সাতরঙা প্রজাপতি পর্ব -০৫

#সাতরঙা_প্রজাপতি
লেখনীতে: #মাশফিত্রা_মিমুই
||পর্ব:০৫||

“আমাকে কয়েকটা ফুল গাছ এনে দিবেন? বারান্দায় লাগাতাম।”

মিষ্টি কণ্ঠের আবেদনময়ী একটি আবদারে কপালে কয়েকটি ভাঁজ পড়ল শোভনের। সবেমাত্র ফ্রেশ হয়ে বাথরুম থেকে বের হয়েছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভেজা চুল মুছছিলো সে। আয়নার ভেতর দিয়েই জ্যোতিকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। বিছানায় বসে পা দুলাচ্ছে। দৃষ্টি তার টাইলসযুক্ত মেঝেতে। স্বামীর নিকট হতে কোনো উত্তর না পেয়ে সে আবারো বলে উঠল,”দিবেন এনে? আমার না ফুল গাছ অনেক ভালো লাগে‌। ওখানে থাকতেও আমাদের ঘরের বারান্দায় অনেক গুলো গাছ লাগিয়েছিলাম। সুন্দর সুন্দর কত ফুল যে ফোটে ছিলো।”

শোভন আয়নার দিক থেকে ঘুরে আড়চোখে জ্যোতির দিকে তাকালো। বারান্দার দিকে যেতে যেতে বললো,”হুম দিবো।”

অধরে হাসি ফুটে উঠল জ্যোতির। শুকনো ঢুক গিললো শোভন। ছোট্ট একটি কথায় এতটা খুশি হয়ে গেলো মেয়েটি? ভাবতেই অবাক লাগছে তার। টাওয়াল মেলে দিয়ে ঘরে এসে বিছানার একপাশে বসলো শোভন। বললো,”দুদিন যাক তারপর না হয় এনে দিবো। টেবিলে খাবার রাখা আছে এবার খেতে যাও।”

“আপনি খাবেন না?”

“হুম তুমি যাও আমি আসছি।”

মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো জ্যোতি। প্রথমে অনলাইনে খাবার অর্ডার দেওয়ার কথা ভেবেছিল শোভন। কিন্তু খাবার আসতে দেরি হবে ভেবে সিদ্ধান্ত বদলে নিজেই বেরিয়ে পড়ল খাবার আনতে।পাশের মোড়েই বেশ বড়ো একটি হোটেল আছে। দুটো প্লেটে খাবার বেড়ে চেয়ার টেনে বসলো জ্যোতি। শোভনও চলে এলো টেবিলে। তারপর নিরবে দুজন একসঙ্গে খেয়ে নিলো।

মুখ ভার করে বিছানায় বসে আছে এলিনা। শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে শাফিন প্রশ্ন করল,”মুখ এমন অন্ধকার করে রেখেছো কেন? কী হয়েছে? মা কী কিছু বলেছে?”

এলিনা উত্তর দিলো না। নিজের মতো করেই বসে আছে। যেনো কোনো কথাই তার কান পর্যন্ত পৌঁছায় নি। পরনের শার্ট বদলে একটি টি-শার্ট পরলো শাফিন। স্ত্রীর পাশে এসে বসে পুনরায় বললো,”না বললে বুঝবো কী করে?”

এলিনা মন খারাপ করে বললো,”তোমার বড়ো ভাই আর ভাবী কি সুন্দর করে আলাদা হয়ে গেলো। এখন কারো কাছে কোনো জবাবদিহি করতে হবে না তাদের। নিজেদের ইচ্ছামত চলতে ফিরতে পারবে। কিছু বলার মতোও আর কেউ নেই। এদিকে সব জ্বালা আমাদের।”

শাফিনের মুখ থমথমে হয়ে গেলো। এলিনা তাকালো শাফিনের মুখের দিকে। আহ্লাদি স্বরে বললো,”চলো না আমরাও আলাদা হয়ে যাই। আর কতদিন এভাবে থাকব? ঈমাও তো বড়ো হচ্ছে নাকি।”

শাফিন রেগে গেলো মুহূর্তেই। রূঢ় কণ্ঠে বললো,”ওহ এখন আমার পরিবারটাকে ভাঙার মতলব এঁটেছো? এসব শয়তানী বুদ্ধি কে ঢুকিয়েছে মাথায়?”

এলিনা ভড়কে গেলো। শাফিন বললো,”আমার মা চাচীরা এই যৌথ পরিবারেই বউ হয়ে এসে সংসার করেছে তাদেরও ছেলে মেয়ে ছিলো। এই যৌথ পরিবারেই আমরা সব ভাই-বোনেরা একসঙ্গে বড়ো হয়েছি। বিয়ের আগে জানতে না আমরা যৌথ পরিবারে থাকি?”

এলিনা সতর্ক কণ্ঠে বললো,”চিৎকার করছো কেন? সবাই শুনতে পাবে তো।”

“শুনুক সবাই। এসব কথা যদি আর কখনো তোমার মুখে শুনি তাহলে সেদিনই এই বাড়িতে তোমার শেষ দিন মনে রেখো।”

এলিনার মেজাজটাও এবার খারাপ হয়ে গেলো। রাগান্বিত কণ্ঠে বললো,”তোমার ভাই ভাবী যে চলে গেলো তখন কিছু হয়নি তাই না?”

“ভাইয়া ওখানে গিয়েছিল লেখাপড়া করতে। লেখাপড়া শেষে ওখানেই চাকরি নিয়েছে এ কথা তো তোমার জানা। বিয়ের পরেই তো আর ভাবীকে নিয়ে যায়নি। এছাড়া স্বামী যেখানে থাকবে স্ত্রীও তো সেখানেই থাকবে নাকি? এটা নিয়ে ঝামেলা করার কী আছে? আমি কী অত দূরে চাকরি করি নাকি যে বউ বাচ্চা নিয়ে আমাকেও আলাদা থাকতে হবে?”

“তার মানে তুমি আলাদা হতে চাইছো না?”

“যা বলার তা তো বলেই দিয়েছি। এই নিয়ে আর কোনো কথা নয়।”

কথাটা শেষ করে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো শাফিন। তড়তড় করে রাগ বেড়ে যাচ্ছে এলিনার। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে সে। শাফিনকে বের হতে দেখে নিলা ভেতরে প্রবেশ করল। বললো,”রাজি হয়েছে শাফিন?”

“না হয়নি। উল্টো আমার সঙ্গে রাগারাগী করেছে।”

নিলা আশাহত হলো। মলিন কণ্ঠে বললো,”রাফিনও একই ব্যবহার করেছে। আসলে আমাদের কপালটাই খারাপ।”

এলিনা আর কিছু বললো না। নিশ্চুপ রইলো। নিলা খানিকক্ষণ বসে থেকে চলে গেলো নিজের ঘরে। বিকেল হতেই বাড়ি থেকে বাজারে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়েছিল শোভন। সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পর বাড়ি ফিরলো। হাতে ব্যাগ ভর্তি বাজার। কলিং বেলের শব্দে দরজা খুলে দিলো জ্যোতি। ঘামে শার্ট ভিজে গেছে শোভনের। কপাল থেকেও বিন্দু বিন্দু ঘাম ঝরছে। জ্যোতিকে পাশ কাটিয়ে ব্যাগ হাতে ভেতরে প্রবেশ করল সে। জ্যোতি দৌড়ে গিয়ে গ্লাসে করে পানি এনে শোভনের হাতে দিলো। শোভন সোফায় বসলো তারপর এক নিঃশ্বাসে গ্লাসের পানি শেষ করে শরীর এলিয়ে দিলো সোফায়।

ক্লান্ত কণ্ঠে বললো,”সংসারে যা যা লাগবে সবই মোটামুটি এনেছি। মাছ-মাংস কাল সকালে গিয়ে নিয়ে আসবো।”

জ্যোতি সেসবে কান দিলো না। উদ্বিগ্ন কণ্ঠে শুধালো,
“আপনার কী খুব খারাপ লাগছে?”

“না একটু ক্লান্ত লাগছে। এতটা পথ এলাম তো।”

“ওহ।”

শোভন এখনো হাঁপাচ্ছে। হাঁপাতে হাঁপাতেই বললো,
“আগে কখনো বাজার করা হয়নি তো তাই এমন লাগছে। তবে এবার অভ্যাস হয়ে যাবে।”

জ্যোতির একটু খারাপ লাগলো শোভনের জন্য। মনে একটা প্রশ্ন আসতেই জিজ্ঞেস করল,”তাহলে এতদিন আপনি কোথায় খেয়েছেন?”

“অফিস থেকেই থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। ওখানে রান্না এবং বাজার করার জন্য আলাদা লোক ছিলো।”

“ওহ।”

জ্যোতি উঠে রান্নাঘরে চলে গেলো। ব্যাগ থেকে শাক সবজি গুলো বের করে গুছাতে লাগলো। শোভন সোফা থেকে উঠে ঘরে চলে গেলো।

রোজকার মতো খাঁন বাড়ির সবাই রাতের খাবার একসঙ্গে খেয়ে উঠলো। আনোয়ারা বেগম ঘরে এলেন। দরজা আটকে পান দানি নিয়ে বিছানায় বসলেন। রাউফুন খাঁন ইতস্তত করে স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বললেন,”ওদের খবর নিয়েছিলে? ঠিকমতো পৌঁছেছে তো?”

আনোয়ারা বেগম পান বানাতে বানাতে উল্টো প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন,”কাদের কথা বলছো?”

মনে হচ্ছে লজ্জা পেলেন রাউফুন খাঁন। তবুও বললেন,”বড়ো ছেলে আর বউয়ের কথা বলছিলাম। পৌঁছে গেছে ওরা?”

আনোয়ারা বেগম একটা পান নিজের মুখে ভরলেন। আরেকটা স্বামীর দিকে এগিয়ে দিলেন। খাওয়ার পর একটা পান খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলা আনোয়ারা বেগমের অভ্যাস। এই পান খাওয়ার অভ্যাস উনার ছোটো থেকেই গড়ে উঠেছে। ছোটবেলায় দাদার দেখাদেখি দাদার কাছ থেকে পান খেতেন তিনি।সেই থেকেই অভ্যাস।চেষ্টা করেও এই অভ্যাসটি পরিত্যাগ করতে পারেননি।

রাউফুন খাঁন স্ত্রীর হাত থেকে পানটি নিয়ে বসে আছেন উত্তরের আশায়। আনোয়ারা বেগম বললেন, “অন্যান্য ছেলেরা কোথাও গেলে তো নিজেই খোঁজ নেও। সরাসরি কথাও বলো তাহলে বড়ো ছেলের কথা আমায় কেন জিজ্ঞেস করছো? নিজেই তো ফোন করে জিজ্ঞেস করতে পারো।”

“ব্যঙ্গ করছো?”

“ব্যঙ্গ করবো কেন?ভুল তো একটা করেই ফেলেছো। চাইলেই তো আর তা শুধরাতে পারবে না। তাই বলছি ছেলের কাছে ক্ষমা চাও। সব ভুল বোঝাবুঝি ঠিক করে নাও।”

“কম চেষ্টা কী করেছি? ছেলে তো আমায় সেই সুযোগটাই দেয় না। একমাত্র তোমার কথা যা একটু শুনে। কথা বললেও তোমার সঙ্গেই বলে।”

আনোয়ারা বেগম মৃদু হাসলেন। বললেন,”আমার কথা শুনে? কথা শুনতে বাধ্য হয়। বাবার কোনো দায়িত্বই তো পালন করতে পারোনি। এখন দেখো শেষ বয়সটায় যদি পারো।”

রাউফুন খাঁন প্রতিক্রিয়া করলেন না। এক ধ্যানে নিরব হয়ে বসে রইলেন। আনোয়ারা বেগমও আর ঘাটলেন না স্বামীকে।
________

সকাল হতেই আবারো বাজারে চলে এসেছে শোভন। মাছের আরদে তাজা তাজা সব মাছ। চারিদিকে অনেক ভিড়। হাঁটার জায়গাটা পর্যন্ত নেই। বিশ্রি একটা গন্ধ। নাকে রুমাল চেপে ধরলো‌ শোভন। ধীরে ধীরে পা ফেলে সামনের দিকে এগোচ্ছে সে। একটি দোকানের দিকে এগিয়ে গেলো। শোভনকে দেখতেই দোকানি বিভিন্ন মাছের দিকে আঙুল তাক করে বলতে লাগলেন,”কোনটা নিবেন ভাই? সব তাজা তাজা মাছ। একটু আগেই ধইরা আনা হইছে।”

ছোটো বড়ো নানা রকমের মাছ রয়েছে। কোনটা নিবে ভাবতে লাগলো শোভন। আচ্ছা জ্যোতির কোন মাছটা পছন্দ? আর কোনটাই বা অপছন্দ? প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই শোভনের কাছে। নিজেকে ইচ্ছে করছে বেশ কয়েকটা গা’লি দিতে। মনে মনে আফসোস করে বললো,”আসার সময় উচিত ছিলো ওর থেকে জেনে নেওয়ার। এখন কী করবো? কোন মাছ নিবো?”

ভাবতে ভাবতেই মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। পকেট থেকে মোবাইল বের করল জ্যোতিকে কল দেওয়ার জন্য। তৎক্ষণাৎ আবারো মনে পড়ল,”আমার কাছে তো ওর নাম্বারটাই নেই! এখন কী হবে?”

দোকানদার ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে শোভনের দিকে। হয়তো তার হাবভাব বোঝার চেষ্টা করছে। দোকানি বললো,”ভাই কোন মাছ নিবেন কইলেন না তো?”

শোভন দম ছাড়লো। এখন আর কিছুই করার নেই। খালি হাতে তো আর বাড়ি ফেরা যাবে না। তাই নিজের পছন্দ মতো মাছ কেনার সিদ্ধান্ত নিলো। দোকানির উদ্দেশ্যে বললো,”মাছ ভালো তো?”

“বিশ্বাস না হইলে আপনে দেইখা নেন ভাই। আমার দোকানের মাছ এক্কেবারে ভালা।”

শোভন শুকনো ঢুক গিললো। মাছ ভালো নাকি খারাপ তা আবার দেখে কী করে? প্রশ্নটা হজম করে নিলো। যদি দোকানি শুনে হাসে! শোভন কারো ঠাট্টার পাত্র হতে চায় না। দোকানি আবারো জিজ্ঞেস করল,”মাছ কী কাটাইয়া নিবেন?”

“হুম কেটেই দিন।”

“আইচ্ছা।”বলেই একটি চৌদ্দ পনের বছরের ছেলের দিকে দৃষ্টি দিয়ে দোকানি হাঁক ছেড়ে বললো,”এই ছুটোন ভাইয়ের মাছ কয়ডা কাইট্টা দে।”

ছুটোন নামক ছেলেটি মাছগুলো নিয়ে বিশাল আকারের বঁ’টির সামনে বসে পড়ল।

কোনোমতে মাছ কিনে মাছের আরদ থেকে বের হতে লাগলো শোভন। সরু রাস্তাটায় নোংরা পানি জমে কর্দমাক্ত হয়ে হাঁটার অযোগ্য হয়ে গেছে। অথচ মানুষজন কী স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটাচলা করছে। ভিড়ের মধ্যেই হঠাৎ করে কেউ তার পায়ে পাড়া দিলো।ব্যথায় চোখমুখ কুঁচকে নিলো শোভন।

আফসোস করে বললো,”বাজার করা এত্ত কষ্ট কেন? শুধু বাজার না বিয়ে করে সংসার করাটাই কষ্টকর। এই জন্যই কে যেনো বলেছিল দিল্লি কা লাড্ডু না খেলেও পস্তাতে হয়, খেলেও পস্তাতে হয়।”

এবার গোশত কিনতে এলো শোভন। কসাই গোশত কা’টছে। এখানে এসেও বিপদে পড়ল সে। কত কেজি গোশত নিবে চিন্তায় পড়ে গেলো। আচ্ছা জ্যোতি কী গরুর গোশত পছন্দ করে? এবার সত্যি সত্যি নিজের গালে কয়েকটা থাপ্প’ড় মা’রতে ইচ্ছে হলো। একটা ছেলে এত দায়িত্ব জ্ঞানহীন হয় কী করে? নিজেই নিজেকে ধিক্কার জানালো শোভন।

শেষে সিদ্ধান্ত নিলো,”আপাতত এক কেজি নিয়ে যাই। বাড়ি গিয়ে জেনে নেওয়া যাবে সবকিছু। পরে না হয় আবার এসে কিনে নেওয়া যাবে।”

যেই ভাবা সেই কাজ। বাজার শেষ করে বাড়ি ফিরলো। সকালের নাস্তা তৈরি করে টেবিলে রাখলো জ্যোতি। অপেক্ষা করছে স্বামীর জন্য। স্বামী ফিরলে দুজন একসঙ্গে নাস্তা করবে। কলিং বেল বাজতেই দৌড়ে গেলো দরজা খুলতে।

শোভন জ্যোতির হাতে ব্যাগ দিয়ে বললো,”মাছ মাংস সব ব্যাগের ভেতরে আছে। মাছও কেটে এনেছি।”

জ্যোতি ব্যাগ নিয়ে রান্নাঘরে যেতে যেতে বললো, “টেবিলে খাবার রাখা আছে খেয়ে নিন।”

শোভন গিয়ে চেয়ার টেনে বসলো। জ্যোতিও চলে এলো।খাওয়া শেষে উঠে গেলো শোভন তারপর ঘরে গেলো অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হতে। ব্যাগ থেকে একে একে সব বের করে মেঝেতে রেখেছে জ্যোতি। নতুন এক ভাবনার উদয় হলো। এতগুলো মাছ কী করবে? কোথায় রাখবে? সেই ভাবনায় মশগুল হয়ে আছে। শেষে উঠে দাঁড়ালো। ঘরে চলে এলো।

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শার্টের বোতাম লাগাচ্ছে শোভন। জ্যোতি প্রশ্ন করল,”আবার কোথায় যাবেন?”

না ঘুরেই উত্তর দিলো,”অফিসে।”

“কখন ফিরবেন?”

“সঠিক বলতে পারছি না। তবে সন্ধ্যের আগেই ফিরে আসার চেষ্টা করবো।”

“আচ্ছা এতগুলো মাছ কেন আনলেন? সব কী আর একসঙ্গে রান্না করা যাবে? মানুষ তো আমরা মোটেই দুজন।”

“যতটুকু করা যায় করো। অবশিষ্ট রেখে দাও।”

“কোথায় রাখবো? ফ্রিজ নেই তো। বাহিরে রেখে দিলে মাছ কী আর থাকবে? সব তো পচে যাবে।”

শার্টের বোতাম লাগিয়ে চুল ঠিক করছিল শোভন। জ্যোতির কথায় থেমে গেলো। কপালে কয়েকটি ভাঁজ পড়ল। বললো,”ফ্রিজ লাগবে?”

“ফ্রিজ ছাড়া তো আর এত মাছ রাখা যাবে না।”

“আজকের দিনটা কোনোভাবে ম্যানেজ করে নাও। আমি দেখছি কী করা যায়।”

“ফ্রিজের দরকার নেই। অল্প অল্প করে, পরিমাণ মতো বাজার করলেই তো সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।”

“রোজ রোজ আমি বাজারে যাবো নাকি? আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তোমাকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না। আসছি আমি। আমি বাদে অন্য কেউ এলে কিন্তু একদম দরজা খুলবে না।”

জ্যোতি মাথা নাড়িয়ে “আচ্ছা” বললো। শোভন বিছানার উপর থেকে মোবাইল আর অফিস ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেলো। ছোটবেলায় জ্যোতিদের বাড়িতে কোনো ফ্রিজ ছিলো না। কখনো মা বাজার করে আনতো আবার কখনো বা ভাই বাজার করতো। মাঝেমধ্যে যদি মাছের পরিমাণ বেশি হয়ে যেতো তখন তার মা অবশিষ্ট মাছগুলো ভেঁজে রেখে দিতেন এতে আর মাছ পচতো না।জ্যোতিও এই পদ্ধতি অবলম্বন করার সিদ্ধান্ত নিলো।

মাছগুলো পরিষ্কার করে আলাদা আলাদা পাত্রে রাখলো। কিন্তু আবার এক ঝামেলায় পড়ল। চিংড়ি মাছ আবার কীভাবে ভেঁজে সংরক্ষণ করে? ভাবনার মধ্যেই হুট করে কলিং বেল বেজে উঠলো। ভ্রু কুঁচকে গেলো জ্যোতির। এখন আবার কে এলো? দরজার কাছে গিয়ে লুকিং হোলে ডান চোখ রেখে বাইরে কে আছে দেখার চেষ্টা করল।অপরিচিত একজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন। জ্যোতি ভাবতে লাগলো, দরজা খুলবো কী খুলবো না? শোভন তো দরজা খুলতে‌ নিষেধ করেছে। ভাবনার মধ্যেই আবারো বাজলো কলিং বেল।

চলবে ______

(কার্টেসি ছাড়া কপি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here