হারানোর বেদনা পর্ব -০৭

#হারানোর_বেদনা
#পর্ব_৭(অপরাধীর শাস্তি)
#লেখক_দিগন্ত
মেঘলা আর রুদ্র দুজনে একসাথে হেসে ওঠে।তারা দুজন যে একসাথেই রয়েছে।দুজনে মিলে নিলয়ের সব অপকর্মের বিরুদ্ধে এতদিন ধরে প্রমাণ সংগ্রহ করছে।

মেঘলা রুদ্রকে বলে,
-“ধন্যবাদ রুদ্র ভাইয়া।এতদিন আমার সাথে থাকার জন্য।তুমি না থাকলে আমি তো কোনদিন জানতেই পারতাম না নিলয়ের ব্যাপারে।”

রুদ্র হলো মেঘলার মামাতো ভাই।মেঘলার বাবার মতোই রুদ্রর বাবাও নিলয়ের বাবা নুরুল হকের হাতে খু*ন হয়।

রুদ্র আর মেঘলা দুজনের কেউই একে অপরের সম্পর্কে জানতো না।কারণ বাবার মৃত্যুর পর রুদ্র অনাথ আশ্রমে মানুষ হয়েছে।তবে এক বছর আগে তারা একে অপরের আসল পরিচয় জানতে পারে।

রুদ্র নিলয়ের সব অপকর্মের ব্যাপারে জেনে গিয়ে মেঘলাকে জানায়।মেঘলা প্রথমে বিশ্বাস করনি।কিন্তু তারপর যখন একদিন নিজের কানে নিলয়কে বলতে শোনে নারী পাচারের কথা সেদিন তার কাছে সব স্পষ্ট হয়।

এতদিন প্রমাণের অভাবে তারা কিছু করতে পারে নি।কিন্তু এখন তারা নিলয়ের বিরুদ্ধে কিছু প্রমাণ হাতে পেয়েছে।

মেঘলা রুদ্রকে লামিহার ব্যাপারেও সব বলে।রুদ্র তখন বলে,
-“লামিহার সাথে আমাদের যোগাযোগ করতে হবে।তাহলেই আমরা সব জানতে পারব।”

মেঘলা রুদ্রকে বলে,
-“লামিহার সাথে পরে কথা বলব।তার আগে আমাদের সিআইডি অফিসার আফজাল শেখের সাথে কথা বলতে হবে।ওনার হাতে এসব প্রমাণ তুলে দিতে হবে।তাহলেই কেবল আমরা নিলয়কে যোগ্য শাস্তি দিতে পারব।”

-“কিন্তু এই প্রমাণ কি যথেষ্ট?”

-“জানি যথেষ্ট না।কিন্তু এখন আপাতত এই প্রমাণ দিয়েই আমাদের কাজ চালাতে হবে।”

তারা সেখান থেকে যইবে তখনই সেখানে চলে আসে লামিহা।সে এসেই মেঘলার হাতে একটি ফাইল তুলে দিয়ে বলে,
-“এই ফাইলটায় নিলয়ের সব অপকর্মের প্রমাণ আছে।আমি এতদিন ধরে তিলে তিলে সব প্রমাণ যোগাড় করেছি।আর সবথেকে বড় প্রমাণ হলো নিলয়ের এসিট্যান্টের কাছ থেকে পাওয়া এই ডকুমেন্ট।যেখানে স্পষ্ট নারী পাচারের কথা বলা আছে।”

মেঘলা ভয়ার্ত চোখে বলে,
-“তাহলে কি নিলয়ের এসিট্যান্টের মৃত্যুর পেছনে তোমার হাত রয়েছে?”

-“হ্যাঁ।আমিই মে*রেছি ঐ শয়*তানটাকে।নিলয়ের এসিস্ট্যান্টই আজ থেকে ১৫ বছর আগে আমায় কিডন্যাপ করেছিল।তারপর আমায় পাচার করে দেয় বিদেশে।সেখানে আমায় কতো অত্যা*চার সহ্য করতে হয়েছে।অনেক কষ্টে সেই নরক থেকে মুক্তি পেয়ে আমি দেশে ফিরে আসি।দেশে এসেছি থেকেই নিলয়ের বিরুদ্ধে একের পর এক পরিকল্পনা করি।কিন্তু নিলয় ছিল গভীর পানির মাছ।তাই এত সহজে ওকে হারাতে পারিনি।কিন্তু অপরাধী যতই ক্ষমতাধর হোক একদিন তাকে তার পাপের শাস্তি পেতেই হয়।”

মেঘলা আর রুদ্র হাসিমুখে একটি গাড়িতে উঠে চলে যায়।তারা যাওয়ার পর লামিহাও তৃপ্তি পায়।এতদিন পর নিজের সাথে হওয়া অন্যায়ের শাস্তি পাবে লামিহা।
___________
নিলাকে পাগলের মতো খুঁজে চলছিল নিলয়।মানুষ হিসেবে সে যতই খারাপ হোক।একজন বাবা এবং স্বামী হিসেবে তার কোন কমতি নেই।

নিলার কোন খোঁজ না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরছিল নিলয়।তখনই রুদ্র তাকে ফোন করে বলে,
-“নিজের মেয়ের চিন্তা বাদ দে এবার।তোর সামনে যে কতবড় বিপদ অপেক্ষা করে চলছে তুই সেটা বুঝতেও পারছিস না।তোর এতদিনের গড়া পাপের সাম্রাজ্য গুঁ*ড়িয়ে দেব আমি।”

নিলয় পুরোপুরি হতবাক হয়ে যায়।রুদ্র কিভাবে এতকিছু জানতে পারল সেটা তার বোধগম্য হয়না।কিন্তু রুদ্র খুব বড় একটি ভুল করেছিল নিলয়কে এসব বলে।

নিলয় ভয় পেয়ে পিছিয়ে আসার মানুষ নয়।সে সরাসরি রুদ্রকে হুম*কি দিয়ে বলে,
-“যদি নিজের মেয়ে রুশাকে জী*বিত দেখতে চাস তাহলে চুপচাপ আমার সামনে চলে আয়।আর সাথে সব প্রমাণও নিয়ে আসবি।”

রুদ্র এবার নিজেও বুঝতে পারে সে কতবড় ভুল করে ফেলেছে।নিলয় যখন একবার বলেছে তখন সে রুশার ক্ষ*তি করার আগে দুবার ভাববে না।ভয়ে ভয়ে মেঘলাকে সব বলে রুদ্র।

মেঘলা রাগ দেখিয়ে বলে,
-“তুমি ওকে সবকিছু বলতে গেলে কেন?”

-“আমি ভুল করেছি।নিলয়কে আমি কষ্টে তড়পাতে দেখতে চেয়েছিলাম।”

মেঘলা সব প্রমাণ রুদ্রের হাতে তুলে দিয়ে বলে,
-“তুমি জানো এবার কি করতে হবে।”

রুদ্র বাকা হেসে বলে,
-“হুম জানি।”
___________
রুশাকে হাতিয়ার করে রুদ্রকে জব্দ করার নেশায় বুদ ছিল নিলয়।তাই রুশাকে বন্দি করে রেখেছিল।

রুদ্র ততক্ষণে সব প্রমাণ নিয়ে চলে আসে।রুদ্রকে আসতে দেখে নিলয় হাসতে হাসতে বলে,
-“চলে এসেছিস তাহলে।আয় তোর জন্যই এতক্ষণ অপেক্ষা করছিলাম।তোর মেয়েকে বেশ যত্নেই রেখেছি।আয় সব প্রমাণ আমার হাতে তুলে দিয়ে তুই এসে তোর একমাত্র মেয়েকে নিয়ে যা।”

রুদ্র গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসে।তারপর নিলয়ের হাতে সব প্রমাণ তুলে দেয়।নিলয় ভালো করে চেক করে দেখে সবকিছু নকল।

রুদ্রর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে নিলয় বলে,
-“আমার সাথে ঠকবাজি করার দুঃসাহস কোথায় পেলি তুই? তুই খুব ভালো করেই জানিস আমি কি করতে পারি।”

রুদ্র হাসতে বলে,
-“নিজের স্ত্রী আর মেয়েকে বাঁচাতে চাইলে ভালোয় ভালোয় আমার মেয়েকে আমার হাতে তুলে দে।”

-“মানে?”

পিছন থেকে কয়েকজন লোক মেঘলা আর নিলাকে ধরে নিয়ে আসে।মেঘলা কাতর কন্ঠে বলে,
-“রুদ্র আমাকে আর নিলাকে বন্দী করে রেখেছে।আমাদের তুমি রক্ষা করো নিলয়।”

মেঘলা আর নিলার এরকম অবস্থা দেখে নিলয় ভয় পেয়ে যায়।বাধ্য হয়ে সে রুশাকে রুদ্রর হাতে তুলে দেয়।সাথে সাথে পুলিশ এসে গ্রেফতার করে নিলয়কে।

পুরো ঘটনায় নিলয় হতবাক হয়ে যায়।কি থেকে কি হয়ে গেল সেটা তার বোধগম্য হয়না।

মেঘলা এগিয়ে এসে নিলয়ের গায়ে সজোরে একটা থা*প্পড় মা*রে।নিলয় ক্ষীণ কন্ঠে বলে ওঠে,
-“মেঘলা..”

-“চুপ।একদম তোমার ঐ নোংরা মুখে আমার নাম উচ্চারণ করবে না।তুমি একজন অপরাধী।একজন নারী-মাদক পা*চা*র*কারী।এবার তুমি তোমার সব অপকর্মের শাস্তি পাবে।আমি পুলিশের কাছে সকল প্রমাণ জমা দিয়েছি।”

-“”

-“তোমার এই কান্না দেখে আমি আজ খুব তৃপ্তি পেলাম নিলয়।তোমার জন্য কত মেয়েকে এভাবে কাঁদতে হয়েছে।এবার তুমিও বোঝো কষ্ট কাকে বলে।”

-“আমি তো তোমাকে সত্যি ভালোবেসে ছিলাম মেঘলা।আমার সত্যিকারের ভালোবাসাকে এভাবে অপমান করলে।”

-“তোমার মতো মানুষের মুখে ভালোবাসার কথা মানায় না।হ্যাঁ তুমি একজন ভালো বাবা, ভালো স্বামী ছলে কিন্তু তুমি একজন খারাপ মানুষ।তোমাকে শাস্তি না দিলে আল্লাহ কোনদিনও আমায় ক্ষমা কর‍ত না।”

-“মনে রেখো এই সব কিছুর জন্য তোমায় অবশ্যই ফল পেতে হবে।আমি এত সহজে তোমায় ছাড়ব না।”

পুলিশ নিলয়কে নিয়ে চলে যায়।মেঘলা আর নিজেকে সামলাতে না পেরে কেঁদে দেয়।হাজার হোক নিলয়কে তো সে সত্যি অনেক ভালোবেসেছিল।আজ সেই ভালোবাসার মানুষটাকে হারানোর বেদনা অনুভব করছে সে।অনেক আগে যখন নিলয়ের ব্যাপারে সব সত্য জানতে পেরেছিল তখনও ঠিক একইরকম কষ্ট পেয়েছিল মেঘলা।
______________
মেঘলা এখন অনেকটা স্বস্তিতে আছে।নিলয়কে জেলে পাঠিয়ে তার মনে হয় সব বিপদ কে*টে গেছে।এরপর আর কোন কষ্ট তাকে স্পর্শ করবে না।

~~অন্যদিকে
নিলয় জেলে বসে নতুন ফন্দি করছে।মেঘলা,রুদ্রর নির্বুদ্ধিতায় খুব হাসি পায় তার।সে বলতে থাকে,
-“কি ভেবেছ তোমরা? তোমরা জিতে গেছ? সব খেলা শেষ।শেষ থেকে কিন্তু শুরু হয়।এবার শুরু হবে নতুন অধ্যায়।তোমরা জানোনা আমি একা নই দেশে বিদেশে আমার কত সহযোগী আছে।তাদের প্রত্যেকে আমাকে মুক্ত করবে।আমার সাথে পা*ঙ্গা নিয়ে তোমরা অনেক ভুল করেছ।এবার তোমরা অনুভব করবে হারানোর বেদনা।”
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here