#সেই_তো_এলে_তুমি
#পর্ব_৩০
#Saji_Afroz
নওয়াজ আজ খুব দেরীতে ঘুম থেকে উঠেছে৷ সকালে সে শুধু চা পান করেছে। এছাড়া আর কিছু খায়নি। একেবারে দুপুরের খাবার খাবে জানিয়েছে।
গোসল সেরে নামাজ আদায় করে ডাইনিং এ এসে বসে নওয়াজ। টেবিলের দিকে তাকিয়ে বেশ অবাক হয় সে। মনেহচ্ছে কোনো বিয়ে বাড়িতে এসেছে। এত এত রান্না! চিংড়ির বাটি হাতে তানিশা এসে বসলো নওয়াজের পাশের চেয়ারে। সে আজ হালকা বেগুনি রঙের সুতি শাড়ি পরেছে। ব্লাউজের রঙ সাদা হওয়াতে শাড়ির রঙটা আরও ফুটে উঠেছে। চুলে খোপা করে রেখেছে তানিশা। সামনে কিছু চুল বের করা। কোমরে আঁচল গুজে আছে তার। দেখেই মনে হচ্ছে পাক্কা গৃহিনী।
সবাই এসে বসার পর তানিশা খাবার বাড়তে শুরু করলো। নওয়াজ মুখে দিয়েই বলল, আজকে এত আয়োজন মা? আর এত মজা হয়েছে খাবার!
-তানিশা করেছে সব। এই বাড়িতে আসার পর রান্না করেনি সে। নতুন বউদের সবাইকে রান্না করিয়ে খাওয়াতে হয়। এসব তো কিছুই পালন করা হলো না। তাই আজ সে নিজ ইচ্ছেই করলো এসব।
.
নওয়াজ ভেবেছিল কোমরে আঁচল গুজে সে শুধু বাটি আনতেই সাহায্য করেছে। এত কাজ যে তানিশা পারে অজানা ছিল নওয়াজের। তৃপ্তি নিয়ে সে খাবার গুলো খায়। ভালোই লাগছে তার খেতে।
খাওয়া শেষে নওয়াজ উঠে চলে যেতে চাইলে তাকে আঁটকায় তার বোন। সে বলল, ভাবী প্রথম রেঁধেছে আজ। তোমার কোনো উপহার তাকে দিতে হবে।
-আমি কি উপহার পকেটে নিয়ে ঘুরি! হঠাৎ করে কী দেব?
-কিছু তো দিতেই হবে ভাইয়া।
.
নওয়াজ মা নিজের আঙুলে থাকা রিংটি খুলে তানিশাকে পরিয়ে দিলেন। নওয়াজের বোন রুম থেকে একটি বই এনে ভাবীকে দিলো। এসব দেখে নওয়াজ বলল, তোরা তো দিয়েছিস। আমি কিছু জানতাম না, আমায় ছাড় দে।
-উহু ভাইয়া! আমিও জানতাম না। তাই তো সংগ্রহে থাকা বই থেকে ভাবীকে দিলাম। এইবার তুমিও কিছু দাও।
.
নওয়াজ একটু ভেবে পকেটে হাত দিয়ে কচকচে এক হাজার টাকার একটি নোট বের করে তানিশার দিয়ে এগিয়ে বলল, ভালো রান্না করো তুমি। এটা উপহার হিসেবে রাখো। পছন্দ মতন কিছু নিয়ে নিও।
.
তানিশাও হাসিমুখে তা নিয়ে ধন্যবাদ জানায়। আর আপনমনে বলল, এই টাকা তো আমি বাঁধিয়ে রাখব। খরচ করার প্রশ্নই আসেনা!
.
.
বুশরা এই বাড়িতে আসার পর থেকে তায়শার সাথে কোনো হয়নি তার। অবশ্য তায়শাও বলার চেষ্টা করেনি।
বুশরা নিজের রুম গুছিয়ে রাখছে। হঠাৎ তায়শা আসলো। তাকে দেখেও কাজেই মনোযোগ রাখলো বুশরা। তায়শা বলল, তুমি কেনো আমার উপর ক্ষেপে আছ? ক্ষেপে থাকার কথা আমার৷ কারণ আমার হবু বর হুট করে তোমাকে বিয়ে করতে চায়ছে। মানলাম তার ভাই এর সাথে আমি যা করেছি ঠিক করিনি। কিন্তু এতে তোমাকে বিয়ে করতে চাওয়ার কারণ কী?
.
বুশরা আলনায় কাপড় রাখতে রাখতে বলল, আমি জানিনা।
-তুমি নিশ্চয় সম্মতি দাওনি? কেনোই বা দেবে! তোমার বোনের সাথে বিয়ে ভেঙেছে সে।
-সম্মতি দেওয়া কী উচিত নয়? যে বোন আমার সম্পর্কে ফাটল সৃষ্টি করেছে, যার জন্য নওয়াজ অন্য কাউকে বিয়ে করে নিয়েছে তার কথা কেনো ভাবব আমি?
.
বুশরা যে এসব জানে তা জানতো না তায়শা। সে অবাক হয়ে বলল, তোমায় এসব কে বলেছে?
-সত্যি কখনো চাপা থাকেনা।
.
সে বিষয়টা পালটে তায়শা বলল-
দেখো নিহিরের সাথে বিয়ে তোমার হবে না। কেউই মানবে না এটা। অন্য কোথাও বিয়ে করার চেয়ে তুমি বরং নওয়াজ ভাই এর কাছেই ফিরে যাও। বউকে ডিভোর্স অবধি দিয়ে ফেলেছেন তিনি। তিন মাস পর একটা সাইনেই সব শেষ হবে। তবে সমস্যা কোথায়? ভালোবাসার মানুষের কাছেই যাবা।
.
বুশরা তার দিকে তাকিয়ে বলল, সত্যিই তুই আমার ভালো চাস?
-হুম। তাইতো এসব বলছি। আর কেউ সাপোর্ট না করলেও আমি তোমাদের এক হতে সাহায্য করব।
-যার জন্য আমার এই অবস্থা তারই সাহায্য নেব আমি? এতই যদি ভালো চাস তবে কখনো নওয়াজকে ওসব আজেবাজে কথা তুই বলতি না।
.
তায়শা বুঝতে পারলো নওয়াজই তাকে এসব বলে দিয়েছে। কিন্তু এই বিষয় নিয়ে সে নওয়াজের সাথে রাগারাগি করতে পারবে না। এখন নওয়াজকে প্রয়োজন তার।
তায়শা বলল, এখন কী চাও তুমি? নিহিরকেই চাও?
-আমার চাওয়া না চাওয়া নিয়ে তোর ভাবতে হবে না। বাবা আসলেই আমার চাওয়া সম্পর্কে তাকেই বলব।
.
বুশরা নিহিরের বিষয়টা খোলাসা করলো না তায়শার কাছে। তায়শা ভাবলো, বুশরা ঠিকই তার বাবাকে নিহিরের কথা বলবেন। যদিও বুশরার বাবা দেশে আসবেন না। কিন্তু এই মিথ্যেও কতদিন লুকোবে। এরমধ্যে না আবার নিহির আর বুশরার সম্পর্ক আরও গভীর হয়ে যায়! এর আগেই কিছু একটা করা জরুরী। এসব ভেবে অস্থির হয়ে উঠে তায়শা।
.
.
আজ বুশরাকে খুব বেশি মনে পড়ছে নিখিলের। সে জানেনা বুশরার কাছে ফোন আছে। তাই সে অনেক ভেবে বাধ্য হয়েই তায়শাকে ফোন দেয়। তায়শা তার ফোন দেখে অবাক হলেও রিসিভ করে। নিখিল কোনো কথা না বলেই বলল, বুশরাকে দাও।
.
তায়শা বিরক্ত নিয়ে বলল, তা ওকে ফোন দিলেই পারো।
-ওর কাছে ফোন আছে?
-তোমার ভাই যে হবু ভাবীর জন্য পাঠিয়েছে সেটা জানোনা?
.
তায়শার কথার ধরণ শুনে নিখিল বলল, হিংসে হচ্ছে না কি?
-একদমই না। এই তায়শাকে কত ছেলে কত কিছু দিতে বসে আছে। ওহ হ্যাঁ! প্রমাণ তো তুমি নিজেও আছ। আর তাছড়া বুশরা ওই বাড়ির বউ হবে না। এটা ধরে রাখো।
.
নিখিল খানিকটা রাগ নিয়েই বলল, সে এই বাড়ির বউই হবে। তুমি তা ধরে রাখো।
.
এই বলে ফোনের লাইন কেটে দেয় নিখিল। তার ভীষণ রাগ হয় তায়শার প্রতি। নিজেকে কী মনে করে সে! নিহির অভিনয় করলেও নিখিল করবে না। সেই বুশরাকে বিয়ে করে নিয়ে আসবে। তাছাড়া নিখিলের মনে বুশরার জন্য আলাদা একটা জায়গা তৈরী হয়ে হয়েছে। হয়তো ভালোবেসে ফেলেছে সে বুশরাকে!
.
.
নিহির হুট করেই বুশরাকে ফোন করে বেরুতে বলল। জানালো দরকারেই ডাকছে তাকে। নিহির সচারাচর এমনটা করেনা। তাই বুশরা ভাবলো, হতে পারে আসলেই কোনো দরকার। মানুষটা তাকে এত সাহায্য করেছে। তাকে যদি নিহিরের দরকার হয় অবশ্যই যাওয়া জরুরী। এই ভেবে তৈরী হয়ে বুশরা বেরিয়ে পড়ে৷ তাকে এভাবে তাড়াহুড়ো করে বেরুতে দেখে তায়শা তার পিছু নেয়।
নিহিরের মেসেজের ঠিকানা অনুযায়ী সে একটি রেস্টুরেন্টে এসে থামলো। ছুটে ভেতরে এসে নিহিরের দেখা পায় সে। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, কোনো সমস্যা?
.
নিহির তাকে এভাবে দেখে চিন্তিত হয়ে বলল, বসুন আপনি। পানি খান আগে।
.
নিহির পানির গ্লাস এগিয়ে দিতেই বুশরা ঢকঢক করে পুরো এক গ্লাস পানিই খেয়ে ফেলল। নিহির বলল, এত সিরিয়াস নেবেন জানলে এভাবে তাড়া দিতাম না আপনাকে।
-তবে কী সিরিয়াস কোনো ইস্যু না?
-নাহ!
-তবে?
-আসলে কাল চাচীর জন্মদিন। প্রতিবার তাকে শপিং এ নিয়ে যাই আমি। ভাবলাম এইবার তাকে না নিয়ে তার জন্য কিছু নিয়ে সারপ্রাইজ দিই। কিন্তু আমি মেয়েদের এসব ব্যাপারে একদমই কাঁচা। ভাবলাম আপনাকে সাথে নিই।
.
বুশরা লম্বা একটা নিঃশ্বাস ফেলে হেসে দেয়। সাথে বলল, এই ব্যাপার! ভালোভাবে বললেই পারতেন। আমি কি না কি ভেবেছি!
-আগে খেয়ে নিন। এরপর চলুন শপিং এ যাওয়া যাক।
.
আগামীকাল সেনোয়ারা বেগমের জন্মদিন ঠিকই। কিন্তু তার জন্য সারপ্রাইজ প্লান করে বুশরাকে ডাকা একটা বাহানা মাত্র। বুশরাকে অনেক বেশি দেখতে মন চাইছিল তার। যার জন্য এই বাহানা!
.
খাওয়া শেষে তারা শপিংমল এ আসে। সেনোয়ারার জন্য শাড়ি নেওয়া শেষে নিহির বুশরাকেও অনেকটা জোর করে একটি শাড়ি নিয়ে দেয়। এদিকে তাদের পিছু নিয়ে এসব দেখে জ্বলছে আর ক্যামেরাবন্দী করছে তায়শা। তার জায়গায় বুশরা নিহিরের সাথে ঘুরছে, খাচ্ছে, শপিং করছে এসব মানতে পারছে না সে। তায়শা নওয়াজকে এসব ছবি পাঠিয়ে দেয়। এদিকে নওয়াজও এসব দেখে নিজেকে সামলাতে পারছে না। তার ভুলের মাশুল দিতে প্রস্তুত হওয়ার পরেও কেনো বুশরা ফিরছে না তার কাছে এখন তা স্পষ্ট।
.
.
বুশরা বাসায় আসতেই আলিয়া খাতুন বললেন, পাত্রের মা এসেছে তোকে দেখতে। মাত্রই তোকে ফোন দিতে যাচ্ছিলাম। ভালো হলো চলে এসেছিস।
-হঠাৎ?
-আরেহ আমিও জানতাম না! তুই দেখি তৈরীও আছিস। যা ড্রয়িংরুমে গিয়ে দেখা করে নে।
.
এই বলে বুশরার হাত থেকে প্যাকেট ও তার ব্যাগ নিয়ে তায়শাকে দিয়ে তিনি বললেন, এসব ওর রুমে রেখে আয়।
.
এই বলে তিনি বুশরার মাথায় ওড়না দিয়ে তাকে নিয়ে ড্রয়িংরুমের দিকে গেলেন। আর তায়শা বুশরার রুমে এলো। সে বুশরার আগেই শপিংমল থেকে বেরিয়েছিল। তাই আগেই চলে এসেছে।
তায়শা প্যাকেটের ভেতরে থাকা শাড়িটা দেখলো। খুব সুন্দর শাড়িটা। আজ যেসব ওর হওয়ার কথা ছিল সেসব হচ্ছে বুশরার! ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে তার। বুশরার ব্যাগে থাকা ফোন বেজে উঠলো। তায়শা তা বের করে দেখে নিহির ফোন করেছে। সে ইচ্ছে করেই ফোনটা রিসিভ করে। নিহির বলল, বাসায় ঠিকমতো গিয়েছেন? অর্ধেক পথ থেকে নেমে গেলেন তাই খবর নিচ্ছি।
-বাসায় এসে পাত্র পক্ষের সামনেও সে চলে গেছে।
.
তায়শার কণ্ঠ শুনে নিহির বলল, তাহরিমা?
-জি আমি।
-বুশরা কোথায়?
-সে কী! একসাথে এতক্ষণ থেকেও সে বলল না যে আজ তাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে! অবশ্য না বলাই স্বাভাবিক। পাত্র যদি নিহির থেকেও ভালো হয় তবে তাকেই বিয়ে করে নেবে। তায়শার বোন নিশ্চয় তায়শার মতোই হবে।
-বুশরা মোটেও তোমার মতন নয়।
-তাহলে সে তোমাকে কিছু জানায়নি কেনো?
.
এই বিষয়ে কিছু বলতে পারলো না নিহির। বুশরা কেনোই বা জানাবে! নিহির তো আর সত্যি সত্যিই তাকে বিয়ে করতে চায়নি যে তাকে এসব জানাবে সে।
তায়শা বলল, যাই। মিষ্টি নিয়ে যাই আমি। বিয়ে ঠিক হয়ে গেলে আসবে অবশ্যই।
.
এই বলে সে ফোনের লাইন কেটে দেয়। অন্যরকম এক শান্তি অনুভব করছে তায়শা। পরবর্তী ঘন্টা গুলো যে বুশরার কেমন কাটবে সেটা সম্পর্কে তার ধারণাও নেই। এটাতো কেবলমাত্র শুরু হলো!#সেই_তো_এলে_তুমি
#পর্ব_৩১
#Saji_Afroz
পাত্রের মা চলে যাওয়ার প্রায় ঘণ্টাখানেক পরে আলিয়া খাতুন বুশরার রুমে আসলেন। তিনি বুশরাকে বললেন, মহিলা তোকে বেশ পছন্দ করেছে। সময় নষ্ট করতে চান না তিনি। ছেলেকে নিয়ে আসতে চায়। ছেলেরও একবার দেখা উচিত তোকে।
.
বুশরা খানিকটা বিরক্ত নিয়েই বলল-
পাত্রের মা মুরব্বি মানুষ। তার সামনে হাজার বার যেতেও আমার সমস্যা নেই। কিন্তু আমি বলেছি বাকিসব বাবা আসলেই হবে। এরপরেও এসব কেনো বলছ ফুফু?
-আমি কি শখে বলছি? বাইরে গিয়ে যে রঙিলা কাজ কারবার করছ, ওসব তোর বাবার কানে গেছে। তাই উনি চাচ্ছে আসার আগেই বিয়ে ঠিকঠাক হতে। এসেই তোর বিয়েটা হবে।
-কী করেছি আমি?
.
আলিয়া খাতুন ফোনের গ্যালারি থেকে নিহির ও তার আজকের কিছু ছবি দেখিয়ে বললেন, এসব তোর বাবাকে কে যেন পাঠিয়েছে। আমাকে খুব ঝারলেন তিনি। দোষ করেছিস তুই কথা শুনলাম আমি। দায়িত্ব নিয়ে কী অপরাধ করেছি?
.
তায়শা যে এসব মা কে দিয়েছে তা গোপন করলেন আলিয়া খাতুন। এদিকে এসব সত্যি ভেবে বুশরার কপালে চিন্তার ভাজ পড়লো।
আলিয়া খাতুন বললেন, আসতে বলব পাত্রকে?
.
বুশরা কিছু একটা ভেবে বলল, নাহ! সবসময় চোখের দেখা সত্যি হয় না। বাবাকে প্রয়োজনে আমার সাথে কথা বলতে বলো। আমি সবটা বুঝিয়ে বলব।
.
এই বলে বুশরা রুম ছেড়ে বেরিয়ে যায়। সেখানে উপস্থিত হয় তায়শা। আলিয়া খাতুন বললেন-
এই মেয়ে দেখছি রাজিই হচ্ছে না। বড়োলোক বাড়িতে যাওয়ার জন্য একদম তৈরী হয়ে বসে আছে। কী করা যায় বল তো তায়শা?
.
নওয়াজের বিষয়ে মা কে কিছুই জানায়নি তায়শা। জানাতেও চায়না সে। শুধু বলল-
তুমি যা পারো করেছ বাকিটা আমার উপরে ছেড়ে দাও। বুশরার বিয়ে নিহিরের সাথে হচ্ছে না এটাই ফাইনাল।
-কী করবি তুই?
-দেখোই না!
.
.
নাফিশার কাছে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ে বুশরা। নাফিশা তাকে শান্তনা দিলে সে বলল-
আমার মনেহচ্ছে বাবা আসবেনই না। ওরা মিথ্যে বলছে। এমনটা বলে আমাকে এখানে আনার কী প্রয়োজন ছিল? ফাহমিদা আন্টির সেবা করেই বাকিটা জীবন কাটিয়ে দেব ভেবেছিলাম। জানিস নাফিশা? ওই জীবনটা ভালোই ছিল আমার।
-তবে চলে এলে কেনো? বিয়ে করে নাও নিহির ভাইকে।
-তাকে কেনো আমি বিয়ে করতে যাব?
-নওয়াজকে ভালোবাসো বলে?
-এখন বাসি না। আর নিহির স্যারকে সেভাবে আমি কখনো দেখিনি। তাছাড়া উনিও কেনো আমায় বিয়ে করবেন। ওসব তায়শার উপরে রাগ করে জেদের বশে বলেছিল ওকে কষ্ট দিতে।
-ওহ এই ব্যাপার!
-হুম।
-তোমার বাবা যে তোমার খবর নিয়ে মা কে শাসিয়েছে সেটা আমিও শুনেছি। কিন্তু দেশে আসার কথা বলেছেন কি না তা আমি শিওর জানিনা।
.
একথা শুনে বুশরার মুখে হাসি ফোটে। সে বলল, বাবা আমার খবর নেন? আমার জন্য বকেছেন ফুফুকে?
-হ্যাঁ।
.
এই অল্প খবরেই মেয়েটার মন ভালো হয়ে গেল।
.
.
ফাহমিদা বেগম একটি পুতুলকে বউ সাজিয়ে নিহিরকে দেখিয়ে বলছেন-
এমন করে বউ সাজিয়ে বুশরাকে নিয়ে আসবি। বল আনবি না?
.
নিহির মৃদু হেসে বলল-
আমি বললেই সে আসবে?
-আসবে আসবে।
-জানো মা, আমিও না চাচ্ছি সে আসুক। এসে আগের মতো এই বাড়িতে ঘুরুক ফিরুক। এই সংসারটাকে সামলিয়ে নিক সে। ও ছাড়া এ বাড়িটা শূন্য মনেহচ্ছে। হঠাৎ করে ওকে নিয়ে আমি এসব ভাবছি কেনো মা নিজেও জানি না। খুব করে ইচ্ছে করছে ওকে নিজের কাছে নিয়ে আসি।
.
এসব কথা ফাহমিদা বেগমের মাথার উপর দিয়ে চলে গেলেও তিনি বলতে লাগলেন-
কবে আনবি তুই বুশরাকে? কতদিন দেখি না!
.
নিহির হেসে বলল-
আনব আনব।
.
ভাইকে বুশরাকে বিয়ে করার ব্যাপারে বলতে এসেছে নিহির। আড়াল থেকে এসব শুনে হতাশ হয়ে পড়লো সে। অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বুশরাকে সে বিয়ে করবে। এই বিষয়ে নিহিরের সাহায্য দরকার। কিন্তু এখন নিহির নিজেও মন দিয়ে বসে আছে বুশরাকে। আবারও দুই ভাইকে একই মেয়ের প্রেমে পড়তে হলো! এখন কী করবে সে!
ভাবতে ভাবতে নিজের রুমে চলে আসলো নিখিল। সে ভাবলো, ভাই এর আগেই কী বুশরাকে মনের কথা জানিয়ে দেবে সে?
.
.
তায়শা ও নওয়াজ একটি রেস্টুরেন্টে সামনাসামনি বসে রয়েছে। নওয়াজ বলল, আর অপেক্ষা করা ঠিক হবে না। আমার হাতে ওত সময়ও নেই। বুশরা আমাকেই ভালোবাসে আমি জানি। শুধুমাত্র তানিশার সংসার ভাঙতে রাজি না সে। তাই স্বীকার করছে না।
-এখন আপনি কী করতে চাইছেন?
-তোমাকে কিডন্যাপ করতে গিয়ে বুশরা কিডন্যাপ হয়েছিল। এখন বুশরাই কিডন্যাপ হবে।
.
এই বলে হাসলো নওয়াজ। আরও বলল-
আমি জানি এতে করে আমার কোনো ক্ষতি হবে না। বিয়ে করে নিলেই সব সমাধান৷ আর তানিশার সাথে মিটমাট তো হয়েই যাচ্ছে। আমার বিয়েতে তার আপত্তি নেই। বুশরা রাজি হচ্ছে না বলেই এই পন্থা।
-আইডিয়া খারাপ না।
-এরজন্য তোমার সাহায্য প্রয়োজন। করবে তো?
-অবশ্যই।
.
.
আলিয়া খাতুনের বাজে বাজে কথাগুলো আর শুনতে ইচ্ছে করছে না বুশরার। নিহিরকে জড়িয়ে তিনি নানা কথা বলছেন।
এখনো চেঁচিয়ে বলছেন তিনি-
ওই ছেলে ফালতু একটা ছেলে। প্রথমে আমার মেয়ের সাথে ঘুরছে ফিরছে, বিয়ের আশা দিছে এখন একই কাজ করছে আমার ভাই এর মেয়ের সাথে। সেও ঢ্যাং ঢ্যাং করে বোনের না হওয়া বরের সাথে ঘুরছে ফিরছে। কী মনে করে? ওই বড়ো লোকের ছেলে তাকে বিয়ে করবে? কখনোই না। তায়শাকে যেমন স্বপ্ন দেখায়ছে তেমনি করবে। ওরেও ছেড়ে দেবে। আর তোরেও কী বলি? দুনিয়ায় ছেলের অভাব পড়ছে? ওর সাথে ফোনে ফিসফিস করে দুনিয়া ঘুরতে হবে? একসময় তোর বোনের হাত ধরে ঘুরছে তা মাথায় ছিল না! ছি ছি ছি! আমার ভাই এর কানেও এসব চলে গেছে। উনি এখন এতই রেগে গেছে যে দেশেই আসতে চায়না।
.
বুশরা এসে দাঁতে দাঁত চেপে বলল-
করব না আর ফিসফিস। ঘুরব না কোথাও। তবে হ্যাঁ, বাবাকে আসতে বলো। বিয়ে বাবা আসলেই আমি করব এর আগে না। এখন গিয়েই নিহিরকে তার ফোন দিয়ে দেব।
.
এই বলে সে তৈরী হতে রুমে আসে। নাফিশা বলল-
কোথায় যাও?
-ফোন ফেরত দিতে। আসলেই তো! কেনো তার সাথে যোগাযোগ রাখব আমি! এদের সবার জন্যই আমার এই অবস্থা। তারপরেও কত কটু কথা শুনতে হচ্ছে। মিথ্যে বিয়ের গল্পও আর বয়ে বেড়ানোর দরকার নেই।
.
এই বলে সে ফোনটা নিয়ে বাড়ির বাইরে বেরুই। সি.এন.জি ঠিক করে রওনা দেয় নিহিরের বাড়ির উদ্দেশ্যে। পথিমধ্যে ফোন বন্ধ করে দেয় বুশরা।
.
.
বুশরাকে হঠাৎ দেখে নিখিল বলল, আরেহ তুমি! তোমার সাথেই যোগাযোগ করব ভাবছিলাম। ভালোই হলো এসেছ। তোমার নাম্বারটা দিয়ে যেও।
-আসলে আমি ফোন ফেরত দিতে এসেছি। বাসায় কেউ এটা ব্যবহার করা পছন্দ করছে না। নিহির স্যার কী বাসায় আছে?
-এই সময়ে ভাইয়া আর বাসা! নেই উনি।
.
সেনোয়ারা বেগম আসলে বুশরার সাথে কথা শুরু করলেন। নিখিল ভেবেছিল মনের কথাটি জানিয়ে দেবে তাকে। কিন্তু সেনোয়ারা বেগমের জন্য তা পারলো না। বুশরা তাকে ফোনটি বুঝিয়ে দেয়। সাথে বলে নিহিরকে তা দিতে। ফাহমিদা বেগমকে দেখতে চাইলে সেনোয়ারার সাথে উপরে যায় সে। ফাহমিদা বেগম ঘুমোচ্ছেন। বুশরা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নিচে নেমে আসে। বিদায় জানিয়ে বেরুতে চাইলে নিখিল তাকে পৌঁছে দিতে চায়। কিন্তু বুশরা রাজি হয় না। সে বলল-
আমি গাড়ি বাইরে দাঁড় করিয়েই এসেছি।
.
এই বলে সে বেরিয়ে পড়ে। নিহিরের সাথে দেখা হলো না বলে খারাপ লাগে তার। দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ফেললো সে। জানেনা আর কখনো দেখা হবে কি না! যোগাযোগের সব রাস্তাই যে বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু এতে বুশরার কেনো খারাপ লাগছে!
.
চলবে
.
চলবে