#সন্ধ্যামালতী (১৭)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
________________
পুরো একদিন বাদল, বকুল আর তাদের পরিবার সন্ধ্যাকে নিজেদের গ্রাম সহ আশে পাশের গ্রামে খুঁজেও পায় না। বকুল আর বকুলের মা রীতিমতো কান্না শুরু করেছে। সারা রাতও তারা খুঁজেছে। বাদলের মুখ থমথমে হয়ে আছে। বকুলের মা কান্না করতে করতে বলে,
‘মা মরা মাইয়াডার না জানি কোন বিপদ হইলো! আল্লাহ কেন যে মাইয়াডার উপরে এতো বিপদ ফালাই!’
বাদল তখনো চুপ। বকুল আস্তে করে তার পাশে এসে বসে বলে, ‘ভাইয়া সন্ধ্যার সত্যি কোনো বিপদ হয়নি তো?’
বাদল শান্ত গলায় জবাব দেয়, ‘বুঝতেছি না। পুরো গ্রাম, পাশের গ্রাম খুঁজে শেষ করেছি অথচ সন্ধ্যাকে খুঁজে পাইনি। বুঝতেছি না কিছু।’
তারপর দুজনেই চুপ করে গেলো। বাদল কিছুক্ষণ ভেবে বলে, ‘সন্ধ্যা কোথাও চলে যায়নি তো!’
কথাটা যেনো বিস্ফোরণ ঘটালো। পরিবেশ মুহুর্তেই নিঃস্তব্ধ হয়ে গেলো। বকুলের মায়ের কান্নাও থেমে গেছে। তিনি অবাক কন্ঠে বলে, ‘মাইয়াডা একা একা কই যাইবো! পাগলের মতো কি কস এগুলান?’
‘ঘরের ভেতর থেকে ‘ও’ উধাও কেমনে হলো? ওকে কেউ জোড় করে নিয়ে গেলে তো বকুল বুঝতো তাই না!’
বাদলের কথায় যুক্তি থাকলেও কেউ তা মানতে চাইলো না। বাদলও দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপ করে রইলো। কোনো রকম কথা বাড়ালো না। সে সময় দৌড়ে আসে রিনি। সরাসরি বাদলের কাছে এসে দাঁড়ায়। মেয়েটাকে কাঁদতে দেখে আর হঠাৎ করে আসতে দেখে সবাই খানিকটা চমকায়। বাদল কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই রিনি ব্যস্তভাবে ভাঙা গলায় বলে,
‘বাদল ভাই বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে! আপনি প্লিজ বিয়েটা আটকান।’
থতমত খায় বাদল, বকুল। বাদল একবার বকুলের দিকে তাকিয়ে রিনির হাত চেপে ধরে। তারপর বাড়ি থেকে বের হয়ে কিছুটা দুরের বাগানে গিয়ে দাঁড়ায়। চাপা রাগ দেখিয়ে বলে, ‘পাগল হয়ে গেছো নাকি! কি হয়ছে তোমার?’
রিনি ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে কিন্তু তাতে বিশেষ কোনো লাভ হয় না। কান্না থামে না। বাদল কিছুটা সময় দেয় রিনিকে। শান্ত গলায় বলে,
‘আচ্ছা কান্না থামাও আর বলো কি হয়ছে!’
রিনি কিছুক্ষণ পর শান্ত হয়। তারপর ছলছল দৃষ্টিতে বাদলের দিকে তাকিয়ে আকুতি ভরা কন্ঠে বলে, ‘আমাকে বিয়ে করবেন বাদল ভাই! আমি আপনাকে ছাড়া অন্য কাউকে যে মানতে পারবো না। প্লিজ বাদল ভাই বিয়ে করবেন আমাকে!’
আয়াশ হসপিটাল থেকে আসার পর সেই যে রুমে ঢুকছে আর বের হওয়ার নাম নেই। এদিকে আফরা সন্ধ্যাকে নিয়ে ব্যস্ত। সে সন্ধ্যার সাথে মন খুলে গল্প করছে এদিকে বেচারী সন্ধ্যা নতুন মানুষের মধ্যে এত বেশি মিশতে পারতেছে না।আফরা হয়তো বুঝলো সন্ধ্যার বিষয়টা তাই সে নিজের কথা বলা কমিয়ে সন্ধ্যাকে নানান বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে থাকে। সন্ধ্যাও হা হু তে উত্তর মিলাচ্ছে। এক পর্যায়ে রান্নার সময় হয়ে গেলে সন্ধ্যাকে বসতে বলে তিনি চলে গেলেন রান্নাঘরে। আফরা যাওয়ার পর সন্ধ্যা আরো একা হয়ে গেলো। পায়ে ব্যাথার জন্য নিজে হেঁটে যেতেও পারবে না। তাই চুপচাপ নিজের রুমে বসে থাকে। একবার এদিক তো আরেকবার ওদিক তাকায়। দেয়ালে টাঙানো একটা ছবির ফ্রেমে চোখ আটকে যায় সন্ধ্যার। সেখানে একটা ২২/২৩ বছরের মেয়ের সাথে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে আরেকটা পিচ্চি ছেলে। মহিলাটির মুখে প্রচুর মায়া। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেই আর চোখ সরাতে ইচ্ছে করবে না। সন্ধ্যাও ঠিক কতক্ষণ তাকিয়ে ছিলো জানা নেই। ধ্যান ভাঙে আয়াশের কন্ঠে। আয়াশ গম্ভীর কন্ঠে বলে,
‘ওদিকে কি দেখছো?’
সন্ধ্যা মৃদু কন্ঠে আওড়ায়, ‘ওই মেয়েটা আর ছোট ছেলেটা কে দেখছি।’
আয়াশ পেছনে তাকিয়ে একবার ছবিটা দেখে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে, ‘তুমি কিছু খেয়েছো?’
সন্ধ্যা মাথা নাড়ায়। যার অর্থ ‘হ্যাঁ’। আয়াশ কিছুক্ষণ চুপ থাকে। তারপর মৃদু স্বরে বলে, ‘তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করি?’
সন্ধ্যা এবারও মাথা নাড়ায়। আয়াশ বলে, ‘তুমি ঢাকা তে কি করতেছো? তাও একা একা!’
সন্ধ্যা হয়তো জানতো আয়াশের প্রশ্ন এমনই হবে। তাই নিজেকে শক্ত করে নিলো উত্তর দেওয়ার জন্য। আয়াশ প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। নিজেকে ধাতস্থ করে মুখ খোলে সন্ধ্যা,
‘আপনারা চলে আসার পরেরদিন আমার রেজাল্ট বের হয়। রেজাল্ট পেয়ে সবাই অনেক খুশিই ছিলাম। কিন্তু..
গলা ভার হয়ে আসে সন্ধ্যার। আয়াশ আগ্রহী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সন্ধ্যার মুখপানে। সন্ধ্যা ভাঙা ভাঙা গলায় বলে, ‘বাড়ি এসে দেখি বারান্দায় আমার মা আর দাদার র-র’ক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে। আমার মা আর দাদাকে কে যেনো আমার থেকে কেড়ে নিয়েছে। আমাকে একা করে দিয়েছে এই পুরো পৃথিবীতে। আমাকে শূণ্য হাতে ফেলে মা আর দাদাও চলে গেছে।’
আয়াশ কেঁপে উঠে সন্ধ্যার বলা কথায়। সে স্তব্ধ হয়ে গেছে ওই একটি বাক্যেই। সন্ধ্যা তখন শব্দ করে কেঁদে উঠে। আয়াশের কি হলো কে জানে! উঠে গিয়ে শক্ত করে সন্ধ্যাকে জড়িয়ে ধরে। সন্ধ্যাও আঁকড়ে ধরে আয়াশকে। হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। এতগুলো দিনের কান্না এখন উগলে আসে। মানুষটার প্রশস্ত বুক চেয়েছিলো সন্ধ্যা কান্নার জন্য আর ভাগ্যের পরিহাসে পেয়েও গেলো। আয়াশের চোখের কোণেও জল চিকচিক করে ওঠে। এতকিছু হয়ে গেছে অথচ সে জানেও না। আল্লাহ জানে মেয়েটার ওপর দিয়ে কত কি গেছে! আয়াশ আরো শক্ত করে আগলে নেয়। সন্ধ্যার কান্নার শব্দে ছুটে আসে আফরা। আয়াশ আর সন্ধ্যাকে এই অবস্থায় দেখে প্রথমে ঘাবড়ে গেলেও পরে আস্তে করে সরে যায়। সন্ধ্যার কান্নারত মুখ দেখে আর কিছু বলে না।
অনেকটা সময় কেটে যায় সন্ধ্যার কান্না করতে করতে। একসময় শান্ত হয়ে যায়। আয়াশের বাহু থেকে সরে এসে মাথা নিচু করে বসে থাকে। আয়াশ কিছু বলতে নিয়েও বলে না। ফোন বের করে কল দেয় রানার কাছে। রানা তখন বাড়িতে। আজ সবাই ছুটি নিয়েছে। আয়াশ বেশ কয়েকদিনের জন্য নিলেও বাকি সবাই একদিনের জন্য নিয়েছে। আয়াশ রানার সাথে কথা বলে ফোন কেটে আবার সন্ধ্যার কাছে আসে। সন্ধ্যা তখনো হিচকি তুলে কাঁদছে। আয়াশ রুম থেকে বের হয়ে নিচে আসে। আফরা চিন্তিত মুখে রান্না করছিলো। আয়াশ ফ্রিজ থেকে পানি বের করতে করতে আফরাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘কিছু হয়ছে মা?’
আফরা ছেলের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকায়। বলে, ‘সন্ধ্যা কাঁদছিলো কেন ওভাবে?’
আয়াশ দীর্ঘশ্বাস নেয়। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে, ‘রানারা আসুক। একসাথেই সব শুনো।’
আফরা আর কিছু বলে না। চুপচাপ রান্না করতে থাকে। আয়াশ পানি খেয়ে সরাসরি নিজের রুমে চলে যায়।
___
রানা, আকাশ, তমাল, সাফি, লিজা, জেরিন, আফরা সবাই চুপচাপ বসে আছে লিভিং রুমে। সন্ধ্যার কান্নার বিষয়ের পুরোটাই শুনেছে সবাই। সাহেদা আর সন্ধ্যার দাদা মা’রা গেছে বিষয়টা মানতে পারছে না কেউই। আফরার মায়া হচ্ছে সন্ধ্যার কথা ভেবে। এতো মিষ্টি একটা মেয়ের পরিবার বলতে কেউ নেই ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। আয়াশ গম্ভীর পরিবেশকে শান্ত করতে বলে,
‘সন্ধ্যা এখনো চুপচাপ বসে আছে। তোদের শোক পালনের জন্য ডাকিনি। তোরা থাকলে ওর ভালো লাগবে। ওর কাছে চল।’
সবাই মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়। নিজেদেরকে স্বাভাবিক করে সন্ধ্যার রুমে আসে। সন্ধ্যা সবাইকে দেখে খানিকটা অবাকই হয়৷ তবুও নিজেকে সামলে হাসার চেষ্টা করে বলে, ‘তোমরা সবাই এখানে!’
জেরিন হেঁসে বলে, ‘তোমার সাথে আড্ডা দিতে আসলাম। তুমিও একা একা আছো আর আমরাও সবাই তোমাকে মিস করতেছিলাম।’
সাফি বলে, ‘আচ্ছা সন্ধ্যা আগে বলো! তোমাদের গ্রামে কখনো ভুত বের হয়নি!’
পাশ থেকে রানা সাফিকে গাট্টা মে’রে বলে, ‘কেন? ভুতরে কি বিয়া করবি নাকি!’
আকাশ বলে, ‘ভুতও তোর চিৎকার শুনে ভয় পাবে। আর যেভাবে জাপ্টে ধরিস তাতে ভুত নিজেও চ্যাপ্টা লেগে যাবে।’
সাফি ভেংচি কাটে। তমাল বলে, ‘তোরা ভুতের সাথে ওর বিয়ে দিতে চাইছিস! দেখ গিয়ে ভুতও ওরে রিজেক্ট মারবে।’
‘হ রিজেক্ট মারলে তোর বইনরে পটামু।’
‘খবরদার ওইদিকে নজর দিবি না হা’রা’মি।’
আকাশ হাসতে হাসতে বলে, ‘সাফি তমালের বোন তো কেবল ৭ এ পড়ে তুই ওই পিচ্চিরে সামলাবি কেমনে ভাই?’
পাশ থেকে লিজা পিঞ্চ মে’রে বলে, ‘কেন! যখন পিচ্চি কান্না করবে তখন ‘ও’ ফিডার খাওয়াবে আর কোলে নিয়ে বলবে ‘ওহ বাবুটা কাঁদে না! আমার সোনা বাবুটা’।’
লিজার কথা বলার ভঙ্গি দেখে সন্ধ্যা ফিক করে হেঁসে দেয়। সাথে বাকি সবাইও হেঁসে ওঠে। কিছু মুহুর্তের জন্য ভুলে যায় সব তিক্ত অতীত, সব তিক্ত স্মৃতি। আফরা খাবার নিয়ে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলে,
‘হয়ছে তোদের বিয়ে, ফিডারের কাহিনী! এবার নিজেরা গিয়ে খাওয়া শেষ কর। আর সন্ধ্যাকে আমি খাইয়ে দিচ্ছি।’
জেরিন কন্ঠে দুষ্টুমি এনে বলে, ‘কেন আন্টি! খালি কি তোমার না হওয়া বউমা কে খাওয়ে দিলেই হবে! নাকি না হওয়া বউমাকে পার্মানেন্ট বউমা বানাতে চাচ্ছো?’
আফরা মাছি তাড়ানোর ভঙিমায় বলে, ‘হুশ হুশ সব যা ভাগ। আমার না হওয়া বউমাকে পার্মানেন্ট বউমা বানাবো নাকি কি করবো আমি দেখে নিবো হু!’
আয়াশ ফোনে মনোযোগ দিয়ে বিড়বিড় করে বলে, ‘এই উড়নচণ্ডীর স্বভাব জানলে পার্মানেন্ট বউমা বানানোর শখ মিটে যাবে।’
কথার এক পর্যায়ে রানা সবাইকে থামিয়ে দেয়। সবাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালে রানা বলে, ‘সামনে সপ্তাহে আমার বোনের বিয়ে নিশ্চয় কেউ ভুলিস নি!’
আকাশ হা হুতাশ করে বলে, ‘ভুলবো কেমনে ভাই? তোর বইনডা আমারে ছ্যাকা দিয়ে বিয়ে করে নিতাছে আহারে।’
রানা আকাশের পেছনে লা’থি দিয়ে বলে, ‘শা’লা কথার মধ্যে ব্যাগড়া দিলে এক লা’থিতে উগান্ডার কাইল্লা ছেরীর কাছে পাঠামু।’
আকাশ হাত দিয়ে পেছনে ডলতে ডলতে বলে, ‘এহহহ এক লা’থিতে এলাকার মোড়ই পার করতে পারলো না আবার নাকি পাঠাবে উগান্ডা!’
‘তুই থামবি না তাই না! দাঁড়া শুধু!’
রানা আকাশকে পুরো ঘরে দৌড়ানি দিতে থাকে। সবার হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ। শুধু আয়াশ ভ্রু কুঁচকে এদের কান্ড দেখছে। সন্ধ্যা আফরার হাতে খাচ্ছিলো এদের কাহিনী দেখে হাসতে হাসতে খাবার গলায় আটকে যায়। রানা আর আকাশ ছোটাছুটি বন্ধ করে দ্রুত এগিয়ে আসে। আয়াশ দ্রুত পানি নিয়ে সন্ধ্যার কাছে বসে আগে পানি খাওয়ায়। অস্থির ভাবে সন্ধ্যার মাথায় হাত বুলাতে থাকে। আফরা পিঠে হাত বুলাচ্ছে। লিজা, জেরিন, তমাল, সাফি তারাও ব্যস্ত হয়ে গেছে। সন্ধ্যার কাশি বন্ধ হয়ে গেলেও হুট করেই কেঁদে উঠে। সবাই আরো অস্থির হয়ে পড়ে। সন্ধ্যা ভাঙা গলায় বলে,
‘আমি কখনোই ভাবিনি মা আর দাদাকে হারানোর পর আমি কখনো হাসতে পারবো! কেউ আমাকে এতো ভালোবাসবে! তোমাদের সবার সাথে পরিচয় মাত্র ক’দিনের অথচ সবাই কত ভালোবাসো! আমি সত্যিই কখনো ভাবিনি।’
আফরা হেঁসে জড়িয়ে নেয় সন্ধ্যাকে। বলে, ‘দেখো তো পাগলি মেয়ে! আমরা ভাবলাম কি না কি হয়েছে আর এ মেয়ে তো অকারণে কাঁদছে। এই মেয়ে শোনো আমাদের সামনে এমন অকারণে কাঁদলে মে’রে পিঠের ছাল উঠিয়ে নিবো মাথায় রেখো!’
সন্ধ্যা কাঁদতে কাঁদতে হেঁসে দেয়। আফরার বুকে মুখ গুজে মা মা গন্ধটা শুষে নেয়। মায়ের কথা তার খুব বেশিই মনে পড়ে। তবে সে মায়ের বিকল্প পেয়েছে! হ্যাঁ পেয়েছেই তো। শুধু মায়ের বিকল্প না একটা মা-ই তো পেয়েছে। আয়াশ প্রশান্তির হাসি হাসে। সন্ধ্যা এবার সহজ হয়ে যাবে সবার সাথে। আবার সেই স্নিগ্ধ, দুষ্টু, উড়নচণ্ডী সন্ধ্যামালতী। রানা এসে হাত রাখে আয়াশের পিঠে। সবার মুখেই এক বিচিত্র হাসি। এ যেন সন্ধ্যামালতীর খুশি সবাই ভাগ করে নিচ্ছে!
#সন্ধ্যামালতী (১৮)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
_______________
কেটে গেছে ৭ দিন। সন্ধ্যা পুরোপুরি সুস্থ। এখনো সে আয়াশদের বাড়িতেই আছে। আফরার সাথে তার সখ্যতা তুমি থেকে তুই আর আপনি থেকে তুমিতে নেমে এসেছে। সন্ধ্যা মা আর দাদার শোক অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে। এর সবটাই অবশ্য আফরার ক্রেডিট। মানুষটা সন্ধ্যাকে মায়ের ভালোবাসা দিয়েছে যার ফলে পুরোপুরি সন্ধ্যা শোক না কাটালেও বেশ অনেকটা কাটিয়ে উঠেছে। মাঝখানে যেমন একদম চুপ হয়ে গেছিলো তেমনটা আর নেই। সারাদিন আফরার কাছে কাছে থাকে। আয়াশ ৩ দিন ছুটি নিয়েছিলো তারপর আবার হসপিটাল শুরু করেছে। সারাদিন আফরা আর সন্ধ্যা একসাথে থাকে। কাল থেকে রানার বোনের বিয়ে তাই সবাই ইনভাইটেড। লিজা, জেরিন, সাফি, আকাশ, তমাল, আয়াশ, সন্ধ্যা সবাই যাবে। রাতের বেলা ডিনার শেষ করে সন্ধ্যা ছাদে এসে দাঁড়িয়ে আছে। আয়াশ এখনো ফেরে নি। যত দিন যাচ্ছে তত যেনো মানুষটার প্রতি মায়া বেড়েই যাচ্ছে অথচ মানুষটার মনে কি আছে তা জানা নেই সন্ধ্যার। অবুঝ মেয়েটি বোঝেই না তার শহুরে ডাক্তারের অনুভূতি। সন্ধ্যা জীবনের হিসাব মিলাতে ব্যস্ত সে সময় গাড়ির হর্ণে তার ধ্যান ভাঙে। নিচে তাকিয়ে দেখে আয়াশের গাড়ি। ছুটে নিচে নামে সন্ধ্যা। আয়াশ ততক্ষণে বাড়ির মধ্যে চলে আসছে। শার্টের প্রথম দুই বাটন খোলা, চুল গুলো উস্কোখুস্কো মুখটা লাল হয়ে আছে। সন্ধ্যাকে নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায় আয়াশ। সন্ধ্যা শুকনো ঢোক গিলে। আয়াশ ভ্রু কুঁচকে রেখেই গম্ভীর গলায় বলে,
‘এতো রাত পর্যন্ত জেগে আছো কেন? আর এতো রাতে ছাঁদেই বা কি করছিলে?’
সন্ধ্যা মাথা নিচু করে ধীর কন্ঠে উত্তর দেয়, ‘ঘুম আসছিলো না।’
‘এতো রাতে আর কখনো ছাদে যাবে না। রুমে যাও!’
সন্ধ্যা মাথা নাড়ালেও ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। আয়াশ দু পা বাড়িয়েও সন্ধ্যার নড়াচড়া না দেখে আবার দাঁড়িয়ে পড়ে। ঠোঁট গোল করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে সন্ধ্যার দিকে। সন্ধ্যা টের পেলেও মাথা তুলে তাকায় না। আয়াশ কিছুটা এগিয়ে আসে। একদম সন্ধ্যার কাছে। আয়াশের উপস্থিতি এতো কাছে দেখে চমকে তাকায় সন্ধ্যা। দু পা পিছিয়ে যেতে নিলেই ব্যালেন্স হারিয়ে পড়ে যেতে নেয়। সাথে সাথে কোমড় চেপে ধরে আয়াশ। কেঁপে ওঠে সন্ধ্যা। আয়াশের গরম নিঃশ্বাস সরাসরি সন্ধ্যার উপর পড়ছে। সন্ধ্যা ভীতু চোখে তাকিয়ে থাকে আয়াশের দিকে। সন্ধ্যার এমন চাহনীতে নিঃশব্দে হাসে আয়াশ। মুখ কানের কাছে নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
‘কিছু বলবে!’
সন্ধ্যা চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে রাখে। সব কথা গলায় আটকে যাচ্ছে। কোনোরকম জড়ানো গলায় বলে, ‘ছ-ছাড়ুন!’
আয়াশ সন্ধ্যার মুখের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসে। সন্ধ্যার অবস্থা দেখে তার হু হা করে হাসতে ইচ্ছে করছে কিন্তু নিজেকে সামলে করে বসে এক ভয়ংকর কান্ড। মুখ এগিয়ে নিয়ে গিয়ে সোজা সন্ধ্যার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দিয়ে সাথে সাথে সন্ধ্যাকে সোজা করে ছেড়ে দিয়ে শিষ বাজাতে বাজাতে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে যায়। ঘটনার আকস্মিকতায় সন্ধ্যা হতভম্ব। কি হলো তার মাথার ওপর দিয়ে গেলো। একবার কপালে হাত দিয়ে হাতের দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার আয়াশের যাওয়ার দিকে তাকাচ্ছে। আনমনে নিজেই আওড়ায়,
‘শহুরে ডাক্তার কি আমার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে ছিলেন! কিন্তু উনি তা কেন করবে? উনি তো চলেই গেলো। আমার কেন যেনো মনে হলো শহুরে ডাক্তার আমার কপালে ঠোঁট ছুইয়েছেন!’
কনফিউজড চোখ তাকিয়ে থাকে হাতের দিকে। উপর থেকে সে দৃশ্য দেখে আরো একবার নিঃশব্দে হাসে সন্ধ্যামালতীর শহুরে ডাক্তার।
_______________
স্নিগ্ধ সকালের হাওয়া চোখ বন্ধ করে অনুভব করে সন্ধ্যা। সকালের এই বাতাসটা তার ভীষণ রকম প্রিয়। বরাবরই নামাজ শেষ করে সে এই বাতাস টা উপলব্ধি করে। গ্রামে তো গাছপালা বেশি তাই হাওয়াটাও ভালো রকমের আসে। গ্রামের কথা মনে পড়তেই মন খারাপ হয়ে যায় সন্ধ্যার। কবে থেকে সে নিজের ঘর, নিজের গ্রাম, প্রিয় মানুষদের কবর দেখে না! প্রিয় মানুষগুলোর কথা মনে হতেই হু হু করে কান্না আসে। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করতে থাকে। ঠিক তখনই পাশের ব্যালকনি থেকে কারো ভরাট কন্ঠ কানে আসে। চমকে পাশে তাকাতেই দেখে আয়াশ কফির মগ হাতে তার দিকে তাকিয়েই দাঁড়িয়ে আছে। সন্ধ্যা এক পলক আয়াশের দিকে তাকাতেই তার কাল রাতের কথা মনে পড়ে। লজ্জায় গুটিয়ে যায় সে। গাল দুটো রক্তিম আভা ধারণ করে। চোখ বন্ধ করে বড় শ্বাস নেয়। আয়াশ ভ্রু কুঁচকে তাকায়। বিড়বিড় করে বলে,
‘মাত্রই তো কান্না করতেছিলো এখনই আবার লজ্জা পাচ্ছে কেন!’
নিজেকে সামলে শান্ত গলায় বলে, ‘মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি?’
সন্ধ্যা চোখ বড় বড় করে তাকায়। কপালে সুক্ষ্ম ভাজ ফেলে বলে, ‘মাথা কেন খারাপ হবে?’
‘তো একটু আগেই কান্না করলে এখন আবার লজ্জায় লাল হচ্ছো!’
সন্ধ্যা দৃষ্টি এদিক ওদিক করে মাথা নত করে নেয়। আস্তে করে বলে, ‘গ্রাম, মা, দাদা, বকুল, বাদল ভাই সবার কথা খুব মনে পড়ছে।’
সবার কথা স্বাভাবিক ভাবে নিলেও বাদলকে স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারলো না আয়াশ। চোখ মুখে গম্ভীরতা ছেয়ে গেলো। গম্ভীর ভারী কন্ঠে গমগম স্বরে বলে, ‘কিছুদিন পর নিয়ে যাবো।’
বলেই কফির সবটুকু ঢেলে দেয় ফুলের টবে। তারপর কফির মগ শব্দ করে রেখে গটগট করে বেরিয়ে যায়। সন্ধ্যা আহম্মকের মতো তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ করে শহুরে ডাক্তার রেগে কেন গেলো? সে কি এমন বললো! নাকি আগে থেকেই রেগে ছিলো! একটা প্রশ্নেরও উত্তর পেলো না সে। শেষে নিজেই আরো একবার কনফিউজড হয়ে কফির মগের দিকে তাকিয়ে রইলো। বেচারী সন্ধ্যা বুঝলোই না তার শহুরে ডাক্তার জেলাস!
সকাল ১০ টার দিকে হঠাৎ করেই আয়াশ সন্ধ্যাকে ডাকে। তাও গম্ভীর গলায়। সন্ধ্যা খানিকটা ভয় পায়। সকালের সেই ঘটনার পর আয়াশ আর তার সাথে কথায় বলেনি। উল্টো মুখ ভার করে রেখেছে। আফরা কয়েকবার জিজ্ঞেস করলেও উত্তর দেয়নি আয়াশ। সন্ধ্যা দ্রুত পায়ে এগিয়ে যায় আয়াশের কাছে। ধীর কন্ঠে বলে, ‘জ্বী বলুন!’
আয়াশ মুখে কিছু না বলে নিজের হাতে থাকা ফোনটা এগিয়ে দেয়। সন্ধ্যা ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে গোটা গোটা অক্ষরে ‘রানা’ নামটা ভাসছে। সন্ধ্যা ফোন নিয়ে সালাম দেয়। ওপাশ থেকে ব্যস্ত স্বরে সালামের উত্তর দিয়ে রানা বলে,
‘সন্ধ্যা! শোনো আজ সবাই আমার বোনের বিয়েতে আসবে। তুমি কিন্তু আয়াশের সাথে চলে আসবে!’
‘কিন্তু আমি কেন? আমি তো..
‘কোনো রকম অজুহাত চাই না। তুমি আমার আরেক বোন। তাছাড়া আমার বোন তোমাকে দেখার জন্য পাগল হয়ে গেছে। আমি কিন্তু তোমাকে উপস্থিত চাই মানে চাই।’
সন্ধ্যার উত্তরের অপেক্ষা না করেই ফোন কেটে দেয় রানা। সন্ধ্যা ফোনের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টে দাঁড়িয়ে থাকে। সে কি করবে এখন! আয়াশ যে পরিমাণ মুখ ফুলিয়ে রেখেছে তাতে করে তো সন্ধ্যা ভয়েই বলতে পারবে না রানার কথা। সন্ধ্যা ফোনটা আয়াশের দিকে দিতেই আয়াশ ভরাট কন্ঠে বলে,
‘বিকালে রেডি হয়ে থাকবে। আমি এসে নিয়ে যাবো।’
মহাশয় সন্ধ্যার জবাবের আশা না করেই গটগট করে বের হয়ে গেলেন বাড়ি থেকে। সন্ধ্যা গাল ফুলিয়ে বসে পড়ে সোফায়। আফরা সন্ধ্যাকে গাল ফুলিয়ে বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলে,
‘কি রে ওমন গাল ফুলিয়ে রাখছিস কেন?’
‘কি করবো বলো! কেউ আমার কথা না শুনেই ফোন কেটে দিচ্ছে তো কেউ গটগট করে চলে যাচ্ছে।’
আফরা হেঁসে সন্ধ্যার পাশে বসে বলে, ‘এই ব্যাপার! আচ্ছা শোন আজ তো রানার বোনের গায়ে হলুদ। তুই যাবি না?’
‘ভাইয়া তো বললো যেতে। আর শহুরে ডাক্তারও বললো রেডি হয়ে থাকতে। কিন্তু!..’
‘আবার কিন্তু কি?’
সন্ধ্যা মাথা নিচু করে নেয়। কিছু বলে না। আফরা বোধহয় বোঝে সন্ধ্যার না বলা কথাটা। তাই সে হেঁসে বলে, ‘আয়াশ কাল তোর জন্য শপিং করে এনেছে। সব আমার রুমে আছে।’
অবাক চোখে তাকায় সন্ধ্যা। ফ্যালফ্যাল করে অবুঝের মতো তাকিয়ে থাকে আফরার দিকে। আফরা শব্দ করে হেঁসে টেনে নিয়ে যায় সন্ধ্যাকে নিজের রুমে।
_____________
বিকেলে রেডি হয়ে বসেছিলো সন্ধ্যা। আয়াশ আসবে বলেছে তাই সে চুপচাপ বসে আছে। হাজারটা চিন্তা ভাবনায় ব্যস্ত ছিলো সে সময় দরজায় টোকা পড়ে। সন্ধ্যা দ্রুত দরজা খুলে দেখে আয়াশ দাঁড়িয়ে আছে। হলুদ পাঞ্জাবি, সাদা পাজামা, গোল্ডেন ব্র্যান্ডেড ওয়াচ্, সিল্কি চুলগুলো কপালের ওপর পড়ে আছে। সন্ধ্যা ড্যাবডাব করে কিছুক্ষণ আয়াশের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। বিড়বিড় করে আওড়ায়, ‘মাশাল্লাহ!’
আয়াশ ফোনে মনোযোগ দিয়েই বলে, ‘চলো!’
সন্ধ্যা খানিকটা মনঃক্ষন্ন হয়। সে তো সেজেছেই তার শহুরে ডাক্তারের জন্য অথচ মানুষটা তার দিকে একবার তাকালোও না! মলিন মুখে আয়াশের পিছু পিছু যেতে থাকে। লিভিং রুমে আফরাকে দেখে সন্ধ্যাকে মৃদু কন্ঠে বলে, ‘আসি আন্টি!’
আফরাও হেঁসে হাত নাড়ায়। আয়াশ ড্রাইভিং সিটে বসে তখনো ফোন স্ক্রল করছে। এদিকে সন্ধ্যা গাড়িতে না উঠে দাঁড়িয়ে আছে। মনে মনে ভীষণ রকম রাগ হলো আয়াশের ওপর। নিজেকে সামলে দরজা টেনে খুললো। অবশ্য একপ্রকার যুদ্ধ করেই খুলেছে কিন্তু গাড়ির ভেতর বসে ঠা’স করে দরজা লাগিয়ে দেয়। চমকে তাকায় আয়াশ। কয়েক মুহুর্তের জন্য হার্টবিট যেনো বন্ধ হয়ে যায়। এমনিতেই সন্ধ্যামালতীর সৌন্দর্যে ঘায়েল হওয়া যায় তার ওপর হলুদ শাড়ি, ফুলের গহণা, কাঁচের চুড়ি, হালকা সাজ, খোলা চুল সব মিলিয়ে অপ্সরীর চেয়ে কম না। সন্ধ্যামালতীর এ ভয়ংকর রুপে যেনো শহুরে ডাক্তার প্রাণ হারালো। ফোনের শব্দে ধ্যান ভাঙে আয়াশের। বিড়বিড় করে বলে,
‘এ মেয়ে আজ এ কি ভ’য়ংকর রুপ নিয়েছে! আজ নিশ্চিত আমাকে মে’রেই ছাড়বে।’
হার্ট সমানে লাফাচ্ছে যার জন্য কিছুতেই নিজেকে নরমাল করতে পারলো না আয়াশ। বড় বড় শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ। আরেকবার আড়চোখে পাশে বসে থাকা কিশোরীর দিকে তাকায়। অস্বাভাবিক ভাবে শ্বাস ফেলতে থাকে। দ্রুত গাড়ি থেকে বের হয়ে বাহিরে দাঁড়ায়। কিছুটা সময় পর নিজেকে সামলে বিড়বিড় করে আওড়ায়,
‘আর তাকাবো না এই মেয়ের দিকে। নয়তো এই মেয়ের আগুনেই ঝ’লসে যাবো!’
কোনো রকম গাড়িতে বসেই গাড়ি স্টার্ট দেয়। সন্ধ্যা রাগে গাল ফুলিয়ে রেখেছে। এ পর্যন্ত কিছুই বলেনি আয়াশকে। কিন্তু আয়াশের অস্বাভাবিকতা খেয়াল করেছে। চিন্তায় তার ঘাম ছুটেছে। কোন রকমে জড়ানো গলায় আয়াশকে জিজ্ঞেস করে, ‘আপনি ঠিক আছেন?’
আয়াশ ছোট্ট করে ‘হু’ বলে। ব্যাস তারপরেই আবার নিরবতা। রানার বাড়ি আসা পর্যন্ত এ নিরবতাই চললো। গাড়ি থেকে নেমে দুজনেই যখন বাড়ির মধ্যে ঢোকে তখন আয়াশের বন্ধুমহলের সবার দৃষ্টি পড়ে আয়াশ-সন্ধ্যার ওপর। লিজা আকাশের পেটে গুতো মে’রে বলে,
‘দোস্ত দুইটার থেকেই তো চোখ সরানো যাচ্ছে না! ইসসসসস।’
আকাশ হেঁসে বলে, ‘মেইড ফর ইচ আদার।’
জেরিন বলে, ‘ভাই এই রানার বোনের বিয়েটা শেষ হলে এদের বিয়েটাও করিয়ে দিবো ভাবছি! কি বলিস?’
তমাল ভেংচি কেটে বলে , ‘তুই মনে হয় আয়াশ-সন্ধ্যার বাপ মা যে ওদের বিয়ে দিয়ে দিবি!’
জ্বলে ওঠে জেরিন। ক্ষেপে উঠে বলে, ‘তমাল্লায়ায়ায়ার বাচ্চা তোর গোষ্ঠীর পি’ন্ডি হা’রা’মি। আমি ওদের বাপ মা হমু কেন হ্যাঁ? আমি আয়াশের ফ্রেন্ড। তাই আমার জন্মগত অধিকার আছে ওদের বিয়ে দেওয়ার।’
তমাল ফের ভেংচি কাটে। আকাশ চিন্তিত কন্ঠে বলে, ‘তোরা ঝামেলা কম কর। আরেক ঝামেলা কিন্তু এখনো বাকি!’
সবাই একসাথে বলে উঠে, ‘কিসের ঝামেলা?’
আকাশ থতমত খেলেও নিজেকে সামলে নেয়। গলা পরিষ্কার করে বলে, ‘আরে সানজিদা! আয়াশের ফিয়ন্সে। ‘ও’ তো ঝামেলা করবেই!’
‘তাহলে এখন কি করমু?’
জেরিন দৃঢ় কন্ঠে বলে, ‘দুনিয়া উল্টায়া গেলেও আয়াশ সন্ধ্যার বিয়া দিমুই।’
সেসময়ই আয়াশ গম্ভীর কন্ঠে বলে, ‘কার বিয়ে দিবি তোরা?’
সবাই লাফিয়ে উঠে। জেরিন বলদ মার্কা হাসি দিয়ে বলে, ‘কার আবার! তমাল্লার বিয়া দিমু। বেচারা বুইড়া হইয়া যাইতাছে।’
তমাল জ্বলে উঠে কিছু বলতে গেলে সবাই টেনে ধরে তাকে। আয়াশ সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায়। সবাই হেহে করে হেঁসে সন্ধ্যাকে জিজ্ঞেস করে, ‘কেমন আছো সন্ধ্যা?’
সন্ধ্যা মুচকি হেঁসে উত্তর দেয়, ‘আলহামদুলিল্লাহ। তোমরা?’
লিজা উৎসাহ নিয়ে বলে, ‘আমরাও আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু একটা বিষয় নিয়ে না অনেক টেনশন হচ্ছে!’
আয়াশ কপালে ভাজ ফেলে বলে, ‘তোদের মতো ব’লদরা করবে টেনশন! দুনিয়া উল্টে গেলেও এটা বিশ্বাস করা মুশকিল। যারা বোর্ড এক্সামের দিন না পড়েও চিল করে তাদের আবার টেনশন! হাউ ফানি!’
আকাশ ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘অপমানস! তুই আমাদের ইনডিরেক্ট অপমান করতেছিস আয়াশ।’
আয়াশ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে, ‘ইনডিরেক্ট কেন করবো! ডিরেক্টই করতেছি। বাই দ্যা ওয়ে আমার জানা ছিলো না তোদেরও যে মান সম্মান বলতে কিছু আছে!’
সবাই ফোঁস করে উঠে। সন্ধ্যা ফিক করে হেঁসে দেয়। সবার কড়া নজর পড়ে বেচারী সন্ধ্যার দিকে। সন্ধ্যা হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে। দাত দিয়ে জিভ কেটে বলে, ‘আল্লাহ এটা কি করলাম!’
লিজা বলে, ‘দিস ইজ নট ফেয়ার। তুই আমাদের অপমান করতে পারিস না। আচ্ছা তোকে পরে দেখতেছি দাঁড়া! এই সন্ধ্যা তুমি যে পরী সেজে আসছো তা আজ যদি তোমাকে কেউ কি’ডন্যাপ করে নিয়ে চলে যায় তখন কি করবা হু?’
সাফি অতি উৎসাহ নিয়ে লাফিয়ে উঠে বলে, ‘কেন? আমাদের আয়াশ হিরোর মতো গিয়ে কিড’ন্যাপারদের ঢি’শুম ঢি’শুম করে মে’রে সন্ধ্যাকে বাঁচিয়ে আনবে।’
আয়াশ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে, ‘তোদের আজাইরা ডিসকাশন শেষ করে ওদিকে চল। ইডিয়েট একেকটা!’
গটগট করে হেঁটে চলে যায় আয়াশ। আয়াশের বন্ধুমহল আরো একবার ফুঁসে ওঠে। বেচারী সন্ধ্যা ভীতু দৃষ্টিতে সবার দিকে তাকিয়ে মনে মনে আওড়ায়,
‘আল্লাহ এরা সবাই আমার দিকে যেভাবে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে শহুরে ডাক্তার না আমিই এদের উল্টা পাল্টা বলেছি! ওহ আল্লাহ এবারের মতো বাঁচিয়ে দাও।’
চলবে..
(