রৌদ্রর শহরে রুদ্রাণী পর্ব -৫৬+৫৭

#রৌদ্রর_শহরে_রুদ্রাণী
#পর্বঃ৫৬
#Saiyara_Hossain_Kayanat

“আমিও তো বাবা হচ্ছি কই আমাকে তো কেউ অভিনন্দন জানাচ্ছে না!!”

রৌদ্রর কথায় আরশি সবাইকে ছেড়ে দিয়ে দাঁড়ালো। সবাই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে রৌদ্রকে দিকে। রৌদ্র দু হাত ভাজ করে গোমড়া মুখে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই কিছুটা সময় চুপ থেকে হুট করেই আদ্রাফ আর নীল রৌদ্রর উপরে ঝাপিয়ে পরলো। আচমকা এমন করায় রৌদ্র নিজের তাল হারিয়ে ফেলে। পেছনের দিকে পরে যেতে নিলেই নির্বান তাড়াতাড়ি করে রৌদ্রর পেছনে এসে দু হাতে রৌদ্রর পিঠে ভর দিয়ে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দেয়। আদ্রাফ আর নীল এক সাথে রৌদ্রকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে আছে। আদ্রাফ উৎকন্ঠা হয়ে বলল-

“আপনাকেও অনেক অনেক শুভেচ্ছা, অভিনন্দন আর ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনার জন্যই সব হয়েছে। আপনাকে অভিনন্দন জানাতে কি ভুলে যাই!!”

রৌদ্র মুচকি হেসে বলল-

“অভিনন্দন জানাচ্ছো নাকি মেরে ফেলার চেষ্টা করছো!”

আদ্রাফ রৌদ্রকে ছেড়ে দেয়। তবে নীল এখনো আগের মতোই রৌদ্রকে জড়িয়ে ধরে আছে। রৌদ্র নীলের পিঠে আলতো করে হাত রাখতেই নীল কিছুটা নেড়েচেড়ে ওঠে। রৌদ্রকে জড়িয়ে ধরেই আবেগপ্রবণ হয়ে নিম্নস্বরে বলল-

“আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না রৌদ্র ভাই। আপনি আমাদের আশুর জন্য যা করেছেন তা হয়তো অন্য কেউ-ই করতো না। আপনার ভালোবাসার কাছে আশুর ব্যর্থতাও হার মেনে নিয়েছে। আশুকে এতো ভালোবাসা আর আনন্দে পরিপূর্ণ জীবন দেওয়ার জন্য আমরা সবাই আপনার কাছে কৃতজ্ঞ। আশু আমাদের সকলের জান। ওর মাঝেই আমাদের সকলের হাসি, আনন্দ আটকে আছে। আর আপনি আমাদের জানটাকে ভালোবেসে আগলে রেখেছেন। আপনার ঋণ আমরা কখনো শোধ করতে পারবো না।”

“কিরে এভাবেই থাকবি না-কি তুই!”

কাসফিয়ার কথায় নীল সকলের অগোচরে নিজের চোখের পানি মুছে নেয়। রৌদ্রকে ছেড়ে দিয়ে একটা তৃপ্তির হাসি মুখে টেনে বলল-

“এতো বড় সুসংবাদ তাই একটু বড় করেই অভিনন্দন জানালাম।”

কাসফিয়া হাসি মুখে আবারও আরশিকে জড়িয়ে ধরলো। নির্বান আরশির কাছে এসে বলল-

“বাহ ক্রাশ ভাবি এবার দেখছি পাশের বারান্দায় একটা ছোট্ট রোদ এসে হানা দিবে। ভাই এবার তোমার ভালোবাসায় ভাগ পরবে বুঝলে তো!! এখন থেকে সব ভালোবাসা এই ছোট্ট তুলতুলে রোদের জন্য থাকবে।”

নির্বানের কথা শুনে সবাই হেসে দেয়। রৌদ্র একটা তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল-

“রৌদ্র আর রুদ্রাণীর ভালোবাসা মৃত্যুর পরেও একই রকম থাকবে।”

নীলা আরশিকে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে বলল-

“বাহহ কি নিরন্তর ভালোবাসা আশু!! তোরা তো দেখছি দিন দিন অনেক বেশি রোমান্টিক হয়ে যাচ্ছিস।”

আরশি লজ্জায় মাথা নুয়ে ফেলে। সবার সামনে রৌদ্রর এমন লাগামহীন কথায় আরশির প্রচন্ড অস্বস্তিবোধ করছে। আদ্রাফ আরশির মাথায় টোকা মেরে বলল-

“ইশশ লজ্জাবতী লজ্জায় লাল হয়ে নুয়ে পরছে। থাম বইন আমাদের সামনে এতো আলগা লজ্জা দেখাতে হবে না।”

আরশি মাথা তুলে আদ্রাফের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। আদ্রাফের পায়ে একটা লাথি মেরে বেঞ্চিতে যেয়ে বসে পরলো। নীলা, কাসফিয়া, আদ্রাফ আর নির্বানও আরশির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। রৌদ্র আর নীল এক সাথে আস্তে আস্তে হেঁটে যাচ্ছে। রৌদ্র কিছুটা দূরে বসে থাকা আরশির দিকে দৃষ্টি দিয়ে শান্ত গলায় বললো-

“জানো তো নীল!! আরু খুব বেশিই লাকি। তোমাদের মতো বন্ধু পাওয়া সত্যিই খুব সৌভাগ্যের ব্যাপার। তোমরা এক একজন আরুকে নিজের ফ্যামিলির মতো আগলে রেখেছো৷ একটা ছোট্ট বাচ্চাকে তার মা যেভাবে আগলে রাখে ঠিক সেভাবেই তোমরা আরুকে আগলে রেখছো। বিশেষ করে তুমি আরুকে নিয়ে যতটা চিন্তা করো, ভয় পাও ততটা হয়তো আজকাল আপন ভাইও নিজের বোনের জন্য করে না। এই স্বার্থপরের পৃথিবীতে তোমাদের নিঃস্বার্থ বন্ধুত্বটা আসলেই খুব অবাক করার মতো। দোয়া করি সারাজীবন তোমাদের এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা আর বন্ধুত্বটা অটুট থাকুক।”

নীল একটা অমায়িক হাসি উপহার দিয়ে বলল-

“রৌদ্র রুদ্রাণীর ভালোবাসাও সারাজীবন অটুট থাকুক মন থেকে দোয়া করি।”

রৌদ্র তৃপ্তিদায়ক একটা হাসি দিল। আরশিদের কাছে আসতেই নির্বানকে উদ্দেশ্য করে বলল-

“নির্বান তুই একটু আমার সাথে হসপিটালে চল। আমার কিছু কাজ আছে তুই না হয় আমার সাথে থাকিস ততক্ষণ। এখন ওরা নিজেদের মতো করে আড্ডা দিক। আমরা পরে আসবো তারপর সবাই একসাথেই ডিনার করে বাসায় যাবো কেমন!!”

নির্বান রৌদ্র পাশে এসে দাঁড়িয়ে হাসি মুখে বলল-

“ঠিক আছে ভাই। নীলাদ্রি আমি যাচ্ছি। একটু পরেই চলে আসবো। আমাকে আবার মিস করো না কিন্তু।”

নির্বান শেষের কথা গুলো নীলার দিকে তাকিয়েই একটা চোখ টিপ দিল। নীলা ক্ষিপ্ত গলায় বললো-

“আমি একদমই আপনাকে মিস করবো না হুহ্।”

নির্বান হাসলো। শান্ত গলায় বলল-

“সেটা না হয় পরেই বুঝতে পারবে। ভাই চলো।”

রৌদ্র আরশির কাছে এসে আরশির চুলের আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল-

“সাবধানে থেকো আরু। নিজের আর তুলতুলের খেয়াল রেখো।”

আরশি চোখের ইশারায় আস্বস্ত করতেই রৌদ্র হাঁটা শুরু করল। নির্বান নীলার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে রৌদ্রর সাথে চলে গেল। আরশির মুচকি হেসে রৌদ্রর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আর নীলা মলিন মুখে চেয়ে আছে নির্বানের দিকে। নীল খোঁচা দিয়ে নীলাকে বলল-

“নির্বান ভাই যেতে না যেতেই তোর মুখে আধার নেমে আসলো!! আর একটু আগেই তো বললি নির্বান ভাইকে মিস করবি না।”

নীলা অপ্রস্তুত হয়ে একটা হাসি দিলো। পরক্ষণেই লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। আদ্রাফ নীলার লাজুক চেহারা দেখে এক তৃপ্তির হাসি দেয়। যে হাসি অন্য কারও চোখে পরেনি। অন্য কেউ বুঝতে পারেনি এই হাসির মানে। কাসফিয়া নীলার কাধে হাত রেখেই একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। কিন্তু কেন এই স্বস্তির নিঃশ্বাস তা কেউ জানেন!!

“আচ্ছা এখন চল ক্যাম্পাসটা একটু ঘুরে দেখি। অনেক দিন ধরে দেখি না।”

কাসফিয়ার কথায় সবাই সায় দিল। হৈচৈ করে পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো। পুরনো সকল স্মৃতি যেন মাথার মধ্যে নাড়া দিয়ে উঠলো সবার। মাঠের মাঝখানে এসেই সবাই বসে পরলো কচিকচি ঘাসের উপর। পুরো ভার্সিটি ফাঁকা। মানুষজন নেই বললেই চলে। নেই কোনো হৈচৈ, ভিড়ভাড়। শুধু মাত্র আছে এক আত্মার পাঁচটি দেহ। এই পাঁচজন মানুষের দেহ আলাদা হলেও তাদের আত্মাটা যেন তিন অক্ষরের একটা ‘বন্ধুত্ব’ শব্দের মাঝেই আটকে আছে। তাদের আত্মা গুলো যেন একজন আরেকজনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। মাঠের মাঝখানে গোল হয়ে বসে আছে আরশি, নীল, কাসফিয়া, আদ্রাফ আর নীলা। কিছুটা সময় চুপ করে বসে থাকার পর আরশি হুট করেই নীলের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো-

“ওই হারামি শুভ্রতাকে ফোন কর। আমরা কথা বলবো ওর সাথে।”

নীল ভ্রু কুচকে আরশির দিকে তাকায়। কিছু বলার আগেই আদ্রাফ নীলের পিঠে চাপড় মেরে বলল-

“যেভাবে তাকালি মনে হলো আমরা শুভ্রতার সাথে কথা বলতে না, খেয়ে ফেলতে চাইছি!

নীল আদ্রাফের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল-

“আরে ভাই ফোন দিবো তো। একটু ধৈর্য ধর।”

নীল ফোন বের করে শুভ্রতাকে কল দিতেই আরশি নীলের হাত থেকে ফোন ছিনিয়ে নেয়। স্পিকার অন করে ফোনটা সবার সামনে এনে ধরলো। নীল হকচকিয়ে উঠে অপ্রস্তুত হয়ে বলল-

“আশু ফোন নিলি কেন? দে আমার কাছে।”

আরশি নীলের দিকে রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল-

“একদম চুপ কর। যা বলার স্পিকারেই বলবি। আর বেশি পাকনামি করলে এখনই আমি আন্টিকে ফোন করে তোর সব কুকীর্তির কথা বলে দিবো। মনে রাখিস!”

নীল চুপসে যায়। চোখ ছোট ছোট করে আরশির হাতে নিয়ে রাখা ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। ফোন রিসিভ হলো। অপরপ্রান্ত থেকে মিষ্টি গলায় বলল-

“হ্যালো নীল।”

নীল কোনো কথা বললো না। মলিন মুখে আরশিদের দিকে তাকিয়ে আছে। শুভ্রতা কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে আবারও বলল-

“নীল আপনি শুনতে পাচ্ছেন! কথা বলছেন না কেন!”

আরশি নীলকে খোঁচা মেরে চোখের ইশারায় কথা বলতে বলল। নীল কিছুটা ইতস্তত করে বলল-

“হুম শুভ্রা শুনতে পাচ্ছি।”

“আয় হায় কি ভালোবাসা!!! শুভ্রতা থেকে শুভ্রা! বাহ ভাই বাহ। তলে তলে তুমি এতো দূরে চলে গেছো অথচ আমরা কিছুই জানলাম না!! তুমি তো মামা পাক্কা খেলোয়াড়।”

আদ্রাফ নাক মুখ ছিটকে কথা গুলো বলল। আরশি ঝুঁকে আদ্রাফের মাথায় একটা থাপ্পড় মেরে বলল-

“গরু তুই কি একটু চুপ করে থাকতে পারলি না!! দিলি তো সব মজা নষ্ট করে!!”

আদ্রাফ নীলের দিকে চেয়ে ক্ষিপ্ত গলায় বলল-

“দেখলি না কেমনে কথা কইতাছিলো!! আমি চুপ থাকলে এতোক্ষনে নিশ্চিত জানু, সোনা, মোনা, কলিজা এসব শুরু করে দিত। ওর লজ্জা না থাকলেও আমাদের তো আছে তাই না!!”

“আদু ভাইয়ের বাচ্চা চুপ থাকবি না-কি ঘুষি দিয়া তোর নাক ফাটামু!!”

নীল রাগী কন্ঠে বলল আদ্রাফকে। সাথে সাথেই আরশি চেচিয়ে উঠলো-

“একদম চুপ কর তোরা সবাই। কেউ কোনো কথা বলবি না।”

আদ্রাফ আর নীল চুপসে যায়। আরশি ফোনটা নিজের সামনে এনে বলল-

“হ্যালো শুভ্রতা!! আমি আরশি। নিশ্চয়ই চিনতে পেরেছ আমাকে!”

অপরপ্রান্ত থেকে শুভ্রতা কিছুটা কাচুমাচু করে বলল-

“হুম চিনতে পেরেছি আপু।”

“যাক তাহলে তো ভালো। এবার বল তো তুমি কেন আমাদের কাছ থেকে তোমাদের সম্পর্কের কথা লুকিয়ে রেখেছো!!”

শুভ্রতা হকচকিয়ে উঠলো। খানিকটা ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে বলল-

“আসলে আপু তুমি তো জানোই আব্বু আমাদের ভার্সিটির টিচার। আর আব্বু তো খুব রাগী আর গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ। উনি যদি জানে আমি ভার্সিটিতে এসে প্রেম করছি তাহলে তো আমাকে মেরেই ফেলবে। সেই ভয়েই আমি নীলকে না করেছিলাম কাউকে আমাদের সম্পর্কের কথা বলতে।”

আরশি বিজ্ঞ মানুষের মতো বলল-

“অহহ বুঝলাম। কিন্তু তোমাদের প্রেম হলো কখন! কে আগে প্রপোজ করেছে? আর তুমি জেনে শুনেই এই রকম একটা গাধার সাথে প্রেম করতে রাজিই বা হলে কি করে?”

আরশির প্রশ্নে শুভ্রতা হাসলো। হাসতে হাসতেই বলল-

“নীল এখনো আমাকে প্রপোজ করেনি। বলেছে বিয়ে সময় করবে। আর আমাদের সম্পর্ক কিভাবে হয়েছে তা আমরা নিজেও জানি না। তোমাদের এক্সামের শেষে একদিন নীল আমার কাছ থেকে নাম্বার নিয়েছিল। ব্যস তখন থেকেই আমাদের ফোনে কথা বলা শুরু হয়েছে। আমরা আগে থেকেই একজন আরেকজনকে পছন্দ করতাম তাই আর কখনো প্রপোজ করার দরকার পরেনি। কথায় কথায় কখন এই পর্যন্ত চলে এসেছি জানি না। কখনো দেখা হওয়া কিংবা ঘুরতে যাওয়া এসবও আমাদের মধ্যে হয়নি। মাঝে মাঝে রাস্তা ঘাটে একটুখানি দেখা পাওয়াই ছিলো আমাদের ডেট। আব্বুর জন্য আমার কখনো সাহস হয়নি নীলের সাথে সরাসরি দেখা করার। তবে নীল আমাকে এভাবেই মেনে নিয়েছে। উনি কখনো আমাকে জোর করেনি দেখা করার জন্য। শুধু বলতেন বিয়ের পর তো প্রতিদিন দেখবেই এখন এতো লুকোচুরি করে দেখা দরকার নেই।”

শুভ্রতার কথা শুনে সবাই একসাথে চেচিয়ে বলল-

“ওওওওওও…”

নীল অস্বস্তিতে কাচুমাচু করছে আর শুভ্রতা খিলখিল করে হেসে যাচ্ছে। আদ্রাফ নীলের পিঠে কিল মেরে বলল-

“তুমি ভিতর ভিতর প্রেমিক পুরুষ হয়ে উঠেছিলে অথচ আমরা কেউই বুঝলাম না! আহহ কি দুঃখ আমাদের। ইচ্ছে করছে হাঁটু পানিতে ডুবে মরি। কচু গাছে ফাঁশ দিয়ে ঝুলে মরি।”

আদ্রাফের কথায় সবাই এক সাথে হেসে ওঠে। শুভ্রতা নম্রতার সাথে বলল-

“আপু তোমরা এখন আড্ডা দাও আমরা না হয় পরে কথা বলবো। আর সুযোগ হলে একদিন দেখা হবে অবশ্যই।”

আরশি কিছুক্ষন কথা বলতেই শুভ্রতা ফোন কেটে দেয়। নীলের দিকে সবাই কিছুক্ষণ নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আমকাই নীলের উপর হামলে পরে সবাই। নীলকে কাতুকুতু দিচ্ছে সবাই একসাথে। হাসতে হাসতে নীলের দুচোখ দিয়ে পানি এসে পরেছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে নীলের। তবুও কেউ থামছে না।

বিকেলের শেষ সময়। সূর্য পুরো পুরি ঢলে পরেছে পশ্চিম আকাশে। রক্তিম আভা গুলো আস্তে আস্তে কালো রঙে ধারণ করছে। নিস্তব্ধতা ঘিরে ধরেছে পুরো ভার্সিটি। সুদর্শন কাক আর ঝিঝি পোকার ডাকেই গাঁ শিউরে ওঠার মতো সন্ধ্যা নেমে আসছে। সবাই একসাথে নিজেদের মাথা মিলিয়েই গোল হয়ে শুয়ে আছে। ক্লান্ত হয়ে পরেছে সবাই। বড়বড় করে শ্বাস নিচ্ছে। আকাশের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সবাই। সকলের ঠোঁটের কোণে লেগে আছে এক অদ্ভুত সুন্দর রকমের হাসি। আরশির ডান পাশেই নীল শুয়ে আছে আর বাম পাশে কাসফিয়া। আরশি তাদের দু’জনের হাত আঁকড়ে ধরে বলল-

” আজ আমি অনেক খুশি নীল। আমার জীবনটা আজ সব কিছুতে পরিপূর্ণ। কোনো কিছুর অপূর্নতা নেই আজ। তোদের মতো বন্ধু আছে আমার সাথে। রোদ আর রোদের ভালোবাসা আছে। আর আমার মাঝে একটা ছোট্ট তুলতুল আছে। আমার মনের সকল বিষন্নতার কালো ছায়া তোদের সবার ভালোবাসায় খুশির ঝলকে পরিনত হয়েছে।”

কেউ কিছু বলল না। সবার ঠোঁটের কোণের হাসিটা আরও দ্বিগুণ প্রসারিত হয়ে গেল। নীল ওরা পাঁচজন একে অপরের হাত শক্ত করে ধরে রেখেছেন। এক সাথেই গলা মিলিয়ে গান গাইতে লাগলো সবাই-

বন্ধু মানে একটু পাশে থাকা
বন্ধু মানে হাতে হাত রাখা
বন্ধু মানে অবুঝ অভিমানে
তবুও বন্ধু কারণ বন্ধু জানি

বন্ধু মানে এলোমেলো পথ চলা
বন্ধু মানে বলা আর না বলা
বন্ধু মানে একটু বাড়াবাড়ি
তাই তুমি নেই বলেই চোখ ভারি

আড়ি-আড়ি, আড়ি-আড়ি
আড়ি-আড়ি, আড়ি-আড়ি
আড়ি-আড়ি, আড়ি-আড়ি
আড়ি-আড়ি, আড়ি-আড়ি

বন্ধু নামের কোন পদবী নেই
বন্ধুর ঠিকানা হাত বাড়ালেই
বন্ধু ডালের ফাঁকে পাখির বাসা
বন্ধু মানে ভালোবাসা-মন্দবাসা

বন্ধু পাতায় যেন শিশির জমা
বন্ধু একটা ভুলের ১০০ ক্ষমা
বুকের বাঁ পাশে বন্ধুর বাড়ি
বন্ধু তুমি ফিরে এসো তাড়াতাড়ি

আড়ি-আড়ি, আড়ি-আড়ি
আড়ি-আড়ি, আড়ি-আড়ি…..

সবাই গানের লাইন গেয়েই একে অপরকে শক্ত করে এক সাথে জড়িয়ে ধরলো। সকলের খুশি যেন আজ বাধ ভেঙেছে। আরশির খুশির কথা ভেবেই তাদের সকলের মন ভরে উঠছে আনন্দে। এইটাই হয়তো বন্ধুত্ব।
#রৌদ্রর_শহরে_রুদ্রাণী
#পর্বঃ৫৭
#Saiyara_Hossain_Kayanat

“এই যে তুলতুলের আম্মু।”

আরশি থমকে দাঁড়িয়ে গেল। ভ্রু জোড়া কিছুটা কুচকে এলো তার। কান দুটো খাড়া খাড়া করে শোনার চেষ্টা করছে কেউ কি তাকে সত্যি-ই ডাকছে কি-না! হঠাৎ আরশির দাঁড়িয়ে যাওয়ায় রৌদ্রর হাতে টান পরলো। আরশির হাত ধরে রেখেই রৌদ্র জিজ্ঞেস করল-

“কি হয়েছে আরু! দাঁড়িয়ে পরলে কেন!”

আরশি একপলকে আশেপাশে নজর বুলিয়ে মৃদু হেসে বলল-

“কিছু না এমনি।”

আরশি আবারও হাঁটতে লাগলো রৌদ্রর হাত ধরে। তাদের কিছুটা সামনেই নীল, নির্বান, আদ্রাফ, কাসফিয়া আর নীলা এক সাথে কথা বলতে বলতে হেঁটে যাচ্ছে। এতক্ষন তারা সবাই একসাথেই দল বেধে হাঁটছিল কিন্তু আরশির এভাবে দাঁড়িয়ে যাওয়াতে কিছুটা সামনে চলে গেছে তারা।

“উফফ তুলতুলের আম্মু তোমাকে কতক্ষন ধরে ডেকে যাচ্ছি একটু দাঁড়ালে না কেন?”

এবার আরশি সহ বাকি সবাই হাঁটা থামিয়ে স্থির পায়ে দাঁড়ালো। বিস্মিত হয়ে সবাই আরশির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার দিকে তাকালো। আরশি ড্যাবড্যাব করে ছেলেটাকে দেখছে। বুকে হাত দিয়ে বড়বড় করে শ্বাস নিচ্ছে। মনে হচ্ছে দৌড়ে আসার ফলেই এমনটা হয়েছে। আরশি কিছুক্ষন ছেলেটার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকার পর মুহূর্তেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো। আরশি ছেলেটার সামনে এসে উৎসুক কন্ঠে জিজ্ঞেস করল-

“আমি শুনেছিলাম আপনি ডাকছেন কিন্তু কোথাও দেখতে পাইনি তাই ভেবেছি হয়তো আমার মনের ভুল ছিল।”

ছেলেটা হাতের মানিব্যাগটা প্যান্টের পেছনের পকেটে রেখে। শালীন কন্ঠে বলল-

“রিকশায় থেকে ডাক দিয়েছিলাম তাই দেখতে পাওনি। রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে তাড়াতাড়ি করে দৌড়ে আসলাম তোমার কাছে। যাইহোক এসব কথা থাক। আমার তুলতুল কেমন আছে? আমি যা বলেছিলাম তা সত্যি হয়েছে তো!!”

আরশি একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল-

“হুম হুম আপনার কথাই সত্যি হয়েছে। আর তুলতুলও খুব ভালো আছে।”

আরশির কথায় ছেলেটা একটা মন কাড়া হাসি দিল। মাথার ঝাকড়া চুলে হাতের আঙুল দিয়ে চুল গুলো ঠিক করে নেয়। বাকি সবাই বিস্ময় নিয়ে আরশি আর অচেনা ছেলেটার কথপোকথন শুনছিল। নীল নিজের কৌতুহল দমাতে আরশির কাছে এসে জিজ্ঞেস করল-

“আশু এটা কে?”

আরশি নীলের দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠে বলল-

“তোদের তো বলেছিলাম একটা ছেলে আমাকে হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিল! উনিই সেই ছেলে।”

নীলসহ বাকি সবার কৌতুহলী চোখে এখন কৃতজ্ঞতার ঝলক দেখা দিল। নীল তৎক্ষনাৎ ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে কৃতজ্ঞতার সুরে বলল-

“আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমাদের আশুর খেয়াল রাখার জন্য।”

নীল ছেলেটাকে ছেড়ে দিয়ে দাঁডালো। ছেলেটা একটা অপ্রস্তুত হাসি দিয়ে বলল-

“আমি তেমন কিছুই করিনি শুধু একটু হেল্প করেছি হসপিটালে নিয়ে গিয়ে।”

রৌদ্র হাসি মুখে ছেলেটার কাছে এসে বলল-

“আজকাল অচেনা একজন মানুষের জন্য এতটুকু সাহায্য করাই অনেক বড় ব্যাপার।”

রৌদ্র ছেলেটার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে হাসিমুখে বলল-

“আমি তুলতুলের আব্বু ড.রৌদ্র আহনাফ।”

ছেলেটা হাসি মুখে হ্যান্ডশেক করে ভদ্রতার সাথে বলল-

“আমাকে হয়তো আপনি চিনবেন। আমি ধ্রুব হাসান। আপনার পুরনো পেসেন্ট। আপনাকে চেনা চেনা লাগছিল এখন আপনার নাম শুনে কনফার্ম হলাম আপনি-ই আমার ডক্টর ছিলেন।”

রৌদ্র সরু চোখে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ ভেবেচিন্তে বলল-

“তোমার আম্মুর সাথে এসেছিলে আমার কাছে! প্রায় দেড় বছর হবে তাই না!”

“হুম এমনই হবে। আপনি আমাকে চিনতে পেরেছেন শুনে ভালো লাগলো।”

“আমার যতটুকু মনে পরে তোমার দেশের বাহিরে যাওয়ার কথা ছিল চিকিৎসার জন্য।”

ধ্রুব কিছুটা সময় চুপ থেকে একটা অদ্ভুত হাসি দিয়ে বলল-

“কিছুদিন আগেই ফিরেছি দেশে। এখন খুব সুস্থ আছি। যাই হোক আপনাদের সাথে তো পরিচয় হলাম না!”

ধ্রুব হাসি মুখে সবার সাথে এক এক করে পরিচয় হয়ে নেয়। ধ্রুব ভ্রু বাঁকিয়ে আরশির দিকে চেয়ে সন্দিহান কন্ঠে বলল-

“আচ্ছা তুমি আমাকে আপনি আপনি করে বলছো কেন? আমি তো তোমার থেকে ছোট হবো। আর হ্যাঁ আমি সবাইকে তুমি করে কথা বলায় অভ্যস্ত তাই তোমাদের সবাইকে তুমি করে বললে কিছু মনে করো না।”

আরশি হাসলো। ধ্রুবর দিকে চেয়ে বলল-

“আচ্ছা এখন থেকে তাহলে তুই করে বলবো চলবে তো!”

“চলবে না দৌড়াবে।”

ধ্রুবর কথায় সবাই হেসে দেয়। রৌদ্র ধ্রবর কাধে হাত রেখে বলল-

“যদি তোমার কোনো প্রব্লেম না থাকে তাহলে আমাদের সাথে চল। সবাই একসাথে ডিনার করবো। কোনো না মানবো না। তুলতুলের পক্ষ থেকেই এই ট্রিট মনে করো।”

ধ্রুব কিছুটা ইতস্তত বোধ করছে। নীল আদ্রাফ আর নির্বান এক প্রকার জোর করেই ধ্রুবকে তুলে নিয়ে গেল রেস্টুরেন্টে। রৌদ্র আরশি একে অপরের হাত ধরে হাসতে হাসতে তাদের পেছনে হেটে যাচ্ছে।

—————————

রৌদ্র বেড রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আরশিকে অপলক দৃষ্টিতে দেখে যাচ্ছে। আয়নায় নিজেকে নিখুঁত ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে আরশি। পেটে হাত দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে ঠিক কতটুকু বড় হয়েছে তাদের তুলতুল। রৌদ্র গত তিনমাস ধরেই আরশির এই কাজ নিয়মিত দেখে আসছে। অবশ্য গত তিন মাসে প্রেগ্ন্যাসির কারনে আরশির মধ্যে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। শরীর আগের থেকে খানিকটা ভারি হয়ে এসেছে। গাল গুলো কিছুটা ফুলে গেছে। তুলতুল বড় হয়ে আরশির পেট উঁচু করে তুলেছে। খানিকটা মোটা হয়ে যাওয়ায় আরশির সৌন্দর্যের লাবণ্যতা বেড়েছে আগের থেকে অনেক। কিন্তু এই সৌন্দর্য আরশির চোখে পড়ে না। রৌদ্র ধীর পায়ে এগিয়ে এসে আরশিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। আরশির কাধে নিজের থুতনি রেখে আয়নায় আরশির প্রতিবিম্ব দেখছে। তবে এতে আরশির কোনো হেলদোল নেই। আরশি আয়নার দিকে তাকিয়ে ভাবলেশহীন ভাবে বলল-

“আমি দিন দিন মোটা হয়ে যাচ্ছি তাই না রোদ! গাল গুলো দেখেছেন কেমন আলুর মতো হয়ে যাচ্ছে।”

রৌদ্র দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল-

“হুম… তুলতুলের আম্মু গুলুমলু হবে এটাই স্বাভাবিক আরু।”

আরশি আয়নায় রৌদ্র দিকে চেয়ে মলিন কন্ঠে বলল-

“আমি মোটা হয়ে গেলে আপনি আমাকে আগের মতো ভালোবাসবেন তো রোদ?”

ইদানীং আরশির এসব অদ্ভুত রকমের প্রশ্নে রৌদ্র মাঝে মাঝে বড্ড ক্ষেপে যায়। আজও তা-ই হলো আরশিকে ছেড়ে দিয়ে মুখোমুখি দাড় করে কড়া গলায় বলল-

“আপনাকে আমি কতবার বলবো মিসেস আরু আমি আপনার রূপ দেখে ভালোবাসিনি, যে রূপ নষ্ট হয়ে গেলেই আমার ভালোবাসা কমে যাবে। অযথা এসব উদ্ভট প্রশ্ন কেন করেন আপনি মিসেস আরু!”

রৌদ্র এমন কঠিন বাক্যে আরশির কোনো ভাবান্তর হলো না। সে ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে রৌদ্রর দিকে চেয়ে বলল-

“আচ্ছা আরেকটা প্রশ্ন ছিল জিজ্ঞেস করি!”

রৌদ্র ভ্রু কুচকে ফেলে। দু’হাত ভাজ করে গম্ভীর গলায় বলল-

“আবারও যদি আজেবাজে প্রশ্ন করেছেন তাহলে আজ আপনি এই রুমে একা একা ঘুমাবেন মনে থাকে যেন।”

আরশি রৌদ্রর দিকে সরু চোখে চেয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালো। একটা জোড়ালো শ্বাস নিয়ে বলল-

“আপনি রেগে গেলে সব সময় আমাকে আপনি সম্মোধন করে কথা বলেন কেন রোদ?”

রৌদ্র ছোট্ট করে একটা শ্বাস ফেলে। আরশির দিকে শীতল চাহনি নিক্ষেপ করে। শান্ত গলায় বলল-

“আমি চাইলেই আমার রাগ অন্য ভাবে প্রকাশ করতে পারি। কিন্তু আমি রাগের মাথায় ভুলেও কখনো তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না। আমাদের দেশে এমন অনেক পুরুষ আছে যারা রাগের মাথায় তাদের স্ত্রীর গায়ে হাত তোলে, চেচামেচি করে, তুইতোকারি করে কথা বলে, ধমকায়, বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। কিন্তু আমি এভাবে নিজের রাগ প্রকাশ করতে চাই না। আমি কাপুরুষের মতো নিজের রাগ অন্যের উপর মেটাতে চাই না। রাগের মাথায় এমন কোনো ব্যবহার বা কথা বলতে চাই না যার কারনে পরে আফসোস করতে হয়। আর তোমাকে ভুলেও কোনো কষ্ট দিয়ে ফেললে তার দ্বিগুণ কষ্ট হয়তো আমি পাবো। তাই আমি রেগে গেলে তোমাকে আপনি করে বলি আর যখন বেশি রাগ হয় তখন তোমাকে বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার কথা না বরং রুম আলাদা করার কথা বলি। যেন একই বাসায় থেকে অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই নিজেদের মান-অভিমান ভুলে যেতে পারি। দূরত্ব যেন সৃষ্টি না হয় আমাদের মাঝে। কারন আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি। আমি তোমাকে ভালোবাসি আরু। কোনো ভুলবোঝাবুঝি হলে সেটা ভালোবাসা দিয়ে ঠান্ডা মাথায় মিটিয়ে নিতে চাই। তুচ্ছ কারণে আমার ভালোবাসার বউকে কষ্ট দিব, আঘাত করে করে কথা বলবো, বাজে ব্যবহার করবো এমন কাপুরষ না তোমার রোদ। রোদ তার রুদ্রাণীকে আজীবন নিজের কাছে রাখতে চায় তাই রোদ তার প্রতিটি পদক্ষেপ ভেবেচিন্তে নেয়। বুঝেছো আরু!”

আরশি মাথা নাড়িয়ে জ্ঞানী ব্যাক্তিদের মতো বলল-

“হুম বুঝলাম।”

রৌদ্র আরশিকে ঘুড়িয়ে নিয়ে পেছন থেকে আবারও জড়িয়ে ধরলো। আয়নায় আরশির দিকে চেয়ে শীতল গলায় বলল-

“তুমি কি জানো রুদ্রাণী তুমি আগের থেকে অনেক বেশি সুন্দর হয়ে গেছো!”

রৌদ্রর কথায় আরশি ভ্রু কুচকে ফেলে। রৌদ্র হাল্কা হেসে আরশির পেটে নিজের দু’হাত আলতো করে রেখে বলল-

“সত্যি বলছি তুমি আগের থেকেও অনেক কিউট হয়ে গেছ। একদম গুলুমলু। আর তোমার গাল গুলো দেখলে তো ইচ্ছে টুপ করেই খেয়ে ফেলি।”

রৌদ্র কথাটা বলেই আরশির গালে আস্তে করে একটা কামড় দিল। আরশি ভ্রু কুচকে রৌদ্রর দিকে তাকালো। তাকিয়েছে বললে ভুল হবে। তীর নিক্ষেপের মতো তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছে রৌদ্রর দিকে। ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল-

“কি করছেন আপনি এসব!! আপনি মজা কিরছেন আমার সাথে তাই না রোদ!”

রৌদ্র তপ্ত শ্বাস ফেলে। আরশিকে আগের থেকেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শীতল কন্ঠে বললো-

“আমি তোমাকে ভালোবাসি আরু। ভালোবাসি তোমার সব কিছুকে শুধু তোমার রূপ, গুনকে না। আমি প্রথম প্রেমে পরেছিলাম তোমার অগোছালো চেহারা দেখে। তোমার ভালোবাসায় পরেছি তোমার অস্বস্তিতে ঘেরা মুখ দেখে। তখনও তোমাকে ভালোবেসেছি। আর এখনও তোমার এই গোলাগাল কিউটনেসে ভরা চেহারাকে ভালোবাসি। আর বুড়ো বয়সে তোমার কুচকে যাওয়া চামড়া, সাদা হয়ে যাওয়া চুল, দাঁতবিহীন হাসি সব কিছুকেই ভালোবেসে যাবো। আমি আগেও তোমাকে ভালোবেসেছি, এখনো তোমাকে ভালোবাসি আর বুড়ো বয়সেও তোমাকেই ভালোবেসে যাবো।”

আরশি লাজুক হাসি দিয়ে ঘুরে রৌদ্রকে সামনে থেকে জড়িয়ে ধরলো। রৌদ্রর বুকে মুখ গুজে দিয়ে নিম্নস্বরে বলল-

“আমিও আপনাকে ভালোবাসি রোদ। বুড়ো বয়সেও আপনাকে ভালোবেসে যাবো তুলতুলের আব্বু।”

রৌদ্র হাল্কা হেসে আরশির মাথায় একটা চুমু দিয়ে বলল-

“কাল কিন্তু নীলদের বাসায় যেতে হবে। ভুলে যেও না কিন্তু।”

আরশি মাথা নাড়ালো। রৌদ্র আরশিকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল-

“চল এখন ঘুমাবে। রাত হয়েছে।”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here