শুধু তোমারই জন্য ২ পর্ব -২৯+৩০

#শুধু_তোমারই_জন্য(২)
লেখনীতে- অরনিশা সাথী

|২৯|

–“অল ইজ ওকে ম্যাম?”

আহিয়ানের কথায় ডক্টর জাহানারা রাহমান রিপোর্ট গুলো টেবিলে রেখে চশমটা খুলে একটু নড়েচড়ে বসলেন। আনিতা আর আহিয়ান দুজনেই বেশ চিন্তিত আছে রিপোর্ট নিয়ে। ড. জাহানারা বললেন,
–“বেবি মিসক্যারেজ হলো কি করে?”

–“ওয়াশরুমে পা স্লিপ করে পড়ে গিয়েছিলো আর সেখান থেকেই___”

–“এর আগে আপনার ওয়াইফের যে বেবি মিসক্যারেজ হয়েছিলো তখন কি ডিএলসি করতে হয়েছিলো? নাকি মেডিসিনের দ্বারা জীবাণু ক্লিয়ার হয়েছিলো?”

আনিতা বেশ ভয়ে ভয়ে আছে। আহিয়ান একহাতে আনিতার হাত শক্ত করে চেপে ধরে ওকে চোখ দিয়ে আস্বস্ত করলো। তারপর বললো,
–“প্রথমে এক সপ্তাহের জন্য মেডিসিন দিয়েছিলেন। তারা জানিয়েছিলেন মেডিসিন দ্বারা সবটা ক্লিয়ার হয়ে গেলে আর ডিএলসি’র প্রয়োজন পড়বে না। এক সপ্তাহ বাদে আবার হসপিটালে নিয়ে আল্ট্রা করলে রিপোর্টে সব নরমাল আসে। ডক্টর বলেন মেডিসিনের দ্বারা সবটা ক্লিয়ার হয়ে গেছে। ময়লা রক্তগুলো সব বেরিয়ে গেছে আর কোনো সমস্যা হবে না।”

আহিয়ানের কথা ড. জাহানারা বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। তিনি রিপোর্টে আর একবার চোখ বুলিয়ে বললেন,
–“মিস্টার আহিয়ান আদৃত, তখন মেডিসিন দ্বারা আপনার ওয়াইফের এবোরশন কমপ্লিট হয়নি। পেটে এখনো ময়লা রক্তের ছোট্ট একটা অংশ রয়ে গেছে। যার কারনেই এখনো উনার পেটে পেইন আর ব্লিডিং হচ্ছে।”

–“এখন করনীয় কি ম্যাম? সিরিয়াস কিছু___”

–“এখনো অতটা সিরিয়াস কিছু হয়নি। তবে আর কিছু দিন লেট করলে অবশ্যই ব্যাপারটা অন্যদিকে গড়াতে পারতো। কিন্তু এখনো তেমন কিছু হয়নি।”

ডক্টরের কথা শুনে আহিয়ান আনিতা দুজনেই স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো। সিরিয়াস কিছু হয়েছে ভেবে দুজনেই বেশ চিন্তায় ছিলো। এখন কিছুটা চিন্তামুক্ত হয়েছে দুজনেই। আহিয়ান বললো,
–“ম্যাম এখন কি আবার ডিএলসি করতে হবে?”

–“ব্যাপারটা যেহেতু এখনো বেশিদূর গড়াতে পারেনি তাই আমরা প্রথমে মেডিসিন দ্বারাই সেটা বের করার চেষ্টা করবো।”

প্রত্যুত্তরে আহিয়ান বা আনিতা কেউ-ই কিছু বলেনি আর। ড. জাহানারা কিছু মেডিসিন লিখে দিয়ে প্রেশক্রিপশন আহিয়ানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
–“এখানে দুটো মেডিসিন লিখে দিয়েছি। আপাতত এগুলো আপনার ওয়াইফকে নিয়মমাফিক দিন। তিনদিন পর আবার এখানে বসবো আমি সেদিন এসে চেকাপ করিয়ে নিয়ে যাবেন।”

–“ওকে ম্যাম।”

–“আর এর মাঝে যদি অতিরিক্ত ব্লিডিং হয় তাহলে ন্যাশনালে নিয়ে ভর্তি করাবেন। আমি ওই হসপিটালে নিয়মিত বসি।”

–“ওকে ম্যাম।”

রিপোর্ট আর প্রেশক্রিপশন হাতে আহিয়ান আর আনিতা চেম্বার থেকে বের হয়ে এলো। পৌনে দশটা বাজে। বাসায় ফিরতে ফিরতে আরো আধ ঘন্টা তো লাগবেই।

এর মাঝে দুটো সপ্তাহ পার হয়েছে। আনিতার আর কোনো সমস্যা হয়নি। মেডিসিন এর মাধ্যমেই ময়লা রক্তটা বের হয়ে গেছে। রক্তস্বল্পতার জন্য সেদিন ওকে হসপিটালে এডমিট থাকতে হয়েছিলো। দু ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছিলো আবারো। এখন আনিতা মোটামুটি সুস্থ। ব্লিডিংও হচ্ছে না আর পেটে পেইনও করছে না। ডক্টর জানিয়েছেন নেক্সট টাইম বেবি কনসিভ করার আগে একবার চেকাপ করিয়ে ডক্টরের পরামর্শ নিতে।

বিকেল সাড়ে পাঁচটার মতো বাজে। দুপুরের খাবার খেয়ে আনিতা ঘুমিয়েছে এখনো উঠেনি। ওকে অবশ্য কেউ ডাকেওনি। কম ধকল তো আর যায়নি মেয়েটার উপর দিয়ে। এমনিতেই রক্তস্বল্পতা রয়েছে তারউপর শরীরটাও দূর্বল। কিছুক্ষণ ঘুমোচ্ছে ঘুমাক না। ক্ষতি কি? আহিয়ানও বাসায় নেই। ও সকালে ব্রেকফাস্ট করেই অফিস গিয়েছে। সন্ধ্যা ছয়টার পর পরই বাসায় ফিরবে ও। আনিতা দরজা হালকা চাপিয়ে কোলবালিশ জড়িয়ে বেঘোরে ঘুমোচ্ছে।

আনিতার পায়ের তালুতে সুড়সুড়ি লাগাতে আনিতা নড়েচড়ে আবার অন্যপাশ ফিরে ঘুমালো। কিন্তু আবারো কেউ সুড়সুড়ি দিয়েই যাচ্ছে। আনিতা টিকতে না পেরে ধরফরিয়ে উঠে বসলো। সামনে চোখ যেতেই দেখলো তাসকিয়া রোদেলা জেরিন দাঁড়িয়ে আছে। আর শুভ ওর পায়ের কাছে বসে সুড়সুড়ি দিচ্ছিলো। হঠাৎ করে ওদের সকলকে আনিতা এখানে কিছুতেই আশা করেনি৷ খুশিতে চিৎকার করে উঠে ওদের সকলকে একসাথে জড়িয়ে ধরলো৷ আনিতা জেরিন রোদেলা তাসকিয়া চারজনে একে অপরের গলা জড়য়ে ধরে গোলগোল করে লাফিয়ে ঘুরছে আর খুশিতে চিৎকার চেঁচামেচি করছে সকলেই। তখনই আহিয়ান অফিস থেকে ফিরে সবে রুমে এলো। এসেই এই অবস্থা দেখে ওর চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। চারজনেই লাফিয়ে লাফিয়ে ঘুরছে বাচ্চাদের মতো। এদের দেখলে কে বলবে ওরা ভার্সিটির স্টুডেন্টস? এতদিন তাসকিয়া রোদেলা জেরিন ওদের যা-ই ম্যাচিউর ভেবেছে কিন্তু এখন তো দেখছে উলটোটা। এরা সকলেই ইমম্যাচিউর। আর আনিতার কথা আহিয়ান আর নতুন করে কি বলবে? ওকে তো শুরু থেকেই দেখছে বাচ্চা বাচ্চা টাইপ। কি সুন্দর বাচ্চাদের মতো করে বায়না ধরে, গাল ফুলিয়ে বসে থাকে। এই বাড়িতে আনিতাকে কেউ বউয়ের নজরে দেখে না। সকলেই ছোট বাচ্চা হিসেবেই ট্রিট করে ওকে। নুজাইরাহ-র মতো আনিতাও সারাদিন এই রুম থেকে ওই রুম দৌড়ঝাঁপ করেই বেড়ায়। সবার সাথে বাচ্চামো করে ও। আর এজন্যই সকলে ওকে বেশ ভালোওবাসে৷

আহিয়ান দরজায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসব ভাবছিলো আর ওদেরকে দেখছিলো। ফাইয়াজ এসে আহিয়ানের কাঁধে হাত রেখে বললো,
–“রুমে ঢোকার স্কোপ পাচ্ছিস না? এখনই দরজায় ঠায় মিললো?”

আহিয়ান রুমে গিয়ে বিছানায় অফিস ব্যাগটা রেখে ঘড়ি খুলে ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখলো। গলায় টাই একটানে খুলে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বললো,
–“কি আর করবো ভাই? তোর বোন তো ফ্রেন্ডদের পেয়ে এখনি আমায় ভুলে গেছে। আর তো দিন পড়েই আছে। এতদিন ফ্রেন্ডদের সাথে গ্রুপ কলে কথা বলার সময় আমাকে পাত্তা দিতো না তবে কথাবলা শেষে যাই একটু আধটু পাত্তা দিতো আমাকে। এখন তো দেখছি সেইটুকুও গেলো।”

আহিয়ান কথাগুলো বলতে বলতে কাবার্ড থেকে থ্রী-কোয়াটার আর টি-শার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। ওর কথা শুনে সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠে৷ আনিতা কোমড়ে দুহাত দিয়ে চোখ কটমট করে ওয়াশরুমের বন্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। আহিয়ানকে পেলেই মনে হয় কাঁচা চিবিয়ে খাবে একদম।

মিনিট বিশেক বাদে আহিয়ান শাওয়ার নিয়ে বের হলো। রোদেলা তাসকিয়া জেরিন শুভ ফাইয়াজ আনিতা ওরা সকলেই বিছানায় বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। মূলত আহিয়ানের জন্য ওয়েট করছিলো। ও বের হলে সকলে একসাথে ড্রয়িংরুমে বসে আড্ডা দিবে। দরজা খোলার শব্দে আনিতা উঠে আহিয়ানের সামনে গিয়ে কোমড়ে দুহাত গুজে দাঁড়ালো। আহিয়ান ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই আনিতা রাগী স্বরে বললো,
–“কি বললেন তখন আপনি? আমি আপনাকে পাত্তা দেই না? সারাক্ষণ ফ্রেন্ডদের নিয়েই পড়ে থাকি?”

–“বলেছি আগে ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলার সময় আমাকে পাত্তা দিতে না। আর এখন তো ওরা ঢাকায়ই আছে। এখন তো পাত্তা পাবোই না।”

–“ওকে এটাই করবো আমি। কে আপনি? আপনাকে কেন পাত্তা দিতে যাবো আমি?”

–“ওকে ম্যাম, আপনি আপনার মতো আপনার ফ্রেন্ডের নিয়ে সময় কাটান। আমিও___”

কথাটা বলেই আহিয়ান কিছুটা ভাব নিয়ে আনিতার সামনে থেকে সরে গেলো। আনিতা চোখ ছোট ছোট করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আহিয়ান ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুলে জেল লাগাচ্ছে। আনিতা আহিয়ানের পাশে গিয়ে ওর দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে বললো,
–“আপনিও? আপনিও কি? পুরো কথাটা শেষ করুন আগে।”

–“বলবো না। তুমি তোমার মতো থাকো। আমি তোমাকে কিছু বলতে গেছি?”

কথাটা বলে আহিয়ান চলে যেতে নিলেই আনিতা আহিয়ানের হাত টেনে ধরে। ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বাকী সকলে মুখ টিপে হাসছে। আনিতা আহিয়ানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। রোদেলা ওরা বুঝলো এখানে এখন ওদের থাকাটা ঠিক হবে না। তাই সবাই নিঃশব্দে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। যাওয়ার আগে অবশ্য দরজা হালকা চাপিয়ে দিয়ে গেছে। আনিতা আহিয়ানের মাথা ধরে ওর দিকে কিছুটা টেনে নিয়ে বললো,
–“আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলুন, আপনিও কি?”

আনিতার কান্ডে আহিয়ান ঠোঁট কামড়ে ধরে ক্ষানিকটা শব্দ করে হাসলো। তা দেখে আনিতা ওর থেকে খানিকটা সরে দাঁড়িয়ে বললো,
–“হাসছেন? আপনি হাসছেন কেন?”

–“এখন কি হাসাও যাবে না?”

–“হ্যাঁ যাবে। কিন্তু আপনি হাসলেন কেন? হাসার তো একটা কারন থাকে। আর সেই কারনটাই আমি জানতে চাচ্ছি।”

–“এমনি হাসছি। ইচ্ছে হলো তাই।”

–“ওকে মেনে নিলাম। এখন বলুন আপনিও কি?”

আহিয়ান এবার আনিতাকে একটানে নিজের কাছে নিয়ে এলো। একহাতে আনিতার কোমড় জড়িয়ে ধরে অন্যহাতে আনিতার কপালের উপচে পড়া চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে বললো,
–“আমিও আমার প্রাপ্যটা আদায় করে নিতে জানি। শুধু ফ্রেন্ডদের নিয়ে পড়ে থাকলেই তো হবে না। তোমার বরের দিকটাও তোমাকে দেখতে হবে।”

কথাগুলো বলে আহিয়ান আনিতার নাকের ডগায় চুমু খেলো। আনিতা কোনোমতে আহিয়ানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
–“ড্রয়িংরুমে যাচ্ছি। আপনিও আসুন তাড়াতাড়ি।”

আনিতাকে এভাবে পালিয়ে যেতে দেখে আহিয়ান শব্দ করেই হেসে দিলো। তারপর ভেজা টাওয়াল ব্যালকোনিতে মেলে দিয়ে ড্রয়িংরুমে চলে গেলো।

ড্রয়িংরুমে চা কফির আড্ডা চলছে৷ আনিতার ফ্রেন্ডদের সাথে বাড়ির সকলেই এখানেই উপস্থিত। সন্ধ্যা গড়িয়ে ঘড়ির কাটায় এখন রাত সাড়ে নয়টা বাজে। রুহি উঠে চলে গেলো টেবিলে খাবার দিতে। সাথে আনিতাও গেলো ওকে হেল্প করার জন্য। রুহি অবশ্য বারন করেছে বেশ কয়েকবার কিন্তু আনিতা শুনেনি। দুই জা মিলে হাতে হাতে টেবিলে সব খাবার গুছিয়ে ফেললো। বাসার সকলে একসাথে খেতে বসেছে। আনিতা রোদেলা জেরিন তাসকিয়া ওরা চারজনে প্লেটে করে খাবার নিয়ে সোফায় বসে খাচ্ছে। আর জম্পেশ আড্ডা দিচ্ছে। বহুত দিন পর সব বান্ধবী একসাথে হয়েছে। কতশত না বলা কথা সব বলছে আর হাসছে। আহিয়ান অবশ্য মাঝে মধ্যে চোখ গরম করে তাকাচ্ছে কিন্তু তাতে কোনো কাজই হচ্ছে না। খাওয়া শেষে রোদেলা ওরা সবাই চলে গেলো। ফাইয়াজ আর তাসকিয়া নতুন ফ্ল্যাট নিয়েছে। শুভ ওর আন্টির বাসায় থাকবে। জেরিন আর রোদেলা আপাতত ফাইয়াজের সাথে থাকবে। ছোটখাটো একটা বাসা বা হোস্টেলে সিট পেয়ে গেলেই সেখানে শিফট করবে ওরা দুজনে৷ আনিতার বেশ মন খারাপ হচ্ছে। সন্ধ্যা থেকে এতটা সময় খুব ভালো সময় কাটিয়েছে ও। সবাই চলে যাওয়াতে এবার ওর ভীষণ কান্না পাচ্ছে।

ব্যালকোনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে আহিয়ান। সেসময় রুমে এলো আনিতা। সিগারেটের গন্ধ পেয়ে নাক সিঁটকালো আনিতা। চোখমুখ কুঁচকে ব্যালেকোনির দিকে তাকালো। ধীর গতিতে আহিয়ানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো ও। আনিতাকে দেখে আহিয়ান থতমত খেয়ে গেলো। সিগারেটে শেষ একটা টান দিয়ে সেটা ফেলে দিতে চাইলেই আনিতা ওর হাত ধরে বললো,
–“ফেলবেন না।”

আহিয়ান ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
–“কেন?”

–“টেস্ট করবো আমি।”

আহিয়ান রাগী স্বরে বললো,
–“এই একদম না। কি সব বাজে বকছো?”

–“আমি মোটেও বাজে বকছি না। আপনি কেন স্মোক করেন? কত বার বারন করেছি আপনাকে আপনি শুনছেনই না আমার কথা।”

–“মাঝে মধ্যে একটু আধটু স্মোক করতে হয়।”

–“হ্যাঁ মানলাম। এখন আমিও একবার টেস্ট করে দেখি। কি এমন আছে এতে যা আপনি ছাড়তে পারছেন না।”

কথাটা বলে আনিতা আহিয়ানের হাত থেকে সিগারেট’টা নিয়ে নিলো। আহিয়ান বেশ কয়েকবার সেটা নিতে চেয়েও নিতে পারলো না ওর থেকে। আনিতা নাছোরবান্দা। আজকে ও সিগারেট টেস্ট করেই দেখবে। আহিয়ান বললো,
–“আনি ফেলে দাও ওটা। সিগারেটে টান দিতে পারবে না তুমি। কষ্ট হবে। ওটার টেস্ট খুব বাজে।”

–“হোক বাজে। আমি তবুও টেস্ট করেই দেখবো।”

শেষে আহিয়ান হাল ছেড়ে দিয়ে বললো,
–“ওকে করো টেস্ট। পরে কোনো সমস্যা হলে আমায় বলতে আসবে না।”

আনিতা মুখ বাঁকিয়ে সিগারেটে টান দেয় একটা। সাথে সাথেই নাকমুখ ভরে যায় ধোঁয়ায়। হাত থেকে সিগারেট ফেলে দিয়ে কাশতে শুরু করে ও। আহিয়ান পা দিয়ে জলন্ত সিগারেট পিষে দেয়। রুম থেকে একগ্লাস পানি এনে আনিতার হাতে দেয়। আনিতা পানিটা খেয়ে কিছুটা শান্ত হয়। আহিয়ান ওর পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
–“এখন ঠিক লাগছে?”

–“ওসব ছাইপাঁশ কিভাবে খান আপনি?”

–“বুঝবা না তুমি। কতবার করে বারন করেছিলাম। তুমি শুনলেই না আমার কথা। এখন ভালো লেগেছে তো? টেস্ট কেমন? ফিলিংস কেমন?”

আনিতা নাক সিঁটকে বললো,
–“ওয়াক ছিঃ খুবই বাজে টেস্ট ওটার। ফিলিংসও খুবই বাজে।”

আহিয়ান চট করেই আনিতাকে কোলে তুলে নিলো। আচমকা কোলে তুলে নেওয়াতে আনিতা চমকে গিয়ে আহিয়ানের গলা জড়িয়ে ধরে বললো,
–“কি করছেন কি? কোলে তুলে নিলেন কেন? নামান বলছি।”

আহিয়ান আনিতার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললো,
–“উঁহু নামাবো না।”

–“নামান না। প্লিজ।”

–“নাহ নামাবো না।”

–“কেন?”

–“একটু আগে তো বাজে কিছু টেস্ট করেছিলো। ফিলিংসও খুব বাজে ছিলো রাইট?”

আনিতা মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ জানালো। আহিয়ান আনিতার গালে চুমু খেয়ে বললো,
–“এবার খুব ভালো কিছু ফিলিংসের সাথে পরিচয় করাবো চলো।”

–“এই একদম নাআয়ায়ায়া।”

কিন্তু আহিয়ান শুনলে তো আনিতার কথা। ব্যালকোনি থেকে রুমে গিয়ে আনিতাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে রুমের দরজা এবং ব্যালকোনির দরজা আটকে দিলো। লাইট অফ করে ড্রীম লাইট অন করে আনিতার কাছে চলে গেলো। বিছানায় উঠে একহাতে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে আনিতাকে বললো,
–“পৃথিবীর সবথেকে ভালো ভালো ফিলিংস গুলোর মধ্যে এই একটা ফিলিংসের সাথে আবারো নতুন করে পরিচিত হওয়ার জন্য আপনি রেডি তো?”

চলবে ইনশাআল্লাহ~#শুধু_তোমারই_জন্য(২)
লেখনীতে- অরনিশা সাথী

|৩০|

ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে আনিতা। আহিয়ান অফিস যাওয়ার পথে ওকে কলেজে ড্রপ করে যাবে। রোদেলা তাসকিয়া জেরিন শুভ ওরা চারজনেই ভার্সিটির গেটে আনিতার জন্য ওয়েট করবে। ব্ল্যাক জিন্স আর রেড কামিজ পড়েছে আনিতা। গলায় ব্লু স্কার্ফ ঝুলানো। লম্বা চুলগুলো হাতখোপা করে তাতে কাঠি দিয়ে আটকে রেখেছে। হাতে ওয়াচ আর ঠোঁটে হালকা ভাবে রেড লিপস্টিক লাগিয়ে রুম থেকে বের হলো ও। আহিয়ান ডাইনিং এ বসে সকলের সাথে কথা বলছিলো। মূলত আনিতার জন্যই সকলে অপেক্ষা করছিলো। আনিতা গিয়ে চেয়ার টেনে বসতেই সকলে নাস্তা খেতে শুরু করে।

মিনিট দশেকের মাঝেই আহিয়ান ভার্সিটির সামনে এসে বাইক থামালো। আশেপাশে রোদেলা ওদের দেখতে না পেয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে শুভর নাম্বারে ডায়াল করলো। ফোন কেটে দিয়ে মিনিট দুয়েকের মাঝেই ওরা সকলে গেটের সামনে এসে উপস্থিত হলো। আনিতা আহিয়ানের থেকে বিদায় নিয়ে ওদের সাথে ভার্সিটির ভিতরে চলে গেলো।

দুটো ক্লাস করে আনিতা ওরা সবাই ক্যানটিনে গিয়ে বসলো। অবাক করা বিষয় হচ্ছে অনিকও এই ভার্সিটিরই স্টুডেন্ট। অনিককে ওর বন্ধুদের সাথে ক্যানটিনে কফি খেতে দেখে বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিলো আনিতা। ও যার থেকে দূরে থাকতে চায় নিয়তি তাকেই ওর সামনে নিয়ে আসে। ইতস্তত করে আনিতা চেয়ার টেনে বসে পড়লো। আনিতাকে দেখে অনিকের পাশে বসা ওর ফ্রেন্ড বললো,
–“ওটা তোর ভাবী না? আহিয়ান ভাইয়ের বউ।”

এরকম কথা শুনে অনিক চমকে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে আনিতা ওদের দুটো টেবিল পরেই ওর ফ্রেন্ডদের সাথে বসে আছে। আনিতার ফেস অবশ্য অনিক ভালোভাবে দেখতে পারছে না। বাট ও চিনে ফেলেছে ওকে। অনিক আবার ছেলেটার দিকে ঘুরে ছোট্ট করে বললো,
–“হুম।”

অনিকের এমন জবাবে ওর সামনে বসা মেয়েটি ক্ষানিকটা কেঁপে উঠলো। চোখদুটো ছলছল করে উঠলো মেয়েটার। অনিক ‘আসছি’ বলে ক্যানটিন থেকে বের হয়ে গেলো। অনিক যাওয়াতে আনিতা স্বস্তি পেলো বেশ। অনিক আর ওর বন্ধুর কথা শুনে আনিতাও কিছুটা চিন্তায় ছিলো যাতে অনিক আবার এখানে না আসে। সেজন্যই অনিক চলে যাওয়াতে ও একটা স্বস্তির শ্বাস নিলো। ক্যানটিন থেকে কফি খেয়ে বের হচ্ছিলো আনিতা আর ওর ফ্রেন্ডরা। তখনই একটা মেয়ে এসে আনিতার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
–“তুমিই আনিতা তো?”

আচমকা অচেনা একটা মেয়ে এসে আনিতাকে এই কথা জিজ্ঞেস করাতে আনিতা সহ ওর ফ্রেন্ডরা সকলেই অবাক হয়। আনিতা মাথা উপরনিচ করে বললো,
–“হ্যাঁ আমিই আনিতা। কিন্তু আপনি__”

–“পরিচয় দিলে অবশ্যই চিনবা। একটু সাইডে যাবা? কথা ছিলো তোমার সাথে।”

আনিতা ওর ফ্রেন্ডদের দিকে একবার তাকিয়ে বললো,
–“ওরা আমার বন্ধু। ওদের সামনেই বলতে পারেন সমস্যা হবে না কোনো।”

আনিতা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটা ইতস্তত করছে। ও বুঝলো মেয়েটা ওদের সামনে কিছু বলতে চাইছে না। রোদেলা ওরাও ব্যাপারটা বুঝতে পেরে চলে গেলো ওখান থেকে। মেয়েটা আনিতাকে বললো,
–“চলো বসে কথা বলি।”

কথাটুকু বলে মেয়েটা কর্নারের একটা টেবিলে গিয়ে বসলো। আনিতাও মেয়েটার পিছু গিয়ে বসে বললো,
–“বলুন কি বলবেন।”

–“আসলে বুঝতে পারছি না কিভাবে বলবো কথাগুলো।”

–“আপনার নাম?”

–“কনা।”

‘কনা’ নামটা শুনে আনিতা চমকে উঠলো। তখন তো অনিক দের সাথে এই মেয়েটাই ছিলো। তাহলে কি ও-ই সেই কনা? যাকে ভালোবাসার দাবীতে অনিক একসময়ে আনিতাকে ছেড়েছিলো? যার সাথে অনিকের এতগুলো বছরের সম্পর্ক। অনিকের সাথে একবার মেয়েটাকে দেখেছিলো তো আনিতা দুই আড়াই বছর আগে। চেহারাটা ভুলে গিয়েছিলো। নাম বলাতে আবার মনে পড়ে গেলো। কনা আনিতার একটা হাত ধরে বললো,
–“আমার অনিককে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও না প্লিজ।”

কনার কথায় বেশ অবাক হলো আনিতা। কি বলছে মেয়েটা? ও ফিরিয়ে দিবে কিভাবে? আর অনিক কি ওর কাছে আছে নাকি যে ফিরিয়ে দিবে? আর তাছাড়া ও ফিরিয়ে দেওয়ার কে? আনিতা বললো,
–“আমি আপনার কথা ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না আপু।”

–“জানো অনিককে আমি অনেক ভালোবাসি। ঠিকঠাকই চলছিলো আমাদের সম্পর্ক। কিন্তু হুট করেই বছর তিনেক আগে ওর লাইফে তুমি এলে। তখনো সব ঠিকই ছিলো। অনিক আমারই ছিলো। দু থেকে আড়াই মাসের মাথায় তোমাদের সম্পর্কটা ভেঙে যায়। বলতে গেলে অনিক নিজেই ভেঙে দেয়। ওই কদিনেই তুমি ওকে পাগলের মতো ভালোবেসে ফেলেছিলে। তোমাদের সম্পর্কটা শেষ হয়ে যাওয়ার পর আমি আমাদের এক বন্ধুর কাছ থেকে এসব জানতে পারি। এই নিয়ে অনিকের সাথে___”

–“ভালোবেসেছিলাম এখন ভালোবাসি না আপু। আর আপনি যেহেতু সবই জানেন তাহলে এটাও নিশ্চয়ই জানেন যে অনিকের কাজিন আহিয়ান আমার হাজবেন্ড। ভালোবেসেই বিয়ে করেছি দুজন দুজনকে।”

–“হ্যাঁ জানি__”

–“তাহলে ওসব পুরোনো কথা আমাকে কেন বলছেন আপনি?”

–“বলছি তার কারন আছে। সবটা শুনো প্লিজ।”

আনিতা আর কিছু বললো না। চুপ করে বসে রইলো। কনা আবারো বলতে শুরু করলো,
–“তোমাদের কথা জানার পর অনিকের সাথে আমার এই নিয়ে বেশ ঝামেলা হয়। কথা কাটাকাটি হয়। কিন্তু অনিক সেবারে আমাকে মানিয়ে নিয়েছিলো। আমাদের সম্পর্কের কথা ওর আর আমার দুই ফ্যামিলিই জানে। যেহেতু দুই ফ্যামিলির সকালেই আমাদের সম্পর্ক মেনে নিয়েছিলো আর অনিকও তখন আমাকেই ভালোবাসে তাই ওকে মাফ করে দেই আমি। আবার সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিলো। দুজন দুজনকে পাগলের মতো ভালোবাসি। কিন্তু বিপত্তি ঘটলো আড়াই বছর আগে। সেদিন অনিক তোমাকে মাওয়া ঘাটে দেখার মাস খানেক পর থেকেই বদলে যেতে শুরু করলো। এখনো ওকে আমার দিকে ফেরাতে পারছি না আমি। ও আমাকে সরাসরি বলে দিয়েছে এখন নাকি আমাকে ভালোবাসে না। তোমাকে ভালোবাসে ও। যেই তুমি ওকে ছাড়া এক সেকেন্ড থাকতে পারতে না সেই তোমাকে যখন দেখলো তুমি ওকে ভুলে সামনে এগিয়ে গিয়েছো সেটাই মানতে পারছে না ও। সেই তোমার প্রেমেই ও পড়লো। এমন ভাবে পড়লো যে আমাদের এতগুলো বছরের ভালোবাসাও সেখানে হার মানলো। আমাদের এত বছরের ভালোবাসাকে অস্বীকার করলো। বললো আমাকে সত্যিই যদি ভালোবাসতো তাহলে নাকি তোমাকে কখনো ভালোবাসতে পারতো না।”

এইটুকু বলে কনা থামলো। কথাগুলো বলতে বলতে মেয়েটা কেঁদে দিয়েছে। আনিতারও ভিতরটা বেশ ভারী হয়ে আসছে। কনা চোখের পানি মুছে আবারো বললো,
–“আড়াই বছর যাবত ওর সব অবহেলা কষ্ট সহ্য করে পড়ে আছি আমি। শুধুমাত্র ওকে ভালোবাসি বলে। কিন্তু তোমাকে ভালোবাসে বলে আমাকে পায়ে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। আমাদের এতগুলো বছরের ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই ওর কাছে। ও এখন আমার সাথে কথা বলে না। আমার ফোন ধরে না। সবসময় ইগনোর করে চলে আমাকে। এখন তো তোমার বিয়ে হয়ে গেছে। এখন তো ও চাইলেও তোমাকে পাবে না। তাহলে এখনো কেন আমার সাথে এরকমটা করছে বলো? প্লিজ ওকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও না। বড্ড ভালোবাসি ওকে আমি। এই আড়াই বছর আমি নরক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে বেঁচে আছি। প্লিজ ওকে আমার করে দাও না।”

কথাগুলো বলে কনা ডুঁকরে কেঁদে উঠলো। আশেপাশের কয়েকজন ওদের দিকে ঘুরে ফিরে তাকাচ্ছে। আনিতা কনার হাত ধরে বললো,
–“এতে আমি কি করতে পারি আপু বলেন? আমার হাতে তো কিছু নেই।”

–“তুমি বলো না ওকে। তুমি বললে ও নিশ্চয়ই শুনবে। প্লিজ একটাবার। একটা বার আমার জন্য বলো।”

–“আচ্ছা আমি চেষ্টা করে দেখবো আপু। আপনি কান্না করবেন না প্লিজ।”

এভাবে আরো কিছু কথা বলে আনিতা চলে এলো ওখান থেকে। ক্যানটিন থেকে বের হয়ে দেখলো রোদেলা ওরা ভার্সিটির বটগাছের নিচে বসে আছে। তাই আনিতা ওদের দিকেই গেলো। ওদের পাশে গিয়ে বসতেই সকলে একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে ওকে। আনিতা ওদের সবটা বলতেই ওরা চুপ হয়ে গেলো। সবারই অনিকের উপর প্রচন্ড রকম রাগ কাজ করছে। একটা মানুষ এতটা বাজে কিভাবে হয়? এত বছরের সম্পর্ক ওদের। এক মূহুর্তেই সবটা কিনা এভাবে শেষ করে দিচ্ছে ও? অনিককে নিয়ে ওরা আর মাথা ঘামাতে চায় না। তাই সেসব চিন্তাভাবনা ঝেড়ে ফেললো মন থেকে। আড্ডায় জমে উঠলো সকলে। আরো দুটো ক্লাস করে বাসায় ফিরে আসে সকলে। রোদেলা ওদের সাথেই বাসায় ফিরেছে আনিতা। আহিয়ান যদিওবা আসতে চেয়েছিলো কিন্তু আনিতা বারন করাতে আর আসেনি। অফিস থেকে ভার্সিটি এসে ওকে নিয়ে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আবার অফিস যেতে হবে। কি দরকার এতটা কষ্ট করে আসার? তাই আনিতাই বারন করেছে।

কিছুক্ষণ হলো অফিস থেকে ফিরেছে আহিয়ান। ফ্রেশ হয়ে সবার সাথে ডিনার করে রুমে এসে গা এলিয়ে দিয়েছে। মিনিট পাঁচেক বাদে আনিতা রুহির সাথে হাতে হাতে সব কাজ গুছিয়ে রুমে এসে দরজা আটকে দিলো। রুমের লাইট অফ করে দিয়ে উলটো ঘুরে শুয়ে পড়লো ও। ওর আসার অপেক্ষাই করছিলো আহিয়ান। ওর উলটো ঘুরে শোয়াতে আহিয়ান স্পষ্ট বুঝতে পারলো ম্যাডামের অভিমান হয়েছে ওর উপর। আহিয়ান একটানে আনিতাকে ওর বুকের উপর নিয়ে আসলো। আনিতা ছাড়া পাওয়ার জন্য চেষ্টা করছে। কিন্তু পারছে না। আহিয়ান আনিতাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
–“আমি না চাইলে তুমি কক্ষনো নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে পারবে না। সো ছোটাছুটি বন্ধ করো। শান্ত হও।”

–“ছাড়ুন আপনি আমায়। আমাকে ছোঁয়ার সাহস হলো কি করে আপনার?”

আহিয়ান আনিতার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
–“আমি তোমার হাজবেন্ড আনি। শুধু তোমাকে ছোঁয়া কেন? আমি চাইলে আরো অনেক কিছুই করতে পারি। এখন তুমি যদি সেসব না চাও তাহলে চুপচাপ শান্ত মেয়ের মতো আমার বুকেই থাকো তো।”

আহিয়ানের কথায় আনিতা শান্ত হয়ে গেলো। ও খুব ভালো করেই জানে আহিয়ান চাইলে সব করতে পারে। তাই এখন ওর শান্ত থাকাটাই ভালো বলে মনে হলো। আহিয়ান আনিতার চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
–“আমার বউয়ের অভিমান কেন হয়েছে আমার উপর?”

আনিতা কিছু বললো না। চুপ করে রইলো। আহিয়ান বেড সাইড টেবিল থেকে দুটো বড় কিটক্যাট চকলেট এবং একটা বেলিফুলের মালা আনিতার হাতে দিয়ে বললো,
–“এবার অভিমান ভেঙেছে তো? এইগুলোর জন্যই তো অভিমান করেছিলে তাই না?”

আনিতা শোয়া থেকে লাফ দিয়ে উঠে চকলেট আর মালাটা নেড়েচেড়ে দেখে বললো,
–“আপনি এনেছেন এগুলো? তাহলে তখন যে বললেন আনতে ভুলে গিয়েছেন।”

–“আমার বউয়ের তো এই একটাই আবদার অফিস থেকে ফেরার পথে এই দুটো জিনিস তার চাই-ই চাই। আর এইটুকুন আবদার আমি রাখতে পারবো না ভেবেছিলে?”

আনিতা কিছু না বলে জড়িয়ে ধরলো আহিয়ানকে। আহিয়ানও পরম মমতায় নিজের প্রেয়সীকে আগলে নিলো বুকে। আহিয়ান বেলিফুলের মালাটা আর একটা চকলেট বেড সাইড টেবিলে রেখে দিলো৷ বাকী চকলেটের প্যাকেট হাতে নিয়ে আনিতাকে বললো,
–“খাবে এখন?”

আনিতা আহিয়ানের বুকে ভালো করে মুখ গুজে বললো,
–“হুম, খাইয়ে দেন।”

আহিয়ান নিঃশব্দে হেসে প্যাকেট ছিঁড়ে চকলেট ধরলো আনিতার মুখের সামনে। আনিতা প্রথমে আহিয়ানকে খাইয়ে তারপর নিজে খেয়ে নিলো।

আহিয়ানের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে আনিতা। আহিয়ান ওর চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। আনিতা একপর্যায়ে আহিয়ানকে বললো,
–“আচ্ছা আহিয়ান?”

–“হ্যাঁ আহিয়ান?”

আহিয়ানের জবাবে হেসে ফেললো আনিতা। আনিতা ওকে এভাবে ডাকলে আহিয়ান এভাবেই সারা দেয় সবসময়। যা আনিতার বেশ ভালো লাগে। আনিতা মুচকি হেসে বললো,
–“আপনি আমাকে কতটা ভালোবাসেন?”

আহিয়ান আনিতার চুলে বিলি কাটতে কাটতেই বললো,
–“কে বলেছে ভালোবাসি? ভালোবাসি না তো।”

–“মজা করার মুডে নেই আমি।”

–“তা কেমন মুডে আছো এখন?”

–“আ’ম সিরিয়াস আহিয়ান।”

–“ভালোবাসা তো পরিমাপ করা যায় না বউ। তাই আমিও বলতে পারছি না তোমাকে ঠিক কতটা ভালোবাসি আমি। তবে হ্যাঁ এইটুকু জেনে রাখো তোমাকে অনেক বেশিই ভালোবাসি আমি৷ তোমাকে ছাড়া কখনো থাকতে পারবো না আমি।”

–“আচ্ছা এত ভালোবাসার পরও মানুষ কেন ছেড়ে যায় বলেন তো?”

এতক্ষণ আহিয়ান ব্যাপারটা নরমালি নিলেও এখন ও বিষয়টা ঠিক নরমাল ভাবে নিতে পারছে না। আনিতার প্রশ্ন শুনে আহিয়ানের হাত থেমে যায়। আনিতা ঘাড় ঘুড়িয়ে মাথা উচু করে আহিয়ানকে বললো,
–“কি হলো? বলুন না। একটা প্রশ্ন করেছি তো আমি।”

–“তোমার কি কিছু হয়েছে আনি? এভাবে কথা বলছো কেন তুমি?”

–“আপনি আমার প্রশ্নের উত্তরটা দিন না প্লিজ। এত ভালোবাসার পরও মানুষ কেন ছেড়ে যায়?”

–“অনিককে ভুলতে পারোনি? এখনো ভালোবাসো ওকে?”

আহিয়ানের কথায় আনিতা মুচকি হেসে আহিয়ানকে জড়িয়ে ধরে বললো,
–“আরেহ পাগল না। আমি তো শুধু আপনাকেই ভালোবাসি। ওসব আবেগ-টাবেগের কথা আমার একদম মনে নেই। আর ভুলেও মনে পড়ে না। আমার জন্য আপনি আছেন না? আর কি চাই আমার?”

আনিতার কথা শুনে আহিয়ানের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আনিতাকে।
–“ভালোবাসি আমার এই পিচ্চি বউটাকে।”

–“আমিও ভালোবাসি আমার এই বুড়ো বরটাকে।”

আনিতার কথায় আহিয়ান শব্দ করেই হেসে দিলো। আহিয়ানের হাসির দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থেকে ওর সাথে আনিতাও হেসে ফেললো। এরা দুজন দুজনের হাসি মুখের জন্য সব করতে পারে। বড্ড ভালোবাসে কিনা দুজন দুজনকে।

চলবে ইনশাআল্লাহ~

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here