#শুভ্ররাঙা_ভালোবাসা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_৩২
” আমি আপনাকে খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাই নিহান ভাই।”
সোহেলের বিষয়ে কোর্টের রায় শুনে বাসায় ফিরছিল নিহান আর শুভ্রতা। শাহাদাত সাহেব নিজের বাইক নিয়ে একটু আগেই বেরিয়ে গিয়েছেন। নিহান শুভ্রতাকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিল। অনেকটা পথ শুভ্রতা কোন কথা বলে নি। হঠাৎ করে উক্ত কথা বলায় নিহান আস্তে করে বাইকটা থামিয়ে ফেলে। তড়িঘড়ি করে বলে, ” ক কি বললি?”
” এবার তো আপনার ফিরে যাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে, ওখান থেকে এলেই আমাকে বিয়ে করে নেবেন প্লিজ।”
” এমনভাবে বলছিস যেন আবদার করছিস!”
” যদি মনে হয় আবদার তাহলে আবদারই।”
” সেদিন কি যেন বললি ডিভোর্সের পর নির্দিষ্ট একটা সময় পার করতে হয়, ওই সময় শেষ হয়েছে কি?”
” হ্যাঁ, রিসেন্ট শেষ হয়েছে। কেন?”
” তাহলে কি আর বাধা আছে?”
” মানে?”
নিহান বেশ সাধারণ ভঙ্গিতেই বলে, ” বিয়ে বিয়ে পাচ্ছে আমার।”
” এ্যাহ?”
” আমার প্রতিদিন মাথা ব্যথা করে অন্যের মেয়েকে দিয়ে তো আর মাথা টিপিয়ে নিতে পারব না, বউ থাকলে ভালো হতো।”
” ধ্যাত কি যে বলেন না!”
” বউকে শাড়ি পরে কেমন লাগে দেখতে ভারী ইচ্ছে করে। ভেজা চুল থেকে চুইয়ে চুইয়ে পানি পরবে আমি আঙুলের ডগায় নিব, বউয়ের মুখে ছিটিয়ে দেব, বউয়ের মুখে পানি পড়তেই চোখ বন্ধ করে নেবে আহ কতকিছু যে মিস করতে হচ্ছে! কতকিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছি আমি, তোমার কি উচিৎ হচ্ছে আমার সাথে এমন অবিচার করা?”
” কি করা উচিৎ আমার তাহলে এখন?”
” কোনদিকে না তাকিয়ে পিছনে ছেড়ে আসা কাজী অফিসে চলে যাওয়া উচিৎ। ”
” সোজা সামনের দিকে চলুন, পিছনে যাওয়া নিষেধ। ”
” যাই না চল, একবার গেলেই হয়ে যাবে। তোমার বাবাকেও লাগবে না, সে অলরেডি জামাই বলে মেনে নিয়েছে তুমি শুধু বর বানিয়ে নাও। ”
” ইশ কি সব বলছেন! এমন ঠোঁটকা*টা স্বভাবের হলেন কবে?”
” মানুষের চরিত্রে অনেক ধরণ আছে, প্রয়োজন অনুযায়ী সামনে নিয়ে আসে।”
” খুব ভালো এখন চলুন।”
” জীবনে এডভেঞ্চারের প্রয়োজন আছে কিন্তু তুমি চাইলেই আজ কাজটা সেরে ফেলতে পারি। বাড়িতে সবার অবস্থা কেমন হবে ভাবতে পারছো?”
” এত এডভেঞ্চারের প্রয়োজন নেই বাড়ি চলুন।”
” না মানে একটু গেলেও কিন্তু হতো।”
” আমি কিন্তু এখন বাবাকে কল দিয়ে বলব নিয়ে যেতে।”
” যাচ্ছি।”
নিহান আবার গাড়ি স্টার্ট করে। শুভ্রতা পিছনে বসে হাসছে। শুভ্রতা নিজেও জানে না তার এই হাসি একজন কত নেশাতুর চোখে তাকিয়ে আছে একজন। যখন তখন তার এই হাসির কারণে ঘটে যেতে পারে দূর্ঘটনা।
” আপনাকে একটা কথা বলার ছিল।”
শুভ্রতা কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর আবার কথাটা বলে ওঠে। নিহান সামনে থেকে বলে, ” হ্যাঁ শুনছি।”
” আগে বলুন রেগে যাবেন না? আর রাগবেনই বা কেন আপনি নিজেই তো আমার পিছে পড়ে আছেন বিয়ে করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন।”
” কি বলবেন সেটা বলুন। কথায় কথায় এমন অপমান করবেন না। ”
” অপমান করলাম?”
” তা নয়তো কি?”
” আচ্ছা বাদ দিন, আসল কথা বলি।”
” হ্যাঁ সেটাই ভালো।”
” আবিরা আপুর বিয়ের ব্যাপারে ভেবেছেন কিছু?”
” কেন? ঘটকালি করবেন নাকি?”
” হ্যাঁ ওরকমই কিছু একটা।”
” কি কিছু একটা? বাবা ওর জন্য ছেলে খুঁজে রেখেছে। ”
” আমার কথা তো শুনবেন।”
” বলো।”
” আমার ভার্সিটির ওখানে একটা ডাক্তার আছে, আবিরা আপুকে পছন্দ করে।”
” পছন্দ করতেই পারে।”
” পছন্দ করে বলতে ভালোবাসে।”
” মানে?”
” গলা এমন কেন হয়ে গেল?”
” কাহিনী কি সেটা বল।”
” ওইতো আবিরা আপুকে একজন পছন্দ করে সে একজন ডাক্তার। দুই একেই হয়তো আপুকে দেখতে আসার অনুমতি চাইবে। সবার অধিকার আছে ভালোবাসার মানুষের সাথে থাকার।আমি আশা করব আপনি বিষয়টা বুঝবেন। অভীক ভাইয়া খুব ভালো মানুষ। ”
” ওহ আচ্ছা তাই বলুন। আপনি সবকিছু জেনে বসে আছেন! ”
” হ্যাঁ জানি। আমি জানি বলেই আপনি জানলেন। আমি না জানলে তো আর জানতেন না তাই না?”
” জানিয়ে খুব উপকার করলেন। ”
” এভাবে কেন বলছেন?”
নিহান আর কোন কথার জবাব দেয়নি। শুভ্রতা আরও কিছু কথা বলেও নিহানকে কথা বলাতে পারেনি। মনে মনে কত কথা শুনিয়েছে সে! নিজে যাকে ভালোবাসে তাকে বিয়ে করতে কতকিছু করছে আর বোনের বেলায় সব ভাইয়েরাই ভিলেন কয়ে যায়।
~~
শাহাদাত সাহেব বাসায় ফিরেন নি। তিনি কোর্ট থেকে সোজা অফিসে গিয়েছেন। এদিকে আয়েশা বেগম চিন্তায় আছেন সোহেলের কি গতি হলো সেটা জানার জন্য। তিনি বারবার শুভ্রতা আর নিহানকে কল দিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু কেউ কল রিসিভ করছে না। কিছুক্ষণ পর বাড়ির বাহিরের বড় উঠোনটায় এসে এসে ঘুরে যাচ্ছেন, রাস্তার দিকে উঁকি দিয়ে দেখছেন আসছে কি না তারা।
বাড়ি থেকে এবার বের হবেন ওমনি শুভ্রতার সাথে দেখা। তিনি কিছু বলবেন তখনই শুভ্রতা বলে, ” মা খুব পানি পিপাসা পেয়েছে একটু পানি খাওয়াও তো, আমি রুমেই আছি।”
” আচ্ছা ঠিক আছে রুমে গিয়ে বস আমি পানি নিয়ে আসছি।” বলেই আয়েশা বেগম আনতে যান। শুভ্রতা রুমে গিয়ে বোরখান হিজাব খুলে ফ্যান ছেড়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে।
আয়েশা বেগম মিনিট দুয়েকের মাঝে একগ্লাস ঠান্ডা পানি নিয়ে মেয়ের রুমে উপস্থিত হন। শুভ্রতাকে পানি দিলে সে খেয়ে নেয়। আয়েশা বেগম বলেন, ” এখন বল তো কী হলো?”
” আদালতের রায়?”
” হ্যাঁ। ”
” সাত বছরের সশ্রম কারা*দন্ড দিয়েছে।”
” যাক আলহামদুলিল্লাহ। আরও বেশি দেয়া উচিৎ ছিল। সবাই শিক্ষা পাক, অপরা*ধের শা*স্তি যত বাড়বে অপ*রাধ তত কমবে।”
” হুম।”
” আচ্ছা তুই থাক, ফ্রেশ হয়ে নে। আমি একটু নিহানদের বাড়ি থেকে আসি।”
” ওখানে কেন?”
” আপা একটু ডাকলো।”
” কী কারণে ডেকেছে বলেনি?”
” না।”
” আচ্ছা যাও।”
রাবেয়া বেগম ছেলেকে আসতে দেখে এক গ্লাস ঠান্ডা শরবত বানিয়ে রুমে নিয়ে গেলেন। নিহান ততক্ষণে গোসলে চলে গিয়েছে। তিনি শরবতটা টেবিলে রেখে বিছানায় বসেন।
নিহান তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে রুমে নিজের মাকে দেখে বলে ওঠে, ” কি মা? এখানে কেন?”
” ছেলের রুমে আসতে কারণ লাগে নাকি?”
” না সেটা না। এসে বসে আছো একা একা তাই বললাম।”
” তোর জন্য ঠান্ডা শরবত নিয়ে এসেছিলাম, এসে দেখি তুই গোসলে গিয়েছিস।”
” আচ্ছা দাও।”
নিহান গ্লাসটা নিয়ে শরবত খেতে থাকে। সে মায়ের মুখ দেখে বুঝতে পারছে রাবেয়া বেগম কিছু একটা বলতে এসেছে। নিহান শরবত শেষ করে বলে, ” মা আমি চাচ্ছিলাম যাওয়ার আগেই শুভ্রাকে বিয়ে করে রেখে যেতে। ”
নিহানের কথায় রাবেয়া বেগমের মুখ আরও বেশি মলিন হয়ে যায়। তিনি আমতা আমতা করে বলেন, ” শুভ্রতাকে বিয়ে না করলে হয়না বাবা?”
নিহান বেশ অবাক হয় মায়ের কথায়। যেই মা এতদিন তার পাশে ছিল আর যখন ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে তখন কি না এসব বলছে!
উৎকন্ঠিত হয়ে নিহান বলে ওঠে, ” এসব কি বলছো মা? আমি ওকে ভালোবাসি। এতগুলো বছর আমি অপেক্ষা করেছি আর এখন যখন ওকে পাবার সময় হয়েছে তখন তুমি এসব বলছো?”
” আমার কোন আপত্তি নেই বাবা, আশেপাশের মানুষ ভালো চোখে দেখছে না।”
” আশেপাশের মানুষ কি দুইবেলা খাওয়াতে আসবে? প্রতিবেশী কাজই ওগুলো। এখন আল্লাহ না করুক শুভ্রার জায়গায় যদি আবিরা বা নেহা থাকতো তাহলে কি করতে বলো তো? চাইতে না তোমার মেয়ে ভালো কাউকে বিয়ে করে সুখী হোক? প্রথম বিয়েতে কারো কপালে সুখ না-ই থাকতে পারে তাই বলে কি সে ভালো থাকার অধিকার হারাবে?”
” আমাকে ভুল বুঝিস না৷ আমি চাই তুই ভালো থাক, শুভ্রতাকে আমি যথেষ্ট ভালোবাসি।”
নিহান বুঝতে পারে এগুলো তার মায়ের কথা না, আশেপাশের কেউ হয়তো বাড়ি এসে এসব বলেছে। সে মায়ের পাশে গিয়ে বসে পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বলে, ” মা আমি আজ বাবার সাথে কথা বলব। আমি চলে যাওয়ার আগেই শুভ্রাকে বিয়ে করতে চাই।”
” সেদিন তো বললি কয়েকমাস পর বিয়ে করবি শুভ্রা থার্ড ইয়ারে উঠলে! আর এখন তো আত্মীয়দের দাওয়াত দেয়াও সম্ভব নয়। তোর বাবাও আসবে কয়েকদিনের মধ্যে। ”
” এখনই কোন অনুষ্ঠান হবে না মা। শুধু বাড়ির মানুষ থাকলেই হবে।”
” আচ্ছা আমি দেখছি তোর বাবার সাথে কথা বলে।”
” ঠিক আছে মা।”
রাবেয়া বেগম গ্লাসটা নিয়ে রুম থেকে চলে যান। নিহানের কল আসায় বারান্দায় চলে যায়।
#চলবে….
আজ খুব ব্যস্ততার মাঝেও গল্প দিয়েছি। মাঝখানে একদিন না দিলেই আমার পাঠক হারিয়ে যায় কেন?