রঙহীন জীবনের রঙ,পর্ব:২১

0
361

গল্প: #রঙহীন_জীবনের_রঙ
পর্ব ২১
লেখনীতে: #স্বর্ণা_সাহা (রাত)

আজ থেকে দিশানীর ভার্সিটির ক্লাস শুরু হবে। দিশানী কোনোরকমে খেয়ে-দেয়ে বেড়িয়ে গেলো। দিশানীর হাত এখন ভালো কিন্তু দাগ রয়ে গেছে।

প্রথম দিনই নীলাদ্রি দিশানীকে ভার্সিটিতে রেখে গেছে। ভার্সিটির প্রথম ক্লাস যেমন কাটার তেমনি কেটেছে।

ভার্সিটি থেকে ফিরে মেঘার সাথে গল্প জুড়ে দেয় দিশানী। আজকে সৌম্য অফিস যায়নি তাই সৌম্য মেঘাকে বললো,
—আজকে চলো আমরা বাইরে কোথাও থেকে ঘুরে আসি।

মেঘা উত্তর দিলো,
—আচ্ছা চলো।

সৌম্য দিশানীকে বললো,
—তুমি তো কিছু বললে না দিশানী।যাবে তো আমাদের সাথে?

—আমি আবার কি বলবো।ঘুরতে তো তোমরা যাবে আমি অযথা কাবাবে হাড্ডি হয়ে কি করবো বলোতো?

—আরে এটা কেমন কথা? এসব শুনবো না আমরা তিনজনই ঘুরতে যাচ্ছি ব্যস। আর আমি নীলাদ্রি কে ফোন করে দেখি ও ফ্রি আছে নাকি তাহলে ওকেও ডেকে নেবো।

মেঘা আর সৌম্যর জোরাজোরিতে দিশানী ওদের সাথে যেতে রাজি হয়।দিশানী রাজি হতেই সৌম্য নীলাদ্রি কে ফোন করে বলে,
—তোর কি আজকে টাইম হবে? আসলে আমরা তিনজন ঘুরতে যাবো ভাবলাম তোকেও নিয়ে নেই। ফ্রি আছিস আজ তুই?

নীলাদ্রি উত্তর দিলো,
—না রে হবে না তোরা যা ঘুরে আয়।

—আচ্ছা।

————————–
বিকালবেলায় ঘুরতে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হতেই মেঘাদের পাশের বাড়ির এক মহিলা মেঘাকে জিজ্ঞেস করলো,
—কোথায় যাচ্ছ?

মেঘা উত্তর দিলো,
—এই একটু বেড়াতে যাচ্ছি আন্টি,অনেকদিন কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়না তাই ভাবলাম তিনজনে মিলে একটু ঘুরে আসি।

—ওহ!তোমরা স্বামী-স্ত্রী ঘুরতে যাচ্ছ ভালো কথা সাথে আবার তোমার বান্ধবীকে নিয়ে যাচ্ছ কেনো?

—কেনো আপনার কোনো সমস্যা হচ্ছে বুঝি?

—শোনো একটা কথা বলি তোমাকে কিছু মনে কোরো না।

—আপনি যদি মনে করার মতো কোনো কিছু বলেন তাহলে তো অবশ্যই মনে করবো তাইনা?

—আহা!তুমি ক্ষেপে যাচ্ছ কেনো, আমি তোমার ভালোর জন্যই বলছি শোনো, তোমার এই বান্ধবী তো ডিভোর্সি শুনলাম। তা এমন ডিভোর্সি মেয়েকে বাড়িতে রেখেছো যে।তোমাদের দুজনের সংসারে যেনো আবার ফাটল না ধরায়। এসব ডিভোর্সি মেয়েদের চরিত্র খুব খারাপ হয়, দেখো তোমার বরকে আবার না ফাঁসিয়ে দেয়।

মেঘা রেগে গিয়ে বললো,
—আন্টি আপনি কিন্তু এখন বেশি বেশি বলে ফেলছেন।আপনি আমার বান্ধবীর জীবন সম্পর্ক কতটুকু জানেন আর ওর চরিত্র সম্পর্কেই বা কতটুকু জানেন যে এমন কথা বলছেন।

—সত্যি কথা বললেই দোষ।

সৌম্যও নিজেও মহিলাটির কথা শুনে রেগে গিয়ে বললো,
—আমাকে দিশানী ফাঁসাবে এটা কি ধরণের কথা আন্টি, আপনি ওকে চেনেন?আপনি হয়তো জানেন না দিশানী শুধু মেঘার বান্ধবী না আমার ছোটো বোনও বটে,আমি ওকে প্রায় ছোটো থেকেই চিনি।আর আপনি আমার ছোটো বোনকে এসব বলবেন আর আমরা চুপ করে থাকবো?আমার মনে হয় আপনি অন্যের পরিবারের ওপর নজর না রেখে নিজের পরিবারের দিকে নজর রাখুন সেটা বেশি ভালো হবে।

দিশানী চুপচাপ মাথা নিচু করে এসব শুনছিলো।
সৌম্য দিশানীকে বললো,
—দিশানী!এখন থেকে কেউ যদি বলে আমরা তোর কে হই তাহলে বলবি যে আমি তোর বড় ভাই হই বুঝেছিস?

সৌম্য এই প্রথম দিশানীকে তুই করে বললো তাও নিজের ছোটো বোন হিসেবে।সৌম্যর কথা শুনে দিশানী মাথা নাড়লো। তারপর মহিলাটিকে বললো,
—আন্টি!ডিভোর্সি মেয়ে মানেই যে খারাপ হবে, চরিত্রহীন হবে এমন কোনো কথা নেই। হ্যাঁ অনেকেই এরকম কিন্তু সবাই না। সবাইকে এক ভেবে গুলিয়ে ফেলবেন না। একটা মেয়ে প্রথমে তার সংসারটা টিকিয়ে রাখার জন্য অনেক লড়াই করে, কিন্তু এক সময় যখন সে ক্লান্ত হয়ে যায়, যখন তার জীবন বাজি রাখতে হয় তখন আর সে সংসার টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়না।তাই বলে যে আমরা খারাপ মেয়ে তা নয়। আমাদের দিকটা বোঝার ক্ষমতা হয়তো আপনার নেই।

মেঘা বললো,
—আন্টি আশা করি আপনি আপনার উত্তর পেয়ে গেছেন। আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে আমরা এখন আসি।

দিশানী,মেঘা সৌম্য বেশ ঘোরাঘুরি করলো, শপিংয়ে গেলো।তারপর একবারে ডিনার সেরে বাড়িতে ফিরলো।

——————-
এইদিকে নির্ঝরের বিয়ের প্রস্তুতি খুব ভালোভাবেই নেওয়া হচ্ছে। নির্ঝর আর এলিনার মধ্যেও এখন ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এক কথায় অতিরিক্তই ভালো হচ্ছে সবকিছু। নিরার সাথেও এলিনার খুব মিল হয়ে গেছে। একসাথে শপিং করা, ফোনে কথা বলা সবই চলছে ওদের মধ্যে।

দেখতে দেখতে আরো কতগুলো দিন চলে গেলো।

আজ নির্ঝরের বিয়ে।নীলাদ্রি এসে দিশানীকে বললো,
—আজ নির্ঝরের বিয়ে।

—আপনাকে কে বললো?

—সব খবরই রাখতে হয়।

—ভালো।বিয়ে করুক, বাচ্চা-কাচ্চা হোক। আমি তো ওকে বাবা হওয়ার আনন্দ দিতে পারিনি। অন্য মেয়ে যদি দিতে পারে দিক।

মেঘা দিশানীর কথা শুনে বললো,
—এই একদম ভুলভাল বকবি না। নির্ঝর দা’র নিজের দোষেই নির্ঝর দা বাবা হতে পারেনি। কিন্তু সেটা উনি স্বীকার না করে উল্টো তোর ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিয়েছে।হয়তো এই মেয়েকেও এরকমই করবে।

—-শুনেছি মেয়েটা নাকি বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে। আর যেভাবে ওনারা মেয়েটার ডেসক্রিপশন দিয়েছিলো তাতে মনে হয়না মেয়েটা ওনাদের দেয়া দোষ এমনি এমনি স্বীকার করে নেবে।

নীলাদ্রি বললো,
—থাক!ওসব বাদ দাও। এখন বলো তোমার ভার্সিটি লাইফ কেমন কাটছে?

—খুব ভালো।

—ফ্রেন্ডস হয়নি?

—হুম! অনেক ফ্রেন্ড হয়েছে।আর তারা খুব ভালো।

মেঘা ঠোঁট ফুলিয়ে বললো,
—আমার থেকেও ভালো?

দিশানী মেঘার গাল টেনে দিয়ে বললো,
—না রে পাগলী তোর মতো ভালো কি কেউ হতে পারবে?

মেঘা হেসে ফেললো।

—————-
রাতের বেলা,
দিশানী একা একা ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে। মেঘা হাতে করে দুকাপ কফি নিয়ে এসে দিশানীর হাতে এক কাপ কফি দিলো, দিশানী কফি হাতে নিয়ে বললো,
—থ্যাংক ইউ!

দিশানী কফিতে চুমুক দিতেই মেঘা বললো,
—আচ্ছা তুই কি সত্যিই কিছু বুঝিস না?

মেঘার কথায় দিশানী ওর দিকে তাকিয়ে বললো,
—কি বুঝবো?

—নীলাদ্রি দা’র কথা।

দিশানী নীলাদ্রির কথা শুনে মেঘার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। মেঘা আবারও বললো,
—যদিও নীলাদ্রি দা আমাকে এসব বলতে বারণ করেছে কিন্তু আমি মনে করি তোকে আমার এসব বলা উচিত।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here