শিশির ভেজা রোদ্দুর পর্ব -৪৭+৪৮

#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Part_47
#Writer_NOVA

হঠাৎ করে একটা ঘুষি এসে পরলো রোশানের নাক বরাবরি। রোশান ছিটকে দূরে পরে গেল। আমি চমকে সেদিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম। এনাজ ও তায়াং ভাইয়া দুজনে আগ্নি দৃষ্টিতে রোশানের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে আজ ওকে ভস্ম করে দিবে। ঘুষিটা সঠিক কে মেরেছে তা আমি জানি না। আমি নিচে মাটিতে বসে জোরে শ্বাস নিতে লাগলাম।এনাজ আমার দিকে এগিয়ে এলো। আর তায়াং ভাইয়া রোশানের দিকে।

— তুমি ঠিক আছো টিডি পোকা?

— হুম। আরেকটু হলে ও আমায় মেরেই ফেলতো। আমি চোখ, মুখে অন্ধকার দেখছিলাম।

তায়াং ভাইয়া রোশানকে নিচ থেকে উঠিয়ে মুখে কয়েকটা পাঞ্চ মারলো। তারপর জোরে চেচিয়ে বললো,

— একবার আমার বোনের জীবন নষ্ট করে তোর কি সুখ হয়নি? আবার কেন এসেছিস?

রোশান কোন উত্তর দিলো না। জোরে জোরে পাগলের মতো হাসতে লাগলো। ওর হাসিতে এনাজ, তায়াং দুজনেই চটে গেল। এনাজ আমাকে ছেড়ে রোশানের দিকে এগিয়ে গিয়ে ওর কলার ধরে বললো,

— তোর সাহস কি করে হয় ওর গলা চেপে ধরার? তোকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলবো আমি। তুই ওর গায়ে হাত তুলেছিস কোন সাহসে?

এনাজ মারার জন্য হাত উঠাতে নিলেই আমি দৌড়ে গিয়ে ওর হাত ধরে বললাম,
— প্লিজ আপনারা এখানে কোন ঝামেলা করেন না। এখন ঝামেলা হলে পুরো বিয়ের অনুষ্ঠানটা নষ্ট হয়ে যাবে। এতে আমাদের বাড়ির মান-সম্মান নষ্ট হবে। ওকে আজকের মতো ছেড়ে দিন। পরে একদিন ওকে উদোম কেলানি দিয়েন। তায়াং ভাইয়া প্লিজ কোন ঝামেলা পাকাস না। ওকে আপতত ছেড়ে দে।

তায়াং ভাইয়া হুংকার দিয়ে বললো,
— তুই ওকে ছেড়ে দিতে বলছিস। তুই কি পাগল হইছিস? ও আবার তোর ক্ষতি করতে আসবে।

— সেই চান্স তোরা না দিলেই তো হয়। এখন তোরা মারামারি করলে ওর বাবা শুধু শুধু ঝামেলা পাকাবে। তখন বৌ-ভাতের অনুষ্ঠানটাই মাটি। সব দোষ হবে তোদের, আমার। তাই আজকের মতো ছেড়ে দে। ভালোই ভালোই অনুষ্ঠান শেষ হোক তারপর একদিন চিপা গলিতে নিয়ে চিপা মাইর দিস।

এনাজ রোশানের কলার ছেড়ে বললো,
— হ্যাঁ তায়াং, নোভা ভুল বলেনি। এখন আপাতত ছেড়ে দে। ঢাকায় ওকে যদি পাই তাহলে মেরে হসপিটালে ভর্তি করবো।

তায়াং ভাইয়া ওকে ছেড়ে শাসিয়ে বললো,
— ভাগ্যক্রমে আজ বেঁচে গেলি। কিন্তু পরেরবার বাচতে পারিস কিনা তাতে সন্দেহ আছে।

রোশান এতগুলো মার খেলো তবুও শিক্ষা হলো না। বেহায়ার মতো হেসে কোর্ট ঠিক করে ঝাড়তে ঝাড়তে বললো,
— তোর বোনকে আমার হাত থেকে বাচিয়ে রাখিস। ও আজ আমার গালে দুটো থাপ্পড় মেরেছে। এর শোধ আমি অবশ্যই তুলবো। আমিও দেখবো ওকে আমার হাত থেকে কি করে বাঁচাস তোরা।

এনাজ ওর সামনে এসে বললো,
— একদম ঠিক করেছে। তোকে দুইটার বদলে চারটা কেন মারলো না।

আমি তায়াং ভাইয়া ও এনাজকে টেনে দালানের পেছন দিক থেকে নিয়ে অনুষ্ঠানের প্যান্ডেলে নিয়ে এলাম। দুজনেই রাগে ফুঁসছে। আমি আজ না আটকালে এতক্ষণে বিয়ে বাড়ি বিচারের সালিশ বসে যেতো। গলাটা এখনো ব্যাথা করছে। হারামজাদাকে যদি কষিয়ে আরো দুটো মারতে পারতাম। এখন আফসোস লাগছে। কেন যে আরো দুটো বেশি মারিনি। নিজের ওপর রাগও হচ্ছে। এই অমানুষটাকে ভালোবাসতাম আমি। এর জন্য নিজের ক্ষতি করেছি। ছিঃ ধিক্কার জানাই নিজেকে। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম,লজ্জা থাকলে আমি এর কথা জীবনে আর মনে করবো না। এই ঘটনা আমরা তিনজন কাউকে বললাম না। জানলে অসুবিধা হবে। তায়াং ভাইয়া বিশাল এক ধমক দিয়ে আমায় ঘরে পাঠিয়ে দিলো। আর বললো বাইরে যেন না দেখে আমায়। মেয়ে পক্ষের মানুষ আসতেই তারা দুজন খাবারের তদারকি করতে লেগে পরলো। আমি রুমে চলে গেলাম।

💖💖💖

পরেরদিন……..

তাজপুরের নিরিবিলি রাস্তায় হাঁটছি আমরা। আমি ও এনাজ আগে আর অনন্যা, অর্থি, ইভা,তন্বী, নূর আপি, তায়াং ভাইয়া পেছনে। সবাই অটো দিয়ে চলে এসেছি।কেউ বাইক আনিনি। উপজেলার মোড় থেকে তায়াং ভাইয়া সবাইকে চকবার আইসক্রিম কিনে দিয়েছে। সবাই মনোযোগ দিয়ে সেটা খাচ্ছে। এনাজের দিকে তাকাতে দেখতে পেলাম সে খাওয়া রেখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,

— কিছু বলবেন?

— উহু, তুমি খাও।

— কেউ এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকলে কি খাওয়া যায়? নজর দিয়েন না কিন্তু আবার। আমার যদি পেট ব্যাথা করে তাহলে আপনার দোষ।

— একটু তাকাতেই এতকিছু। তোমার খাওয়া দেখতে ভালো লাগছিলো তাই তাকিয়ে ছিলাম।

— নিজেরটা রেখে অন্যেরটার দিকে তাকিয়ে থাকলে তো ভাববোই নজর দিচ্ছেন।

— হইছে আর তাকাবো না। খাও তুমি।

আমি কোন কথা না বলে খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম। উনি আইসক্রিমে কামড় দিয়ে এদিক সেদিক দেখতে লাগলো। আজকে সকালে তায়াং ভাইয়া ও এনাজ দুজনেই ঢাকা যাওয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু করছিলো। বাসার সবাই জোর করে রেখেছে। সামাদ ভাইয়া শ্বশুরবাড়ি। তার সাথে গতকাল আশা ও ঐশী গিয়েছে। অনন্যা,অর্থি, ইভাকে যেতে বলেছিলো। কিন্তু ওরা আমাদের জন্য যায়নি। আগামীকাল ভাবীদের বাড়িতে জামাই বাজার। সেই উপলক্ষে আমাদের জোর করে রেখে দিয়েছে। আগামীকাল গিয়ে সামাদ ভাইয়া ও ভাবীকে এই বাড়ি থেকে ২৫ জন গিয়ে নিয়ে আসবো। আজকের দিনে তাই ঘরে বসে না থেকে বিকেলবেলায় তাজপুর ঘুরতে চলে এলাম। আমার পছন্দের রাস্তায় প্রিয় মানুষটার পাশাপাশি হাঁটছি। আইসক্রিম খাওয়া শেষ হতেই পেছনে ঘুরে ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম,

— তায়াং ভাইয়া সামনে দুটো মঠ আছে। দেখতে যাবি? হাঁটতে হাঁটতে ঐদিক থেকে ঘুরে আসি।

তায়াং ভাইয়া বললো,
— কতটুকু সময় লাগবে? বেশি সময় লাগলে যাবো না। খালামণি, আম্মু বাকি সবাই বারবার বলেছে সন্ধ্যা করতে না। সন্ধ্যার আগে ফিরে যেতে হবে।

— বেশি সময় লাগবে না। এই ইটের রাস্তা শেষ মাঠেই কাঁচা রাস্তা গিয়েছে দক্ষিণ দিকে। সেই রাস্তা অল্প একটু হাঁটলেই মঠ।

— আচ্ছা চল তাহলে।

— আমরা হাঁটতে থাকি। তোরা আমাদের পেছনে আয়।

ভাইয়ার উত্তরের আশা না করে আমরা সামনের দিকে হাঁটতে লাগলাম। এদিকে গাড়ি খুবই কম চলে। কিছু সময় পর পর দু-একটা রিকশার দেখা পাওয়া যায়। ইটের রাস্তা হওয়ায় কিছু সময় পর আঁকাবাঁকা ইটে আমি কয়েকবার জুতা বেজে পরে যেতে নিয়ে বেঁচেছি। দুইপাশে সারি সারি ইয়া মোটা কড়ই গাছ। রোদের মধ্যেও এই রাস্তা ঠান্ডা থাকে। এনাজ গলা ঝেড়ে আমায় বললো,

— এখানে তুমি আগে কতবার এসেছো?

— বেশি আসা হয়নি। বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসে স্কুল থেকে প্রতিবার উপজেলা মাঠে আসতাম। তখন এই দিকে হাঁটতে চলে আসতাম। কখনো বা উপজেলা পরিষদের সামনে যে বিশাল বড় পুকুর দেখলেন সেই পুকুরের পাকা সিঁড়ি ঘাটলায় বসে সময় পার করতাম। পারফরম্যান্স দেখার থেকে এদিক সেদিক ঘুরতে বেশি পছন্দ করতাম আমি।

— মঠ দেখোনি?

— মঠ দুটোকে খুব ছোটবেলায় একবার দেখেছিলাম। এক বান্ধবীর সাথে তাজপুর স্কুলে এসেছিলাম। তখন দেখেছিলাম। তারপর আর দেখা হয়নি। এদিকে আসলে দূর থেকে তার মাথা দেখা যেতো। মঠ দুটো অযত্নে, অবহেলায় এখন ধ্বংসপ্রায়। আমাদের বিক্রমপুরে অনেক ঐতিহাসিক, পুরনো ঐতিহ্য আছে। যত্নের অভাবে যা কালের গর্ভে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে।

— বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুর বাড়িও তো তোমাদের মুন্সিগঞ্জে।

— হ্যাঁ, শ্রীনগরের রাঢ়ীখালে।

— তুমি দেখতে গিয়েছো?

— না, নিয়ে যাওয়ার মানুষ নেই। কে নিয়ে যাবে?

— সময় করে একদিন আমি নিয়ে যাবোনি।

— ওকে। আড়িয়াল খাঁ বিলও কিন্তু মনোমুগ্ধকর। বিলে নৌকা দিয়ে ঘুরলে আপনার মন নিমিষেই ভালো হয়ে যাবে। তারপর জনশন রোড। এই রোডটা অনেক সুন্দর। আপনার মনে হবে কোন সবুজ বনের ভেতর দিয়ে আপনি যাচ্ছেন।আমি নামে বিক্রমপুরের মেয়ে। কোন জায়গায় আজ অব্দি ঘুরিনি। শুধু অন্যের মুখ থেকে শুনে আফসোস করেছি।

— মুন্সীগঞ্জ আলুর জন্য বিখ্যাত।

— হ্যাঁ আলুর জন্য। তাছাড়া ভাগ্যকুলের মিষ্টিও আছে। রামপালের কলা, মাওয়ার ইলিশ, সিরাজদিখানের পাতক্ষীর,শীতল পাটি আরো বহু কিছু আছে। এগুলো ততটা জনপ্রিয় না হলেও বেশ কদর আছে।

— তোমাদের মুন্সিগঞ্জ আমার ছোট মনে হয়।

আমি কপাল কুঁচকে চোখ দুটো ছোট ছোট করে তার দিক তাকিয়ে বললাম,

—কোন দিক দিয়ে ছোট মনে হয়? আমাদের মুন্সিগঞ্জ বড় আছে। আমাদের জেলার ছয়টা উপজেলা। তার মধ্যে আমাদের উপজেলা সবচেয়ে বড়। ১১৪ টা গ্রাম ও ১৩ টা ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে আমাদের উপজেলা গঠিত। ১১৪টা গ্রাম কি কম কথা? একেকটা গ্রামও কম বড় নয়।

— তাহলে তো ভালোই বড়। তা মাওয়া কি তোমাদের উপজেলায়?

— না, লৌহজং উপজেলায় পরেছে। কুচিয়ামোড়া ব্রিজ বলে না সেটা আমাদের উপজেলায় পরেছে। মাওয়ার আগে যে বাসের কন্ডাক্টর নিমতলা, নিমতলা বলে চেঁচায় সেটাও আমাদের উপজেলায়।

— মুন্সিগঞ্জের নামই কি বিক্রমপুর?

— হ্যাঁ, বিক্রমপুর নামটা আগে ছিলো। পরে পাল্টিয়ে মুন্সিগঞ্জ রাখা হয়। এখনো অনেক জায়গায় মুন্সিগঞ্জ বললে চিনে না। যদি বলি বিক্রমপুর তাহলে চিনবে। তায়াং ভাইয়াদের মাদারীপুরের মানুষ তো আমাদেরকে বিক্রমপুরের মানুষ হিসেবে চিনে। মুন্সিগঞ্জ বললে বলবে এটা কোন জায়গা।

— তোমাদের এদিকে নদী নেই? দেখলাম না তো। তাই জিজ্ঞেস করলাম।

— আমাদের হাই স্কুলের যে রাস্তা দিয়ে আসলেন সেটার উত্তর পাশে আছে। ইছামতী নদী। আগে বিশাল বড় ছিলো। লঞ্চ চলাচল করতো। কিন্তু এখন চড় পরে নদী মৃত নদীতে পরিণত হয়েছে। বর্ষা এলে যাও একটু প্রসারিত হয়। গ্রীষ্মে পুরো শুকিয়ে খালে পরিণত হয়। আগের মতো মাছও নেই। আগে স্কুলে থাকতে টিফিন পিরিয়ডে নদীর পাড়ে গিয়ে বসে থাকতাম। এখন নদীর দুই পাশের জমিগুলো বালি দিয়ে ভরাট করে নদীটাকে আরো সংকীর্ণ করে দিয়েছে। মুন্সিগঞ্জ সদরে আছে ধলেশ্বরী নদী। সেটা মোটামুটি ভালো অবস্থায় আছে।

এনাজ আমার কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
—মাঝে মাঝে ভাবি আমরা যতটা প্রাকৃতিক পরিবেশে বড় হয়েছে তা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম চোখেও দেখবে না। ওদের কাছে এগুলো রুপকথার গল্পের মতো লাগবে। এসব নষ্ট কিন্তু আমরাই করছি। ভবিষ্যত প্রজন্মকে হুমকির মুখে সম্মুখীন আমরাই করছি।

আমি তার কথার সাথে তাল মিলিয়ে বললাম,
— ঠিক বলেছেন। হাই স্কুলের পেছনে দেখেছেন বিশাল বড় এক মাঠ। কিন্তু কোন ছেলে সেখানে খেলছে না। তারা মাঠের কোণে গোল করে বসে হয় ফেসবুক চালাচ্ছে কিংবা কারো সাথে চ্যাটিং করছে। কিন্তু ছোট বেলায় এই মাঠে খেললে তার হৈচৈ আমাদের বাসায় শুনতে পেতাম। বিশাল বড় মাঠ আছে কিন্তু খেলার মানুষ নেই। পৃথিবীর মানুষগুলো যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে।

— আমরা বোধহয় চলে এসেছি। ঐ যে মঠ দেখা যাচ্ছে। ভেতরে ঢোকা যাবে?

— না, বড় মঠটার সদর দরজা মাটির নিচে ঢাকা পরে গেছে। ছোটটার অর্ধেক আছে আর বাকি অর্ধেক মাটির নিচে। সেটায় বড় তালা মেরে রাখা হয়। বাইরে থেকে দেখে আসতে পারবো। অনন্যাদের গ্রামে একটা মঠ আছে।সেখানে অনেক টিয়ে পাখি বাসা করে থাকে। ভেতরে কেউ যায় না।

— কেউ পাখি ধরে না?

— না, কেউ ধরে না। উপরের দিকে ছোট ছোট ছিদ্র আছে।ওরা সেখানে ওদের মতো মঠে বাসা বানিয়ে থাকে। সেটার দরজায়ও বহু বছর আগের বড় তালা ঝুলানো। লোকমুখে শোনা যায় ভেতরে সাপের বসবাস। একেকটা ঐতিহ্য নিয়ে নানা কাহিনি আছে। আদোও সেগুলো সত্যি কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আমার রামপাল যাওয়ার ভীষণ ইচ্ছে। সেখানে এক বিশাল দীঘি আছে। যেটার নাম রামপালের দীঘি।ঐ দিঘী নিয়ে লোকমুখে একটা গল্প আছে। দীঘিটা বিশাল বড়। সেটাকে কখনোই মেশিন দিয়ে সেঁচে পানিশূন্য করতে পারে না।

— দীঘি কি?

—দীঘি পুকুরের মতোই। তবে তার থেকে বড় ও অনেক বেশি গভীর।

— রামপাল দীঘির গল্পটা বলো।

— আজ নয় আরেকদিন। সব আজ বলে দিলে আকর্ষণ থাকবে না। এখানে দাঁড়ান। ওরা আসুক তারপর একসাথে যাবো।

— মুন্সিগঞ্জ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম।

— এই সামান্য কিছু জেনে বলছেন অনেক কিছু। পুরোটা জানলে তো মাথা এলোমেলো হয়ে যাবে। আরো বহুকিছু আছে। সময় করে আরো অনেক কিছু বলবোনে।

— ওকে।

আমরা কাঁচা রাস্তার সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম। সবাই একসাথে হয়ে মঠের সামনে গেলাম। লাল মঠের অনেক জায়গা ভেঙে ভেঙে নিচে পরে রয়েছে। একসময় এখানে পূজো হতো। কি পূজো তা আমি জানি না। অবহেলায়,অযত্নে এগুলো এখন কোনরূপ দাঁড়িয়ে আছে। কোনদিন জানি ভেঙে নিচে পরে যাবে।অথচ এদের যত্ন নিলে যুগ যুগ ধরে এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতো। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আর রূপকথার গল্প হতো না।

#চলবে#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Part_48
#Writer_NOVA

রাতে……

ছাদের ওপর পাটি বিছিয়ে সবাই মিলে জমপেশ আড্ডা বসিয়েছি। আকাশে বিশাল থালার মতো চাঁদ না থাকলেও অর্ধেক আছে। তাতে পুরো ভুবন বেশ আলোকিত দেখাচ্ছে। আবহাওয়া হাড় কাঁপানো ঠান্ডা না হলেও বেশ ঠান্ডাই বলা যায়। তবে আমেজটা ভালোই লাগছে। আমাদের আড্ডার বিষয় এখন ভুতুড়ে গল্প। জোছনা বিলাসের সাথে ভুতুড়ে গল্পগুলোও মন্দ লাগছে না। বরং মাঝে মাঝে শরীরের পশমগুলো ঠান্ডা, ভয় দুটো মিলে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।হঠাৎ তায়াং ভাইয়া গলা খাকরি দিয়ে বললো,

— আমাবস্যার রাত হলে ভুতুড়ে গল্পগুলো বেশ জমতো। কি বলিস তোরা?

ভাইয়ার কথায় তন্বী চোখ পাকিয়ে ওর দিকে তাকালো। ভয়ে ওরা একে অপরের হাত ধরে বসে আছি। যদিও কেউ কাউকে ভয়টা বুঝতে দিচ্ছে না। তার মধ্যে ভাইয়ার এসব কথায় রেগে যাওয়ারি কথা।তন্বী বেশ বিরক্তি সহকারে বললো,

— তোকে পশ্চিমের বাঁশঝারে ফেলে রেখে আসি।তাহলে বুঝবি আমাবস্যার রাত হলে তোর কি অবস্থা হবে। কত করে বললাম এখন এসব গল্প শুরু করিস না। তা তো তোর কানে ঢুকলো না। এখন যদি ঐ বাঁশঝারের থেকে কিছু একটা এসে আমাদের ঘাড় মটকায় তাহলে তার দায়ভার কে নিবে?

তায়াং ভাইয়া ব্যঙ্গের সুরে বললো,
— হু এই তোদের সাহস! আমার আগেই বোঝা উচিত ছিলো এই ভীতুদের সাথে এসব গল্প চলে না। বুঝলি এনাজ, মুখেই তাদের সাহসের তোড়জোড়। এখন একেবারে ভয়ে মিইয়ে যাওয়ার অবস্থা।

অনন্যা বললো,
— তুমি কাকে ভিতু বলছো মামা? তুমি জানো আমাদের বাড়ির পেছন দিকটা ভালো নয়। তবুও আমরা ভয় না পেয়ে সন্ধ্যার দিকে ঘোরাঘুরি করি। আর তুমি আমাদের ভীতু বলছো।

তন্বী মুখ ভেংচে তায়াং ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে অনন্যাকে বললো,
— নিজে ভয় পাচ্ছে সেটা আমাদের দিয়ে বোঝাচ্ছে।পরে দেখবা খালামণি রাতে ওয়াসরুমে যাওয়ার সময় এনাজ ভাইয়াকে দরজার পাশে দাঁড় করিয়ে রাখবে।

তায়াং ভাইয়া হাত বাড়িয়ে তন্বীর কান টেনে বললো,
— আজ একটু বেশি ফরফর করছিস। একজন চুপ করে আছে বলে কি তার দায়িত্ব তুই নিয়েছিস?

তন্বী চেচিয়ে বললো,
— ভাইয়া কান ছাড় ব্যাথা পাচ্ছি। এমনি শীতের দিন চলে এসেছে। একটু ব্যাথা পেলে মনে হবে জান বেরিয়ে যাচ্ছে। ও নূর আপি, ও নোভাপু কিছু বলো?

নূর আপি কিছুটা চোখ পাকিয়ে ভাইয়াকে বললো,
— তানভীর ভাইয়া ওর কান ছেড়ে দেন। কান ছিঁড়ে গেলে পরবর্তীতে বিয়ে দিতে সমস্যা হবে।

তন্বী, তায়াং ভাইয়ার থেকে নিজের কান ছাড়িয়ে দুম করে ভাইয়ার পিঠে এক কিল বসিয়ে আমার পেছনে এসে বসলো। ভাইয়া উঠে এসতে নিলে নূর আপি ওর এক হাত ধরে আবার বসিয়ে দিলো। এনাজ এক গালে হেসে ভ্রু নাচিয়ে বললো,

— আমি না রহস্যময় ভালোবাসার গন্ধ পাচ্ছি। কোথায় জানি চুপিসারে কিছু একটা হচ্ছে।

নূর আপি এনাজের কথার সারমর্ম বুঝতে পেরে সাথে সাথে ভাইয়ার হাত ছেড়ে দিলো। লজ্জায় মাথা নিচু করে রেখেছে আপি। এনাজ আবারো টিপ্পনী কেটে বললো,

— হয়েছে, হয়েছে আপু। এতো লজ্জা পেতে হবে না। আমরা আমরাই তো।

তায়াং ভাইয়া এনাজের পিঠে জোরে একটা থাপ্পড় দিয়ে বললো,
— চুপ কর শালা।

— ভাই, আমি তোর বোন জামাই। তুই আমার সমোন্ধি। শালা বলে অপমান করিস না।

তায়াং ভাইয়া কপাল কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— কিরে শাঁকচুন্নি তুই আজ এতো চুপচাপ। এখন অব্দি কোন কথাই বললি না। হয়েছে কি তোর? এনাজ তোর সাথে কোন ঝামেলা হয়েছে?

এনাজ বললো,
— না তো তায়াং। আমার সাথে ওর কোন ঝামেলা হয়নি।

ইভা শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,
— বোইনেরে তোমরা আরেকটা আইসক্রিম খাওয়াও নাই বলে বোইনে রাগ করছে।

ইভার কথা শুনে সবগুলো হো হো করে হেসে উঠলো। আমি চোখ পাকিয়ে ওর দিকে একবার তাকালেও কোন উত্তর দিলাম না। এনাজ বললো,
— কি হয়েছে তোমার? শরীর খারাপ লাগছে? চুপচাপ আছো যে?

— না তেমন কিছু নয়। এমনি কথা বলতে ভালো লাগছে না।

তন্বী ভাব দেখিয়ে বললো,
— চলো আবার ভুতুড়ে গল্প শুরু করি।

অর্থি চেচিয়ে বলে উঠলো,
— না আর শুরু করার দরকার নেই। আমার ভয় করছে। পরে আবার জ্বর এসে পরবে।

অনন্যা বললো,
— তোর যখন জ্বর আসবো তাহলে তুই নিচে যা। তোর এই জায়গায় থাকার দরকার নেই। এমনি ভয়ে তুই রাতের বেলা ওয়াসরুমের ছিটকিনি লাগাস না। এগুলো শুনলে তো তোর সাথে ওয়াসরুমের ভেতরে যেতে হবে আমাকে। তার চেয়ে ভালো তুই এখান থেকে ফট।

অর্থি নিচের থেকে একটা ছোট কাঠি অনন্যার দিকে ছুঁড়ে মারলো।ইভা মুখ টিপে হেসে বললো,
— যদি অর্থি তুই মাঝরাতে আমাদের কাউকে ডাক দিস তাহলে আমরা একটাও তোর সাথে যাবো না। মনে রাখিস কথাটা।

তায়াং ভাইয়া আমাকে বললো,
— নোভা তুই একটা হরর গল্প বল।

— আমি পারি না।

— মিথ্যে বলিস না।

এনাজ মুখটাকে শুকনো করে আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
— কি হয়েছে তোমার?

— কিছু না।

— কিছু তো একটা হইছে।

— হইলে তো কান্নাই করতো।

— ধ্যাত, আমি তা বলিনি। প্লিজ একটা গল্প বলো।সবাই শুনতে চাইছে।

এনাজের সাথে সাথে সবাই শুরু করলো গল্প বলার জন্য। শেষে জোড়াজুড়িতে বলতে বাধ্য হলাম। কিছুটা থেমে দম নিয়ে বলা শুরু করলাম,

— ক্লাশ ফাইভে থাকতে আমার খুব বিশ্বস্ত একটা বান্ধবী ছিলো। অনেক সহজ-সরল ও মিশুক। ওর নাম ছিলো তুলি। ঘটনাটা ওর মামার। ওর মামার সাথে এক মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছিল। মেয়েটাকে তিনি এক তরফাভাবে অনেক বছর ধরে ভালোবাসতো। অবশেষে পরিবারের মত নিয়ে তাদের বিয়েও ঠিক হয়েছিলো।কিন্তু মেয়েটার আরেকটা ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিলো। যার কারণে বিয়ের কয়েক দিন আগে ঐ ছেলের সাথে পালিয়ে যায়।

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে এই অব্দি থামলাম। এনাজ আমাকে থামতে দেখে বললো,
— এটা তো লাভ স্টোরি মনে হচ্ছে। হরর কি হলো?

আমি শান্ত চোখে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,
— আমার গল্প এখনো শেষ হয়নি। পুরোটা বলে নেই।

💖💖💖

এনাজ মাথা হেলিয়ে সম্মতি প্রকাশ করলো। অর্থি ভয়ে দুই হাত দিয়ে শক্ত করে নূর আপির বাহু ধরে রেখেছে।ওকে চলে যেতে বলা হয়েছিল কিন্তু ও আমাদের ছেড়ে যাবে না। আমি ওর দিকে একবার দৃষ্টি দিয়ে আবার শুরু করলাম।

— তুলির মামা এই বিষয়টা মানতে পারেনি। সে মেয়েটাকে অনেক ভালোবাসতো। তাই সেদিন রাতেই উঠোনে থাকা মোটা বড়ই গাছে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে। ২০০৮ কি ০৯ সালের কথা। তখনকার সময় গ্রামের টয়লেটগুলো একটু দূরেই থাকতো। টিউবওয়েলের থেকে টয়লেটের দূরত্বটাও ভালো ছিলো। তার বাবা ভোরে নামাজ পরার জন্য উঠেছিলো। তখনও চারিদিকে অন্ধকার। দূর মসজিদ থেকে আজানের সুর ভেসে আসছে। এখনকার মতো এতটা বিদ্যুৎও ছিলো না। থাকলেও প্রচুর লোডশেডিং হতো। উনি টিউবওয়েল থেকে পানি নিয়ে টয়লেটে যাওয়ার সময় বড়ই গাছের কাছে যখন এলেন তখন তার মাথায় কিছুর সাথে বারি খেলো। ভুল ভেবে আবারো পথ ধরলেন।কিন্তু যাওয়ার সময় একিভাবে আরেকবার তার মাথায় বারি খেলো। উনি দ্রুত ঘর থেকে কুপি এনে বরই গাছের সামনে আসতেই জোরে চিৎকার করে কান্না শুরু করলেন। কারণ তার মাথায় এতক্ষণ তার ছেলের পা বারি খাচ্ছিলো। যে কিনা রাতে আত্মহত্যা করেছে। পুরো গ্রাম রটে গেলো তার মৃত্যুর কথা।যথা নিয়মে তাকে জানাযা দিয়ে কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হলো। যেই কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে সেটা ছিলো এলাকার মসজিদের সাথে। কবরস্থানটা মসজিদের সাথে বানানো হয়েছে। যাতে কবরবাসীদের আজাব কম হয়। সেই মসজিদে মাত্র দুই দিন ধরে নতুন এক ইমাম এসেছে।উনি ইমামতি তে একেবারেই নতুন। এটাই তার ইমামের প্রথম চাকরী। তুলির মামাকে যেদিন কবর দেয়া হয়েছে সেদিন রাতে উনি তাহাজ্জুদ নামাজ পরার জন্য মসজিদের বাইরে এসেছেন ওজু করতে। হঠাৎ… দেখো তোমাদের পেছনে কি!

আমার কথা শুনে সবাই চমকে পেছনে তাকালো।তারপর কটমট চোখে আরেকবার আমার দিকে তাকালো।আমি দাঁতগুলো বের করে একটা মেকি হাসি দিলাম।হঠাৎ বলেই সবার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। দেখি সবাই উৎসুক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর কি হয়েছে তা শোনার জন্য।আমি তাই একটু ভয় দেখানোর জন্য পেছনে তাকাতে বলেছিলাম। কিন্তু আমি এভাবে রহস্য রেখে থেমে যাওয়ায় সবাই আমার ওপর বিরক্ত। আমি সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে বললাম,

— কেউ বিরক্ত হয়ো না আমি বলছি।

তন্বী বললো,
—কেউ এমন জায়গায় থামে? আর তুমি তো ভয় দেখিয়ে ফেলছিলা।

নূর আপি রেগে বললো,
— বান্দরনী তুই রুহ কাঁপায় ফেলছিলি৷ আর বলিস তোর ওপর যেন কেউ বিরক্ত না হয়। তোরে পিটাবো এখন।

অর্থি বললো,
— আমার ভয় করছে।

ইভা বিরক্তি নিয়ে বললো,
— তারপর কি হয়েছে বলো না।থামলা কেন?

অনন্যা বললো,
— ও খালামণি বলো না তারপর কি হলো?

তায়াং ভাইয়া রেগে বললো,
— ঢঙ্গি ঢং না করে পুরোটা বল।

এনাজ মুখটাকে থমথমে করে বললো,
— এমন জায়গায় কেউ থামে? আমরা সবাই পুরো গল্পে ঢুকে গিয়েছিলাম। আর তুমি মজাটাই নষ্ট করে দিলে।

আমি অপরাধীর সুরে বললাম,
— সব আমাকে বকা শুরু করছে। এবার থামো সবাই আমাকে বলতে দাও।

অনন্যা তাড়া দিয়ে বললো,
— জলদী বলো।

আমি সবার দিকে তাকিয়ে আবার বলতে আরম্ভ করলাম,
—হঠাৎ ইমাম সাহেবের চোখ কবরস্থানের দিকে পরলো। মসজিদের সামনে কবরস্থান। তাই সামনের দিকে চোখ পরাটা স্বাভাবিক। তিনি দেখলেন আজকের নতুন কবরটা যেটা তুলির মামার কবর। সেটা দাউদাউ করে আগুন জ্বালছে।এটা ছিলো কবরের আজাব। তিনি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন সেখান থেকে কবরটা স্পষ্ট দেখা যায়। উনি অনেক ভয় পেয়ে গেলেন। যেহেতু উনি নতুন তাই এসব ভয় পাওয়াই স্বাভাবিক। সে এতটা ভয় পেয়েছিলেন যে সপ্তাহখানিক তার জ্বর ছিলো।এই ঘটনার পর উনি ইমামের চাকরীটা ছেড়ে দিয়েছিলেন। এই ঘটনার পর থেকে অনেকে কবরস্থানের পাশ দিয়ে রাতের বেলা যেতে চাইতো না। ঐ মসজিদে ইমাম এখনো বেশি দিন থাকে না। হাতে গুণা কয়েকজন রয়েছে অনেকদিন। যারাই রয়েছে তারাই মাঝরাতে তাহাজ্জুদ কিংবা টয়লেটে যাওয়ার জন্য বের হলে ছাগলের ডাক শুনতে পেতো। এগুলো দুষ্ট জ্বীনেদের কাজ। এরা কবরস্থানের ভেতরে তো ঢুকতে পারে না তাই বাইরে থেকে মানুষকে ভয় দেখায়। এর মধ্যে আরেকটা কাহিনি আছে। তুলির মামা যে বড়ই গাছে আত্মহত্যা করেছিলো সেই ডালে নাকি দুই রাতে লাশ ঝুলে থাকতে দেখেছিলো বাড়ির মানুষ। তাই সে বড়ই গাছটা তারা কেটে ফেলে। ভূত-প্রেত বলতে পৃথিবীতে কিছু নেই। যা আছে সেগুলো দুষ্ট জ্বীন। এরা মৃত মানুষের রূপ নিয়ে মানুষকে ভয় দেখায়।

আমি থামতেই তন্বী বললো,
— জ্বীনের দেখা কোথায় পাবো?

আমি বিস্মিত কন্ঠে বললাম,
— কেন তোর লাগবে নাকি?

— না একটা পুষতাম।

তায়াং ভাইয়া শব্দ করে মুখ ভেংচে বললো,
— ভয়ে আজ দফারফা হয়ে যাবে। সে নাকি আবার জ্বীন পুষবে। একটু আগে ভুতুড়ে গল্প শুরু করেছি বলে ভয়ে নাকের জল চোখের জল একসাথে করছিলো সে এখন সাহস দেখাচ্ছে 😏।

তন্বী রেগে বললো,
— তোর কিরে? যা ভাগ তুই। তোর মতো নাকি?

আমি তন্বীকে বললাম,
— চুলে সুগন্ধি তেল দিয়ে, চুল ছেড়ে আমাদের পশ্চিমের বাঁশঝার দিয়ে একটা চক্কর মেরে আয়। ইন শা আল্লাহ ওদের দেখা তো পাবি। খুশিতে ওরা তোর সাথেও চলে আসবে।

— না বাবা, দরকার নেই।

আশেপাশের পরিবেশটা পুরো ভুতুড়ে হয়ে আছে। দূরে কুয়াশার চাদরে মোড়ানো সবকিছু। আগের থেকে শীতটাও বেশি করছে। সবাই নিশ্চুপ। হঠাৎ করে পাশের আমগাছ থেকে কিছু অদ্ভুত শব্দ হতেই সবাই চমকে সেদিকে তাকালো। আমি ভয় দেখানোর জন্য চোখ দুটো বড় করে ভীত কন্ঠে বললাম,

— আল্লাহ গো দেখো ঐটা কি!

এতটুকুই যথেষ্ট ছিলো। সবগুলো হুড়মুড় করে উঠে জুতা রেখেই দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলো। আমি সিঁড়িতে বসে পেট ধরে হাসতে লাগলাম।এরা এতক্ষণ সাহসের কথা বলছিলো।এখন সব দৌড়। এমনকি তায়াং ভাইয়া ও এনাজও। এবার ভাবুন কি সাহসী মানুষ তারা।একটা হুতুম পেঁচা আমগাছের ডালে বসে পাখা ঝাপটাতেই পিনপিনে নীরবতায় অদ্ভুত শব্দ মনে হয়েছে। সেই ভয়ে সব ছুট। আমি একবার আমগাছের ডালে তাকিয়ে ছাদের থেকে পাটি,সবার জুতো নিয়ে হাসতে হাসতে নিচে নেমে গেলাম।

(বিঃদ্রঃ আত্মহত্যা কোন সমাধান নয়। আত্মহত্যাকারী কে পরকালে কঠিন আজাব ভোগ করতে হয়। উপরে আত্মহত্যার যে ঘটনা উল্লেখ করলাম তা পুরোটাই সত্যি ঘটনা।আত্মহত্যা করার কথা কখনো ভাবা তো দূরে থাক, মাথায়ও আনবেন না। জীবন অনেক সুন্দর।নিশ্চয়ই দুঃখের পর সুখ আসবেই।)

❣️❣️

পাঠকের প্রশ্নঃ মঠ কি?
উত্তরঃ মঠ বলতে এমন একটি অবকাঠামোকে বুঝানো হয় যেখানে কোন এক বিশেষ সম্প্রদায়ের ব্যক্তিবর্গ ধর্মীয় কারণে অবস্থান করেন এবং সেখানে উক্ত ধর্মীয় বিভিন্ন গুরুগণ উপদেশ প্রদান ও শিক্ষাদান করেন।

এরপরেও যারা না বুঝবেন দয়া করে একটু গুগলে সার্চ করে দেখে নিবেন🥰।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here