হবে কি আমার পর্ব -২৫

#হবে_কি_আমার (২)
#writer_Ruhi_mondal
#পর্ব_25

প্রকৃতিতে ধীরে ধীরে শীতের আগমন ঘটছে, মাঝেমধ্যে হঠাৎ বৃষ্টির তো হঠাৎ রোদ্দুরের দেখা মিলছে। সকালটা আজ রোদ্দুরে ঝলমলে সাথে মৃদু বাতাস বয়ে আনছে জানলার ফাঁক থেকে রুমের মধ্যে প্রবেশ করে শুরু হলো, অরিন্দম অনু দুজনেই ঘুমিয়ে বিভোর ছিল। রাত জেগেই কাটিয়ে তারা, অনু যন্ত্রনায় ঘুমাতে পারেনি আর অরিন্দম তাকে শান্ত করতেই রাত বেরিয়ে ভোর হয়ে গিয়েছে,ভোর রাতে অনু ঘুমিয়েছে,অনুর ঘুমের সাথে সাথেই অরিন্দম ও ঘুমিয়ে গিয়েছে। বাতাসের কারণে অনুর চুল গিয়ে অরিন্দম মুখে উড়ে পড়ে,তার ফলে মুখের মধ্যে শিরশির ভাব অনুভব হতে অরিন্দম চোখ মেলে তাকাল। তাকাতেই দেখলো অনু স্নিগ্ধ মুখটা,অনু তার দিকে কাত হয়ে শুয়ে আছে,তা দেখেই মনে ভালো লাগা কাজ করলো অরিন্দমের, অরিন্দম মাথা তুলে অনু পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখল ডান পা যেমনভাবে বালিশের উপর রেখে ছিল তেমন ভাবেই আছে, দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেলো অরিন্দমের কারন অনু ঘুমালে এক জায়গায় ঠিক থাকেনা সারা বিছানায় তার দখল থাকে, অরিন্দমের গায়ে হাত পা তুলে দেওয়া,বা কখনো দেওয়ালে ভুলবশত লাথি মেরে পায়ের ব্যথায় ঘুমের ঘোরে বাচ্চাদের মত কেঁদে ওঠে অরিন্দম তখন মাঝরাতে কাছে টেনে বাচ্চাদের মত করে চুপ করায়,আর সে ও কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে যায়, কিন্তু আজ এমন কষ্ট করে তাকে চুপচাপ শুয়ে থাকতে দেখে অরিন্দমের কষ্ট হচ্ছে। সে অনুর মুখ থেকে চুল সরিয়ে দিয়ে কপালে দুগালে পর পর চুমু দিল। অনু একটু নড়াচড়া করতে অরিন্দম হালকা হাসে অতঃপর সে অনুর মাথার নিচ থেকে নিজের ডান হাতটা সাবধানে সরিয়ে আনে। অতঃপর তাকে ভালো করে বালিশের শুইয়ে দিয়ে খাট থেকে নেমে বাথরুমের দিকে প্রস্থান করলো,ফ্রেশ হয়ে এসে দেখল অনু শুয়ে শুয়ে ঘাড় কাত করে নিজের পা দেখচ্ছে তা দেখে অরিন্দম অনুর পাশে এসে বসে বললো, __’পায়ের ব্যথা একটু কমছে বউ?’

___”না একটু ও কমেনি এবার কি হবে? কিন্তু ফোলা-তো কমে গিয়েছে! আমি মনে হয় আর হাঁটতে পারবো না ওয়াশরুমে ও যেতে পারবো না!”অনু কথাগুলো গুরু গম্ভীর হয়ে বলল, তা শুনে অরিন্দম হালকা হেসে বলল,
__’ফোলা কমে গিয়েছে মানে একটু পর থেকে ব্যাথাও কমে যাবে, চিন্তা করো না। আচ্ছা বল তুমি ওয়াশরুমে যাবে?’

অনু মাথা নেড়ে সম্মতি জানায় অরিন্দম তাকে পাজা কোলে তুলে নিয়ে বলল,
__’ তুমি হাটতে পারবে না তো কি হয়েছে ,আমি আছি না, সো নো টেনশন টিয়াপাখি! ‘
অনু খুশি হয়ে গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
___’তাহলে তো নো ঝামেলা বরবাবু!’

অরিন্দম তাকে ওয়াশরুমে শুকনো জায়গায় দাড় করিয়ে দিয়ে ডান পায়ের নিচে টুল রেখে দিয়ে বলল,
__’ফ্রেশ হয়ে নাও আমি বাইরে দাঁড়িয়ে আছি? টুল থেকে পা নিচে নামাবে না। হয়ে গেলে ডাকবে। আমি আসব!’

অনু ফ্রেশ হয়ে অরিন্দম কে ডাকতে সে আবার তাকে রুমে এনে খাটে বসিয়ে দেয়, অতঃপর সে অনুর চোখেমুখে এখনও জল লেগে আছে দেখে অরিন্দম আলমারি থেকে টাওয়াল বের করে নিজ হাতে চোখ মুখ মুছে দিতে দিতে বলল,
__”ব্রেকফাস্ট করে নিয়ে মেডিসিন খেয়ে নেবে। দুপুরের মধ্যেই ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে দেখবে!”

কাকিয়া রুমের বাইরে থেকে সাড়া দিতে অনু বলল,
__ ‘কাকিয়া তাড়াতাড়ি ভিতরে এসো দেখো আমার পায়ের ব্যথা অনেকটা কমে গিয়েছে!’

চন্দ্রানী দেবী রুমে এসে অনুর পাশে দাঁড়িয়ে বললেন,
__” আমি এটাই চিন্তা করছিলাম যাক তুমি যখন বলছ কমেছে এবার শান্তি লাগছে তবুও এখন সাবধানে থাকো পা বেশি নাড়াচাড়া করো না আমি রুমে খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি খেয়ে ওষুধ খেয়ে নাও।”

অরিন্দম বলল,
__’কাকাই আসেনি?’
__’উনি দুপুরে আসবে তুই আয় এসে খেয়ে-নে!’

__’কাকিয়া তুমি খাবার রেডি করো,আমি ওকে খাইয়ে দিয়েই খাব।”

অরিন্দম অনুকে খাইয়ে দিয়ে ওষুধ দিয়ে পাশে বসতে যাবে তার আগেই বারান্দা থেকে তার নাম ধরে কেউ একনাগাড়ে বলে চলেছে
__’আরে অরিন্দম কোথায় তুই তাড়াতাড়ি বাইরে আয়,কত দিন পর তোর সাথে দেখা হবে!’
অরিন্দম বুঝতে পারল তার ছোটবেলার বন্ধুরা এসেছে, খুশি হয়ে অনুকে বলল,
__’ তুমি একটু ঘুমিয়ে নাও আমি একটু ওদের সাথে দেখা করে আসছিঅনেকদিন পর ওদের সাথে আমার দেখা হবে ছোটবেলার ফ্রেন্ড ওরা!’
__’আমাকে কাকিয়ার কাছে দিয়ে আসুন! না হয় আমার কাছে কাকিয়াকে পাঠিয়ে দিন, আমি একা একা কি করবো?’

__ওকে তুমি বস আমি ডেকে দিচ্ছি। অরিন্দম বাইরে আসতেই চারটে বন্ধু মিলে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে অরিন্দম নিজেকে সামলে বলল, __’আরে আরে কি করছিস তোরা এখনো সেই বাঁদর বাহিনী রয়ে গেলি তোরা।’
আবার তাদের মধ্যে একটা ছেলে বলল,
__ বাঁদর থেকে হনুমান বাহিনী সবই হয়ে গিয়েছি শুধু তোকে খুব মিস করি।

__আমি ও তোদের খুব মিস করি।

__’তুই নাকি বিয়ে করেছিস কোথায় আমাদের বৌদি মণিকে দেখা করাবি না?’

অরিন্দম রুমে দিকে তাকালো,অনু হয়তো শুয়ে রেস্ট নিচ্ছে, তাকে বিরক্ত করা ঠিক হবে না, তাই সে বলল,
___’ও পায়ে ব্যাথা পেয়েছে রেস্ট নিচ্ছে পরে দেখা করবি!’

__ঠিক আছে এখন তুই চল তনয় কে ডেকে নিয়ে আমরা সবাই জমিয়ে আড্ডা দেবো চল চল..
অরিন্দম কিছু বলতে যাবে তার আগে তার বন্ধুরা তাকে টেনে নিয়ে যেতে লাগল!

___
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গিয়েছে চন্দ্রানী দেবী অনুকে স্নান করতে সাহায্য করে ছিলেন, দুপুরে অরিন্দমের কাকা হেমন্ত বাবু আসতে অনুর সাথে দেখা করে কথা বলেছেন, তারপর তিনজন একত্রে লাঞ্চ করেছে। অনু অরিন্দমের অপেক্ষা করে চলছিল কিছুতেই একা খেতে চাইনি আর তাছাড়া এখানে সে নতুন এখন তার অরিন্দম কে পাশে চাই, কিন্তু সে ফোন নিয়ে যাইনি, কিছু প্রতিবেশীরা ও এসেছিল নতুন বৌ দেখতে তখন ও অনু অরিন্দম কে খুঁজে চলেছিল। মেয়েটা মিশুকে সবার সাথেই কথা বলেছে কিন্তু অচেনা অজানা জায়গায় চেনা মানুষটাকেই খুঁজে চলছিল সে। কিন্তু অরিন্দমের দেখা সকালের পর থেকে আর পাইনি অনু, খুব করে কান্না ও পাচ্ছে তার। কাকিয়া অনেক বুঝিয়ে তাকে দুপুরে খাইয়েছেন,অনু খেতে খেতেই কেঁদে দিয়েছিল চন্দ্রানী দেবী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিলেন তাকে কাঁদতে দেখে পরে ভালো করে বুঝিয়ে চুপ করিয়েছেন এই নিয়ে তিনি ও চিন্তায় আছেন, একে অরিন্দম ফেরেনি আর অনু এতটা আদুরে তিনি ভাবেননি। ছেলেটা কি শেষে অবুঝ মেয়েকে বিয়ে করেছে কিন্তু মেয়েটার প্রতি উনার খুব মায়া জন্মেছে কিন্তু হঠাৎ হঠাৎ কেঁদে দেওয়া তিনি ভড়কে যাচ্ছেন ঠিক যেমন এখন রাত দশটা বাজতেই অনুর কান্না বেগ পেয়েছে, অরিন্দম কে সমানে খুঁজে চলেছে তার চিন্তা যে অহেতুক তা কিন্তু না, সকাল থেকে রাত হয়ে গেল মানুষটার খবর নেই চিন্তা করাটাও স্বাভাবিক কিন্তু তা বলে ঘরের সমস্ত কিছু ভেঙ্গে লন্ডভন্ড করে দেবে তা কি করে হয়? অনু ব্যাথা পা নিয়েই রুমের মধ্যে জামাকাপড় ছড়িয়ে ফোন ভেঙ্গে যাচ্ছে-তাই করে দিয়েছে! চন্দ্রানী দেবী তাকে বুঝিয়ে ও পাচ্ছেন না তিনি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছেন আর অনু কেঁদে কেঁদে অবস্থা বেহাল করে দিয়েছে অরিন্দম কেন আসছে না তার কাছে! চন্দ্রানী দেবী তাকে শান্ত করার জন্য বললেন,
__’বৌমা তুমি শান্ত হয়ে বস, অরি এক্ষুনি চলে আসবে! অনেকদিন পর বন্ধুদের সাথে দেখা হয়েছে, তাই হয়তো সবাই মিলে আড্ডা দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।’

অনু চিল্লিয়ে বলল,
_”সারাদিন ধরে ব্যস্ত হয়ে গিয়েছে, বাড়িতে যে অসুস্থ আমি আছি সেটা খেয়াল নেই ওনার?”

চন্দ্রানী দেবী কিছু বলতে যাবেন তার আগে অরিন্দম বিধস্ত অবস্থায় হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে দরজার পাশে এসে দাঁড়ায়। তাকে হেমন্তবাবু খুঁজে এনেছেন।

অরিন্দম কে দেখে অনু’র রাগ আরো বেড়ে গেলো সে হাতের কাছে থাকা ফুলদানি তুলে অরিন্দমের দিকে ছুড়ে মারল। তা দেখে চমকে উঠলেন চন্দ্রানী দেবী। অরিন্দম কোন রকমে নিজেকে বাঁচিয়ে কাকিয়ার হাত ধরে ব্যাস্ত স্বরে বলল,
__” কাকিয়া তুমি বাইরে যাও, আমি দেখছি।”

চন্দ্রানী দেবী ভীত গলায় বললেন,
__”কিন্তু বৌমা এমন.. অরিন্দম উনাকে বাইরে টেনে বের করে দিয়ে দ্রুত রুমের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে দিল!”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here