শিশির ভেজা রোদ্দুর পর্ব -৪৫+৪৬

#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Part_45
#Writer_NOVA

বৌ-ভাতের দিন……..

শীতের সকালে গরম গরম খিচুড়ি খাওয়ার মজাই আলাদা। সকাল ৭টায় গোল করে আমরা সবগুলো মেয়ে খিচুড়ি খেতে বসেছি। আমাদের টেবিলের দায়িত্বে আছে এনাজ। পাশের টেবিলের দায়িত্বে তায়াং ভাইয়া। বেচারারা রান্নার জায়গা থেকে খিচুড়ির বোল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে। আমরা সবাই হাসি-ঠাট্টায় খাচ্ছি। হঠাৎ এনাজ পাশে দাঁড়িয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে বললো,

— অনেক খুদা লাগছিলো। কেউ যদি একটু খাইয়ে দিতো তাহলে খুব উপকার হতো।

কথাগুলো যে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলা তা বুঝতে বেশি সময় লাগলো না। একবার খাবার রেখে তার দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম মুখটা একটুখানি করে রেখেছে। সেই ভোর সকালে উঠেছে বেচারারা। এখনো কাজ করেই যাচ্ছে। তার দিকে তাকিয়ে কেন জানি আমার হাসি পাচ্ছে। হাসি আটকিয়ে রেখে আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম।আবারো সে বলে উঠলো,

— আল্লাহ, একটু খিচুড়ি খাইয়ে দিতে বলছি দেখে কেমন করে! খাইয়ে দিলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যাবে?

বাকিগুলিতে মিটমিট করে হাসছে। আমি ওদের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকাতেই অনন্যা বললো,
— একটু খাইয়ে দাও খালামণি। বেচারা আশা করছে তার আশাটা ভাঙা তোমার ঠিক হবে না।

আমি টেবিলের কোণা থেকে খালি প্লেট নিয়ে তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম,
— এই যে প্লেট, এই যে বোলে খিচুড়ি আছে। যার মন চায় নিয়ে খেতে পারেন।

অর্থি খাবার খাওয়া রেখে বললো,
— একটু খাইয়ে দিলে কি হয় গো খালামনি?

আমি ওর দিকে কটমট করে তাকিয়ে বললাম,
— তোর যখন এত দরদ লাগছে তুই খাইয়ে দে।

— আমিই খাইয়ে দিতেছি। যাও তোমার দিতে হবে না। আঙ্কেল এদিকে এসো।

এনাজ খুশিমনে ওর দিকে যেতেই অর্থি তাকে খাইয়ে দিলো। মুখে খাবার নিয়েই এনাজ বললো,
— এই না হলে আমার মা-মণি। তোমাকে আমার ছেলের বউ করবো অর্থি। এমন কাজের মেয়ে আমি হাতছাড়া করছি না।

অনন্যা বললো,
— আঙ্কেল এদিকে এসো। তোমাকে আমিও খাইয়ে দিবো।

— ইস, আমার দুইটা মা থাকতে কেন যে আমি অন্যকে খাইয়ে দিতে বললাম। সেধে অপমান হলাম।

আমি তার দিকে ক্রুর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে একটু জোরেই বললাম,
— যেচে অপমান হলে কারো কোন দোষ নেই।

— হইছে তুমি আর কথা বলো না টিডি পোকা। একটু খাইয়ে দিলে বোধহয় দুনিয়া উল্টে যেতো। যাও তোমাকে আর লাগবে না। আমি দুই মা পেয়ে গেছি।

আমি মুখ ভেংচি দিয়ে লেবুর টুকরো নিয়ে প্লেটে রস বের করতে লাগলাম। অর্থি, অনন্যা দুজনেই তাকে খাইয়ে দিচ্ছে। এর মধ্যে পাশের টেবিলে খাওয়া শেষ হতেই তায়াং ভাইয়া এসে হাজির। নূর আপির সামনে গিয়ে সেও এনাজের মতো করে বললো,
— কেউ যদি একটু খিচুড়ি খাইয়ে দিতো, তাহলে অনেক ভালো হতো।

নূর আপি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
— নিজের হাত দুটো কি কেটে ফেলে দিয়েছে নাকি? আমার কাছে এসে খাইয়ে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে? দিব্যি সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষ তো নিজের হাত দিয়ে খেতে পারে।

এনাজ আমার সামনে বিরবির করে বললো,
— বোনগুলো সব একিরকম।

আমি চোখ দুটো ছোট করে রাগী ভাবে তাকিয়ে তাকে বললাম,
— কি বললেন?

এনাজ দাঁত বের করে হে হে করে হেসে বললো,
— তুমি শুনে ফেলছো?

— জ্বি আমি শুনে ফেলছি।

তায়াং ভাইয়া নূর আপি কে উদ্দেশ্য করে আমাকে বললো
— খাইয়ে দিবে না ভালো কথা, এত কথা শোনানোর কি দরকার?

আমি এনাজের দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে বললাম,
— তায়াং ভাইয়া আয় তোকে আমি খাইয়ে দেই।

আমার কথা শুনে এনাজ রেগে আমার দিকে তাকালো। আমি সেই চাহনি তোয়াক্কা করে তায়াং ভাইয়ার দিকে এক লোকমা খিচুড়ি বাড়িয়ে দিতেই ভাইয়ার আগে এনাজ মুখে দিয়ে ফেললো।ঘটনার আকস্মিকতায় আমি বোকা বনে গেলাম। বাকি সবাই একসাথে হো করে চিৎকার করে উঠলো। আমি এখনো অবাক হয়ে যেভাবে ছিলাম সেভাবেই আছি।এনাজ কানের সামনে এসে ফিসফিস করে বললো,

— আমার অধিকার আমি আদায় করে নিতে জানি।সো কুল ডাউন মাই লাভ।

আমি বিস্মিত চোখে তার দিকে তাকাতেই সে এক চোখ মেরে অনন্যার সামনে চলে গেল। ইভা তায়াং ভাইয়াকে বললো,
— ভাইয়া আসেন আমি খাইয়ে দেই।

ইভার সাথে সাথে তন্বীও গলা মিলিয়ে বললো,
— ভাইয়া এদিকে আয়। আমিও খাইয়ে দিবো।

তায়াং ভাইয়া আফসোসের সুরে বললো,
— যার কাছে খেতে চাইলাম সে তো দিলো না। তোরা যখন দিবি তাহলে আর মানা করবো কেন? দে খাইয়ে দে। একটা প্রবাদ আছে, “সাধলে যে খায় না সে নাকি পরে চাইলেও পায় না।” তাই এখন খেয়ে নেওয়া বেটার।

আমি এদিক সেদিক তাকিয়ে তায়াং ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম,
— সামাদ ভাইয়া কি আজ বের হবে না? নাকি সারাদিন ভাবীর সাথেই থাকবে?

অনন্যা মুখ টিপে হেসে বললো,
— আরে বুঝো না কেন খালামণি,বুড়ো বয়সে বিয়ে করছে। বউ রেখে কি বের হতে মন চাইবে?

তায়াং ভাইয়া ফট করে বলে উঠলো,
— সামাদ ভাই বোধহয় ফরজ গোসল না করে দশটার আগে বের হবে না।

ভাইয়ার কথা আমরা যে কয়জন বুঝলাম তারা সবাই লজ্জায় এক হাতে মুখ ঢেকে ফেললাম। অর্থি ও ইভা শুধু বুঝেনি। তাই ওরা বোকার মতো আমাদের দিকে তাকিয়ে রইলো। এনাজ জিহ্বায় কামড় দিয়ে অন্য দিকে ঘুরে গেলো।তায়াং ভাইয়া আমার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো। আমি জোরে ওর পায়ে একটা লাথি দিয়ে বললাম,
— মুখে কি পর্দা নাই তোর পাঠা? পাঠা কি তোকে সাধে বলি আমি😤? বড় ভাইয়ের নামে ছোট বোন, ভাগ্নীর সামনে কি বলিস? মাথার স্ক্রু কি ঢিলা হয়ে গেছে?

নূর আপি বললো,
— মাঝে মাঝে লাজ শরম হাওয়া হয়ে যায় তার। কোথায় কি বলে ফেলে তা নিজেও জানে না।

শাহিনুর আপু আমাদের দিকে আসতেই বিষয়টা ঢাকা পরে গেলো।শাহিনুর আপু খিচুড়ির বোল নিয়ে ঘরে যাওয়ার সময় এনাজ, তায়াং ভাইয়াকে ডেকে বললো,

— ভাই তোমরা একটু সময় করে খেয়ে নিও। নিজের বাড়ির অনুষ্ঠান মনে করে খেয়ে নিবা। কারো জন্য অপেক্ষা করবা না। কি বললাম শুনছো!

এনাজ আশ্বাসের সুরে বললো,
— চিন্তা করবেন না আপু। আমরা সময় মতো খেয়ে নিবো। আমাদের নিয়ে আপনি একটুও টেনশন করেন না। আমরা আপনাদের নিজেদের মানুষই।

— এখন কি খাইছো তোমরা? না খেলে জলদী খেয়ে নাও। সবদিকে তো নজর দিতে পারছি না ভাই। তোমরা থাকায় ঝামেলা একটু কম সামলাতে হচ্ছে আমার। তোমরা খেয়ে নিও।

তায়াং ভাইয়া বললো,
— আপু, আমাদের নিয়ে আপনি নিশ্চিন্তে থাকেন। আমাদের খুদা লাগলে খেয়ে নিবো।

— আচ্ছা ভাই। কোন শরম পাবা না। যা খেতে মন চাইবে হাত দিয়ে নিয়ে খেয়ে ফেলবে।

শাহীনুর আপু চলে গেল। আমি প্লেটে আঁকিবুঁকি করছি। কিন্তু খাবার মুখে দিচ্ছি না। তায়াং ভাইয়াকে ইভা, তন্বী খাইয়ে দিচ্ছে। আমি অনেক ভেবে আরেক লোকমা নিয়ে এনাজের দিকে বাড়িয়ে দিলাম। এনাজ চোখ দুটো রসগোল্লা বানিয়ে খাবারটুকু মুখে নিলো। তারপর তায়াং ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো,

— ভাই, আমাকে ধর। আমার মাথা ঘুরছে। এটা আমার টিডি পোকা হতেই পারে না।

আমি মুচকি হেসে এক হাতে মুখ ঢেকে ফেললাম। নূর আপিও সেম কাজ করলো। তায়াং ভাইয়াও অবাক। ওদের দুই বন্ধুর মুখ দেখে আমি ও নূর আপি ফিক করে একসাথে হেসে উঠলাম।

💖💖💖

সকালের শিশির ভেজা ঘাসে খালি পায়ে হাঁটার মতো মজা আর কিছুতেই নেই। অন্যরকম একটা ভালো লাগা কাজ করে। জুতা খুলে খালি পায়ে শিশির ভেজা ঘাসে হাঁটছি। পূর্ব দিগন্তে সূর্যটা বহু আগে উঁকি দিয়েছে। সেই রোদ্দুরে শিশির ভেজা ঘাসে অন্য রকম অনুভূতি উকি দিয়েছে। বাড়ির পশ্চিমপাশে ছোট মাঠের মতো খালি জায়গা আছে। সেখানকার দূর্বা ঘাসগুলো না কাটার কারণে বড় হয়ে গেছে। সেখানে আমি ও অনন্যা শিশিরে পা ভিজিয়ে হাঁটছিলাম। হঠাৎ শাহিনুর আপু অনন্যাকে ডাকতেই ও বাড়ির দিকে রওনা দিলো। আমি একা একা পা ভিজিয়ে হাঁটতে লাগলাম। শিশিরগুলো যখন পা ছুঁয়ে যাচ্ছে তখন একটু সুড়সুড়ি লাগছিলো। যার দরুন মনটা ভালো হয়ে যেতেও বেশি সময় লাগেনি।

♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♥♥♥♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪

আমি এমন একটা তুমি চাই, এমন একটা তুমি চাই,
যে তুমি আমি ছাড়া অন্য কেউ নাই।
আমি এমন একটা তুমি চাই, এমন একটা তুমি চাই,
যে তুমি আমি ছাড়া অন্য কেউ নাই।

তুমি একবার বলো যদি,
আমি পাড়ি দিবো খরস্রোতা নদী।
তুমি একবার বলো যদি,
আমি পাড়ি দিবো খরস্রোতা নদী।
ভালোবাসা দিবো পুরোটাই।

আমি এমন একটা তুমি চাই, এমন একটা তুমি চাই,
যে তুমি আমি ছাড়া অন্য কেউ নাই।

আমি কত ছলে কৌশলে তোমায় ভালোবাসে যাই
এতো করে চাই আমি বলো, আর কি ভাবে বোঝাই
আমি কত ছলে কৌশলে তোমায় ভালোবাসে যাই
এতো করে চাই আমি বলো, আর কি ভাবে বোঝাই

তুমি একবার বলো যদি,
আমি পাড়ি দিবো খরস্রোতা নদী।
তুমি একবার বলো যদি,
আমি পাড়ি দিবো খরস্রোতা নদী।
ভালোবাসা দিবো পুরোটাই।

♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♥♥♥♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪

পেছন থেকে গানের কন্ঠ পেতেই থমকে দাঁড়ালাম। মাথা ঘুরিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখি এনজিও সংস্থা।তার পকেটে থাকা মোবাইলে গান বাজছে। পকেট থেকে মোবাইল বের করে গান বন্ধ করো সে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো,

— কি করছো টিডি পোকা?

— চা বানাচ্ছি, খাবেন?

—😒😒

— এভাবে তাকিয়েন না। দেখছেনই তো কি করছি তাহলে জিজ্ঞেস করেন কেন?

— তোমার মুখ থেকে শুনবো তাই।

— আমি বলবো না। আপনি দেখে নিন।

— দেখেছি তবুও তোমাকে বলতে হবে।

— আচ্ছা জ্বালাচ্ছেন তো আমায়।

— অনেকটা তাই।

— না, আমাকে শান্তিতে কেউ একটু একাও থাকতে দিবে না।

— তুমি কি কাউকে শান্তিতে থাকতে দাও?

আমি কোমড়ে হাত দিয়ে তার দিকে ঘুরে বললাম,
— এই মিয়া এই, আপনি কি বলেন হুম?

— তুমি তো নিশ্চয়ই শুনতে পেয়েছো। আচ্ছা, এখন আমায় বলো তো তুমি খালি পায়ে হাটছো কেন? সেলোয়ার যে শিশিরে ভিজে যাচ্ছে। সেদিকে খেয়াল আছে তোমার?

— জুতা খুলে শিশির ভেজা ঘাসে একটু হাঁটুন। দেখবেন আপনারও ভালো লাগবে।

— ইচ্ছে নেই।

— প্লিজ, প্লিজ জুতা খুলে একটু হাঁটুন।আপনার অনেক ভালো লাগবে। আপনি একবার ট্রাই করে দেখুনি।

— ওকে তুমি যখন বলছো তাহলে ট্রাই করছি।

এনাজ জুতা খুলে আমার পাশাপাশি খালি পায়ে হাঁটতে লাগলো। কয়েক কদম হাঁটার পর এনাজ আমার দিকে বিস্মিত চোখে তাকিয়ে বললো,

— অনেক ভালো লাগে তো এভাবে শিশির ভেজা ঘাসে হাঁটতে। অন্যরকম একটা ভালো লাগা ছেয়ে গেলো সারা মন জুড়ে। শিশির ছোঁয়া পায়ে লাগতেই মনটা ফুরফুরে হয়ে গেলো।

— আপনি তো করতেই চাচ্ছিলেন না। আমি মাঝে মাঝে খালি পায়ে মাটিতে ও শিশির ভেজা ঘাসে হাঁটি। এতে নিমিষেই মন ভালো হয়ে যায়। সাথে একরাশ ভালো লাগা সারা মনে ছেয়ে যায়।

এনাজ কোন কথা না বলে তার প্যান্টের নিচ দিক দিয়ে কয়েকটা ভাজ দিয়ে আবারো আমার সাথে হাঁটতে লাগলো। অনেকখন ধরে আমরা চুপচাপ হাঁটছি। সামনের জারুল ফুল গাছ থেকে দুটো পাখি কিচিরমিচির ডেকে একসাথে ডানা ঝাপটে দূর আকাশে চলে গেল। মিষ্টি রোদ্দুরে পা ভিজিয়ে হাঁটতে কি যে ভালো লাগছে তা বলার মতো নয়। চুপচাপ পরিবেশটাকে উপভোগ করছি আমরা দুজন।কেউ কথা বলে এতো সুন্দর নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশটাকে উপভোগ করায় ব্যাঘাত ঘটাতে চাইছি না। পাশাপাশি হাঁটতে খারাপ লাগছে না। হাঁটতে হাঁটতে মুগ্ধ চোখে এনাজের দিকে তাকালাম। সে নিচের দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে আমার সাথে তাল মিলিয়ে পা ফেলছে। নিচের থেকে চোখ উঠিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে নিচুস্বরে বললো,

— কিছু বলবা?

আমি মাথাটাকে দুইপাশে নাড়িয়ে না বুঝালাম। সে একটু হেসে আমাকে বললো,

— পায়ের নিচে শিশির ভেজা ঘাস আর মাথার ওপর মিষ্টি রোদ্দুর আর সাথে ভালোবাসার মানুষ। সব মিলে একটা অন্য রকম ভালো লাগা সৃষ্টি করেছে। জানো সেই ভালো লাগার নাম কি?

আমি চোখে প্রশ্নবোধক চিহ্ন রেখে তার দিকে তাকালাম। সে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,

— সেই নামটা হলো শিশির ভেজা রোদ্দুর। সুন্দর না নামটা?

— হ্যাঁ, খুব সুন্দর।

— পছন্দ হয়েছে নামটা?

— অনেক।

— আমার ইচ্ছে করছে সময়টা এখানেই আটকে রাখতে। তুমি আমি আর শিশির ভেজা রোদ্দুর। আর কিছু লাগবে না।

আমি মুচকি হেসে নিচে নজর দিলাম। উনি হালকা করে আমার হাতটা ধরলো। আমি চমকে তার দিকে তাকালাম। সে আগের থেকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলাম না। দৃষ্টি নামিয়ে ফেললাম। হাতটা সরিয়ে নিতে চাইলে আরো শক্ত করে ধরলো।আমি আর তার হাতের থেকে হাত সরালাম না।

— এনাজ একটু এদিকে আয় তো।

তায়াং ভাইয়া দূর থেকে এনাজকে ডাকলো। এনাজ হাত উপরে উঠিয়ে জোরে চেচিয়ে বললো,
— আসছি তুই যা।

তায়াং ভাইয়া চলে যেতেই আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
— তুমি থাকো আমি আসছি।

উনি হাত ছেড়ে বাড়ির পথ ধরলো। তবে যাওয়ার আগে কানে ফিসফিস করে বললো,

— Thanks এত সুন্দর একটা সময় আমাকে উপহার দেওয়ার জন্য। আই লাভ ইউ টিডি পোকা। আই এম রিয়েলি লাভ ইউ। ইউ আর মাই লাইফ এন্ড লাভ।

কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে সে দৌড়ে বাড়ির দিকে যেতে লাগলো। আমি এখনো ঘোরে আছি। তার যাওয়ার পানে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলাম। কানের মধ্যে এখনো তার কথাগুলো বারি খাচ্ছে। হুট করেই মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। এই প্রথম সে নিজের মুখে ভালোবাসার কথা বলেছে। আমার কাছে মনে হচ্ছে এটা আজকের দিনে সবচেয়ে বড় পাওয়া।
#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Part_46
#Writer_NOVA

গোসল করে ড্রেস পরে নিলাম। হালকা পাতলা সেজে বাইরে বেরিয়ে এলাম। দুপুরের খাবারের বৈঠক বসে গেছে। মেহমানরাও অনেকে এসে পরেছে। আরো আসবে। তায়াং ভাইয়া, এনাজ, সামাদ ভাইয়া, মুহিন আমার এক ফুপাতো ভাই আরো অনেকে খাবারের টেবিলে তদারকি করছে। ভাবীকে পার্লারের মেয়ে সাজাচ্ছে। সাজগোজ প্রায় শেষ পর্যায়। সে ঘর থেকে একটু ঘুরেফিরে বাইরের উঠনো হাঁটতে লাগলাম। খাবারের পর্ব আমাদের বহু আগে শেষ হয়ে গেছে। এখন শুধু আমাদের কাজ পুরো বাড়ি চক্কর মারা।তায়াং ভাইয়া কাজের ফাঁকে আমার সামনে দৌড়ে এসে দুটো মোবাইল দিয়ে বললো,

— শাঁকচুন্নি এই দুটো তোর কাছে রাখ। হারালে কিন্তু তুই জরিমানা দিবি। তাই সাবধানে রাখিস।

— পারবো না আমি। আমার ঠেকা পরে নাই। পকেটে রাখলেই তো হয়। আবার আমার কাছে রাখার কি দরকার?

— রাখতে বলছি রাখবি। এত কথা বলিস কেন?

— আমি পারবো না রাখতে। আমার হাত ব্যাথা করবে। তিনটা মোবাইল নিয়ে ঘুরবো আমি।

ভাইয়া কোন কথা না বলে মোবাইল দুটো জোর করে আমার হাতে দিয়ে প্যান্ডেলের দিকে দৌড়ালো।আমি, নূর আপি ও তন্বী একসাথে সারা বাড়ি কারণ ছাড়াই এদিক সেদিক ঘুরছি। ইভা, অনন্যা,অর্থি বউয়ের সামনে বসে আছে। আমার পরনে আজ এ্যাশ কালারের গাউন। সাথে সেম কালারের হিজাব বেঁধেছি। এনাজের পরনে দেখেছিলাম ডিপ ব্লু কালার শার্ট, কালো প্যান্ট। শার্ট ইন করে পরা। পায়ে সু জুতা। তায়াং ভাইয়াও সেম ড্রেসআপ। শার্টের কালারটা শুধু ভিন্ন,শ্যাওলা কালার।এরা দুই বন্ধু একরকম পরতেই বেশি পছন্দ করে।

আমরা উঠোনের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছি। এনাজ জগ ভর্তি পানি নিয়ে আমাদের সাইড কাটিয়ে টেবিলের দিকে চলে গেলো। আমি তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে তন্বীকে জিজ্ঞেস করলাম,

— এই তন্বী উনি না একটু আগে ডিপ ব্লু কালার শার্ট পরেছিলো। এখন আবার এ্যাশ কালার কেন?

— সত্যিই তো। আমি তো খেয়াল করিনি নোভাপু।

নূর আপি টিটকারির সুরে তন্বীকে বললো,
— আরে বুঝিস না কেন? তার প্রেয়সীর সাথে ম্যাচ করে শার্ট পরেছে। আগেরটা তো ম্যাচিং ছিলো না তাই পাল্টে ফেলেছে।

তন্বী নূর আপিকে বললো,
— একদম ঠিক বলেছো। দুজনের কি মিল তাতো দেখতেই পাচ্ছি। যাকে বলে ভালুপাসার প্রতিক্রিয়া।

— নোভার মুড কিন্তু সকাল থেকে আজ আমি অনেক খুশি খুশি দেখছি তন্বী। ঘটনা কি রে নোভা? কি চলছে তোর মনে? এনাজ ভাই কি এমন বললো যার জন্য সকাল থেকে তোকে অনেক খুশি দেখাচ্ছে।

আমি শান্ত দৃষ্টিতে নূর আপির দিকে তাকিয়ে বললাম,
— ভাইয়ের বিয়েতে তো মন এমনি খুশি থাকবে। এতে এনাজের কি বলতে হবে? তোমরা যে কি বলো না।

— হইছে, হইছে আর ভাব ধরতে হবে না। এনাজ ভাই যে তোকে কত সুন্দর করে প্রপোজ করেছে তা কিন্তু তন্বী আমাকে সবই বলেছে। তাই আমার সাথে আর ভাব ধরিস না।

— আমি ভাব কোথায় ধরলাম নূর আপি! কি যে বলো না তোমরা। ধ্যাত! থাকবোই না তোমাদের সাথে।

তন্বী মুখ টিপে হেসে বললো,
— এখন আমাদের সাথে থাকবে কি করে? এখান থেকে তো এনাজ ভাইয়াকে দেখে যাচ্ছে না।

আমি মুখ বাঁকিয়ে তাদের সামনে থেকে সরে গেলাম। মনে মনে কিন্তু আমি হেব্বি খুশি। সকালে সে ভালোবাসার কথা বলার পর থেকে মনটা খুশি খুশি লাগছে। যেটা তন্বী,নূর আপি ধরে ফেলেছে। এখন তাদের সাথে বেশি সময় থাকলে আমি ধরা পরে যাবো। তাই এখান থেকে কেটে পরাই ভালো।

এনাজ যেই টেবিলে খাবারের তদারকি করছে সেই টেবিলের বরাবরি কোণায় গিয়ে দাঁড়ালাম। হাতে তিনটা মোবাইল। এনাজের মোবাইল ওন করতেই ওয়ালপেপারে আমার শাড়ি পড়া একটা ছবি দেখে থমকে গেলাম। এটা তো পূর্ণমিলনী অনুষ্ঠানের প্রথম দিনে কালো শাড়ি পরার পিক। নিশ্চয়ই তায়াং ভাইয়া দিয়েছে তাকে। হার্ড লক দেওয়া। কিছু সময় ভেবে আমার নাম টাইপ করে দিলাম। কিন্তু লক খুললো না। দুজনের নাম একসাথে মিলিয়ে দিলাম তাও খুললো না। ব্যর্থ হয়ে যখুনি মোবাইল বন্ধ করে রেখে দিলাম তখুনি এনাজ এসে বললো,

— ইংরেজীতে নোভানাজ টাইপ করো তাহলেই লক খুলে যাবে।

আমি চমকে গেলাম। হুটহাট কোথা থেকে এসে এমনভাবে কথা বলে যে আমি চমকে উঠতে বাধ্য হই।সাথে একটু লজ্জাও পেয়েছি। সে দেখে ফেলছে যে আমি তার মোবাইলের লক খোলার চেষ্টা করছিলাম। উনি আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে বললেন,

— আমি যেভাবে বলছি সেভাবে টাইপ করো।N বড় হাতের তারপর ছোট হাতের ov লিখে আবার বড় হাতের A অক্ষর এরপরে ছোট হাতের na সবশেষে আবার বড় হাতের J অক্ষর।

তার কথামতো টাইপ করলে পুরো শব্দটা হয় NovAnaJ। সেটা লিখে ওকে দিতেই লক খুলে গেলো।আমি বিস্মিত চোখে তার দিকে তাকাতেই সে মুচকি হেসে বললো,

— আমাদের দুজনের নাম মিলিয়ে এই শব্দটা হয়। আমি মিলিয়ে নামটা বানিয়েছি। “নোভানাজ” নামটা কি সুন্দর তাই না?

আমি ওপর নিচ মাথা নাড়িয়ে তার কথার সায় দিলাম। উনি মুচকি হেসে প্রশ্ন করার ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলো,
— সকালের উত্তর কিন্তু আমি এখনো পাইনি। আমি রিটার্ন উত্তর চাই। এতো সুন্দর করে আই লাভ ইউ বললাম কিন্তু তোমার কোন উত্তর দেওয়ার তোড়জোড় নেই। এটা কোন কথা হলো?

আমি গানের সুরে মিনমিন করে বললাম,
❝আমার কাছে তুমি অন্যরকম,
ভালোবাসি বেশি প্রকাশ করি কম।❞

উনি আমার দিকে তাকিয়ে বিস্মিত চোখে বললো,
— রিয়েলি?

আমি আবারো তার উত্তর গানের সুরেই দিলাম।
❝সব কথা বলে না হৃদয়,
কিছু কথা বুঝে নিতে হয়।❞

— তাও মুখে স্বীকার করবে না?

আমি তার কথার উত্তর না দিয়ে মাথা নাড়িয়ে না বুঝালাম। তারপর লাজুক হেসে সেখান থেকে সরে গেলাম। ইস, এখনো লজ্জা লাগছে। সে কি ভাবলো কে জানে! পেছন থেকে এনাজ জোরে চেচিয়ে বললো,

— টিডি পোকা, আমার মোবাইলের সব ফাংশনে তুমি যেতে পারবে। কোন সমস্যা নেই।তবে গ্যালারির কোন ছবি তুমি কাটবে না। কাটলে কিন্তু তোমার জন্য সেটা মোটেও ভালো হবে না।

তার কথার আগামাথা কিছুই বুঝলাম না। তার গ্যালারীর ছবি আমি কেন কাটবো? আজব তো! যেহেতু কাটতে মানা করেছে তাহলে নিশ্চয়ই কোন কারণ তো অবশ্যই আছে।

💖💖💖

এনাজের মোবাইলে আমার দুই বছর আগের পুরনো ছবি দেখে আমি অবাকের ওপর অবাক। এগুলো যে তায়াং ভাইয়া পাঠিয়েছে তাতে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।গ্যালারী ভর্তি আমার ছবি দিয়ে। এর জন্য এনাজ সাবধান করে আমাকে বললো কোন ছবি কাটতে না। এতক্ষণে পুরো বিষয় ক্লিয়ার হলো।

— রাই, একটু দাঁড়াও।

সকালের সেই শিশির ভেজা ঘাসের মাঠে যেতে নিলেই কেউ পেছন থেকে ডাকলো। সেখানে গিয়ে ঘাসের ওপর বসে কতগুলো ছবি তুলবো।রাই, শব্দটা শুনে সবার আগে রোশানের কথাটাই মাথায় আসলো। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি রসুন মহাশয়ই। বৌ-ভাতের অনুষ্ঠানে চেয়ারম্যান বাড়ির সবাইকে দাওয়াত করা হয়েছে। সে তো অবশ্যই আসবে। আমি রেগে ফোঁস করে মুখ দিয়ে গরম নিঃশ্বাস ছেড়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম। এদিকটায় কোন মানুষ নেই। তবুও আমি অনুষ্ঠানের মাঝে কোন সিনক্রিয়েট করতে চাইছি না। ঘুরে যেতে নিলেই রোশান এগিয়ে এসে আমার হাত ধরে আমাকে আটকে বললো,

— রাই, প্লিজ আমার কথাটা একবার শুনো।

তাকে দেখে এমনি রাগ উঠে গেছে। সে হাত ধরায় যেন রাগটা আরো চড়া হলো। পেছনে ঘুরে ঠাস করে তার গালে এক চড় বসিয়ে দিলাম। রোশান আমার হাত ছেড়ে নিজের গালে ধরে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আমি যে ওকে চড় মারবো সেটা হয়তো বেচারা কল্পনাও করতে পারেনি। তার চোখের দিকে তাকিয়ে রেগে বললাম,

— এই থাপ্পড়টা না আমার আরো আগে মারা উচিত ছিলো। তাহলে আপনি এত সাহস পেতেন না। আর ৩য় বার আমাদের দেখাও হতো না। কোন সাহসে আমার হাত ধরেন আপনি? চেয়ারম্যানের ছেলে হয়েছেন বলে কি পার পেয়ে যাবেন প্রতিবার? ভেবেই নিয়েছেন নোভা আমাকে কিছু বলে না। তাহলে আমি কেন ওর সামনে যাবো না? এই আপনার কি লাজশরম কি কিছু নেই? এত অপমান করি তবুও নির্লজ্জের মতো চেহারা দেখাতে ডেং ডেং করে চলে আসেন। এবারের থাপ্পড়ের কথা যদি মনে থাকে তাহলে আমার সামনে ৪র্থ বার এসেন না। তাহলে আপনার জন্য অনেক খারাপ হয়ে যাবে মিস্টার রোশান দেওয়ান।

কথাগুলো বলে আবার পেছন দিকে ঘুরে গেলাম। রোশান গালে হাত দিয়ে ফুঁসছে। তাতে আমার কিছু যায়-আসে না। মনে মনে আনন্দ লাগছে। আবার আফসোসও লাগছে। প্রথম দিনই যদি ওর গালো ঠাটিয়ে দুটো চড় মারতাম তাহলে এবার দেখা হতো না। পেছন থেকে আবারো রোশান শক্ত করে হাত ধরে টেনে পশ্চিমে নিয়ে যেতে লাগলো। আমার এক দূর সম্পর্কের ফুপির বাসা আমাদের বাসার সাথে। তাদের দালানের পিছু নিয়ে রোশান থামলো। একটু ভয় ভয়ও করছে। ওর মুখটা রাগে লাল হয়ে আছে। ও নিয়ে আসার সময় তায়াং ভাইয়াকে রান্নার জায়গায় দেখেছিলাম। দুইবার ডাক দিয়েও লাভ হয়নি। ভাইয়া শুনেছে কিনা সঠিক বলতে পারছি না। তার আগেই তো রসুন আমাকে এখানে নিয়ে এলো। রোশানের হাত আলগা হতেই আমার হাত আমি ঝাড়া মেরে ছাড়িয়ে নিলাম। তারপর সর্বশক্তি লাগিয়ে রোশানের আরেক গালে আরেকটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম। এবারের থাপ্পড়টা আগেরটা থেকে বেশি জোরেই লাগছে। অনেক জোরে শব্দ হয়েছে। সাথে আমার হাতও জ্বলছে।আমার হাত ঝাড়া দিতে লাগলাম। মাথা উঠিয়ে রোশানের দিকে তাকাতে আমি ভড়কে গেলাম। চোখ দুটো রক্তবর্ণ হয়ে আছে। গাল দুটো লাল টুকটুকে হয়ে গেছে। সে আচমকা আমার গলা চেপে ধরে বললো,

— অনেক সাহস হয়ে গেছে তাইনা? আমাকে থাপ্পড় মারিস তুই? এর ফল কতটা ভয়ানক হবে তা জানিস তুই? তোর পুরো পরিবার পথে বসানোর মতো পাওয়ার আমাদের আছে।

আমি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে মুখটাকে বাঁকিয়ে নিচুস্বরে বললাম,

— ঐসব বড় বড় ডায়লগ অন্য কোথায় দিস আমাদের এখানে নয়। বাড়িতে অনুষ্ঠান বলে কোন সিনক্রিয়েট করতে চাইছি না। কিন্তু আমার ভাইয়ারা জানলে তুই চিপা মাইর অবশ্যই খাবি। আর ঐসব দুই টাকার ডয়লগ আমাকে না দিয়ে অন্যকে দে। তোদের এত পাওয়ার হয় নাই যে আমাদের পরিবার পথে বসাবি। আমাদের বংশ তোদের থেকেও বড় আছে। আমরা যদি রাগি তাহলে তোর বাপের যে চেয়ারম্যানি পাওয়ার দেখাস না সেটা আর থাকবে না। আর কি মান-সম্মান নষ্ট করবি তুই? কিছু করতে পারলে না নষ্ট হবে। আগেরবার শুধু আমার ভুলের কারণে এত কাহিনি ঘটতে পেরেছে। এবার তো আমি সেই ভুল করার চান্স রাখবো না।

— মুখে বুলি ফুটছে দেখছি।এতবার বলছি আমার কথাটা একটু শোন কিন্তু তুই নাছোড়বান্দা। আমার কথা শুনতেই চাচ্ছিস না।এখন মনে হচ্ছে একদম ঠিক করেছি আমি। তোর মতো মেয়ের সাথে এমনি হওয়া উচিত। আবার আফসোসও হচ্ছে। আরো বেশি কেন করলাম না?

রোশান হঠাৎ করে এতো প্রতিশোধ পারায়ণ কেন হয়ে গেলো তাই বুঝতে পারছি না। ওর মধ্যে এখন আমি বিন্দুমাত্র অনুশোচনাবোধ দেখতে পাচ্ছি না। মানুষ প্রতিশোধপরায়ণ হলে তার মধ্যে সামান্যতম বোধশক্তি থাকে না। ভালো কিছু চিন্তাধারাও লোপ পায়। রোশান এখন সেইরকম আছে। ওর চোখে স্পষ্ট ক্রোধ দেখা যাচ্ছে।আমি দুই হাত দিয়ে আমার গলা থেকে ওর হাত সরাতে চাইলে রোশান আগের থেকে আরো জোরে গলা চেপে বললো,

— গলার আওয়াজ অনেক বড় হয়ে গেছি দেখছি। ঐ ছেলের আশকারা পেয়ে এতো সাহস? ঐ যে সেদিন কফি হাউসে আমার হাত থেকে যে তোকে বাঁচালো। তোর ঐ নাগরের কথা বলছি আমি।

ওর কথা শুনে ইচ্ছে করছিলো আরো দুটো থাপ্পড় কষিয়ে দিতে। কিন্তু গলা চেপে ধরায় সেই শক্তি নেই। আমি চোখ মুখে অন্ধকার দেখতে লাগলাম। চোখ উল্টে আসছে।মনে হচ্ছে এই বুঝি প্রাণ পাখিটা আমার ছেড়ে চলে যাবে। মনে মনে একবার কালিমাটা আওড়ালাম। আমার এই অবস্থা দেখেও রোশানের কোন ভাবান্তর নেই। সে গলায় হাত চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ করে একটা ঘুষি এসে পরলো রোশানের নাক বরাবরি। রোশান ছিটকে দূরে পরে গেল। আমি চমকে সেদিকে তাকাতেই…….

#চলবে
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here