##শুধু_তোমারই _জন্য পর্ব ৩
#সাবানা খাতুন
অর্নবের হয়ে ভোটে দাঁড়ায় রাহুল কিন্ত তার প্রতিপক্ষ কেউ দাঁড়ায় না। রাহুল ভোট জিতে গেল।একদিন অর্নব কাঁকন কে বলল তোমার জন্য আজ আমি জিততে পারলাম নায়কাঁকন অবাক হয়ে বলল আমার জন্য আমি কি করলাম আপনার ? এই যে তুমি আমার বিপক্ষে দাঁড়ালে ।তো আপনি বা সরে কেন দাঁড়ালেন ? কি করব তোমাকে হারতে দেখতে চাই না, বলে একদৃষ্টি একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে । কাঁকন মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল ও আচ্ছা তাই নাকি।আসলে আপনি হেরে যাবেন এই ভয়ে পিছিয়ে গিয়েছেন,অর্নব বলল তা তুমি কেন দাঁড়ালে না, কাঁকন বলল ও আপনি বুঝবেন না।
অর্নব কাঁকন দের বাড়িতে যাতায়াত শুরু করল ঘনঘন তার বাবাকে দেখার ছুতোয়। আশেপাশের প্রায় সকলেই এই জিনিস লক্ষ্য করত ,কাঁকনের ও অনেক অস্বস্থি লাগত, একবার ভাবে গিয়ে জিজ্ঞাসা করবে এইভাবে কেনো বার বার তাদের বাড়িতে আসে কিন্ত লজ্জায় কিছু বলতে পারত না। কাঁকন ও মনে মনে অর্নব কে পছন্দ করা শুরু করে।
কলেজে স্বরসতী পূজোর আয়োজন হয়।সমস্ত ছেলে মেয়ে সেজে গুজে এসেছে যেন একটা চাঁদের হাট বসেছে, অর্নব পরেছে একটা হলুদ পাঞ্জাবি চোখে রোদ চশমা,এমনিতে অর্নব অনেক হ্যান্ডসাম তারপর হলুদ রঙে তাকে অর্পুব দেখাচ্ছে।যে কোনো মেয়ে আজ তার পেছনে পড়ে যাবে।অর্নব ও তার বন্ধুরা দাঁড়িয়ে গল্প করছিল কিন্ত অর্নবের মন চঞ্চল লাগছিল,পাশ থেকে রাজ বলল কি রে কাকে খুঁজছিস? রাহুল বলে উঠল আরে সেই তাকে কি যেন নাম আঁকন না বাঁকন অর্নব বলল কাঁকন তখন সবাই হো হো করে হেসে উঠে,অর্নব বলতেই যাচ্ছিল চুপ শ… দেখে কাঁকন আসছে লাল শাড়ি পরে খোলা চুল,ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক ,আর কপালে টিপ।
আজ কাঁকন কে অপুর্ব সুন্দরী লাগছে, কিন্ত তাকে তার প্ল্যান সফল করতে হবে কাঁকনের রূপের মোহে পড়লে চলবে না।তাই দেরি না করে কাঁকনের সামনে দাঁড়িয়ে বলল উইল ইউ মেরি মি, মাইকের আওয়াজে কিছুই শুনতে পাচ্ছিল না ,কাঁকন বলল কি বলছেন শুনতে পাচ্ছি না, এবার মাইক বন্ধ হলে অর্নব আবার জোরে বলল উইল ইউ ম্যারি মি কাঁকন তো চমকালো আশেপাশের সবাই চমকে গেল।কাঁকন আশা করেনি যে অর্নব তাকে এই কথা বলবে।
অর্নব জিজ্ঞাসা করল কিছু বলো ।কাঁকন লজ্জা পেয়ে কিছু না বলে চলে গেল, সন্ধেয় কাঁকন দের বাড়ির গলিতে অর্নব কাঁকনকে ধরল ,কি হল তোমার উওর দাও।প্লিজ আমাকে ছাড়ুন এইভাবে সিন ক্রিয়েট করবেন না,আপনার সাহস কিভাবে হল এইসব বলার ,অর্নব বলল আমি তোমাকে বিয়ে করব বলেছি এতে খারাপের কি দেখলে তাছাড়া আমি তোমাকে অনেক পছন্দ করি।আমি জানি তুমিও আমাকে পছন্দ কর,আমি ভালবাসার খেলা খেলতে চাই না তাই তোমাকে বিয়ে করতে চাই কাঁকন কিছু না বলে চলে।তার বুক ভয়ে লজ্জায় আর একটা ভাল লাগায় ধড়ফড় করতে লাগল,মনে অজানা কিছু আসতে লাগল।
দেখ এখনকার যেখানে ভালবাসার কথা বলে ছেলেরা মেয়েদের ঠকায় সেখানে অর্নবের প্রস্তাব কিন্ত অন্য রকম ,নিশা বলল কাঁকন কে, কাঁকন নিশার সাথে এই ব্যাপারে আলোচনা করে ।এরপর পাগলের মতো অর্নব কাঁকনের বাড়ির সামনে ঘোরাঘুরি করত, পাড়ার কিছু বখাটে ছেলেরা অর্নব কে একদিন খুব মারে, তাদের পাড়ার মেয়ে কে বিরক্ত করার জন্য ।কাঁকন বার বার বলতে থাকে সে কেন এইসব করছে আর তাছাড়া তার পরিবার কি মেনে নেবে অর্নব বলল আমি বাবা মার একছেলে আর আমার কথা ওরা অমান্য করবে না,,অর্নব বলল আমি তোমাকে ভালবাসি ,আর বিয়ে করতে চাই তুমি কেন এইরকম করছো।কাঁকনও অর্নব কে পছন্দ করত আর ভালবাসতে শুরু করে ছিল তাই অর্নবের কথা মেনে একদিন রেজিস্ট্রি অফিসে বিয়ে করে,পাড়ায় সবাই জানতে পারে যে কাঁকন অর্নব কে বিয়ে করেছে।
কাঁকন শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার জন্য কাপড় গোছাচ্ছিল তার বাবা কাঁদছিল মেয়ে চলে যাবে বলে। অর্নব আসতেই কাঁকন বলল আমার গোছগাছ শেষ, অর্নব ঠোঁটে মুচকি হাসি দিয়ে বলল ,কোথায় যাবে? কেন তোমাদের বাড়িতে কাঁকন অবাক হয়ে বলল।, অর্নব এইবার বলল কি পরিচয়ে? মানে আমি তোমার স্ত্রী পরিচয়ে যাবো আর তুমি হেঁয়ালি না করে কি বলতে চাইছো বল।
যদি বলি তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়নি তো কি করবে? কাঁকন বলল এসব তুমি কি বলছ,পাশ থেকে কাঁকনের বাবা বলল বাবা তুমি কি বলছ, অর্নব বলল আপনি ঠিক শুনেছেন আঙ্কেল ।একটা ছোট নাটক করেছি, আসলে আপনার মেয়ে অনেক বেড়ে গিয়েছিল তাই একটু টাইট দিতে চেয়েছি,ও আমার ইগো হার্ট করেছে ,আমার যে রেপুটেশন ছিল ভার্সিটিতে সব এক মুহুর্তে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে।তাই আপনার মেয়েকে রাস্তা দেখানো দরকার ছিল,ওর অনেক নাটক সহ্য করেছি, তাছাড়া চৌধুরি পরিবারের বৌ হওয়া এত সহজ নয়,আমার গার্ল ফ্রেন্ড আছে বুঝলে । নকল রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করিয়ে একটু বিয়ে বিয়ে খেললাম, কাঁকন অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে অর্নবের দিকে চোখ দিয়ে দরদর করে
জল পড়তে লাগল কাঁকনের।
অর্নব বলতেই থাকল , প্রথম দিন থেকে তুমি আমার কথা অমান্য করে আমাকে সবার সামনে ছোট করেছিলে।এতদিন যারা আমাকে মানত তারাও আমার অবাধ্য হতে লাগল শুধু তোমার জন্য।দেখিয়ে দিলাম তোমার আসল জায়গা। তবে তোমার বাবার হার্ট আ্যটাক না হলে তোমার বিশ্বাস অর্জন করতেই পারতাম না,বিধাতাও মনে হচ্ছে আমার সাথেই ছিল। ভার্সিটিতে প্রেম প্রেম খেলা, তোমার বাড়িতে ঘন ঘন আসা এমন কি পাড়ার ছেলেদের আমি টাকা দিয়েছিলাম,আমাকে মারার জন্য ব্যাস তোমার সহানুভূতি পেয়ে গেলাম আর আমি ডাকলে আমার একটা ইশারা তে তোমার মতো ১০০টা মেয়ে আমার পেছনে দৌড়ে চলে আসবে।অর্নব চৌধুরি কোটি টাকার মালিক তোমার মতো তুচ্ছ একটি মেয়েকে বিয়ে তো দূরের কথা আমার ধারে কাছে ঘেঁষতে দিতাম না সেখানে তোমাকে আমি ভালবাসব ছ্যাঃ তাচ্ছিল্যর সাথে বলল অর্নব তোমাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য আমাকে একটু বুদ্ধি খরচ করতে হল। তুমি আমাকে পদে পদে হেনস্তা করেছ ।আমি যখন তোমাকে আমার দলে নিতে চাইছিলাম তখন আমাকে না করে সাহস দেখিয়ে আমার বিপরীতে দাঁড়ালে তাও আমাকে ছোট করার জন্য ।,প্রেম করার কথা বললে তুমি ১০০% না বলতে তাই ডাইরেক্ট বিয়ের প্রস্তাব দিলাম,না বলতেই পারলে না একদম মোক্ষম জায়গায় ঘা দিয়েছি বলে হাসতে লাগল।কাঁকন সব কথা শুনছিল আর তার চোখ থেকে অনবরত জল পড়ছিল কিছুই বলতে পারছিল না।
রাহুল তুই জিজ্ঞাসা করছিলি না কিভাবে টাইট দেব ,এইবার দেখ কিভাবে দিলাম, পাড়ার এখানে সবাই জানে আমি একে বিয়ে করেছি কিন্ত আমি আর তুই জানি যে সত্যি টা কি আর এখন এরা জানল। আমি তো চলে যাবো তারপর সবাই এর দিকে আঙুল তুলে বলবে বিয়ের একদিন পর বর ছেড়ে পালিয়েছে তুই তো জানিস সমাজে স্বামী ছাড়া মেয়েদের কি অবস্থা হয় ।বলেই দুজনে হাসতে লাগল, রাহুল বলল বস তোর মাথায় এত বুদ্ধি ছিল বলে জানতাম না, কাঁকনের মনে হচ্ছিল এরা কোনো মানুষ নয় এরা মানুষ রূপি পিশাচ। আর কাঁকনের বাবা হতবাক হয়ে যায় কথা গুলি শুনে,কাঁকন কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল তোমার যদি আমার উপর এত রাগ ছিল তো সবার সামনে আমাকে ১০ টা চড় মেরে দিতে আমার এত বড় সর্বনাশ কেন করতে গেলে? চড় মারলে তোমার শরীরে আঘাত লাগত কিন্ত আমি এমন কিছু করতে চাইছিলাম যেটাতে তোমার শরীর আর মন দুটোতেই আঘাত লাগুক বুঝলে বলল অর্নব। আর এই নাও নকল বিবাহের নকল কাগজ বলেই কাঁকনের মুখের উপর ছুঁড়ে দিয়ে অর্নব চলে যায়। কাঁকন কাগজগুলি নিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল।
বাড়ির সকলে শুনল সব কথা,অর্নব মুখ নিচু করে আছে,বাহঃ কি দারুন ,ইডিয়েট কোথাকার অভিরাজ চৌধুরি স্লেষ মিশ্রিত কন্ঠে বললেন রুমা দেবী কি ছেলে জন্ম দিয়েছো তুমি ,সামান্য কারনে একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করে দিল। রিয়া বলল দাদা তুই কি আমার দাদা ? কলেজ লাইফে মানুষের অনেক কিছু হয় তাই বলে এইভাবে প্রতিশোধ নিবি, কাননবালা বলল দাদুভাই এটা আমার শিক্ষা তো নয় তুই কোথায় থেকে এসব পেলি? রুমা দেবী বললেন বাবু তুই এইসব করলি ভাবতেও পারছি না,আমার ছেলে হয়ে। ঠিক আছে আর কারোর কিছু বলার দরকার নেই ।,কি বলার দরকার তোমার আসকারা পেয়ে এইসব হয়েছে, পাঠিয়েছিলাম পড়তে আর বাবু বিয়ে বিয়ে খেলছে রেগে গিয়ে বলল অভিরাজ চৌধুরি ।, কিন্ত মা এইবার অর্নব মুখ তুলে বলল আমিতো নকল পেপার তৈরি করেছিলাম আসল হল কিভাবে?
আমি বলছি এবার সবাই ঘুরে দেখল কাঁকন খাওয়ার টেবিলে বসে খেতে খেতে বলল ,খুব ক্ষিদে পেয়েছিল আর এত খাওয়ার ওয়েস্ট হয়ে যাচ্ছে যে খারাপ লাগছে আমার জন্য এসব হল বলেই মুচকি হাসি দিল কাঁকন,তাই ভাবলাম আমি একটু খেয়ে ওয়েস্টেজ টা কমাই😛 আর আপনাদের ছেলের অনেক লম্বা গল্প ছিল তাই ভাবলাম সুযোগটা ভাল।এবার অর্নবের সামনে এসে কাঁকন হাসিমুখ অথচ ঘৃণা নিয়ে বলল মিঃ স্মার্ট আ্যন্ড গ্রেট অর্নব চৌধুরি একটা মেয়েকে শিক্ষা দিতে গিয়ে এতটা ভুল করে ফেললে,তুমি শুধু অহংকারী নও অনেক বড় বোকাও, অর্নব বলল মানে? কাঁকন বলল মানে এই যে তুমি নকল নও আসল পেপারে আমার সাইন নিয়েছো আর নিজেও নিজের পাতা ফাঁদে নিজেই জড়িয়ে গিয়েছো।মানে আমি তোমার একমাএ বিবাহিতা স্ত্রী ,আর তুমি আমার স্বামী ভুরু নাচিয়ে কাঁকন বলল বুঝলে। পেপারটা প্রথম থেকে ঠিক ছিল কিন্ত তুমিই ভুল বুঝেছিলে । ওটা কোর্ট দিয়ে করা আসল পেপার ছিল আর তুমি না পড়ে সাইন করেছো,এইবার অর্নব আরো অবাক হয়।
চলবে