#শরতের_শুভ্র_মেঘের_ভেলায়(১৪)
Sadia afrin nishi
____________________________
সময় নিয়মের দাস আর মানুষ অভ্যাসের।সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হয় মানুষের জীবন।অভ্যাসগুলো পরিপূর্ণ জায়গা ধারণ করে। সাক্ষর এখন আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।দু’জন দু’জনের পরিপূরক।দুজন দুজনকে ছাড়া একসমবিন্দু পরিমাণ ভাবনা মাথায় আনতে পারিনা।এই কাঠখোট্টা, রাগী লোকটার মাঝে যে কখন নিজেকে জড়িয়ে ফেললাম বুঝতেই পারিনি।এখন আর বলতে দ্বিধা নেই খুব ভালবেসে ফেলেছি আমি আমার রোবটম্যানকে।
কলেজে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছি।সাক্ষর অনেক আগেই রেডি হয়ে বসে আছে।বর্তমানে তার চক্ষুদ্বয় ফোনে নিবদ্ধ। আমি সম্পুর্ণ রেডি হয়ে তার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে গলাটা খাঁকারি দিয়ে বললাম,,
_”হয়ে গেছে আমার। চলুন তাড়াতাড়ি ”
সাক্ষর ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে নিয়ে বলল,,
_হুম চলো চলো
_আচ্ছা শুনুন না একটা কথা রাখবেন প্লিজ?
_কী কথা বলো, রাখার চেষ্টা করবো?
_আপনি রোজ এমন মাস্ক পরে কেন থাকেন বলুন তো।আজকে আপনার মাস্ক পড়া কিছুতেই চলবে না। আমার সব ফ্রেন্ডরা আপনাকে দেখতে চায় কিন্তু আমি দেখাতে পারি না। প্লিজ ওটা খুলে ফেলুন।
অনেক আকুতি ভরা কন্ঠে কথাগুলো বললাম। তবুও তার ওই পাষান মন গলাতে পারলাম কী না বুঝতে পারছি না।
সে বেশ কিছু সময় চুপ করে থেকে বললেন,,
_দেখো আমি এভাবে কেন থাকি, কী আমার পেশা,কী আমার পরিচয় সবকিছু তোমাকে আমি বলবো তবে তারজন্য তোমাকে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। সময় হলে আমি নিজেই তোমাকে সবটা জানাব।আর তখন মুখ খুলেই সব জায়গায় যাতায়াত করব।এখন চলো প্লিজ লেট হচ্ছে তো।
আমি তার কথাগুলো খুব মন দিয়ে শুনলাম। তার বলা প্রতিটি কথাই আমি অন্ধের মতো বিশ্বাস করে ফেলি।আজও ঠিক তাই করলাম। অগত্যা দু’জনে বেরিয়ে পরলাম গন্তব্যে।
————–
কলেজ থেকে হাসোজ্জল মুখ নিয়ে বের হলাম। আমার সাকসেসে মিতালীও অনেক খুশি।
দু’জনে মিলে ঠিক করলাম এই মুহুর্তটা সেলিব্রেট করবো।যেই ভাবা সেই কাজ দু’জনে চলে গেলাম ফুচকা স্টলে।সেখান থেকে ফুচকা খেয়ে তারপর গেলাম আইসক্রিম পার্লারে। ফুচকা, আইসক্রিম শেষ করে দু’জনে যে যার বাড়ির উদ্দেশ্যে রহনা দিলাম।
আজ সাক্ষর আমায় নিতে আসতে পারে নি।তার নাকি কী জরুরি কাজ পড়ে গেছে।এই সুযোগে আমি আজ রিকশা করে বাড়ি ফিরছি।রিকশায় বসে আপন মনে ভেবে চলেছি সাক্ষরকে সারপ্রাইজ টা কীভাবে দিবো/ও কেমন রিয়েক্ট করবে/ খুশি হবে তো /এমন হাজার প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।সবকিছু মনের মধ্যে সাজিয়ে নিয়েছি এবার শুধু রাত নামার অপেক্ষা।
সারাদিন অপেক্ষার পর ধরনীর বুকে এখন মধ্য রাত।কিন্তু আমি তো মধ্য রাতের জন্য অপেক্ষা করছিলাম না। আমি তো অপেক্ষা করছিলাম রাতের প্রথম প্রহরের জন্য। ধুর ভাল্লাগে না আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। কোথায় ভাবলাম সাক্ষরকে সুন্দর করে গুছিয়ে সারপ্রাইজ টা দিবো কিন্তু সেই ঘুমিয়ে পরলাম। সন্ধ্যার পর থেকে অপেক্ষা করছিলাম ঘড়ির কাঁটায় কখন রাত বারোটা বাজবে।অপেক্ষা করতে করতে কখন যে চোখ লেগে এলো বুঝতেই পারিনি।
বারোটা পেড়িয়ে এখন রাত তিনটা বেজে দশ মিনিট। সময় না হয় পেরিয়ে গেছে কিন্তু সাক্ষর কোথায়। এত রাতে কোথায় গেল। আজকেও ঠিক আগের দিনের মতো পুরো বাড়ি খুঁজেও তাকে না পেয়ে চলে গেলাম সেই তালাবদ্ধ ঘরটির কাছাকাছি। হুম আজও সাক্ষর হয়তো এখানেই আছে। আমি আজ যে করেই হোক ওই ঘরে প্রবেশ করবোই করবো কিন্তু কীভাবে করব? হুম পেয়ে গেছি আইডিয়া।
ওই রুমের কাছাকাছি দাড়িয়ে একটা ফুলদানি খুব জোরে মেঝেতে ছুড়ে দিলাম। তারপর দেওয়ালের আড়ালে লুকিয়ে পড়লাম। কিছুসময় পরই ওই রুম থেকে সাক্ষর বেড়িয়ে এলো।সে কিছুটা সামনে গিয়ে আশেপাশে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল।ব্যাস,এই সুযোগে আমি ঢুকে গেলাম ঘরটির ভেতরে।কী জানি সাক্ষর এখন কী করছে।যদি সে আমাকে খুঁজতে এখন রুমে যায় তাহলে কী হবে? ধুর যা হয় হবে আগে ভেতরে কী আছে তা তো দেখি।
ছোট্ট একটা বারান্দা পেড়িয়ে প্রবেশ করলাম গুপ্ত কক্ষে। ডিম লাইটের আলোয় আবছায়া চারিপাশ।খুব সাবধানে পাঁ ফেলছি আমি।পেছন থেকে দরজার শব্দ পেতেই তাড়াতাড়ি দেওয়ালের সাথে চেপে দাড়িয়ে পড়ি আমি।হয়তো সাক্ষর চলে এসেছে। এখন আমার কী হবে।
এক চোখ বন্ধ করে আল্লাহকে ডাকছি।হঠাৎই সাক্ষর আমায় পাশ কাটিয়ে সোজা সামনে চলে গেল।সে হয়তো আমাকে লক্ষ্য করে নি।ডিম লাইটের আলোয় বুঝতে পারছি সে কিছু একটা খুলছে। একটু পর যা দেখলাম তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। সাক্ষরের সামনে একটা লাশ।ঠিক ওইদিনের লাশটার মতো।এক মুহূর্তে আমার পৃথিবী কেমন থমকে গেল।কান দিয়ে গরম ছোঁয়া বের হতে চাইছে,হাত-পা অবশ হয়ে আসছে,জ্ঞান হারাবো মনে হচ্ছে।কিন্তু না আমাকে এখন স্ট্র থাকতে হবে। জ্ঞান হারালে চলবে না।নিজেকে অনেকটা কন্ট্রোল করে শক্ত হয়ে দাড়ালাম। আমাকে পুরো সত্যি জানতে হবে, জানতে হবেই। সদ্য পদার্পণ করা প্রফেশনকে আমি অবজ্ঞা করতে পারি না। আমার প্রফেশনের থেকে কখনোই আমার পারসোনাল লাইফ ইম্পরট্যান্ট হতে পারে না। আমি আমার বাবার স্বপ্ন পুরণ করেছি। আমি আমার বাবার আদর্শেই চলব।সত্যি যতই কঠিন হোক না কেন তার সম্মুখীন আমাকে হতেই হবে। আমি শাস্তি দিবো। নিজ হাতে অপরাধীকে শাস্তি দিবো। সে যতই আমার অন্তরের অংশবিশেষ হোক না কেন। অপরাধ করলে তাকেও শাস্তি পেতেই হবে।
লাশের সামনে বসে ফোন কানে নিয়ে সাক্ষর কাউকে একটা কল করল।সাথে সাথে এই রুমে অবস্থিত অন্য একটি দরজা খুলে রুমে প্রবেশ একজন যুবক।এই গুপ্ত কক্ষে যে আরও কামরা আছে এটা আমার অজানা ছিল।আরও কী কী আমার জানার বাহিরে আছে তা শুধু ওপর ওয়ালাই জানেন।
সাক্ষর উদ্বিগ্ন কন্ঠে যুবকটির উদ্দেশ্যে বলল,,
_”রিফাত এই লাশটাও আগের লাশগুলোর সঙ্গে নিয়ে রাখ।এই প্রত্যেকটি লাশের বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। খবরদার একটা লাশও যেন এদিক ওদিক হয় না।”
এবার বুঝলাম যুবকটির নাম রিফাত। রিফাত সাক্ষরের কথার পরিপ্রেক্ষিতে শুধু মাথা নাড়াল।যার অর্থ হ্যাঁ।তারপর লাশটা টানতে টানতে অন্য রুমে নিয়ে গেল।রিফাত চলে যেতেই সাক্ষর উঠে এই কক্ষের এক কোণে অবস্থিত ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।হয়তো ফ্রেশ হওয়ার জন্য। এই সুযোগে আমি তাড়াতাড়ি এই ঘর থেকে বেড়িয়ে পরলাম। ঘরের দরজা হালকা ভেড়ানো ছিল।সাক্ষর হয়তো তাড়াহুড়োতে দরজা লক করতে ভুলে গিয়েছিল। ভালোই হলো নয়তো এখন আমার বেরনো মুশকিল হতো।
—————
বেলকনির ডিভানে বসে দু-হাতে মাথা চেপে ধরে বসে আছি।সাক্ষর অনেকক্ষণ হলো ঘরে এসেছে।সাক্ষর ঘরে ল ঢুকতেই আমি ঘুমের ভান ধরে পড়েছিলাম
।ও খুব চুপিসারে এসে আবার আগের মতো আমার পাশে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।ও ঘুমিয়ে যেতেই আমি খুব সন্তর্পণে উঠে এসে বেলকনির ডিভানে গাঁ এলিয়ে দেই।
আমার জীবনটা সবদিক দিয়ে বিষাক্ত। ছোট থেকে একটার পর একটা খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে আমাকে। যখনই একটু সুখ খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করি ঠিক তখনই কালবৈশাখীর আগমন।এক ঝাপটায় তছনছ হয়ে যায় সবকিছু। ভেবেছিলাম আজকের রাতটায় খুব বড় সারপ্রাইজ দিয়ে চমকে দিবো সাক্ষরকে কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে গেলাম।এমন সারপ্রাইজ পাবো কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি। আমিও তোমাকে ঠিকই সারপ্রাইজ দিবো মি.সাক্ষর আহমেদ তবে আমার এবারের সারপ্রাইজ টা হবে একটু ভিন্নরকম। একজন আইনের সঙ্গে নিযুক্ত কর্মকর্তা হয়ে কখনোই তোমার অপরাধকে আমি প্রশয় দেব না। খুব শীঘ্রই জনসম্মুখে এক্সপোজ করবো তোমাকে।
চলবে,
(