#শেষটা_সুন্দর
#পার্ট_১১
#নিশাত_জাহান_নিশি
,
,
,
চাঁদনীর চোখে পানি জমে এলো। চোখের অবাধ্য পানি গুলো লুকানোর জন্য চাঁদনী নূরের থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলো।
নূর ঝাঁঝালো কন্ঠে চাঁদনীকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল,,,,,
–“তুমি আমার রুমে কি করছ চাঁদ?”
চাঁদনী চোখর অবাধ্য পানি গুলোকে কোনো রকমে সামলিয়ে মুখে জোর পূর্বক হাসি ঝুলিয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
–“এই রুম টা তো এখন থেকে আমার ও নূর ভাইয়া। আমি তোমার অর্ধাঙ্গিনী। তোমার সব কিছুতেই আমার অর্ধেক ভাগ আছে।”
নূর কিছুটা মলিন হাসি দিয়ে বলল,,,,,
–“সবকিছুতে তোমার অর্ধেক ভাগ থাকলে ও আমার মনে তোমার ভাগ শূন্য। আমার পুরো মন জুড়ে শুধু রোজের বসবাস। সেখানে সেকেন্ড পার্সনের অস্তিত্ব ভিওিহীন।”
কথা গুলো বলেই নূর কাবার্ড থেকে ড্রেস নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। চাঁদনী চোখে হাজারো নোনাজল নিয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। ইচ্ছে করছে নূরকে ঝাপটে ধরে বলতে,,,,,,
–“একদিন তোমার পুরো মন জুড়ে শুধু এই চাঁদের বসবাস থাকবে। এক সেকেন্ডের জন্যে ও তুমি আমার থেকে চোখ সরাতে ভয় পাবে। সারাক্ষণ আমাকে চোখে চোখে রাখবে। তোমার বুকে পরম যত্নে আমাকে আগলে রাখবে। ভালোবাসার সাত রং দিয়ে তুমি আমায় ভালোবাসবে। আমাকে হারানোর ভয় তোমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাবে। আমার প্রতিটা শ্বাস প্রশ্বাসে তুমি বেঁচে থাকার কারণ খুঁজে পাবে। আমার থেকে এক্টু দূরে গেলেই তোমার নিশ্বাস আটকে আসবে। আমি কাছাকাছি থাকলে তোমার হার্টবিট দ্রুত গতিতে বিট করবে। হার্টবিটের এই অসহ্য যন্ত্রনা তুমি সহ্য করতে না পেরে আমার কাছে এসে ধরা দিবে। আমার চুলের স্মেলের টানে তুমি মাতাল হয়ে আমার কাছে ছুটে আসবে। উন্মাদের মতো ভালোবাসবে তুমি আমায়। আমি ঐ দিনটার অপেক্ষায় থাকব নূর ভাইয়া। তবে ভয় হয় ঐ সুখের দিনটা দেখার আগেই না আমি চোখ বুজে ফেলি। আমার কপালে আবার বেশি সুখ সহ্য হয় না।”
নূর কাবার্ড থেকে ছুড়ে ছুড়ে সব ড্রেস বেডের উপর ফেলছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে খুব বিরক্ত সে। চাঁদনী বেড থেকে উঠে নূরের পাশে দাঁড়িয়ে নরম স্বরে বলল,,,,
–“কি হয়েছে নূর ভাইয়া? এতো বিরক্তি নিয়ে কি খুঁজছ?”
নূর বিষন্ন মন নিয়ে চাঁদনীকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,
–“আমার এ্যাশ কালার টি শার্টটা খুঁজে পাচ্ছি না। শার্টটা রোজ আমাকে গিফট করেছিলো। ইদানিং আমার পছন্দের জিনিস গুলো আমার থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।”
কথা গুলো বলেই নূর কাবার্ডের দুই নম্বর ড্রয়ারটা খুলে মুহূর্তেই চোয়াল শক্ত করে চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
–“তোমার জামা কাপড় আমার কাবার্ডে কেনো? এখনি সরাও বলছি। এই পুরো কাবার্ড আমার। এখন থেকেই শুরু করে দিয়েছ আমার সব কিছুতে দখল দেওয়া?”
চাঁদনী মলিন হেসে বলল,,,,,
–“ঐ যে এক্টু আগে বললাম অর্ধেক অর্ধেক।”
নূর চোখ লাল করে চাঁদনীর থেকে চোখ সরিয়ে কাবার্ড থেকে চাঁদনীর যতো শাড়ি আর জামা কাপড় আছে সব এক এক করে পাগলের মতো ছুড়ে ছুড়ে ফ্লোরে ফেলছে। আর মৃদ্যু চিৎকার দিয়ে বলছে,,,,,
–“অর্ধেক মাই ফুট। এটা শুধু আমার কাবার্ড। আমি আমার কোনো কিছুতেই কাউকে ভাগ দিতে পারব না। দরকার হলে আরেকটা কাবার্ড কিনে আনব। ঐটা তে যে যার ইচ্ছে মতো শাড়ি আর জামা কাপড় রাখবে।”
চাঁদনী থম মেরে দাঁড়িয়ে নূরের পাগলামী দেখছে। এতো হ্যান্ডসাম ছেলেটাকে দেখলে কেউ বুঝতেই পারবে না, যে সে কি পরিমান বদরাগী। চাঁদনী কিছু বলছে না শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নূরের পাগলামী দেখছে।
চাঁদনীর সব জামা কাপড় ছুড়ে মেরে নূর এবার শান্তি হয়েছে। কিছুটা হাঁফিয়ে নূর খাটের উপর বসে পড়ল। রাগে নূরের ফর্সা মুখটা লাল হয়ে গেছে। চাঁদনী আর দাঁড়িয়ে না থেকে প্রথম কাবার্ডটা খুলে খুব ভালো ভাবে চোখ বুলিয়ে নূরের টি শার্ট টা খুঁজছে। কাবার্ডের এক্টা কোণায় টি শার্ট টা পড়ে আছে। চাঁদনী তাড়াতাড়ি করে টি শার্ট টা নিয়ে নূরের সামনে ধরল। টি শার্ট টা চোখের সামনে দেখে নূর দারুন খুশি।
নূর মুচকি হেসে খপ করে চাঁদনীর হাত থেকে টি শার্ট টা নিয়ে এক ঝটকায় টি শার্ট টা পড়ে নিলো। ফর্সা শরীরে এ্যাশ কালারটা ফুটে আছে। এই মুহূর্তে চাঁদনীর খুব ইচ্ছে করছে নূরের গাল দুটো টেনে দিতে।
নূর টি শার্ট টা পড়ে মুখটা গোমড়া করে চাঁদনীকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,
–“ব্ল্যাক কালার টাউজারটা খুঁজে দাও তো। আমি খুঁজে পাচ্ছি না।”
চাঁদনী আবার টাউজার খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। টাউজারটা ও কাবার্ডের এক্টা কোণায় পড়ে আছে। টাউজারটা হাতে নিয়ে চাঁদনী আবার নূরের সামনে দাঁড়াল। নূর হাসি মুখে টাউজারটা হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো। টি শার্ট না হয় চাঁদনীর সামনে পড়া গেছে কিন্তু টাউজার তো আর চাঁদনীর সামনে পড়া যাবে না। তাই সে বারান্দায় চলে গেলো।
ঐদিকে চাঁদনী কাবার্ড গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। নূরের সব গুলো ড্রেস চাঁদনী খুব যত্ন করে কাবার্ডে গোছাতে লাগল। নূরের কথা মতো চাঁদনী ওর জামা কাপড় গুলো কাবার্ড থেকে সরিয়ে খাটের উপর ভাঁজ করে রাখছে।
নূর টাউজার পড়ে মাথাটা নিচু করে চাঁদনীর সামনে দাঁড়িয়ে চাঁদনীকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,
–“স্যরি চাঁদ। খুব রুড বিহেভ করেছি তোমার সাথে। কালই আমি এক্টা নতুন কাবার্ড নিয়ে আসব তোমার জন্য। তুমি তোমার ড্রেস খুব যত্ন সহকারে গুছিয়ে রাখতে পারবে।”
চাঁদনী শাড়ি গুছাতে গুছাতে মুখটা কালো করে নূরকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,
–“স্যরি বলতে হবে না। আমি কিছু মনে করি নি। আমি জানি তুমি খুবই পঁচা আর বদরাগী এক্টা ছেলে। কোনো রস কষ নেই তোমার মধ্যে, একঘুয়ে তুমি।”
নূর তেঁড়ে এসে চাঁদনীর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,,,,
–“এই কি বললে তুমি? আমি পঁচা, বদরাগী, একঘুয়ে?”
চাঁদনী মুখটা গোমড়া করে বলল,,,,
–“হুম তুমি খুব বদরাগী। খুব খারাপ এক্টা লোক।”
–“আমি বদরাগী না? দাঁড়াও এক্ষনি দেখাচ্ছি মজা।”
কথাটা বলেই নূর বেড থেকে বালিশ নিয়ে চাঁদনীর মাথায় হালকা মারতে লাগল। চাঁদনী ও হাসতে হাসতে বেডের উপর থেকে আরেকটা বালিশ নিয়ে নূরের মাথায় মারতে লাগল। পুরো বেড জুড়ে ওদের ছুটাছুটি শুরু হয়েছে। দুই জনই বাচ্চাদের মতো নিজেদের মধ্যে খুনসু্টিতে লেগে পড়েছে। নূর হাসছে আর চাঁদনী পুরো শরীরে বালিশ দিয়ে মারছে। চাঁদনী ও খিলখিল করে হাসছে আর নূরের মাথায় বালিশ দিয়ে ছুড়াছুড়ি করছে। এক পর্যায়ে দুজনের হাতের দুটো বালিশ থেকেই তুলো উড়তে শুরু করল। পুরো রুম জুড়ে ধূলোর মতো তুলো উড়ছে। চাঁদনী আর নূর দুজনেই সাদা ভূত হয়ে গেছে। দুজনের পুরো শরীরে তুলো ছড়াছড়ি করছে। অন্ধকারে ওদের দুইজনকে দেখলে যেকোনো কেউ ভয় পেয়ে যাবে।
বালিশের কুশনটা ফেলে চাঁদনী আরেকটা বালিশ হাতে নিয়ে নূরের মাথায় উওম মধ্যম শুরু করল। নূর ওর আশেপাশে আর কোনো বালিশ খুঁজে পাচ্ছে না। তাই সে এবার চাঁদনীর হাত থেকে বালিশ টা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু কিছুতেই সে সফল হতে পারছে না। চাঁদনী হাতের পিছনে বালিশটা লুকিয়ে রেখেছে। তাই এবার ছুটাছুটির পরিমান টা আরো বেশি বেড়ে গেলো। চাঁদনী এবার খাট থেকে নেমে পুরো রুমে ঘুরছে আর খিলখিল করে হেসে বলছে,,,,,,
–“লুজার লুজার। নূর ভাইয়া লুজার।”
নূর চাঁদনীর পিছু দৌঁড়াচ্ছে আর বলছে,,,,,,
–“চাঁদ খুব খারাপ হচ্ছে কিন্তু। তুমি আমাকে লুজার বলছ কেনো?”
চাঁদনী দৌঁড়াচ্ছে আর পিছনের দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটে বলছে,,,,,
–“লুজার কে তো লুজার ই বলব। সাহস থাকলে আমার হাত থেকে পিলো টা ছিনিয়ে নিয়ে দেখাও।”
নূর হু হা করে হেসে বলল,,,
–“এটা আমার বাঁ হাতের খেলা চাঁদ।”
–“ওকে, তাহলে শুরু হয়ে যাও। যদি আমি জিতি তবে কিন্তু আমি যাই বলব, তোমাকে তাই শুনতে হবে। রাজি বলো?”
নূর এক্টা শয়তানি হাসি দিয়ে বলল,,,,,
–“ওকে রাজি। যদি আমি জিতি তাহলে আমি যা বলব তোমাকে ও তা শুনতে হবে।”
চাঁদনী বুঝে গেছে নূর কি কনডিশান দিতে পারে। চাঁদনী মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,,,,,
–“আমি জানি নূর ভাইয়া, তুমি আমার থেকে বিচ্ছেদ চাইবে। তাই এমন শয়তানি হাসি দিয়েছ। আমি ও কিন্তু কম যাই না। যেকোনো মূল্যেই হোক আমি জিতে আমাদের বউভাতের অনুষ্ঠানটা কালকের মধ্যেই সেরে ফেলব।”
চাঁদনী এবার দৌঁড় থামিয়ে হাতের পিছনে পিলোটা লুকিয়ে হাঁফাতে হাঁফাতে নূরকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,
–“নূর ভাইয়া আমি ও তোমার শর্তে রাজি। চলো শুরু হয়ে যাক আমাদের কম্পিটিশন। দুজনের মধ্যে যেই জিতি তার কথা কিন্তু সত্যি সত্যি শুনতে হবে। আমি খুব সিরিয়াস।”
নূর ও কিছুটা হাঁফিয়ে বলল,,,,,,
–“হুম আমি ও সিরিয়াস। তোমার চেয়ে ও ওভার সিরিয়াস আমি। চলো শুরু হয়ে যাক।”
চাঁদনী আর দেরি না করে রুম থেকে বের হয়ে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে সিঁড়ি বেয়ে বাড়ির সদর দরজা পেরিয়ে বাড়ির বাগানে চলে এলো। ড্রইং রুমের সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। চাঁদনীর পিছু পিছু নূর ও রুম থেকে বের হয়ে সিঁড়ি বেয়ে বাগানের দিকে ছুটল। বাড়ির সবাই এবার মুখটা বন্ধ করে চোখ গুলো বড় বড় করে রেখেছে। মনে হচ্ছে চোখের সামনে ভূত দেখছে। আয়মন, নীড় আর সোহানী নূরের পিছু পিছু ছুটল। কি হচ্ছে না হচ্ছে ওরা বুঝার চেষ্টা করছে।
চাঁদনী খিলখিল করে হেসে বাড়ির বাগানে বড় বড় পা ফেলে দৌঁড়াচ্ছে। নূর ও জোরে জোরে হেসে চাঁদনীর পিছু ধাওয়া করছে। চাঁদনী সোজা না দৌঁড়ে গোল গোল হয়ে দৌঁড়াচ্ছে। চাঁদনী কিছুক্ষণ দোলনাকে কেন্দ্র করে দৌঁড়াচ্ছে তো কখনো ফুল গাছের বেষ্টনিকে কেন্দ্র করে দৌঁড়াচ্ছে। যার কারণে নূর কিছুতেই চাঁদনীকে ধরতে পারছে না। বার বার চাঁদনী হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে।
দূরে দাঁড়িয়ে থাকা আয়মন, নীড় আর সোহানীকে দেখে চাঁদনী দৌঁড়ে গিয়ে ওদের পিছনে লুকিয়ে পড়ল। নূর ও হন্ন হয়ে চাঁদনীকে ধাওয়া করে যেই না চাঁদনীকে খপ করে ধরতে যাবে অমনি চাঁদনী ওর জায়গা থেকে সরে ওদের তিনজনকে কেন্দ্র করে গোল গোল হয়ে ছুটা শুরু করল। সোহানী কিছুটা হয়রান হয়ে চাঁদনীকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,
–“কি হচ্ছে কি চাঁদ? এভাবে ছোট বাচ্চাদের মতো দৌঁড় ঝাপ করছিস কেনো?”
নীড় এবার সোহানীর কথা টেনে নিয়ে নূরকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,
–“নূর এসবের মানে কি? চাঁদের পিছনে এভাবে লেগেছিস কেনো? হচ্ছে টা কি এসব।”
আয়মন কিছুটা বিরক্ত হয়ে নীড় আর সেহানীকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,
–“উফফফ যা হচ্ছে হতে দাও না। আমার তো ভালোই লাগছে। দুই বাঁদড়ের দৌঁড় ঝাপ দেখতে!”
চাঁদনী আর নূর কিছুটা রেগে আয়মনের দিকে তাকিয়ে একসাথে বলে উঠলো,,,,,
–“আয়মনের বাচ্চা।”
আয়মন বএিশ পাঁটি বের করে বলল,,,,,
–“বাঁদড়ের মতো দৌঁড় ঝাপ করলে বাঁদড় ই তো বলব তাই না?”
চাঁদনী আর নূর কোমড়ে হাত দিয়ে চোখ লাল করে আয়মনের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
–“এটা এক্টা গেইম। বাঁদড়ের বাদড়ামি না।”
আয়মন কিছুটা অবাক হয়ে বলল,,,,,
–“এ্যা.. এটা আবার কেমন গেইম? আমি ও খেলতে চাই এই গেইম।”
নূর আয়মনকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বিরক্তি নিয়ে বলল,,,,,
–“সর তো সর। খেলতে দে আমাদের। এই খেলাটার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।”
কথাটা বলেই নূর যেই না চাঁদনীর হাত থেকে পিলোটা ছিনিয়ে নিতে যাবে অমনি চাঁদনী ধপ করে মাটিতে বসে পড়ল। নূর বিরক্তি নিয়ে যেই না মাটিতে বসে চাঁদনীকে ধরতে যাবে অমনি চাঁদনী বসা থেকে উঠে দিলো এক ভোঁ দৌঁড়। নূর আবার হন্ন হয়ে চাঁদনীর পিছনে ছুটল। ঐদিকে আয়মন, নীড় আর সোহানী বেকুব বনে ঘুরাঘুরি করছে। ওদের মনে এক্টাই প্রশ্ন,,,,
—” এটা কি এমন সিরিয়াস গেইম যার কারণে দুজনই জীবন দিয়ে ছুটাছুটি করছে?”
দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে চাঁদনী কিছুটা হাফিয়ে পড়েছে। দৌঁড়ের স্পিড আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। আয়মন দূর থেকে ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরে সোজা হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির স্টোর রুমে গিয়ে আস্তে করে বাড়ির কারেন্টের সুইচটা অফ করে দিলো। আয়মন বুঝতে পেরেছে চাঁদনী কোনো চাল চেলে এই গেইমে নেমেছে। তাই সে চাঁদনীর সঙ্গ দিলো।
অন্যদিকে, নূর যেই না চাঁদনীর শাড়ির আঁচলটা খপ করে ধরতে যাবে অমনি পুরো বাড়িতে অন্ধকার নেমে গেলো। নূর কিছুটা ভয় পেয়ে হুট করে থেমে গেলো। চাঁদনী সুযোগ পেয়ে বাড়ির মেইন গেইটের সামনে বড় বট গাছটার চিপায় লুকিয়ে পড়ল।
নূর অন্ধকারে খুব ভয় পায়। তাই সে কিছুটা থতমত খেয়ে গেলো। আয়মন ফোনের ফ্ল্যাশ লাইটটা অন করে নূরের পাশে এসে দাঁড়াল। নূর আয়মনকে দেখে কিছুটা সাহস পেলো। নূর হুট করে আয়মনের হাত থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে বাড়ির পুরোটা বাগানে চক্কর দিয় চাঁদনীকে খুঁজতে লাগল। কিন্তু কোথাও চাঁদনী নেই।
আয়মন ও এবার কিছুটা ভয় পেয়ে পুরো বাড়িতে চাঁদনীকে হন্ন হয়ে খুঁজছে। নূর মাথায় হাত দিয়ে বাড়ির প্রতিটা চিপায় চাপায় চাঁদনীকে খুঁজছে আর চাঁদ চাঁদ বলে চিৎকার করছে। নীড় আর সোহানী ও ওদের সাথে যোগ দিয়ে চাঁদনীকে খুঁজছে। সবার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট।
ঐদিকে, চাঁদনী হাতে থাকা পিলো টাকে আঁকড়ে ধরে গাছের চিপায় বসে বসে মুখ টিপে হাসছে। খুব মজা পাচ্ছে সে। ওরা চারজন শুধু বাগানটাতেই গোল গোল হয়ে ঘুড়ছে কেউ মেইন গেইটের সামনে আসছে না। নূর যদি বুদ্ধি করে মেইন গেইটের সামনে আসত তাহলে হয়তো চাঁদনীকে খপ করে ধরে ফেলতে পারত।
আয়মন আর দেরি না করে বাড়ির স্টোর রুমে গিয়ে কারেন্টের সুইচ টা অন করে দিলো। পুরো বাড়ি আবার আলোকিত হয়ে উঠল। আলোর দিশা পেয়ে নূর যেই না বাড়ির মেইন গেইটের দিকে তাকাল অমনি সে গাছের চিপায় চাঁদনীর লাল শাড়ির আঁচলটা দেখতে পেলো।
নূর শয়তানী হাসি দিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে যেই না চাঁদনীর পিছনে দাঁড়াল অমনি চাঁদনী আঁচ করতে পেরে গাছের চিপা থেকে বেরিয়ে সোজা মেইন গেইটের বাইরে চলে গেলো। নূর পেরেশান হয়ে আবার চাঁদনীর পিছনে ছুটল।
চাঁদনী খিলখিল করে হাসতে হাসতে পিছু ফিরে নূরের দিকে তাকাতে তাকাতে রাস্তার মাঝখানে চলে আসল। নূর চোখে মুখে অজস্র ভয় নিয়ে চাঁদনীকে উদ্দেশ্য করে মৃদ্যু চিৎকার দিয়ে বলল,,,,
–“প্লিজ চাঁদ, থেমে যাও। তুমি রাস্তার মাঝখানে চলে গেছো।”
#চলবে,,,,,,,,
(