শেষটা সুন্দর পর্ব ১২

#শেষটা_সুন্দর
#সিজন_২
#পার্ট_১২
#নিশাত_জাহান_নিশি

*

*

–“প্লিজ চাঁদ, থেমে যাও। তুমি রাস্তার মাঝখানে চলে গেছো।”

চাঁদনী খিলখিল করে হাসছে আর বলছে,,,,,

—“থামব না। আগে বলো তুমি হেরে গেছো।”

নূর চোখ লাল করে চিৎকার দিয়ে বলল,,,,

—“এটা কোন ধরনের বাচ্চামো চাঁদ? প্লিজ কাম হেয়ার। যেকোনো সময় গাড়ি চলে আসবে।”

চাঁদনী বালিশটা ঝাপটে ধরে মুখটা গোমড়া করে বলল,,,,

—“না না না, আসব না। আগে তোমাকে হার মানতে হবে।”

নূর কিছু বলতে যাবে এর আগেই এক্টা সি.এন.জি ধেয়ে আসছে চাঁদনীর দিকে। চাঁদনী এখনো রাস্তার মাঝখানে একইভাবে নূরের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চাঁদনী মুখটা অসহায় বাচ্চাদের মতো করে রেখেছে। মনে হচ্ছে, নিরুপায় হয়ে সে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে।

নূরের চোখে মুখে ভয় আর আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। বার বার রোজের এক্সিডেন্টের কথা মনে পড়ছে ওর। চোখের সামনে বার বার ভেসে উঠছে রোজের রক্তাক্ত দেহটা। নূরের বুকটা ধুক পুক করে কাঁপছে। পুরো শরীর থেকে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে। শরীরটা কেমন অসাড় হয়ে আসছে। মুভ করার শক্তি পাচ্ছে না।

নূরের দাঁড়িয়ে থাকা দেখে চাঁদনী ঢং দেখিয়ে ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছে আর বলছে,,,,,

—“নূর ভাইয়া প্লিজ আমাকে বাঁচাও। দেখো না গাড়িটা কিভাবে ছুটে আসছে আমার দিকে। প্লিজ তুমি হার মেনে আমাকে বাঁচাও। না হয় এখনি আমি গাড়ির নিচে চাঁপা খেয়ে মরে যাবো। সদ্য বিয়ে হয়েছে আমার। আমি চাই না আমার জন্য তুমি বিধবা হয়ে যাও।”

চাঁদনীর কথা গুলো শুনে নূর হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারছে না। সি.এন.জি টা প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে। চাঁদনী চোখ বন্ধ করে নাক মুখ কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে। নূর আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না। রকেট স্পিডে ধেয়ে যেয়ে চাঁদনীকে হেচকা টান দিযে রাস্তার মাঝখান থেকে ফুটপাতে নিয়ে এলো। নূর চাঁদনীকে টান দেওয়ার সাথে সাথেই সি.এন.জি টা ভোঁ ভোঁ আওয়াজ করে ওদের ক্রস করে চলে গেলো। হাতে গুনা আর এক্টা মিনিট দেরি করলে হয়তো চাঁদনী মরা লাশ হয়ে রোডে পড়ে থাকত।

সি.এন.জির শো শো আওয়াজে চাঁদনীর হাত পা কাঁপছে। নূর চোয়াল শক্ত করে চাঁদনীকে ঝাঁকিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠল,,,,,

—“এই…. তোমার কি কোনো কমনসেন্স নেই? শুধু লকলক করে বেড়ে গেলেই হলো? আক্কেল, বুদ্ধি নামক জিনিস গুলো ও তো মাথায় থাকতে হয়। শুধুমাএ এক্টা গেইম জিতার জন্য এতো বড় রিস্কটা নিতে পারলে? বুকটা কাঁপে নি তোমার? কবে তোমার বোধ, বুদ্ধি হবে চাঁদ? এখন যদি আমি তোমাকে না বাঁচাতাম তাহলে কি অবস্থা হতো বলো তো?”

চাঁদনী নূরের চোখের দিকে তাকিয়ে আনমনা হয়ে বলে উঠল,,,,,

—“যেদিন তুমি আমাকে বউ হিসেবে মানবে ঐ দিনই আমার বোধ বুদ্ধি হবে। তাছাড়া আমি জানতাম তুমি আমাকে ঠিক বাঁচিয়ে নিবে। তুমি থাকতে আমার গাঁয়ে এক্টা আঁচ ও পড়বে না। তাই এতো বড় রিস্কটা নিলাম।”

কথাটা শোনার সাথে সাথেই নূর চাঁদনীকে ছেড়ে এক হাত পিছিয়ে গিয়ে মুখটা কালো করে নিচের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—“হয়তো এই দিনটা কখনো আসবে না চাঁদ। ভালোবাসা জীবনে একবারই আসে। সেই ভালোবাসাটা যদি এক ঘন্টার জন্য ও হয় তবে তুমি তাকে ছাড়া চোখ বন্ধ করে বিনা দ্বিধায় এক যুগ পাড় করে দিতে পারবে। দ্বিতীয় কারো প্রয়োজন পড়বে না। তাছাড়া, জীবনের প্রথম প্রেম কখনো ভুলা যায় না চাঁদ। তাই হয়তো আমি ও রোজকে কখনো ভুলতে পারব না। তুমি আমাকে ভুল বুঝো না চাঁদ। কখনো আমার মতো পরিস্থিতিতে পড়লে হয়তো বুঝবে। দোয়া করি তোমার জীবনে যেনো এমন দিন কখনো না আসে। খুব কষ্ট পাবে তুমি। তখন ইচ্ছে করবে নিজেকে শেষ করে দিতে। বেঁচে থাকার আশা হারিয়ে ফেলবে। নিজেকে কাঙ্গাল মনে হবে। জীবিত থেকে ও নিজেকে মৃত মনে হবে। ইন দিজ টাইম আই রিয়েলি ফিল দেট বেডলি।”

নূরের চোখে পানি টলমল করছে মনে হচ্ছে এখনি গড়িয়ে পড়বে। আর কিছুক্ষণ এসব নিয়ে চর্চা করলে হয়তো নূর কেঁদে কেটে পুরো বাড়িটাই ভাসিয়ে দিবে। তাই চাঁদনী কথা ঘুড়ানোর জন্য মুখটা গোমড়া করে কোমড়ে হাত দিয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—“বা রে, এখন হার মানতে হবে দেখে তুমি আমাকে দুর্বল করার জন্য এসব ইমোশনাল কথা বলছ তাই না? শুনো নূর ভাইয়া, তুমি হার না মানলে ও কিন্তু আমি জিতে গেছি। বালিশ এখনো আমার হাতে। তুমি কোনো মতেই আমার থেকে বালিশটা ছিনিয়ে নিতে পারবে না।”

চাঁদনী মুচকি হেসে এক হাত দূরত্ব কমিয়ে নূরের সামনাসামনি এসে নূরের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—-“আমি যেহেতু জিতেই গেছি তাহলে এবার শর্তটা বলে ফেলি?”

নূর অন্যদিকে তাকিয়ে মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো।

চাঁদনী বএিশ পাঁটি বের করে নূরের কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল,,,,,

—“কালই আমাদের রিসিপশান হবে। তুমি একদম না করতে পারবে না। রিসিপশানের পর তুমি আমার সাথে আমাদের বাড়িতে যাবে। একদিন থেকে পরের দিনই আমরা এই বাড়িতে চলে আসব। এটাই হলো আমার শর্ত।”

নূর বেকুব হয়ে চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে আছে। নূর ভাবতেই পারে নি, চাঁদনী এতো বড় এক্টা চাল চালবে। নূর বিড়বিড় করে মনে মনে আওড়াচ্ছে,,,,,

—“আমি তো ভেবেছিলাম শর্ত হিসেবে চাঁদ কয়েকটা চকলেট, আইসক্রীম, বার্গার আর স্যান্ডুইচ চাইবে। এখন তো দেখছি আমাকে ফুসলিয়ে ফাসলিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে বউ ভাতের এরেন্জ্ঞমেন্ট করে ফেলল। এই মেয়ে গভীর জলের মাছ। এখন থেকে মোটে ও একে বিশ্বাস করা যাবে না। যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে। ব্যবহার বাচ্চাদের মতো হলে ও মগজটা আমার চেয়ে ও ধুর্ত। উফফফ….শেষ পর্যন্ত লুজার হয়ে গেলাম। কি দরকার ছিলো সোহাগ দেখিয়ে মেয়েটাকে বাঁচানোর। বাঁচাতে গিয়েছিলাম বলেই তো হ্যারেজমেন্টের শিকার হতে হলো।”

নূরের মৌনতা দেখে চাঁদনী নূরকে হালকা ঝাঁকিয়ে বলল,,,,

—“কি হয়েছে? কিছু বলছ না কেনো?”

নূর মুখটা ফুলিয়ে বলল,,,,,,

—“আর কি বলব? ব্ল্যাকমেইল করে তো আমাকে ভালোই হাতিয়ে নিয়েছ। চিটার কাহিকা।”

কথা গুলো বলেই নূর রাগে গিজগিজ করতে করতে বাড়ির ভিতর ঢুকে গেলো। আয়মন, নীড় আর সোহানী গেইটের আড়ালে লুকিয়ে থেকে সব শুনছিলো। ওরা তিনজনই খুশিতে দাঁত কেলিয়ে হাসছে। নূর প্রস্থান নেওয়ার সাথে সাথেই ওরা তিনজন দৌঁড়ে এসে চাঁদনীর চারপাশে গোল গোল হয়ে ঘুড়ছে আর হেলেদুলে দাঁত বের করে হেঁসে হেঁসে বলছে,,,,,

—“হোয়াট এ্যা ট্যালেন্ট চাঁদ! ছোট্ট এক্টা মাথায় এওো হাজার হাজারর শয়তানি বুদ্ধি জায়গা দিস কিভাবে? তুই জাস্ট লাজাবাব।”

চাঁদনী খিলখিল করে হেসে ছোট বাচ্চাদের মতো আয়মনের কাঁধে ঝুলে তিনজনকেই উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—“নূরের বউ তো নূরের মতোই লাজাবাব হবে তাই না? চল চল সবাইকে সুখবরটা দিয়ে আসি। ইসসস কি মজা লাগছে, কাল আমার বউ ভাত। লাবু আর জায়মাকে খবরটা দিতে হবে। আমি সিউর খবরটা পেলে লাবু আর জায়মা ভোর রাতে উঠে পায়চারী করতে করতে আমাদের বাড়িতে চলে আসবে।”

কাঁধে ঝুলে থাকা চাঁদনীর দুই হাত শক্ত করে ধরে আয়মন মাথাটা এক্টু উঁচু করে চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,

—“লাবীবা বদটাকে কিছু বলার দরকার নেই। কাল এক্টু সাজু গুজু করব, মেয়েটা আমাকে দেখলেই চোখ দিয়ে গিলে খাবে।”

চাঁদনী রাগ দেখিয়ে আয়মনের গলা চেঁপে ধরে বলল,,,,,

—“তোর সাহস তো কম না। তুই আমার বেস্টিকে বদ বলিস। দাঁড়া লাবুকে ফোন করে সব বলছি। দুই জন মিলে তোর ঘাড় মটকাবো কাল। মেয়েটা তোকে পছন্দ করে বলে খুব ভাব নিচ্ছিস তাই না?”

আয়মন হু হা করে হেসে বলল,,,,,

—“তোদের দ্বারা সব সম্ভব। তোরা দুইটাই তো রাক্ষস। ভাগে পেলে সত্যি সত্যি আমার ঘাড় মটকে দিবি। তোদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। শুন, তোর বেস্টি লাবীবাকে বলে দিবি আমার পিছনে ঘুরঘুর না করে অন্য কাউকে ভালোবেসে বিয়ে করে নিতে। ওর সাথে আমার ঠিক যায় না।”

—“হয়েছে হয়েছে ভাব কম নে। এতো ভাব নিয়ে কি লাভ বল? শাহরুখ খান তো আর হতে পারবি না। হিরো আলম হয়েই ঘুরবি। গাছের আগায় উঠে খালি কা কা করবি। এজ লাইক কাউয়া।”

চাঁদনীর কথায় নীড় আর সোহানী হেসে কুটি কুটি। আয়মন মুখটা বাঁকা করে চাঁদনীকে কাঁধ থেকে নামিয়ে সোজা হেঁটে বাড়ির ভিতর ঢুকে গেলো।

চাঁদনী আয়মনের যাওয়ার পথে তাকিয়ে ভেংচি কেটে বলল,,,,,

—“এ্যা…. সত্যি কথা বললে খুব লাগে। কি সুন্দর ভাব দেখিয়ে আমাকে কাঁধ থেকে নামিয়ে চলে গেলো। ঢং দেখলে বাঁচি না বাপু।”

সোহানী চাঁদনীর ডান কানটা মলে বলল,,,,,

—“খুব পাকা পাকা কথা শিখেছিস তাই না? দিলি তো আয়মনের মুড টা নষ্ট করে! তোকে আর কখনো আইসক্রীম কিনে দিবে না।”

চাঁদনী নাক মুখ কুচকে সোহানীর ধরে রাখা কানটায় হাত দিয়ে বলল,,,,,

—“এখন আমার জামাই আছে। আমার জামাই আমাকে আইসক্রীম কিনে খাওয়াবে। ঐ আয়ুর বাচ্চাকে আমার মোটেও কাজে লাগবে না। এই… তুই আয়ুর পক্ষ না নিয়ে তোর পুচকি বোনটার পক্ষ নিতে পারিস না?”

সোহানী চাঁদনীর কানটা ছেড়ে বলল,,,,,

—“না পারি না। কারণ, আমার পুচকি বোনটা খুব বাঁদড়। যখন তখন কামড়ে দিতে পারে।”

নূর ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সব দেখছে আর সিগারেটে ফুঁক দিচ্ছে। নূরের ভেতর টা কেমন জানি জ্বলছে। শরীরটা থরথর করে কাঁপছে। মনে হচ্ছে মাথা ঘুড়ে পড়ে যাবে। তাই সে খুব সাবধানে ব্যালকনিতে পা ঝুলিয়ে বসে পড়ল।

চাঁদনী ড্রইং রুমে ঢুকে নাচতে নাচতে সোফায় বসে থাকা হাবিব আবরারের কাঁধে ঝুলে গালে এক্টা পাপ্পি দিয়ে মৃদ্যু চিৎকার দিয়ে বলল,,,,,

—-“আমি ঠিক পেরেছি আঙ্কেল। তোমার একঘুয়ে ছেলেটা রাজি হয়ে গেছে। আমি ঠিক মানাতে পেরেছি নূর ভাইয়াকে। কালই আমাদের রিসিপশান। এখন থেকেই সব এরেন্জ্ঞমেন্ট শুরু করে দাও।”

বাড়ির সবাই খুশিতে দাঁত বের করে হাসছে। হাবিব আবরার চাঁদনীকে সামনে এনে চাঁদনীর কপালে চুমো খেয়ে বলল,,,,,

—“তুই ই পারবি আমার ছেলেটাকে স্বাভাবিক করতে। আমরা সবাই তোকে বিশ্বাস করি। একদিন এই বাড়িতেই ধুমধাম করে তোদের আবার বিয়ে হবে। এরেন্জ্ঞমেন্টের সব দায়িত্ব নিবে নূর। আমরা জানি এই দিনটা শীঘ্রই আসবে।”

সাবরিনা আবরার এসে চাঁদনীকে জড়িয়ে ধরে মুচকি হেসে বলল,,,,

—-“আমার লক্ষি মেয়ে, সোনা মেয়ে। দেখি দেখি, আমার মা টা কে এক্টু আদর করে দেই।”

কথাটা বলেই সাবরিনা আবরার চাঁদনীর কপালে অসংখ্য চুমো খেতে লাগল। চাঁদনী সাবরিনা আবরারের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।

হুট করে চাঁদনীর আব্বু জামান আহমেদ হাবিব আবরারকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,

—“তাহলে এবার আমরা আসি। কাল না হয় একেবারে সেজে গুজে এসে মেয়ে আর মেয়ের জামাইকে নিয়ে যাবো।”

নীড়ের হাসি খুশি মুখটা আচমকাই চুপসে গেলো। সোহানী ও মুখটা কালো করে ফেলল। হাবিব আবরার কিছুটা এগিয়ে গিয়ে চাঁদনীর আব্বুর হাত ধরে বলল,,,,,

—-“কি দরকার জামান ভাই এক রাতের জন্য বাড়িতে যাওয়ার? কাল না হয় এক সাথেই মেয়ে আর মেয়ের জামাই নিয়ে চলে যাবেন।”

চাঁদনীর আম্মু উনাদের দুই জনের মাঝখানে এসে দাঁড়িয়ে বলল,,,,,

—-“না দুলাভাই। আমাদের ও তো এক্টা গোজ গাজ লাগবে। আমরা বরং আজ যাই।”

সাবরিনা আবরার ও চাঁদনীর আম্মুর কথায় সায় জানিয়ে বলল,,,,,

—-“হুম ওদের ও তো এক্টা গোজ গাজ লাগবে। ওরা বরং আজ যাক। কাল সকাল সকাল চলে আসবে।”

সাবরিনা আবারারের সম্মতি পেয়ে চাঁদনীর পরিবার চাঁদনীর থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো। আয়মন ও ওদের সাথে চলে গেছে। জায়মা তো অনেক আগেই চলে গেছে। ওর প্রাইভেট টিচার বাসায় এসে ওর জন্য ওয়েট করছিলো। তাই বাধ্য হয়ে তাকে যেতে হয়েছে।

সবাইকে বিদায় দিয়ে চাঁদনী কিচেন রুমে ঢুকে প্লেইটে করে ভাত আর তরকারি নিয়ে একেঁ বেঁকে সিঁড়ি বেয়ে সোজা নূরের রুমে ঢুকে গেলো। রুমে ঢুকে নূরকে দেখতে না পেয়ে চাঁদনী কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো। চাঁদনী খাবারের প্লেইটটা বেডের উপর রেখে দৌঁড়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দেখল, নূর পা ঝুলিয়ে ব্যালকনিতে বসে অনবরত সিগারেটে ফুঁ দিচ্ছে।

চাঁদনী কিছুটা বিরক্তি নিয়ে নূরের পাশে পা ঝুলিয়ে বসে পড়ল। ব্যালকনিতে বসে দূর আকাশটাকে দেখতে দারুন লাগছে। আকাশের বিশালতা মনটাকে শান্ত করে দিচ্ছে। নিবিড় লাগছে নিজেকে। মন চায় সারা দিন রাত চোখ খুলে শুধু আকাশটাকে দেখি।

চাঁদনী এক্টু ঝুঁকে নূরের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—-“নূর ভাইয়া, আমাকে ও এক্টা সিগারেট দিবে? আমি ও তোমার মতো সিগারেটের টেস্ট নিবো। নিশ্চয়ই খুব ইয়াম্মি হবে।”

নূর এতক্ষনে চাঁদনীর উপস্থিতি টের পেয়েছে। চোয়াল শক্ত করে নূর চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,

—-“আর ইউ ক্রেইজি চাঁদ। মেয়েরা এসব খায় না।”

—-“কেনো কেনো? খায় না কেনো? এই গুলো তো খুব ভালো জিনিস। নিশ্চয়ই খুব মজা লাগে। নূর ভাইয়া দাও না আমাকে, আমি ও এক্টু খাই। আমি জীবনে ও সিগারেট খাই নি। আজ খুব খেতে ইচ্ছে করছে। খুব ক্ষিদে ও পেয়েছে। সিগারেট খেয়ে না হয় পেট ভরিয়ে নিবো।”

—-“উফফফ চাঁদ। সিগারেট খেলে কারো পেট ভরে না। এটা এক্টু ও মজা না। খুব পঁচা আর বাজে জিনিস। খেলে তুমি অসুস্থ হয়ে পড়বে। স্মোকিং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।”

—-“বাজে আর পঁচা হলে তুমি এই গুলো মুখে দাও কেনো? তুমি ও তো অসুস্থ হয়ে পড়বে। শরীর খারাপ হবে।”

নূর এক্টা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,,,,,,

—-“শরীর খারাপ করার জন্যই তো আমি এসব খাই। বেঁচে থাকার ইচ্ছে যখন হারিয়ে যায়, তখন আর শরীরের দিকে খেয়াল থাকে না। মনে হয় যে, মরলেই বাঁচি। অন্তত গভীর কষ্ট গুলো বুকে নিয়ে বেড়াতে হবে না।”

হুট করে চাঁদনী নূরের হাত থেকে সিগারেটটা ছিনিয়ে নিয়ে মুখে পুড়ে চোখ দুটো বন্ধ করে নাকটা বাম হাত দিয়ে চেঁপে ধরে সমানে ফুঁ দিতে লাগল। ধোঁয়া বের হওয়ার সব রাস্তা বন্ধ। চাঁদনীর চোখ থেকে টলটলিয়ে পানি পড়ছে। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ মুখটা লাল বর্ণ ধারণ করেছে। চাঁদনী এখনো সিগারেটে ফুঁ দিচ্ছে। কিছুতেই সে নাক, মুখ খুলছে না। নাক, মুখ দিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া বের হতে পারছে না বলে বিষাক্ত ধোঁয়া গুলো ডিরেক্ট শরীরের ভিতর ঢুকে যাচ্ছে। যার কারণে চাঁদনীর শ্বাস কষ্ট শুরু হয়ে গেছে।

নূর আগ পাছ না ভেবে চোখ লাল করে চাঁদনীর গালে বসিয়ে দিলো এক চড়। চড় দেওয়ার সাথে সাথেই সিগারেটটা চাঁদনীর মুখ থেকে বের হয়ে সোজা নিচে পড়ে গেলো। চাঁদনী হাত দিয়ে মুখ চেঁপে রেখেছে। কিছুতেই সে ধোঁয়া গুলো মুখ থেকে বের হতে দিচ্ছে না। চোখ মুখ খিঁচে রেখেছে সে।আস্তে আস্তে চাঁদনীর মুখটা টগবগে লাল রূপ ধারন করছে।

নূর কিছুটা উওেজিত হয়ে চাঁদনীর দুই কাঁধে হাত দিয়ে চাঁদনীকে জোরে জোরে ঝাঁকিয়ে বলল,,,,,

—-“চাঁদ প্লিজ মুখটা খোলো। শ্বাস ফেলে মুখ দিয়ে ধোঁয়া ছাড়ো। ধোঁয়া গুলো ভিতরে ঢুকে তোমার হার্টকে দুৃর্বল করে দিবে। সহ্য করতে পারবে না তুমি। প্লিজ চাঁদ মুখ খোলো।”

চাঁদনী এখনো একই অবস্থায় আছে। কিছুতেই সে চোখ, মুখ খুলছে না। চাঁদনীর ফুটন্ত মুখটা নেতিয়ে আসছে। চাঁদনীর বিবর্ণ মুখটা দেখে নূরের বুকটা কেঁপে উঠল। নূর চোখে এক রাশ জল নিয়ে চাঁদনীকে বুকের ভিতর চেঁপে ধরল।

চাঁদনী এতক্ষনে শান্তি হয়েছে। মুখ খুলে সে নিশ্চিন্তে ধোঁয়া ছাড়ছে। মুক্তভাবে শ্বাস নিচ্ছে।চাঁদনী চোখ খুলে নূরের টি শার্ট আঁকড়ে ধরে ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কেঁদে বলল,,,,

—“মানুষ সব কষ্ট সহ্য করতে পারে নূর ভাইয়া। কিন্তু ভালোবাসার কষ্ট সহ্য করতে পারে না।”

#চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here