#সেই_তো_এলে_তুমি
#পর্ব_১৪
#Saji_Afroz
-খুব বেশি দেরী করলাম না তো?
.
নিহিরের প্রশ্নে তায়শা জবাব দেয়, না না। আপনি যে এসেছেন এতেই আমি খুশি।
-গিফট কেনা হয়েছে?
-নাহ। ভাবলাম একসাথে নেব।
-আমার কিন্তু মেয়েদের জিনিসে আইডিয়া একেবারেই নেই। বোন নেই বলে হয়তো।
-বউ থাকলে হয়ে যাবে।
.
নিহির হেসে বলল, আগে কিছু খেয়ে নিই। কী বলুন?
-নিশ্চয়। বলুন কী খাবেন?
-আপনি বলুন।
-আজকে আমি খাওয়াব আপনাকে। তাই আপনি বলুন।
.
নিহির হেসে খাবার অর্ডার করলো। এদিকে নওয়াজও চলে আসে। তায়শা কে খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে পেয়ে যায় সে। তায়শার সামনের চেয়ারে বসা ছেলেটিকে চেনার চেষ্টা করলো নওয়াজ। পরিচিত কেউ মনে হচ্ছে না। যদিও এটা তার বিষয় না। এই ভেবে তায়শার সামনে চলে যায় সে। নওয়াজ এসে বলল, কেমন আছ?
.
তায়শা সবেমাত্র জুসের গ্লাসে চুমুক দিয়েছিল। নওয়াজ কে দেখে সে কাশতে শুরু করলো। নিহির ব্যস্থ হয়ে উঠলে সে বলল, আমি ঠিক আছি।
.
এরপর নওয়াজের উদ্দেশ্যে বলল, আপনি দেশে কবে এসেছেন?
-কালই মাত্র আসলাম।
-বসুন না।
.
নওয়াজ বসলো। নিহিরের দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালে তায়শা নওয়াজ কে বলল, উনি আমার পরিচিত একজন। আপনি চিনবেন না।
.
আর নিহির কে বলল, আর উনি হচ্ছে আমাদের এলাকার বড়ো ভাই।
-ও আচ্ছা।
.
নওয়াজ তায়শা কে বলল, ফোন দিয়েছিলাম তোমাকে আমি। রিসিভও করেছিলে। বাট আমার ফোনের চার্জ শেষ।
-ওহ এটা আপনি ছিলেন!
-হু।
.
তায়শা ভাবলো সঠিক সময়ে ফোনটা রিসিভ করলে আজ নিহিরের সামনে এমন একটা পরিস্থিতি তে পড়তে হত না। বাহানা দিয়ে নওয়াজের সাথে পরে দেখা করতো সে। নওয়াজ বলল,
তোমার আপুকে নিয়ে কীসব শুনছি?
-কী শুনেছেন?
-সে না কি তোমার নাম দিয়ে কার সাথে প্রেম করেছে? এসব কী সত্য?
.
তায়শার ইচ্ছে করছে না নিহিরের সামনে বুশরার সম্পর্কে অন্তত নওয়াজ কে খারাপ কিছু বলতে। কিন্তু এই মুহুর্তে সে নিরূপায়। বাধ্য হয়ে সে ক্ষীণস্বরে বলল, হুম। সব সত্য।
.
বুশরা কে নিয়ে দ্বিতীয় কোনো কথা নওয়াজ জিজ্ঞাসা করলো না। শুধু বলল, আমি নাহয় প্রেমিক ছিলাম। প্রেমিক কে মানুষ ঠকাতেই পারে। কিন্তু তুমি? আপন বোনের মতো এত ভালোবাসতে। এরপরেও তোমার সাথে এটা করতে পারলো সে?
.
তায়শা চুপচাপ এসব কথা হজম করে মাথা নিচু করে ফেললো। নওয়াজ বলল, ভালোর সাথে ভালোই হয়। নিশ্চয় তোমার জন্য ভালো কিছু অপেক্ষা করছে।
.
এই বলে সে দাঁড়িয়ে পড়ে। নিহির বলল, উঠে পড়লেন যে? কিছু খেয়ে নিন প্লিজ।
-নাহ ভাই! আরেকদিন।
.
এই বলে নওয়াজ চলে যায়। তার পথের দিকে ছলছল নয়নে তাকিয়ে রইলো তায়শা। তায়শা কে দেখে মনেহচ্ছে, এখুনি তার চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পড়বে। সে তায়শা কে শান্তনা দেওয়ার জন্য টেবিলের উপরে থাকা তার হাতের উপরে নিজের হাত রাখলো। তায়শা চমকে উঠে খানিকটা। নিহির বলল, সব ঠিক হয়ে যাবে।
.
তায়শার খারাপ লাগাটা মুহুর্তেই যেন গায়েব হয়ে যায়। মনে হচ্ছে নিহিরের সামনে এটা ঘটেছে বলে ভালোই হয়েছে। নিহির তাকে আরও বেশি বিশ্বাস করতে বাধ্য হবে এখন।
.
.
নিখিল সিড়ি বেয়ে নিচে নামছে। হঠাৎ সে পা পিছলে পড়ে যায়। ভাগ্য ভালো ছিল প্রায় নিচেই নেমে এসেছিল সে। নতুবা বড় একটা অঘটন ঘটতে পারতো। এখনো যে ব্যথা পায়নি তা নয়! তার হাতে কফির মগ ছিল। কফি খেতে খেতেই নিচে নামছিল সে। কফির মগটা ভেঙে গেছে। ভাঙা কাচের উপরে পা পড়েছে তার। এতেই সে আঘাত পায়। রক্ত বেরুচ্ছে। এদিকে সে কাউকে ডাকার শক্তিটাও যেন হারিয়ে ফেলেছে। চোখে দেখছে অন্ধকার। সেই মুহুর্তে সেখানে উপস্থিত হয় বুশরা। নিখিল কে এইভাবে দেখে তার কাছে ছুটে যায় সে। এরপর চেঁচিয়ে মায়া কে ডাকে। মায়া আসলে তাকে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে আসতে বলল। নিখিল কে উঠতে সাহায্য করে বুশরা। তাকে সোফায় বসিয়ে দেয়। মায়া আসলে তার কাছ থেকে বাক্স নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। এরপর ডাক্তার কে ফোন করতে বলে। খানিকবাদে ডাক্তার আসে। তেমন কিছু হয়নি বলে জানায় বুশরা কে। এরপর নিখিলের পায়ে ব্যাণ্ডেজ় করে মেডিসিন দিয়ে চলে যায়। নিখিল বলল, মা কোথায়?
-উনি বাসায় নেই।
-খালেক চাচা?
-তিনিও নেই।
-আমি রুমে গিয়ে রেস্ট নিতে চাই। ড্রয়িংরুমে বসে থাকা সম্ভব না।
-কিন্তু আপনি এখন উপরে যাবেন কীভাবে?
-আমি পারব।
.
এই বলে সে উঠে দাঁড়ায়। কিন্তু কিছুদূর যেতেই পায়ের ব্যথায় মুখে শব্দ করে উঠে। বুশরা এসে তার হাত নিজের কাধের উপরে দিয়ে বলল, চুপচাপ আমার সাথে চলুন।
-কোথায়?
-নিচের কোনো রুমে! আপনার রুম কেউ নিয়ে যাচ্ছে না।
.
বাধ্য ছেলের মতো নিখিল বুশরার সাথে দক্ষিণের একটা রুমে আসে। বুশরা তাকে বিছানায় শুতে সাহায্য করে। এরপর এসি চালিয়ে দিয়ে বলল, আমি একটু আসছি।
.
বুশরা খানিক বাদে এক বাটি স্যুপ হাতে ফিরে আসে। নিখিল তা দেখে নাক ছিটকে বলল, রোগীর খাবার নিয়ে এসেছেন?
-এটা খেলে গায়ে জোর পাবেন।
-তাই বলে ভেজিটেবল স্যুপ?
-হুম। নাহলে তখন উঠতে গিয়ে যে পারেন নি, এই অবস্থা হবে।
-খোটা দিচ্ছেন?
-বলতে পারেন।
-ব্যথা বেশিক্ষণ থাকবে না।
-আমিও চাই না থাকুক।
.
নিখিল আর কিছু বলল না। বুশরা বাটি টা রেখে চলে যায়। আজ বুশরার সাথে আগ বাড়িয়ে ঝগড়া করতে ইচ্ছে করছে না নিখিলের। ইচ্ছে করছে তাকে থামিয়ে ধন্যবাদ জানাতে। কিন্তু সে পেরে উঠছে না।
.
.
তায়শা ফ্রেন্ডের জন্য সহ নিজের জন্য যা কিছু নিয়েছে, সবকিছুরই বিল নিহির পরিশোধ করেছে। যা দেখে তায়শা আরও বেশি খুশি হয়ে যায়।
ছোট্ট একটা জীবনে কীসের প্রয়োজন? সুখের। আর সুখের জন্য এমন একটা ছেলেই যথেষ্ট। যার টাকা পয়সা থাকার সাথে সাথে খরচ করার মন-মানসিকতাও আছে। তায়শার কাছে ভালোবাসা মানে ভালো থাকা। আর ভালো থাকা মানে টাকা-পয়সা।
ভালোই হলো আশিক তার জীবন থেকে সরে গেছে। নতুবা নিহির কে কী সে পেত?
.
শপিং শেষে তারা বেরুচ্ছে। এমন সময় দোতালা থেকে তাদের দিকে চোখ যায় আশিকের। একই শপিংমল এ আশিকও এসেছিল। তাদের বেরুতে দেখে আশিক নিচে নেমে আসে। কিন্তু ততক্ষণে তায়শা বিলাশ বহুল এক গাড়িতে উঠে বসে এক ছেলের সাথে। আশিকের কেন যেন ভেতরটা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। বিয়ে ভাঙার কারণে সে কষ্টে আছে। আর তায়শা? অন্য এক ছেলে এরইমধ্যে জোগাড় করে ফেলেছে?
আশিক মাথা ঠান্ডা করে। তায়শার সাথে কথা বলার সিদ্ধান্ত নেয় সে। কারণ সে ভেবে দেখেছে, তাকে ছাড়া চলা কষ্ট হয়ে পড়ছে আশিকের জন্য। তায়শা আর যাই করুক, বিয়ে তো তাকেই করতে চেয়েছিল। এখনো আবার সবকিছু ছেড়ে তার কাছে ফিরে আসতে বলবে সে তায়শা কে। পরিবারের বিষয়টা পরে ভেবে দেখা যাবে। এমনটা ভেবে তায়শার ফোন নাম্বার ব্লক লিস্ট থেকে খুলে দেয় আশিক। আজ রাতেই তায়শা কে ফোন দিয়ে আবারও বিয়ের প্রস্তাব দেবে সে।
.
.
এদিকে তায়শা বাড়ি ফিরতেই তার হাতের দিকে সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকিয় নাফিশা বলল, এত শপিং?
-হু। মন ভালো ছিল না। তাই ভাবলাম কেনাকাটা করি।
-টাকা পেলে কই?
-জমানো টাকা দিয়ে করেছি।
-তুমি আবার টাকাও জমাও না কি?
.
এই বলে মুখ টিপে হাসে নাফিশা। তায়শা তার দিকে শপিংব্যাগ এগিয়ে দিয়ে বলল, এসব রুমে নিয়ে যা। আমি পানি খেয়ে আসি।
.
তায়শা রান্নাঘরে এসে ফ্রিজ থেকে পানির বোতল বের করে পানি খেয়ে নেয়। এরপর ড্রয়িংরুমে এসে সোফায় পা তুলে বসে। ক্লান্ত লাগছে তার। আলিয়া খাতুন নিজের রুম থেকে এসে তায়শা কে দেখে বললেন, এসেছিস! ভালোই হলো। চল আমার সাথে রান্নাঘরে কাজে হাত লাগাবি। ভাবছি দুপুর আর রাতের রান্না এখন থেকে একবারেই করে ফেলব।
-কেনো? আগে তো দু’বার চুলো জ্বালাতে হত।
-বুশরার কোনো কাজ ছিল না বলে ও করতো। আমার বাবা ওত সময় নেই।
-সে তো পড়াশোনা করতো। তুমি আর করোটা কী?
-সেটার জবাব তোকে দিতে হবে? আয় বলছি।
-দেখছ আমি বাইরে থেকে এসেছি!
-একজন বাইরে থেকে এসেছে, আরেকজনের পরীক্ষা। এই বয়সে একা এত কাজ করতে পারি?
-না পারলে বুয়া রেখে দাও।
.
এই বলে তায়শা রুমের দিকে পা বাড়ায়। কিন্তু আলিয়া খাতুনের ডাকে থামতে হয় তাকে। তিনি বললেন, পাশের বাড়ির নওয়াজ এসেছে।
-জানি।
-আচ্ছা! সে আমেরিকায় জব করে। জানিস?
-হু।
-দেখতেও সুন্দর।
-তো?
-তোর কথা বলে দেখব না কি?
-বুঝিনি?
-মানে প্রস্তাব দেব বিয়ের?
.
তায়শা বিরক্ত হয়ে বলল, মাথা ঠিক আছে? তাকে আমি বিয়ে করতে যাব কেনো?
-অসুবিধা কোথায়?
-সেটা তোমাকে বলা গেলে তো বলতামই।
-কেনো বলা যাবে না?
-ওতকিছু বলতে পারব না। উনার কথা আমায় আর বলবে না।
.
এই বলে রেগেমেগে রুমে চলে যায় তায়শা। আলিয়া খাতুন নিজের মনে বলল, কথা তো আমি তুলবোই। তোর ভালো এইবার আমি বুঝব।
.#সেই_তো_এলে_তুমি
#পর্ব_১৫
#Saji_Afroz
.
.
নাসরিন আক্তার খেয়াল করলেন, নওয়াজের মনমানসিকতা ভালো নেই। সেই সকালে কোথায় যেন গিয়েছিল। আসার পর থেকে আর রুম থেকেই বেরুইনি। তিনি বুঝতে পারলেন, বুশরার জন্য এমন অবস্থা হয়েছে নওয়াজের। এক প্রকারে খারাপ হয়নি। এটাই একটা সুযোগ তার বোনের মেয়ে তানিশার কথা নওয়াজ কে বলার। মাথা গরম থাকলে মানুষ চট করে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। যদিও এটা তার জন্য এখন ভুল সিদ্ধান্ত মনে হবে। কিন্তু পরবর্তীতে নওয়াজ বুঝতে পারবে, এটাই তার জীবনে নেওয়া সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত। তাই এই সুযোগ টা হাত ছাড়া করতে চাননা তিনি। নওয়াজের রুমে এসে দেখলেন, এই অসময়ে সে শুয়ে আছে। তবে হাতে ফোন রয়েছে। কি যেন দেখছে। আসলে সে বুশরার ছবি দেখছে। মা কে দেখে ফোন একপাশে রেখে বলল, কিছু বলবে?
.
তিনি বিছানার একপাশে বসতে বসতে বললেন,
হু।
-বলো?
-ওইদিন একটা কথা বললাম, আর তুই মজা হিসেবে নিলি। কিন্তু আমি যে আসলেই সেটা চাচ্ছি তুই কি বুঝছিস না?
-কীসের কথা বলছ মা?
-তোর বিয়ে।
-এইবার আমি বিয়ের প্রিপারেশন নিয়ে আসিনি।
-আচ্ছা! কিন্তু আমি তো ধরে রেখেছিলাম, যখন আসবি তখন তোর বিয়ের কথা তুলব। আসার আগে জানালি না কেনো? এখন গেলে আবার দুই-তিন বছরের জন্য আঁটকে যাবি তুই। আমার বয়স হয়েছে। তোর বিয়ে দিয়ে ঘরে বউ এনে নূরীকেও বিয়ে দিতে হবে। এখন নূরী কে আগে বিয়ে দিলে আমি একা হয়ে যাব না?
.
নওয়াজ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, মেয়ে দেখো তবে।
.
তিনি মুখে হাসি এনে বলল, মেয়ে দেখা আছে। তুই চিনিস। তোর ভালো লাগলে কথা আগাব নাহলে অন্য মেয়ে দেখব।
-কে?
-আরেহ আমাদের তানিশা!
-তানিশা?
.
নওয়াজ বিরক্তি নিয়ে আবারও বলল, কি যে বলোনা মা। ওকে কেনো আমি বিয়ে করতে যাব? সেই চোখে দেখেছি না কি কখনো?
-নাহ দেখলে এখন থেকে দেখবি। আমাদের জন্য ওকে সেরা মনে হয়েছে। আমার বোনের মেয়ে আমার মন জুগিয়ে যেভাবে চলতে পারবে অন্য কেউ কী পারবে সেভাবে চলতে? বাইরের মেয়েদের বিশ্বাস আছে? দেখছিস না বুশরা কে? আর তানিশাকেই দেখ, ছোট থেকে চিনি আমরা।
.
বুশরার কথা শুনতেই নওয়াজের মাথায় যেন আগুন ধরে গেল। রাগ হচ্ছে তার ভীষণ। এক প্রকার রাগ থেকেই সে বলে বসলো, যা ভালো বুঝো করো।
.
তিনি ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বেরিয়ে আসেন রুম থেকে। দ্রুত ফোন দিতে যান বোন কে এই খুশির সংবাদটা জানানোর জন্য।
.
.
আজ অফিস থেকে বাসায় তাড়াতাড়ি ফিরে এসে এসেছে নিহির। এসে সোজা মা এর রুমে আসে সে। নিহির দেখলো, মা কে সন্ধ্যার নাস্তা খাওয়াতে ব্যস্ত বুশরা। সে গল্প শোনাচ্ছে। আর তার গল্প শুনে শুনে তিনি খেয়ে যাচ্ছেন।
নিহির ভেতরে এসে বলল, গল্প শোনা হচ্ছে?
.
ফাহমিদা বেগম হেসে বললেন, ও ভালো গল্প বলে। তুমিও শোনো।
-নিশ্চয় শুনব। আগে তুমি খেয়ে নাও।
.
নিহির বুশরা কে বলল, আপনার কিছু প্রয়োজন আছে?
-নাহ। তবে মনেহয় মা এর প্রয়োজন। উনি তো শাড়ি পরে থাকেন, কিন্তু শাড়ি উনি সামলাতেই পারেন না। বারবার খুলে যায়, হোঁচটও খায়। আমার মনেহয় উনাকে ম্যাক্সি পরালে ভালো হবে। সেটা আরামদায়ক।
-আসলে মা এর জন্য তো শপিং চাচী মা করতেন। আমার মেয়েদের বিষয়ে আইডিয়া নেই।
-ওহ।
-তবে এখন যখন আপনি তার দায়িত্ব নিয়েছেন, আপনি নিশ্চয় ভালো বুঝবেন। কাল আমার সাথে শপিং এ গিয়ে মা এর জন্য কেনাকাটা করতে পারবেন?
-কেনো না! তাছাড়া এখন উনার সবকিছুর দেখভাল করার দায়িত্ব আমার।
-বেশ তবে।
.
একটু থেমে নিহির বলল, আপনার কী প্রয়োজন তাও নিয়ে নিয়েন কাল। লিস্ট করে রাখুন। পরে ভুলে যেতে পারেন।
-আমার কিছুই প্রয়োজন নেই।
-শপিং এ যাবেন কিছু নেবেন না?
.
বুশরা মুচকি হেসে বলল,
আমি কী বাচ্চা? শপিং এ গেলেই যে কিছু নিতে হবে কথা নেই। তাছাড়া সেদিনই নিলাম। এগুলো দিয়ে অনেক মাস কেটে যাবে আমার। প্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়া অহেতুক কেনাকাটা আমার পছন্দ না।
.
নিহির বেশ অবাক হয় তার কথা শুনে। তার মনে হচ্ছে, বুশরার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে নিশ্চয় কিছু না কিছু আবদার করতো। বুশরা কী আসলেই একটু অন্যরকম?
.
.
আলিয়া খাতুন সেই যে বিকেলে রান্নাঘরে ঢুকেছেন, মাত্র বের হতে পেরেছেন। আজ তিনি কয়েক রকমের পিঠে বানিয়েছে নওয়াজের জন্য। পিঠে গুলো নিয়ে নওয়াজের বাসায় যাবে ভেবেছেন। পিঠে বানাতেই বেশ সময় চলে গেছে তার। নাফিশা আর তায়শা কে বেশ কয়েকবার সাহায্যের জন্য ডেকেছেন। কিন্তু তারা আসেননি। সংসারের অন্যসব কাজের সাথে সাথে রান্নাটাও তারই সামলাতে হয়। এই ক’দিনেই হাঁপিয়ে উঠেছেন তিনি। বুশরা যে কীভাবে সামলাতো সব! হঠাৎ বুশরার শূন্যতা অনুভব করলেন তিনি। মেয়েটার জন্য বুকটা হু হু করে উঠলো। এইভাবে তাকে তাড়িয়ে না দিলেও পারতেন। কোথায় যে চলে গেল মেয়েটা!
.
মুহুর্তের মাঝেই নিজেকে শক্ত করে নিলেন আলিয়া খাতুন। পিঠে গুলো কয়েকটা বাক্সে নিয়ে চললেন তিনি নওয়াজের বাড়ি।
.
.
ফাহমিদা বেগম কে খাওয়ানো শেষে রান্নাঘরে প্লেট-বাটি রাখতে আসে বুশরা। মায়া তাকে দেখে বলল, নিখিল সাহেব বললেন তার জন্য ভেজিটেবল স্যুপ করতে। তখন না কি বেশ ভালো লেগেছে।
-তাই! আচ্ছা আমি করে দিই। তখনো আমি করেছিলাম।
-আচ্ছা। আমি তাহলে রাতের রান্না সেরে ফেলি।
-হুম।
.
বুশরা স্যুপ বানিয়ে নিখিলের রুমে আসলো। সেনোয়ারা বেগম যে এখানে বসে আছেন সে জানতো না। তাকে দরজায় দাঁড়ানো দেখে সেনোয়ারা বেগম ভ্রু কুচকে বললেন, এখানে আসতে চাইছ তুমি?
-জি।
-কেনো?
-উনার জন্য স্যুপ এনেছিলাম।
-মায়া কোথায়?
-রাতের রান্না করছে।
.
তিনি বিছানা ছেড়ে উঠে এগিয়ে গেলে বুশরার দিকে। তার হাত থেকে ট্রে টা নিয়ে বললেন, এসব কাজ তোমার করার দরকার নেই। অন্তত নিখিলের কাজ মায়া ছাড়া কেউ করুক তা আমি পছন্দ করি না। নিহিরের সাথে যা খুশি তুমি করতে পারো। কিন্তু আমার নিখিল থেকে একশো হাত দূরে থাকবে। এখন যেতে পারো। আর যাতে না দেখি তোমাকে।
.
কড়া ভাষায় কথাগুলো বুশরা কে শোনালেন তিনি। বুশরা একবার নিখিলের দিকে তাকিয়ে নীরবে চলে যায়। মা তার কাছে আসতেই নিখিল বলল, তুমি ওর সাথে এইভাবে কথা বললে কেনো?
-কীভাবে বলব? তোর কাছে আসার ওর প্রয়োজন কী?
-আজ যখন তুমি ছিলে না তখন কিন্তু ওই মেয়েটায় আমার সেবা করেছে। তখন তার হাতে বানানো স্যুপটা ভালো লেগেছিল। এটা মায়া কে বলাতে হয়তো নিয়ে এসেছে। তুমি এমনটা না করলেও পারতে।
-ওসব মেয়ে কে তুই চিনিস না। তোর ভাইকে কেমন নাচিয়ে এই বাড়িতে থেকে গেল দেখলি না? এখন আবার তোর সাথে ঘেষতে চায়!
-এসব কী ধরনের কথাবার্তা? একটা মেয়ে কে নিয়ে এসব বলা ঠিক না। সে মোটেও এমন মেয়ে না।
-এক মেয়ের জন্য এখন দুই ভাই আমার সাথে লড়াই কর।
.
এই বলে তিনি রেগেমেগে রুম ছেড়ে চলে গেলেন। এদিকে নিখিল আপনমনে ভাবলো, মা বুশরা কে বকেছে বলে তার খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু সে হতে পারলো না কেনো! অন্যকেউ বুশরা কে কষ্ট দেবে এটা সে মানবে না। কিন্তু নিজে ঠিকই দেয়।
আজ বুশরার জন্য মা এর সাথে উঁচু গলায় কথা সে বলেছে। কেনো মা এর বলা কথাগুলো তার ভালো লাগেনি। কেনো!
.
.
আলিয়া খাতুন নাসরিন আক্তারের বাসায় বেশ কয়েকবার এসেছেন। কিন্তু কখনো হাতে করে কিছু আসেননি। আজ এত রকমের পিঠে দেখে নাসরিন আক্তার বেশ অবাক হলেন। তিনি বললেন, তা আলিয়া আপা? ঘরে খুশির সংবাদ আছে না কি?
এত খাবার নিয়ে এলেন যে?
-আপনার ছেলে বিদেশ থেকে এসেছে বলে কথা। একটু খাতির যত্ন করব না? পাড়ার ছেলে মানে আমাদের সকলের ছেলে। দেশের বাইরে থেকে কী মায়েদের রান্না খেতে পারে? তাই সামান্য কিছু ছেলের জন্য নিয়ে আসলাম আরকি।
.
নাসরিন আক্তার একগাল হেসে বললেন, এই কথা!
-জি।
– হ্যাঁ ছেলে আমার অনেক কষ্ট করে বিদেশে। কষ্ট আসলে কাজে নয়, পরিবারদের ছেড়ে থাকা।
.
তারা এই নিয়ে খানিকক্ষণ গল্প করার পর আলিয়া খাতুন বললেন, ছেলে কে একাই পাঠিয়ে দেবেন? না মানে বিয়ে সাদি দেবেন না?
-দেব তো। মেয়েও ঠিক আছে তাই ঝামেলা নেই।
-কে?
-আমার বোনের মেয়ে।
.
এইবার তার মুখে অন্ধকার নেমে আসলো। তিনি বললেন, বোনের মেয়ে কে বাড়ির বউ করে আনবেন?
-হুম। খুবই ভালো মেয়ে সে।
-তবুও আপা। ব্যাপারটা কেমন যেন না? নতুন আত্নীয় করবেন। একটা মাত্র ছেলে আপনার।
-বাইরের মেয়ে কেমন না কেমন হয়! তাই বোনের মেয়েকেই নিয়ে আসব।
.
আত্মীয়ের মাঝে বিয়ে হলে কি কি অপকারিতা রয়েছে সবই বলে ফেললেন আলিয়া খাতুন। এদিকে নাসরিন আক্তারও কি কি উপকারিতা আছে তা বললেন। এক পর্যায়ে আলিয়া খাতুন বিরক্ত হয়ে বিদায় জানিয়ে চলে গেলেন। যাওয়ার সময় ভাবলেন তার এত কষ্ট বৃথা গেল। নাসরিন আক্তারও কম না! তিনি টের পেয়েছেন আলিয়া কেনো এখানে এসেছেন। আলিয়া হাজার বুশরার বদনাম করলেও তিনি জানেন, তার মেয়ে তায়শাও ধোঁয়া তুলশি পাতা নয়।
.
.
সেনোয়ারা বেগমের বলা কথাগুলোতে কষ্ট পাওয়ার চেয়েও অবাক হয়েছে বুশরা। কারণ তিনি বলেছেন, নিহিরের সাথে যা খুশি করতে কিন্তু নিখিলের সাথে নয়। নিহির নিজের ছেলে নয় বলে তার মাথাব্যথা নেই। ব্যাপারটা এমন দাঁড়ালো না? এই বাড়িতে আসার পর থেকেই সেনোয়ারা বেগমের মাঝে নিহির ও নিখিল কে নিয়ে বেশকিছু তফাৎ সে লক্ষ্য করছে। যদিও সেনোয়ারা নিহির কে কোনোভাবেই তা বুঝতে দেয়না। কিন্তু ভেতরে ভেতরে তিনি যে তফাত করেন এটা সে বোঝে।
এটা ভেবে বুশরা নিজের মনকে শান্তনা দিলো এই ভেবে যে, হয়তো তার মনের ভুল এটা। সে নিজেই ফুফুর কাছে ভালোবাসা পায়নি বলে হয়তো এমনটা মনেহচ্ছে তার। কিন্তু আদৌ কী তাই?
.
চলবে
চলবে