হিয়ার মাঝে পর্ব – ৩০

#হিয়ার_মাঝে
#পর্বঃ৩০
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি

৬৬,
রায়ার কথা শুনে উপস্থিত সকলের যপনো।কথা ফুরিয়ে গেছপ। ইহসাস তো মনে মনে খুশিতে পারেনা ভাবীকে ধরে নাচতে শুরু করে। হিয়া চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে বোনের দিকে। বাকি সবাইরও একই অবস্থা হিয়ার মতো। মিসেস কল্পনা তুতলিয়ে বলেন,

“এটা কি করে সম্ভব মেঝো বউ? তুমি জানো ইহসাসের বিয়ে তাইবার সাথে সব ঠিকঠাক!”

“হ্যাঁ বউমা। এরপরও তুমি এই কথা কি ভেবে বললে?”

বললেন মিসেস সেলিনা। রুবেল সাহেব ওদের কথা শুনে বললেন,

“আগে বউমাকে কথা শেষ করতে দাও। এরপর তোমরা নিজেদের মতামত বলো। আগেই এতো উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছো কেনো?”

“হ্যাঁ, ছোটো বাবা একদম ঠিক কথা বলেছেন।”

বললো আনিকা। ফারহাদও বউয়ের কথায় তাল মিলিয়ে বললো,

“হ্যাঁ, তোমরা আগে রায়ার কথা তো শুনো!”

“তোমরা থামলে সে বলার সুযোগ টা পেতো। থামবে তোমরা?”

বললেন জাহিদুল সাহেব। কিছুটা ধ”মকের সুরেই বললেন উনি। এবার রায়ার দিকে তাকিয়ে বললেন,

“তোমার এমন কেনো মনে হলো রায়া মা?”

“দেখুন বাবা, এমনিতে আমি চাপা স্বভাবের হলেও যা বলার বা বোঝানোর সরাসরিই বলি। ইহসাস আমার বোনকে ভালোবাসে। আর আমি চাইনা দুজন ভালোবাসার মানুষ আলাদা হোক। এটার যে যন্ত্রণা তা হাড়ে হাড়ে টের পাই আমি।”

শেষের কথাটুকু রাদের দিকে তাকিয়ে বললো রায়া। মিসেস সেলিনা একটু অবাক হয়ে বললেন,

“মানে কি বুঝাতে চাইলে বউমা?”

“কিছু না মা। ইহসাস হিয়াকে ভালোবাসে আর আমার অবুঝ বোনও ইহসাসকে ভালোবাসে। কিন্তু ও বুঝতে পারছেনা নিজের অনুভূতি। কিন্তু আমি তো ভালোবাসার অনুভূতিটা বুঝি। সেজন্য ওর চোখমুখের অবস্থা, ইহসাসের প্রতি ওর প্রতিক্রিয়া দেখেই আন্দাজ করে নিয়েছি।”

“কিন্তু রায়া তাইবা?”

বললেন মিসেস কল্পনা। রায়া এবার রাদের দিকে তাকিয়ে বললো,

“আপনি কি এবার মুখটা খুলবেন?”

“আমি কি বলবো?”

রাদ বললো রায়ার দিকে তাকিয়ে। রায়া ভ্রু কুচকে একবার রাদকে দেখে নিয়ে বললো,

“আপনার কিছু বলতে হবেনা। আমিই বলছি। নাকি ইহসাস? তুমি আমায় হেল্প করবে বলতে?”

ইহসাস চুপ করে এতোক্ষণ সবার কথা চুপচাপ শুনছিলো। রায়া কথাটা বলতেই সে বলে,

“ভাবী যা বলছে সবই ঠিক। আমি হিয়াকে ভালোবাসি। আর তাইবার কথা বললে না মা? সে সত্যিই একজনকে ভালোবাসে, তোমায় আগেও বলেছিলাম। কিন্তু সে বার তোমার ইমোশনাল কথার মুখে পরে সে অস্বীকার করেছিলো সে। কিন্তু ঘুরতে গিয়ে পুরো বিষয়টা সে ক্লিয়ার করেছে। বিশ্বাস না হয় তাইবার কাছে ফোন দাও তুমি।”

ইহসাস মায়ের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলে। মিসেস কল্পনা থমকে যান। নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না যেনো। জাহিদুল সাহেব সবকিছু শুনে বললেন,

“সবই বুঝলাম। তবে ইহসাস যখন হিয়াকে ভালোবাসে,তাহলে তাদের বিয়ে হবে। কিন্তু তার আগে আরও একটা কাজ বাকি!”

“কি কাজ ভাই?”

সবাই বিস্ময় সহিত তাকিয়ে আছেন জাহিদুল সাহেবের দিকে। কথাটা বললো রুবেল সাহেব। জাহিদুল সাহেব হিয়ার দিকে তাকালেন। তাকিয়ে বললেন,

“হিয়া মা? তোমার কি মতামত?”

হিয়া মাথা নিচু করে বসেছিলো। বড়োদের মাঝে ভালোবাসার কথা বলা!লজ্জায় মিইয়ে গেছে হিয়া। রায়া বোনের দিকে তাকিয়ে আছে। ইহসাস উদ্বিগ্ন হয়ে আছে হিয়ার উত্তরের আশায়। হিয়া চুপচাপ। তাকে এমন উত্তরহীন বসে থাকা দেখে আনিকা বলে,

“হিয়া! বড়ো বোন ভাবতে বলেছিলাম না আমায়? ভাবো তো? ভাবলে নির্দ্বিধায় আমাদের কাছে তোমার মতামত জানাতে পারো৷ আমরা সবাই তোমার পাশে আছি।”

হিয়া এবার চোখ তুলে তাকায়। দ্বিধা জড়ানো স্বরে বলে,

“আমার এখানে কোনো মতামত নেই। বাবা, মা, ভাইয়া, আপু যা বলবে! সেটাই মেনে নিবো।”

“সংসার টা পরিবার নয়, তুই করবি হিয়া! ইহসাসের সঙ্গে তোর পরিবার না তুই থাকবি। তাই মনের কথাটা এখানে বল।”

রায়া শান্ত স্বরে কথাগুলো বললো। হিয়া মাথা উচিয়ে এবার সাহসের সহিত বললো,

“আমি জানিনা উনার প্রতি আমার কি অনুভূতি। কিন্তু উনাকে নিয়ে যা ফিল করি, সেটা যদি ভালোবাসা হয়! তবে আমি উনাকে বোধ হয় ভালোই বাসি।”

হিয়া কথাটা বলেই দৌড়ে টেবিল থেকে উঠে যায়। জাহিদুল সাহেব হাসলেন। বড়োদের মাঝে ভালোবাসার কথা স্বীকার করা! লজ্জারই বিষয়। কিন্তু উনারা ছেলেমেয়ের কাছে এই ভরসার জায়গা স্থান করেছেন যে, ছেলেমেয়ে নির্দ্বিধায় নিজদের মনের কথা শেয়ার করতে পারে। ইহসাসের মনে অদ্ভুত রকম শান্তির দোলা। অবশেষে কি হিয়াকে পাওয়ার সূচনা শুরু হয়ে গেলো! জাহিদুল সাহেব মিসেস কল্পনার দিকে তাকালেন। তাকিয়ে বললেন,

“ছোটো বউ? তোমার আপত্তি আছে হিয়াকে পুত্রবধূ হিসেবে মানতে?”

৬৭,
” না ভাই সাহেব। কিন্তু বুঝতে পারছিনা যা হচ্ছে ঠিক হচ্ছে কিনা! একই ঘরে দুই ছেলের বিয়ে করিয়ে আত্মীয়তা বড়ো হলো না তো! তাছাড়া বেয়াই সাহেবের কি মতামত হয় না হয় আমরা তো জানিনা!”

“সেটা আমি আর ভাই সামলে নেবো। তোমার মতামত আছে কিনা বলো!”

বললেন রুবেল সাহেব। ইহসাস বাবা মায়ের কথার মাঝে বললো,

“তোমরা মানো বা না মানো, হিয়াকে আমি বিয়ে করতামই। ভালোই হলো ভাবী বিষয়টা সবাইকে জানালো। নয়তো আমিই বলতাম আজ।”

ইহসাস টেবিল ছেঢে উঠে যায় কথাটা বলে। ফারহাদ বলে,

“সে যাই হোক, তাহলে আগে তাওই সাহেব আর মাওই মা-র সাথে কথা বলা দরকার এ বিষয়ে!”

জাহিদুল সাহেব মাথা নাড়ালেন। উনি খাবার ছেড়ে উঠতে উঠতে বলেন,

“সময় করে শাহীনের সাথে কথা বলা দরকার।”

“আমিও সেটাই ভাবি।”

রুবেল সাহেবও ভাইয়ের পিছু যেতে যেতে বললেন। মিসেস সেলিনা এবার বললেন,

“যদি হিয়া আর ইহসাসের বিয়েটা হয়েই যায়! তবে একসাথেই তাইবা আর সে যাকে ভালোবাসে তার সাথেই বিয়েটা দিয়ে দেওয়া ভালো হবে বলে মনে করি।”

“আমিও তোমার সাথে একমত মা।”

ফারহাদ কথাটা বলে বাবা চাচার সাথে টেবিল ছাড়ে। মিসেস সেলিনা রাদের দিকে তাকিয়ে বললেন,

“রাদ তোর কি মতামত?”

রাদ খাওয়া বাদ দিয়ে বসেছিলো এতোক্ষণ। সবাই খেতে খেতে কথা বললেও সে চুপ করে বসে ছিলো। সেজন্য এখন তাড়াতাড়ি ঝাবার শেষ করতে গ্রাসে গিলছে সে। মায়ের প্রশ্ন শুনতেই বলে,

“তোমরা যা ভালো বুঝো।”

রায়া রাদের উত্তর শুনে আনমনেই বিরবির করে, ‘হ্যাঁ সবসময় বড়োরা যা ভালো বুঝে সেটাই। নিজের কোনো মতামত বলতে কিছু আছে নাকি! থাকলে আমার জীবনটা অন্তত নষ্ট হতো না।’

রাদ পাশেই বসেছিলো। সে রায়ার কথাটা শুনতে পায়। শুনেই সে রায়ার দিকে কিছু টা ঝুকে বলে,

“দোষ আমার একার নয়। কিন্তু জীবন নষ্ট না শুরু সেটা সময় কথা বলবে। চুপ থাকি বলে আমি বোকা নই। নিরবতাও অনেক সময় সম্মতির লক্ষণ। কিন্তু সেটা সবসময় নয় ”

রায়া শাশুড়ি, চাচী শাশুড়ি, জায়ের সামনে এভাবে তার দিকে রাদকে ঝুকতে দেখে ছিটকে সরে দাড়ায় রাদের কথা ফুরোতেই। সে উঠে বেসিনে হাত ধুয়ে নিজের রুমের দিকে হাটা ধরে। রাদ মুচকি হাসে। আনমনে ভাবে, ‘একদিন আসবে রায়া, এই আপনিই বলবেন, আমি আপনার জীবন নষ্ট করিনি, সাজিয়েছি। আই প্রমিজ।’

আনিকা সবাই খেয়ে উঠে যেতেই সব গুছিয়ে নিতে শুরু করে কাজের মহিলার সাহায্যে। তখুনি হিয়া পানি খাওয়ার জন্য কিচেনে আসে। তখন তাড়াহুড়োই উঠে যাওয়ায় পানি খাওয়া হয়নি। আনিকা হিয়াকপ দপখেই বলে,

“কি ব্যাপার লাভ বার্ড? ভালেবাসার পুকুরে পরে তোমার পানির তৃষ্ণা পেলো?”

হিয়া লজ্জায় পায়। লজ্জায় মাথানত করে নেয়। সে গ্লাসে পানি নিয়ে খেতে শুরু করে কোনো উত্তর না দিয়ে। আনিকা বেসিনে প্লেট ধুয়ে গুছিয়ে রাখছে। তখনই ইহসাস কিচেনে আসে। আনিকা আর হিয়া একসাথে ইহসাসকে দেখে তার দিকে তাকায়। ইহসাসকে দেখে আনিকা ঠাট্টার স্বরে বলে,

“বাহ লাভ বার্ডসের জেড়া পূরণ হলো। তা ভাই তোমার কি দরকার এখানে? আদৌও দরকার আছে? নাকি হবু বউকে দেখতে আসলে?”

“কি করবো ভাবী? দেড়মাস দেখিনা, তাই দেখার শখ মিটছেনা। ইচ্ছে করছে সামনে বসিয়ে রেখে দেখি।”

ইহসাসের উত্তর হিয়া বিষম খায়। মুখের পানি গিয়ে পরে সোজা ইহসাসের গায়ে। এ ছেলের লাজ লজ্জা নেই। যেখানে সেখানে যা খুশি বলে ফেলে। আনিকা হাসছে। ইহসাস এই অবস্থায় পরে অসহায় চোখে হিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

“এটা কি করলে হিয়া?”

“প্রেমের পুকুরে ধা”ক্কা দিয়ে হালকা ভিজিয়ে হাত ধরে তুলে নিলো। তাই কাকভেজা হলে।”

বললো আনিকা, বলেই হাসতে ব্যস্ত হয়ে পরলো সে। তার সাথে মিলে হিয়াও মিটমিট করে হাসছে। ইহসাস পারছেনা হিয়াকেও ভিজিয়ে দিতে। সে বাচ্চাদের মতো লাফাতে লাফাতে চলে যায় কিচেন থেকে৷

এদিকে রায়া নিজের রুমে আসার পর ফোন হাতে নিয়ে বসেছে বাবার সাথে কথা বলবে বলে। ওয়াইফাই কানেক্ট করে হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকতেই বাবার নাম্বারে কল দিবে তার আগেই লুইসের নাম্বার থেকে ভিডিও কল আসে রায়ার ফোনে। রায়া চমকে যায় লুইসের কল আসা দেখে। মনে হয় ফোন হাতে নিয়ে বসেছিলো কখন রায়া আসবে আর সে কল দিবে! রাদ তখুনি রুমে ঢুকে। রাদকে একপলক দেখে নেয় রায়া। সে দ্বিধান্বিত হয়ে ফেনটা রিসিভ করে। রিসিভ করতেই ফোনের স্কিনে ভেসে উঠে সেই ঘোলা চোখ, যার মায়ায় রায়া ডু”বেছে, আজও বেরুতে পারেনি। লুইস রায়াকে দেখতে পেয়ে হাত নাড়িয়ে হাই দেখায়। হাস্যোজ্বল মুখে তাকিয়ে আছে সে। লুইসের মুখে হাসি দেখে সেও কিছুটা প্রশান্তি অনুভব করে। কিন্তু ধীরে ধীরে লুইসের সাজপোশাক আর একটু পর পাশে নববধু সাজে খ্রিস্টানিদের বিয়ের পোশাক পরিহিত এলভিনাকে দেখে বিস্ময়ের শেষ পর্যায়ে পৌছে যায় রায়া। সে অস্ফুটস্বরে বলে,

“তুমি বিয়ে করেছো লুইস?”

বাংলাতেই কথাটা বলে রায়া। রাদ রায়ার থেকে অল্প একটু দূরত্বে সোফায় বসেছিলো, নিজের ফোন চেক করছিলো সে। রায়ার মুখে লুইসের নাম শুনে অবাক হয়। উঠে এসে রায়ার পাশে বসে তার ফোনের স্কিনে নজর ফেলে। দেখতে পায় সদ্য বিবাহিত কাপলকে। তারা হাসছে, কিন্তু ছেলেটার হাসিতে বিষাদ জড়ানো। হাসিতে প্রাণ নেই, এটাই তবে লুইস!

চলবে?

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। মাইগ্রেন জেগে গেছে, বড়ো করতে পারলাম না, স্যরি।আসসালামু আলাইকুম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here