সেই মেয়েটি আমি নই_ ৩য় পর্ব
তুলি নিজের ওপর ভীষণ বিরক্ত হলো। সে এই নাম্বার এতক্ষণ থেকে ব্লক মারছে না কেন? ফোন সাইলেন্ট করে নাম্বারটি ব্লক দিতে আর দেরি করলো না তুলি।
ইশতিয়াক এক আনাড়ি মাঝি। প্যাডেল দিয়ে ভুল-ভাল ঘোরাচ্ছে। বোট অন্য পাড়ে এসে ঘাসের ঝোপঝাড়ের ওপর আঁটকে গেছে। তুলি ওর অবস্থা দেখে খিলখিল করে হাসছে।
– ‘এত হাসাহাসির কি আছে? আমরা এই পাড় দিয়েও উঠে যেতে পারি।’
– ‘কিন্তু ছেলেটি তো বলে দিয়েছে তাদের ঘাটে বোট দিয়ে যেতে। এক কাজ করি, আমি প্যাডল দেই, আপনি ঘাস ধরে টানেন।’
– ‘পারবে?’
– ‘দেখি চেষ্টা করে।’
তুলি বসলো প্যাডেল দিতে। ইশতিয়াক এক হাতে বোট ধরে আরেক হাতে ঘাস টানছে। কিন্তু কাজ হচ্ছে না৷ এবার সে উঠে ভালোভাবে বসে ঘাসে ধরে জোরসে টেনে ধরলো। খানিক পরই ঘটলো বিপত্তি। ঘাস ছিঁড়ে গিয়ে সে টাল সামলাতে না পেরে বাজেভাবে পড়ে গেল নদীতে। বোটও একটুর জন্য উলটে যাচ্ছিল, তুলি ‘হায় আল্লাহ’ বলে কোনোভাবে বোট শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বেঁচে গেল। ইশতিয়াক পানিতে পড়েই সঙ্গে সঙ্গে তার মোবাইল মানিব্যাগ পকেট থেকে বের করে হাত উঁচিয়ে ধরলো,
– ‘তুলি তাড়াতাড়ি নাও, দেখো মোবাইল ঠিক আছে কি-না।’
তুলি মোবাইল হাতে নিতে নিতে বললো,
– ‘আপনি উঠুন বোটে।’
– ‘পাগল না-কি, বোটে ভর দিয়ে উঠতে গেলে উলটে যাবে। এই নাও জুতা রাখো। ভাগ্য ভালো কেডস পরিনি।’
তুলি জুতো হাতে নিয়ে বললো,
– ‘তাহলে কি করবে এখন? আমরা এদিকে উঠে যাই? ওদের বললে নিজেরা নেবে এসে।’
– ‘এখান থেকে ঘুরে ওদের কাছে যাওয়াটাও অনেক সময় লাগবে। তারচেয়ে আমি সাঁতরাই আর নৌকা টানি।’
– ‘কিন্তু এভাবে তো আপনার অনেক কষ্ট হয়ে যাবে।’
– ‘সমস্যা নেই আসো।’
ইশতিয়াক এক হাত দিয়ে নৌকা ধরে আছে। আরেক হাতে টানছে। খানিক পর পর জিরান নিচ্ছে। মাঝামাঝি গিয়ে আর পারলো না সে। হাঁপিয়ে গেছে ভীষণ।
– ‘তুলি তুমি দেখো আস্তে আস্তে প্যাডল দিতে পারো কি-না। আমি পেছন থেকে ঠেলে-ঠুলে বোট সোজা রাখবো।’
– ‘আচ্ছা পারবো।’
কথাটি বলে তুলি ভ্যানিটিব্যাগে মোবাইল মানিব্যাগ ঢুকিয়ে গলায় ঝুলিয়ে নেয়। আসনে বসে আস্তে আস্তে প্যাডেল দিতে শুরু করে।
– ‘যাচ্ছে তো, আপনি ঠিক আছেন?’
– ‘হ্যাঁ, তবে আমিও পা দিয়ে সাঁতার কেটে বোট সোজা রাখছি।’
– ‘শুধু পা দিয়ে সাঁতার কাটা যায় বুঝি?’
– ‘হ্যাঁ, মানুষ পা দিয়ে সাঁতার কাটতে পারে, কিন্তু এভাবে সামনে এগুলেও মাথা ডুবে যায়।’
– ‘তাহলে আপনি ভেসে আছেন কিভাবে?’
– ‘বোটে ধরে আছি, আর এত কথা বলো কেন। আমার কথা বললে মুখে পানি ঢুকে যায়।’
প্যাডল বন্ধ করে তুলি কাঁচভাঙা হাসিতে ফেটে পড়ে৷
ইশতিয়াক হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,
– ‘হাসছো কেন? তুমি মজা পাচ্ছ না-কি?’
– ‘হ্যাঁ।’
– ‘হ্যাঁ মানে? আজাইরা কথা না বলে প্যাডেল দাও।’
তুলি প্যাডেল বন্ধ করে বললো,
– ‘দেবো না, দিলে তো তাড়াতাড়ি চলে যাব।’
– ‘আমি কিন্তু বোট ডুবিয়ে দেবো তুলি।’
– ‘এটা ভাড়া বোট।’
– ‘তুমি তো ভাড়া নও, টান দিয়ে ফেলে দেবো।’
তুলি ওর কথায় মনযোগ না দিয়ে সেল্ফি তুলতে শুরু করে। ক্যামেরা এদিক-ওদিক করে ঠিক করে ইশতিয়াককে ধরিয়ে তোলার জন্য।
– ‘তুলি ভালো হচ্ছে না কিন্তু।’
– ‘আরে, স্মৃতি হিসাবে থাকবে তো।’
ইশতিয়াক বোট থেকে হাত ছেড়ে ডুব দিয়ে অনেকটা দূরে গিয়ে ভেসে উঠে বললো,
– ‘আমি সাঁতার কেটে চলে যাচ্ছি। তুমি একা একা আসো এবার।’
তুলি আঁতকে উঠে। মোবাইল ভ্যানিটিব্যাগে রেখে হাঁক ছাড়ে,
– ‘প্লিজ, আমাকে নিয়ে যান মাঝি।’
– ‘তোমার চেহারায় এখনও দুষ্টামির হাসি। কান ধরে বলো তাহলে নেব এসে।’
– ‘শুনুন ‘এই পৃথিবী শুধু আপনার আমার না’ আশেপাশে অনেক লোক আছে৷ নদীর পাড় থেকে, স্টল থেকে তাকাচ্ছে। লোক সম্মুখে আপনার বউ কান ধরবে বলুন?’
ইশতিয়াক কথাগুলো শুনে হেঁসে ফেলায় পানি মুখে গিয়ে বিষম খেল। তারপর পুনরায় বললো,
– ‘কিন্তু তুমি এখনও দুষ্টামির ধান্ধায় আছো। কাতর হয়ে বললো তবেই নেব।’
– ‘আপনি কি পাথর? কাতর হয়ে বলতে হবে কেন? আপনারই তো বউ।’
– ‘হাসির কথা বলবে না তো তুলি। হাসলে পানি মুখে চলে যায়।’
কথাটি শুনে তুলি মুখে হাত দিয়ে হাসতে হাসতে বারংবার নুইয়ে পড়ছে। ততক্ষণে ইশতিয়াক ডুব দিয়ে বোটের কাছে চলে এলো।
– ‘এত না হেঁসে প্যাডল দাও।’
– ‘মাঝি আসছেন?’
– ‘আমি মাঝি হলাম কবে থেকে?’
– ‘আপনি আমার মাঝি।’
– ‘হ্যাঁ আমি তোমার নদীর ব্যক্তিগত মাঝি।’
তুলি চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে বললো,
– ‘আমার নদী মানে?’
– ‘তুমি প্যাডল দেবে?’
– ‘ঐ দেখা যায় বক, আমি প্যাডল দেই আপনি বকের কাছে নিয়ে যান।’
– ‘তুলি আশপাশের মানুষ তাকাচ্ছে। প্লিজ তাড়াতাড়ি যাও, আমারও হাত ব্যথা এসে গেছে।’
– ‘জি আচ্ছা জনাব, যাচ্ছি।’
তুলি প্যাডেল দিতে শুরু করে। প্যাডেলের তীব্র শব্দ। সে হাঁক ছেড়ে বললো,
– ‘মাঝি আপনি আমার পেছনে তাই ভালো লাগছে না৷ দেখা গেলে ভালো লাগতো।’
– ‘ঢং করো না তো তুলি, তাড়াতাড়ি পাড়ে যাও।’
– ‘ভেজা কাপড় নিয়ে তো আর কাশফুল দেখা যাবে না।’
– ‘মন খারাপ হচ্ছে? চিন্তা করতে হবে না। আগে পাড়ে যাই।
দু’জন খানিক পর চলে এলো কিনারায়। উৎসুক জনতার ভীড় হবার আগেই ইশতিয়াক দোকানে বোট বুঝিয়ে দিয়ে তুলিকে নিয়ে সেখান থেকে কেটে পড়লো।
– ‘কি করবেন এখন? ভেজা কাপড়ে আর না হেঁটে বাসায় চলে যাই।’
ইশতিয়াক পিছু ফিরে ওর দিকে তাকিয়ে বললো,
– ‘ভিজেই তো গেছি। এভাবে বাসায়ও ফিরতে হবে। সুতরাং ঘুরাঘুরি করেই যাই।’
– ‘লোকে দেখে কি বলবে।’
– ‘আরে মানুষ তো বুঝবেই পড়ে গিয়েছিলাম। এগুলো ব্যাপার না। তাছাড়া গ্রামে কত বছর আগে সাঁতার কেটেছিলাম, আজ পড়ে যাওয়ায় সাঁতরানো হলো।’
তুলি হেঁসে বললো,
– ‘আহা মন বুঝ।’
ইশতিয়াক ভেজা হাতে ওর গাল টিপে ধরে বললো,
– ‘তাছাড়া আমার বউটা যদি বরের বিপর্যস্ত অবস্থা দেখে মজা পায়, তাহলে মাঝে-মধ্যে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত কাণ্ড হলে মন্দ কি।’
তুলি আর কিছু বললো না। ইশতিয়াকের এক হাত বাহুডোরে বেঁধে গাল চেপে ধরে হাঁটতে লাগলো। ইশতিয়াক খানিক পর বললো,
– ‘আমার পাঞ্জাবি ভেজা, তুমি ভিজে যাবে তো।’
– ‘ভিজে যাক।’
– ‘হ্যাঁ, তাও ঠিক। বরকে ধরেই তো ভিজবে। আমার জলেই ভিজবে তুমি।’
– ‘আপনি এমন ডাবল মিনিং শিখছেন কোত্থেকে? ব*দ আছেন অনেক।’
– ‘আমি আগে তো এতকিছু জানতাম না, তোমার সঙ্গ পেয়ে ব*দ হয়ে গেছি।’
– ‘আমি এরকম প*চা কথা কখনও বলি না।’
সামনে তাকিয়ে মুগ্ধতায় দু’জনের আলাপচারিতা কমে এলো।
হেঁটে হেঁটে কাশফুলের মাঝামাঝি রাস্তায় চলে এসেছে তারা। দুইপাশে সারি সারি কাশফুলের গাছগুলো বাতাসে মৃদু কাঁপছে।
তুলি গুন-গুন করলো রবীন্দ্রনাথের কবিতার দু’টো লাইন,
‘চিক চিক করে বালি কোথাও নেই কাদা,
একধারে কাশবন ফুলে ফুলে সাদা।’
ইশতিয়াক আকাশের দিকে তাকায়। সাদা সাদা নরম মেঘের ফাঁক গলে কাশবেন ঝরে পড়ছে রোদ।
নিচে যতদূরে চোখ যায় দৃষ্টিজুড়ে শুধু কাশফুল আর কাশফুল। বিস্তীর্ণ এলাকা যেন শুভ্রতার চাদরে মোড়া এক অপরুপ সৌন্দর্যের রাজ্য।
– ‘কেমন লাগছে তুলি?’
– ‘ভালো, তবে ছবির মতো নয়।’
ইশতিয়াক খানিক হেঁসে বললো,
– ‘চলো ঐদিকে যাই, দেখি পাঞ্জাবি খুলে চিপে দেয়ার মতো আড়াল পাই কি-না।’
কাশবেনর চারপাশে ঝকঝকে আঁকা-বাঁকা ছোট ছোট রাস্তা পিচঢালা রাস্তা। তারা হাঁটছে সেসব পথ ধরে, হঠাৎ একখন্ড নির্জন জায়গা চোখে পড়ে তুলির।
– ‘চলো এদিকে যাই।’
ইশতিয়াক দেখলো রাস্তার বাঁ পাশে অনেকটা জায়গাজুড়ে বন। কেটে খালি করা হয়েছে। সেখানকার মাটিতেও সবুজ নরম ঘাস উঠেছে। জায়গাটা ভীষণ পছন্দ হলো দু’জনের।
ইশতিয়াক বললো,
– ‘আচ্ছা চলো।’
– ‘কি সুন্দর গোল করে বন কাটা।’
– ‘হ্যাঁ।’
দুজন ভেতরে গেল। ঠিক মাঝখানে গিয়ে বসে তারা।
– ‘আহ এখন শান্তি লাগছে। হাঁপিয়ে গিয়েছিলাম হাঁটতে হাঁটতে।’
– ‘কিন্তু আমার শার্ট খুলে চিপতে হবে।’
– ‘প্যান্ট খুলেও চিপে নিতে পারেন৷’
– ‘তুমি না পচা কথা বলো না।’
– পচা কথা কোথায়? প্যান্টের নিচে তো আন্ডারওয়্যার আছেই।
– ‘হঠাৎ কেউ আসবে।’
– ‘আমার বরের ইজ্জত রক্ষার্থে আমি সদা প্রস্তুত জনাব।’
– ‘তুমি এখনও মজা নিচ্ছ।’
– ‘আরে না, আপনি ওইখানে একেবারে কাশবনের কাছে যান। তাহলে পেছনে কাশবন থাকবে। আর সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে আপনার বউ। কেউ কি আর এলে দেখবে? তখন শান্তিমতো চিপে ঝেড়ে নিবেন।’
– ‘হ্যাঁ দারুণ আইডিয়া।’
ইশতিয়াক আর তুলি একেবারে গোল জায়গার মাঝখান থেকে বনের কাছে গেল। তুলি সামনে দাড়ায়। ইশতিয়াক পাঞ্জাবি খুলতেই তুলি বললো,
– ‘পাঞ্জাবি আমার কাছে দেন আমি চিপে দিচ্ছি। আর আপনি প্যান্ট খুলুন।’
– ‘ধ্যাৎ ‘প্যান্ট খুলুন’ এত বাজেভাবে বলছো কেন?’
তুলি ফিক করে হেঁসে পাঞ্জাবি হাতে নিয়ে চিপে ঝাড়ছে।
– ‘আপনিও খুলে ঝেড়ে নিন ভালো করে।’
– ‘তা তো করবোই। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি শুকাইবে না।’
– ‘না শুকাইল, কিন্তু পানি না থাকলে গায়ে লেপ্টে থাকবে না৷ অস্বস্তি হবে না আপনার। তাছাড়া দূর থেকে কেউ দেখে বুঝবেও না।’
– ‘তা ঠিক।’
ইশতিয়াক প্যান্ট চিপে ঝেড়ে নিয়ে বললো,
– ‘শেষ আমার।’
– ‘ঠিক আছে এবার চিপা থেকে বের হন।’
কথাটি বলে তুলি পাঞ্জাবি উলটে বনের উপরে মেলে দিল।
– ‘এটা কি হলো? আমি কি খালি গায়ে থাকবো?’
– ‘এটা আপনার শাস্তি। আপনি পাঞ্জাবির নিচে কিছু পরে আসেননি কেন?’
– ‘ফাজলামো করো না তুলি, এদিকে দাও।’
– ‘আরে না, পাঞ্জাবি শুকিয়ে গেলে আপনার প্যান্ট ভেজা থাকলেও ক্ষতি নেই। কারণ প্রায় হাঁটু পর্যন্ত পাঞ্জাবি ঢেকে রাখে।’
– ‘তাই বলে খালি গায়ে থাকবো?’
– ‘ঘাসে শুয়ে থাকবে। কেউ আসবে না।’
– ‘আচ্ছা ঠিক আছে।’
ইশতিয়াক ঘন ঘাস দেখে বসে গেল। তুলি গিয়ে বসলো ওর বুকে পিঠ ঠেকিয়ে।
ইশতিয়াক ওকে দুই হাতে বেঁধে কাঁধে থুতনি রাখে। তুলি দুষ্টামি করে গা ছেড়ে দিয়ে ঠেলে ওকে শুইয়ে দেয় সবুজ কোমল ঘাসে। কাশফুলের গাছগুলো যেন তাদেরকে জনমানব থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। তুলি পাশে শুয়ে ইশতিয়াকের বুকে হাত রাখে। ফরসা চ্যাপ্টা বুক। কোমল কিছু কালো লোম। তুলি ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
– ‘জানেন, আমার সবচেয়ে ভালো লাগে আপনার বুক।’
– ‘তাই না-কি।’
– ‘হুম।’
ইশতিয়াক মুচকি হেঁসে বললো,
– ‘জায়গাটা কেমন নীরব। মনে হচ্ছে আমরা স্বামী-স্ত্রী না। প্রেমিক-প্রেমিকা লোকালয় থেকে পালিয়ে এসেছি চুটিয়ে প্রেম করার জন্য।’
তুলি ঠোঁট টিপে হাসে। ইশতিয়াক মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ঠোঁট চেপে ধরে ওর গালে। তুলি নিজেকে মুক্ত করে এক পা ওর ওপরে তুলে আরেক হাত দিয়ে ওকে ধরে গলায় মুখ লুকিয়ে গরম শ্বাস-প্রশ্বাস ছেড়ে বললো,
– ‘আমি আপনার মতো বিয়ে করবো না কখনও ভাবিনি ঠিক। কিন্তু কখনও ভাবতে পারিনি বিয়ের পর জীবনটা এতো সুন্দর, উপভোগ্য হতে পারে। মনজুড়ে এত প্রশ্রান্তি আমি কখনও পাইনি।’
ইশতিয়াক ওর কথা খেয়াল করছে না।
বন থেকে কোনো কিছুর শব্দ তার কানে ভেসে আসছে। সে তুলিকে ছাড়িয়ে তাকাতেই শব্দ থেমে গেল। কোথাও যেন কিছু নেই। ভুল শুনছে না-কি সে?
তুলি এবার ওর বুকে মাথা রেখে চোখবুজে নেয়। খানিক পর ইশতিয়াক দেখে একটা বাইক বনের চারপাশের রাস্তা দিয়ে ঘুরছে। একজন বাইকের পেছনে বসা। কিন্তু কেউই এদিকে তাকাচ্ছে না। তবুও ইশতিয়াকের কাছে কোনো একটা সমস্যা আছে বলে মনে হচ্ছে। সে তুলির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে চোখ কান সজাগ রাখছে। আরও খানিক সময় যেতেই দেখে একটা গাড়ি বনের চারপাশ দিয়ে ঘুরে চলে গেল। চারদিকে আবার পিনপতন নীরবতা। তুলি চুপচাপ শুয়ে আছে বুকে। আবার পেছনের বনে পায়ের শব্দ। ইশতিয়াক আবার তাকিয়ে কিছুই দেখতে পায় না। সন্দেহ আরও তীব্র হয়। সে এখন নিশ্চিত কিছু একটা ঘটতে চলেছে৷
– ‘তুলি এখান থেকে যাই চলো।
– ‘না আমি ঘুমাবো আপনি পারলে উপুড় হন।’
– ‘উপুড় হব কেন?’
তুলি মাথা তুলে বললো,
– ‘কান আগান।’
– ‘কেন?’
– ‘কামড় দেবো না আগান।’
ইশতিয়াক মাথা তুলে কান এগিয়ে দিল।
– ‘আপনার পিঠও আমার প্রিয়। পিঠে গাল চেপে ধরতে ভালো লাগে, শুয়ে থাকতে ভালো লাগে।’
ইশতিয়াক মাথা তুলে এদিক-ওদিক তাকিয়ে বললো,
– ‘জায়গাটা ভালো না মনে হচ্ছে তুলি।’
অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো,
– ‘বাবা ভূ*ত পে*ত্নী আছে না-কি এখানে?’
– ‘আরে তা না, এখানে এভাবে বন কেটে রেখেছে কে? এটা কোনো ফাঁদ হতে পারে।’
– ‘বলছে আপনাকে, এই জন্য গোয়েন্দা আর থ্রিলার বই এসব না পড়াই ভালো। প্রেমের বই পড়লে এত সুন্দর জায়গায় এসব ভাবতেন না।’
ইশতিয়াক মুচকি হেঁসে এক হাত তুলির পিঠে রেখে কপালে চুমু খেল।
আবার বনের দিকে পায়ের শব্দ। তুলিও এবার তাকালো। কিছুই নেই। ইশতিয়াক আর দেরি না করে বললো,
– ‘উঠে পড়ো, এখান থেকে বের হব।’
তুলি ভয়ে ঢোক গিলে বললো,
– ‘ভূ*ত আছে না-কি?’
ইশতিয়াক হেঁসে ফেললো,
– ‘তোমারও উচিত হরর মুভি আর বই না পড়া। ভূত ছাড়া আর কিছুই ভাবছো না।’
কথা বলতে বলতে তারা এখান থেকে বের হয়ে এলো।
– ‘চলো নদীর পাড়ের দোকানের দিকে যাই।
তুলি ওর হাত ধরে সম্মতি জানায়। দু’জন পাকা রাস্তা ধরে হাঁটছে তখনই একটা বাইক এসে সামনে দাঁড়ায়।
– ‘এই দাঁড়ান, দাঁড়ান এখানে।’
—চলবে—
সেই মেয়েটি আমি নই
লেখা: জবরুল ইসলাম