#যেদিন_তুমি_এসেছিলে
#সিজন_টু
#পর্ব_২০
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
_______________
আহনাফ সহজে বিরক্তি প্রকাশ করে না। কিন্তু এখন যেভাবে তিলকে তাল বানানোর চেষ্টা করছে ওরা, আর নিশ্চুপও থাকা যাচ্ছে না। সে মুনকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“আজ বরং আমি আসি।”
মুন বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“আসি মানে কী? কোথায় যাবেন দুলাভাই?”
গ্যাঞ্জাম পার্টি সমস্বরে বলে ওঠে,
“দুলাভাই!”
মুন কিছুটা হকচকিয়ে গিয়ে বলল,
“কী হলো? তোমরা এভাবে দুলাভাই বলে উঠলে কেন?”
লামিয়া বলল,
“উনি তোমার বোনের স্বামী?”
“আরে নাহ্! আমার তো কোনও বোনই নেই।”
“তাহলে তুমি দুলাভাই ডাকলে কেন?”
অর্ষা ভয়ে শেষ। না জানি মুন আবার এখানে কী বলে বসে! সে মুনকে থামিয়ে বলল,
“দুষ্টুমি করে।”
মুন ধমক দিয়ে বলে,
“মিথ্যা বলিস কেন? আমি মোটেও তাকে দুষ্টুমি করে দুলাভাই ডাকি না।”
অর্ষা মনে মনে দোয়া-দরুদ পড়ছে। লামিয়া অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে অর্ষার দিকে। গম্ভীর হয়ে বলে,
“মুন, সত্যিটা তুমি বলো।”
দিদার হতাশসুরে বলে,
“সত্যিটা কি বুঝিসনি এখনও? আমি বলি শোন, মুন হলো গিয়ে অর্ষার স্কুলের ফ্রেন্ড। মানে একদম কুট্টিকালের ফ্রেন্ড…”
দিদারের কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই রেশমি বাঁধা দিয়ে বলল,
“দাঁড়া। আগে বল কুট্টি কী?”
“কুট্টি মানে ছোটো!” বিরক্ত হয়ে বলল দিদার।
“আচ্ছা, আচ্ছা। এবার বাকিটা বল।”
“ছোটোবেলার ফ্রেন্ড মানে একসাথে বড়ো হয়েছে, খেয়েছে, খেলেছে। মানে অনেকটা বোনের মতোই। তাহলে কথাটা কী দাঁড়াল?”
সবাই সমস্বরে বলল,
“কী দাঁড়াল?”
“কথাটা দাঁড়াল উনি অর্ষার হাজবেন্ড!”
গ্যাঞ্জাম পার্টির মুখ হা হয়ে যায়। সবাই একসাথে চেঁচিয়ে বলে,
“হোয়াট!”
লামিয়ার মুখটা কাঁদোকাঁদো হয়ে যায়। অর্ষা বলে,
“আরে নাহ্! তোরা ভুল ভাবছিস।”
“তুই কীভাবে করলি এটা দোস্ত? তোকে তো প্রথমদিনই বলেছিলাম, তাকে আমার ভালো লেগেছে। বলেছিলাম না বল?” বলল লামিয়া।
অর্ষা কার ওপর রাগ ঝাড়বে বুঝতে পারছে না। নিজের কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে করছে তার।
আহনাফের হাসফাস শুরু হয়ে গেছে। আদিব বোকার মতো তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। মুন নিজেও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে রয়েছে। জুঁই লামিয়াকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল,
“আহারে দোস্ত! থাক কাঁদিস না।”
“বললেই হলো কাঁদিস না? একশোবার কাঁদব, হাজারবার কাঁদব। তোর কী তাতে?”
অর্ষা এবার চিৎকার করে বলে,
“থাম ভাই তোর! জীবনে কী ভুল করেছিলাম জানিনা; যার জন্য আল্লাহ্ তোদের মতো কিছু ফ্রেন্ড আমাকে জুটিয়ে দিয়েছে।”
লামিয়া এবার ফ্যাসফ্যাস করে কান্নার অভিনয় করে বলল,
“তুই এই কথা বলতে পারলি? একটা ছেলের জন্য এভাবে বলতে পারলি তুই? ‘স্বামী পেয়ে বন্ধুরা যখন পর’ শিরোনামে একটা পত্রিকা ছাপানো উচিত। পত্রিকার একপাশে থাকবে তোর আর তোর স্বামীর ছবি, অন্যপাশে আমাদের ছবি।”
মুন বলল,
“তুমি আগে কান্না থামাও প্লিজ!”
“কাঁদতে কাঁদতে নাকের পানি শুকিয়ে খরা করে ফেলব প্রয়োজনে তবুও আমি তাকে দুলাভাই হিসেবে মানব না।” আশিকের শার্টে নাক মুছে বলল লামিয়া।
আশিক নাক সিটকে বলে,
“এহহে! দিলো আমার দামি শার্টটা নষ্ট করে।”
“কী! কী বললি তুই? এভাবে বলতে পারলি? আমার নাকের পানির চেয়ে তোর শার্টের মূল্য বেশি হয়ে গেল?”
“চোখের পানির মূল্য আছে জানতাম। তাই বলে নাকের পানি? নাকের পানিরও মূল্যও! ওহ গড!” মনে মনে ভেবেই বড়ো করে শ্বাস নেয় আহনাফ।
মুন লামিয়ার উদ্দেশ্যে বলল,
“ধুর! তুমি শুধু শুধু নাকের পানি শুকিয়ে মরুভূমি বানাচ্ছ। উনি অর্ষার হাজবেন্ড নয়।”
“হাজবেন্ড নয়? তবে তুমি তাকে দুলাভাই ডাকলে কেন?”
“উনার নামটাই তো দুলাভাই।”
“অ্যা? দুলাভাই আবার কারও নাম হয় নাকি?”
“ইয়ে মানে! আমার জন্য শুধু উনার নাম দুলাভাই।”
“তাহলে আমাদের জন্য তার নাম কী?” জানতে চাইল রেশমি।
“আমার নাম আহনাফ। আপনারা আমাকে আহনাফ ভাই বলে ডাকতে পারেন। আর প্লিজ এবার আপনাদের ড্রামা বন্ধ করুন।”
“ধুর! শুধু শুধু এনার্জি খরচ করলাম।” বিড়বিড় করে বলল লামিয়া।
অর্ষা তখনও ওদের ওপর রেগে ছিল। তবে বেশিক্ষণ সেই রাগ স্থায়ী ছিল না। থাকবে কী করে? ওদের ওপর কি রাগ করে থাকা যায় বলে মনে হয় আপনাদের?
রাতে খাওয়া-দাওয়া করে সবাই মুনের বাসা থেকে চলে যায়। অর্ষার সাথে আহনাফ রয়েছে। রিকশায় পাশাপাশি বসে রয়েছে দুজন। আহনাফ বড়ো একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,
“তুমি ওদের সঙ্গে থাকো কী করে?”
“কেন?”
“একেকজন ড্রামা কুইন আর ড্রামা কিং।”
“তবুও ওরা আমার ফ্রেন্ডস। আমার কোনও অসুবিধা হয় না বরং ওদের সঙ্গ আমার ভালো লাগে।”
“তোমাকে বিয়ে করার পর তো এরা আমার অবস্থা নাজেহাল করে ফেলবে।”
“আপনাকে কে বিয়ে করবে? আমি?”
“না তো! বিয়ে তো করব আমি। তুমি বিয়ে বসবে।”
“জেগে জেগে ঐ স্বপ্নই দেখুন।”
“শুধু জেগে জেগে বলছ কী? আমি তো ঘুমিয়ে, ঘুমিয়েও অহর্নিশি তোমায় নিয়ে স্বপ্ন বুনি।”
“পিছু কেন ছাড়ছেন না?”
“বিয়ে না করা অব্দি পিছু ছাড়ছি না মেরি বাটারফ্লাই।”
“বিরক্তিকর!”
অর্ষাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আহনাফ তার বাসায় চলে যায়। সকাল মুখ গোমড়া করে রেখেছে। অর্ষা জিজ্ঞেস করে,
“কী হয়েছে তোর?”
“কী হবে? তুই তো মুন আপুর বাসায় গিয়ে ভালোই আনন্দ করিস। আমাকে সাথে নেস না কেন?”
“শুক্রবার নিয়ে যাব।”
“সত্যি?”
“হ্যাঁ।” বলে অর্ষা নিজের জায়গায় শুতে গিয়ে দেখে কাথার ভেতর গুটিসুটি হয়ে প্যাটিস শুয়ে আছে।
অর্ষা দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে বলে,
“তোর বেয়াদব বিড়াল আমার জায়গায় কী করে? সরা ওকে!”
“ইশ! বেয়াদব বলিস কেন? আমি ওকে আদব-কায়দা সব শিখিয়েছি। দেখছিস না তোর জায়গায় শুলেও হাগু-মুতু কিছু করেনি।”
“করেনি বলেই তুই বেঁচে গেছিস। নয়তো তোর খবর ছিল।”
“তুই একটা নিষ্ঠুর!”
.
.
পরেরদিন সকালে আহিল আহনাফকে দেখে এবং আহনাফ আহিলকে দেখে বেশ চমকে যায়। কারণ ওরা কেউই গতকাল রাতে জানত না আজ তারা মুখোমুখি হবে। আহনাফ ভেবেছিল হয়তো অর্ষার অন্য কোনও ফ্রেন্ড আসবে জবের জন্য। আর সত্যি বলতে অর্ষার জন্যই সে লোক নেবে বলেছে। তাই সিভিটা পড়েও দেখেনি।
আহিল কিছুটা নার্ভাস বোধ করলেও আহনাফ একদম স্বাভাবিক ব্যবহার করেছে; যেন গতকাল কিছুই হয়নি। চাকরি কনফার্ম হওয়ার পর আহিল সবার আগে খবরটা অর্ষাকেই টেক্সট করে জানায়। এরপর ম্যাসেজ করে গ্রুপে।
অর্ষা স্পেশাল থ্যাংকস জানায় মিজানকে। মিজান হেসে বলে,
“আসল ক্রেডিট আহনাফ স্যারের। তাকে গিয়ে থ্যাঙ্কস বলো।”
অর্ষা মনে মনে বলে,
“ঠ্যাকা!”
_________
আহনাফের অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়েছে আজ। হাসিব আসবে বলে সে প্রতিক্ষায় ছিল। একজন বন্ধু সাথে থাকলে মনে জোর থাকে। অর্ষাকে মানানোর জন্য তাই হাসিবের সাহায্য তার বিশেষভাবেই প্রয়োজন। হাসিব আসার আগ অব্দি সে নিজে থেকে অর্ষাকে মানানোর কম চেষ্টা করেনি। তবে এতে লাভও কিছু হয়নি। অর্ষা তাকে পাত্তাই দিচ্ছে না। উপরন্তু অফিসে জিসানের আলগা গায়ে পড়া স্বভাবটা তাকে বিরক্ত করে তুলছে। সে একশো পার্সেন্ট শিওর, জিসান অর্ষাকে পছন্দ করে। এখন ভয়ে আছে এই ভেবে, না জানি কবে প্রপোজ করে বসে। আর অর্ষা যদি তার ওপর রাগ দেখিয়ে এক্সেপ্ট করে নেয়? তাহলে তো সাড়ে সর্বনাশ!
এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সে অর্ষার কথাই ভাবছিল। তখন হাসিব এসে তাকে জড়িয়ে ধরে। এতদিন বাদে বন্ধুকে পেয়ে আহনাফ নিজেও জড়িয়ে ধরে বলে,
“কেমন আছিস?”
“একদম বিন্দাস! কিন্তু তোকে তো মনে হচ্ছে দেবদাস।”
“ঐ পথেই তো আছি। মনে হওয়াটা অস্বাভাবিক না। এনিওয়ে, তোকে বলেছিলাম আমার জন্য একটা বিড়াল আনতে। এনেছিস?”
“এনেছি বাবা এনেছি। এই বিড়ালের জন্য যে এয়ারপোর্টে আমায় কত ঝামেলা পোহাতে হয়েছে!”
“কোথায়?”
“আমার এক রুমমেট এসেছে সাথে। ওর কাছে আছে। দাঁড়া, ও আসুক।”
মিনিট দুয়েক বাদেই একটা ছেলে বিড়াল হাতে এগিয়ে আসে। ধবধবে সাদা বিড়াল। দেখলেই আদর আদর লাগে। হাসিব বিড়ালটিকে নিয়ে আহনাফের হাতে দিয়ে বলল,
“এই নে তোর বিড়াল। এবার বাড়ি চল।”
হাসিব ওর রুমমেটের থেকে বিদায় নিয়ে আহনাফের সঙ্গে ওর বাসায় চলে যায়। বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খাওয়ার পর হাত-পা ছড়িয়ে টানটান হয়ে শুয়ে আছে হাসিব।
আহনাফ চেয়ারে বসে আছে বিড়ালটিকে নিয়ে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। নাম রেখেছে ক্যাথিওন। হাসিবের উদ্দেশ্যে আহনাফ বলল,
“এবার বল দেখি, অর্ষার রাগ ভাঙানো যায় কীভাবে?”
হাসিব কাৎ হয়ে শুয়ে বলল,
“সারপ্রাইজ দিতে পারিস।”
“কীরকম সারপ্রাইজ দেওয়া যায়?”
“তোর বিড়ালটা ওকে গিফ্ট কর।”
“বিড়াল গিফ্ট করব?”
“হ্যাঁ, মেয়েরা বিড়াল অনেক পছন্দ করে। আমি একটা ভিডিয়োতে দেখেছি বিদেশি ছেলে-মেয়ে বুঝেছিস। ছেলেটা জ্যাকেটের ভেতর করে বিড়াল নিয়ে যায়। আর হাতে এক তোড়া ফুল। মেয়েটাকে গিফ্ট করে। তুইও সেইমভাবে কর।”
“আইডিয়া দারুণ। তাহলে চল আজই সারপ্রাইজটা দিয়ে দেই?”
“দিতে পারিস। কিন্তু স্যরি ভাই, আমি যেতে পারব না। ভীষণ টায়ার্ড।”
“এক ঘণ্টা রেস্ট নিয়ে নে। পাঁচটায় অফিস ছুটি। আমরা তখনই বের হব। আর অবশ্যই তোকে আমার সাথে যেতে হবে।”
এই এক ঘণ্টা হাসিবের রেস্ট নেওয়া হলো না। গল্প-গুজব করে দুই বন্ধু কাটিয়ে দিল। পাঁচটা বাজার একটু আগেই দুজনে বের হয়েছে। পথে এক তোড়া ফুল কিনে নিয়ে এখন অপেক্ষা করছে অর্ষার বাড়ি থেকে একটু দূরে। হাসিব বারবার করে বুঝিয়ে দিচ্ছে কীভাবে কী করতে হবে। আহনাফ বলল,
“বুঝেছি, বুঝেছি। অর্ষা আসছে। তুই গাড়িতেই থাক। আমি যাই।”
“অল দ্য বেস্ট।”
আহনাফ অর্ষার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এখানে তাকে দেখে অর্ষাও অবাক। আজ অফিসে যায়নি অথচ এখানে তার বাড়ির কাছে এসে দাঁড়িয়ে আছে। কেন?
আহনাফ ঠিক অর্ষার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। বাধ্য হয়ে অর্ষাকেও থামতে হলো। আহনাফ হাসিমুখে বলে,
“তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে?”
“আমার তো কোনও সারপ্রাইজ চাই না।”
“সারপ্রাইজ দেখলেই তোমার রাগ গলে পানি হয়ে যাবে।”
“রাস্তা থেকে সরে দাঁড়ান। আমায় যেতে দিন।”
আহনাফ সরে না। বরঞ্চ অর্ষার আরও কাছে এগিয়ে যায়। আর জ্যাকেটের ভেতর থেকে বিড়ালের মাথা বের করে বলে,
“সারপ্রাইজ!”
বিড়াল মাথা বের করেই বলে ওঠে,
“ম্যাউ!”
ভয়ে চমকে ওঠে অর্ষা। অস্ফুটভাবে বলে,
“ওমাগো! এটা কী? এটা সারপ্রাইজ?”
“হ্যাঁ। তোমার পছন্দ হয়নি?”
“একদম না। বাসায় একটার যন্ত্রণায় বাঁচি না। আপনি আবার আরেকটা আমায় সারপ্রাইজ গিফ্ট দিচ্ছেন?”
আহনাফ প্রত্যুত্তর করার পূর্বেই ক্যাথিওন একাধারে ‘ম্যাউ, ম্যাউ’ করছে যেন সে তাকে রিজেক্ট করার জন্য অর্ষাকে কথা শুনিয়ে দিচ্ছে।
অর্ষা ভ্রুকুটি করে বলে,
“ও কি আমাকে রাগ দেখাচ্ছে?”
“কী জানি! বিড়ালের ভাষা তো আমি জানি না।”
“অসহ্য!” বলে আহনাফকে পাশ কাটিয়ে অর্ষা চলে যায়। ক্যাথিওন তখনও ম্যাউ, ম্যাউ করে। আহনাফ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“হয়েছে। থাক, আর ডাকিস না। তোরও কপাল খারাপ, আমার কপাল খারাপ। দুজনকেই রিজেক্ট করে গেল বুঝলি?”
ক্যাথি বুঝেছে বোধ হয় এমনভাবে বলল,’ম্যাউ!’
#যেদিন_তুমি_এসেছিলে
#সিজন_টু
#পর্ব_২১
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
_______________
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছে অর্ষা। হাসির কারণ অবশ্যই আহনাফ। লোকটাকে প্রথম প্রথম যেমন রাগী, গম্ভীর মনে হয়েছিল আসলে ততটাও রাগী সে নয়। একটু ইনোসেন্ট আর বোকাসোকাও আছে। নয়তো বিড়াল কে সারপ্রাইজ দেয় ভাই? এই মানুষটার ওপর সে কী করে রাগ করে থাকবে?
সেলিনা বেগম রুমে এসে বললেন,
“তোর বাবা ডাকছে।”
অর্ষা হিজাবটা খাটের ওপর রেখে বলল,
“আসছি, যাও।”
সেলিনা বেগম চলে যাওয়ার পর অর্ষা ওয়াশরুমে যায়। ফ্রেশ হয়ে পরে বাবার কাছে আসে। ওমর রহমান বিছানায় শুয়ে আছেন। তাকে অসুস্থ দেখাচ্ছে। অর্ষা পাশে বসে কপালে হাত রাখে। তাপমাত্রা মেপে বলে,
“জ্বর এসেছে নাকি?”
“ও কিছু না। শোন মা, তোকে যেজন্য ডেকেছি। রুহুল এসেছে।”
“কোথায়?”
“বাসায় আসেনি। এই এলাকাতেই আছে।”
“তোমাকে কে বলল?”
“তোফায়েল এসেছিল। ও বলেছে।” বললেন সেলিনা বেগম।
ওমর রহমান বলেন,
“একটা কথা বলি মা, রাগ করিস না। একসাথে থাকতে গেলে একটু রাগ-অভিমান, ঝগড়া-বিবাদ এসব হবেই। সব সংসারেই হয়। তাই বলে কি ছেলেকে দূরে রাখতে হবে বল? যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। বলছিলাম কি, তুই গিয়ে ওকে বাসায় নিয়ে আয়। তুই তো ওর আপন বোন। ও তোর কথা ফেলবে না।”
অর্ষা বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। বাবার কথার উত্তর না দিয়ে মাকে বলল,
”বাবার ওষুধগুলো ঠিকঠাকমতো খাওয়াইও।”
অর্ষা চলে গেল। ওমর রহমান, সেলিনা বেগম দুজনই দুজনের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অর্ষার নিরব প্রত্যাখান বুঝতে অসুবিধা হয়নি কারও।
.
.
“তোর প্ল্যান সুপার-ডুপার ফ্লপ হয়েছে রে গাধা!” বিরক্ত হয়ে বলল আহনাফ।
হাসিব বিরসমুখে বলল,
“ওর জায়গায় অন্য কোনও মেয়ে হলে সুপার-ডুপার হিট হত। বিড়াল পছন্দ করে না এমন মেয়েও কি আছে?”
“অবশ্যই আছে। খুঁজলে এমন আরও অনেক পাওয়া যাবে। শুধু শুধু অর্ষাকে ব্লেইম করবি না। সমস্যা তোর প্ল্যানিং-এ।”
“হ্যাঁ, এখন তো আমারই দোষ হবে। ভাবির দোষ নেই ঠিকাছে।”
“তর্ক না করে নেক্সট প্ল্যান বল।”
“ওর বন্ধুদের হেল্প নিতে পারিস।”
“ওরা আমাকে হেল্প করবে কেন?”
“এমনি এমনি তো আর করবে না। তার আগে ওদের পটাতে হবে। সেদিন না বললি ওর অনেকগুলো ফ্রেন্ডদের তুই চিনিস।”
“হ্যাঁ। বাট লাভের লাভ কিছু হবে বলে মনে হয় না।”
“কেন?”
“অর্ষা খুব জেদি। ওদের কথা শুনবে না। তোর এই প্ল্যানও ফ্লপ যাবে।”
“আগেই কেন নেগেটিভ ভাবছিস? পজিটিভ থিংক কর।”
“পারব না ভাই। ওর ফ্রেন্ডরা ভীষণ সাংঘাতিক।”
“আচ্ছা তোর কিছু করতে হবে না। আমি কথা বলব ওদের সাথে। তুই শুধু ওদের সঙ্গে দেখা করার ব্যবস্থা করিয়ে দে।”
“কাল তাহলে অফিসে যেতে হবে।”
“অফিসে যাবি মানে? তুই না বলেছিস কিছুদিন যাবি না অফিসে?”
“না গেলে তো ওদের সাথে কন্টাক্ট করতে পারব না। অর্ষার এক ফ্রেন্ড আমার অফিসে জব করে। ওকেই আগে পটাতে হবে।”
“ছেলে?”
“তো কি মেয়ে? আমি মেয়েদের পটাব?”
হাসিব হেসে ফেলে। বলে,
“ওকে। আমিও যাব।”
____________
জিসানের বার্থডে আজ। স্টাফরা মিলে তাই অফিসে ছোটোখাটোভাবে সেলিব্রেট করবে বলে ঠিক করেছে। এজন্য একটা জায়গা সুন্দর করে সাজিয়েছে। ফুল, কেক এনেছে। ট্রিট আজ জিসানই দেবে বলে আগে জানিয়ে রেখেছে। আপাতত তাই কিছু সময়ের জন্য ফ্লোরে কাজ বন্ধ। অর্ষা স্মৃতির সঙ্গে ডেকোরেশনের ওখানেই ছিল। জিসান এসে বলল,
“একটু শুনে যাও তো অর্ষা।”
অর্ষা স্মৃতির দিকে তাকাল। স্মৃতিও চোখের ইশারায় বলল যাওয়ার জন্য। অগত্যা অর্ষাকে জিসানের সঙ্গে যেতে হলো।
আহনাফের কেবিনের সামনে এসে আহিল নক করে বলল,
“আসব স্যার?”
আহনাফ হাসিবের সঙ্গে গল্প করছিল। আহিলের সঙ্গে কথা বলবে বলেই সে হাসিবকে আজ সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে। আহনাফ বলল,
“এসো।”
আহিল কিছুটা নার্ভাস ভঙ্গিতে সামনে এসে দাঁড়াল।
আহনাফ বলল,
“বসো।”
আহিল বলে,
“সমস্যা নেই ভাইয়া। স্যরি স্যার!”
“ইট’স ওকে। তুমি আমার ছোটো ভাইয়ের মতো। ভাইয়া বলেই ডাকতে পারো। কোনও সমস্যা নেই। এখন বসো।”
আহিল বসল। আহনাফ বলল,
“বড়ো ভাই হিসেবে একটা হেল্প চাইব। করবে তো?”
“অবশ্যই ভাইয়া। বলেন না কী করতে হবে?”
“অর্ষা বাদে তোমার বাকি যে আরও ফ্রেন্ড আছে ওদের সাথে দেখা করার ব্যবস্থা করে দিতে হবে।”
আহিল জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালে আহনাফ বলল,
“তোমার মনে প্রশ্ন জাগছে জানি। সব প্রশ্নের উত্তর পরে দেবো।”
আহিল আর অমত না করে বলল,
“ঠিক আছে।”
আহনাফ হাত ঘড়িতে সময় দেখে বলল,
“জিসানের বার্থডে সেলিব্রেট করতে হবে। সময় হয়ে গেছে। উঠি চলো।”
আহনাফ, আহিল আর হাসিব উঠে দাঁড়াল। তিনজনে একসাথেই কেবিন থেকে বের হয়। কিছুদূর এগিয়ে যাওয়ার পর দেখে জিসান আর অর্ষা সবার থেকে আলাদা একটু দূরে রয়েছে। তবে ওদের কথোপকথন শুনতে পাচ্ছিল তিনজনই।
জিসান ইতস্ততভাবে বলছে,
“কথাগুলো কীভাবে বলব বুঝতে পারছি না অর্ষা।”
অর্ষা নিজেও মনে মনে ভয় পাচ্ছে। সে সংকোচের সঙ্গে বলল,
“সমস্যা থাকলে থাক স্যার। পরে বলিয়েন।”
“না, না এখনই বলতে হবে।”
“ঠিক আছে বলুন।”
“অর্ষা, আই থিংক আমি তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি। বিয়ে করতে চাই তোমাকে।” সকল জড়তা এড়িয়ে বলে ফেলল জিসান।
অর্ষা চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে জিসানের দিকে। সে ভেবেছিল হয়তো প্রেমের প্রস্তাব দেবে। কিন্তু জিসান তো তার ভাবনার চেয়েও এক কাঠি উপরে। ডিরেক্ট বিয়ের প্রস্তাব! সে মনে মনে ‘হায় আল্লাহ্’ বলে পাশ ফিরতেই আহনাফ, আহিল আর হাসিবকে দেখতে পায়। আহনাফ ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। প্রচণ্ড জিদ্দে সে দেয়ালে একটা ঘুষি দেয়।
চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]
চলবে…
[পরের পর্ব সহজে পেতে ফলো দিয়ে রাখুন।]