#শুধু_তুৃমি
পর্ব-৮+৯
#Nirzana(Tanima_Anam)
সরব বার বার আলতো হাতে নূহীকে ছুঁয়ে দিচ্ছে আর নূহীও বার বার সরবের হাত সড়িয়ে দিচ্ছে।কিন্তু আজ যেন সরবের হাত বাঁধাই মানছে না নির্দ্বিধায় ছুয়ে দিচ্ছে প্রিয়সীর শরীর।
বারান্দায় হাটা হাটি করার সময় নূহীর চোখ যায় বাহিরে দাড়িয়ে থাকা কালো গাড়িটার দিকে গাড়িটা চিন্তে বাকি নেই নূহীর।এটা সরবের গাড়ি।নূহী একটু ভালো করে উকি ঝুকি দিতেই দেখে গাড়ির ভেতর সরব মাথা নিচু করে আছে।কেমন একটা নিতিয়ে পড়েছে।নূহীর ভেতরটা কেমন করে উঠে।
নূহী সদর দরজা খুলে গুুটি গুটু পায়ে এগিয়ে যায় সরবের দিকে।সরবের কাছে গিয়ে গাড়ির দরজা খুলতেই সরব মিটিমিটি চোখে তাকায় নূহীর দিকে।
-এখানে কি চাই??
সরব কথা বলার সাথে সাথে নূহীর নাকে একটা কটু গন্ধ এসে ধাক্কা লাগে।
নূহী তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে।
-কি ছাইপাঁশ খেয়েছেন।ইয়াক কি বিশ্রী গন্ধ
সরব দাঁত বের করে হেসে উঠে।
নূহী নাক চেপে সরবকে আকড়ে ধরে।সরবকে গাড়ি থেকে বার করে কোনো রকমে টেনে হিচঁড়ে ঘরে নিয়ে আসে।সরবও টলমল পায়ে নূহীকে অনুসরন করে।
নূহী সরবকে বিছানায় শুয়ে দিতেই সরব নূহীর হাত ধরে একটা হেচকা টান দেয়।নূহী হুমরি খেয়ে সরবের বুকে গিয়ে পড়ে।
-সরব ভাই এসব ছাইপাঁশ গিলে খবর দার আমার কাছে আসবেন না আমার গা গুলাই
-বা রে না খেলে মনে হয় তুমি আমাকে কতো তোমার কাছে আসতে দাও
-আমাদের মধ্যে কি আদও কাছাকাছি আসার মতো সম্পর্ক আছে???
সরব নূহীর দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে আছে।ঠিক নূহীর দিকে নয় নূহীর হালকা গোলাপী ঠোটের দিকে।নূহী কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই সরব নূহীর ঠোঁট দুটো নিজের দখলে নিয়ে নেয়।
নূহী কিছুক্ষন ছটফট করে কেমন শান্ত হয়ে যায়।
বেশ কিছুক্ষন পরে সরব নূহীকে নিজে থেকেই ছেড়ে দেয়।ছাড়া পেয়ে নূহী ছুট লাগায় বাহিরে।
উদ্দেশ্যে সরবের জন্য টক কিছু একটা বানিয়ে আনতে হবে যাতে নেশাটা কাটে।
নূহী এক গ্লাস তেতুলের পানি এনে ধীর পায়ে সরবের কাছে আসে।বুকের ভেতর কেমন ঢিপ ঢিপ করছে।কেমন যেন লাগছে সরব যদি আবার তেমন কিছু করে কি করবে সে,সরবকে সায় দিবে নাকি দূরে সড়িয়ে দিবে এসব ভাবতে ভাবতে নূহী সরবের কাছে যেতেই দেখে সরব ঘুমিয়ে পরেছে।
বিছানার একদম কর্নার ঘেষে গুটি শুটি মেরে বাচ্চাদের মতো করে শুয়ে আছে সে।নূহী সরবের কাছে গিয়ে কম্বলটা গায়ে টেনে দেয়।
তারপর সরবের মাথার কাছে গিয়ে বসে পড়ে।
নূহীর কেন যেন খুব ইচ্ছে করছে সরবের চুলগুলো ছুয়ে দিতে, মাথায় হাত বিলিয়ে দিতে।
নূহী এতো শত না ভেবে সরবের মাথায় হাত বুলাতে থাকে।নূহী নিজের মধ্যে কেমন একটা টান অনুভব করে সরবের প্রতি।
সরবকে দেখতে দেখতে নূহী কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে তা সে খেয়ালই করে নি।
সকাল বেলা মায়ের চেচামেচি তে নূহীর ঘুম ভাঙ্গে।
-অসভ্য নির্লজ্জ মেয়ে কোথাকার এতো বার বারন করা সত্যেও তুই সরবকে বাসায় ডেকে সারা রাত এক বিছানায় কাটালি?কি ভেবেছিসটা কি এভাবে প্যাচ কষে সরবকে নিজের কাছে বেঁধে রাখবি??তোর সাহস তো কম নয়!!
একটা কথা ভালো করে শুনে রাখ সরবের সাথেই নুসরাতের বিয়ে হবে তুই যতই প্যাচ কষ এই বিয়ে হবেই। বেশি বাড়াবাড়ি করলে তোকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে…..আর এমনিতেও সরব নিজে এই বিয়েতে মত দিয়েছে তুই চাইলেও আর সরবকে আটকাতে পারবি না
এইটুকু বলেই তিনি থেমে যান।মুখ বাঁকিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসেন।
নূহী মায়ের কোনো কথায় ঠিক মতো বুঝতে পারছে না।আর ঠিক কি কারনে মা তাকে এতোগুলো কথা শুনালো তা ও সে বুঝে উঠতে পারছে না।হটাৎই নূহীর কাল রাতের কথা মনে পড়ে যায়।
তারপর নিজেকে সে বিছানায় আবিষ্কার করে।নূহীর যতো টুকু মনে পড়ে সে তো বসে ছিলো তাহলে তাকে সুয়ে দিলো কে?
না কি সে নিজে নিজেই শুয়ে পড়েছে।কিন্তু এতো পড়িপাটি ভাবে!!
এতো শত চিন্তার মাঝে নুসরাতের আগমন ঘটে।
মেয়েটার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে।সেই সাথে ফুলেও গেছে।বোধয় সারা রাত না ঘুমিয়ে কেঁদে কেটে পাড় করেছে।
নুসরাত ঘরে আসতেই নূহী বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ায়
-উহু উঠছিস কেন শুয়ে থাক।মনে চাইলে আরেকটু ঘুমোতেও পাড়িস
-মানে?
-সারা রাত বোধয় তোর মানে তোদের ঘুম হয় নি এখন একটু ঘুমিয়ে নে!
নূহী অবাক চোখে নুসরাতের দিকে তাকিয়ে আছে।
-বুঝলি না তাই তো!!
-হু
-নূহী সারা রাত একই ঘরে একই বিছানায় দুজন ছেলে আর মেয়ে একই কম্বলের নিজে দুজন দুজনকে লেপ্টে শুয়ে থাকে তার মানেটা নিশ্চয় আমাকে বলে দিতে হবে না!
-নুসা আপু তুমি ভূল…
-থাক আর বলতে হবে না।জানিস নূহী আমি কাল সারা রাত ঘুমোতে পারি নি।
-আপু তুমি যা ভাবছো ভূল ভাবছো
-নূহী সরব তোকে এতো ভালোবাসে কেন??আমাকে বাসলে কি হয়??আমি কি এতই খারাপ???
কথাগুলো বলেই নুসরাত বেরিয়ে যায়।নূহী এবার একটু শান্ত হয়ে বসে।সবাই ঠিক কি বলার বা বোঝানোর চেষ্টা করছে নূহী ঠিক বুঝতে পারছে না।
এমনিতেও সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার পর বেশ কিছুক্ষন মাথা হ্যাং হয়ে থাকে।তার উপর সকাল সকাল এতো চেচামেচি।
নূহী ঘটনাটা বুঝে উঠার আগে হুট করেই সরবের কথা মাথায় চলে আসে।
তাকে তো সে রাতেই ঘরে নিয়ে এসেছিলো এখন তো নেই।সে আবার কোথায় গেলো!
নূহী আবার বিছানা ছেড়ে দাড়িয়ে যায়।এদিক সেদিক খুজতে নিলে ফোনটা আবার বেজে উঠে।
নূহী ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে সরব ফোন করেছে।নূহী ফোনটা তুলে কানে ধরে
-শুনছেন আপনি কোই??
সরব নূহীর প্রশ্নের উওর না দিয়ে উল্টো নূহীকে প্রশ্ন করে
-নূহী তোমার অঙ্কনের সাথে যোগাযোগ আছে আমাকে আগে বলো নি তো?তুমি কি অঙ্কনের জন্যই আমাকে এতো অবহেলা করো??
অঙ্কনের জন্যই আমাকে বিনা শর্তে অন্যের হাতে তুলে দিচ্ছো??বেশ তুমি যা চাও তাই হবে!!
এইটুকু বলেই সরব ফোনটা রেখে দেয়…..
তখন নূহীর মাথায় আসে কাল রাতে সরবের সাথে কথা হওয়ার আগে অঙ্কনের সাথে বেশ কিছুক্ষন ফোনে কথা হয়েছিলো তার মানে সরব ফোনের কনটাক্ট লিস্টে নাম্বারটা দেই রাগ করে চলে গেছে
বারান্দায় উল্টো মুখ করে দাড়িয়ে আছে সরব।সারা গায়ে হলুদ মাখানো।একটু আগে মেয়ে বাড়ির লোক হলুদ লাগিয়ে দিয়ে গেছে।আর সরবের গায়ে প্রথম হলুদ লাগিয়েছে নূহী।
জ্বী।সেদিন সকালেই নুসরাত নূহীর মা সরবের মা সাফিয়া বেগমের কাছে আসেন উদ্দেশ্য আর অপেক্ষা নয় আজই সব পাকা করতে হবে।অসম্পূর্ন কাজটা সম্পূর্ন করতে হবে।
কোনো রকমে নূহীর মা ছুটে ছুটে আসে সাফিয়া বেগমের কাছে।কোনো রকম ভূনিতা ছাড়াই ওনি নিজের মনের কথা জানান সরবের মাকে।
“আমি আর দেরী করতে চাই না।কাল পরশুর মধ্যেই সরব বাবা আর নুসরাতের বিয়েটা দিয়ে দিতে চাই।দুজনের মাঝে অম্পূর্ন কাজটা সম্পূর্ন করে আমি দায় মুক্ত হতে চাইছি”
এক নাগাড়ে কথাগুলো বলেই দম নেই নূহীর মা।সাফিয়া বেগমও এই প্রস্তাবে বেশ খুশি হন।সাফিয়া বেগম যখন থেকে শুনেছেন কাল সারা রাত সরব নূহীর সাথে ছিলো ওনি কিছুতেই মানতে পারছিলেন না।মনে মনে ভয়ও করছিলো নূহী যদি আবার সরবের কাছে ফিরে আসে।বা সরব যদি নূহীকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে কি হবে তাহলে? কি করে মানবেন ওনি নূহীকে।
এসব চিন্তা ভাবনার মাঝে নূহীর মায়ের এই প্রস্তাব ওনার বেশ মনে ধরে।এক কথায় রাজি হয়ে যান সাফিয়া বেগম।
ছেলের মা আর মেয়ের মা দুজন মিলে বিয়ের দিন ক্ষন ঠিক করেন।কালই বিয়ে হবে।
আর দেরী নয়।
অনেক পরিকল্পনা করে ঠিক করা হয় আপাতোতো ঘরোয়া ভাবেই সরব নুসরাতের বিয়েটা দিয়ে দিবে।তারপর দুজনকে বিদেশ পাঠিয়ে নূহীর একটা ব্যবস্থা করতে হবে।
সরবের মায়ের সম্মতি পেয়ে নূহীর মা একরকম খুশি হয়েই বাড়ি ফিরে আসে।বাড়ি ফিরেই ওনি আগে নূহীর কাছে যান।
নূহী তখন জ্বানালার গ্রীল ধরে আকাশ দেখছিলো।
-নূহী
-(…)
-মা নূহী
-(…)
ওনি পেছন থেকে নূহীর কাধে হাত দিতেই নূহীর হুশ ফিরে।নূহী এতোক্ষন বেশ অনমনষ্ক ছিলো।
-আমাকে ডাকছিলে মা??
-হুম্ম
-কি ভাবছিলি??
-কিছু না।
-আমি জানি তুই সরবের কথা ভাবছিলি।
-কিছু বলবে!
-হুম্ম
-বলো
-নুসরাত খুব ছোট বেলায় ওর বাবা মারা যায়।তখন তুই তোর মায়ে পেটে।তুই হওয়ার সময় তোর মা ও মারা যায়।আমার আদরের বোনের মেয়ে হিসেবে তোকে আমি কোলে তুলে নিই।একটু একটু করে বড় করতে থাকি।তোর বয়স যখন চার মাস তখন হটাৎ করেই আমার বাবা অসুস্থ হয়ে যায়।বাবা মা খুব চিন্তায় পড়ে যায় আমাকে নিয়ে।একেই তুই ছোট তোর বাবা একা তোকে সামলাতে পারবে না আমিও আমার ছোট্ট নুসরাতকে নিয়ে কোথায় যেতাম।সব কিছু বিবেচনা করে সবাই সিদ্ধান্ত নেয় আমাকে আবার বিয়ে দেওয়া হবে তাও তোর বাবার সাথে।তুই তখন খুব ছোট ছিলি।
-এই কথাগুলো কেন বলছো।
-আমি তোর জন্য অনেক করেছি নূহী।জন্মের পর থেকে তোকে আমি লালন পালন করেছি।তোর মায়ের মতো করে তোকে দেখেছি।
-জানি তো তাই তো তোমাকে আমি মা বলে ডাকি।
-নূহী আমার নুসরাতের জীবন তোর হাতে।
-(…)
-সরবকে ছেড়ে দে নূহী তোর সামনে হাত জোড় করছি।।।সরবকে ছাড়া আমার মেয়ে বাঁচবে না।
আমি আজ সরবের মায়ের সাথে কথা বলে এসেছি কালই বিয়ে দিবো আমার মেয়ে আর সরব বাবার।তুই দয়া কর মা আমাকে।আমি তো তোর মায়ের মতোই….
-হুম্ম ঠিকই বলেছো তুমি আমার মায়ের মতোই মা নও….(মুচকি হেসে)
-(…)
-ভয় নেই আমি এই বিয়েতে বাঁধা দিবো না।তোমার কথা যদি নাই রাখতাম তো সেদিন হাজার অমতের মাঝে ও অঙ্কনের মতো মানুষকে বিয়ে করতাম না……
এইটুকু কথা বলেই নূহী সেখান থেকে চলে যায়।ঘরের সদর দরজা পাড় হতেই দেখে নুসরাত বরফের মতো দাড়িয়ে আছে।
নূহী নুসরাতের দিকে একপলক তাকিয়ে বলতে থাকে
-যা তোমার ছিলো তা তোমারই থাকবে আমি কখনো তোমার কোনও জিনিস তোমার থেকে কারিনি নুসা আপু!!এবারও কারবো না।
-নূহী
নুসরাতের কথা শোনার জন্য নূহী আর একমুহূর্তও দাড়ায় না।দাড়িয়ে কি লাভ।সবাই তো শুধু একটা জিনিসই চায়।সরব……
সবাই সরবকে চায়।সরবকে নূহীর থেকে কেড়ে নিতে চায়।
এদিকে
সরবের মা যখন সরবকে বিয়ের কথা বলে তখন সরব আর বাঁধা দেয় না।বাধা দেবে কেন??কার জন্য বাঁধা দেবে।যার জণ্য বাঁধা দিবে সেই তো তাকে চায় না।সেই চায় না ভালোবাসতে তাহলে কিসের এতো যুদ্ধ কিসের এতো অপেক্ষা।।।
সরবের বুকের ভেতর যেন একরাশ অভিমানে মেঘ জমেছে সেই অভিমান থেকেই সরব সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে যে সে নুসরাতকে বিয়ে করবেই।নূহীকে মুক্তি দিবে সারা জীবনের মতো।
সন্ধ্যায় একটা ছোট খাটে গায়ে হলুদের ব্যবস্থা করা হয় সরবের বাড়িতে।
সে অনুযায়ী নুসরাতের মা ও নুসরাতের গায়ে হলুদের ব্যবস্থা করে আগের বার মেয়েকে ঠিক মতো হলুদ দিতে পারেন নি তাই এবার সেই ইচ্ছেটা পুরোন করতে চান ওনি।
নূহী সারা দিন ঘুরে ঘুরে বোনের হলুদের ব্যবস্থা করে।সন্ধ্যেতে একরকম জিদ করেই চলে যায় সরবের বাড়িতে উদ্দেশ্য সরবকে নিজের হাতে হলুদ লাগাবে বলে।
সরব নূহীকে দেখে একরকম অবাক হয়ে যায়।
সারা বিকেল সরবকে ধাওয়া করেও কেউ সরবের গায়ে এক ফোটা হলিদ ও লাগাতে পারে নি।
হলুদের বাটি নিয়ে কেউ সরবের কাছে গেলেই সরব যেন তাকে চিবিয়ে খাবে এরকম একটা ভাব করছিলো।।
কিন্তু এই অসম্ভব কাজটা সম্ভব করেছে নূহী।সরবকে না বলেই পেছন থেকে সরবের গায়ে হলুদ লাগিয়ে দিয়েছে।সরব প্রথমে অগ্নীমূর্তির ন্যায় রূপ ধারন করলেও নূহীকে হলুদের বাটি হাতে দেখে রাগটা যেন দপ করে নিভে যায়।
অভীমানের কুয়াশা যেন দলা পাকিয়ে পাহাড়ে পরিনত হয়।এবার আর এই বিয়ে থেকে সরবকে কেউ আটকাতে পারবে না।নূহী নিজেও না।দুনিয়া উল্টে পাল্টে গেলেও সরব নুসরাতে বিয়ে করবেই।
এটা হবে নূহী দেওয়া সরবের সবচেয়ে বড় শাস্তি
চলবে…..