সে আমার মায়াবতী পর্ব -৩৫ ও শেষ

#সে_আমার_মায়াবতী
#লেখনিতে_ঈশা_ইসলাম
#অন্তিম_পর্ব
মুগ্ধ হেসে তাকিয়ে আছি আমার প্রিয় মানুষের দিকে। তার বুকে লেপ্টে সেই কখন থেকে আঁকিবুকি করছি। হ্যাঁ আজ আমার প্রেগন্যান্সির ন- মাস চলছে। সময় জেনো চোখের পলকে চলে গেলো। আসলে খারাপ সময় গুলো কখনোই কাটতে চায় না। কেউ বলবে আগের ছোট ২০ বছরের মেয়েটার বিয়ে হয়ে আবার বেবি হবে। এই নিয়ে মিঃ চৌধুরী আমাকে প্রতিনিয়ত জ্বালাতন করে। মুখ বুঝে সহ্য করি কিন্তু মুড সুইং এর নাম করে সব রাগ ঝেড়ে ফেলি।

— জান কি হয়েছে পাখি।খারাপ লাগছে,কিছু খাবে?(মিঃ চৌধুরি)

— হুম শুনুন না প্লিজ ( আমি)

— নো তুমি যদি ভেবে থাকো বাহিরের জিনিস খাবে তাহলে এত মিষ্টি সুরে আমি ভুলবো না। ( মিঃ চৌধুরী)

— শুনুন না প্লিজ এই যে। আচ্ছা আমাকে না আপনি ভালোবাসেন। প্লিজ প্লিজ আমার না খুব ফুচকা খেতে ইচ্ছা করছে। ( আমি)

— এখন রাত দশটা বাজতে চললো আর তুমি এসব খাবে? না জান একটু পর ফ্রুট কাস্টার্ড খেতে হবে। এসব এখন হবে না। ( মিঃ চৌধুরী)

— না না আমি এসব খেতে পারবো না।আপনি জোর করে সবসময় জিতে যাবেন কেন? আচ্ছা আমি বাবুকে বলে দিবো তার আব্বু তার আম্মুকে খেতে দেয় না। (আমি)

— আমার মেয়েকে আমার বিরুদ্ধে উসকাবে জান। (মিঃ চৌধুরি)

— প্লিজ আমি ফুচকা খাবো। আপনি তো বলেছেন ডেলিভারির বেশি ডেইট নেই যদি কিছু হ!! ( মিঃ চৌধুরী)

— হেই শুসসস কি বলছো এসব। এমনিতেই টেনশেন এ আমি শেষ তার মধ্যে আমাকে ভয় না দেখালে তোমার হচ্ছে না? আচ্ছা কাল এনে দিবো। এখন তুমি একা থাকতে পারবে না। (মিঃ চৌধুরি)

— একা কোথায় থাকবো আপনার মেয়ে আছে সাথে। আর তাছাড়াও সবাই তো ঘরেই আছে। আমার কাছে ফোন আছে। কিছু হলে ফোন! ( আমি)

— হ্যাঁ আমি তোমার ফোনের ভরসায় যাই এখন তাই না। আমি আম্মু কে ডেকে দিচ্ছি চুপচাপ বসো। ( মিঃ চৌধুরী)

কথাটা বলেই উনি চলে গেলেন আম্মু কে ডেকে আনতে। লোকটা এতটা পজেসিভ একটা মুহুর্ত একা ছাড়ে না। এমনকি প্রেগ্ন্যাসির ন- মাসেও সে আমাকে চোখের আড়াল করে নি। অফিসের কাজ ঘরে বসেই করে উনি। আমার সব কাজ নিজের হাতে করে। এতটুকু বিরক্তি প্রকাশ পায় না তার মাঝে। রাতে আমি না ঘুমলে নিজেও ঘুমবে না।মুড সুইং হলে সব সহ্য করবে। রাত বিরেতে কিছু খেতে ইচ্ছে করলে যত রাত হোক নিয়ে আসবে। একদিন এমন ছিলো-

— মিঃ চৌধুরী আমার না বিরিয়ানি খেতে খুব ইচ্ছে করছে ( আমি)

— জান রাত ৩ টা বাজে ওয়েল এর জিনিস খাবে? আচ্ছা আচ্ছা আমি এক্ষুনি এনে দিচ্ছি। ( মিঃ চৌধুরী)

— না আমি আপনার হাতের রান্না খাবো। (আমি)

মুখ ফুলিয়ে কথাটা বলতেই উনি মুচকি হেসে ঝুঁকে আমার কপালে চুমু খেয়ে রান্না করতে চলে গেলেন। ইশ ঘুম থেকে তুলে রান্না করতে পাঠিয়েছি কিন্তু তার মাঝে এতটুকু বিরক্তির রেস মাত্র নেই। পেটে চিনচিনে ব্যথা অনুভব হতেই হালকা কুঁকিয়ে উঠলাম।

— আহহ

অন্যদিনের মতো সামান্য ব্যথা ভেবে তেমন পাত্তা দিলাম না। আজকাল পুরো বাড়ি আনন্দে মুখরিত থাকে। আপুর একটা ছেলে হয়েছে নাম রেখেছি আমি ঈভান। মায়া আর আবির ভাইয়ার বিয়ের আট মাস চলছে। মায়া বেবি নিতে চাইলেও আবির ভাইয়া মায়াকে ধমকে রেখেছে। ছোট এই সময় কিসের বেবি। তুবা আর তুহিন ভাইয়ার বিয়ে হয়েছে। তুবা দুই মাসের প্রেগন্যান্ট। এই নিয়ে আপু আর তুবা সেই ঝামেলা আমার মেয়ের সাথে ওদের ছেলের বিয়ে দিবে। কিন্তু এনা আপু বলেছে আমার মেয়ের সাথে ওনার ছেলের বিয়ে দিবে। হ্যাঁ এনা আপু আর ফারাজ ভাইয়ার বিয়ে হয়েছে। বেচারিকে ভাইয়া তুলে নিয়ে বিয়ে করেছে। এনা আপু যদিও রাজি ছিলো মিথ্যা রাগ দেখিয়েছে এই আর কি। তার বক্তব্য ছিলো-

— না না আমি এভাবে বিয়ে করবো না। সবার বিয়ে কিছু না কিছু ইনসেডেন্টলি হয়েছে আমার কেন হবে না? (এনা)

— ওহহ তুমি তাই চাও বুঝি। আমি আজকেই বিয়ে করবো তোমায়। দেখি কি করো। (ফারাজ)

— আরে আ! ( এনা)

এনা আপু কথা শেষ করার আগেই ভাইয়া টেনে নিয়ে চলে গেছে। দু-ঘন্টা পেরোতেই দেখি দু- জন বিয়ে করে হাজির। আম্মু আব্বুও এনা আপুকে নির্ধিধায় মেনে নিয়েছে। সবাই সুখেই আছে। রাইসা অনেক বার বেবি নেয়ার ট্রাই করেছে কিন্তু মিস্কারেজ এর জন্য পারে নি। কেঁদে কেটে আমার কাছে ক্ষমা চাইলে সবাই ক্ষমা করে দেয়। এখন রাইসাও বেশ সুখে আছে। প্রতি সপ্তাহে সবাই একসাথে আড্ডা দেই আমরা। একটা হ্যপি ফ্যমিলি তে পরিপূর্ন সম্পুর্ন পরিবার। পেটের দিকে আবার ব্যথা শুরু হতেই হাতরে নিচে নামলাম। কুর্তি সামলে ফ্লোরে পা দিতেই ব্যথা বেড়ে যায়। না পেরে কার্পেট এ বসে পরি৷ ব্যথায় কথা বের হচ্ছে না। আস্তে আস্তে মিঃ চৌধুরী কে ডাকছি কিন্তু পারছি না। ঝাপসা চোখে দেখি হন্তদন্ত হয়ে মিঃ চৌধুরী দৌরে এসেছে।

— কি কি হয়েছে পাখি। ব্যথা করছে। আ আমি এক্ষুনি হসপিটাল নিয়ে যাচ্ছি জান।(মিঃ চৌধুরি)

— শু শুনুন না আ আমার খুব ব্যথা করছে আহহ আপনি! (আমি)

— এই মেয়ে চুপ থাকো না। এত বকবক করো কেন। (মিঃ চৌধুরী)

ওনার চিৎকারে পুরো বাড়ি এক হয়ে গিয়েছে৷ আম্মু এসে কোন মতে ওনাকে থামিয়ে আমাকে ওরনা দিয়ে ঢেকে দিলেন। উনি কোলে নিতেই আপু আর আম্মু পিছন পিছন বের হলেন। আব্বু আর সায়ন ভাইয়া আগেই গাড়ি বের করতে গিয়েছে। উনি আমাকে নিয়ে গাড়িতে উঠতেই আমি ব্যথায় আরোও চিল্লিয়ে উঠি। চোখ নিভু নিভু হতেই গালে চাপড় মেরে বললেন-

— প্লিজ পাখি চোখ খুলে রাখো জান। আরেকটু এই তো জান প্লিজ চোখ অফ করো না। সায়ন দ্রুত ড্রাইভ কর নাহলে সরে যা। ( মিঃ চৌধুরী)

আমার ব্যথায় মানুষটা পাগল পাগল অবস্থা। যত দ্রুত ড্রাইভ করে আধ ঘন্টার রাস্তা দশ মিনিটে পার করে এসেছে। উনি চিৎকার করে হসপিটাল এক করে ফেলেছে। নেহাত ক্ষমতা আছে নয়তো ডা. সবাই মিলে ওনাকে আচ্ছা করে বকে দিতো। ওটিতে নেয়ার আগে সবার মুখটা খুব দেখতে ইচ্ছা করছে যদি আর না ফিরে আসি। রুমে নেয়ার আগে মিঃ চৌধুরীর হাত ধরে বললাম-

— আ আমার বেবির যেন কিছু না হয় প্লিজ। আমার য যদি কিছু হয় তবে কিন্তু আপনি আর কাওকে আমার জায়গাটা দিবেন না। আমার বেবির ভাগ্য যেন আমার মতো না হয়। ও যেন ওর মায়ের মতো আদর বিহিন বড় না হয়। ( আমি)

— জান তুই বুঝিস না আমার ভেতর কি চলছে। কেন এইভাবে দূর্বল করছিস। ( মিঃ চৌধুরী)

— চ চৌধুরি সাহেব শুনছেন? ( আমি)

— ভালোবাসি পাখি। তোমার জায়গা এই বুকে লিখিত কেউ মুছতে পারবে না কিন্তু। ( মিঃ চৌধুরী)

— আমিও যে খুব ভালোবাসি আপনাকে। খুব ভালোবা! ( আমি)

দু-জনের চোখের পানির সাথে আশেপাশের সবার চোখেই পানি। কেউ কেউ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এর মধ্যেই আম্মু আব্বু সহ সবাই চলে এসেছে। তাদের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে চোখ বন্ধ করে নিলাম।

——————————————————————-

পিটপিট করে চোখ খুলে তাকাতেই আগে হসপিটাল এর সাদা দেয়াল চোখে পরলো। এদিক সেদিক তাকাতেই মিঃ চৌধুরীর দিকে চোখ পরলো। যে এখন এক হাত জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। আস্তে আস্তে ঘুরে ওনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই ওনার ঘুম উবে গেল। দ্রুত উঠে আমাকে চুমু খেতে শুরু করলেন।

— জান আর ইউ ওকে। আ আমার নিঃশ্বাস আটকে ছিলো যে।( মিঃ চৌধুরী)

— আমি ঠিক আছি। আপনার কি হাল হয়েছে শুনি। একদিনেই এই অবস্থা? ছি চৌধুরি সাহেব সবাই দেখলে কি বলবে তাদের ক্রাশ বয় আজ বউ পাগল। (আমি)

আমার কথায় উনি হেসে জড়িয়ে ধরলেন। বাবুর কথা মনে হতেই বললাম-

— আ আমার বেবি। ( আমি)

— আছে পাখি। ওকে ফিডিং করা হচ্ছে। মা ঘুমোচ্ছে তাই আপাদত আম্মু নিয়ে গিয়েছে। ( মিঃ চৌধুরী)

ওনার কথা শেষ হতেই নার্স দড়জা নক করলেন। সাদা তোয়ালে মুঁড়িয়ে ছোট একটা প্রান আমাদের দু-জনের কাছে দিয়ে গেলো। এতো পুরো মিঃ চৌধুরীর কার্বন কপি। হাত পা নাড়াতেই আমি খিলখিলিয়ে হেসে দিলাম। উনি বুকে হাত গুজে সে হাশি দেখছে। এর মাঝেই পুরো পরিবার দেখা করতে এলো। সবাই দেখা করার মাঝে আপু আর এনা আপু ঝগড়া লেগে গেলেন কে আগে কোলে নিবেন। সবাই ওদের কাহিনি দেখে হেসে দিলো।হসপিটাল এর স্মেল আমার সহ্য হয় না। তাই উনি দু-দিনের মাথায় বাড়িতে নিয়ে এলেন। বাড়িতে মেহমানে গমগম করছে। উনি একাই আমার আর বাবুর খেয়াল রাখছেন। আজ বাবুর নাম করন আকিকা। তাই উনি আজও আমাকে নিজের হাতে শাড়ি পড়িয়ে দিলেন।সাজিয়ে দিলেন নিজের হাতে। বাবুর নাম রাখার জন্য সবাই উদ্যত্ব হলে রাইসা নিজেই নামটা রাখে। এটা অবশ্য মিঃ চৌধুরির বুদ্ধি। বাবুর নাম রাখা হয়, মেহেজাবিন নুর। রাইসা এই নামটা নিজের মেয়ের জন্য রেখেছিলো তাই আজ এটাই আমার মেয়েকে দিলো। অনুষ্ঠান শেষে বাবুকে রেখে দিতেই উনি হেচঁকা টানে বুকে নিয়ে ফেললেন। কোমড় উচিয়ে চুমু দিয়ে ডুবিয়ে দিলেন তার ওষ্টদ্বয়। মিনিট খানেক পরে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললেন-

— আমার মায়াবতি। তুমি প্রতিদিন আমাকে প্রেমে ফেলো কেন?আজও সেই আমার ছোট পিচ্চি পরি তুমি। ভালোবাসি জান। সেই প্রথম থেকে আজও সে আমার মায়াবতি এর জায়গাটা তোমার। ( মিঃ চৌধুরী)

— আমিও ভালোবাসি চৌধুরি সাহেব। আপনি আমার সুখ আমার শান্তি। আমার প্রেমিক পুরুষ। আমার চৌধুরি সাহেব।

দু-জনেই আজ নিজেদের মনের বাক্য ব্যক্ত করছি ভালোবাসাময় প্রহরে। যেখানে আমাদের ভালোবাসা শুরু হয়েছে, আজ সেখান থেকেই আবারো গভির প্রেমে জড়িয়ে পরেছি আমরা। সব শেষে এটাই আপনি আমার শান্তি। ভালোবাসার মুহুর্তময় সুখ।।( #সমাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here