যদি_জানতে পর্ব ৬

#যদি_জানতে
Part:06
Written by: Shawon

পরেরদিন আহিন রেডী হয়ে বাহিরে যাবে,কারণ তার আজকে একটা চাকরীর ইন্টারভিউ আছে।আহিন যখন সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামলো তখনই শাহরিয়ার কিচেন থেকে বের হলো,আর আহিনের সাথে ধাক্কা খেল।আহিনের সমস্ত কাগজ নিচে পরে গেল,দুজনে একসাথে কাগজ তুলতে নিলে দুজনের মাথা একসাথে জোরে টক্কর লাগে।শাহরিয়ার ব্যাথা পেয়ে চিৎকার করে উঠে…
-“আউচ…তোমার সমস্যা কি বলো তো!একে তো না দেখে নিচে নেমে ধাক্কা মেরেছো এখন আবার মাথায় টক্কর মারছো।কতটা ব্যাথা পেয়েছি,তুমি দেখে চলতে পারো না।”
-“ও হ্যালো,এসব তোমার জন্য হয়েছে,তুমি যদি না দেখে হুট করে না আসতে তাহলে আমার কাগজও নিচে পরতো না,একসাথে তুলতেও হতো না।আর টক্করও লাগতো না।আমারও কতটা ব্যাথা লাগছে।এখন আমি ইন্টারভিউ দিতে কি করে যাবো?”
-“তিল কে তাল বানাবে না,একটা টক্করই লেগেছে,মাথার উপর দিয়ে কোনো ট্রাক যায়নি।”
-“সেটাইতো আমি আপনাকে বুঝাতে চায়ছি,তাই এত ব্যাথা পাওয়ার নাটক না করে আমার সামনে থেকে সরে যান মিস্টার ঢেড়শ!!”
আহিন কাগজগুলো তুলতে শুরু করলো,শাহরিয়ার’কে ঢেড়শ বলায় ও আবার নিচে বসে আহিন’কে জিজ্ঞেস করলো…
-“কি বললে তুমি??আমাকে কি বলে ডাকলে?”
-“মিস্টার ঢেড়শ,নাম পচ্ছন্দ না হলে বলতে পারেন নতুন নাম দিবো আলু,টমেটো,পেঁপে!!”
আহিনের নামগুলো শুনে সোফায় বসে থাকা শাহরিয়ারের বাবা মা হেঁসে দেয়।এতে করে দুজনই চুপ হয়ে যায়,কেউ আর কোনো কথা বলে না।শাহরিয়ার আহিনের কানে কানে বলে,…
-“তোমাকে আমি পরে দেখে নিবো।”
-“হুহ”
শাহরিয়ার চলে যায়।আহিন’কে তার শ্বশুর জিজ্ঞেস করে হঠাৎ করে বাহিরের কোম্পানি’তে কেন জব করবে?শাহরিয়ার দের নিয়ে নিজস্ব কোম্পানি রেখে?তখন আহিন বলে সে নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ করতে চায় কোনো প্রকার কারো সুপারিশ সে নিবে না।আর তাছাড়া আহিন যে বিষয় নিয়ে কাজ করতে চায় তা শাহরিয়ারদের কোম্পানি না।তাই সে ঐখানে কাজ করবে না।

আহিন সেই কখন থেকে জ্যামে বসে আছে,একে তো গরম তারউপর চারদিকে গাড়ির শব্দে ওর মাথাটা একদম ধরে গেছে।সে গাড়ি থেকে নেমে রোড ক্রস করছিল ঠিক তখনই একটা গাড়ি এসে তার একদম সামনে ব্রেক করে,আরেকটু দেরী ব্রেক করলেই আহিনের সাথে ধাক্কা লেগে যেতে।আহিন অনেকটা ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে,গাড়ি থেকে একজন লোক বের হয়ে আসে।আহিনের কাছে এসে বলে…
-“আপনার কোথাও লাগেনি তো!!আপনি ব্যাথা পাননি তো?”
আহিন যখন ওনার কথা শুনে চোখ খুলে তাকালো,তখন ঐ লোকটা নিজের চোখকে আর সরাতে পারছেন না।এক দৃষ্টিতে আহিনের দিকে তাকিয়ে আছে,আহিন বিষয়টা বুঝতে পেরে বললো…
-“আমি ঠিক আছি।”
আহিন এই কথাটা বলেই সেখান থেকে গেল।লোকটা এখনো আহিনের দিকেই তাকিয়ে আছে।লোকটা’র বুকের বা পাশে কেমন যেন একটা অনুভতি হতে লাগলো।এমন অনুভব আগে কখনোই হয়নি,আজকে প্রথম হলো।পিছনের গাড়ির হর্ণের শব্দে লোকটার ধ্যান ভাঙ্গলো।লোকটা একটা মুচকি হাসি দিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।আর ভাবতে লাগলো হঠাৎ করে এমন অনুভতির মানে কি?তাহলে কি এটা থেকেই ভালোবাসার সৃষ্টি হয়।যদি তাই হয় তাহলে আমি সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছি কিন্তু ভালেবাসা কি এতই সহজ?হয়তো এটা আমার ক্ষনিকের ভালো লাগা পরে এর রেশ কেটে যাবে।কিন্তু তুমি যেই হও না কেন তুমি আমার বুকের বা পাশের প্রথম অনুভূতি,তোমার নাম তো জানি না,তাই তোমার নাম দিলাম অনুভূতি।লোকটা আহিনের কথা ভাবতে ভাবতে নিজের মনের সাথে কথা বলছিল।
আহিন নিজের ফাইলগুলো নিয়ে বসে আছে,শুধুমাত্র ডাকের অপেক্ষা,তাকে ডাকলেই সে ভিতরে যাবে।অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ হলো,আহিনের ডাক পরলো,সে দরজায় নক করে বললো….
-“মে আই কামিং?”
-“ইয়েস কামিং”
বস নিজের চেয়ারটা পিছন থেকে সামনে ঘুরালো।আহিন বস’টাকে দেখে চমকে গেল।এনি ই তো ওনি,তাহলে ওনি ই কি এই অফিসের বস!!!আহিন দাঁড়িয়েই কথাগুলো ভাবতে লাগলো…
-“এত ভাবলে মাথার ব্রেইনে চাপ পরবে,তাই এত না ভেবে চুপচাপ বসে পড়ুন মিস অনুভূতি,আই মিন আপনি।”
আসলে এনি হলেন বাংলাদেশের একজন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির মালিকের ছেলে মিস্টার সাদাফ।যিনি আহিন’কে প্রথমবার দেখেই মুগ্ধ হয়ে গেছেন,অথচ যার জন্য এত এত মেয়ে পাগল থাকলেও কখনো চোখ তুলে তাদের দিকে তাকায়নি।
আহিন চুপচাপ বসে পরলো,তারপর সাদাফ ওনার ফাইল আর কিছু পেপার চ্যাক করলেন।সবকিছু ঠিকঠাক থাকার পর আহিনের চাকরি হয়ে গেল।এমনকি কাল থেকে ওর জয়েন,আসলে সাদাফ ওর অনুভূতিকে চোখে হারাচ্ছেন,সে জানে না এটা ভালোবাসা নাকি আবেগ কিন্তু তাও সে তাকে তার চোখের সামনে চায়!!

সন্ধ্যায়,আহিনের চাকরী হয়ে যাওয়ার খুশিতে,আহিন নিজের হাতে সবার জন্য গাজরের হালুয়া রান্না করছিল।তখনই শাহরিয়ার কিচেনে ঢুকলো,আর আহিন’কে রান্না করতে দেখে একটু শয়তানি করে বললো…..
-“আজকের সন্ধ্যার নাস্তা কি মুখে দেওয়া যাবে?নাকি একেবারে ডিনারই করতে হবে।”
-“এই যে শুনুন,আমার এতটাও বাজে রান্না করি না যে মুখে দেওয়া যাবে না।এখন আপনি এখন চুপ থাকেন আমাকে বুঝতে দেন সবকিছু ঠিক আছে কিনা!!”
আহিন হালুয়া টা মুখে নিয়ে টেস্ট করলো।তাতে একটু মিস্টি কম হয়েছে তাই সে একটু জোরেই বললো…
-“সুগার”
-“বলো ডার্লিং,আব আব আসলে আমার এক্স আমাকে ভালোবেসে সুগার ডাকতো।তাই আর কি”
-“ওহহ তারপর কি হলো??আপনার ডার্লিং এর ডায়াবেটিস হয়ে গেল নাকি??”
-“নাহ,তারপর আমার লাইফে কাইফা আসলো।আর বাকি সব মেয়েরা বাদ দিয়ে শুধু মাত্র কাইফকে ভালোলাগতে শুরু হলো।আর কখন সে ভালোলাগা ভালোবাসা হয়ে গেল নিজেও বুঝতে পারলাম না”
-“হয়ছে হয়ছে আমি এখানে আপনার লাভ স্টোরি শুনতে চায়নি,আর আপনি যে কতটা মেয়ের সাথে রিলেশনে গেছেন তা আপনি নিজেও হয়তো জানেন না”
আহিন চিনি দিতে দিতে কথাটা বললো।শাহরিয়ার আহিনের সামনে এসে বললো…
-“কেন তোমার হিংসে হচ্ছে?”
-“আমার কেন হিংসে হবে?আজব!!”
-“আজবের কিছুনা,মেয়েরা আমার জন্য পাগল,আর আমি এত কিউট আর হট যে তুমিও আমার প্রতি ক্রাশ খেয়েছো আমি শিওর।তাই তোমার জেলাস হওয়া স্বাভাবিক!!!”
-“হুহ,আসছেন আমার হট আর কিউট!যান তো আমাকে আমার কাজ করতে দেন”
-“হুম,আর ক্রাশ খেলেও লাভ নেই আমার মন কাইফা নিয়ে গেছে।”
শাহরিয়ার কথাটা বলে চলে গেল।এই কথাটাই আহিনের ভালে মনটাকে খারাপ করে দিলো।

পরেরদিন সকালবেলা,আহিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে শাওয়ার নিয়ে নিলো।সে ভিজা চুলে বাহিরে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো ঝাড়ছিল,আর সেই চুলের পানি হালকা হালকা শাহরিয়ারের মুখে পরে।যার ফলে শাহরিয়ারের ঘুম ভেঙে যায়,শাহরিয়ার চোখ খুলে তাকাতেই পিছন থেকে আহিনের খালি পিঠ দেখা যায়।আয়ানায় ভেসে উঠে সকালের সদ্য ফুটে উঠা ফুলের মতো আহিনের মুখটা।কি অদ্ভুত সুন্দরী লাগছে আহিন’কে,নিজের চোখ সরাতে পারছেনা।আহিনের পিঠের বা পাশের কালো তিলটায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার জন্য তার মনের ভিতর অদ্ভুত এক ঝড় সৃষ্টি হয়েছে।আহিন চুল ঝাড়তে ঝাড়তে যখন আয়নায় চোখ গেল আর দেখতে পেল পিছন থেকে শাহরিয়ার তার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে।তখন সে পিছনে ফিরে তাকালো,শাহরিয়ার নিজের চোখ ঘুরিয়ে নিল।আহিন ওড়না দিয়ে পিঠ ঘুরে নিলো।তারপর নিচে চলে আসলো।

খাওয়াদাওয়া শেষ করে,আহিন অফিসের জন্য রেডী হয়ে রুম থেকে বের হতে নিলে শাহরিয়ার পিছন থেকে বলে….
-“যদি প্রবলেম না হয়,তাহলে আমি তোমাকে ড্রব করে দিতে পারি।আমার কোনো সমস্যা হবে না।”
-“ওহহ,আচ্ছা ধন্যবাদ।কিন্তু আমাকে এখনো বের হতে হবে।আপনি এখনো রেডী হন নি আর রেডী হতে হতে টাইম লাগবে।তারচেয়ে বরং আমি বের হয়ে যায় আপনি পরে চলে যাবেন।”
-“আমি এভাবেই অফিসে যায়,আমি ফর্মাল ড্রেস লাইক করি না।তুমি যদি যেতে চাও,তোমার যদি মনে হয় লিফটের প্রয়োজন আছে তাহলে চলো আমার সাথে।”
শাহরিয়ার কথাটা বলেই চলে যায়,আহিনের হাতেও আর কোনো অপশন না থাকায় সেও শাহরিয়ারের সাথে তার গাড়িতে উঠে বসে।গাড়ি নিজ গতিতে চলছে।শাহরিয়ার তার গাড়ি চালাতে চালাতে বললো…
-“তো,কি ভাবলে?”
-“কোন বিষয়ে?”
-“আমাদের এই নাটক কতদিন চলবে?নাটকের সমাপ্তি কি করে হবে?”
-“ছয় মাস চলবে,কারন এই ছয় মাসে আমি আমার প্রফোশন জায়গাটা একটু মজবুত করতে পারবো আর আমাদের নাটকের সমাপ্তিও ভালোভাবে করা যাবে তাই”
-“কিভাবে করবে সমাপ্তি?”
-“কিছু একটা বলে দিবো,বলে দিবো আমাদের মাঝে সম্পর্ক তেমন ভালো না,আমরা এত চেয়েছি মানিয়ে নিত কিন্তু পারছি না,এসব আরো কতগুলো কথা বলে দিবো দুজন মিলে”
শাহরিয়ার শুধু হুম বলে সম্মতি দিলো।আহিনের মনটা খারাপ হয়ে গেল,সে এখন মন থেকে চায় না সম্পর্কটা ভাঙ্গতে,তার এখন স্বামীর ভালেবাসা,স্ত্রী এর অধিকার পেতে চায়।একটা হাসি খুশি পরিবার চায়।গাড়িতে আর কেউ কোনো কথা বললো না।আহিন’কে শাহরিয়ার ড্রব করে দিয়ে চলে গেল।লম্বা একটা দ্রীর্ঘশ্বাস ফেলে আহিন ভিতরে চলে গেল।

ব্যাগে ফোন খুঁজতে খুঁজতে ভিতরে ঢুকছিলো তখনই কারো সাথে ধাক্কা লেগে পরে যেতে চায়।তখনই কেউ একজন তার কোমড়ে ধরে ফেলে,চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে মিস্টার সাদাফ।সাদাফ এই প্রথম কোনো মেয়ের শরীরে স্পর্শ করছে,কেমন একটা অনুভূতি আছে।আহিনের ভয় পাওয়া চাহনীটা যেন সাদাফের নজর টা আরো আকড়ে নিলো।আহিন নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে….
-“সরি আসলে আমি দেখতে পায়নি,আমি ফোন…”
-“ইট’স ওকে,ইট’স ওকে,এত সরি বলতে হবে না।আর তেমন কোনো ব্যাপার না।তুমি কালকের ঐ মেয়েটা না?”
-“জ্বী,আর তাছাড়া আপনি নিজেই তো কালকে আমার ইন্টারভিউ নিলেন।”
-“হুম,রাইট।তাহলে ভিতরে যাওয়া যাক?”
সাদাফ লিফটের দিকে ইশারা করলে,আহিন লিফটে যায়।সাদাফও একটু মুচকি হেঁসে লিফটের ভিতরে যায়।দুজনেই একসাথে বাটন চাপতে নিলে,দুজনের হাতের স্পর্শ লেগে যায়।একজন আরেকজন দিকে তাকিয়ে আছে,আহিন নিজের চোখের নজর সহ হাতও সড়িয়ে নিলো।তারপর সাদাফ বাটন চাপ দিলো।

#চলবে!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here