সে কে ছিলো -০৪

#সে-কে-ছিলো
সিজন টু
পর্ব ৪

#সমুদ্রিত সুমি

ভোরের কুয়াশা রোদ উঠতেই কেটে যায়।কিন্তু নিয়াজ আর মনির জীবনের কুয়াশা গুলো যেন কাটতেই চায় না।এতোটা কষ্ট এতোটা সমস্যা কোথাও যেন তাঁর সমাধান খুঁজে পাওয়া মুশকিল। দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা প্রায় মনিকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হচ্ছে। আর নিয়াজ তাঁর চোখের ঘুম হারাম।মনির কষ্ট দেখে কেউ মজা পেলেও নিয়াজের কষ্টে কেউ ব্যথিত হচ্ছে। সে চায় মনি কষ্ট পাক,কিন্তু নিয়াজ নয়।তাঁর তো শুধু কষ্ট দেওয়ার ইচ্ছে ছিলো,কাউকে খুন করার নয়।কিন্তু তবুও খুন করতে হয়েছে। সজল এবং সিয়াম যে তাঁর সব রহস্য জেনে গিয়েছিল। তাই তো সব কিছু প্ল্যান করে সাজানো হয়েছিলো ওদের মৃত্যুর দিন। ভেবেছিলো আর সে কিছু করবে না,কিন্তু নিজের জীবনের শত্রুকে এতো সুখে থাকতে দেখে যে তাঁর মনের সেই প্রতিশোধের আগুন আবারও দাউদাউ করে জ্বলে উঠেছে।একটা মানুষের জন্য আজ কতো মানুষের কষ্ট দেখতে হচ্ছে। তবুও বুকে শান্তির বাতাস বয়ে যায় তাঁর ।কারো বেঈমানীর শাস্তি এটা।শুধু আফসোস যে বেঈমানী করেছিলো তাঁকেই শাস্তি দেওয়া হলো না।তাঁকে শাস্তি দেওয়ার আগেই সে পরকালে পাড়ি জমিয়েছে।তবুও যাঁর সুত্রে এতো কিছু, যাঁর জন্য অকালে বিধবার তকমা লাগানো হয়েছে গায়ে তাঁকে তো কষ্ট দিচ্ছে এটাই কম কিসে।যেদিন ওর বুক থেকে ওর সন্তান কেঁড়ে নিবে তখন ওর যন্ত্রণা দেখে বুকের শীতল বাতাস বইবে,সে কথা মনে হতেই কেমন জানি খুশি খুশি লাগছে।এতো কিছু কখনোই হতো না। যদি সেদিন মনিকে নিয়াজ বিয়ে করতো।সে তো চেয়েছিলো সারাজীবন ধরে মনি কষ্ট পাক নিজেকে ধর্ষীতা, অপবিত্র ভাবুক।কিন্তু না তাঁকে নিয়াজ এটাই বুঝিয়েছে সে কখনোই অপবিত্র হয় না যাকে কেউ জোর করে নষ্ট করে।মনি তো নিজ থেকে কারো সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেনি তাহলো সে কি করে অপবিত্র হলো।আর ধীরে ধীরে মনি এটা বিশ্বাস করে স্বাভাবিক হয়ে সুখের সংসার গড়ে তোলে।কিন্তু তাঁর তো এই সুখের সংসার ভালো লাগেনি।বুকে রয়েছে প্রতিশোধের আগুন।যা-ই হয়ে যাক।প্রতিশোধ তো নিতেই হবে।

——————–

রাত প্রায় পৌনে চারটা,চারিদিকে একটা ভয়ংকর পরিস্থিতি।দূর থেকে ভেসে আসছে ঝিঁঝি পোকার ডাক। কিছুক্ষন পর পর কুকপক্ষী ডাকছে।এমন ভয়ংকর রাত যে কারোরই মনকে ভিত করতে সক্ষম। এমন রাতেই ধানখেতের আলপথ বেয়ে হেঁটে যাচ্ছে কেউ।পড়নে একটা টিশার্ট আর একটা শর্টপ্যান্ট।অথচ বাহিরে কনকনে ঠান্ডা। কিন্তু তাঁর হাঁটার গতি বা মুখ দেখা বোঝা যাচ্ছে না তাঁর শীত লাগছে।তাঁর কোন ভয় বা কষ্ট কিছুই হচ্ছে না।সে এদিক ওদিক শুধু কিছু খুঁজছে। কিন্তু কিছুই পাওয়া যায়নি।কিন্তু কিছু পাওয়া যাবে এমনই একটি মেসেজ এসেছিলো।তাইতো তো বিপদ হতে পারে জেনেও ছুটে এসেছে এখানে।কিন্তু কিছুই তো পাওয়া গেলো না।অচেনা নাম্বার থেকে একটা ঠিকানা দেওয়া হয়েছিলো।ঠিকানায় চলে এলেও কিছুই পাওয়া গেলো না সেখানে।ওই নাম্বার থেকে একটা মেসেজে বলা হয়েছিলো যদি নিয়াজ ওখানে কিছু পেয়ে যায়,তাহলে মনি কোথায় তাঁর একটা সূত্র দিবে।নিয়াজ যেন একবুক আশা নিয়ে নিশ্বাস নিয়েছিলো,এমন মেসেজ দেখে।কিন্তু যখন নিয়াজ কিছুই পেলো না,তখন ভেঙে যাওয়া পাথরের মতো লুটিয়ে পড়লো মাটিতে।এতো কষ্ট বুঝি প্রিয়জন হারানোর মাঝে লুকিয়ে থাকে।আজ দুই মাস চারদিন হলো মনি নিরুদ্দেশ হয়েছে। কিন্তু না তাঁর কোন খোঁজ পাওয়া গেছে, না কেউ কোন খোঁজ দিতে পেরেছে।এভাবেই কি তাঁর ভালোবাসা হারিয়ে যাবে।যেমন করে রাতের আঁধারে হারায় দিনের আলো।না এভাবে হারাতে দেওয়া যাবে না।তাই সে মাটি থেকে উঠে সামনে এগোতে লাগলো।হঠাৎ দূর থেকে দেখা গেলো কিছু আলো।ভালো করে তাকিয়ে দেখতেই দেখতে পেলো কেউ কিছু মাটিতে পুঁতছে। নিয়াজ প্যান্টে গুঁজে রাখা একটি ক্ষুর বেড় করে সামনে এগিয়ে গিয়ে বলতে লাগলো।

কে ওখানে, ওই কে তোরা, দাঁড়া। কি করছিস ওখানে।

কোন মানুষের কন্ঠ পেয়ে দু’জন লোক পিছন ফিরে তাকালেই দেখতে পেলো কেউ তাঁদের দিকে ছুটে আসছে।নিজেদের কাছে লুকিয়ে রাখা কিছু ধারালো অস্ত্র বের করে এগিয়ে প্রস্তুতি নিয়ে সামনে এগোলেই, দেখতে পেলো। সে একজন নয় তাঁর সাথে আরো লোক দৌড়ে আসছে।তাঁরা বুঝতে পারলো ছেলেটি একা নয় আরো কেউ আছে তাঁর সাথে। এখানে তাঁদের দু’জনে থেকে যুদ্ধ করা মানে নিজেদের হাতে নিজেদের ওদের কাছে সপে দেওয়া।কিন্তু বোকার মতো এমন কাজ তাঁরা করতে ইচ্ছুক নয়।তাই তাঁরা নিজেদের বাইকের কাছে ছুটে গিয়ে তারাহুরো করে চলে গেলো।

নিয়াজ এতোটাও বোকা নয় যে সে এই অচেনা জায়গায় একা আসবে।নিয়াজ বুঝে নিয়েছিলো,লোকটা যখন বলেছে এখানে কিছু পাওয়া যাবে তাঁর মানে পাওয়া যাবে।গেছেবার মনির ব্যপারটাও যদি এতটা ইজিলি না নিতো,তাহলে হয়তো মনির এভাবে গুম হওয়াটা নিয়াজ আটকাতে পারতো।কিন্তু এতো কিছু ভাবার এখন সময় নেই।তাই সে ছুটে সামনে এগিয়ে গিয়ে মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে সামনে ধরতেই দেখতে পেলো একটি মেয়েকে উপর করে ফেলে রাখা হয়েছে। আর পাশেই খোঁড়া গর্ত।হয়তো মেয়েটিকে এখানে দাফন দেওয়া হচ্ছিল।নিয়াজ ভালো করে দেখতেই বুঝতে পারলো মনি যেদিন হারিয়ে যায় সেদিন যে পোষাক পড়া ছিলো, এই উপর করে শুইয়ে রাখা মেয়েটাও একি পোষাক পরিধান করা।নিয়াজের বুকে ক্ষীণ পরিমাণ আশা জেগে উঠলো।

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here