স্বপ্নের প্রেয়সী ২ পর্ব ৪৭+৪৮

#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_47

ফারহানের মাথায় রক্ত চরে গেছে। সারা রাত ঘুম হয় নি। তবে এই ভোর বেলা যা শুনলো তাতে ওহ নিজের রাগ কে কন্ট্রোল করতে পারছে না। ফাহিম নিজে ও রেগে আছে। হাত দুটো মুষ্টি বদ্ধ করছে বার বার। ফারহান বাসা থেকে বের হতে যেতেই ফাহিম আটকে ফেললো।
_ ফাহিম যেতে দে আমায়। ঐ জানোয়ার আমার বোনের সাথে গেইম খেলবে আর আমি ওকে ছেড়ে দিবো ?
কিছুতেই নাহ , আমার বোনের নখের যোগ্য নয় ওহহ।

_ ভাই শান্ত হও । এভাবে রাগের মাথায় কাজ করা ঠিক না।

_ আমি কিচ্ছু বুঝতে চাই না। আমার সাথে শত্রুতা তার ঝাল আমার বোনের সাথে মিটিয়েছে। আমি তো ওকে ছাড়বো না।

_ ভাই শান্ত হও। এখন বের হলে বিপদ ঘটে যাবে। আগে রিমির অবস্থা বুঝতে হবে। মেয়েটার অবস্থা না বুঝে ডিসিশন নেওয়া একদম ই উচিত হবে না।

ফারহান খানিকটা টা শান্ত হলো। কাউচে ধপ করে বসে মাথার চুল খামচে ধরলো। আশ্চর্য আজ পাঁচ বছর পর এমন এক নোংরা খেলা খেললো অহিদ। ফারহানের চোখে ভেসে উঠলো ভারসিটির সেই দিন গুলোর কথা।
অহিদ আর ফারহান ক্লাসমেট। দুজনের মাঝে বন্ধুত্ব কম শত্রু তা বেশি। অহিদ সব সময় চাইতো ফারহান কে হারাতে। কিন্তু ফারহানের সম্মান কিংবা নাম দুটোই ছিলো বেশি।
ভারসিটির মেয়েরা নিজে এসে প্রপোজ করে যেত। ফারহানের সাথে ভারসিটি ইলেকশনে প্রতি বার হেরে যায় অহিদ।
অহিদ এবার ঠিক করেছে ফারহান কে হারাবেই। আর তাই বেছে নেয় অন্যায়ের পথ। নকল ভোট দিয়ে নিজের পাল্লা ভারী করে। কিন্তু সমস্যা হয়ে যায় ফাহিমের জন্য। ফাহিম সব সময় অত্যন্ত চতুর। প্রতি বার ই ভোটের কাউন্টারে সি সি টিভি লাগিয়ে রাখে । এবার ও লাগায় , কিন্তু সেটা জানতো না অহিদ। তাই ভোট কারচুপি করার সময় হাতে নাতে ধরা খায়। ফাহিম যখন খবর টা ফারহান কে জানায় ফারহান প্রচন্ড রেগে যায়।
পুরো ভারসিটির সামনে অপমান করে বেশ মেরে ও ছিলো।
ফারহান কে বাঁধা দেওয়ার জন্য কোনো টিচারের সাহস হয় নি।
তবে ওর বন্ধুরা ওকে থামিয়ে দেয়। লজ্জায় মাথা কাঁটা যায় অহিদের। তারপর থেকে ভারসিটি তে আসে নি আর। অবশ্য ফারহান দুবার অহিদ কে বলেছিলো ভারসিটি তে আবার জয়েন হতে। কিন্তু অহিদ বলেছে তার ভুলের জন্য সে অনুতপ্ত। এখন আর পড়া শোনা করতে চায় না।
বিজনেস করবে বলেই ঠিক করে। ফারহান বিষয় টাকে আর গুরুত্ব দেয় নি। কিন্তু অনুতাপের আগুনে পুরতে পুরতে অহিদ মানুষ হওয়ার বদলে অমানুষ হয়ে যাবে তা ভাবতে ও পারে নি ফারহান।
নিজের ছোট ভাই কে দিয়ে এতো নিকৃষ্টতম একটা কাজ করিয়েছে। তার উপর ফাহাদ দুই পশু কে পাঠিয়েছিলো রিমি কে রেপ করার জন্য।
ভাবতেই ফারহানের সব কিছু ধ্বংস করে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে।
দেয়ালে সজোড়ে লাথি মেরে উপরে চলে আসলো।
ফাহিম চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ সংবরনের চেষ্টা করলো।
নাহহ হচ্ছে না। ঐ দুই ভাই কে নিজ হাতে পিষে না ফেলা অব্দি শান্তি নেই ওর।
ফাহিম মনে মনে প্ল্যান কষে ফেললো। রিমির দিকে কালো হাত বাড়ানোর শাস্তি তো পেতেই হবে।

*

সারা রাত রিমি কে জড়িয়ে ছিলো ফারাবি। এক মুহুর্তের জন্য চোখ বুঁজে নি। ভাবতেই পারছে না ফাহাদ রিমি কে ধোঁকা দিলো। রিমির মুখের দিকে তাকাতেই বুক টা হু হু করে কেঁদে উঠছে। দরজায় খট খট আওয়াজ হতেই চোখ মুছে নিলো ফারাবি। রিমির কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে মলিন হাসলো।
দরজা খুলে ফারহানের বিধ্বস্ত মুখ দেখেই ফারাবির চিত্ত কেঁপে উঠলো। মনে হচ্ছে হৃদপিন্ডে কেউ ছুঁড়ি ঢুকিয়ে দিয়েছে। ফারাবির বিচলিত চোখ ফারহান কে অবলেকন করতে লাগলো।
কাঁপা হাতে ফারহানের বুকে স্পর্শ করলো।
_ আপনাকে এমন কেন লাগছে ? একি হাল করেছেন নিজের ?

ফারহান কোনো উত্তর দিলো না। পাথরের মতো দাড়িয়ে রইলো। ফারাবি বেডের দিকে এক পলক তাকিয়ে করিডোরে চলে আসলো।
ফারাবি ফারহানের মুখে হাত রেখে বলল
_ কি হয়েছে আপনার ? কিছু বলছেন না কেন ?

ফারহান এবার ও কোনো উত্তর দিলো না। হঠাৎ করেই ফারাবি কে বুকে জড়িয়ে ধরলো। ডুকরে কেঁদে উঠলো। ফারহানের এমন কান্ডে ফারাবি যেন হতবাক হয়ে পরলো। মাথার উপর ঢেউ আচরে পরছে। ফারাবি নিজে ও কেঁদে উঠলো। যে ছেলেটার প্রতি টা কথায় কঠোরতা স্পষ্ট। সেই ছেলেটাই আজ কাঁদছে ।
ফারহান নাক টেনে বলল
_ রিমির এই অবস্থার জন্য আজ আমি দায়ী। এই দু হাতে জড়িয়ে ঘুম পারাতাম ওকে। সেই বোনের সাথে এতো বড় অন্যায় ঘটলো শুধু মাত্র আমার জন্য। আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারছি না ফারাবি। কি করে দাঁড়াবো রিমির সামনে?
আমি এতো টা বাজে ভাই কেন হলাম বল তো ?

ফারহানের কথা বুঝতে পারছে না ফারাবি। তবে বিশাল কোনো ঝামেলা যে হয়েছে তা ভালোই বুঝতে পারছে। ফারাবি দু হাতে ফারহান কে জড়িয়ে ধরলো। ফারহান ও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। ফারহান ধীরে ধীরে সমস্ত টা বললো। ফারাবির দু চোখে অশ্রু বর্ষন নেমে গেল। সেদিন যদি ফাহিম না থাকতো তাহলে নিউজ চ্যানেলের হেডলাইন হতো রিমির নামে।
ফারাবির গা গুলিয়ে আসলো। রিমি কি করে নিবে এটা ?
ওর ভালোবাসার মানুষ লোক পাঠিয়েছিলো ওকে রেপ করার জন্য। ফারাবির শরীর কেঁপে উঠলো। হঠাৎ করেই একটা শব্দ হলো।
দুজনেই পেছন ঘুরে তাকালো। রুমের পর্দা টা নড়ে উঠলো।
ফারাবি দৌড়ে আসলো , তার আগেই রিমি দরজা লক করে দিলো।
ফারহান দরজা ধাক্কা তে লাগলো। দরজা ধাক্কানোর শব্দে নিচ থেকে ফাহিম দৌড়ে আসলো। ফারহান অঝোরে ধাক্কা দিয়েই যাচ্ছে। ফারহান দরজা ভাঙার চেষ্টা করলো কিন্তু দরজা টা লোহা কাঠের তৈরি।
ফাহিম নিজের চুল নিজেই খামচে ধরলো। ফারহান দ্রুত নিচে গেল ডুবলিকেট চাবি আনার জন্য।
ফারাবি দরজা ধাকাচ্ছে। রিমির কোনো শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না।
ফারহান ছুটে আসলো , কারন ডুবলিকেট চাবি টা রুমের মধ্যে ই রয়ে গেছে।
ফারহান একের পর এক বারি দিতে লাগলো।
কিন্তু রিমির কোনো সাড়া নেই।

ফাহিম এই পরিস্থিতি দেখে বাগানে চলে গেছে। মই দিয়ে দোতলার ব্যলকনি তে উঠে পরেছে। তবে ব্যলকনির ডোর ও লক করা। ফাহিম রাগে দরজায় ঘুষি মারলো। সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে গেল। ফাহিম অবাক চোখে তাকালো হয়তো দরজা ভেজানো ছিলো।
আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে দ্রুত রুমে ঢুকলো।
রিমি অলরেডি গলায় ফাঁস দেওয়ার ব্যবস্থা করে ফেলেছে।
ফাহিম গিয়ে দ্রুত রিমি কে টেনে নামালো। ওপাশ থেকে ফারহান আর ফারাবি চিৎকার করে ডাকছে।
ফাহিম দরজা খুলে দিতেই দুজনে হুরমুরিয়ে রুমে ঢুকলো।
ফারহানের চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে। ফ্যানে ফাঁস দেওয়ার ব্যবস্থা দেখে ফারহানের রাগ যেন আকাশ সমান হয়ে গেল।
রিমি কে সোফা থেকে দাড় করিয়ে সজোরে থাপ্পর মেরে দিলো।
রিমি ছিটকে গিয়ে বেডে আঘাত পেল। ফারাবি ছুটে গেল। রিমি চিৎকার করে কাঁদছে। ফারহানের রাগে শরীর রি রি করছে। এতো ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছে কি মরার জন্য নাকি ?
ফাহিম অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সব যেন ওর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। ফারহান রাগে গটগট করে বের হয়ে গেল।
ফাহিম ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে বলল
_ ভাবি ভাই কে সামলাও প্লিজ।

ফারাবি রিমির দিকে তাকালো। ফাহিম আশস্ত করে বলল
_ আমি দেখছি।

ফারাবি ছুটে গেল ফারহানের কাছে। রিমি হিচকি তুলে কাঁদছে। ফাহিমের চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো।
ফুলের মতো মিষ্টি মেয়েটার চোখে পানি একদম ই মানাচ্ছে না।
রিমি কে প্রায় চার পাঁচ বছর আগে থেকেই চিনে ওহহ।
তখন রিমি বাচ্চা একটা মেয়ে।ফাহিম কয়েক বার ওদের বাসাতে ও এসেছে। তবে রিমির সাথে কখনো কথা হয় নি।
আর তিন বছর আগে ওহ ওহ পড়শোনা নিয়ে বাহিরে চলে গিয়েছিলো।

তবে এক বছর আগে দেশে ফিরে রিমি কে দেখতে পায়। বান্ধবীদের সাথে হাসি ঠাট্টা তে মেতে উঠা হাস্য উজ্জল রিমি। কিশোরী রিমি কে দেখে ফাহিমের বুকে ঝড় বয়ে যায়।
কিন্তু মুহুর্তেই হারিয়ে ফেলে রিমি কে। অনেক খুঁজে ও পায় নি এক পলক দেখা প্রিয় সেই মুখ টি কে ।
সেদিন যখন রিমি কে নরপশু দের কাছে দেখে তখন এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে।
এক মূহুর্তের জন্য থমকে দাঁড়ায়। ভুলে যায় রিমি যে বিপদের মুখে। যখন মাথায় আসে তখনি রিমি কে উদ্ধার করে।
কিন্তু এক মুহূর্তে সব এলোমেলো হয়ে যাবে ভাবতে ও পারে নি ফাহিম।
ছল ছল করে উঠলো দু চোখ। প্রিয় মানুষের কষ্ট দেখার মতো যন্ত্রণা দুটি নেই।
#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_48

মুখ থুবড়ে পরে আছে অহিত আর ফাহাদ। প্রচন্ড মারে বোধহয় শরীরে হাড় ও ভেঙে গেছে। পুরো এলাকার সামনে দুজন কে বেঘোরে পিটিয়েছে ফাহিম আর ফারহান। দুজনের চোখ মুখ এতোটাই হিংস্র যে কেউ বাঁধা দেওয়ার সাহস পায় নি। পুরো এলাকায় ছেয়ে গেছে খবর টা। সবাই ভির জমিয়েছে। কেউ কেউ লুকিয়ে ছবি ও তুলছে। সোসাল মিডিয়া নামক জনপ্রিয় স্থানে নিজে দের নিকৃষ্ট রূপ প্রকাশ করার জন্য।
সত্য মিথ্যে যাচাই না করেই একটা ক্যাপশন দিয়ে পোস্ট করে দিবে। তারপর শুরু হয় লাইক কমেন্ট আর শেয়ার।
একে একে ছেয়ে যায় পুরো বিশ্ব। আমরা মানুষ রাই এই অমানুষ এর মতো কাজ গুলো করে যাচ্ছি।

রাস্তা দিয়ে পাগলের মতো দৌড়াচ্ছে রিমি। তার পেছনে বেশ খনিকটা দূরে ফারাবি ছুটছে। চোখে মুখে আতঙ্ক। মাঠের সামনে ভির জমতে দেখে রিমি আর ও বিচলিত হয়ে পরলো। ভির ঠেলে কোনো মতে ভেতরে প্রবেশ করলো।
ফাহাদের বুকে পা দিয়ে রেখেছে ফারহান। নিজের সর্বশক্তি তাতে কাজে লাগাচ্ছে। রিমি চিৎকার করে উঠলো। ছুটে গেল ফাহাদের দিকে। ফাহাদের মুখে রক্তের গাঢ় আবরন। শরীরে বিভিন্ন স্থানে কেঁটে গেছে। রিমি ঝাঁপিয়ে পরলো ফাহাদের বুকে। ফারহানের পা জড়িয়ে কান্না মিশ্রিত কন্ঠে চিৎকার করে বলল
_ ভাইয়া তুমি ওকে ছেড়ে দাও। ওহহ মরে যাবে। তুমি ওকে ছেড়ে দাও ভাইয়া।

ফারহান অবাক চোখে তাকালো। রিমি কে দেখে কয়েক সেকেন্ড নিস্তব্ধ হয়ে গেল। রিমির উপস্থিতি মাথায় খেলতে ই চোখ লাল হয়ে গেল। দু হাতে ফাহাদের বুক থেকে রিমি কি টেনে তুললো। রিমি আবার ফাহাদ কে আঁকড়ে ধরলো। ফারহানের রাগ পাহাড়ের চূড়াতে পৌছে গেছে। হাত দুটো শক্ত করে মুষ্টিবদ্ধ করলো। রিমি কে টেনে সজোরে থাপ্পর মেরে দিলো। ছিটকে পরলো রিমি। ফাহিম ততক্ষণে অহিত কে মারা বন্ধ করে দিয়েছে। ফাহিমের পায়ের কাছে রিমি পরে আছে।
রিমি ফাহিমের পা জড়িয়ে বলল
_ ভাইয়া কে থামান ওহহ মরে যাবে। ওকে আমি ভালোবাসি আমি ওর কষ্ট সহ্য করতে পারছি না।
দয়া করুন

রিমির কথাতে ফাহিমের বুকে চিনচিন ব্যথা শুরু হয়ে গেল। বুকের ভেতর পানির বড্ড অভাব বোধ হলো। কথা গুলো গলায় এসে আটকে গেল। হাত দুটো কাঁপছে। রিমি এখনো ফাহাদ কে ভালোবাসে ভাবতেই ফাহিমের বুক টা খা খা করে উঠছে।
রিমি কে এক হাতে উঠিয়ে চোখে চোখ রাখলো। রিমির দৃষ্টি বিধ্বস্ত। বার বার ফাহাদ কে দেখছে। ফাহিম কিছু বলতে পারলো না। শুধু মনের ভেতর একটাই শব্দ বেজে চলছে ভাইয়া কে আটকান। ফাহিমের নিউরন গুলো বলছে ফারহান কে আটকাতে হবে । না হলে রিমি শেষ হয়ে যাবে। ফাহিম ছুটে গেল ফারহানের কাছে। ফাহাদের অবস্থা খারাপ। ফাহিম দু হাতে ফারহান কে সরালো। ফারহানের সাথে কিছুতেই যেন পেরে উঠছে না। সাহায্যের জন্য আশে পাশে তাকালো। চোখ পরলো ভির ঠেলে আসা ফারাবির দিকে। ফাহিম চিৎকার করে ফারাবি কে ডাকলো। ফারাবি ছুটে আসলো। ফাহিমের দৃষ্টি তে অসহায়ত্ব। ফারাবি দু হাতে ফারহান কে জড়িয়ে ধরলো। ফারহানের রাগ এতো টাই বেশি যে পাশে কে আছে তাতে ওর কোনো খেয়াল নেই। ফারাবি না পেরে ফারহানের পা জড়িয়ে ধরলো। সঙ্গে সঙ্গে ফারহান নরম হয়ে গেল।
_ দোহাই লাগে আপনার। শান্ত হোন , এভাবে কোনো কিছুই হবে না। উল্টো পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে যাবে।

ফারহানের নিস্তব্ধতা যেন মুহুর্তেই ভুতুড়ে স্থানে পরিনত করলো। অশরীরী মতো কান্নার আওয়াজ গুলো ই ভেসে আসছে। ফারহান নিজের মাথা চেপে ধরে আহহ বলে চিৎকার করে উঠলো।
নিস্তেজ হয়ে পরে থাকা ফাহাদের পিঠে নিজের শেষ লাথি টা মেরে হনহনিয়ে চলে গেল। ফারাবি ছুটে গেল ফারহানের পিছু পিছু। ফাহিমের চোখ গেল মাটিতে পাগলের মতো বসে থাকা রিমির দিকে। ফাহিমের হৃদয়ে রক্ত ক্ষরন হলো। ধীর পায়ে রিমির দিকে এগিয়ে গেল। রিমি ছলছল নয়নে ফাহাদ কে দেখছে । ফাহিম রিমির কাছে পৌছানোর আগেই রিমি দৌড়ে আসলো ফাহাদের দিকে।
ফাহাদের বুকে হাত রেখে সজোরে কেঁদে উঠলো। ফাহিমের দু চোখ ভরে উঠলো। ফাহিম এমবুলেন্স এ ফোন করে দিলো। পাশেই হসপিটাল মুহুর্তেই এমবুলেন্স এসে হাজির। রিমির চোখে যেন পাহাড়ের ঢল নেমেছে। ফাহিম একটু আগাতে গিয়ে ও পিছিয়ে গেল। আবেগ ভরা দৃষ্টি তে চেয়ে রইলো।
ধীরে ধীরে সবাই চলে গেল। পরে রইলো রিমি আর ফাহিম। আকাশে বিদুৎ চমকাচ্ছে। গুমোট পরিবেশ বলছে ঝড় হবে। ফাহিম এক পা করে এগিয়ে আসলো।
রিমির পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসলো। ধীর কন্ঠে বলল
_ রিমি

রিমি তাকালো না। কেমন যেন হয়ে আছে। মানসিক রোগীর মতো দেখাচ্ছে। ফাহিমের দিকে বেশ কিছুক্ষণ পর তাকালো। ফাহিমের দৃষ্টি বলে দিচ্ছে সে ভালো নেই। কিন্তু কেন ভালো নেই ? রিমির ভাবনা আর অগ্রসর হলো না। ফাহিমের দিকে তাকিয়েই মাটিতে লুটিয়ে পরে। ফাহিম চিৎকার করে রিমি কে বুকে জড়িয়ে নিলো।
ততক্ষণে রিমি জ্ঞান শূন্য।

*

নদীর ধারে দাঁড়িয়ে আছে ফারহান। তার ই পেছনে ফারাবি দাঁড়িয়ে আছে।
ফারহান একটু নড়ে হাত গুঁজে দাড়ালো। ফারাবি ও একি স্টাইলে দাড়িয়ে আছে।
কেঁটে গেছে অনেক টা সময়। পড়ন্ত বিকেলের রেশ কেঁটে গেছে বেশ অনেকক্ষণ । ধূসর আকাশে লাল লাল আভা ছেয়ে গেছে। পাখির কিচির মিচির বলছে এই বুঝি সন্ধ্যা হলো।
ফারহানের অবয়ব বলছে ফারহান স্থির হয়ে কিছু ভাবছে। ফারাবির অস্বস্তি হচ্ছে। ফারহানের সাথে কথা বলতে কেমন আড়ষ্টতা বাঁধা দিচ্ছে। কেন এমন হচ্ছে ?
সন্ধ্যার আজান পড়তেই ফারাবি উড়না টেনে ঘোমটা দিয়ে রইলো। আজান শেষ হতেই ফারহান ঘুরে তাকালো। চোখ দুটো মৃত প্রায়। ফারাবি মাথা নিচু করে রইলো। ফারহান শুকনো ঢোক গিলছে। এক বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে আজ। তবে কেন যেন ভয় হচ্ছে।
ফারহানের ছায়া একটু একটু করে আগাতেই ফারাবি চমকে তাকালো। ফারহান ধীর হস্তে ফারাবির দু গালে হাত রাখলো। ঠান্ডা হাতের নরম স্পর্শে ফারাবি চোখ বন্ধ করে নিলো। এক হাতে ফারহানের বুকে হাত রাখলো। ফারাবি দৃষ্টি মেলে তাকালো। ফারহানের চোখ যেন কিছু বলছে। তবে মুখে চিন্তার ছাপ।
_ কিছু বলবেন ?

_ হ্যাঁ ।

ফারাবি ফারহানের দু হাত আঁকড়ে ধরলো। উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে বলল
_ বলুন তাহলে । এমন স্তব্ধ হয়ে আছেন কেন?

_ একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি।

_ কি সিদ্ধান্ত ?

_ আমি চাইছিলাম রিমি কে ফাহিমের হাতে তুলে দিতে।

ফারাবি এক পা পিছিয়ে গেল। ফারহান ফোঁস করে দম ফেললো। পেছন ফিরে কন্ঠে কাঠিন্য এনে বলল
_ আমার সিদ্ধান্ত আমি নিয়ে ফেলেছি। ফাহিম রাজি থাকলে আমি সবাই কে খবর পাঠাবো।
আর এতোক্ষনে বাসায় ও সব জেনে গেছে। তাই লুকোচুরি করে কোনো লাভ নেই।

_ কিন্তু রিমি

_ ওহ ভুল মানুষ কে ভালোবেসেছে । যদি ছেলেটা রিমি কে ভালো না ও বাসতো তাহলে ও আমি ওকে রিমির পায়ের কাছে এনে ফেলতাম।
কিন্তু ছেলেটা বাগদত্তা । কিছু দিনের মাঝে ই ওদের বিয়ে। দোষটা ছিল ফাহাদের। মেয়েটার দোষ কোথায় ?
আমি ফাহাদ কে ছিনিয়ে নিতে পারি না। তাহলে ভালোবাসা কে অপমান করা হবে। হ্যাঁ অন্যায় করেছে আর তার শাস্তি আমি দিয়েছি আর ও শাস্তি প্রশাসন দিবে।
কিন্তু এ অন্যায় আমি করতে পারবো না। আর রিমি কে তার ভাগ্য মেনে নিতে হবে। সঠিক মানুষ কে ভালোবাসে নি ওহ , তাই ওর শাস্তি এটাই হবে।

ফারাবি ছলছল নয়নে ফারহানের দিকে তাকিয়ে রইলো। ফারহান চোখের কোনে জমে থাকা অশ্রু কনা মুছে নিয়ে বলল
_ তুই মানিস তো আমি রিমির ভালো চাই ?

ফারাবি মাথা ঝাঁকালো। ফারহান মলিন হেসে বলল
_ তাহলে ভরসা রাখ। আমি জানি ফাহিম ই পারবে আমার বোন কে ভালো রাখতে।

ফারাবি আর কিছু বললো না। সৃষ্টি কর্তার কাছে রিমির যেন ভালো হয় তাই প্রার্থনা করতে লাগলো।

*

পরিস্থিতি ঘোলাটে। আজ আরিফের হলুদ সন্ধ্যা। বিয়ের আনন্দ যেন কেউ ই উপভোগ করতে পারছে না। ফাহিম এক কথাতেই রাজি হয়ে গেছে। ফাহিমের বাবা মায়ের ও কোনো সমস্যা নেই। রিমি কোনো প্রতিক্রিয়া করে নি। প্রথমে নাকোচ করলে ও যখন শুনেছে ফাহাদ বাগদত্তা তখন নিশ্চুপ হয়ে গেছে। কি বলবে আর ?
কোনো কিছুই যে বলার নেই। ফারাবি জোড় করে রিমি কে সাজিয়ে দিয়েছে। হলুদ শাড়িতে রিমি কে অসম্ভব সুন্দর লাগছে । অভাব রয়েছে শুধু মুখের হাসি টা। ফারাবি মৃদু হেসে চলে গেল। দরজার কাছে ফাহিম কে দেখতে পেয়ে আলতো হাসলো। ফারাবি স্থান ত্যাগ করতেই ফাহিম রুমে ঢুকলো। পাথরের মতো বসে আছে। ফাহিম ঠোঁটের কোনে মৃদু হাই ফুটিয়ে নিলো । বেডের পাশে গিয়ে হালকা করে কাশলো। কারো উপস্থিতি বুঝে রিমি জড়োসড়ো হয়ে বসলো।
ফাহিম ধীরে রিমির পাশে বসলো। রিমির অনুমতি চাইতে গিয়ে ও চাইলো না।
আলতো হাতে রিমির হাত দুটো স্পর্শ করলো । কিঞ্চিত কেঁপে উঠলো রিমি। ফাহিম অধর কোনে হাসি ফুটিয়ে রিমির হাতে ঠোঁট ছোঁয়ালো। ছলছল নয়নে রিমি তাকালো। ফাহাদের ভালোবাসা গুলো ও ছিল অপরূপ। কখনো বাজে স্পর্শ করে নি। অথচ সেই লোকটাই নাকি ওর সর্বনাশ করার জন্য মানুষ পাঠিয়েছিলো। দু চোখ ভরে উঠলো। ফাহিম হালকা হাতে রিমির চোখের পানি মুছে দিলো।
_ যতটা ভালোবাসা তুমি হারিয়েছো কথা দিচ্ছি তা দ্বিগুন ফিরিয়ে দিবো।
অভিযোগের সুযোগ দিবো না। শুধু হাত টা ছেড়ো না।

রিমি কোনো উত্তর করলো না। সে তার ভাগ্য কেই মেনে নিয়েছে। ইচ্ছে অনিচ্ছার কোনো মূল্য নেই।
ফাহিমের এক আকাশ সমান ভালোবাসা রিমির ভেঙে যাওয়া হৃদয় কে স্পর্শ করছে না।
ভালোবাসার থেকে ও বুঝি হৃদয়ের ভাঙচুর বেশি ক্ষত সৃষ্টি করে ?

ফারাবির কোলে মাথা রেখে আছে ফারহান। কিছু ক্ষণ আগেই আরিফের হলুদ শেষ হয়েছে। এক প্রকার তাড়া হুড়ো করেই শেষ হয়েছে। কারোর মন ই ঠিক নেই। এরি মাঝে ফারাবির সাথে তার মা বাবার দেখা হয়েছে। ফারাবি ছলছল নয়নে তাকিয়ে চলে এসেছে।
এক বুক কষ্ট গুলো কান্না হয়ে নামছিলো। ফারাবি কে পিছু ডেকেছিল ফারাবি সাড়া দেয় নি। ছুটে চলে এসেছে। সে পিছু হটবে না আর। অভিমান করে থাকবে। তারাই কেন একা অভিমান করবে ?
ওহ কি পারে না অভিমান করতে ?
এবার বুঝবে কতোটা কষ্ট হয়েছিলো ওর। ফারাবির ঠোঁটের কোনে স্মিত হাসি। সব কিছু ঠিক হবার পালা। সকল আঁধার কেঁটে যাচ্ছে।
ফারহানের সাথে ফরহাদ চৌধুরীর মন মালিন্য কেঁটে গেছে। দুজনের মাঝে কোনো আড়ষ্টতা নেই । যেন কিছুই হয় নি। ফারহানের সিদ্ধান্তে সকলে খুশি হয়েছে। রিমির জন্য উপযুক্ত পাত্র ফাহিম ই। ফাহিম কে মোটামুটি সবাই চিনে। ওর ফ্যামিলি ব্রেক গ্রাউন ওহ ভালো। অহিত আর ফাহাদ কে পুলিশে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ফারহান আর ফাহিমের নামে দুটো মামলা হয়েছে। ফারহান সে দিকে পাত্তা দেয় নি।
এই সব মামলার উদ্দেশ্যে শুধু টাকা। টাকা দিয়ে দিলেই সব শেষ। মানুষ আর পশুর মাঝে কোনো পার্থক্য ই নেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here