#শত্রু_শত্রু_খেলা
#পর্ব_৬
#মেঘা_সুবাশ্রী (লেখিকা)
ফুরফুরে মেজাজে প্রিয়ার সামনে বসে আছে সৌরভ। ব্যথা হলেও থুতনির দিকে বিশেষ কোনো নজর নেই। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির জন্য প্রিয়ার দন্তপাটির দাগ পড়েনি। কিন্তু দাগ পড়েছে বিশেষভাবে তার হৃদগহীনে। পুরুষালী মনের অযাচিত চিন্তাভাবনা গুলো না চাইতেও তার সামনে উঁকি দিচ্ছে। এ কেমন অন্তদহন হচ্ছে তার। অধরকোণে তার শুভ্র কোমল ঈষৎ হাসি ফুটে উঠল।
প্রিয়া লজ্জায় আর অস্বস্তিতে ডুবে আছে। এত বড়ো কান্ড ঘটিয়ে সে চুপকে রুমে বসে ছিল। নিজের সাথে প্রতিজ্ঞা করেছিলো আজকের পর থেকে ভুল করেও সে আর ঐ সৌরবিদ্যুৎ এর সামনে যাবে না। যাই হয়ে যাক এই নির্লজ্জ পুরুষ থেকে দূরে থাকবে। কিন্তু কথায় বলে না যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যো হয়। বিধিবাম আজকেই তার মা ঠিক করেছে বিকেল ৫:৩০ পর থেকে তার কাছে টিউশনি পড়বে। সকালেই সেটাই বলতে সৌরভকে তার মা’ ডেকেছিলো। প্রিয়া মায়ের উপর প্রচন্ড রেগে ছিল। তাকে আগে কেনো জানানো হয়নি। মারিয়াকে বলেছে সে পড়বে না। কিন্তু তার বেশি কিছু বলার বা বোঝানোর আগেই সৌরভের আগমন। প্রিয়া লজ্জায় আর কিছু বলতে পারেনি মারিয়াকে। কি দরকার ছিল তার বেকুবের মত এরকম একটা কাজ করার। এখন ইচ্ছে করছে তার নিজের মাথা নিজে ফা*টিয়ে দিতে।
সৌরভ গলা খাকারি দিলো। ভাবনা রানী তোমার ভাবনা কার্য শেষ হলে বই খুলতে পারো। প্রিয়া আড়চোখে একবার তাকালো কিন্তু সাহস হলো না সরাসরি তাকানোর। প্রথমেই হাইয়ার ম্যাথ নিয়ে বসলো সে। সৌরভ কিছু ম্যাথ বুঝানোর পর তাকে একটা ম্যাথ দিলো করে দেখানোর জন্য।
প্রিয়া অস্বস্তিতে ম্যাথ করতে গিয়ে বার বার ভুল করছে। প্রিয়ার অস্বাভাবিক আচরণ দেখে সৌরভ নিশব্দে হেসে উঠল। কিন্তু মুখে কোনো বাক্য উচ্চারণ করলো না। সে প্রিয়াকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলো। আজকে মেয়েটা বেশ পরিপাটি হয়ে বসেছে। তার ঢেউয়ের মত বাঁকানো কোমর সমান চুল ছাই রঙের উড়নার নিচে খোপায় বেঁধে রেখেছে। মাথায় গোল করে উড়না পড়ায় কপালের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চুলগুলো বাতাসে উড়ছে। মেয়েটার প্রতিদিন মুখ থেকেও হাত চলতো বেশি। চোখ দিয়েই তাকে ভষ্ম করে দিতো। তার রক্তিম দৃষ্টির সাথে সে পেরেই উঠতো না। কিন্তু এখন দেখো এই মেয়ে একেবারে শান্ত চুপটি হয়ে বসে আছে। কে বলবে এই মেয়ে কিছু মিনিট আগেও লঙ্কাকান্ড ঘটিয়ে এসেছে।
সৌরভ কিছু একটা ভাবলো তারপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ধীরকন্ঠে বলে উঠল তুমি আজকে সকালে দাঁত ব্রাশ করেছিলে। প্রিয়া ভেবে পায় না এই লোক পড়াতে এসে দাঁত ব্রাশের কথা কেনো বলছে। সন্দিহান নজরে তাকালো সে। কপাল কুঁচকে বললো কেনো? সেটা জেনে আপনি কি করবেন। সৌরভ চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো ওমা আমাকেই তো জানতে হবে। তুমি দাঁত ব্রাশ করেছো কিনা? দাঁত ব্রাশ না করেই যদি তুমি আমাকে কাম*ড় দিয়ে থাকো তাহলে তো, ছিঃ! ওয়াক থু। আমার তো ভাবতেই বমি পাচ্ছে।
সৌরভের এহেন বাক্য শুনে প্রিয়ার চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। কর্কশ গলায় চেঁচিয়ে বললো কিসব বাজে বকছেন? আমি দুপুরেই দাঁত ব্রাশ করেছি। রাতে একবার আবার সকালে নাস্তার পর একবার। দুইবার দাঁত ব্রাশ করেছি। বুঝেছেন, এসব ফালতু বকবেন না একদম।
সৌরভ বুকে হাত দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। থ্যাংক গড তুমি তাহলে দাঁত ব্রাশ করেছো। নয়তো তোমার বাঘিনীর মত দাঁতের বিধ্বংসী জীবাণুর আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয়ে আজকে হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকতে হতো। বড্ড বাঁচালে আমাকে।
কথাগুলো বলেই একটু দম নেয় সে। পুনরায় প্রিয়ার কানের কাছে গিয়ে আরও ধীরকন্ঠে বলে উঠে
তবে তুমি চুমু খাওয়ার হলে আমাকে বলতে, আমি ঠোঁট দুটো সপে দিতাম। তুমি তোমার খেয়াল খুশি মতো প্রলয় বর্ষণ চালাতে। আমি কোনো বাধা দিতাম না। আফটার অল তুমি আমার না হওয়া প্রেমিকা হও।
প্রিয়া বিস্ফোরিত নয়নে তাকালো। অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো আপনি যান তো আজকে আমি আর পড়বো না। সৌরভ থুতনিতে হাত দিয়ে বললো এখনো আধাঘন্টা সময় আছে।
আগে তোমার ম্যাথ শেষ কর। আমি এমনিই চলে যাবো থাকতে আসেনি তোমার বাসায়।
প্রিয়া আর কোনো বাক্য উচ্চারণ করলো না। এই সার্কাসের সাথে কথা না বলাই ব্যাটার।
______________
সৌরভ মাত্রই বাসায় প্রবেশ করেছে। কিন্তু বাসায় আসতেই পাশের বাড়ির ঝুমুর চাচীকে দেখে থমকালো। এই মহিলাকে সে চিনে। কার বাড়ির ছেলে কি করলো? কার মেয়ে কোন ছেলের সাথে প্রেম করে। কার কয়টা বয়ফেন্ড আছে। কে কার সাথে পালিয়েছে। কার বউ জামাই রেখে পরকীয়া করে। কার জামাই কোন মহিলার সাথে লাইন মারে সব ইতিবৃত্ত এই মহিলার কোষাগারে জমা থাকে। কিন্তু সৌরভ ভাবছে অন্যকথা এই মহিলা তাদের বাসায় কেনো এসেছে? ঝুমুরের দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকালো সে।
ঝুমুর তাকে দেখে এক প্রানখোলা হাসি দিলো। হাসি মুখে বললো সৌরভ ভালো আছো বাবা। আজকাল তোমাকে দেখাই যাই না। কোথায় থাকো সারাদিন। ছাদেও তেমন দেখি না।
সৌরভ নিশব্দে হাসলো। সে কিছু বলার আগেই শোভাই বলে উঠল কি বলছেন চাচী আমার ভাইয়া তো রোজ সকাল-বিকাল ছাদে যায়। আপনিও তো দেখলেন বিকেলে ভাইয়া ছাদে গিয়েছে। সেটাই তো আম্মুকে বলতে এসেছেন।
সৌরভ বোনের এসব কথা শুনে বিস্মিত হলো। বোনের দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো কি ব্যাপার? শোভাও ইশারা করলো তুই ভিতরে আয়।
ভাই-বোন দু’জন ভিতরের রুমে চলে গেলো।
ঝুমুর সৌরভকে দেখে খানিকটা ভ*য় পেলো। এই সৌরভ আবার তার উপর চওড়া হবে না তো? তাই সম্মান থাকতে কে*টে পড়াই ভালো। সেজন্য সে নাজমাকে ডাকলো। ভাবী কোথায় আছেন আমি চলে যাচ্ছি। নাজমা কিচেনে ঝুমুরের জন্য নাস্তা রেডি করছিলো। ঝুমুরের যাওয়ার কথা শুনে নাস্তার কাজ বাকি রেখেই দৌড়ে আসলো। আরে ঝুমুর কোথায় যাচ্ছো বসো। কিন্তু ঝুমুর অজুহাত ধরে বেরিয়ে পড়লো দ্রুত। নাজমা অসহায়ের মত তার চলে যাওয়া দেখলো। মানুষজন তাকে খুব একটা পছন্দ করে না। তবুও নাজমার ঐ ঝুমুরকে ভালো লাগে। মহিলা মানুষকে বেশ হাসাতে পারে। কিন্তু তার বাসায় সৌরভের ভয়ে আসে না।
সৌরভ দুই হাত বগলদাবা করে দাঁড়িয়ে আছে। তার বোন অনেকক্ষণ ধরেই আমতা আমতা করছে। কি বলবে সেই কথায় বলতে পারছে না।
শৌভা উষ্ণ নিশ্বাস ছাড়ে। যতই ভাইয়ের সাথে মজা করুক কিন্তু বড়ো ভাইয়ের সাথে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা বলা হয়নি কখনো। তার উপর আজকের বিষয়টা অনেক দৃষ্টিকটু। কীভাবে সে উচ্চারণ করবে তার মুখ দিয়েই বেরই হচ্ছে না।
সৌরভ অধৈর্য্য হয়ে বললো কি ব্যাপার! কি বলবি সেটা না বলে এরকম চুপ করে খাম্বার মত দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? বল না কি বলবি?
শোভা আমতা আমতা করতে লাগল। ভাইয়া প্রিয়ার সাথে তোমার রিলেশন আছে।
সৌরভ চমকালো। বোনের এহেন বাক্য তার কাছে খুবিই বি*শ্রী এক অনূভুতির সৃষ্টি করলো। উত্তর গোচ্ছালিলো বোনকে দেয়ার জন্য তার আগেই শোভা বলে উঠল ভাইয়া তুমি কি আজকে প্রিয়ার সাথে ছাদের মধ্যে কিছু করেছিলে?
কি বলতে চাইছিস তুই?
শোভা শুকনো ঢোক গিলল। চোখের দৃষ্টি নামিয়ে বললো তুই ওকে কিস করেছিস?
সৌরভ ভূত দেখার মত চমকে উঠলো বোনের কথা শুনে। সে কখন প্রিয়াকে কিস দিলো। তাদের মধ্যে এমন কোনো সম্পর্ক তো নেই বা ছিলোও না। কিন্তু তার বোন কোত্থেকে এসব বলছে? সেও জিজ্ঞাস্যু দৃষ্টিতে বোনের দিকে তাকিয়ে বললো তুই এসব কোথায় থেকে শুনেছিস?
ভাইয়া ঝুমুর চাচী বলেছে।
ঝুমুরের নাম শুনে সৌরভের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। ঐ ব*দ মহিলা তাহলে এজন্য এসেছিলো তাদের বাসায়। কত নোংরা মহিলা সে।
সৌরভ রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে বের হয়ে গেলো ঘর থেকে। ঐ ব*দ মহিলার একটা বিহিত তো সে করবেই।
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,
ঝুমুর কি বলেছে সৌরভের মা-বোনকে? এরপর কি হতে পারে সৌরভ প্রিয়ার জীবনে।
বি:দ্রঃ এই গল্প আমার প্রথম লিখা রোমান্টিক গল্প। এর আগে ৪/৫ পর্বের হরর গল্প লিখেছি। তাই গল্প কেমন হচ্ছে আপনাদের মতামত চাচ্ছি। যদি ভালো লাগে একটা রিভিউ দিবেন প্লিজ।