##শুধু _তোমারই_জন্য পর্ব ১
#সাবানা খাতুন
আজ শহরের সবথেকে বড় ব্যবসায়ী অভিরাজ চৌধুরির বড় ছেলে অর্নবের এনগেজমেন্ট।তারই বাল্যবান্ধবী ও অভিরাজে চৌধুরির বিজনেস পার্টনার সমর সেনের একমাএ মেয়ে নয়নার সাথে।,দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক অনেক মধুর ,আজ সবাই অনেক খুশি কারন দুজন এখন পার্টনার থেকে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছে ।নয়না ১০ বছর কানাডায় থেকে পড়াশোনা করেছে তার দেশে ফেরার একটা কারন অর্নব যাকে সে অনেক ভালবাসে। নয়না বিদেশে থাকার ফলে অনেক আত্মকেন্দ্রিক জেদের দ্বারা নিজের ইচ্ছে পূরণ করা তার স্বভাব কিন্ত বখাটে নয় , অন্যদিকে নয়নার বাবা সমর সেন ও মা আরতি সেন খুবই ভাল মানুষ।
ছেলে অর্নব, মেয়ে রিয়া স্ত্রী রুমা ও মা কনকবালা দেবীকে নিয়ে অভিরাজ চৌধুরির সংসার
অর্নব একটু বখাটে, নয়নাকে সে ভালবাসে কিন্ত এখনই বিয়ের ব্যাপারে ভাবতে চাইছিল না। শুধু তার বাবার রাগের মুখে পড়তে চায়না তাই তার ঠাকুরমা কনকবালা দেবীর কথা মতো এনগেজমেন্ট করছে । অর্নব স্বাধীন জীবন যাপনে বিশ্বাসী এক্ষেএে রুমা দেবীর প্রশ্রয়টা বেশি।এখন তার বাবার বিজনেস দেখে,অভিরাজ চৌধুরি নিপাট ভাল মানুষ কিন্ত একটু রাগি ও পরিবার কেন্দ্রীক ,কিন্ত অর্নবের মা রুমা দেবির টাকার অহংকার একটু বেশি,অনেক স্মার্ট আর আর নিজের মর্জি মতো চলে।
চারিদিকে আলোর ফোয়ারা লোকসমাগমে পুরো ঘর ভরে আছে,হালকা হালকা মিউজিক চলছে,ড্রিঙ্কসের ছড়াছড়ি ,এইবার নয়না কে দেখা গেল একটি লাল লেহেঙ্গা পরে এসেছে , অর্নব পাঞ্জাবিতে নিজেকে সাজিয়েছে।অর্নবের চোখাচোখি হতেই দুজনে মুচকি হাসি দিল।চারিদিকে খুশি খুশি রব ,অর্নবের বোন রিয়া মাইক নিয়ে ঘোষনা করল আংটি বদল শুরু হবে, সবাই তাদের কে ঘিরে ধরল, অর্নব নয়নাকে আংটি পরাতে যাবে, ,,,,,,,,,,,,,দাঁড়াও “””””””বলে কেউ একজন চেঁচিয়ে উঠল ,আগত জনগন অবাক হয়ে আওয়াজটা কোথায় থেকে এল এদিক ওদিক দেখতে লাগল ,অর্নব ও নয়না সহ পুরো পরিবার থমকে গিয়ে দেখে ভিড় ঠেলে আসছে একটি অতিসাধারন চুড়িদার পরা মেয়ে।
অর্নব অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল কাঁকন তুমি? পাশ থেকে অভিরাজ চৌধুরি বলে উঠলেন এই মেয়ে কে তুমি? অর্নব তুমি কি ওকে চেন?আর এইভাবে এনগেজমেন্টের মধ্যে এসে ঝামেলা করছ কেন তুমি? এইবার কাঁকন নামের মেয়ে টি বলে উঠল আমি কে সেটা আপনার ছেলে কে জিজ্ঞাসা করুন আর একজন বিবাহিত পুরুষের এনগেজমেন্ট হয় বলে আমি জানিনা। এইবার রুমা দেবী বললেন হোয়াট ননসেন্স কে বিবাহিত ? কাঁকন অর্নবের দিকে আঙুল দেখিয়ে বলল ঐযে ও,অর্নব ও অবাক হয়ে যায়।
এইবার নয়না এসে বলল অর্নব এই মেয়েটা কে তুমি চেন?এ কি বলছে সব।একটা চাপা গুঞ্জন শোনা গেল উপস্থিত সবার মধ্যে ।অর্নব ঠোঁট কামড়ে চুপচুাপ দাঁড়িয়ে আছে।এইবার অভিরাজ চৌধুরি ভয়ানক রেগে উঠলেন ,কি হল অর্নব কানে কথা ঢুকছে না কে এই মেয়ে আর তুমি বিয়ে কবে করলে ? অর্নব বলল বাবা আমি একে চিনি কিন্তু এতটা ভাল করে নয়। জানিনা এ মিথ্যা কথা কেন বলছে? সমর সেন আসরে নামলেন আগত অতিথিদের বললেন আমাদের একটু সমস্যা হয়ে গিয়েছ
তাই আজকের এই অনুষ্ঠান এখানেই শেষ করতে বাধ্য হচ্ছি ,দয়া করে সবাই এখন আসুন, এক এক করে সব অতিথিরা চলে যায়।
যাকে নিয়ে এত সমস্যা সেই কাঁকন সোফায় বসে এতক্ষন সব নাটক দেখছিল ।এবার সবার নজর তার দিকে পড়তেই সে উঠে দাঁড়াল, রুমা দেবি বললেন তোমার কাছে কি প্রমান আছে যে বাবুর সাথে তোমার বিয়ে হয়েছে? নয়না বলল আন্টি প্লিস কোথাকার মেয়ের কথা আপনি বিশ্বাস করছেন আই এম ১০০% শিওর ও মিথ্যা কথা বলছে অর্নব এমন কাজ করতে পারে না।কাঁকন চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।সমর সেন বলল কি হল কোনো প্রমান আছে ? কাঁকন নিজের সাইড ব্যাগ থেকে একটা পেপার বের করে সবার সামনে তুলে ধরল
সমর সেন কাঁকনের হাত থেকে পেপারটা নিয়ে খুলে দেখে একটা বিয়ের রেজিস্ট্রেশন পেপার কাঁকন রায় আর অর্নব চৌধুরির নামে।দুজনের সই করা ,সবাই উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে সমর সেনের দিকে,সমর সেন বললেন মেয়েটি ঠিক বলেছে ও আর অর্নব বিয়ে করেছে একবছর আগে,সবাই এবার যথেষ্ট হতবাক হয়ে যায়,সব থেকে খারাপ অবস্থা নয়নার হয় সে নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না যে অর্নব তাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করেছে।এইবার অর্নব বলল আঙ্কেল কি বলছেন এসব, দিন আমাকে দিন আমি দেখছি বলে পেপারটা হাতে নিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলল এটা একটি নকল পেপার , সব আমাকে ফাঁসানোর জন্য ।কাঁকন কে বলল তোমার চাল এখানে চলবে না,কি ভেবেছ আমাকে ফাঁসাবে নকল বিয়ের কাগজ দেখিয়ে, কাঁকন এইবার মুচকি অথচ তাচ্ছিল্যর হাসি দিয়ে বলল তাই না কি ,তুমি জানলে কি করে এটা নকল পেপার আমার জানামতে তুমি তো উকিল নও?
তর্ক যখন তুঙ্গে উঠল ।রুমা দেবি চেঁচিয়ে বললেন থামো তোমরা এক্ষুনি সব পরিষ্কার হয়ে যাবে কে মিথ্যা বলছে আর কে সত্যি ।ফোন নিয়ে একটা ফোন করলেন তাদের ফ্যামিলি উকিলকে। কিছুক্ষন পরে একজন ভদ্রলোক এলেন মিঃ গুপ্ত পেপার টা দেখুন তো কোনো গন্ডগোল আছে কিনা, মিঃ গুপ্ত সব দেখে বললেন না ম্যাডাম পেপার একদম সঠিক আছে,অর্নব চরম ধাক্কা খেল তার মুখের হাসি মিলিয়ে গেল ।বলল কি করে সম্ভব এটা হতে পারে না,আমি এমন ব্যবস্থা করেছিলাম ফুল প্রুফ ছিল,এইবার সবাই অবাক ।নয়না বলল এর মানে এই যে তুমি এই মেয়ের স্বামী , হাউ কুড ইউ দিস ইউ নো হাউ মাচ আই লাভ ইউ, আই এম হেয়ার ওনলি ফর ইউ, ডুকরে কেঁদে উঠে একছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়,সাথে সাথে তার বাবা মাও।
সবার রাগ একসাথে পড়ে গিয়ে অর্নবের উপর,রিয়া বলে উঠল দাদা এসব তুই কবে করলি আর কেন? কনকবালা বলে উঠল দাদুভাই আমাকে তুই সব কথা বলিস আর এই কথা লুকালিস কেন? রুমা দেবী কম কথার মানুষ । বলে উঠল সবাই থামবে এবার ,কাঁকনের দিকে ঘুরে বলল যা হয়েছে ভুলে যাও আমি তোমাকে টাকা দিচ্ছি কথা এখানে ধামাচাপা দিয়ে যেখান থেকে এসেছো সেখানে চলে যাও, কাঁকন বলল ম্যাডাম নিতে তো এসেছি , তবে টাকা নয় ডিভোর্স । রুমা দেবী বলল এ তো আরো ভাল কথা তার জন্য তামাশা করার দরকার কি ছিল ডিভোর্স লেটার পাঠালেও তো হতো।, কাঁকন বলল তা হতো কিন্তু আপনার ছেলে যে তামাশা আমার জীবনে করেছে এটা তার কাছে নগন্য ।অভিরাজ বললেন মানে কি বলতে চাইছো তুমি? কাঁকন বলল আপনার ছেলে কে জিঞ্জাসা করুন,অর্নব কে সবাই চাপ দিতে সে বাধ্য হয়ে বলা শুরু করল , আমি যখন প্রেসিডেন্সি তে পড়তাম কাঁকন আমার দুই ক্লাস জুনিয়ার ছিল,আমি ওকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেছি ,রিয়া বলল দাদা তুই এইসব কেন করলি? অর্নব বলা শুরু করল
অর্নব বলল সে যখন থার্ড ইয়ারে সেই সময় কলেজের ছাএ নেতা ছিল।সব সময় দল বাজি করে সময় কাটাত, ক্ষমতা আর টাকার জোরে সবাই তাকে ভয় করত।তার মনে যা আসত তাই করত, একবার ফাস্টইয়ারের সেমিস্টার পরীক্ষা সেদিন আবার ছিল ভ্যালেন্টাইনস ডে তাই অর্নব ভার্সিটিতে প্রচার করল ।আজ কোনো ক্লাস হবে না হবে শুধু প্রেম,যার যাকে ভাল লাগে সে তাকে প্রপোজ করবে। প্রায় সকলে হইহই করে উঠল কিন্ত আবার কিছু জন বিরক্ত হল, যারা ক্লাস করতে যাচ্ছে সবাইকে গেটে আটকিয়ে বলছে যে আজ যাকে ইচ্ছা তাকে ভালবাসতে। এরই মধ্যে ছেলেদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায় সেই সময় একটি মেয়ে প্রতিবাদ করে উঠে ।তাকে নিয়ে অর্নবের কাছে নিয়ে যায় আর বলে বস এই মেয়েটা সবাই কে ভড়কাচ্ছে আর সবাই ক্লাস করার জন্য চিৎকার করছে।
অর্নব দেখল একটি মেয়ে বেশ সুন্দরী ,গায়ের রং বেশ ফর্সা, ছিপছিপে চেহেরায় যেন আত্ম বিশ্বাস ঠিকরে বেরাচ্ছে।হাঁ করে অর্নব তাকিয়ে ছিল একজন বলল বস কিছু বল সৎবিৎ ফিরে অর্নব জিজ্ঞাসা করল তা তোমার সমস্যা কি ?আজ একটু সবাই প্রেম করতে চাইছে তুমি বা ব্যাগড়া দিচ্ছ কেন? তুমিও প্রেম কর।এক্সকিইউজ মি এইবার মেয়েটির গলার স্বর শুনল এত মিষ্টি কারোর স্বর হয় বলে অর্নব জানত না। চোখ পাকিয়ে মেয়েটি বলল আমার আপওি প্রেমে নয়, যার ইচ্ছা প্রেম ভালবাসা করুক কিন্ত ভার্সিটি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমরা এখানে পড়াশোনা করতে আসি ,প্রেম দিবসের জন্য অন্য জায়গা আছে তাই বলে পড়াশোনা বন্ধ করে প্রেম দিবস পালন করতে হবে এ কেমন কথা?আর আমার পরিবার এখানে পড়তে পাঠিয়েছে প্রেম করতে নয়।আমাদের আজ এক্সাম আছে তাই আজ এক্সাম দিয়ে বাড়ি যাব, অর্নব এতক্ষন চুপচাপ কথা শুনছিল ।তোমার নাম কি ,কোন ইয়ার ,কাঁকন রায় ফার্স্ট ইয়ার ,এবার বলল আজ ক্লাস হবে না বললাম না যাও বাড়ি যাও আর একটা কথা সিনিয়রদের সম্মান করতে হয় আর তাদের কথা শুনতে হয় এটা তুমি শেখোনি।কাল এক্সাম হবে আমি ব্যবস্থা করে দেব। কাঁকন নাছোড় বান্দা কিছু না বলে ফিরে যাচ্ছিল এবার থমকে দাঁড়িয়ে অর্নবের দিকে ফিরে বলল আমি সিনিয়র দের সম্মান করতে জানি যদি তারা সম্মানের লায়েক হয় তো আর. আমি ক্লাসে যাচ্ছি আর কে কে যাবে চলে এস পরীক্ষা আজই হবে এটা শুনে জনা ১৫ ছেলেমেয়ে কাঁকনের পিছু পিছু চলতে শুরু করল।অর্নব শুধু দেখছিল যেন তার গালে কেউ বিনা শব্দের চড় মারল,পাশ থেকে রাহুল বলল সাহস তো কম নয় মেয়েটার তোর অর্ডার অমান্য করল।এ মেয়ে তোকে টেক্কা দিবে দেখে নিস দম আছে বলতে হবে। অর্নব রাগী দৃষ্টি নিয়ে রাহুলের দিকে তাকাল,আর বলল কে কাকে টেক্কা দেয় তোরা পরে দেখবি।
এর কিছুদিন পরে অর্নব কাঁকন কে বলল তোমার মধ্যে লিডার হওয়ার ক্ষমতা আছে, আমাদের পার্টিতে চলে এস আমাকে না বলার ক্ষমতা কারোর নেই, কাঁকন বলল আমি এখানে পড়তে এসেছি পার্টি করতে নয়।আর প্লিজ আমাকে এইরকম ফালতু প্রস্তাব আর কখনো দেবেন না বলে কাঁকন চলে গেল ।অর্নব অনেকবার কাঁকন কে বলেছে কিন্ত প্রতিবার কাঁকন অর্নবের প্রস্তাব নাকচ করেছে।
অর্নব যেখানে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকত ,তার কাছাকাছি ছিল কাঁকনের বাড়ি রোজ যাতায়াতের পথে দুজনের দেখা হতো,কাঁকন অর্নব কে দেখলে মুখ বাঁকিয়ে চলে যেত।আড্ডা মারার সময় দেখত কাঁকন দরকার ছাড়া বাড়ি থেকে বেরাতো না।বাবা ছাড়া কাঁকনের কেউ ছিল না।একদিন কাঁকনের বাড়ির পাশ থেকে যাওয়ার সময় অর্নব গোঙানির আওয়াজ পায়, ইতস্তত করে ঘরে ঢুকে গিয়ে দেখে কাঁকনের বাবা মাটিতে পড়ে ছটফট করছে আর মুখ থেকে গ্যাঁজলা বের হয়ে আছে বুঝতে আর বাকি রইল না হার্ট আ্যাটাক , সঙ্গে সঙ্গে অর্নব তাকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে রওনা হল।
চলবে……..