#সোনার সংসার
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ২
“দোস্ত কাকে জড়িয়ে ধরেছিস,এটা ত তাবাসসুম নয়।”
যে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে তাকে একটা মেয়ে এসে কথাটা বলল।কথাটা বলার পরপরই সে আমাকে ছেড়ে দাঁড়ায়,,,আমি এবার মেয়েটার দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম গায়ের রং ফর্সা,দেখতে খুব কিউট একটা মেয়ে।
“বইন কী বলছিস এটা তাবাসসুম নয়,কিন্তু তুই ত বলেছিলি যে এটাই তাবাসসুম কালো গাউন পড়নে।”(যে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল সে মেয়েটা বলল)
” তোরে আমি উস্টা মাইরা তোর শ্বশুর বাড়িতে পাঠাইয়া দিব বেদ্দপ মহিলা,আমি এখানে।”(পিছন থেকে কেউ একজন বলে উঠল)
আমি ওদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে পিছনে তাকিয়ে দেখি উজ্জল শ্যামলা গাঁয়ের রঙের একটা মেয়ে।তারও পরনে আমার মতই কালো গাউন পড়া।বুঝতে পারলাম মেয়েটা তাবাসসুম আর এই মেয়েটা তখন ভুল করে আমাকে জড়িয়ে ধরে।মেয়েটা আবারও বলে উঠল,,,
“দুই বছর তোর সাথে দেখা হয় নি আর এখন আমাকে চিনতেই পারলি না।”
এবার ঐ মেয়েটা বলে উঠল যে জড়িয়ে ধরেছিল আমাকে,,,
“সরি বইন আসলে আমি একদম খেয়াল করি নি।পান্না বলল কালো গাউন পড়াটা তাবাসসুম তাই উত্তেজিত হয়ে ভালো করে না দেখেই ওকে জড়িয়ে ধরি।”
“ঠিক আছে মাফ করে দিলাম এবার ভিক্ষা করে খা।” (বলেই তাবাসসুম মেয়েটা ফিক করে হেসে ফেলল)
আমি ওদের পাশ কাটিয়ে চলে আসতে নিলে ওদের মধ্যে তাবাসসুম নামের মেয়েটা আমাকে বলে উঠল,,
“এই যে শোন!”
আমি ওদের সামনে দাড়িয়ে বললাম,,,
“জি বলুন।”
“আসলে সরি তামান্না ভুল করে তোমাকে জড়িয়ে ধরেছে তুমি কিছু মনে করো না প্লিজ।”
“না সমস্যা নেই,আমি কিছু মনে করি নি।”
মেয়েটা এবার হেঁসে বলে উঠল,,,
“আমি তাবাসসুম,,,তোমার নাম কী?”
“আমার নাম সাদিয়া।”
“তুমি কী নতুন ভার্সিটিতে?”
“জি আজই প্রথম আসলাম।”
“ওহহ,,,কোন ইয়ারে পড়ছো তুমি।”
“আমি অনার্স ফাস্ট ইয়ারে,,,আপনারা?”
“আরে ব্বাস আমরাও ত ফাস্ট ইয়ারে,,,কী নিয়ে অনার্স করছো তুমি?”
“আমি ইংরেজি নিয়ে অনার্স করছি।”
“আরে তুমি মাথা নিচু করে কেন কথা বলছো?আর আমরা ত ক্লাসমেট আপনি করেই বা কেন বলছো?যাই হোক বাদ দেও,,,ফ্রেন্ড হবে আমাদের!”
মেয়েটা আমার দিকে হাত বাড়িয়ে বলে উঠল,,,আমিও আর কিছু না ভেবে ওদের সাথে ফ্রেন্ডশিপ করে ফেলি।কারন ওদের সাথে কথা বলে খারাপ মনে হয় নি।আর এখানে কাউকে চিনিও না ওদের ছাড়া।অরা একে একে সবাই পরিচয় দিল,,,তখন আমাকে যে মেয়েটা জড়িয়ে ধরেছিল তার নাম তামান্না,আর কালো গাউন পড়া মেয়েটা তাবাসসুম,আরেকজনের নাম পান্না।
“শোন ফ্রেন্ড যখন হয়েছিস তখন তুই করেই বলবি।”(পান্না)
আমি হালকা হেঁসে বলে উঠলাম,,,” ঠিক আছে।”
তারপর সবাই মিলে হাসি খুশি ক্লাসে চলে আসলাম,,,ওদের সাথে হাসি ঠাট্টায় খুব ভালোই কাটল প্রতিটা ক্লাস।মাঝে দিয়ে একটা ক্লাস হবে না তাই সবাই ঠিক করলাম ক্যান্টিনে যাব।খুব গরম পড়েছে কোল্ড ড্রিংক হলে ভালো হবে তাই সবাই সেদিকে চললাম।ক্যান্টিনে গিয়ে কোল্ড ড্রিংক অর্ডার করে তামান্না আমাকে প্রশ্ন করল,,,
“তোর ব্যাপারে ত কিছুই জানা হল না শুধু তোর নামটা ছাড়া,,,আর এত চুপচাপই বা থাকিস কেন বুঝি না আমি।”
“না এমনিতেই চুপচাপ থাকতেই ভালো লাগে।”
“এমন নিরামিষ মার্কা থাকলে তরে উস্টা মাইরা তোর শ্বশুর বাড়িতে পাঠাইয়া দিব।” (তাবাসসুম)
শ্বশুর বাড়ি কথাটা শুনেই বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠল,,,আচমকা চোখে পানি জমা হল।চোখের পানিটা আড়াল করতে চাইলে পান্না আড়চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,,,
“আরে ইয়ার তরা কী শুরু করেছিস বলত,আমাদের সাথে থাকতে থাকতেই ঠিক হয়ে যাবে।এখন এসব বাদ দে আর দেখ ওয়েটার এত ওয়েট কেন করাচ্ছে।”
পান্নার কথা শুনে সবাই হেঁসে ফেলল,,,অতঃপর সবাই কোল্ড ড্রিংক খেয়ে ক্লাসে চলে এলাম।তারপর ক্লাস শেষ করে সবাই সবার ফোন নাম্বার নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য চললাম।আমি আসতে নিলে পান্না আমার পথ আটকায় আমি পান্নার দিকে ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলাম,,
“কিছু বলবি তুই।”
“না কিছু বলব না।তোর সাথে যাব একসাথে আমার বাসাও তোর বাসা যাওয়ার রাস্তার দিকেই।”
আমি মুচকি হেসে অর সাথে পা মেলালাম।কিছু দূর আসতেই গেটের সামনে একটা পরিচিত গাড়ি দেখতে পেলাম।আমি দাড়িয়ে গেলাম,সামনে যাওয়ার কোন শক্তি পাচ্ছি না।গাড়িটা দেখার সাথে সাথেই বেহায়া চোখটা চারপাশে খুঁজতে লাগল পরিচিত সেই মুখের মালিককে।আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পান্না বলে উঠল,,,
“কী রে দাঁড়িয়ে গেলি কেন?কোন সমস্যা হয়েছে?”
“নননা ককী হবে?চল যাই।”
এক পা বাড়ানোর পরেই সেই পরিচিত মুখের মানুষটার দেখা পেলাম।গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,,,ক্রিম কালারের টিশার্ট টা গামে শরীরের সাথে লেগে রয়েছে।আগের মত মুখের উজ্জলতা আর নেই,কেমন শুকিয়ে গেছে।বুকের ভিতর তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে।পুরনো ক্ষতটা আবারও নতুন হয়ে উঠল,সেও আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি তার দৃষ্টি উপেক্ষা করে চোখ সরিয়ে চলে যেতে চাইলাম।কিন্তু সে পথ আঁটকে দাড়াল আর পান্নাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,
“আমি সাদিয়ার হাসবেন্ড,,,সাদিয়ার সাথে আমার একটু কথা আছে যদি আপনি একটু!”
পান্না আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকাল,আমি চোখের পানি লুকিয়ে পান্নার দিকে চোখের ইশারায় জানালাম পরে সবটা বলব এখন যা তুই।আমার চোখের ভাষা বুঝতে পেরে পান্না চলে গেলো।আমি মাথা নিচু করে হাতের বইটা শক্ত করে আঁকড়ে ধরে দাড়িয়ে আছি।তার দিকে তাকাচ্ছি না,কিছুক্ষণ পর সে নরম গলায় বলে উঠল,,,
“কেমন আছো দিয়া?”
আমি তখনও মাথা নিচু করে চোখের পানিটা লুকাতে চাইছি,কিছু বলতে গেলেই সে বুঝে ফেলবে আমি কাঁদছি।আমি তাকে আমার চোখের পানিটা দেখাতে চাইছি না,,,নিজেকে তার কাছে আর দুর্বল দেখাব না।তাই যতটা সম্ভব নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করছি।আমাকে চুপ থাকতে দেখে সে বলে উঠল,,,
“কথা বলবে না তোমার হিটলারের সাথে।”
শরীফের রাগের জন্য ভালবেসে হিটলার ডাকতাম।এই কথাটা শুনে বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠল।নিজেকে যথা সম্ভব শক্ত করে কড়া গলায় বলে উঠলাম,,,
“কেন এসেছেন এখানে আপনি?”
“একটা কাজে এসেছিলাম তোমাকে দেখে কথা বলতে ইচ্ছে করল তাই আসলাম।” (নরম গলায়)
“কথা বলা হয়ে গেছে,এখন আমার পথ ছাড়ুন আমি বাসায় যাব।”
আমার কথা শুনে শরীফ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠল,,,
“বললে না ত কেমন আছো?”
“যেমন থাকার কথা তেমনই আছি,আর আমার এত ভালো মন্দের খবর আপনার নিতে হবে না।আপনি বরং আপনার নতুন বউয়ের খবর নিন তাতে কাজে হবে।”
আমার কথা শুনে শরীফ মুচকি হেঁসে বলে উঠল,,,
“তুমিই ত আমার বউ,আর এখন ত আমার বউয়ের খবরই নিচ্ছি।”
বউ কথাটা শুনে আরেকদফা বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠল।
“ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিবেন সই করে দিব,বউয়ের দাবী নিয়ে আমার সামনে আর আসবেন না দয়া করে।ভালো থাকবেন,আপনার নতুন জীবনের জন্য শুভেচ্ছা রইল।”
তারপর শরীফকে আর কিছু বলতে না দিয়ে দৌড়ে সেখান থেকে চলে এলাম,এখন আর চোখের পানি আটকে রাখতে পারছি না।নিজেকে ত সামলেই নিয়েছিলাম তবে কেন আজ সে আমার সামনে আসল।গত এক মাসে ত আমার খবর একবারও নেয় নি তবে কেন আজ আমার সামনে এসে জ্বালাটা বাড়িয়ে দিল।
#চলবে…
(