মায়াবতী পর্ব – ৩৫

#মায়াবতী
#পর্ব:৩৫
#তানিশা সুলতানা

আশা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। নিধি তেড়ে যায় তার দিকে।

“সবটা আপনার জন্য। সেইদিন আপনাকে ডেকে নিয়ে দেখালাম অর্ণব আর ওই মেয়ে এক রুমে। আপনি কি বললেন ” আমার ছেলেকে ডিস্টার্ব করিও না” এখন বোঝেন।

“আমি তোমার কথা বিশ্বাসই করি নি৷ আমার ছেলে এমনটা করবে এটা আমার কল্পনার বাইরে।

নিধি কটমট চোখে তাকায়।

” আমাকে বিশ্বাসই করেন নি?

“থাক বাদ দাও। যা গেছে
গেছে
এখন ভাবো কি করবো?

” কি আর করবেন? তন্নিকে বরণ করেন। ভালো বাসেন কতো।

“হ্যাঁ ভালোবাসি। অনাথ একটা মেয়ে। ছোট থেকে ভালোবাসা পায় নি। কারো থেকে একটু যত্ন পায় নি। তাকে সত্যিই আমি ভালোবাসি। কিন্তু ছেলের বউ হিসেবে মানতে পারবো না।
আমার হিরের টুকরো ছেলের সাথে তাকে মানাবে না। কোথায় তন্নি আর আমার ছেলে। এটা মানা যায় না কি?

নিধি ভেংচি কাটে। তারপর বেশ ভাব নিয়ে বলে

” তাহলে আমার সাথে পারফেক্টলি মানায়,তাই না?

আশা এক পলক তাকায় নিধির দিকে। নাহহ মেয়েটা খারাপ না। কিন্তু সমস্যা জামাকাপড়ে। ঠিকঠাক জামাকাপড় পড়েই না সে।

__
আনোয়ার মিষ্টি ফলমূল নিয়ে চলে তন্নিদের বাড়িতে। গাড়ি রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে ড্রাইভারের সাহায্যে বাড়ির ভেতরে জিনিসপত্র নিয়ে যায়। কিন্তু ঘরে এতোবড় তালা ঝুলছে। কোথাও কেউ নেই।
কোথায় গেলো সবাই?
বেশ চিন্তায় পড়ে যায় উনি।
ড্রাইভার বলে ওঠে

“আশেপাশের বাড়ি গুলোতে জিজ্ঞেস করবো?

” হুমম যাও

ড্রাইভার চলে যায়। খানিকক্ষণ বাদে আসে এবং জানায়।
“ওনারা সবাই চলে গেছে ব্যগপত্র নিয়ে৷ কোথায় গেছে কেউ বলতে পারে নি।

আনোয়ারের কপালে তিনটে ভাজ পড়ে। কোথায় গেলো তন্নি? সে তার ছেলেকে কি জবাব দেবে? কি করবে এখন?

__

অথৈ হাসপাতালের করিডোরে ঘাপটি মেরে বসে আছে। কি হয়ে গেলো এসব? দুই হাত ভর্তি তার র*ক্ত৷ জামাকাপড় ও র*ক্তে ভিজে গেছে৷ এই মুহুর্তে তন্নিকে ভীষণ প্রয়োজন ছিলো অথৈয়ের। কিন্তু তন্নি কোথায়?
কতোবার কল করেছে অথৈ। কিন্তু তন্নি ধরে নি৷

ভেতর থেকে ডাক্তার বেরিয়ে আসে। অথৈয়ের সামনে দাঁড়িয়ে কয়েকবার ডাকে। কিন্তু অথৈয়ের সাড়া নেই৷ শেষে অথৈয়ের মাথায় হাত রাখে। অথৈ তাকায় ডাক্তারের দিকে৷
ডাক্তার অথৈয়ের পরিচিত। আনোয়ারের বন্ধু। খুব ভালোবাসে অথৈকে।

” আংকেল সাগর ঠিক আছে?

ডাক্তার মুখটা মলিন করে ফেলে

“টেনশন করিও না। ওনার বাড়ির লোকজনের খবর দাও৷ আসতে বলো তাদের। আর তিন ব্যাগ রক্ত লাগবে। বাট হাসপাতালে o পজেটিভ রক্ত নেই৷

” আমার রক্তের গ্রুপ সেম। আপনি আমার থেকে নেন। আমার তন্নিরও সেম গ্রুপ। আমি ওকেও ডেকে আনছি। আমরা রক্ত দিবো।
ওনাকে বাঁচিয়ে দিন আংকেল।

আবারও কেঁদে ফেলে অথৈ৷ এই মেয়েটা সারাক্ষণ পরিপাটি থাকে। তার চুল গুলোও কখনো এলোমেলো হয় না। কিন্তু আজকে তাকে বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে। কেঁদেকেটে চোখ দুটো ফুলিয়ে ফেলেছে।
ডাক্তার অথৈয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

“আই উইল বেস্ট ট্রাই

ডাক্তার আবারও কেবিনে ঢুকে যায়। অথৈ দুই হাতে নিজের চুল খামচে ধরে বসে পড়ে। কি হয়ে গেলো এটা?

এই তো তখন অথৈ তন্নির পেছনে যাচ্ছিলো। কিন্তু হঠাৎ মনে হলো তন্নির পেছনে না গিয়ে সাগরের কাছে থাকা উচিত। তাকে শান্তনা দেওয়া উচিত। তাই ফিরে এসেছিলো। কিন্তু ততখনে সাগর চলে গেছে।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রিকশা করে বাসায় ফেরার পথে রাস্তায় ভির দেখতে পায়। এগিয়ে গিয়ে জানতে পারে ” একটা ছেলে অতিরিক্ত জোরে বাইক চালানোর জন্য এক্সিডেন্ট করেছে। ”
অথৈ এগিয়ে গিয়ে দেখতে পায় এটা সাগর।
চিৎকার করে কেঁদে সাগরকে ধরে সে। লোকজনের সাহায্য হাসপাতালে নিয়ে আসে।

সাগরের ফোনটা অথৈয়ের কাছে ছিলো। সে সেখান থেকে সাগরের মা সালমাকে কল করে। কল ধরেই সালমা বলে ওঠে

“আব্বা কখন আসবি তুই? আমি বিরিয়ানি রান্না করেছি তোর জন্য।
তোর বাবা আর আমি না খেয়ে অপেক্ষা করছি।

অথৈ কান্না আটকাতে পারছে না। ধরে আসা গলায় বলে

” আমমি অথৈ বললছি। সিটি হাসপাতালে চলে আসুন

আর কিছু বলতে পারে না অথৈ। কল কেটে দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
আবারও কল করে তন্নির নাম্বারে এবার নাম্বার বন্ধ। অথৈ ডাটা অন করে। তন্নি নিশ্চয় কোনো মেসেজ দিয়েছে।
ডাটা অন করতেই প্রথমে তন্নির মেসেজ চোখে পড়ে

“মা কোথাও একটা নিয়ে যাচ্ছে আমায়।।আমি জানি না কোথায় যাচ্ছি।

_

আনোয়ার যখন জানায় তন্নি বাড়িতে নেই। আর ওই বাড়ির কেউ ই বাড়িতো নেয় তখন অর্ণব রেগে যাওয়ার বদলে বাঁকা হাসে। ঝাঁকড়া চুল গুলো বা হাতে পেছনে ঠেলে আনোয়ারের গাল টেনে দেয়। আনোয়ার ভ্রু কুচকে তাকায়।

“তোর বউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আর তুই চিল করছিস?
আমার বউ নিখোঁজ হলে তো আমি থানা পুলিশ পর্যন্ত যেতাম তাকে খুঁজতে।

অর্ণব আনোয়ারের কাঁধ ধরে তাকে বসায় খাটের ওপর তার তার গা ঘেসে নিজেও বসে পড়ে৷

” আমার বউটা কে আমি পেয়ে গেছি। এবার শুধু হা পা বেঁধে এখানে নিয়ে আসা।
তুমি তোমার বউকে মেনেজ করো।
নিধির ওই ভিডিওটা তাকে দেখাও আর নিধিকে বিদেয় করতে বলো।
নাহলে বাসর ঘরের ক্যামেরাম্যান বনাবো আমি নিধিকে।

আনোয়ার কেশে ওঠে। অর্ণব পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়। ঢকঢক করে পানি খেয়ে নেয় আনোয়ার।
গ্লাসটা রেখে একটুখানি শান্ত হয়ে বলে

“বাপ হই আমি তোর। আমার সামনে মুখটাকে একটু কন্ট্রোল কর। লজ্জা তো তোর নেই৷ কিন্তু আমার আছে।

” পাপা আমাকে লজ্জা বোঝাতে এসো না। লজ্জা যে তোমারও নেই তার জলজ্যান্ত প্রমাণ আমি।

আনোয়ার সোজা দাঁড়িয়ে হনহনিয়ে চলে যায়। এই ছেলের সামনে বসা যাবে না মানে যাবেই না। নিলজ্জ বেহায়া ছেলে। তন্নির মতো এতো মিষ্টি একটা মেয়ে এই বেহায়ার ফাঁদে কি করে পা দিলো?

অর্ণব মুচকি হেসে বসেই আছে। কিছু একটার অপেক্ষায়। ঠিক কয়েক সেকেন্ড পরে আনোয়ার আবার আসে। দরজার কাছে দাঁড়িয়েই জিজ্ঞেস করে

“কিসের ভিডিও?

” মাম্মাকে সাথে নিয়ে দেখো গিয়ে। দারুণ ট্রেন্ডিং ভিডিও। মজা পাবে।

আনোয়ার মাথা নাড়িয়ে চলে যায়।

অর্ণব ফোন বের করে কিছু একটা দেখে নেয়। তারপর বিরবির করে বলে

“ছেড়ে দেওয়ার জন্য ধরি নি তোমায়। চিনোই না আমায়। পৃথিবীর যে প্রান্তে গিয়েই লুকাও না কেনো
তোমাকে আমার কাছেই আসতে হবে। আজকেই।
পাপার টাকায় কেনা ফুল নষ্ট হতে দিবোই না আমি।
এটা অনির পাপার প্রমিজ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here