#শত্রু_শত্রু_খেলা
#পর্ব_১৭
#মেঘা_সুবাশ্রী (লেখিকা)
বিরসবদনে টি-টেবিলের ওপর দুই’পা তুলে সোফাতে বসে আছে সৌরভ। হাতের রিমোট দিয়ে বার বার চ্যানেল চেইঞ্জ করছে সে। কিছুতেই মনের উদাসীন্য ভাবটা যাচ্ছে না। মানসপটে সেই এক বাক্যেই বার বার উচ্চারিত হচ্ছে তার।
“আমাকে আর বিরক্ত করবেন না”
সত্যিই সে কাউকে বিরক্ত করে। কেনো যেনো এই কথায় তার ইগোতে লেগেছে বেশ। না চাইতেও তার সেই থেকে মন বিষন্নতায় চেয়ে আছে। তাই তো টিভিতে চোখ বুলাচ্ছিলো যদি তার বিষন্ন মনটা ভালো হয়ে যায়। বিক্ষিপ্ত মন নিয়ে যখন সে নিজ ভাবনার জগতে হামাগুড়ি দিচ্ছিলো। অতর্কিতভাবে শোভা বলে উঠল,
“ভাইয়া কি হয়েছে তোর? সেই তখন থেকেই তোর সামনে আমি কেমিষ্টির থিউরিটা ভুল পড়ছিলাম। কিন্তু তুই আজকে আমার ভুল ধরলি না যে?”
বোনের আচম্বিত করা প্রশ্নে সম্বিত ফিরে আসে সৌরভের। সে এতক্ষণ কোন জগতে ছিলো নিজেই জানে না। বোনের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে উঠে। আ’রে আমার টিভিতে মনোযোগ ছিল তাই হুঁশ নেই। বল কোথায় ভুল পড়ছিলি?
শোভা মুখ ভেংচি দিলো। থাক তোকে আর বলতে হবে না। এখন আমি নিজেই ঠিক করে ফেলেছি।
রাতের খাবার খাওয়ার সময় সবাই টুকটাক দু’একটা বাক্য বিনিময় করলেও সৌরভ ছিল একেবারে নিশ্চুপ। ছেলের এমন অন্যমনস্কতা আর নিশ্চুপতা দেখে মাসুদ বললো,
কি ব্যাপার! আজকে এত উদাসীন কেনো? কোথায় কোনো ঝামেলা হয়েছে?
সৌরভ দৈবাৎ বাবার দিকে তাকালো। মেকি হাসি দিয়ে বললো। না, বাবা’ কোনো ঝামেলা নেই। তবে কাল সকালে ঘুম থেকে উঠে ঢাকা যাবো। পরশ কল করেছিলো যাবার জন্য।
মাসুদ খাবার রেখে ছেলের দিকে তাকালেন। ভালো করে পরখ করলেন ছেলেকে। কপাল কুঁচকে বলল,
যাবার হলে যাবে। ঘুরে আসবে ঢাকা থেকে। তার জন্য মন খারাপের সাথে কি সম্পর্ক।
প্রতিত্তোরে সৌরভ আর কিছু বললো না। নিশ্চুপ নিজের খাবার খেয়ে রুমে চলে আসে।
বিষন্নতা যেনো তার কাটতে চাইছে না। হৃদগহীনের কোনো এক কোণে তার খুব কষ্ট হচ্ছে। বিক্ষিপ্ত মন নিয়ে বারান্দায় গিয়ে বসে সে। না চাইতেও তার চোখ চলে যায় পাশের বারান্দাতে। না সেখানে কেউ নেই। তবে রুম থেকে গুনগুন করে কারো পড়ার শব্দ আসে। সে আলগোজে হেসে উঠে। পুনরায় আবার রুমে ফিরে আসে।
ড্রয়্যার থেকে নিজের ডায়রিটা বের করে। সেখানে কলমের কালিতে তার মন খারাপের দু’লাইন লিখে নেয়।
“না পেয়ে হারানোর চেয়েও পেয়ে হারানোর যন্ত্রণার অনূভুতি ভীষণ তীব্র হয়। সেই তীব্রতাই আমি আর দগ্ধ হতে চাই না। আমার অনূভুতি আমার মাঝেই থাক। সেটা তোমার বিরক্তের কারণ না হোক। ভালো থেকো প্রিয়, ভালো রেখো প্রিয়।”
________________
রৌদ্রজ্বল সকালের স্নিগ্ধ সতেজতায় ঘুম ভাঙে প্রিয়ার। দেয়ালঘড়িতে সময় দেখে ৭ টার ঘরে কাটা ছুঁই ছুঁই করছে। এত বেলা দেখে সে হকচকিয়ে যায়। পড়িমরি করে বিছানা ছাড়ে সে। ত্বরিত ফ্রেশ হয়ে ছাদে উঠে আসে। কিন্তু এসে বেশ অবাক হয়। বিস্মিত দৃষ্টি তার সৌরভকে খুঁজে বেড়ায়। এই সৌরবিদ্যুত কি ছাদে আসেনি। সে এগিয়ে যায় বাগানের দিকে। কিন্তু গাছের দিকে তাকিয়ে একটা ঝটকা খেলো। গাছে একটু আগে পানি দিয়েছে কেউ। মনে মনে একটা ভেংচি কাটলো সে।
তাকে নাকি সৌরবিদ্যুত কাজ করাবে কিন্তু সে তো আগেই করে ফেলেছে।
প্রিয়া নিচে নামলো না। সে কিছুক্ষণ বাগানের আশেপাশে ঘুরে বেড়ালো। এই বাগানটাকে সে ভীষণ পছন্দ করে। ইশ! এই সৌরবিদ্যুত যদি যেকোনো শর্তে তাকে এই বাগান দিয়ে দিতো সারাজীবনের জন্য। সে নির্দ্বিধায় সেসকল শর্ত মেনে নিতো। সে আহ্লাদিত হয়ে বাগানের ফুলে হাত বোলাচ্ছিলো।
দূর থেকে কেউ একজন তার হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রী দেখে নিজের তীব্র যন্ত্রণার খোরাক মিটাচ্ছিলো। দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে সে নিচে নেমে আসে। এখনিই সে ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা দিবে।
_________
কলেজে এসে তীব্র এক যন্ত্রণা হচ্ছে প্রিয়ার। তার প্রাণপ্রিয় বান্ধুবী রাঢ়ী আসেনি। কিন্তু তার ঠিক হওয়া বিয়েটা হতে হতে ভেঙেছে। এই জন্য অন্তত মনটা কিছুটা হলেও ভালো আছে। তার ভাইয়েরা পাত্রবাড়ী গিয়ে যা একটু ভালো দেখে আসছে। কিন্তু পরক্ষণে এক অদ্ভুত খবর শুনে তারা এই বিয়ে ভেঙে দিয়েছে। ছেলের নাকি চোরা ব্যবসা আছে। তার উপর ছেলে বহুবার জেলগামী আসামী। এইসব শুনে রাঢ়ীর ভাই নিজে এই বিয়ে ভেঙে দিয়েছে।
তবে রাঢ়ী আজকে আসেনি আগামীকালকে আসবে। প্রিয়া এই প্রথম বন্ধুদের ছাড়া একাকী ক্লাস করছে। নীল, শ্রাবণও আজকে আসেনি। লুবনা আসা আর না আসা দুইটাই সেইম।
মধ্যাহ্নের সময় ঘনিয়ে এসেছে। আচমকা বাইরে প্রচুর শোরগোল শোনা যাচ্ছিলো। প্রিয়া হকচকিয়ে গেলো। তাদের সহপাঠী লিমন দৌড়ে ক্লাসে ঢুকলো। সবাইকে সাবধান করতে আসলো। তোরা কেউ বাইরে বের হোস না। বাইরে দুই দলের মা*রামারি লাগছে।
প্রিয়ার শরীর কাঁপতে লাগলো। এইসব রাজনৈতিক হিস্যু নিয়ে কিছু হলেই তার ভীষণ ভয় লাগে। ব্যাগ থেকে মোবাইল হাতড়ে বের করলো। মারিয়াকে কল লাগালো। বার দুয়েক ডায়ালের পরে মারিয়া কল রিসিভ করলো।
প্রিয়া কম্পিত গলায় বললো,
আম্মু কলেজে প্রচুর মা*রপিঠ হয়েছে। এখন তো গোলাগুলি হচ্ছে। পুলিশ-র্যাবে কলেজ ভরে গেছে। কলেজের সবগুলাই গ্রেট বন্ধ করে রেখেছে। রাস্তাও ব্লক করে রেখেছে। না কাউকে বের হতে দিচ্ছে না কেউ ভিতরে প্রবেশ করতে পারছে। আমাদের কলেজের সামনে রিকশা-গাড়ি সব বন্ধ করে দিছে। আম্মু আমি বাসায় আসবো কিভাবে? আমার খুব ভয় করছে। আমার সাথে পাঁচ-ছয় জন স্টুডেন্টও আছে। বাকীদের ফ্যামিলি এসে নিয়ে গেছে। ও আম্মু আমার খুব ভয় করছে।
মারিয়া অস্থির হয়ে গেলেন মেয়ের কথা শুনে। কি করবেন বুঝতে পারছেন না। আতংকিত হয়ে এদিক ওদিক ছুটে বেড়ালেন। ত্বরিত তার মাথায় আসলো সৌরভ। সে পারবে প্রিয়াকে নিয়ে আসতে। সে ছুটলো সৌরভের উদ্দেশ্য।
নাজমার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই সৌরভের কথা। নাজমার মুখটা বিষাদে আবর্তিত হলো। ছেলেটা আচমকা ঢাকা চলে গেলো তার। কাল থেকেই সে দেখেছে ছেলেটা তার ভীষণ উদাসীন আর বিষন্ন হয়ে বসেছিলো। তার দুই ছেলেই দুই ধাঁচের হয়েছে। গৌরব হলে পুরো বাড়ি মাথায় তুলে ফেলতো। সে আবার মনের কথা বেশি চাপিয়ে রাখতে পারে না। কিন্তু সৌরভ তার উল্টো। পুরো পৃথিবী উল্টো গেলেও এই ছেলের পেট থেকে কথা বের করা যায় না।
নাজমা আফসোসের সুরে দীর্ঘশ্বাস টেনে বললেন,
সৌরভ সকালেই ঢাকা গেছে। এখন থাকলে তো সে যেতে পারতো। মেয়েটার জন্য আমারো চিন্তা হচ্ছে। কেমন করে আছে সে।
মারিয়া হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে ফেললেন কি করবে সে। আনোয়ারকে কল দিলেন। কিন্তু লোকটা কল রিসিভ করলো না। মারিয়া দিগবিদিক শূন্য হয়ে রাস্তায় নেমে আসলেন। রাস্তায় তেমন একটা গাড়ি রিকশা কিছুই নেই। গোলাগুলি বেশ বড়ো আকারেই ঘটেছে। তাই তো সব জায়গায় গাড়ি চলাচল বন্ধ। উদ্বাস্তুদের মতই সে ছুটলো। তখনি আচমকাই কল আসলো প্রিয়ার।
“আম্মু চিন্তা করো না। আমাদের এক বড়ো ভাই হেল্প করছে। আমি কলেজ থেকে বের হয়ছি। বাসায় আসতেছি।”
মারিয়া যেনো উত্তপ্ত মরুর বুকে এক পশলা বৃষ্টির মত শান্তি পেলেন। যাক তার মেয়ে নিরাপদেই বাড়ি ফিরছে।
প্রিয়ার মন বিষন্নতায় চেয়ে আছে। অন্যদিনে তো তার চোখ বুলানোর আগে হাজির হয়। অথচো আজকে সে এত বড়ো বিপদের সম্মুখীন হলো। কিন্তু সৌরবিদ্যুৎ একবারো আসলো না। তার একটুও খোঁজ নিলো না। কত নিষ্টুর এই লোক। সবার পরিবারের কেউ না কেউ ছিলো। কিন্তু আমার কেউ আসে নি। অথচ আমি ভেবেছিলাম আজকেও আপনি আসবেন আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। যেভাবে সব সময় আমাকে সাহায্য করেন ঠিক সেই ভাবে আজকেও আসবেন।
কিন্তু আসলেন না, কেনো? জানেন এত বড়ো বিপদে পড়ে আমি আপনাকে খুঁজেছি। খুব মিস করেছি আজকে। আম্মুকে বলেছিলাম শুধুমাত্র আপনাকে জানানোর জন্য। তবু আপনি আসেন নি।
সৌরভের উদ্দেশ্য রাশভারি কন্ঠে প্রিয়ার আক্ষেপের সুর ভেসে আসে।
চলবে,,,,,,,
কি হচ্ছে আর কি হবে বিশ্বাস করেন আমি কিছুই জানি না। আপনারাই বলেন?#শত্রু_শত্রু_খেলা
#পর্ব_১৮
#মেঘা_সুবাশ্রী (লেখিকা)
বেশ জমজমাট ক্রিকেটের আয়োজন হয়েছে ফেনী কলেজ মাঠে। এটার প্রধান উদ্যোক্তা হলেন জনাব সৌরভ ফায়াজ। নীল, শ্রাবণ এরাও অংশগ্রহণ করেছে। রাঢ়ী তাকে অসংখ্যবার অনুরোধ করেও নিয়ে যেতে পারছেনা খেলা দেখানোর জন্য। লুবনা তো অনেক আগে থেকেই এক পায়ে খাঁড়া। সে যাবেই সৌরভদের ক্রিকেট দেখবে।
প্রিয়ার এক কথায় সে কেনো সৌরবিদ্যুৎ এর খেলা দেখবে? যাবে না সে।
পরে অগত্যা রাঢ়ী আর লুবনা একাই গেলো খেলা দেখতে। প্রিয়া ক্লাসরুমে বসে ছিল একাই। সৌরভদের খেলা শেষ হলে সে বাসায় যাবে। কিন্তু ঘড়ির কাটায় দুপুর ১২টা। খিদে তার পেট ছোঁ ছোঁ করছে। আজকে তার কলেজেই আসা উচিত হয়নি। খেলা হবে সে জানতো না। নিরুপায় হয়ে সে ক্লাস থেকে বের হয়ে আসে।
কিন্তু কলেজ মাঠ বরাবর আসতেই কারো উচ্চারিত ব্যঙ্গ শব্দ ভেসে আসে তার নামে।
“এই বকসুন্দরী খেলা না দেখে কই যাও।”
প্রিয়ার চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। সৌরবিদ্যুৎ পেয়েছে টা’কি? যখন তখন যা কিছু তাকে বলে বেড়াবে? এর একটা বিহিত তাকে করতেই হবে।
সৌরভ তখন ফিল্ডিং এ ছিলো। সেখান থেকে দাঁড়িয়ে তার উদ্দেশ্য এই বুলি আওড়ালো।
বাকি সবাই সৌরভের কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠল।
প্রিয়া একটা সু্যোগ খুঁজলো। সৌরবিদ্যুৎ কে সে আচ্ছা মজা দেখাবে আজ। দীর্ঘ আধাঘন্টা অতিবাহিত হওয়ার পর সে সুযোগ পেলো। সৌরভ গায়ের টিশার্ট খুলে ওয়াশরুমে গিয়েছে। প্রিয়া সুযোগ পেয়ে তার মহান পরিকল্পনা কার্যকর করলো। সে আবার হাসি-মুখে আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়লো।
সৌরভ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আবার টিশার্ট পরে নেয়। বাইরে বের হয়ে খেলার মাঠে যায়। তখন তার বোলিং করার সময় ছিলো। কিন্তু আচমকা তাকে দেখে সব প্লেয়াররাই হো হো করে হেসে উঠল। সৌরভ ভেবে পায় না তাকে দেখে সবাই কেনো হাসছে? সে কিছু জিজ্ঞেস করার আগে কেউ একজন বলে উঠল,
ভাই দেখি সেই লেভেলের বউ পাগলা।
সৌরভ তখনো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ আকস্মিক তাকে বউ পাগলা বলার কারণ কি বোধগম্য হলো না। তখন শ্রাবণ দৌড়ে এসে সৌরভের পিছন থেকে বউ পাগলা লিখা কাগজটা ছিঁড়ে তাকে দেখায়। সৌরভের কাগজটা দেখেই আক্কেল গুড়ুম। তাকে বউ পাগলা টাইটেল দিয়ে দিলো। যেখানে সে এখনো বিয়েই করেনি। না দেখেও সে হলফ করে বলতে পারে এই কাজটা কার? মাঠের চারপাশে চোখ বুলালো কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে দেখার জন্য। কিন্তু না সে তো’ তার কার্যসিদ্ধি করে পগারপার। সৌরভ মনে মনে হেসে উঠল,
জগতের সবাই বউ পাগলা হয় প্রিয়ারানী। নয়তো বংশের বাত্তি জ্বলবে কি করে?
প্রিয়া কলেজ মাঠের লম্বা সিঁড়িতে বসেই সৌরভকে করা জব্দের কথাই আনমনে ভাবছিলো। আচম্বিত সেই দিনের কথা ভেবেই সে ফিক করে হেসে দেয়। হাতে তার পানিপুরির বাটি ছিলো। সেখানে থেকেই একটা পানিপুরি নিচে পড়ে যায়।
রাঢ়ী প্রিয়ার আচম্বিত করা হাসির রহস্য খুঁজে পেলো না। সে বিস্ফোরিত নয়নে তাকালো প্রিয়ার দিকে।
তোকে কি কলেজ মাঠের খবিশ জ্বীনে ধরছে প্রিয়া? আচমকা হাসলি কেনো?
প্রিয়া হাসি বন্ধ করলো না। বরং সে রাঢ়ীর কথা শুনে হাসির মাত্রা কমালো না বৈকি আরও বাড়ালো।
____________________
হাতির ঝিলে বিমূর্ত বসে আছে সৌরভ। পরশ আলতো স্পর্শে তার ঘাড়ে হাত রাখলো। মুচকি হেসে বলে উঠল,
কি ‘রে ভাই তোর হয়ছে ‘টা ‘কি? ঢাকা আসার পর থেকেই দেখছি তুই এক জায়গায় তোর মন আরেক জায়গায়। এখন বল তোর হয়ছে কি?
সৌরভ মেকি হাসলো। আমার আবার কি হবে? আমি ভালোই আছি। তুই একটু বেশিই ভাবোস?
“তাই না’কি ‘রে! তা প্রিয়ারানীর জন্য বুঝি মন খারাপ।”
সৌরভ অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালো পরশের দিকে। চোয়াল শক্ত করে বললো,
“ঐ মেয়ের জন্য কেনো মন খারাপ হবে? ও আমার এমন কিছুই হয় না।”
“সত্যিই কিছুই হয় না তোর।’”
“বাদ দে না ভাই এসব উদ্ভব কথাবার্তা। নিছক মজার ছলে সেদিন কথাগুলো বলেছিলাম। আসলে প্রিয়ার সাথে আমার ঐরকম কোনো সম্পর্ক নেই।”
“ওহহ, তাই বল। কিন্তু জানিস আমার তো বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। মা অসুস্থ তাকে দেখার জন্য একজন লোক দরকার। পিয়াস তো সব করতে পারে না। বাড়িতে একজন মেয়ের প্রয়োজন।”
“বিয়ে করে নে।”
“একটা ভালো মেয়ে কোথায় পাবো বল তো?”
“রাঢ়ীকে করে নেয়। মেয়েটা অত্যন্ত ভালো ভদ্র। মেয়েটাকে তার ভাইয়েরা বিয়ে দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। যেকোন ছেলের হাতে বিয়ে দেয়ার জন্য প্রস্তুত তারা। তুই মেয়েটার জন্য প্রস্তাব দিতে পারিস। সে তোর পরিবারকে গুছিয়ে নিতে পারবে। সাথে তোকেও।”
পরশ মিটমিট করে হেসে উঠল। আচম্বিত বলে উঠল,
আমি ভাবছি প্রিয়ার জন্য প্রস্তাব দেবো। তোর সাথে যেহেতু কোনো সম্পর্ক নেই। তাহলে আমার জন্য লাইন পরিস্কার।
সৌরভ ব্যঙ্গাত্মক একটা হাসি দিলো। প্রিয়াকে বিয়ে দিলেই তো করতি?
“কেনো, বিয়ে দিবে না?”
“কিছুদিন আগেই প্রিয়ার জন্য একটা প্রস্তাব আসছিল। ছেলেটা ডেন্টিষ্ট। কিন্তু আঙ্কেল সরাসরি নিষেধ করে দিছে এখন প্রিয়াকে বিয়ে দিবে না। তাই তোর চান্স তো আরো কম।”
“ট্রাই করতে সমস্যা কোথায়? হয়তো আমার কাছে দিতেও পারে।”
“তোর যা খুশি কর আমার কি? আমি তোকে ধরে রাখছি।”
সৌরভ রেগে গজগজ করতে করতে জায়গা ছেড়ে উঠতে গেলে দৈবাৎ অপরিচিত একটা মেয়ে আসে তার কাছে। সৌরভ আচম্বিত একটা মেয়ে দেখে ভড়কে যায়। সৌরভের এমন ভয়ার্ত মুখ দেখে মেয়েটাই তাকে জিজ্ঞেস করলো। ভাইয়া আপনার সাথে পরিচিত হওয়া যাবে। আপনার নাম্বার দিতে পারবেন। সৌরব কিছু বলতে যাবে তার আগেই পরশই বলে উঠল,
“শোন বইন, ওর একটা রণচণ্ডী বউ আছে। যদি জানে তুমি ওর সাথে কথা বলতেছো তাহলে সৌরভের জায়গায় তোমার মাথা দ্বিখণ্ডিত হবে। তাই তোমার ভালোর জন্য বলছি চলে যাও। তবে আমার নাম্বার লাগলে নিতে পারো আমার আবার বউ নাই। আমি পিউর সিঙ্গেল।”
মেয়েটা বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে আছে সৌরভের দিকে। আপনি বিবাহিত দেখতে একদমই মনে হয় না।
পরশ মেয়েটার কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠে বললো, কি বলো তুমি? ও শুধু বিবাহিত না ওর এক হালি বাচ্চা-কাচ্চাও আছে। দেখবে ওদের ছবি।
মেয়েটা স্মিথ হেসে বলল না থাক লাগবে না। আসছি ভাইয়া।
সৌরভ এখনো অগ্নিদৃষ্টিতে পরশের দিকে তাকিয়ে আছে। পরশ পাত্তা দিলো না সৌরভের এমন চাউনি। সেও বাঁকা একটা হাসি দিয়ে বিড়বিড় করে বলল,
ভালো কাজের কোনো মূল্যই নাই। শালার জিন্দেগী।
__________________
ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরছিলো প্রিয়া। হঠাৎ তার সামনে ভূতের মতই আর্বিভাব ঘটে পিউর। প্রিয়া ভূত দেখার মতই চমকে উঠে পিউকে দেখে। কিন্তু পরে নিজেকে ধাতস্থ করে নেয়। পিউ স্মিথ হেসে প্রিয়াকে বলে তোমার সাথে আমার কিছু জরুরি কথা আছে। চলো কোথাও গিয়ে বসি।
প্রিয়া প্রথমে দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকে যাবে কি যাবে না? পরে ভাবলো এই আপু কি বলতে চাই তার জানা দরকার। তাই সেও রাজি হয়। দু’জনে রাজাঝির দিঘির একটা নিরিবিলি পাড়ে গিয়ে বসে। নিরাবতা ভেঙ্গে পিউ প্রিয়ার উদ্দেশ্য বলে উঠে,
আচ্ছা, তোমার উডবি কোথায় তুমি জানো?
প্রিয়া কেমন থতমত খেয়ে যায় উডবি বলায়। পরে মনে পড়ায় ছোট্ট করে বলে,
হু, জানি।
পিউ পুনরায় জিজ্ঞেস করে তুমি কি জানো সে কেন ঢাকা গিয়েছে?
প্রিয়া এবার বেশ বিপাকে পড়েছে। সে কি করে জানবে সৌরবিদ্যুৎ কেনো ঢাকা গিয়েছে? যাওয়ার সময় তাকে তো আর বলে যায়নি। বেশ বিচক্ষণতার সাথে সে প্রতিত্তোর করল পিউর,
উনার দরকারে গেছে।
পিউ এবার খিলখিল করে হেসে উঠল। তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল,
তুমি বেশ বোকা প্রিয়া। তোমার উডবি ঢাকাতে গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে গেছে। শুনেছি আজ বাড়ি ফিরবে। জানো তো তোমার উডবি আমেরও খাবে আবার গাছেরও খাবে। এই যে তোমাকে বোকা পেয়ে ইউস করে যায়।
পিউর কথা শুনেই প্রিয়ার মেজাজ চটে যায়। সৌরভের সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই। তাও কেনো যেনো পিউর কথাগুলো তার একদম ভালো লাগেনি। পিউ না’কি সৌরভের আবার বন্ধুও হয়। কিভাবে একজন বন্ধু হয়ে বন্ধুর নামে কুৎসা রটাতে পারে। প্রিয়ার মন একদম বিষিয়ে গেছে পিউর কথায়। তাই সেও ক্ষিপ্ত হয়ে বললো,
আমাকে ইউস করলে তাতে আপনার অসুবিধা হবার তো কথা না। আমার ব্যাপার আমি না হয় বুঝে নিবো। আপনার চরকাই আপনি তেল দিন। Oil your own machine ok আপি। আসছি।
“চোখের আড়াল হলে কিন্তু মনের আড়াল হয় সেটা কি জানো তুমি?”
প্রিয়া তাচ্ছিল্যের সুরে হেসে বললো,
“Mind your own business”. বাই।
প্রিয়ার মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে আছে। মানুষ কত নিকৃষ্ট হলে নিজের বন্ধুর নামেই কুৎসা রটায়। আনমনে একাকী হেটে আসে দিঘির পাড় ঘেঁষে। কিন্তু অকস্মাৎ তার চোখ পড়লো অদূরে থাকা তার থেকে কয়েক গজ দূরত্বে সৌরভের দিকে। সে নিজের চোখকেও বিশ্বাস করাতেও পারছে না। সে কিছুক্ষণ আগে পিউকে খুব বড়ো করে বলেছে সৌরভকে নিয়ে। না হোক সৌরভ তার কিছু কিন্তু তাই বলে একজন মানুষ এত ক্যারেক্টরলেস কিভাবে হতে পারে।
একটা মেয়ের কোমড় জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে সৌরভ। খুবই ঘনিষ্ঠ না হলে কেউ কাউকে এভাবে জড়িয়ে ধরতে পারে না। সৌরভের কি সত্যি গার্লফ্রেন্ড আছে? থাকলে আমার কি? কিন্তু তাহলে সে আমাকে কেনো ইউস করলো?
পিউ আপু সত্যি বলেছে সে আমাকে ইউস করে। প্রিয়ার নেত্রকোনা থেকে না চাইতেও জল গড়িয়ে পড়ে।
কেনো করলেন এমন সৌরভ? আমি বড্ড বেশি ভেবেছিলাম আপনাকে নিয়ে। কিন্তু এমনটা না করলেও পারতেন আমার সাথে?
একটা মেয়েকে নিয়ে দিনের পর দিন এভাবে না খেললেও পারতেন?
চলবে,,,,,,,,,
সৌরভ সম্পর্কে আপনারাই দু’লাইন বলে যান। আজকে আমি শুধু শুনবো?