#সাতরঙা_প্রজাপতি
লেখনীতে: #মাশফিত্রা_মিমুই
||পর্ব:৪||
“তা ছোটো দুই বউয়ের পোলাপাইন তো দেহি হাঁটা শিইখা গেছে কিন্তু বড়ো বউয়ের খবর কী? বাচ্চা কাচ্চা হয় না ক্যান? বউয়ের কী কোনো সমস্যা টমস্যা আছে নাকি?”
বিলকিস খাতুনের এমন একটি কথায় চমকে গেলো উপস্থিত সবাই। অপ্রস্তুত হয়ে গেলো জ্যোতি। মলিন হয়ে গেলো মুখখানা। এমন একটি কথার কী উত্তর দিবে বুঝতে পারছে না। আনোয়ারা বেগমের মুখেও আঁধার নেমে এসেছে। দুতলার বারান্দা থেকে হল ঘর সম্পূর্ণ দেখা যায়। ছাদ থেকে নেমে ঘরে যাওয়ার সময় নিচে দৃষ্টি পড়ে শোভনের। নিচে সবার ভিড় দেখে একটু দাঁড়িয়েছিল সে।পুরো কথাটাই তার কান পর্যন্ত গেলো। মেজাজ বিগড়ে গেলো সঙ্গে সঙ্গে। ইচ্ছে করল নিচে গিয়ে বিলকিস খাতুনের উদ্দেশ্যে কড়া কয়েকটা কথা বলে আসতে।
কারো কাছ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে বিলকিস খাতুন জ্যোতির দিকে মাথা তুলে তাকালেন। এবার সরাসরি তার উদ্দেশ্যেই প্রশ্ন করলেন,”কী গো নাতি বউ তোমার কী কোনো সমস্যা টমস্যা আছে?”
জ্যোতি আরো লজ্জায় পড়ে গেলো। ইচ্ছে করছে এক দৌড়ে এখান থেকে চলে যেতে কিন্তু পারছে না। শেষে আড়চোখে শাশুড়ির দিকে তাকালো।
আনোয়ারা বেগম নিজেকে স্বাভাবিক করে হেসে উত্তর দিলেন,”আমাদের দায়িত্ব ছিলো ছেলেকে ভালো একটি মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার। সেই দায়িত্ব আমরা সঠিকভাবেই পালন করেছি। এখন ওদের বাচ্চা কাচ্চা হবে কি হবে না। ওরা বাচ্চা কবে নিবে এটা ওদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।অন্যের ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে কথা বলে কী আমাদের কোনো লাভ আছে মাওই?”
বিলকিস খাতুনের হাস্যজ্জ্বল মুখে আঁধার ঘনিয়ে এলো। দৃষ্টি সরিয়ে নিলেন। আনোয়ারা বেগম মুখে হাসি রেখেই জ্যোতির উদ্দেশ্যে বললেন,”বড়ো বউ রান্নাঘরে যাও। গিয়ে জায়েদের সাহায্য করো।”
জ্যোতি মাথা নাড়িয়ে শাশুড়ির আদেশ পালনের জন্য রান্নাঘরে চলে গেলো। মায়ের প্রতিবাদের ধরণ পছন্দ হলো শোভনের। সেও ঘরে চলে গেলো।বিলকিস খাতুন এ বাড়িতে এসেছেন মেয়ের কাছে কিছুদিন থাকার জন্য।
পেরিয়ে গেলো একটি দিন। রোজকার মতো মসজিদ থেকে ফজরের নামাজ পড়ে বাড়ি ফিরলো শোভন। ঘরের সামনেই দেখা হয়ে গেলো জ্যোতির সঙ্গে। সে তার গম্ভীর কণ্ঠে জ্যোতির উদ্দেশ্যে আদেশের সুরে বললো,”আমার অফিসের ছুটি শেষের দিকে।আজই আমি ফিরে যাচ্ছি। আমার সঙ্গে যেতে চাইলে আধ ঘণ্টার মধ্যে তৈরি হয়ে নাও।”
শোভনের কথায় অবাক হলো জ্যোতি।হুট করে এসে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা কী কেউ এভাবে বলে?রাতে বললেও তো হতো নাকি। মনের কথাটা প্রকাশ করার আগেই জ্যোতিকে পাশ কাটিয়ে ঘরে ঢুকে গেলো শোভন। টাওয়ালটা গলায় ঝুলিয়ে বাথরুমে চলে গেলো। কি করবে বুঝতে পারছে না জ্যোতি।শাশুড়ির নির্দেশ মতো গতকালই তো ব্যাগ গুছিয়ে নিয়েছে। কোমরে হাত দিয়ে এসব ভাবতেই ব্যস্ত সে। কিছুক্ষণ বাদে পেছন থেকে শোভন বললো,”এখনো এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাওয়ার কী ইচ্ছে নেই?”
ভড়কে গেলো জ্যোতি। এত তাড়াতাড়ি লোকটার গোসল শেষ! কাঁধে ঝোলানো টাওয়ালটা দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো শোভন। বললো,”সাড়ে দশটায় ট্রেন ছাড়বে। কারো জন্য নিশ্চয়ই ট্রেন বসে থাকবে না। এখন সাড়ে সাতটা বাজে যেতেও তো খানিকটা সময় লাগবে নাকি।”
শোভন একটু থেমে আবারো বললো,”সবার কাছ থেকে বিদায় নিতে নিতেও তো ঘণ্টা পার করে দিবে তাই হা করে তাকিয়ে না থেকে তৈরি হয়ে এসো।”
জ্যোতি আর দাঁড়ালো না। আলমারি থেকে কাপড় নিয়ে বাথরুমে চলে গেলো তৈরি হতে। বৈবাহিক জীবনের এক বছরের মধ্যে এই প্রথমই শোভন এত কথা বললো জ্যোতির সঙ্গে। অথচ এতদিন প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে হ্যাঁ না ছাড়া কোনো কথাই হয়নি তাদের মধ্যে। জ্যোতি অনেক চেষ্টা করেছে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে। চেষ্টা করেছে সম্পর্কটাকে অন্য সব দম্পতিদের মতো স্বাভাবিক করতে কিন্তু শোভন সেই সুযোগটাই তাকে দেয়নি।
কিছুটা সময় নিয়ে পোশাক বদলে বের হলো জ্যোতি। ঘরে এসে আর শোভনের দেখা পেলো না। আনোয়ারা বেগমের সঙ্গে দেখা করতে চলে গেলো। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে শোভন। দৃষ্টি আকাশের দিকে। কোনো কিছু নিয়ে গভীর ভাবনায় আচ্ছন্ন সে। বাইরে থেকে দেখে যে কেউই বলে দিতে পারবে এই ঊনত্রিশ বছরের পুরুষটির ভেতরে গভীর কিছু লুকিয়ে আছে। যা সে সকলের সামনে প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক।
এ সময় পুত্রবধূকে নিজের ঘরে দেখে কিছুটা অবাক হলেন আনোয়ারা বেগম। শুধালেন,”কিছু বলবে?”
“হুম মা।”
“বলো।”
“আপনার ছেলে বলছে আজই নাকি ফিরে যাবে। আমাকেও তৈরি হতে বলেছে।”
আনোয়ারা বেগম পা থেকে মাথা পর্যন্ত জ্যোতিকে পর্যবেক্ষণ করলেন। বললেন,”জানতাম হুট করেই এমন একটি সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিবে। যাই হোক ব্যাগপত্র তো সব গোছানো আছেই এবার নিজে গিয়ে তৈরি হয়ে নাও।”
জ্যোতি ঘুমটা টেনে উত্তরে বললো,”আমি তৈরি মা।”
ভ্রু যুগল কুঁচকে নিলেন আনোয়ারা বেগম। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,”এভাবে এতটা পথ যাবে নাকি? এর উপর বোরকা আর হিজাব পরে এসো।”
জ্যোতির হাস্যজ্জ্বল মুখখানায় মলিনতা ভর করল। আনোয়ারা বেগম বুঝতে পারলেন পুত্রবধূর মন খারাপ হয়েছে। বললেন,”পর্দা নারীদের জন্য ফরজ। শুধু নামাজ পড়লেই তো হবে না। নামাজের পাশাপাশি পর্দা করেও চলা উচিত। পর্দা হচ্ছে বদ লোকদের নজর থেকে বাঁচার প্রধান অস্ত্র। তাই বাইরে বের হওয়ার আগে বোরকা পড়লে ক্ষতি কী?”
“হুম মা। আসছি আমি।”
ভাইয়ের বাড়িতে গেলে অথবা কোথাও গেলে বোরকা পরেই বের হয় জ্যোতি। আজ হঠাৎ করেই তার নরমাল কাপড়ে বের হতে ইচ্ছে হলো । ভাবী যখন ভাইয়ের সঙ্গে কোথাও যেতো তখন শাড়ি পরে সাজগোজ করেই বের হতো। কথাটা মনে হতেই জ্যোতিরও ইচ্ছে জাগলো। কিন্তু শাড়ি পরা তার কাছে বেশ বাড়াবাড়ি মনে হলো।আবারো ঘরে এলো জ্যোতি। পরনের পোশাকের উপরেই বোরকা পরে হিজাব পরে নিলো।শোভন তাড়া দিয়ে বললো,”তৈরি হওয়া শেষ হলে তাড়াতাড়ি চলো। গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে নিচে।”
জ্যোতি মাথা নাড়ালো। কাপড়ের ব্যাগটা নিজের হাতে নিয়ে বের হওয়ার জন্য পা বাড়ালো। তৎক্ষণাৎ তার হাত থেকে ব্যাগটি নিয়ে নিলো শোভন। কড়া গলায় বললো,”ব্যাগটা অনেক ভারি নিচ পর্যন্ত তুমি বয়ে নিয়ে যেতে পারবে না।”
জ্যোতির ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো স্বামীর এই ছোট্ট একটি যত্নে। বড়ো বড়ো পা ফেলে শোভন নিচে চলে গেলো। কারো সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন মনে করল না। সদর দরজা পেরিয়ে এগিয়ে এলেন আনোয়ারা বেগম। ছেলের উদ্দেশ্যে বললেন,”যদিও তোমার উপর আমার ভরসা আছে। আমি জানি তুমি দায়িত্ববান একটা ছেলে তবুও বলছি জ্যোতি কিন্তু এখন থেকে তোমার দায়িত্বে। স্ত্রীর খেয়াল রেখো। ও হয়তো সবকিছু মুখ ফুটে বলতে পারবে না তোমায়। তাই তোমাকেই সব বুঝে নিতে হবে। কখনো কষ্ট দিও না নিজের স্ত্রীকে।”
“চেষ্টা করবো সব দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার। আসি তাহলে। আসসালামু আলাইকুম।”
আনোয়ারা বেগম সন্তুষ্ট হয়ে সালামের জবাব নিলেন,”ওয়া আলাইকুমুসসালাম।”
সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে জ্যোতিও গাড়িতে উঠে বসলো। গাড়ি ছুটে চললো এক নতুন গন্তব্যের দিকে। কাঁচ নামানো জানালা দিয়ে পেছনে রেখে আসা পরিচিত মুখ এবং স্থান দেখতে লাগলো জ্যোতি। একসময় অদৃশ্য হয়ে গেলো সব।
দুতলার বারান্দা থেকে সবার আড়ালে পুত্র এবং পুত্রবধূকে মনে মনে বিদায় জানালেন রাউফুন খাঁন। আলগোছে বাম হাতের উল্টো পাশ দিয়ে চোখ মুছে নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তারপর ঘরে চলে গেলেন।
স্টেশনে অনেক ভিড়। সবেমাত্র ট্রেন এসে থেমেছে। একজন আরেকজনকে ঠেলেঠুলে ধাক্কা দিয়ে ট্রেনে উঠার প্রতিযোগিতা চলছে। গাড়ি ভাড়া মিটিয়ে জ্যোতিকে নিয়ে স্টেশনের ভেতরে ঢুকলো শোভন। আগ্ৰহ ভরা দৃষ্টিতে চারপাশের দৃশ্য অবলোকন করছে জ্যোতি। এটাই তার জীবনের প্রথম ট্রেন ভ্রমণ হতে যাচ্ছে। ট্রেন দিয়ে যাতায়াত করে বেড়াতে যাওয়ার মতো কোনো আত্মীয় স্বজন কোনো কালেই জ্যোতিদের ছিলো না। ভিড়ের মধ্যেই কেউ শক্ত করে জ্যোতির হাত ধরলো। ভেতরে এক অচেনা কম্পন অনুভব হলো। পাশ ফিরে তাকাতেই শোভনকে দেখতে পেলো। শোভনই তার হাতটি ধরেছে।
শোভন জ্যোতির উদ্দেশ্যে বললো,”আমার সঙ্গে সঙ্গে এসো। হাত যেনো না ছুটে আমার থেকে, এই ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেলে খুঁজে তো পাওয়া যাবেই না এমনকি ট্রেনও মিস হবে।”
যেভাবে শক্ত করে জ্যোতির হাত ধরেছে শোভন। তাতে চাইলেও জ্যোতি ছুটতে পারবে না। কোনোমতে মানুষজন ঠেলেঠুলে ট্রেনের ভেতরে ঢুকলো তারা। টিকেট অনুযায়ী নিজেদের আসনে গিয়ে বসলো। আধ ঘণ্টা পর ট্রেন ছেড়ে দিলো। বাহির থেকে দেখলে মনে হয় ট্রেন কি ধীর গতিতে চলে অথচ ভেতর থেকে বোঝা যায় ট্রেনের আসল গতি।
গরমকাল অথচ জানালার ধারে বসায় ঠান্ডা হাওয়া গায়ে লেগে শীত লাগছে জ্যোতির। মুগ্ধ হয়ে একবার ভেতরে তো আরেকবার বাহিরে তাকাচ্ছে সে।হঠাৎ করে জানালা বন্ধ করে দিলো শোভন। করুন দৃষ্টিতে স্বামীর পানে তাকালো জ্যোতি। শোভন গম্ভীর কণ্ঠে বললো,”এই হাওয়া গায়ে লাগলে ঠান্ডা লেগে যাবে। রাতদিন বসে বউয়ের সেবা করতে পারবো না আমি, আমার অফিস আছে।”
মুখ ভার করে ঘাড় ঘুরিয়ে নিলো জ্যোতি। কোনো কিছু নিয়ে আবদার করার মতো সাহস জ্যোতির এখনো হয়নি। অথবা সেই অধিকারটা এখনো অর্জনই করতে পারেনি। তবে এই সাময়িক কষ্টটা দূর হয়ে গেলো এই ভেবে, ট্রেন ভ্রমণ তো করতে পেরেছে সে।
________
কয়েক ঘণ্টার জার্নির পর নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছালো শোভন এবং জ্যোতি। একটি ছেলে দাঁড়িয়ে আছে একটি বাড়ির সামনে। শোভনকে দেখতেই হাস্যজ্জ্বল মুখে এগিয়ে এলো ছেলেটি। বললো,”অফিস বাদ দিয়ে তোদের জন্যই এখানে অপেক্ষা করছিলাম।”
শোভন প্রশ্ন করল,”কেন?”
“কেন আবার কী? তোদের ফ্ল্যাটটা দেখিয়ে দিতে হবে না?”
চোখ বড়ো করে তাকালো শোভন। শোভনের এমন চাহনিতে বোকা বোকা হাসলো ছেলেটি। জ্যোতির দিকে দৃষ্টি পড়তেই বললো,”আসসালামু আলাইকুম ভাবী। কেমন আছেন?”
জ্যোতি উত্তরে বললো,”ওয়া আলাইকুমুসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”
শোভন জ্যোতির উদ্দেশ্যে বললো,”ও হচ্ছে সাজেদ। আমার বন্ধু প্লাস কলিগ।”
মনের ভেতরে জেগে ওঠা প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেলো জ্যোতি। ছোট্ট করে বললো,”ওহ।”
সাজেদ ভেতরে নিয়ে গেলো ওদের।দুই রুমের একটি ফ্ল্যাট। সুন্দর একটি রান্নাঘর আর মাঝারি সাইজের একটি ড্রয়িং রুম। শোভন জ্যোতির উদ্দেশ্যে বললো,
“এতটা পথ এলে। ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিশ্রাম নাও।”
জ্যোতি উল্টো প্রশ্ন করল,”কোন ঘরটায় যাবো?”
“তোমার ইচ্ছে।”
মৃদু হেসে সেখান থেকে প্রস্থান করল জ্যোতি। দুটো ঘরের মধ্যেই বারান্দা আছে। যা দেখে জ্যোতির ভালো লাগা বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেলো। বারান্দা জ্যোতির বরাবরই প্রিয় ছিলো। কলেজে যাওয়ার সময় রাস্তার পাশে বড়ো বড়ো দালানের বারান্দা গুলো দেখে জ্যোতি স্বপ্ন দেখতো তারও একদিন এমন একটি বারান্দা হবে। যেখানে সে বাগানবিলাস করবে। মন খারাপ হলে সেখানে বসে খোলা আকাশ দেখবে। বিয়ের পর এই স্বপ্নটা তার পূরণ হয়েছিল।
শোভন আর তার শোবার ঘরের বারান্দায় অসংখ্য গাছ লাগিয়েছিল জ্যোতি। রোজ সময় করে সেই গাছ গুলোর যত্ন নিতো। যখন সে মায়ের কাছে বেড়াতে যেতো তখন গাছের যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব দিতো রেশমীকে। ঠোঁটের কোণের হাসিটা মিলিয়ে গেলো। বিরক্তি নিয়ে আনমনে বলে উঠলো,”এই বারান্দাটাও আবার সাজাতে হবে। কত গাছ লাগাতে হবে। উফ কত দায়িত্ব আমার উপর। কত কাজ!”
ড্রয়িং রুমের সোফায় শোভন আর সাজেদ বসে আছে। শোভন বললো,”তোকে শুধু বলেছিলাম ফ্ল্যাটটা ম্যানেজ করে দিতে কিন্তু তুই তো দেখছি একেবারে ফার্নিচার সহ সাজিয়ে গুছিয়ে রেডি করে রেখেছিস!”
সাজেদ প্রতিত্ত্যুরে হাসলো। বললো,”পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে তো। আমিও তো তোর মতোই অফিসের কাছে ম্যাচে থাকতাম।যখন অন্নাকে বিয়ে করে নিয়ে এলাম তখন কি ভোগান্তিই না পোহাতে হয়েছে। ফার্নিচার কিনে ঘর গোছাতে গোছাতেই সপ্তাহখানেক পার হয়ে গেলো। তাই পরশু রাতে তুই ফোন করে বলতেই সব বুঝে গেলাম। অন্নাকে নিয়ে নেমে পড়লাম কাজে। আজ সকালেই সব গোছগাছ করে বাড়ি ফিরেছে অন্না।”
“তোদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে তাই না। আসলে হুট করেই মা বলে দিলো জ্যোতিকে নিয়ে নাকি ফিরতে হবে তাই এমন ঝামেলা হলো।”
“আন্টির বলতে হবে কেন? এই কাজটি তোর আগেই করা উচিত ছিলো। নিজে এখানে পড়ে ছিলো আর বউকে রেখে এসেছিল সেই শত মাইল দূরে।”
শোভন নিরব রইলো। সাজেদ বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। বললো,”তোরা এতদূর থেকে এলি বিশ্রাম নে। আমি কাউকে দিয়ে খাবার পাঠিয়ে দিবো রান্না করার দরকার নেই।”
শোভন বাঁধা দিয়ে বললো,”তার দরকার নেই। যা করেছিস তাতেই তোর প্রতি কৃতজ্ঞ আমি। আমি অনলাইনে অর্ডার করে নিবো।”
সাজেদ যাওয়ার জন্য অগ্ৰসর হতেই শোভন পিছু ডেকে বললো,”কত খরচ হয়েছে বললি না তো। টাকাটা নিয়ে যা।”
সাজেদের ভ্রু জোড়া কুঁচকে গেলো। যেতে যেতে বললো,”তা নিয়ে পরে কথা বলা যাবে।আমি আসছি দরজা লাগা।”
শোভন আর কিছু বলার সুযোগ পেলো না। তার আগেই দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে গেলো সাজেদ। দরজা আটকে ঘরে এলো শোভন।”
চলবে _____
(কার্টেসি ছাড়া কপি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।)