শুধু তুমি পর্ব ৭

#শুধু_তুমি
পর্ব-৭
#Nirzana(Tanima_Anam)
-নূহী আমি সরবকে খুব ভালোবাসি
-জানি!!
-নিজের থেকেও বেশি!
-জানি
-এতোই যখন জানিস তখন কি করে পারলি নিজের বোনে ভালোবাসার মানুষকে বোনের কাছ থেকে কেড়ে নিতে।
-কোই কাড়লাম??আমি তো কাড়ি নি!

নুসরাত রাগে গজ গজ করতে করতে নূহীর দিকে এগিয়ে আসে।নূহীর হাতটা ধরে এক ঝটকা মেরে নিচে ফেলে দেয়।নুসরাতে এখন ইচ্ছে করছে নূহীকে মেরে তক্তা বানিয়ে দিতে।নয়তো মেরে ফিট লাগিয়ে দিতে কিন্তু পারছে না!!কেন পারছে না তা নুসরাত নিজেও জানে না।হয়তো বোনের প্রতি ভালোবাসা নয়তো অন্য কিছু
নুসরাত নিজেকে শান্ত করে নূহীকে টেনে তোলে দাড় করিয়ে দেয়।

-নূহী সরবকে ডিভোর্স দিয়ে দে!!ছেড়ে দে ওকে
প্লিজ আমাকে একটু শান্তি দে।।

নূহী নুসরাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে জবাব দেয়
-বা রে আমি কখন সরব ভাইকে ধরে রাখলাম??সরব ভাই কি ছোট বাচ্চা যে ধরে রাখবো??
-নূহী তুই বুঝতে পারছিস না আমি কি বলছি সরবকে ডিভোর্স দিয়ে দে প্লিজ!!

-ডিভোর্স!!কিসের ডিভোর্স আমাদের বিয়ে হয়েছে একটা অজ পাড়া গায়ের ছোট্ট একটা কাজি অফিসে।আমাদের তো রেজিস্ট্রিও হয় নি তাহলে ডিভোর্সের কোনো প্রশ্নই আসে না আর তাও যদি তোমরা চাও তাহলে তালাকনামা নিয়ে এসো আমি সই করে দিবো!

এইটুকু বলেই নূহী গট গটিয়ে ঘরে চলে যায়।নুসরাত সেখানেই ঠায় দাড়িয়ে আছে।বুকের ভেতর কোথাও একটা আশার আলো জেগে উঠে।
নুসরাত ছুট লাগায় মায়ের ঘরে মাকে জানাতে হবে
“সরব আর নূহীর বেয়ে আইনত হয় নি তাহলে বিয়েটা ভাঙ্গতে বেশি অসুবিধে হবে না”

আজ সন্ধ্যে থেকেই আকাশটা কেমন থম মেরে আছে।নূহীর মনটাও থমথমে হয়ে আছে।সরবকে কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।নূহী সরবকে করে দেওয়ার পর থেকেই সরব নিখোজ।
না সে বাড়ি ফিরেছে না কারো সাথে যোগাযোগ করছে।

সরবের মা ও বার কয়েক এবাড়িতে ফোন করে নূহীকে গাল মন্দ করেই চলেছে।

যতোই রাত বাড়ছে আকাশটা আলো বেশি ঘন কালো মেঘে ঢেকে যাচ্ছে।
একেই তো শীত কাল তার উপর গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি।শীতের পরিমাণ যেন কয়েক গুন বাড়িয়ে দিয়েছে।

নূহী বিছানায় বসে গায়ে কম্বলটা টেনে নিয়ে ফোনে গান চালিয়ে হাতে একটা ম্যাগাজিন নিয়ে বসতেই ফোনটা বেজে উঠে।
নূহী ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে একটা আননোন নাম্বার।

নূহী সেদিকে গ্রাহ্য না করেই আবার ম্যাগাজিনে চোখ ডোনায়।
ফোনটা বেজেই চলেছে।নূহী কি মনে করে ফোনটা তুলে একটা লম্বা সালাম দেয়।
সালামের জবাবে একটা মৃদু হাসির শব্দ।

গলাটা বেশ চেনা লাগছে নূহীর কাছে
-কেমন আছো নূহী???
(কোনো রকম সম্মোধন ছাড়া)
-কে বলছেন??
-বা রে তোমার সরব ভাইয়ের সাথে দুদিন থাকতে না থাকতেই আমাকে ভুলে গেলে!!
-কে???
-চিন্তে পারছো না নাকি চিন্তে চাইছো না???
-রাখছি আমি!!
-আমার ফোন রেখে দিবা তোমার এতো সাহস!!
-(…)
-ভালোই আছো তাই তো??তোমাকে খুব সুখ দিয়েছে তোমার সরব ভাই তাই না??তা এমন কি সুখ দিলো যা আপি পারি নাই….
-সেটা আপনি সারা জীবন চেষ্টা করলেও পারবেন না।ইনফ্যাক্ট আপনার কাছ থেকে আমি কিছু চাইও নি যে আপনি দিবেন
-নূহী তুমি…..
-(টুট টুট টুট)

নূহী ফোনটা বিছানায় ছুড়ে মেরে উঠে দাড়ায়।ঘরের মধ্যেই বার দুইয়েক পায়চারী করে।
খুব রাগ হচ্ছে।সাথে কষ্টও হচ্ছে আবার কখনো কখনো নিজেকে অসহায় বলে মনে হচ্ছে।
কেমন একটা মেশালো অনুভূতি।অসহ্য এই অনূভুতি টা।

ঘরের মধ্যে কেমন দম বন্ধ দম বন্ধ লাগছিলো।কেমন ভয় ভয় ও করছিলো।বার বার সরবের কথা মনে হচ্ছে।বেশ চিন্তাও হচ্ছে।সরব ঠিক আছে তো।
চিন্তায় মাথাটা ভার হয়ে আসছে তাই নূহী বারান্দার দরজাটা খুলে বারান্দায় গিয়ে দাড়ায়।

এদিক ওদিক পায়চারি করে।হটাৎ ই আবার ফোনটা বেজে ওঠে।এবার নূহী সেদিকে ফিরেও তাকায় না।হয়তো সেই অচেনা নাম্বার।
না নূহী ফোনটা ধরবে না।কিছুতেই না।অতীতে ফিরে যেতে চায় না সে।না ফিরতে চায় অতীতের সেই ভয়ংকর মূহুর্তগুলোতে।
কিন্তু ফোনটা নূহীর বিরক্তি না বুঝতে পেরে বেজেই চলেছে…..

নূহীর কেন যেন আগ্রহ জাগে।ছুটে গিয়ে ফোনটা হাতে নিতেই দেখে কলটা কোনো আননোন নাম্বার থেকে নয় সরবের নাম্বার থেকে এসেছিলো।নাম্বারটা সেভ না করা থাকলেও নূহীর নাম্বারটা চিন্তে একটুও কষ্ট হয়নি।

নূহী ফোনটা বেড সাইডে টেবিলের উপর রেখে আবার বারান্দায় আসতেই চোখ যায় বাড়ির সামনে দাড়িয়ে থাকা কালো রঙ্গের একটা গাড়ির দিকে।

গাড়িতে মাথা নিচু করে উবু হয়ে কেউ একজন বসে আছে।
নূহীর আর বুঝতে বাকি নেই কে সে।

নূহী গুটি গুটি পায়ে বাড়ির সদর দরজা খুলে নিঃশব্দে পা বাড়ায় বাড়ির বাহিরে।এখন তার গন্তব্য সেই কালো রঙ্গের গাড়িটা,গাড়িতে বসে থাকা লোকটা!!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here