শিশিরে ভেজা আলতা পর্ব -১৬+১৭

#শিশিরে_ভেজা_আলতা
(২য় খন্ড)
#ফারহানা_আক্তার_রুপকথা

১৬.
হিমজড়ানো বিকেল; রোদ তখনও পশ্চিমে মিলিয়ে যায়নি। বাতাসে পাতা ঝরে ঝরে পড়ছে পেয়ারা আর আমের বাগানে। কথা ছিল দুপুরের পরই ঘুরতে বের হবে অনুরা। কিন্তু মেয়েরা শাড়ি পরে সাজতে গিয়েই বেলা বয়ে গেল অনেকটা। ঢাকা থেকে আসার সময় এমন কোন প্ল্যান ছিল না তাদের তাই সঙ্গে করে কোন শাড়ি আনা হয়নি। এমনিতেও সোহা শাড়ি, কামিজের প্রতি দূর্বল হলেও অনু এসবে একদম কমফোর্ট বা আগ্রহী কোনটাই নয়। কিন্তু সোহার চাপাচাপিতে সেও রাজী হয়েছে শেষমেশ। কিন্তু বিপত্তি হলো শাড়ি ব্লাউজ নিয়ে৷ শিশিরের মায়ের কানে গেল তারা শাড়ি পরতে চায় তাই সে নিজের স্টিলের আলমারি খুলে দুজনকে ডাকলো। সোহা আর অনু অবাক হয়ে দেখলো আলমারির এক পাল্লার প্রায় অর্ধেকের বেশিটা জুড়ে শুধু শাড়ি। সোহা শাড়ি চেনে খুব সে খেয়াল করলো সেখানে দামী, কমদামি শাড়িতে ভরা। সুতি, সিল্ক, কাতান আরো কয়েক ধরণের শাড়ি দেখে মুখ হা হয়ে গেছে সোহার। শিশিরের মা একটু আধুনিক তা বোঝা যায় তার আচরণে আবার শিশিরের মুখেই শুনেছিল তার মা শহরের মেয়ে। কিন্তু তাই বলে শাড়ির বাহার দেখে একটু বেশিই অবাক হয়েছে। শিফা দুজনকে বলল কে কোন শাড়ি পরবে বেছে নাও।

সোহা খুব বেছে একটা সুতির মধ্যে আকাশনীল রঙা শাড়ি নিয়েছে। অনু খুব একটা বাছাবাছি না করেই কালো সিল্কের শাড়ি নিলো। শিফা আবার জানতে চাইলো আলতা শাড়ি পরবে না! তাকে ফোন করে বলবে আসুক সেও শাড়ি পছন্দ করবে কোনটা পরবে। শিফা ফোন হাতে ঘরের দরজার দিকে এগিয়ে কল দিচ্ছে নকশিকে। সোহা আর অনু তখন ব্লাউজ কি পরবে তা নিয়ে ভাবতে ভাবতেই সোহা বলল, আয়শার কপাল তো দারুণ অনু।

অনু ভ্রু কুঁচকে তাকালো যার অর্থ সে সোহার কথা বুঝতে পারেনি। সোহা বুঝিয়ে বলল, “দ্যাখ শিশিরের আম্মুর কত্তো শাড়ি। বিয়ের পর নিশ্চয়ই এই সবগুলো তারই হবে যেহেতু কোন ননদ, দেবর থাকবে না!”

“উফ্ সোহা কি টিপিক্যাল চিন্তাভাবনা তোর! শরৎচন্দ্র তোকে বিয়ে করলে খুব বিপদে পড়বে রে।”

মুখের কথা শেষ করতেই অনুর পিঠে দুম করে কি*ল পড়লো। সোহা মুখ ভেঙিয়ে বলল, “আমাকে বিয়ে করলে তার কপাল খুলে যাবে। হুহ”

নকশি ফোন তুলেছে ; সে জানিয়েছে আলতাকে সে তার নিজের শাড়ি পরিয়ে দিচ্ছে।

বিকেলের প্রায় শেষ হয়ে এসেছে তখন। সোহা, অনু দুজনেই আটপৌরে সাজে শাড়ি পরেছে। ব্লাউজ নিয়ে অনু কিছুক্ষণ দোনোমোনো করেছে কারোটাই ফিট লাগছে না বলে কিন্তু অনু তত কিছু না ভেবে নিজেরই এক সাদার মধ্যে কালো স্ট্রাইপের শার্টের সাথে পরে নিয়েছে। আলতাও পরেছে একই সাজে শুধু তার কোঁকড়া চুলগুলোতে বেশ আলগোছে এক বিনুনি করা। গোলাপি ফর্সা মুখটাতে একটুখানি পাউডারের প্রলেপও লাগিয়েছে আজ সে। শিশির যখন আলতাকে আনতে জহিরদের বাড়ি গেইটে গিয়ে দাঁড়ালো তখনি আলতা ঘর থেকে বেরিয়েছিল। চোখের পলকে চারচোখ এক হলো হাত দশেক দূর থেকেই। আলতা আজ শিশিরের চোখে তাকাতেই লজ্জায় মাখামাখি হলো ভীষণ। ভোরের কুয়াশামাখা ঘোলাটে ভোরের মত ঝাপসা হয়েছে তার চোখের দৃষ্টি। সে দৃষ্টিতে লজ্জার পরত পরেছিল তার কথা মেনে চুলের বাঁধন বেঁধেছিল বলেই হয়ত। সোহা, অনু দুজনেই ছিল শিশিরের পিছনে। তারা একটুখানি মুখ বাড়িয়ে টিনের গেইটে থেকেই ডাকলো, জলদি এসো সন্ধ্যে নামছে তো। সোহা অবশ্য একটু উদাস ছিল আজ। তার খুব ইচ্ছে ছিল শরতও আসুক তাদের সাথে কিন্তু সে কথা কে বলবে! গত দু দিনে সে যতবার তাদের সাথে ছিল বলা যায়, প্রত্যেকবারই সময়ের আবদারে থাকা। কখনো শেষ রাতে স্টেশন থেকে নিয়ে আসা, কখনো ফুপুর বাড়ির খাওয়ায় উপস্থিত হওয়া কিংবা নিকষ আঁধার ঘেরা পথে একসাথে মেলায় যাওয়া। কিন্তু বারংবার ছোট ভাইয়ের বন্ধুদের সাথে তার ঘোরাফেরা নিশ্চয়ই স্বাভাবিক ব্যাপার নয়! কিন্তু হাতে সময়টাও যে বড্ড কম। কত গুলো বছর পেরিয়ে গেল মনের কুঠুরিতে এই শরৎচন্দ্রের একলা বসবাস। এবার মন খুব করে চাইছে মনের সকল ভাবনাগুলো শীতের হিমেল হাওয়ার মত শরতের মনেও ছড়িয়ে দিয়ে যেতে। সে কি এই হাওয়ায় গা ভাসাবে নাকি উষ্ণ বালাপোশের মত মনের দুয়ার ঢেকে দেবে সোহার মনের হাওয়া রোধ করতে! বুক দুরুদুরু সময় যতোই আগায় ততোই উদ্বিগ্ন হয় সে। আর তো কালকে দিনটাই হাতে রয়ে গেল। রাত নামলেই ছেড়ে যাবে এই সবুজ গাঁয়ের সেই সাধারণ মানুষটাকে। কত তৃপ্তি নিয়ে গত দু দিনে সে দেখে নিলো মানুষটাকে। অথচ সেই মানুষটা তার দিকে কখনো কৌতূহলী চোখে চেয়ে পর্যন্ত দেখলো না যে চোখে একটা ছেলে মেয়েদের দিকে তাকায়। সে কি দেখতে অসুন্দর! আচ্ছা শরত তো অনুর দিকে কয়েকবার রাগী চোখে তাকিয়েছে কখনোবা বিষ্ময়ে। সে কি অনুকে পছন্দ করেছে? আহ্! এমন কিছু হলে ম*রেই যাবে সোহা। সে হঠাৎই মন খারাপ করে তাকালো অনুর দিকে৷ সম্পূর্ণ কালো আর সাদায় মোড়ানো উদ্যত আচরণ করা তার বান্ধবীটি প্রেম, ভালোবাসা থেকে ক্রোশ দূর যদি তার প্রিয় পুরুষটি তাকেই ভালোবেসে ফেলে! এই প্রথম সোহার মন হীনমন্যতায় ভুগলো নিজের অস্তিত্ব নিয়ে। মন আর মানছে না যে করেই হোক আজ সে শরতকে তার মনের কথা জানিয়ে দেবে।
আলতা বেরিয়ে আসার আগে নকশিকে বলে এলো শিশিররা এসেছে।

চারজনের ছোট্ট দল এগিয়ে চলল নদীর দিকে। পৌষের সময় ধানের ক্ষেত সোনালি, সরষে ক্ষেত হলদে রঙে চোখ ধাঁধানো কিন্তু নদীর ঘাট অর্ধ শুকনো আর নদীর জল অনেক নিচে। তীর জুড়ে আবার কাশফুলের মেলা জমেছে মাস দুয়েক আগে থেকেই। আলতার পরনে সাদা জমিনে লাল পাড়ের কাতান শাড়ি। নকশির এই শাড়িটি তার নিজের কেনা ছিল বলেই স্বচ্ছন্দ্যে পরেছে আলতা। জহিরকে নিয়ে তার খুব একটা খারাপ লাগা নেই। মানুষটা ভালো আজ সারাটাদিনে সে দেখেছে এই মানুষটা তার মায়ের কতো যত্ন করে, সম্মান দেয় এমনকি তাকেও নিজ কন্যার মত স্নেহ করে। তবুও বুকের ভেতর একটা অবাধ কষ্ট এসে হানা দেয় তার মায়ের পাশে তার নিজের বাবার কমতি। সকল মন খারাপ কে উগড়ে দিতে সময় বেশি লাগলো না তার নদীর তীরে গিয়ে। চির চেনা নদীর তীর, নৌকা, আকাশ জুড়ে পলকা মেঘের ভেলা আর কাশফুল নিমেষেই তাকে উৎফুল্ল করে দিল। নদীর পশ্চিম ঘাটে বাঁধা দুটো নৌকার একটাতে উঠে সোহা অনুকে বলল, ক্যামেরা দে শিশিরকে অন্ধকার হওয়ার আগেই ছবি তুলে নেই।

অনু বিরক্তি নিয়ে তাকালো সোহার দিকে।

“ক্যামেরা শিশিরের হাতের ছোট্ট ব্যাগটাতেই আছে।” কথাটা বলে তারা দুজনেই তাকালো পাশে।

“ওমা! শিশির, আয়শা কই!” চমকে গেল অনু, সোহাও অবাক হলো। মাত্রই তো দুজন এখানে ছিল!

সোহা তাড়াহুড়ো করে বলল, “দ্যাখ সে হয়তো তার মার্বেল রানী না কি যেন বলে তাকে প্রপোজ করতে কাঁশফুলের জঙ্গলে নিয়ে গেছে। তুই জলদি তোর ফোন দিয়েই ঝটপট তুলে দে বইন। সূর্য ডুবলো বলে।”

অস্থির, উত্তেজিত শোনালো সোহার গলা। অনুও বাধ্য হয়েই তার ফোন দিয়ে সোহার কিছু ছবি তুলে দিলো। সে পোজ জানে না ভালো তাই সোহাই তাকে বলে বলে তারও কিছু ছবি তুলে দিলো।

কাস্টমারে দোকান জমজমাট আজ শরতের। এদিকে মাল আনতে গিয়েছিল বলে বিকেলে দোকান খোলা হয়নি এখনো মাল গুছিয়ে কাস্টমার বিদায় করতে গিয়ে একটু হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্মচারীটি আসেনি বলে। মাত্র আধঘন্টার মধ্যেই সে ঘেমেনেয়ে একাকার হয়ে গেছে এই ঠান্ডার দিনেও। শরতের দোকানে মুদিবাজার থেকে শুরু করে ফ্লেক্সিলোড আর বিকাশ, নগদের ব্যবস্থা করেছে সে কিছুদিন ধরে। দেখতে দেখতে তার দোকানের আয়তন এখন বাজারে সবচেয়ে বড়। উন্নতি তার দিনকে দিন আকাশচুম্বী । কেউ কেউ তো তাকে এখন উস্কে দিচ্ছে বাজারে চালের আড়ৎ খুলতে। তাদের বাজারে এখনো চাল, ডালের আড়ৎ বা কাপড়, কসমেটিকসের কোন ব্যবসায়ী নেই। এসবের জন্য সবাই সদরে কলেজের পাশের ছোট্ট মার্কেটে যায়। শরতও ভাবছে কিছুদিন ধরে কিন্তু এসবে টাকার খেলা একটু বেশিই বড়। তারওপর তার এই দোকানেই আরো একজন কর্মচারী নিবে বলে ভাবছে সে। কাস্টমারদের সবাইকে বিদেয় করার পর সে মাথার ওপরের ছোট্ট ফ্যানটা চালু করে শার্টের ওপরের দুটো বোতাম খুলে মাত্রই স্থির হয়ে বসেছিল। পকেটে ভাইব্রেশনে ফোনটা কাঁপতেই সেটা তুলে নিয়ে তাকাতেই অবাক হলো সে। হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে অনুর ম্যাসেজ! সে মনে করতে পারলো না অনুকে নিজের ফোন নম্বর কবে দিলো! পরমুহূর্তেই মনে পড়লো সেতো এই নম্বরটা সেভ করেছিল অনু কল করার পরই৷ অত্যন্ত বিরক্তিকর মুখ করেই সে মেসেজখানা ওপেন করে বিষ্ময়ে হা হয়ে রইলো কয়েক সেকেন্ড।

“হাত দে দেখি” কাশফুলে ঘেরা জায়গাটাতে দাঁড়িয়ে বড্ড গম্ভীর মুখ করে বলল শিশির। আলতা গাল ফুলিয়ে একবার আশপাশে তাকিয়ে আরেকবার শিশিরের দিকে তাকালো। তাকাতেই তার বুকের ভেতরটা চলকে উঠলো পুরনো এক রাতের কথা মনে করে। শিশিরের চোখের দৃষ্টি কি আজ ঠিক সেই রাতটার মত! নাকি আলতাই ভুল ভাবছে? ভুলও হতে পারে সেতো বছর কয়েক আগের কথা যখন আলতা আরো ছোট ছিল। শিশির ভাইয়ের মামাতো বোনের হলুদের সেই রাতের শিশির ভাই ছিল ভ*য়ংকর এক প্রেমিক পুরুষ৷ যার সেই ভয়*ংকর প্রেম অস্বাভাবিক আচরণ শুধু সে রাতেই দেখেছিল আলতা। তারপর আর কখনো এই মানুষটা সেরকম দৃষ্টি কিংবা আচরণ দেখায়নি আলতাকে। নেশালো, আগ্রাসী এক প্রেমিক সত্তা কি আজ আবারও উপস্থিত হয়েছে এই শিশির ভাইয়ের মাঝে!

“কি হলো হাত দে” এবার খুব ঝাঁঝালো কণ্ঠেই বলল শিশির। আটপৌরে শাড়ি, গলায় মাটির গয়না, চুলে আধখোলা বেণী, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক আর ফর্সা পায়ের পাতা জুড়ে টকটকে আলতা। কিশোরী কন্যার এই রূপে কোনো পুরুষ মুগ্ধ না হয়ে কি পারে! একমাত্র শিশিরই জানে আলতাকে দেখে তার ভেতরে চলা ঝড়টা ঠিক কতখানি ভ*য়ংকর হয়ে উঠেছে। তবুও সামলে নিতে হবে যে এই মনটাকে। নিজের ভেতরকার অসংলগ্ন কামনা, বাসনাকে লুকিয়ে রাখতে হবে যে আরো অনেকটা দিন, অনেকটা সময়৷ আলতার প্রতিক্রিয়া না দেখেই শিশির হাত টেনে আলতাকে বসিয়ে দিলো ঘাসের ওপর৷ তার হাতে থাকা ছোট্ট ব্যাগটাতে আছে সোহার ক্যানন ক্যামেরাটির সাথে শিশিরের রাখা দু গাছি লাল কাঁচের চুড়ি। সেই সাথে আছে লাল টকটকে দুটো জবা৷ বড্ড লুকিয়ে, চুরিয়ে রেখেছিলো এই চুড়িগুলি। আজ অতি গোপনে ব্যাগটাতে পুরে নিয়ে এসেছে আলতাকে পরাবে বলে আর ওই জবা দু’খানা সে তার বন্ধু অপুর বাড়ির গাছ থেকে ছিঁড়ে এনেছে। কত যত্নে রেখেছে এই ছোট্ট ব্যাগটাতে যেন মুচড়ে না যায় প্রেয়সীর বেণীতে ওঠার আগেই। আলতা বিমূঢ় হয়ে বসে রইলো শুকনো ঘাস আর কাশফুলের মাঝে। শিশির বড় যত্নে তার হাত দুটোতে চুড়ি পরিয়ে ফুল দুটো নিয়ে হাঁটু মুড়ে এগিয়ে এলো আলতার মুখোমুখি। শিশিরের পেছন দিক থেকে সরু রাস্তাটা দেখা যায় ভালো করে। তার খেয়াল হয়নি পেছনে কেউ দেখবে কিনা। সে তো সযত্নে ফুল গুঁজছিলো আলতার বিনুনির ফাঁকে তখনই ও পথ থেকে তাদের দেখে থমকে দাঁড়ালো এ গ্রামেরই এক মধ্যবয়স্ক পুরুষ রফিক চাচা। বলা বাহুল্য লোকটা শুধু গ্রামেরই একজন নয় সেই সাথে আহসান আর জহিরেরও বন্ধু মানুষ৷ তবে লোকটা বড্ড শেয়ালের মত ধূর্ত আর হিংসুটে। তার চোখ গ্রামের প্রায় প্রতিটি মানুষের দূর্বলতার দিকেই ঘোরে হরদম। নিজের সংসারে সে দু আনাও সুখী নয় নেহায়েত সে কারণেই অন্যের সুখও খুব একটা বরদাশত হয় না। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন প্রায় সবারই জীবনের সকল ঘটনা নিয়ে সে অপপ্রচার করে বেড়াতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করে। আর আজ তো পুরো এক রসাত্মক ঘটনাই চোখে পড়লো। সে হুট করেই হাঁক ছাড়লো, “কাশক্ষেতে কারা? কার ঝা*উড়া পোলাপান এইখানে লীলাখেলা করতাছো?”

রফিকের কণ্ঠ চিনতে একটুও ভুল হয়নি শিশিরের। নিজের ভুলটা বুঝতেই শিশির আগলে নিলো আলতাকে যেন পেছন থেকে আলতার মুখটা না দেখতে পায় লোকটা। আজ এই মুহুর্তে আলতাকে চিনতে পারলেই যে লোকটা বেস রসাত্মক এক ঘটনা আজ রাতের মধ্যেই চাউর করে দিবে। নেহাৎ বাধ্য হয়েই শিশিরে ঘন কাশফুলের আড়ালে ঠেলে দিলো আলতাকে। নিচু কন্ঠে শুধু বলে দিলো এপাশ দিয়ে তুই চলে যা বাড়িতে। তার সেকেন্ডের করা পরিকল্পনায় একটুও ভুল ছিলো না কিন্তু ভুলটা করলো আলতা। শিশির ওঠে দাঁড়ানোর আগেই সে দাঁড়িয়ে যেতেই রফিক দেখতে পেল আলতাকে। মেয়েটার মুখটা চিনতে একটুও কষ্ট হয়নি তার। এই গ্রাম কোন আশপাশের আরো পাঁচ গ্রাম ঘুরলেও এত পর্সা এত সুন্দরী মেয়ে যে আলতা ছাড়া আর কেউ নেই তা বোধকরি কয়েক গ্রামের সকলেরই জানা। সূর্যডুবির এই সন্ধ্যেতেও নকশির মেয়েকে চিনতে তার একটুও ভুল হয়নি। ভুলটা হলো পিঠ ফেরানো ছেলেটিকে দেখে। পেছন থেকে শুধু ছেলেটির কালো শার্ট আর মাথার কালো চুল ছাড়াই কিছুই দেখা যাচ্ছে না। তবে ছেলেটি বসা থেকে উঠে দাঁড়াতেই সে অস্পষ্ট উচ্চারণে বলে উঠলো, “ছেলেটা শরত না!”
#শিশিরে_ভেজা_আলতা
(২য় খন্ড)
#ফারহানা_আক্তার_রুপকথা

১৭.

শরতের ভোরে ভাতের মাড়ের মত ঘন ফ্যাকাশে কুয়াশায় ঢাকা শীতল প্রকৃতিতে টুপটাপ ঝরে পরা শিউলিতে ঘরের পেছন সবুজ ঘাসের আঙিনা সবুজ গালিচায় সাদা,কমলার কারুকার্য। দু চোখ ভরে ঝাপসা প্রকৃতিকে আরও ঝাপসা চোখের দেখার মধ্যেও নিজেকে ভীষণভাবে উপলব্ধি করার ভাগ্যটা যেন এক পরম সুখ-দুঃখের মিশ্র ভাগ্য। আর এই ভাগ্যটা ক’জনের হতে পারে! এমন সু কিংবা দূর্ভাগ্য আর কারও হোক বা না হোক সোহার হয়েছে, হচ্ছেও বলা যায়। এইতো এখনও চোখের সামনে হাত দুয়ের দূরত্বেই তার পছন্দের ব্যক্তিটি তার একান্ত এক তরফা ভালোবাসার মানুষটি শক্ত চোয়ালে কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। এইতো প্রথম এই মানুষটির পূর্ণ দৃষ্টি স্থাপিত হয়েছে তার ওপর যা সে বহুদিন ধরে চেয়ে এসেছে। কাল সন্ধ্যের সেই নৌকায় বসা তরুণীর পায়ে নুপুর পরার মুহূর্ত বন্দী করা ছবিটি দেখেছিলো শরত। অনাকাঙ্খিত হলেও একটি কথা নিদারুণ সত্যি সে মুহূর্তে বিনা মেঘে ভালো লাগার এক পশলা বৃষ্টি তার বুকের গহীনে বড্ড গোপনে ঝরেছিল। শরতের হিম হাওয়ার দৈবাৎ এক শীতল ঝাপটা লেগেছিল তার চোখেমুখেও কিন্তু সে সময়টা ছিল ক্ষীণ। নিরবচ্ছিন্ন এক বিষাদমাখা অতীত তার অতি সাধারণ মনটাকে আগেই ধ্বং*স করে গেছে। যে খেলেছিল ধ্বং*সলীলা সেই মানবী সেই মন পাতালের রমনীটিকে সে ভালো বেসেছিল আকাশসম, সমুদ্র তুলনীয় অসীম অফুরন্ত। অলির মত করে আর সে কোনদিন কাউকে ভালোবাসতে পারবে না বলেই তার মন ঘোষণা দিয়েছে। জানান দিয়েছে তাকে এ জীবনে আর কখনও ভালোবাসার পথে পা মাড়ানো তার জন্য নি*ষিদ্ধ। এ পথে যাওয়ার ক্ষমতা তার শেষ হয়ে গেছে শেষ অব্দি যাওয়ার আগেই। কাল সন্ধ্যেতে অনুর পাঠানো সোহার ছবিগুলো দেখে থমকেছিল সেকেন্ড কয়েক। তার ব্যক্তিত্ব শীতল তবে কঠোর। সে মুহূর্তেই ফোনটাকে পকেটবন্দী করে নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। সোহা তাকে পছন্দ করে এ কথা তার জানা হয়ে গেছে অনেক আগেই। মেয়েটা তার প্রতি নিজের দূর্বলতা মাত্র দু সাক্ষাতেই স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছিলো কিন্তু সে অপারগ হাজারো কারণে। আজও শরত প্রতিদিনকার মত ভোরে ফজর পড়তে গিয়েছিল কাকার সাথেই। আহসান নামাজের পর বেশ কিছুটা সময় হাঁটাহাঁটি করে শরতও করে মাঝেমাঝে। আজ ইচ্ছে হয়নি বলেই সে বাড়ি ফিরেছিলো তখনও পাড়া জুড়ে নিস্তব্ধতায় কুয়াশামাখা। টিনের গেইট ঠেলে বাড়ির ভেতর ঢুকতেই তার চোখ যায় শিশিরদের ঘরের উত্তর দিকটাতে। কুয়াশার ঘনত্ব এতোই যে হাত বিশেক দূরের সেই ঘরের কোণটাও ঝাপসা লাগছে তবে আবছা চোখে পড়ছে সেখানে শিউলি গাছটার কাছে কেউ বসে আছে। কৌতূহলী হয়েই সে পা বাড়িয়েছিলো সেদিকটাতে। তার পায়ের অল্প শব্দেই গাছের নিচে বসা মানুষটি ফিরে তাকালো আর সাথে সাথে উঠেও দাঁড়ালো। আর একটু কাছাকাছি হতেই শরত দেখতে পেলো সোহা দাঁড়িয়ে আছে। মুঠো ভর্তি তার শুভ্র শিউলি ফুল। শীতে কাবু হয়ে শাল চাদরে ঘোমটা দিয়ে জুবুথুবু হয়ে শিউলি ফুল কুড়াচ্ছিলো সোহা তা বুঝতে পেরেই শরত ফিরে যাচ্ছিলো। তখনই সোহা ডেকে উঠলো বড় করুণ কণ্ঠে, “শুনুন”

শরত ফিরে তাকাতে চাইলো না। পা থেমেছে তার তবুও ফিরে তাকায়নি তা দেখেই সোহা আবার বলল, “একটু ফিরবেন এদিকে।”

কি যে করুণ, কি যে ভার লাগলো সেই কণ্ঠস্বর তা বুঝি শরত কখনো ভাষায় প্রকাশ করতে পারবে না। সে ফিরে তাকালো একটুখানি সামনে এগিয়েও গেল। সোহা মাথা নিচু করে হাতের মুঠোয় রাখা ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে বড্ড জড়তা নিয়েই বলল, “আজ রাতেই চলে যাব আমরা।”

“হুম, জানি।”

শরত জবাব দিলো। সাথে সাথেই সোহা চোখ তুলে দেখলো একবার শরতকে। তারপরই আবারও দৃষ্টি নত করল, “আমার কিছু বলার ছিলো আপনাকে।”

“আমা…” শরত কিছু বলতে চাইলে থামিয়ে দিল সোহা।

“প্লিজ আমি আগে সবটা বলতে চাই তারপর না হয় আপনি বলবেন। ঠিক বলা নয় জবাব দিয়েন।”
সোহা এইটুকু বলে আবারও একবার শরতের মুখপানে চেয়ে নিলো। পুনরায় বলা শুরু করলো, “আমি জন্ম থেকেই শহুরে মেয়ে তবে জন্মসূত্র আমার গ্রাম৷ মানে আমার দাদারবাড়ি গ্রামে কিন্তু বাবা সরকারী চাকুরি করে সেই সুবাদে জন্ম, বেড়ে ওঠা সবটাই শহরে। এসব কেন বলছি আমি জানি না কিন্তু মনে হলো আমাকে শহুরে মেয়ে ভেবে যদি মিশতে না চান তাই বোধহয় বলে ফেলেছি। আমার, আমি না মানে আমি আপনাকে ভালোবাসি শরত।”

সোহা থেমে গেল। সে কথাগুলো কখনো এভাবে তো বলতে চায়নি শরতকে তবুও কেন এমন এলোমেলোভাবে বলল! নিজের আচরণে সে নিজেই হতভম্ব হয়ে গেছে বলেই হয়ত, খেয়াল করেনি তার এই বলা কথাগুলোতে সামনে দাঁড়ানো মানুষটা কতোটা অবাক হয়েছে। সে দৃষ্টি নত রেখেছে বলেই দেখতে পায়নি শরতের বিবশ হওয়া মুখশ্রী। কিছু সময় তার লেগেছে নিজেকে ধাতস্থ করতে ততক্ষণে শরতের চেহারা স্বাভাবিক হয়ে গেছে। সে তার স্বভাবসুলভ শান্ত স্বরে ঠিক দৃঢ় আর রূঢ়ভাবে বলল, “কাউকে এক কিংবা দুই দেখায় যখন ভালো লাগে তখন সেই ভালো লাগাকে পাত্তা দিতে হয় না৷ আর ভালো লাগার মানুষটার সাথে যদি পরিবেশ, পরিস্থিতির সামঞ্জস্যতা যদি না থাকে তবে তো নয়ই। আমার যদি ভুল না হয় তবে তুমি প্রায় শিশিরের সমবয়সীই হবে। একুশ,বাইশ বছর বয়সী একটা মেয়ে একেবারেই ম্যাচিউরড হবে না তা ভাবা বোকামি সেক্ষেত্রে তুমিও নও।আর এই তিনদিনে যেটুকু দেখেছি তাতে তো বলা যায় আমাদের আলতা বা তোমার বান্ধবী অনুর চেয়েও যথেষ্ট ম্যাচিউরড তুমি। অন্তত তেমন আচরণই দেখেছি তোমার সেক্ষেত্রে বলব এখন এই মুহুর্ত থেকেই তোমার এই মনোভাবনাটাতে লাগাম টেনে নাও নিজেই উপকৃত হবে।”

শরত এই পর্যন্ত বলে পা বাড়াচ্ছিলো ঘরে যাবে বলে। কিন্তু সোহা সে মুহূর্তে বলে উঠলো, “আর যদি বলি এই উপকারটা আমি চাই না।”

“নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

“সেই ক্ষতির ক্ষতিপূরণ কি!”

“নিঃসঙ্গতা, একাকীত্ব আর মনের দহন।”

“আপনিও কি সেই দহনে জ্বলছেন?”

“জেনে কি হবে?”

“যদি বলি আমি আপনার জ্বলনে মলম হবো।”

শরত পুনর্বার ফিরে তাকালো, ফিচেল হেসে জবাব দিলো, “শহরে ফিরে যাও দ্বিতীয়বার এ গ্রামের পথে পা বাড়িয়ো না।”
কথাটা শেষ করেই শরত চলে গেছে সেই থেকেই ঝাপসা চোখে কুঁকড়ানো শীতে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে সোহা। অনুর এখনো ঘুম ভাঙেনি বলেই সে জানতে পারলো না তার প্রিয় বান্ধবীটির এই মন ভাঙার ঘটনাটা।

আজ রাতেই আলতা ঢাকা চলে যাবে এ কথা আওলাদ জানে। তার তো ভাগ্য নেই প্রতিদিন মেয়েটাকে চোখের সামনে পাওয়ার তাই আজ আবার আসবে একবার ভেবে নিয়েছে। কিন্তু আলতাকে ফোন করতেই সে বলল, “আব্বা আসেন আমিও চাই আপনারে দেখে যাইতে কিন্তু আপনি আবারও যদি টাকা পয়সা নিয়া আসেন তাহলে দেখা করবোই না।”

আওলাদ হেসে মেয়েকে বলল, ট্যাকা পয়সা তো দরকারি জিনিস রে মা৷ দূরে থাকবি কোন সময় কি লাগে তহন তো লগে লগেই দিতে পারুম না।”

“যতটুকু না হইলে একেবারেই চলে না ততটুকু তো আপনি আগেই দিছেন আব্বা আর আম্মাও দিছে। দরকার পড়ার আগেই আমি আবার সময়মত চাইবো তখন দিয়েন!”

মেয়ের এমন বড়দের মত বলা কথা শুনে আওলাদের মন প্রফুল্ল হলো। সে আর কথা বাড়ায়নি কিন্তু এটা তার জন্যই ভালো হয়েছে। আজও সে দুই হাজার টাকা আনবে ঠিক করেছিলো কিন্তু টাকাটা তাকে ধার নিতে হতো। কালই ফার্মের আনাজপাতি কিনে হাতের টাকাগুলো শেষ হয়েছে। আপাতত সপ্তাহ খানেকের মধ্যে মাছ কিংবা খামারের মুরগিও বিক্রি হবে না। আর দুধের টাকা সে মাসিক হিসাবে পায়। একটা জিনিস আওলাদ লক্ষ্য করেছে যখন সে মাসে হাজার দশেক টাকা ইনকাম করতো তখন সে টাকাতেই স্বচ্ছলভাবে সংসার চলত। তারপর আয় বাড়লো সাথে কি করে কি করে যেন খরচও বেড়ে গেল। সেই বেড়ে যাওয়া এখন দ্বিগুণ হয়েছে। মাঝেমাঝে তো একদম হাসফাস করতে থাকে সে হাত খালি হলে। আজ আবার হাঁটবার তাই সে আলতার সাথে কথা শেষ করে ফোন পকেটে পুরে স্ত্রীর দিকে তাকালেন। তার ধারণা সত্যি এই যে সে এখন তার একমাত্র কন্যাটির সাথে কথা বলছিলো তখন তার এই স্ত্রীর বড় ধারালো চোখে তাকে দেখছিলো। এখনও সেই ধার মহিলার চোখে মুখে স্পষ্ট আর তা উপেক্ষা করেই আওলাদ বলল, “বাজারের ব্যাগ দেও আর বাজার সদাই কি কি লাগবো জলদি কও।”

আওলাদের স্ত্রীর তার কথা শেষ হতেই মুখ ঝামটি মে*রে বলল, “ক্যান ওই বউয়ের মাইয়ারে দেখতে যাওনের কি দেরি হইয়া যাইতাছে!”

আওলাদ কর্ণপাত করলো না এ কথার। মহিলার ভরণপোষণের কিছুতেই কমতি রাখছে না সে তবুও সন্দেহ করা ছাড়লো না। করুক সন্দেহ সে যত পারে আওলাদের কি! সে তো ছেলে দুটোর মত মেয়েটারও দ্বায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করবে। এমনিতেই তো পনেরো, ষোলো বছর দেরি হয়ে গেছে নিজের কন্যার দ্বায়িত্ব নিতে এরপর আর কয়টা বছর তারপর আবার অন্যকারো দ্বায়িত্ব হয়ে যাবে। বাবার জীবনে কন্যারা যে কত বড় নিয়ামত তা কি অন্যরা বোঝে!

সকালে নাশতার পর থেকে আলতা লেপ্টে আছে তার মায়ের সাথে। আজ চলে গেলে এই উষ্ণ আদর সে আবার কতোটা দিন পাবে না তার কি ঠিক আছে! তাই যেন এভাবে মায়ের শরীরে মিশে মায়ের আদর, উষ্ণতা আর ভালোবাসাগুলো শুষে নিচ্ছে নিজের দেহে। নকশি কতবার তাকে সরিয়ে একটু রান্নাঘরে যেতে চাইলো কিন্তু আলতা সরলো না। টানা দুটো ঘন্টা একইভাবে কখনো মায়ের পা দুটো জড়িয়ে শুয়ে রইলো কখনোবা কোমর জড়িয়ে। নকশি সেই যে বালিশে হেলান দিয়ে আছে সেভাবেই কখনো পা লম্বা করছে কখনো হাঁটু মুড়িয়ে নিচ্ছে। কিন্তু আলতার তাতে হেলদোল নেই। তার হেলদোল ফিরলো যখন জহির ঘরে এলো কোন প্রয়োজনে। তাকে দেখেই আলতা মাকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে বসলো। জহির বোধহয় নাশতার পরে দেখে গিয়েছিলো আলতাকে এভাবে আবার এখন ফিরেও সেরকম থেকে সোজা হতে দেখে বুঝলো মেয়েটা তাকে দেখেই সংকোচে উঠে বসেছে। তাই সে নিজে এসে দাঁড়ালো খাটের পাশে যে দিকটায় আলতা ছিল৷ আলতার মাথায় সে একটা হাত রেখে বলল, “আমাকে হয়ত বাবা বলে ভাবতে পারবি না, পারতে হবে তাও বলবো না। আওলাদ মিয়া তোর আব্বা সেই তোর আব্বা থাকবে সারাজীবন। কিন্তু আমি তো তোকে তোর জন্মের পর থেকেই চিনি খুব বেশি না একটু আকটু কোলেপিঠেও নিছি। বিশ্বাস না হয় আহসানরে জিজ্ঞেস করিস। ও যখন তোকে কাঁধে চড়াইয়া বাজারে নিতো, পুকুরে সাঁতার শিখাইতো আমিও কিন্তু তখন তোকে নিছি। তোর মনে নাই হয়ত তুই যখন মারবেল নিয়া খেলতি তখন আমিও মাঝেমধ্যে যোগ দিতাম খেলায়। তখন আবার চাকরি, ব্যবসা কিছুই ঠিকঠাক করতাম না তাই আরকি!”

কথার শেষের দিকে একটুহেসে সে ফেলল জহির৷ তারপর আবার বলল, আমার কাছে তুই আমার সন্তানের চেয়ে কম না। শরত, শিশিররে তো দেখিস কি আদর, স্নেহ করি তোকেও তেমনই করি। তোর আম্মার জন্য না আহসানের জন্যই করি৷ আমাকে দেইখা তুই এমন গুটাইয়া থাকলে, সংকোচ করলে আমার খারাপ লাগে, কষ্ট হয়। আগে যেমন থাকতি এখনও তেমন থাক না মা, আশপাশের লোকের মুখে হয়ত সৎ বাবা, পর কেউ আমি এসব কথা শুনিস কিন্তু সেইসব কানে নিস না আলতা আগে যেমন তোর জহির কাকা ছিলাম এখনও তোর জন্য আমি তাই।” কথাটা শেষ করেই জহির হাত সরিয়ে নিলো আলতার মাথা থেকে। আলতারও খারাপ লাগছে এখন৷ সত্যিই সে আগে জহিরকে একরকম দেখতো অথচ মায়ের সাথে বিয়ে হওয়ার পর থেকেই সে জহিরকে আর আগের মত মনে করে না। না চাইতেও এক অদৃশ্য দূরত্ব তৈরি করে নিয়েছে। শুধু মনে হয়েছিলো বাবার জায়গাটা ওই লোক নিজের নাম করে নিয়েছে ভেবেই এই দূরত্ব। এই মানুষটার স্নেহ থেকে ইচ্ছাকৃতভাবেই সে নিজেকে সরিয়ে রেখেছে। জহির ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যেতেই আলতা নকশিকে বলল, “আম্মা দুপুরের রান্না আজকে আমি করি!”

চলবে

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here