#সিঙ্গেল_মাদার
#ফাবিহা_ফারিন_প্রিয়ন্তী
পর্ব: ১৪
আনোয়ারা বেগমের মাথায় কিছুই যাচ্ছে না একটা অপরিচিত মেয়ে তার উপর গর্ভবতী সে কিনা পরিচয় দিচ্ছে আতিকের বন্ধু তার উপর স্বামী নিখোঁজ । খুব একটা সুবিধার চোখে দেখলেন না ইরিন কে ।
ইরিনের ও কেমন ইতস্তত বোধ হচ্ছে ।
আনোয়ারা বেগম ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে এলেন ইরিন সবকিছু গুছিয়ে খাবার দিল ।
ইরিনের ফোনটা হঠাৎ বেজে উঠলো ফোন নিয়ে দেখলো আতিক ফোন দিয়েছে ।
– নিউরোলজিস্ট বাবু বলুন ।
– অপরিচিতা আমার মা আসার কথা, মা কি এসেছে ?
– জ্বি এসেছে ।
– আচ্ছা কোনো সমস্যা হয় নি তো !
– না সমস্যা নেই ।
– আচ্ছা আমি দুপুরের পরে চলে আসবো ।
– ঠিক আছে ।
ইরিন খাবার টেবিলে গিয়ে আনোয়ারা বেগম কে ডাক দিল
– আন্টি খেতে চলুন ।
– যাও আসতেছি ।
দুজন মিলে খেতে বসলো একসাথে , আনোয়ারা বেগমের কিউরিওসিটি টা একটুও কমলো না যতক্ষণ না সবটা জানতে পারছে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে না । আনোয়ারা বেগম প্রশ্ন করলো ইরিন কে
– তোমার বাসা কোথায় ?
– জ্বি ঢাকাতে ।
– পড়াশোনা করো নাকি ?
– চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা ডিপার্টমেন্টে ফোর্থ ইয়ারে আছি ।
এবার কিছুটা অবাক হলো আনোয়ারা বেগম বুঝতে না দিয়ে প্রশ্ন করলো “তোমার স্বামী কি করতেন” ?
ও স্টুডেন্ট ছিল !
-হঠাৎ এমন নিখোঁজ কেন হলো ?
– জানিনা আন্টি , খুঁজেছি কিন্তু কোথাও পাইনি ।
– তোমার বাসা তে জানাও নি ?
– জানিয়েছিলাম কিন্তু !
– কি ?
– আমার বাচ্চা অ্যাবোর্ট করাতে চেয়েছিলো তাই আর বাড়ি ফিরি নি ।
– ভার্সিটির হল তো ছিল সেখানে ছেড়ে এখানে কেন ?
ইরিনের কান্না পাকিয়ে আসছিল আনোয়ারা বেগম যে ইরিনের উপস্থিতি পছন্দ করেছে না তা ভালো মতোই বুঝতে পারছে ।
– কান্না চেপে ইরিন বললো “আন্টি আমি যে বিবাহিত সে প্রমাণ আমি দিতে পারিনি বলেই আমাকে হল থেকে বের করে দিয়েছিল ।
চাক্ষুস প্রমাণ ছিল কিন্তু উনারা লিখিত প্রমাণ চেয়েছিল বা বিয়ের ছবি এমন কিছু যেগুলো আমার কাছে ছিল না” ।
– বাবা মা তো ভালো ডিসিশন দিয়েছিল মেনে নিলে না কেন , নিজের ফিউচার সম্পর্কে আদৌ কি কিছু ভেবেছো , মাঝে মাঝে পাকনামি না করে বড়দের কথা ও মেনে নিতে হয় ।
ইরিনের কেন জানি কথাটা শুনে রাগ হলো কিন্তু তা বহিঃপ্রকাশ না করে বললো – “হয়তো পারতাম তাদের ডিসিশন টা মেনে নিতে যদি আমার বাচ্চা অবৈধ হতো , আমার বৈধ রক্তের অস্তিত্ব কিভাবে শেষ করে দিতাম ! আমি তো পারিনি কোনো মা জাতি পারবে কি না জানা নেই” ।
আর ভবিষ্যত নিয়ে ভাবনা অবশ্যই আছে আন্টি সারাজীবন তো আর কারোর কাঁধে ভর করে চলতে পারবো না , তবে আমি সত্যি কৃতজ্ঞ নিউরোলজিস্ট বাবুর কাছে এমন একটা সময়ে আমাকে ঠাঁই দিয়েছে ।
– মাথার উপরে ছাতা না থাকলে নিজেকেই শক্ত হতে হয় । তবে কোনো পরপুরুষের সাথে থাকলে কলঙ্কিনীর ভাগ নিতে হয় জানো তো কথাটা !
কোনো পরপুরুষের সাথে কিসের ভিত্তিতে থাকছো এতোটা নিরাপদে ??
ইরিন একটু চমকে উঠলো উনি কি ইংগিত দিলেন আতিকের মা । না চাইতেও চোখ থেকে পানি বেরিয়ে এলো ।
– আন্টি আতিক বাবু শুধুই আমার বন্ধু ।
– তা মা একটা ছেলে কোন স্বার্থে একটা স্বামী হারানো মেয়ের জন্য দায়িত্ব নিতে যায় বলতে পারো আমাকে ? কেন আমার ছেলেটা বিয়েতে রাজি হচ্ছে না এখন বুঝতে পারছি।
– আন্টি আমাকে আর যায় হোক চরিত্রহীনা বলবেন না ।
– বলবো কি বলছো মা, তুমি কি সেটা তো তুমিই প্রমাণ করে দিয়েছো ।
বলেই আনোয়ারা বেগম খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে গেলেন ।
ইরিন আর খাবার টেবিল ছেড়ে উঠতে পারলো না বসেই কান্না করতে লাগলো একটা দানা ও মুখে গেল না ।
এমনটা তো হওয়ার ই ছিল একদিন না একদিন কারোর সামনে জবাবদিহি দিতেই হতো ইরিন কে ।
আজ ভেতর ভেতর অনেক ভেঙে যাচ্ছে ইরিন । কিন্তু শেষমেশ চরিত্রহীনার দাগ লাগলো নিউরোলজিস্ট বাবু কে সাথে নিয়ে , এই ভয়টা আগেই পেয়েছিল তা সত্যি হয়ে যাবে ভাবতে পারে নি ।
আতিক ফেরার পর মা-ছেলে তে অনেক কথা কাটাকাটি হয়েছে নিচু শব্দে ।
অথচ সবটাই কানে গিয়েছে ইরিনের , ভয়ে গা কাটা দিয়ে আসছে এই আশ্রয় টাও হারাতে হবে, কাল ই বাড়ি ছাড়বে ইরিন মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো ।
বারান্দার গ্ৰীল ধরে দাঁড়িয়ে আছে ইরিন দূরের আকাশ টার দিকে তাকিয়ে আছে ।
আজ সৌমিকের উপর অভিমান বাদে রাগ জমছে , নিয়তির উপর কড়া অভিযোগ এর পসরা সাজিয়ে চোখে জল ফেলছে ।
– অপরিচিতা !
– নিউরোলজিস্ট বাবু আসুন ।
– কেন কান্না করছেন ?
– যেখানে নিয়তির অন্তরালে ভাঁজে ভাঁজে কাঁটা শয্যা বিছানো সেখানে কান্নাটা হয়তো অনিবার্য সুরে গাঁথা ।
– এভাবে বলবেন না প্লিজ আমি আছি তো সবসময় আপনার পাশে ।
ইরিন আতিকের চোখের দিকে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করল
– কেন আছেন নিউরোলজিস্ট বাবু ?
আতিকের মুখের কথা যেন থেমে গেল চুপচাপ ইরিনের মুখপানে চেয়ে আছে ।
– আজ জানতে চাই নিউরোলজিস্ট বাবু কেন আমাকে এতো সাহায্য করছেন বিনা স্বার্থে ?
কি চাই আমার কাছে আপনার ?
– অপরিচিতা এসব কি বলছেন থামুন প্লিজ , এই মুহূর্তে আপনার এতো স্ট্রেস নেওয়া ঠিক নয় ।
– আমাকে নিয়ে আর ভাববেন না কাল আমি বাড়ি ছাড়ছি ।
– এই ভুল টা এখন করবেন না প্লিজ ।
– না এখন যদি না যায় বড্ড অবিচার করা হবে আপনার আমার বন্ধুত্বের , আমি চরিত্রহীনার কালি আমাদের বন্ধুত্বে লাগতে দেবো না আপনি আর আমাকে আটকাবেন না দয়া করে , আমি সারাজীবন আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবো ।
– মায়ের কথাতে এমন সিদ্ধান্ত নেবেন না অপরিচিতা ।
– উনি গুরুজন আমি আন্টির কথাতে একটুও রাগ করি নি নিউরোলজিস্ট বাবু । আপনি ঘরে যান আমি ঘুমোবো ।
আতিক বোঝানোর বৃথা চেষ্টা করলো ইরিন কে কিছুতেই বোঝাতে পারলো না ।
রাতটা সিগারেটের সাথেই পার করলো আতিক ঘুম হীন রাত পার করলো ইরিন ও ।
ভোর ভোর সবার আগে উঠে বাড়ি ছাড়লো কেউ দেখতে পাওয়ার আগেই পাড়ি জমালো ইরিন নতুন অপরিচিত শহরে ।
বাসে বসে ভাবতে লাগলো অনেক হয়েছে সৌমিক কে খোঁজার বৃথা চেষ্টা । এবার না হয় শুরু হবে একটা নতুন জীবনের অধ্যায় ।
কেটে যায় আরো কয়েকটি মাস । ইরিন এখন একটা প্রাইভেট স্কুলে চাকরি করে । ইরিনের মেয়ে হবে সনো করে দেখা গেছে ।
বড্ড প্রতিক্ষায় দিন কাটাচ্ছে ইরিন তার পুচকু রাণীর জন্য ।
– রহিমা খালা আজ বড্ড ব্যাথা করছে ।
– মা সময় আইয়া পড়ছে হয়তো চলো ডক্তারের কাছে চইলা যায় সময় নষ্ট না কইরা ।
– আরেকটু দেখি খালা ।
– আচ্ছা মা কিন্তু বেশীক্ষণ অপেক্ষা করন যাইবো না কিন্তু ।
– আচ্ছা খালা ।
ইরিন যেখানে চাকরি করে সেখানের স্কুলের আয়া ইরিনের সাথেই থাকে উনার ও আগে পিছে কোনো সম্পর্কের কোনো টান পোড়েন নেই তাই উনিও ইরিনের সাথে এক সাথেই থাকেন ।
রাত আটটার দিকে আবারো ইরিনের ব্যাথা উঠলো ভয়ানক ভাবে এবার সময় আসন্ন , তাড়াতাড়ি গাড়ি ঠিক করে রহিমা খালা ইরিন কে নিয়ে হসপিটালে ছুটলো ।
রাত দশটার দিকে পৃথিবীর মুখ আলো করে জন্ম নিলো ইরিন সৌমিকের ফুটফুটে রাজকন্যা ।
চলবে ….