ফিরিয়ে দেও আজই আমার শেষ দিন
তানিশাঃ আপনি আমার ঠিকানা পেলেন কিভাবে
কাব্যঃ আমি নাতাশার কাছ থেকে নিয়েছি,,আর ওর কাছে ক্ষমাও চেয়েছি।প্লিজ ভালোবাসি তোমাকে
জানিনা এখন কি করা উচিত,, ক্ষমা করবো কি এতো কিছুর পরও কিন্তু ক্ষমা না করলে যদি সত্যিই উনি কিছু করেন।কি করবো আমি(মনে মনে)
তানিশাঃ আমাকে একটু টাইম দিন প্লিজ
কাব্যঃ নাহহ,,চলো
এই বলে আমার লাগেজ নিয়ে গেলো নিচে।।আমি দাড়িয়েই আছি আবার উপরে আসলো এসে আমাকে কোলে তুলে নিলো,,এতো মানুষের মধ্যে কোলে করে নিয়ে যেতে থাকলো।
তানিশাঃ কি করছেন আপনি,,নামান,, সবাই দেখছে
কাব্যঃ দেখুক
গাড়িতে বসিয়ে আমাকে বাড়িতে নিয়ে গেলো যেতে যেতে দুপুর গড়িয়ে গেলো।কেমন জানি পাগলের মতো ব্যবহার করছে।
কাব্যঃ ফুসকা খাবে
তানিশাঃ মানে
কাব্যঃ তার মানে খাবে
রাস্তার সাইডে গাড়ি তাকিয়ে দুই প্লেট ফুসকা এনে দিলো,,,এবার মনে হচ্ছে আমি যেন আগের কাব্যকে ফিরে পেয়েছি।
আমি এক প্লেট ফুচকা খেয়ে ফেললাম আর উনি শুধু তাকিয়ে দেখলো,,আরেক প্লেট হাত দিতে তিনি হা করে তাকালেন আর আমি একটা ফুটকা তার গালের মধ্যে ডুকিয়ে দিলাম।তিনি টক খেতে পারেনা তাই দুইটাই খেলো তারপর বেল দিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলেন।
বাড়িতে পৌছে,,
তিনি আবার কোলে নিবেন বাট এবার আমি বাধা দিলাম তিনি মানলেন না।
”
”
”
”
”
”
”
চলবে…..