শ্রাবণের ধারা পর্ব -০৫

#শ্রাবণের_ধারা ~(৫ম পর্ব)~

#লেখনীতে_ওয়াসেকা_তাবাসসুম ~

~আবিরের সাথে দৃষ্টির মিলন ঘটতেই হৃদয় স্পন্দন থেমে গেল। কিছু বলতে যাবো তখনই আবির ইশারা করে চুপ থাকতে বললো। এদিকে আমার অদ্ভুত রকম অ*স্বস্তিকর বোধ হচ্ছে। চাঁদের কিরণ আরো বেড়ে গেলো, একে অপরকে স্পষ্ট দেখতে পারছি। আবিরের চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে, মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম। এদিকে আমার উপরে যেন ঘামের বর্ষণ হচ্ছে। হয়তো আমার এই অ*স্বস্তি আবির বুঝতে পারলো আমার দিকে তাকিয়ে আবির ধীর গলায় বলে উঠলো,

— ভয় পেয়ো না। আমাদের কেউ দেখে ফেললে অনেক বড় বি*প*দ হয়ে যাবে। একটু শান্ত থাকার চেষ্টা করো।

আবিরের কথায় কিছুটা সাহস পেলাম। আবির আমার থেকে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো তারপর পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করলো। আমিও একটু এগিয়ে গেলাম। আশেপাশে তো কেউ নেই, তাহলে পায়ের আওয়াজ এলো যে? আবির আরো এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলার চেষ্টা করলো তবে বি*ফলে গেল তার চেষ্টা।

— দারোয়ান এসেছিল মনে হচ্ছে, এসে একদম নিজের কাজ করে গেছে। দরজা বাইরে দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে।

— কি? এখন কি করবো আমরা? এখান থেকে বের হবো কি করে?

— ভাবতে দাও। তার আগে আমি নিজের কাজটা ভালো মতো করে নেই।

এই বলে আবির আবার ফাইলটা হাতে নিল। পুরো মনোযোগ ফাইলের দিকে, এতো মনোযোগ দিয়ে যে কি দেখছে আল্লাহ ভালো জানেন। এই ছেলের ক*র্ম*কা*ণ্ড বুঝি না। হঠাৎ খেয়াল করলাম আবিরের ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি। এই প্রথম ছেলেটাকে হাসতে দেখলাম তাও পুরোপুরি হাসেনি। আবির সব আবার জায়গা মতো রেখে দিল। ধীরে সুস্থে এগিয়ে এলো আমার দিকে তারপর বললো,

— চলো যাওয়া যাক।

— যাবো কিভাবে? দরজা তো বন্ধ।

— জানালা দিয়ে যাবো।

— হ্যা!!!??? তোমার মাথা মু*ন্ডু ঠিক আছে তো? একবার গেট টো*প*কা*চ্ছো একবার জানালা! কি শুরু করলে?

— আস্তে কথা বলো এমনিতেই তোমার জন্য ঝা*মেলায় পরছি বারবার।

— ওহ্ তাই? তাহলে আমাকে এখানে ধরে আনলে কেন? আমি বলেছিলাম তোমার সাথে আসার কথা?

— তোমাকে এমনি এমনি যেতে দিতাম? তুমি যে বাইরে গিয়ে কাউকে বলবে না তার কোনো গ্যারেন্টি ছিল?

— এখনো তো চাইলে আমি বাইরে গিয়ে বলতে পারি।

— হ্যা বলতেই পারো তবে এতে তোমার স*ম*স্যা হবে।

— মানে? কি বলতে চাচ্ছো?

— দেখো তুমিও আমার সাথে ভার্সিটির ভিতরে ঢুকেছো, এখন বাইরে গিয়ে যদি এই বিষয়ে কাউকে কিছু বলো তাহলে তোমাকেও ঝা*মে*লা ঘাড়ে নিতে হবে।

— তোমার কাছে প্রমাণ আছে?

— আমাকে যে জিজ্ঞেস করছো, নিজের কাছে আছে কি?

মূহুর্তের মধ্যেই নিজের কথায় নিজেই বো*কা বোনে গেলাম। সত্যি তো আমার কাছে কোনো প্রমাণ নেই, আর আমিও তো আবিরের সাথে ভার্সিটিতে চুপিচুপি এসেছি এটাও তো মিথ্যা না। ছেলেটা তো ভালো মতো আমাকে ফা*সি*য়ে দিল! আবির তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

— এত চিন্তা বাদ দাও। আগেই বলেছি আমি প্ল্যান অনুযায়ী কাজ করতে পছন্দ করি। আমার কাজ হয়ে গেছে এখন এখান থেকে বের হতে হবে।

ভেবে দেখলাম আসলেই কোনো লাভ নেই তার থেকে এখান থেকে বের হওয়াটা বেশি জরুরি। টিচার্স রুম নিচতলায় হওয়ার কারণে এখান থেকে বের হতে সুবিধাই হবে আর জানালাটাও বড়, একটা মানুষ অনায়াসে বের হতে পারবে। এতো কিছু ভাবছি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এরমধ্যে দেখি আবির সাহেব ওলরেডি ওই পাড়ে গিয়ে ফোন ঘাঁ*টা*ঘাঁ*টি করছে। আমার দিকে না তাকিয়ে বলা শুরু করলো,

— এই ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে একটু জানালা দিয়েও বের হও। এতোক্ষণ এখানে থাকা যাবে না।

আমি ধীরে সুস্থে এগিয়ে গেলাম, তারপর জানালা দিয়ে বে*রও হয়ে গেলাম। আবির খালি একবার আমার দিকে তাকিয়ে আবার ফোনে মনোযোগ দিল। এই ছেলে সারাদিন ফোনে করে কি?

——————–

নির্জনতায় হেঁটে চলেছি দুজন। আবির নিজের ফোনেই ব্যস্ত এখনো। হাঁটতে হাঁটতে ভার্সিটির পিছনের গেটে পৌঁছালাম তারপর আবিরকে বিদায় জানিয়ে চলে যাচ্ছিলাম। এমন সময়ে পিছন থেকে ডাক এলো,

— ধারা একটু দাঁড়াও।

— হ্যা কিছু বলবে?

— না মানে আজকের বিষয়টা আশা করি আমাদের মাঝেই থাকবে। এই বিষয়ে বাইরে কাউকে বলবে না আশা করি, তোমার উপর এইটুকু বিশ্বাস করতে পারি?

আমি মুচকি হেসে উত্তর দিলাম,

— জ্বি। এই বিষয়ে কাউকে বলবো না।

— ধন্যবাদ। আরেকটা কথা ছিল।

— বলো।

— আমি জানি আজ কয়েকবার তোমাকে অ*স্বস্তিকর অবস্থায় পরতে হয়েছে। তার জন্য আমি ক্ষমা চাইছি। সবগটাই পরিস্থিতির জন্য হয়েছে আশা করি বুঝবে।

— আমি বুঝতে পারছি, তোমাকে এতো চিন্তা করতে হবে না।

— তারপরেও বলছি, আমাকে ভুল বুঝ না। তোমাকে ইচ্ছা করে অ*স্ব*স্তি*ক*র পরিস্থিতিতে ফেলি নাই।

আমি আর কিছু বললাম না। খালি মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক বার্তা দিয়ে চলে আসলাম। আবির আমার যাওয়ার পানে চেয়ে আছে, এটা বুঝতে পারলাম। আর পিছনে ঘুরে তাকাইনি। সোজা চলে এলাম মে*ই*ন রোডে কারণ এখন রিকশা নিয়ে সোজা বাসায় যেতে হবে।

কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর রিকশা পেয়েও গেলাম। অতঃপর রিকশায় উঠে পড়লাম বাসার উদ্দেশ্যে। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো, ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম বাবা ফোন দিয়েছে। তাড়াতাড়ি করে রিসিভ করলাম,

— হ্যালো বাবা?

— ধারা কোথায় তুই?

— এইতো রিকশায় আছি, চলেই এসেছি।

— এতো দেরিতে রিকশায়?

— আসলে ভার্সিটির ওইদিক দিয়ে আসার সময় এক ফ্রেন্ডের সাথে দেখা হয়ে গেছিলো। ওর সাথেই ছিলাম এতোক্ষণ।

— ওহ্ আচ্ছা। ঠিক আছে সা*ব*ধা*নে এসো।

তারপর ফোনটা কেটে দিলাম। অল্পক্ষণের মধ্যেই বাসায় চলে এলাম। বাসায় এসে সোজা নিজের রুমে চলে গেলাম। আম্মুকে আগেই বলে দিলাম রাতে খাবো না, জিনিয়াদের ওইখান থেকেই খেয়ে এসেছি।

রাত ১২টা বাজে। জানালার পাশে বসে আজকের ঘ*টে যাওয়া ঘটনাগুলো ভাবছি। এতো কিছু ঘ*টে যাওয়ার পরও আবিরের প্রতি একটা শ্রদ্ধা কাজ করছে। ওর কাছে আজকে পরিস্থিতিগুলো সুযোগ হয়ে উঠতে পারতো তবে আবির হয়তো তা চায় নি। শে*ষে সবটা পরিস্কার করে দিলো যাতে ওকে ভু*ল না বুঝি। ছেলেটা অদ্ভুত হলেও খা*রা*প না।

হঠাৎ মনে পড়ল ফাইলটার কথা। আচ্ছা ফা*ই*লে ছিলো কি? আর ওই সময়ে ওই ফা*ই*লের জন্য আবির এইভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে গেল ভার্সিটিতে? তাহলে কি ওইটা এতোই জরুরি?

——————

ঘুম থেকে উঠে দেখি দেরি হয়ে গেছে। এতোক্ষণ পড়ে পড়ে ঘুমালাম কেউ ডাক ও দিল না। এদেরকে নিয়ে পারাও যায় না। কি আর করার রেডি হয়েই ম্যারাথনের দৌড় দিলাম। হঠাৎ মনে পড়ে গেল আবিরের কথা, যেদিন ওর সাথে প্রথম দেখা হয় এই কথাই বলেছিল আমাকে। আমি না কি ম্যারাথনের থেকে ভুল করে ভার্সিটিতে ঢুকে পড়েছি।

ক্যাম্পাসে গিয়ে গতি একটু কমিয়ে দিলাম। হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বুঝলাম এখনো সময় আছে তাই একটু ধীরে সুস্থেই যাই। ক্যাম্পাসে নিশ্চিন্তে হাঁটছি এর মাঝেই স্যারের সাথে দেখা হয়ে গেল।

— আরেহ ধারা ভালো হয়েছে তোমার সাথে দেখা হয়ে গেল।

— জ্বি স্যার বলুন।

— আজকে তোমাদের ক্লাসে যাবো সময় বুঝে। একটা বিষয়ে সবাইকে জানানোর আছে।

— কি বিষয়ে স্যার?

— সেটা না হয় ক্লাসে এসে একেবারেই সবাইকে বলবো। তুমি ক্লাসে যাও এখন।

— আচ্ছা স্যার।

আবার হাঁটা শুরু করলাম, হঠাৎ চোখ আ*ট*কে গেল কিছুতে। দূরে আবিরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম তবে একা নয় আবিরের সাথে আরেকজন আছে। দেখে মনে হচ্ছে খুব গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করছে দুজনে। যেই ছেলে কি না কারো দিকে তাকায় না পর্যন্ত সেই ছেলে একজনের সাথে দাঁড়িয়ে কি সি*রি*য়া*স ভাবে কথা বলছে। আমি ওদের পাশ কা*টি*য়ে চলে যেতে নিলাম তখনই কেউ ডাক দিল।

— ধারা? এই যে শুনছেন?

— আমাকে বলছেন?

— তাহলে আপনিই ধারা?

— জ্বি আমিই কিন্তু আপনি কে?

— আমি তো আবিরের পার্টনার।

আবির আর চোখে তাকালো ছেলেটার দিকে যেন কি না কি বলে দিয়েছে। ছেলেটার আবিরের দিকে তাকিয়ে আবার আমার দিকে তাকালো,

— আবিরের ফ্রেন্ড আমি। ভার্সিটিতে নতুন এসেছি।

— কিহ? আপনিও?

— আপনিও মানে?

— মানে আবিরের মতো আপনিও এই এতো গুলো মাস পর কি আকাশ থেকে পড়লেন?

— অ্যা? আকাশ থেকে পড়তে যাবো কেন?

— তাহলে এতো দিন পর কি করতে এসেছেন?

— আহা আমি তো এসেছি আবিরের জন্য।

ওইদিকে আবির কিছুই না বুঝার মতো দাঁড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে ওকে কেউ জোর করে দাঁড় করিয়ে রেখেছে, পারলে এখনই পা*লা*বে। আমি এবার জিজ্ঞেস করলাম,

— তো ওর (আবির) বন্ধুবান্ধবও আছে?

— থাকবে না কেন? ও কতো ফেমাস জানো?

— তুই চুপ থাকতে পারিস না? (আবির)

— এমন কি বললাম সত্যিই তো বললাম। তুই তো…

— চুপ! মুখ বন্ধ রাখ আর চল এখান থেকে। (আবির)

— কিন্তু মিস.ধারার সাথে তো পরিচয়ই হলো না। ওয়েল আমার নাম রাদিফ।

— ওহ্ আপনার সাথে দেখা করে ভালো লাগলো।

— আমারও ভালো লা………

আর কিছু বলতে না দিয়ে রাদিফকে ধরে নিয়ে গেল আবির। এইদিকে ওদের কা*ন্ড দেখে হা করে দাঁড়িয়ে আছি।

চলবে……………….^-^

[কেমন আছেন পাঠকগণ? মনে হচ্ছে গল্পে রিচ কমে যাচ্ছে •_•।গল্প কি আপনাদের ভালো লাগছে না?কিছুই বুঝতে পারছি না। যাই হোক লেখিকা এবং গল্পের সাথেই থাকবেন। হ্যাপি রিডিং ^_^]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here