#সোনার সংসার
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৮
শরীফ গালে হাত দিয়ে সাদিয়ার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে,সাদিয়া এবার রেগে চিৎকার করে বলে উঠল,,,
“হাতের পুতুল পেয়েছেন আমাকে?যখন যেভাবে চাইবেন সেভাবেই নাচাবেন।আপনি আজ আমার শয্যের সীমা পেরিয়ে গেছেন।আপনার কী মনে হয় না আপনি মানসিক ভাবে অসুস্থ!এখন কোন অধিকারে আমাকে নিজের স্ত্রী বলে দাবী করছেন।এতই যদি ভালবাসেন তবে কেন আমাকে রেখে আরেকটা বিয়ে করলেন?একটা বাচ্চাই কী একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ঔষধ?ভালবাসার কী সেখানে কোন মূল্য নেই?
আপনি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ ভুল।আপনাকে ভালবাসা আমার জীবনে ভুল,আপনার সাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে নিজের পরিবারকে কষ্ট দেয়াটা হল আরেকটা ভুল।এতই ভালবেসেছিলাম যে নিজের পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে আপনাকে বিয়ে করেছি।নিজের পরিবারের কথা ভাবি নি,চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে পালিয়েছিলাম আপনার সাথে সুখে সংসার করব বলে।আর আপনি কী করলেন?আপনি আমার স্বপ্নের সোনার সংসারটা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছেন।নিজের পরিবারের জন্য আমাকে ছেড়ে দিলেন!আরে যখন সবচেয়ে বেশি আমার আপনাকে প্রয়োজন ছিল তখন আপনি আমাকে একা ফেলে চলে গিয়েছেন।শুধু তাই নয় আরেকটা বিয়েও করেছেন।আর এখন যখন নিজেকে সামলে নিয়েছি,আপনাকে ছাড়া থাকতে শিখেছি তখন কেন আমার জীবনে এসেছেন?আমার সুখটা কী আপনার শয্য হচ্ছে না।”
শরীফের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে,এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে সাদিয়ার দিকে।সাদিয়ার চোখ দিয়ে আজ পানি পড়ছে না।সাদিয়ার চোখ দিয়ে পানি না পড়লেও তার চোখের দিকে তাকালেই বুঝা যাচ্ছে কতটা কষ্ট,যন্ত্রণা রয়েছে ঐ চোখে।সাদিয়া এবার শান্ত কন্ঠে বলে উঠল,,
“আপনি প্লিজ আপনার জীবনটা গুছিয়ে নিন,আমাকেও আমার জীবনটা গুছিয়ে নিতে দিন।আমি ভুলে যাব আপনার সাথে আমার দেখা হয়েছিল কখনও।”
কথাগুলো বলে সাদিয়া আর দাঁড়ায় না বেরিয়ে যায় হসপিটাল থেকে।সাদিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে শরীফ মনে মনে বলে উঠল,,,
“তোমার একটা কথাও ভুল নয়,সবই সত্যি বলেছো তুমি।তুমি তোমার জায়গায় ঠিক আর আমি আমার জায়গায়।অনেক কষ্ট দিয়েছি তোমাকে যা আজ তোমার কথাতে স্পষ্ট।এবার আমি আমার জীবনটা গুছিয়ে নিব।”
কথাগুলো বলে শরীফও চলে যায়,আর আলামিন এতক্ষণ সবটা হ্যাবলার মত তাকিয়ে থেকে দেখেছে।আলামিন পুরাই বোকা বনে গেছে তাদের কথায়।এতক্ষণে সবটা অর কাছে ক্লিয়ার,আর কাল মার খাওয়ার কারনটাও এতক্ষণে বুঝতে পেরেছে।
কতক্ষণ আগে,,,
শরীফ সাদিয়ার কাছে গিয়ে সাদিয়ার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয় আর রেগে বলে উঠে,,,
“ছেলেদের সাথে এত মিশতে কে বলেছে তোমাকে?এই ছেলের সাথে এত কীসের কথা তোমার?”
সাদিয়াও রেগে যায় খুব তাই সাদিয়াও রেগে বলে উঠে,,,
“আপনার সাহস কী করে হল আমার গায়ে হাত তোলার?আর আমি কী করব না করব সেটা কী আপনি আমাকে বলে দিবেন?”
“হে আমিই বলব,আমার কথাতেই তোমার চলতে হবে।কারন তুমি আমার স্ত্রী।”
ব্যাস সাদিয়ার রাগ হতে আর কী লাগে তাই ঠাস করে তখন শরীফের গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।তারপর কী হয়েছে সবাই জানেন।
__________________________
শরীফ বাড়িতে এসে সারা বাড়িতে কেরোসিন তেল ফেলছে।শরীফের চোখ আগুনের মত লাল হয়ে আছে,বাড়ির সবাই শরীফকে থামাতে চাইছে কিন্তু কারো বাঁধাই মানছে না শরীফ।একসময় শরীফের বড় ভাই এসে একটা চড় বসিয়ে দেয় শরীফের গালে।শরীফ থেমে যায় আর তখন শরীফের বড় ভাই বলে উঠে,,,
“এসব পাগলামি করার মানে কী?বাড়িটা কী জ্বালিয়ে দিবি নাকি?”
“সব শেষ করে দিব আমি,সব শেষ করে দিব।আজ তদের জন্য আমার সাদিয়া আমার থেকে দূরে।তদের জন্য আজ আমার সাদিয়া এত কষ্টে আছে।তদের জন্য আমার আর সাদিয়ার সোনার সংসার ভেঙ্গে গেছে।তদের জন্য আমার সাদিয়া আজ মা ডাক থেকে বঞ্চিত,সবকিছুর জন্য তরা দায়ী।”(রেগে চিৎকার করে)
“মানেহ কী বলছিস তুই এসব?”
“ঠিকই বলছি আমি,তরা খুনী।তরা সবাই খুনী,আমি থাকব না এ বাড়িতে।চলে যাব আমি আমার সাদিয়ার কাছে,সাদিয়াকে ছাড়া একেকটা দিন আমার জাহান্নামের শাস্তির মত লাগছে।”
কথাগুলো বলে শরীফ বের হতে নিলেই শরীফের মা পথ আগলে দাঁড়ায় আর বলে উঠে,,,
“আর এক পা বাইরে বের হলে আমার মরা মুখ দেখবি তুই।ঐ মেয়ের কাছে যেতে দিব না আমি তকে,তুই যদি ঐ মেয়ের কাছে যেতেই চাস ত আমাকে কবর দিয়ে যা।আর যদি সেটা না চাস ত চুপচাপ রুমে যা।আজ তুই বেছে নিবি তুই কাকে চাস,মা নাকি বউ?”
শরীফ একটা তাচ্ছিল্য হাসি দিলো,যেটার মানে কেউ বুঝল না,কিন্তু পরক্ষণেই সবার অন্তরআত্মা কেঁপে উঠল।শরীফের হাত থেকে গলগল করে রক্ত পড়ছে একটা ফুলদানি দিয়ে হাতে আঘাত করেছে।শরীফকে এই অবস্থায় দেখে অর মা এগিয়ে আসতে নিলে বলে উঠল,,,
“একদম আসবে না আমার কাছে।তুমি আমার মা হয়ে আমার থেকে আমার ভালবাসা কেড়ে নিয়েছো।আমার সুখ কেড়ে নিয়েছো,আসবে না তুমি আমার কাছে।”
“শরীফ কী করলি তুই এটা?” (উত্তেজিত হয়ে শরীফের বাবা বলল)
শরীফ আবারও তাচ্ছিল্য হাসল,তারপর বলে উঠল,,,
“আমাকে তোমার বউ বলেছে যেকোন একজনকে বেছে নিতে,হয়ত বউ নয়ত মা।কিন্তু আমি কোনটাই পারব না,তাই নিজেকেই শেষ করে দিব আমি।”
কথাটা বলে শরীফ আবারও ফুলদানি দিয়ে মাথায় আঘাত করে।তখন শরীফের বড় ভাই আর বাবা গিয়ে আটকায়,অনেক কষ্ট করে শরীফকে থামায় তারা।অনেক রক্ত ঝড়ছে সবাই অস্থির হয়ে গেছে শরীফকে এই অবস্থায় দেখে।
#চলবে…
(দুই পার্ট একদিনে দিলাম,খুব চাপ হয়ে গেছে দুই পার্ট একদিনে দিতে।
আজকের পার্টে হয়ত অনেকটা ক্লিয়ার করে দিয়েছি। আর শরীফকে মেরে দিলে কেমন হয়🤔)