শ্রাবণ_দিনের_বৃষ্টিতে পর্ব শেষ

#শ্রাবণ_দিনের_বৃষ্টিতে
#পার্ট_১৪+অন্তিম পর্ব
#Writer_Liza_moni

সেদিনের সেই চড়ের শোধ তুলবো আমি।কী ভাবছেন কী উনি?আমি সব ভুলে গেছি? উঁহু আমি কিচ্ছু ভুলি নাই।

ফুল দিয়ে সাজানো বিছানায় বসে বসে এই সব বিড়বিড় করছে আয়রা। কিছুক্ষণ আগেই পরিবারের সবাই মিলে এক প্রকার জোর করে বিয়ে করিয়ে দেয় আয়রা আর প্রান্তর।

প্রান্ত বিয়েতে রাজি ছিল না।
সবার উপরে খুব বিরক্ত সে।

রুমের দরজা খোলার শব্দ পেয়ে আয়রা নড়ে চড়ে বসলো।প্রান্তর গায়ে একটা সাদা পাঞ্জাবি।আর আয়রার পরনে প্রান্তর মায়ের বিয়ের শাড়ি।

রাত প্রায় বারোটার কাছাকাছি।
প্রান্ত দরজা বন্ধ করে আয়রার কাছে গিয়ে বললো,,

এই পিচ্চি তুমি বিয়েটা আটকালে না কেন?

আয়রা হাই তুলতে তুলতে বললো,,
হারিয়ে ফেলার আগে নিজের করে নেওয়াটা খুবই দরকার ছিল।

আমি তোমার ছিলাম কবে যে হারিয়ে ফেলবা?

শ্রাবণ দিনের বৃষ্টিতে যেদিন চড় মেরেছিলেন না,,
সে দিন থেকেই আপনি আমার হয়ে গেছেন।🥱

ফেনীতে আসার দরকার ছিল কোনো?

আমি আসছি নাকি? আপনার আম্মু আব্বু, আর আমার আম্মু আব্বুই তো নিয়ে আসছে।এক দিকে ভালোই হলো,, আমি আবার ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করি।

আয়রার খামখেয়ালি কথা বার্তায় প্রান্ত প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছে।

বিছানার ঐ পাশে দেওয়ালের দিকে গিয়ে ঘুমাও। আমার জায়গা খালি করো। ঘুম পাচ্ছে আমার।

আয়রা ত্যাড়ামি করে প্রান্তর জায়গায় শুয়ে পড়লো।

প্রান্ত ভ্রু কুঁচকে আয়রার দিকে তাকিয়ে আছে।
কী বলছি শুনতে পাও নাই?

Don’t disturb me,,,
আমি ঘুমাবো।
আয়রা চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়।

প্রান্ত রেগে গিয়ে আয়রার হাত ধরে টান মেরে শোয়া থেকে উঠে বসালো।

তোমাকে তো আমি ভদ্র মেয়ে মনে করতাম।আর সেই তুমিই এমন অভদ্রতামি করছো কেন?

আমি আবার কী করলাম?

আমার মাথা করছো।ঐ পাশে গিয়ে ঘুমাও। নাইলে তোমার খবর আছে।

আয়রা দুষ্টুমি হাসি দিয়ে বলল
কয়টার খবর শুনি?

ধ্যাত।প্রান্ত বিরক্ত হয়ে বেলকনিতে চলে গেল। সেখানে রাখা মোড়ায় বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
আজ নাকি আমার বাসর রাত 😂😂

আয়রা ও বিছানা থেকে নেমে প্রান্তর কাছে চলে গেল।
জামাই আমার ভয় পাইছে।

প্রান্ত আয়রার দিকে না তাকিয়ে কিছু না বলে মনে মনে হেসে বললো,,পাগলে বকবক করতে করতে নিজেই চুপ হয়ে যাবে।

আয়রা সেই কখন থেকে প্রান্তর পাশে দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে আর বকবক করে যাচ্ছে।প্রান্তর কোনো ভাবান্তর নেই।সে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে তো আছেই।
.
.
আয়রার মা বাবা কে ফেনীতে নিয়ে আসে প্রান্তর মা। আয়রা কে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে রাজি ছিলেন না তারা।প্রান্তর মা আর বাবার অনেক অনুরোধে না করতে পারেন নাই।

আর আয়রা ও রাজি ছিল এই বিয়েতে। শুধু প্রান্ত এখন বিয়ে করতে চায় নাই।আরো বছর খানেক পর বিয়ের ইচ্ছে ছিল তার।

.
আয়রা অনেক বকবক করে এক পর্যায়ে অভিমান করে রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।প্রান্ত হাসে। মেয়েটা আসলেই পিচ্চি।প্রান্ত ও রুমে গিয়ে
ঘুমন্ত আয়রার কপালে চুমু খেয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে।

.
.
সকালে আয়রার ঘুম ভাঙ্গলে নিজেকে কারো বুকের মাঝে অনুভব করে। মাথা তুলে দেখে প্রান্ত তার দিকে চেয়ে আছে আর মুচকি হাসছে।

গুড মর্নিং বউ।

প্রান্তর কথায় যেনো আয়রা বেশ অবাক হলো।রাতে বলে বিয়েতে রাজি ছিল না আবার এখন গুড মর্নিং বউ ও বলছে?এত পরিবর্তন?

আয়রা শোয়া থেকে উঠে বসলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ৮টা বাজে। অনেক রাত করে ঘুমানোর ফলে এত বেলা হয়ে গেলো ঘুম থেকে উঠতে।

আয়রার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে প্রান্ত। শাড়িটা সরে গিয়ে কোমরের গাঢ় কালো তিলটা দেখা যাচ্ছে।
প্রান্তর চোখ সেই দিকে।

ক্রাশ খাইছি।

আয়রা ভ্রু কুঁচকে প্রান্তর দিকে তাকিয়ে বললো কার উপর?

তোমার কোমরের ঐ তিলটার উপর।প্রান্তর কথায় আয়রা হকচকিয়ে গেল। লজ্জা পেয়ে শাড়ি দিয়ে কোমর ঢেকে ফেললো। অতিরিক্ত অসভ্য তো লোকটা।

আয়রা কে লজ্জা পেতে দেখে উচ্চ শব্দে হেসে উঠলো প্রান্ত।
আয়রা বিরক্ত হয়ে ওয়াস রুমে চলে গেল ফ্রেশ হওয়ার জন্য।

মুখ ধোয়ার সময় ওয়াস রুমের আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে আয়রা।
সময়ের ব্যবধানে আজ সে একজন বিবাহিত মেয়ে। অথচ গতকাল এই সময় ও সে অবিবাহিত মেয়েদের তালিকায় ছিল।
.
.
সেই কখন ওয়াস রুমে গেছেন ম্যাডাম,এখনো আসার নাম নেই।বলি সারা দিন কী ওখানেই বন্ধি থাকবেন?

আয়রা ওয়াস রুমের দরজা খুলে মাথাটা বের করে বলে মাত্র ১০ মিনিট হইলো।
শুনুন,,
আমার জন্য একটা শাড়ি নিয়ে আসেন। আমি গোসল করবো।

প্রান্ত অবাক হয়ে বললো,,
গোসল করবা মানে? আমাদের মাঝে কিছু হইছে নাকি যে গোসল করবা?

আয়রা শয়তানি হেসে বললো,,
হয় নাই,, ভবিষ্যতে হবে।

আয়রার কথা শুনে প্রান্ত ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল।আর কী বলবে সে? মেয়েটা যে হাটে হাঁড়ি ভাঙ্গতে ভালোই পারবে তা ভালো করেই বুঝতে পারছে সে।

এই এলিয়েন?
যান আমার জন্য শাড়ি নিয়ে আসেন।

আমি কোথায় পাবো শাড়ি?

আপনার আম্মুর কাছ থেকে নিয়ে আসেন।
বলে আয়রা দরজা বন্ধ করে দিয়ে হাসতে লাগলো।

প্রান্ত মায়ের কাছে যাওয়ার সময় দেখলো ড্রইং রুমে কিছু প্রতিবেশী আন্টি বসে আছেন।আর পান চিবুচ্ছেন।

বিয়ে হয়ে গেছে শুনতে দেরী আসতে দেরি নাই এই মহিলাদের। পাড়ার সিসি ক্যামেরা।প্রান্ত কে দেখতে পেয়ে এক ভদ্র মহিলা বললেন,,

রাতে ঘুম হয়েছে প্রান্ত?

সিরিয়াসলি ভাই? এইগুলো কেমন কথা?এই মহিলারে না আমি আন্টি ডাকি? তার মানে আমি তার ছেলের মতো।আর তিনি আমারে এই সব জিগায়?দিন দুনিয়া শেষ হইয়া যাইতাছে।

হ্যাঁ আন্টি। ঘুম হয়েছে। না হওয়ার কিছু নাই।

তো কত দিনের প্রেম তোমাদের?

মহিলার কথায় প্রান্ত প্রচন্ড বিরক্ত হলো। জীবনে একটা প্রেম ও করলাম না।আর আমি করমু প্রেম করে বিয়ে?

জন্মের আগে থেকেই প্রেম শুরু করছিলাম আন্টি। এখন ২৫-২৬ বছর হচ্ছে।
.

প্রান্ত আর সেখানে না দাঁড়িয়ে রান্না ঘরের দিকে গেল।

প্রান্ত কে রান্না ঘরে আসতে দেখে প্রান্তর মা প্রিয়াকে বললো,,
আমার রুমের বিছানার উপর আয়রার জন্য একটা শাড়ি, ব্লাউজ, পেটিকোট,চুড়ি
রাখা আছে।প্রান্ত কে সাথে নিয়ে এই সব আয়রার জন্য পাঠিয়ে দে।

প্রান্ত কিছু বলতে যাবে তার আগেই প্রিয়া বললো,
আমরা জানি ভাইয়া। তুই এখন কী বলবি?আয় আমার সাথে। আমি ভাবির সব প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে দিচ্ছি।
.
.
প্রান্ত শাড়ি নিয়ে ওয়াস রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
আয়রা দরজা খোলো।আর এই শাড়ি নিয়ে আমাকে রক্ষা করো।

আয়রা ওয়াস রুমের ভেতর থেকে চিল্লিয়ে বললো,,
আপনি এখন কোনো একজনের হাসব্যান্ড।সো আপনার এখন অনেক দায়িত্ব পালন করতে হবে। আর দশ মিনিট অপেক্ষা করুন।

প্রান্ত কপালে হাত দিয়ে বিছানায় এসে বসে পড়লো।মন মনে বললো,,

কেউ যদি আমার কাছে বিয়ে সম্পর্কে জানতে চায় তাহলে আমার উত্তর হবে,,
জীবনে ও বউ নামক প্যারা ঘাড়ে নিশ না ভাই। জীবন ত্যানা ত্যানা করে দিবে। প্রথম দিনেই
আমার জীবন শেষ।
.
.
সদ্য গোসল করে বের হওয়া,বেগুনি রঙের শাড়ি পরা,ভেজা চুলের আয়রা কে দেখে মনের মাঝে ঘোর নেশা জাগে প্রান্তর।মন যেনো বার বার চিৎকার করে বলছে,,
এই মেয়েকে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস অবদি ভালোবাসা যাবে।
প্রেম নেশা জেগে উঠে প্রান্তর অবচেতন মনে।

💜
প্রায় বছর দুয়েক পরের কথা।
আয়রা নীল শাড়ি পড়েছে।আর প্রান্ত হলুদ পাঞ্জাবী।আজ তাদের হিমু রুপা সাজার ইচ্ছে হয়ে ছিল।
বাইরে ঝুম বৃষ্টি। শ্রাবণ দিনের বৃষ্টি। শ্রাবণের আজ পাঁচ তারিখ। এই দিনেই আয়রা আর প্রান্তর দেখা।প্রান্তদের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে রাস্তার পাশে একটা কদম ফুল গাছ আছে। অনেক ফুল ফুটেছে সেই গাছে।

আয়রা বায়না করলো,,
এই বৃষ্টির মধ্যে প্রান্ত কে তার জন্য এক গুচ্ছ কদম ফুল নিয়ে আসতে হবে।

এই দুই বছরে আয়রা কে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছে প্রান্ত।

ঝুম বৃষ্টির মধ্যে গেল ফুল আনতে।প্রান্ত যাওয়ার দেরী আয়রা ছাদে চলে গেল বৃষ্টিতে ভিজবে বলে।

ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে আয়রা। তার প্রান্ত আসছে।হাতে এক গুচ্ছ কদম ফুল। বৃষ্টিতে ভিজে হলুদ পাঞ্জাবী টা গায়ের সাথে লেপ্টে আছে।নিচ থেকেই আয়রা কে ছাদে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো প্রান্ত।ছাদে গিয়ে ঝুম বৃষ্টির মধ্যে আয়রার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বললো,,

আমি কখনো প্রেম করিনি। কোনো একজন কে প্রচন্ড ভালো বাসবো বলে। আমি কখনো কোনো মেয়ের হাত ধরিনি। কোনো একজনের হাত ধরে বৃদ্ধ হবো বলে। আমি কখনো কারো মায়ায় আবদ্ধ হইনি। কোনো একজনের মায়ায় আবদ্ধ হবো বলে।
আর আমার সেই কোনো একজন টা হলো আয়রা আরফি। আমার সারা জীবনের সাথী। ভালোবাসি বউ।

আয়রা গাল ফুলিয়ে মুখ টা অন্য দিকে করে ফেলে।

প্রান্ত বসা থেকে উঠে আয়রার কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো,,
কী হয়েছে বউ?

কী হয়নি বলুন?
এমনি এক শ্রাবন দিনের বৃষ্টিতে আপনি আমায় কি জোরে চড়টাই না মেরে ছিলেন। আমি কী ভুলে গেছি নাকি?
এক রাশ অভিমান নিয়ে বললো আয়রা।

প্রান্ত আয়রার কোমর জড়িয়ে টান মেরে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে আয়রার কানে কানে বললো,,,

আজকের এই শ্রাবণ দিনের বৃষ্টিতে আদর দিয়ে আমি আমার বউয়ের সব অভিমান ধুয়ে দিবো।

💝সমাপ্ত 💝

(আসসালামুয়ালাইকুম।
অসুস্থতার জন্য প্রতিদিন গল্পটা কনটিনিউ করতে পারছিলাম না।তাই জলদি শেষ করে দিলাম।পুরো পুরি সুস্থ হলে নতুন গল্প নিয়ে আবারো ফিরে আসবো। আল্লাহ হাফেজ 🙂)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here