স্মৃতিতে তোমার বন্দনা পর্ব ২৫

#স্মৃতিতে_তোমার_বন্দনা
#পর্ব_২৫
#Saji_Afroz
.
.
তিনটা দিন কেটে গেলো । এই তিনদিনে মুশফিকের নামটি নিজের মন থেকে যেনো এক সেকেন্ডের জন্যও সরাতে পারেনি তোহা । কি এমন আছে ছেলেটার মাঝে? যে কারণে সে এতোটা মগ্ন হয়ে গেলো তার মাঝে! তবে কি তোহাও প্রেমে পড়েছে?
দাঁড়িয়ে পড়লো সে । চোখ বন্ধ করে মাথাটা ঝাঁকিয়ে নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলো-
প্রেমে পড়েছি?
.
অন্তর থেকে যেনো উত্তর শুনতে পাচ্ছে সে! হ্যাঁ, প্রেমে পড়েছে সে । মুশফিকের প্রেমে পড়েছে । মুশফিকের সাথে বাকিটা জীবন কাটাতে চায় ।
কিন্তু এই কথাটি মুশফিক কে জানাতে বড্ড লজ্জা করছে তার । এর আগে তো এমন অনুভূতি কখনো হয়নি তোহার!
ফোন হাতে নিয়ে ডায়েল করলো নীলার নাম্বারে সে—
হ্যালো তোহা, এই সময়ে ফোন?
-দিতে পারিনা?
-তুমিতো সচরাচর ফোন দাওনা, তাই বললাম ।
-আমি প্রেমে পড়েছি।
-সেটা আমি আগে থেকেই জানতাম । তা জানিয়েছো পরশকে?
-তুমি ভুল জানতে । পরশের নয় ।
-তবে?
-মুশফিকের ।
.
কাথা গায়ে বিছানায় শুয়ে ছিলো নীলা । এক লাফে শোয়া থেকে উঠে বললো-
সিরিয়াসলি?
-হু ।
-আমার শুনে যে কি খুশি লাগছে না! কি করে বলবো তোমায়… ওয়েট ওয়েট, ভাইয়াকে জানিয়েছো?
-উহু না! তোমাকে প্রথমে জানালাম ।
-এখনো জানাওনি? ওতো শুনে খুশি হয়ে যাবে ।
-আমার লজ্জা করছে ।
-আমি জানাবো?
-জানাবে?
-যদি তুমি চাও ।
-ভালো হয় ।
-আগে বলো তোমাদের বিয়েতে আমায় লেহেঙ্গা গিফট করবে?
.
হেসে ফেললো তোহা । নীলা বললো-
হাসলে হবেনা । বলো বলো?
-অবশ্যই করবো ।
-ওয়েট করো । ভাইয়াকে জানাচ্ছি আমি ।
.
ফোন রেখে লম্বা একটা নিশ্বাস নিলো তোহা । পরশ তার জীবনে একজন ভালো বন্ধু হিসেবেই থাকুক না, মুশফিকের ভালোবাসায় নিজেকে রাঙাতে চায় সে ।
.
.
ছোঁয়া খেয়াল করছে, ইদানীং পরশ তার সাথে কথা কম বলছে । প্রয়োজন ছাড়া কোনো কথায় সে বলেনা । নিজের প্রিয় ব্যক্তিদের আসনে সে পরশকে জায়গা দিয়েছিলো । তার হঠাৎ এমন রূপ দেখছে কেনো!
সবেমাত্র হাসপাতাল থেকে আসলো পরশ । ছোঁয়াকে দেখে বললো-
কি ব্যাপার? তুমি এখনো এখানে?
-আমি থাকতে পারিনা রাত ১১টা অবধি?
-কখনো থাকোনা, তাই বললাম ।
-আন্টির মাথা ব্যথা করছিলো । মাথাটা টিপে দিচ্ছিলাম এতোক্ষণভ। আর ভাবলাম আপনি আসবেন, খাবার গরম করতে হবে….
-আমি করে নিবো এসব । তোমার করতে হবেনা । তোমাকে জাস্ট মায়ের দেখাশোনা করার জন্য রাখা হয়েছে ।
-সেই মা বলেছে তার ছেলের খাবার গরম করে দিতে ।
.
কথা বাড়ালোনা পরশ । ফ্রেশ হয়ে আসলো সে । ততক্ষণে খাবার গরম করে টেবিলে সাজিয়েও ফেলেছে ছোঁয়া । পরশ বললো-
তুমি খেয়েছো?
-হ্যাঁ ।
.
পরশ খাচ্ছে । তার একটু দূরে বসে আছে ছোঁয়া । এমন একটা মুহূর্ত সে কামনা করলেও, অন্যের হবু বউকে নিয়ে সে এসব ভাবতে পারেনা । এটা অন্যায়!
তবে ছোঁয়াকে একা পেয়ে একটা প্রশ্ন করা থেকে নিজেকে আটকাতে পারেনি সে ।
-আচ্ছা ছোঁয়া? নিজের হবু বরকে ভাইয়া ডাকো কেনো?
.
প্রশ্নটি শুনে চমকে গেলো ছোঁয়া । তার যতোদূর মনেপড়ে, এসব বিষয় নিয়ে কখনো সে পরশের সাথে কথা বলেনি । তবে সে কিভাবে জানলো আর এমন একটা প্রশ্নই বা কেনো করলো!
-কি হলো?
-ছোট থেকে ভাইয়া ডাকতাম । হুট করে বিয়েটা ঠিক হলো তাই অভ্যেস যাইনি ।
.
ছোঁয়ার চেহারার দিকে ভালো করে লক্ষ্য করে পরশ বললো-
তুমি এই বিয়েতে রাজি না?
.
খানিকক্ষণ চুপ থেকে ছোঁয়া বললো-
কেনো নয়! রাজি আমি । তবে আপনি কিভাবে জানলেন আমার বিয়ের কথা?
-তুমি না বললে কি জানবোনা? যদিও তুমি বলোনি, তাও জানি আমি ।
-আপনিও কিন্তু আপনার আর তোহা আপুর কথা বলেননি আমায় ।
.
পরশ মৃদু হাসলো । ছোঁয়া বললো-
আমরা এতোটা ফ্রি হয়নি যে এসব নিয়ে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি । আবার এটাও ঠিক, আমাদের বিয়ে নিয়ে একে অপরের কিছু যায় আসেনা ।
.
পরশ কোনো জবাব দিলোনা । ছোঁয়া উঠে বললো-
দরজা লাগিয়ে দিয়েন । আমি আসি ।
.
গলায় খাবার যেনো আঁটকে যাচ্ছে পরশের । আর খেলোনা সে । ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে মৃদুস্বরে বললো-
আমার অনেক কিছু আসে যায় । সেটা বোঝার ক্ষমতা তোমার নেই ছোঁয়া ।
.
.
সারারাত আর ঘুম হলোনা পরশের । সকাল সকাল বাগানে এসে হাঁটাহাঁটি করছে সে । এমন সময় দেখা পেলো রুপালির । রুপালি এসে সালাম জানিয়ে বললো-
ভালো আছেন ভাইয়া?
-আছি । তুমি?
-ভালোই ।
-এতো সকালে?
-দশটা থেকে ছোঁয়ার ডিউটি শুরু । তাই চলে এলাম এখন থেকে আড্ডা দিতে ।
-ওর কোনো ধরাবাঁধা ডিউটি নেই ।
-ও কেমন তো জানেনই । যে কাজটা করবে, মন দিয়ে টাইমলি করবে ।
.
রুপালি চলে যেতে চায়লে পরশ বললো-
তুমি বলেছিলে ছোঁয়ার কোনো বফ নেই । ওর যে হবু বর আছে এটাতো বলোনি?
-আপনি আমায় বফ এর কথা আস্ক করেছিলেন ।
-আমি জানতে চেয়েছিলাম এই কাজের জন্য যদি বফ এর সাথে দেখা সাক্ষাত করতে কোনো সমস্যা হয় কিনা ।
-হ্যাঁ । ওর বফ নেই কোনো সমস্যা কেনো হবে! আর হবু বর? উনার সাথে ছোঁয়া বাইরে কোথাও কোনোদিন যায়নি ৷ দুচোখে সহ্য করতে পারেনা ওই রাফসানরে ছোঁয়া । আর…
-কি বললে? ছোঁয়া পছন্দ করেনা রাফসানকে?
.
এই যা! কি বলে ফেলেছে রুপালি! বাইরের একটা ছেলেকে এতোকিছু বলা উচিত নয় । তাছাড়া ছোঁয়া জানতে পারলে রেগে যাবে ।
রুপালি মুখে হাসি এনে বললো-
মূল কথা হলো আপনি বফ এর কথা আস্ক করেছেন আমি ওটার জবাব দিয়েছিলাম । আসি এখন ।
.
সকাল সকাল একটা ভালো খবর পাবে ভাবতে পারেনি পরশ । ছোঁয়া রাফসানকে পছন্দ করেনা! তার মানে এই বিয়েতে রাজি না সে । এটাই যে পরশের সুযোগ । এই সুযোগটা তার কাজে লাগাতে হবে । ছোঁয়া যেহেতু রাফসানকে পছন্দই করেনা বিয়েটা এতো সহজে হতে দিতে পারেনা সে । তবে তার দুটো কথা জানতে হবে । এক,, রুপালি যা বললো তা কতোটুকু সত্য? দুই,, কেনো ছোঁয়ার অপছন্দ রাফসান??
কিন্তু এসবের উত্তর পেতে কে সাহায্য করবে তাকে?
.
.
পরশের আরেকটি গুণ রয়েছে । সে ভালো ছবি আঁকতে জানে । তবে মানুষের ছবি খুব কমই আঁকে সে । আজ খুব ইচ্ছে হচ্ছে তার ছোঁয়ার ছবি আঁকতে ।
রুমে এসে ডায়েরী হাতে নিয়ে বসে পড়লো সে । কলম দিয়েই এঁকে ফেললো নিজের মতো করে ছোঁয়ার ছবি । ছবিটির পাশে লিখলো–
ভালোবাসি ছোঁয়া তোমায়…
.
পরশের ফোন বেজে উঠতেই সে রিসিভ করলো । পেশেন্টের ফোন এসেছে । কথা বলতে বলতে বারান্দায় চলে গেলো সে । কথা শেষে রুমে এসে দেখলো তার বাবার হাতে ডায়েরিটি । পাশে তার মাও দাঁড়িয়ে আছেন । দুজনে দুজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে পরশের দিকে তাকালেন ।
সাফিনা আহম্মেদ বললেন-
কিছুদিন পর বিয়ে তোহার সাথে । এখানে ছোঁয়া কেনো?
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here