হৃদয় নিবাসে তুই পর্ব -২৮+২৯

#হৃদয়_নিবাসে_তুই
#পর্ব_২৮
লেখনীতেঃ ভূমি

‘ কনগ্রেচুলেশন মিসেস রক্তিম মাহমুদ ফর ইউর থার্ড মান্থ’স অফ প্র্যাগনেন্সি।’

অদ্রিজা থমকাল রক্তিমের শান্ত কন্ঠে কথাগুলো শুনে।নেহার জোরাজুরিতে সে ও সেঁজেছে।তবে এই সাঁজের কোন নির্দিষ্টি কারণ না পেয়েই এতক্ষন চুপ ছিল।হঠাৎ ঐ তাকে ছাদে আনা হলো।অদ্রিজা কোনকিছুরই কারণ খুঁজে পেল না।শান্ত গম্ভীর চাহনি ফেলে প্রসস্ত ছাদটার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিল কেবল।বেশ সুন্দর সাঁজানো হয়েছে।ছাদের মাঝখানটায় ইয়া বড় টেবিল।টেবিলের উপরই বড়সড় কেক রাখা।ছাদের ঠিক সেই জায়গাটায় বেলুন দিয়ে চমৎকার সাঁজানো।ছাদের বাকি চারপাশ কাঁচা ফুল দিয়ে সাঁজানো।কাঁচা ফুলের সুভাস মৌ মৌ করতেই ছাদে উপস্থিত হলো মিষ্টি মিষ্টি পিচ্চি পাখিগুলো।পিচ্চি ছেলেমেয়ে গুলোর দিকে মুগ্ধ চাহনিতে তাকাতেই আকস্মিক সামনে আসল রক্তিম।তার একটা হাত টেনে ধরেই শান্ত শীতল গলায় কথাগুলো বলল রক্তিম।অদ্রিজা বিস্ময় নিয়ে রক্তিমের দিকে তাকাল।নিজের হাতটা এক টানে ছাড়িয়ে নিয়েই কিছুটা দূরে সরে দাঁড়াল।মুখেচোখে চাপা অনিভূতি নিয়ে চারপাশ ফিরে চাইল।সুইটহার্ট,নেহা,অত্রিয়া, দিহান, রায়মান সহ পিচ্চি পিচ্চি ছেলেমেয়ে গুলোর মুখে মিষ্টি হাসি।হাসিগুলো নজর ফেলে ভালোভাবে দেখতে দেখতেই চোখজোড়া গিয়ে স্থির হলো সেই মানুষগুলোরই পাশে থাকা আরেকজন মানুষের উপর।তার মা!এখানে?প্রথম দফায় বিশ্বাস না করলেও নিজের চোখকে অবিশ্বাস করার কারণ খুঁজে পেল না সে।বিস্ময় নিয়ে সেদিক পানে তাকিয়ে থাকার মাঝেই রক্তিম আবার ও তার হাতটা ধরল। পকেট থেকে একটা রিং বের করেই আঙ্গুলে পরিয়ে দিতে দিতেই ফিসফিসিয়ে বলল,

‘ হাত ছাড়িয়ে নিলেন কেন?আপনার হাত সত্যি সত্যি ভেঙ্গে ফেলব ভেবেছেন?’

অদ্রিজা বিরক্তি নিয়ে তাকাল।হাতটা পুনরায় ছাড়িয়ে নিয়ে ঝাঁঝাল দৃষ্টিতে তাকাল।অনামিকা আঙ্গুল থেকে রিংটা খুলে নিয়েই রক্তিমের হাতের মুঠোয় ধরিয়ে দিল।তীব্র রাগ আর ক্ষোভে মুখচোখ লাল করেই বলে উঠল,

‘ আপনার দেওয়া কোনকিছুই পরব না আমি।রিংটা আপনার কাছেই রাখুন।আপনার দেওয়া পায়েলটাও অনেক আগেই খুলে রেখে দিয়েছি।আপনাকে দিয়ে দিব।’

রক্তিমের হাসিমাখা মুখের চাহনির বদল ঘটল এবার।ফর্সা ধবধবে নাক, মুখ লাল হলো।চোয়াল শক্ত হয়ে এল যেন।হাঁটু গেঁড়ে বসেই অবিশ্বাসের সাথে অদ্রিজার শাড়ি সরিয়ে পায়ের পায়েলটা যে নেই তা নিশ্চিত হলো।সঙ্গে সঙ্গেই রাগটা শতগুণ বাড়ল।অদ্রিজার থেকে কিছুটা দূরে সরে এসেই ছাদের রেলিংটায় জোরেসোরে এক ঘুষি বসাল।ক্ষ্রিপ্ত চাহনিতে অদ্রিজার দিকে তাকিয়েই দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

‘ ভালো করলেন না এটা!একদমই ভালো করলেন না অদ্রিজা।’

অদ্রিজা তাচ্ছিল্য নিয়ে হাসল।বুকে হাত জোড়া ভাজ করে দাঁড়িয়েই নেহাদের কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়াল।ক্লান্ত কন্ঠে বলে উঠল,

‘ আমি সত্যিই অনেক ক্লান্ত নেহা।অত্রি চল, বাড়ি যাব।সুইটহার্ট?এবার বাড়ি যাই?প্লিজ!’

সুইটহার্ট মিনমিনে চোখে তাকাল। অসহায় মুখ করে একবার রক্তিম তো একবার অদ্রিজার দিকে তাকাল।কত আশা, কত স্বপ্ন নিয়ে সবাই মিলে এই সারপ্রাইজ প্ল্যান করল।শেষ পর্যন্ত সারপ্রাইজটার যে বারোটা বেঁজে গিয়েছে তা রক্তিমের মুখচোখ দেখে বুঝতে আর বাকি রইল না তার।হতাশ চাহনি ফেলেই বলে উঠলেন তিনি,

‘ যাবে?যাবে মানে?এবার থেকে তুমি এখানেই,আমার সাথেই থাকবে।একা একা আর কত বাঁচা যায় শুনি?জান তো আগে বলেইনি আমার একটা সতীন আছে।নয়তো অনেক আগ থেকেই সতীন নিয়ে সংসার করা শুরু করে দিতাম।সবটা জানের দোষ!’

অদ্রিজা ম্লান হাসল।নরম কন্ঠে বলল,

‘ সুইটহার্ট?তুমি চিন্তামুক্ত থাকো।তোমার সুখের সংসারে কোন সতীন আসবে না।সতীন নিয়ে জ্বালাময় সংসার ও করতে হবে না তোমায়।তোমার জানের সাথে আমার ডিভোর্স হয়ে যাবে কয়েক মাস পর।’

অদ্রিজার অপ্রত্যাশিত কথাটাতেই রাগটা এবার ফুলেফেঁপে উঠল রক্তিমের।চোখেমুখে এক ভয়ংকর চাহনি।কপালের রগটা ইতমধ্যেই ফুলে উঠেছে। লাল রক্তিম চেখজোড়া নিয়ে একনজর অদ্রিজার দিকে তাকিয়েই হনহনিয়ে এগিয়ে এল সুইটহার্টের কাছে।গম্ভীর তীক্ষ্ণ গলায় স্পষ্টভাবে বলে বসল,

‘ সুইটহার্ট, এখানে কিছু হবে না আর।সবার খাওয়ার ব্যবস্থা করো গিয়ে।আমার জন্য এক মগ কফি পাঠিয়ে দিও।খাব না আমি।আর হ্যাঁ,অদ্রিজা?’

অদ্রিজা মাথা তুলে চাইল।রক্তিমের লাল রক্তিম চোখজোড়ার দিকে তাকিয়েই মুহুর্তে শিউরে উঠল।গম্ভীর চোখমুখে তাকিয়ে থাকার মাঝেই রক্তিম বলল,

‘ আপনি এই বাসাতেই থাকবেন।বের হবেন তো পা কেঁটে রেখে দিব বলে দিলাম।মাইন্ড ইট!আমাকে এর থেকে বেশি রাগালে ফল ভালো হবে না বলে দিলাম।’

অদ্রিজার স্পষ্ট জবাব,

‘ কি করবেন?মেরে ফেলবেন?আপনার কাছে থেকে যেটুকু নিশ্চয়তা থাকবে তার থেকে একটা উম্মাদের সাথে থাকলেও বেশি নিশ্চয়তা থাকবে রক্তিম।কি কথার ধরণ!ছিঃ!’

রক্তিম ভ্রু কুঁচকাল।অদ্রিজার মুখের দিকে কিছুটা ঝুকতেই চুলগুলো ঝুকে পড়ল কপালে।অদ্রিজার হাতজোড়া খামচে ধরেই ক্ষোভ নিয়ে বলে উঠল,

‘যদি নিশ্চয়তা নাও থাকে, তবুও আপনাকে আমার সাথেই থাকতে হবে।মানলে ভালো।না মানলে সেটা আপনার বিষয়।আমার মুডটাই নষ্ট করে দিয়েছেন আপনি।ডিসগাস্টিং!’

কথাগুলো বলেই অদ্রিজার হাতজোড়া ছেড়ে দিয়ে চলে গেল রক্তিম।চোখেমুখের সেই তীব্র রাগের আকস্মিক আক্রমনে শিউরে উঠল অদ্রিজার মন প্রাণ।একটু বেশিই কি করে ফেলেছে রক্তিমের সাথে?মস্তিষ্ক বলল, না!আত্নসম্মান নিয়ে এটুকু করা অন্যায় নয়।রক্তিমই তো বলেছিল তার আত্মসম্মান নেই, বেহায়া।তবে? আজ কেন আত্মসম্মান দেখাতে না দেখাতেই রাগে থিতিয়ে গেল তার চোখ মুখ?

.

এই বাসা থেকে শত জোরাজুরির পরও যাওয়া হয়ে উঠে নি অদ্রিজার।রাত এখন অনেক।এত রাতে বাসায় একা ফেরা যেমন তার পক্ষে সম্ভব নয় তেমনই এই বাসায় থাকাটাও তার জন্য উচিত নয়।অত্রিয়া আর তার মা জোর করেই রেখে গেল এখানে।তার চাওয়ার কি কোন গুরুত্ব নেই?অদ্রিজা ভেবে পেল না।মনটা হঠাৎ ভীষণ খারাপ বোধ হলো।যুবতী মন হঠাৎ ঐ কিশোরী মনের মতো রাগ, অভিমানে জড়োসড়ো হলো।কান্না আটকানো কষ্টে ছটফট করল।তার বোন, তার বান্ধবী করতে পারল এমনটা?বাসায় পৌঁছে দিলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে তাদের?অদ্রিজা ভাবল!ভীষণভাবে ভাবল।মুখচোখ কালো করল।দমবন্ধকর কষ্টে কান্না আটকাল।ঠিক তখনই দরজায় কড়াঘাত পরল।অদ্রিজা ঘাড় ঘুরিয়ে চাইল দরজার দিকে।এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই চোখে পড়ল রক্তিমের ভেজা মুখ। চোখজোড়া এখনও আগের মতোই লাল টকটকে।কপালে ভাজ।মাথার কালো চুলগুলো ভেজা।মুখের খোঁচা খোঁচা ছোট দাঁড়িগুলোতেও জলের ছিটেফুটে।অদ্রিজা একনজর চেয়েই গম্ভীর কন্ঠে শুধাল,

‘ কি সমস্যা?এত রাতে আমার রুমের দরজায় নক করছেন কেন?আশ্চর্য!ঘুমের মধ্যে বিরক্ত করবেন না।’

রক্তিম ম্লান হাসল। ভেজা চুলগুলো হাত দিয়ে পেছনে ঠেলে দিয়ে লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।ঠোঁট চেপে বলল,

‘ এটা আমার রুম।আপনার রুম হলো কবে থেকে?’

অদ্রিজা নড়েচড়ে দৃষ্টি ফেলল রুমে।হবে হয়তো রক্তিমের রুম।এভাবে হুট করে নিজের রুম বলে দেওয়া উচিত হয়নি তার।কাঁপা গলায় বলল সে,

‘ সুইটহার্ট বলেছে এটা আমার রুম।জিজ্ঞেস করুন গিয়ে?’

‘ জিজ্ঞেস করার দরকার নেই।বিশ্বাস করি আপনাকে।’

‘ কিন্তু আমি আপনাকে বিশ্বাস করি না।এটা যে আপনার রুম তার কি প্রমাণ আছে?বলুন।’

রক্তিম ক্লান্ত চাহনিতে তাকাল।বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করল পেঁছনে তাকাতে।সঙ্গে সঙ্গে অদ্রিজা পেঁছন ফিরে চাইল।খাটের পাশেই টেবিলটার উপর রাখা ছবিটার ফ্রেমের ভেতর সুইটহার্ট আর রক্তিমের হাস্যোজ্জ্বল চেহারা।রক্তিম তখন অল্প বয়সী তরুণ বোধ হয়।হ্যাংলা,পাতলা শরীর।পরনে একটা টিশার্ট।ট্যারাব্যাকা দাঁত কেলানো সেই হাসিটা মুখে।পাশেই সুইটহার্টের মিষ্টিমুখ!অদ্রিজা হতাশ হয়ে ছবিটা খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষন করল।রক্তিমের দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকাতেই রক্তিম ক্লান্তি নিয়ে বলল,

‘ প্রমাণ পেয়েছেন?আমি ক্লান্ত।আপনি হয়তো আমার থেকে বেশি ক্লান্ত, তবে আমার এই মুহুর্তে ঘুমের প্রয়োজন। প্লিজ সাইড!’

অদ্রিজা সরল।চাপা কন্ঠে বলল,

‘ তাহলে আমি?আমি কোথায় ঘুমাব?আমারও ঘুম পাচ্ছে।’

রক্তিম ভ্রু কুঁচকাল।অদ্রিজার দিকে তাকিয়েই বিরক্তিসহিত বলে উঠল,

‘ প্রথমত আপনি আমার মুডটাই চেঞ্জ করে দিয়েছেন।দ্বিতীয়ত বাচ্চাদের সাথে কেক মাখামাখি, হৈচৈ করে ক্লান্ত আমি।ঐসব কিছু আপনার জন্যই এরেঞ্জ করা হয়েছিল, আপনি তা ভেস্তে দিলেন। সমস্যা নেই।আমার পিচ্চিরা অলটাইম থাকে আমাকে খুশি রাখার জন্য।তাদের সাথে এতক্ষন সময় কাঁটিয়ে এখন বোধ হয় আমার ঘুম প্রয়োজন তাই না?আপনি প্লিজ এখন নতুন নাটক শুরু করবেন না অদ্রিজা।’

অদ্রিজা তৎক্ষনাৎ রাগল।রাগে চোখমুখ আগুন করেই ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,

‘ নাটক?এটাকে আপনার নাটক মনে হচ্ছে রক্তিম?এটার মতো সিরিয়াস ইস্যু আর হতে পারে?আমি আপনার সাথে এক রুমে কেন থাকব?আশ্চর্য!’

রক্তিম মাথা চেপে ধরল।দাঁতে দাঁত চেপেই বলল,

‘ স্টুপিড!আপনি আমার সাথে এক রুমে থাকেন নি?কি হলো? থাকেন নি?বলুন।’

অদ্রিজা স্পষ্ট জবাব দিল,

‘ থেকেছি, তখন তো সেই চুক্তি অনুযায়ী থাকতে বাধ্য হয়েছিলাম।এইছাড়া কিছুই নয়।এখন তো সেই চুক্তির দায়বদ্ধতা নেই!আপনিই সেই দায়বদ্ধতা থেকে আমায় রেহাই দিয়েছেন। ‘

রক্তিম কঠিন চাহনিতে তাকাল।শক্ত গলায় বলল,

‘ শুধুমাত্র দায়বদ্ধতা?আরো কিছু ছিল তো!সেসবের সমাপ্তি ঘটিয়ে দিয়েছেন?আসলেই ভালোবাসা বলে কিছু হয় না।আমি ঠিক ছিলাম।’

অদ্রিজা স্পষ্ট গলায় বলল,

‘ ঠিক। ভালোবাসা বলে কিছুই নেই। সবটা বাহ্যিক!’

রক্তিম ঠোঁট টিপে হাসল অদ্রিজার কথা শুনে।মাথার চুলগুলো হাত দিয়ে হালকা ঝাড়া দিয়েই বলে উঠল,

‘ভালোবাসা আপাদত বাদ।চুপচাপ ভালো মেয়ের মতো আমার পাশে এসে ঘুমিয়ে পড়বেন।অনেক রাত হয়েছে।সুইটহার্ট বোধ হয় জেগে নেই।আর অন্য রুমগুলোও পরিষ্কার নেই। সো এইখানেই ঘুমোতে হবে।’

অদ্রিজা শক্ত কন্ঠেই বলল,

‘ ঘুমাব না।’

রক্তিম কড়া চাহনিতে তাকাল। কপাল কুঁচকেই বিরক্তি নিয়ে বলল,

‘ কেন?কি সমস্যা?’

অদ্রিজা অস্ফুট স্বরে বলল,

‘ ঐ যে আত্নসম্মান।আপনিই তো বলেছিলেন বেহায়ার মতো আপনার পেছনে পড়ে আছি।’

রক্তিমের চোয়াল শক্ত হয়ে এল।অদ্রিজার দিকে তাকিয়েই ছোট্ট শ্বাস ফেলে বলল,

‘ ভুলগুলো কি আমার ছিল আদৌ অদ্রিজা?সৃষ্টিকর্তা ইচ্ছে করেই ভুলগুলো আমার উপর চাপিয়ে দিয়েছেন। আর সেই মিথ্যে ভুলের শাস্তিটাও আমায় পেতে হচ্ছে।আপনি খাটে ঘুমোন। আমি সোফায় ম্যানেজ করে নিব।’
#হৃদয়_নিবাসে_তুই
#পর্ব_২৯
লেখনীতেঃ ভূমি

অদ্রিজার ঘুম ভাঙ্গতেই চোখে পড়ল রক্তিমের নেশা ধরানো চাহনি।ফ্লোরে হাুঁটু ঘেড়ে বসে বিছানার উপর হাত জোড়া রেখে মুখটা অদ্রিজার মুখের সামনেই রাখল।অদ্রিজার ঘুমন্ত চোহারার দিকে ঘোর লাগানো চাহনি ফেলে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকার মাঝেই ঘুম ভাঙ্গল অদ্রিজার। চোখ মেলে রক্তিমকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখেই বিব্রত হলো।বার কয়েক চোখ ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে উঠে বসল এবার।কপালে সূক্ষ্ম ভাজ ফেলেই এলোমেলো চুলগুলো খোঁপা করতে ব্যস্ত হয়েই বলে উঠল সে,

‘ কি সমস্যা?এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন আপনি?’

রক্তিম ঠোঁট টেনে হাসল।হাতজোড়ার উপর মুখটা ভর দিয়ে রেখেই বলল,

‘ পরনারীর দিকে তাকিয়ে আছি নাকি?নিজের স্ত্রীর দিকে তাকানোর অধিকার নেই নাকি আমার অদ্রিজা?’

অদ্রিজা চাহনি কঠিন করল।কাঁটকাঁট চাহনি ফেলে রক্তিমকে দেখে নিয়েই শক্ত গলায় বলল,

‘ না নেই!আমি আপনার পরিচিত কেবল।স্ত্রী নয়।মনে নেই?’

রক্তিমের চাহনি এবার থমকাল।হাসি চকচক করা মুখটায় এবার কিঞ্চিৎ গাম্ভীর্য ফুটে উঠে।ঠোঁটে ঠোঁট চেপে কিছুটা সময় চুপ থেকেই কৃত্রিম হাসল।অদ্রিজার দিকে তাকিয়েই বলে উঠল,

‘ মনে থাকলেই বা কি?এখন আপনি আমার স্ত্রী। স্ত্রী তো পরিচিতই হয়।অপরিচিত কেউ হুট করে স্ত্রী হতে পারে?তাই কেবল পরিচিত বললেও সমস্যা নেই।আপনি আমার পরিচিত ও এবং স্ত্রীও।’

অদ্রিজা খাট থেকে নেমেই উঠে দাঁড়াল।ভ্রু জোড়া কুঁচকে নিয়েই বলে উঠল,

‘ কিসের স্ত্রী? কে স্ত্রী?আমি আপনার স্ত্রী নই।আপনার আমার বিয়েটা জাস্ট চুক্তি ছিল।আপনারও চুক্তি অনুযায়ী শর্ত পূরণ হয়েছে, আমারও।সেইম সেইম!কয়মাস পর ডিভোর্স পেপারে সাইন করলে সে চুক্তির বিয়ের ও কোন অস্তিত্ব থাকবে না।মনে রাখবেন।’

রক্তিম চোখ মুখ শক্ত করল।চোখমুখে টানটান কঠিন চাহনি নিয়ে অদ্রিজার দিকে তাকিয়েই উঠে দাঁড়াল।চোয়াল শক্ত করে অদ্রিজার দিকে কিছুটা ঝুকতেই অদ্রিজা কপাল কুঁচকাল।রক্তিম বাঁকা হাসল। হাতজোড়া অদ্রিজার দুইপাশে দেওয়ালে রেখেই অল্প দূরত্বে আবদ্ধ করল অদ্রিজাকে। ভ্রু নাচিয়ে বলল,

‘ কি মনে রাখব?আরেকবার বলুন।প্লিজ।’

অদ্রিজা কুঁচকানো ভ্রু নিয়ে সেভাবেই তাকিয়ে থাকল।আকস্মিকভাবে রক্তিম কাছে চলে আসায় অস্বস্তিতে তেঁতো হয়ে আসল চোখমুখ।রক্তিমের দুই হাতের মাঝে ঐটুকু জায়গায় হাঁসফাঁস করতে করতেই কন্ঠে ঝংকার তুলে বলল,

‘ কি হচ্ছে কি এসব?সরে দাঁড়ান।’

রক্তিমের ভাবলেশহীন জবাব,

‘ সরলাম না।এবার বলুন কি করবেন? ‘

অদ্রিজা বিরক্ত হলো।চরম রকম বিরক্তে থিতিয়ে উঠল মন প্রাণ।সাথে জম্মাল রাগ।দাঁতে দাঁত চেপেই বলে উঠল,

‘ আমার ভালো লাগছে না।সরে দাঁড়ান।’

রক্তিম ঠোঁট টিপে হাসল।অদ্রিজার কথাটাকে উপেক্ষা করেই চোখ টিপল।মাঝখানের কয়েক ইঞ্চির দূরত্বটাও মিটিয়ে নিতে লাগলে অদ্রিজা হাত জোড়া রক্তিমের বুকের উপর ভর করে রাখল।যাতে রক্তিম এগিয়ে আসতে না পারে।তা দেখেই হু হা করে হেসে উঠল রক্তিম।অদ্রিজার থেকে বেশ কিছুটা সরে গিয়েই হাসতে হাসতে বলে উঠল,

‘ প্রতিরক্ষার পন্থাটা দারুণ ছিল!কিন্তু রক্তিমের কাছে এই পন্থাটা কিছুই নয়।আপনি বৃথা চেষ্টা করছিলেন আর কি।’

‘ তো?’

‘ তো?তো আপনাকে এসব নরমাল প্রতিরক্ষার পন্থা অনুসরণ করলে চলবে না অদ্রিজা।রক্তিম থেকে নিজেকে বাঁচাতে হলে আরো কঠিন কঠিন পন্থা বেঁছে নিতে হবে।নয়তো সুদে আসলে সবটাই মিটাতে হবে আপনাকে। বলেছিলাম না মিসেস মাহমুদ?’

অদ্রিজা জ্বলে উঠল।মন মেজাজ সব বিগড়ে গেল কয়েক মুহুর্তেই।চোখজোড়ায় চরম বিতৃষ্ণা আর ক্ষোভ নিয়ে রক্তিমের দিকে এমনভাবে তাকাল যেন এক্ষুনি পারলে এক্ষুনি শেষ করে ফেলত এই লোকটাকে।কিন্তু তা বাস্তবে সম্ভব হলো না।শক্ত কন্ঠেই নজরটা আরো জ্বলন্ত করে তুলে বলে উঠল,

‘ এসব নাটকের কি মানে রক্তিম?আপনার এই মনে হচ্ছে আমি আপনার স্ত্রী আবার কিছুক্ষন পর মনে হবে আমি কেবলই পরিচিত।তাই না?যেখানে বিয়ের শুরুতেই ডিভোর্সের জন্য এপ্লাই করে নিয়েছেন সেখানে আবার মিসেস বলছেন কোন অধিকারে?কয়মাস পর আপনি আপনার জায়গায় আমি আমার জায়গায়।তাই বলছি, নতুন করে এসব ড্রামা করবেন না।একদমই না।ডিভো…’

অদ্রিজা বাকি কথাটা বলে উঠতে পারল না।তার আগেই রক্তিমের ঠোঁট জোড়া দখল করে নিল তার ঠোঁটজোড়া।মৃদু কম্পনে কেঁপে উঠল তার লতানো রূপময় শরীর।রক্তিমের হাতজোড়া নিজের কোমড়ে অনুভব করেই শিউরে উঠল লেমকূপ গুলো।নিঃশ্বাস অতিদ্রুত ঘন হয়ে এল।শিরা উপশিরায় বহমান রক্ত সর্বোচ্চ বেগে প্রবাহিত হলো। হাত পায়ের কম্পন নিয়েই বিস্মিত হলো সে।হাতজোড়া দিয়ে ইচ্ছে মতো রক্তিমের বুকে কিল, ঘুষি বসিয়েও নিজেকে ছাড়ানো গেল না।রক্তিম বাঁকা হাসল।মিনিট কয়েক পর অদ্রিজার ঠোঁটজোড়া ছেড়ে দিয়েই ঠোঁট কাঁমড়াল।অদ্রিজা হাঁফাল।জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়েই দ্রুত গলায় বলে উঠল,

‘ সাহস কি করে হয় আপনার এরকম করার?’

রক্তিম আবার ঠোঁট টেনে বাঁকা হাসল।হাতজোড়া দিয়ে অদ্রিজার কোমড় আরো শক্ত ভাবে চেপে ধরেই মুখের দিকে ঝুকল।কানের কাছে গম্ভীর শান্ত গলায় বলল,

‘ আর কখনো ডিভোর্স শব্দটা উচ্চারণ করলে এই পানিশমেন্টই পাবেন বারবার।এবার আপনিই ডিসাইড করুন, এই শাস্তিটা উত্তম নাকি বারবার আলাদা হয়ে যাবেন, ডিভোর্স হয়ে যাবে এসব বলে বলে ঘ্যানঘ্যান করা উত্তম?’

অদ্রিজা রাগ ফুসল।মুখ ফুলিয়ে কিছু না বলেই চুপ রইল।ফর্সা ধবধবে মুখ লাল হলো মুহুর্তেই।হাতজোড়া দিয়ে ঠোঁট মুঁছতে মুঁছতেই চোখে মুখে বিস্তর ক্রোধ নিয়ে রক্তিমের দিকেই তাকিয়ে রইল সে।রক্তিম হাসল।ভ্রু নাচিয়েই বলে উঠল,

‘ আমি অনেক হ্যান্ডসাম আমিও জানি।আপনার এভাবে চোখ দিয়ে গিলে নেওয়ার কোন মানে হয় না তাই অদ্রিজা।দৃষ্টি সরান।’

অদ্রিজা দৃষ্টি সরাল না।ঠিক সেভাবেই জ্বলন্ত আভা চোখে ফুটিয়ে তুলে তাকিয়ে রইল।যেন এক্ষুনিই ভস্ম করে ফেলবে। রক্তিম ছোট্ট শ্বাস ফেলেই ভ্রু নাচাল। অদ্রিজার কোমড় থেকে হাত সরিয়ে নিয়েই বুকের বাম পাশটায় হাত রাখল। ঠোঁট কামড়ে বলল,

‘ উহ!এভাবে তাকাবেন না।এখানে লাগে আমার।’

অদ্রিজা চাহনি আরো ক্ষ্রিপ্ত করল।চোখমুখ টানটান করেই স্পষ্ট গলায় বলে উঠল,

‘ সমস্যা কি আপনার? আমার সত্যিই আপনাকে চরম রকম বিরক্ত লাগছে রক্তিম।অসহ্য লাগছে আপনাকে।আমি এতদিন স্বাধীন ছিলাম।আমার জীবনটা আমার মতোই অনুভব করেছি।আপনি এভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারেন না।আমার ইচ্ছে, অনিচ্ছা না জেনেই আমাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করবেন না।আমি আপনার সাথে কথা বলতে চাইছি না জেনেও বারবার এমন বিহেভ করছেন যেন আমি আপনাকে ভালোবাসি।আপনি কি ভাবেন,আপনার সেসব কথায় আমি লজ্জ্বায় লাল হয়ে বসে থাকব?মুখ নামিয়ে ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলব?একদম ভুল।আমি আপনাকে এখন আর ভালোবাসি না।ওটা কয়েকদিনের ভালোলাগা ছিল মাত্র।এর বাইরে কিছুই নয়।আর ঐ যে বলেছিলেন না সাহানুভূতি?সহানুভূতিই ছিল।সো আপনি কোন কথা বা কাজ দ্বারা আমায় বিব্রত করবেন না প্লিজ।আপনার সেসব কথায় বা কাজে কিছু যায় আসে না আমার।’

রক্তিমের চাহনি গম্ভীর হলো এবার।চুপচাপ সবগুলো কথা শুনেই মাথা দুলাল।গম্ভীর রাশভারী কন্ঠে বলল,

‘ সমস্যা নেই।কিছু যায় আসার পন্থা আমি খুঁজে নিব অদ্রিজা।আপনি অপেক্ষায় থাকুন।’

কথাটা বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল রক্তিম।অদ্রিজা ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল।রক্তিমের কথার ভাবার্থ বুঝতে না পেরেই চোখমুখে হতাশা নামল।এই লোকটা আসলে কি চায়?কি করতে চায়?কখনো গম্ভীর তো কখনো আবার চরম রকম বিরক্তিকর!কেমন জানি!

.

অত্রিয়ার কাঁধে ব্যাগ।চুলগুলো দুই ঝুটি করা।ছোট্ট বাচ্চা বাচ্চা চেহারাটা বড্ড মায়াময়।চিকন পাতলা ঠোঁটজোড়ায় হাসির রেশ।সকাল আটটায় প্রাইভেটের উদ্দেশ্যে বের হয়েই ছোট ছোট পায়ে হেঁটে যাচ্ছিল সে।হঠাৎ ঐ পেঁছন থেকে কেউ বলে উঠল,

‘ এই পুচকি?’

অত্রিয়া পা থামাল।মায়ময় চোখজোড়া দিয়ে চারদিক পর্যবেক্ষন করে ভ্রু কুঁচকাল।কন্ঠটা কার সেটা স্পষ্ট তার কাছে।ঘাড় ঘুরিয়ে পেঁছন ফিরেই লোকটাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিল সে।মৃদু গলায় বলল,

‘ আপনি?’

লোকটা এগিয়ে আসল।লম্বা চওড়া শরীরটা অত্রিয়ার কাছাকাছি এসে উপস্থাপন করতেই গম্ভীর হলো তার চোখমুখ।
কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকেই কি বলবে না বলবে হাঁসফাঁস করল।অত্রিয়া তা দেখেই ভ্রু কুঁচকাল।বিরক্তি নিয়ে বলল,

‘ কি হলো? কিছু বলছেন না যে রায়মান ভাইয়া?আপনি এখানে এই সকালবেলায় হঠাৎ কি উপলক্ষ্যে?’

রায়মান ছোট ছোট চোখ করে তাকাল।ঠোঁট টেনে হাসার চেষ্টা করেই বলল,

‘ তোমার জন্য।’

অত্রিয়া ভ্রু কুঁচকাল।চোখের দৃষ্টি সরু করেই জিজ্ঞেস করল,

‘ আমার জন্য?আমার জন্য কেন?’

‘ তোমার বয়স কত?’

রায়মানের আকস্মিক এই প্রশ্নে বিস্মিত হলো অত্রিয়া।চোখেমুখে তীব্র বিস্ময় নিয়ে কোমড়ে হাত রেখে রায়মানের দিকে তাকিয়ে থাকল। রায়মান বুঝতে পারল সাংঘাতিক ভুল করে ফেলেছে সে। মিনিট কয়েক চুপ থেকেই উঁশখুশ করে বলে উঠল,

‘ আই মিন, তোমার বয়স আঠারো হয়নি এখনো?স্যরি!ভুলে ঐ প্রশ্নটা বেরিয়ে গেছে মুখ থেকে।’

অত্রিয়া হতাশ হলো।এই লোকটা তাকে এতটা ভয় পায়? ঠোঁট চেপে রেখে মৃদু হাসল সে।টানটান কন্ঠে অন্যদিকে ফিরেই বলে উঠল,

‘ আঠারো হতে আরো দুই মাস বাকি। কেন?’

রায়মান আবারও অপ্রস্তুত হলো।মাথার চুলগুলো চুলকেই অপ্রস্তুত হেসে বলল,

‘ না মানে এমনিই।বাসা থেকে বিয়ে ঠিক করেছে তো তাই।’

অত্রিয়া চমকাল।ভ্রু জোড়া আরো কিছুটা সংকুচিত করেই পরক্ষনেই বলল,

‘ তো?’

‘ তো?কিছু না।বিয়েটা করে নিচ্ছি এই আরকি।তোমাকে বলতে এসেছিলাম।তুমি বড্ড ছোট আমার থেকে।নয়তো,’

‘ নয়তো?’

রায়মান মৃদু হাসল। বলল,

‘ কিছু না।বিয়ের বয়সটা হওয়া দরকার ছিল তোমার।এত পিচ্চি! ‘

অত্রিয়া কাঁটকাঁট চাহনিতে তাকাল।স্পষ্ট গলায় বলল,

‘ দুই মাস পর হবে আরকি।আপনার মতো আমার অতো বিয়ে নিয়ে তাড়া নেই ভাইয়া।আপনি বরং বিয়েসাদি করে নিন দ্রুত। আমাদের দাওয়াত দিবেন। ঠিকাছে? ‘

রায়মান ঠোঁট উল্টে হাসার চেষ্টা করেই বলল,

‘ আমার বিয়ে হলে খুশি তুমি?যার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতা তারই বিয়ে হয়ে যাবে আর তুমি বসে থাকবে?আমার বউ কিন্তু আমার দিকে অন্য কোন মেয়ের নজর পড়তে দিবে না।আগের মতো সেভাবে তাকাতেও পারবে না।’

‘ তো?’

‘ আপসোস হবে না আমাকে ড্যাবড্যাব করে না দেখতে পেরে?’

অত্রিয়া মৃদু হাসল। বলল,

‘ কেন হবে?দিনে কত ছেলের দিকেই ওভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকি তার হিসেব নেই। আপনি একজন তার মধ্যে না থাকলে এই আর এমন কি।নতুন আরো কতশত ক্রাশ হাজির হবে । আপনি বরং আপনার বউকে নিয়ে সুখে সংসার করুন ভাইয়া। শুভকামনা রইল।আসি তবে?প্রাইভেটে লেট হয়ে যাবে।’

রায়মান পথ আগলে দাঁড়াল।দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

‘ তুমি অন্য কোন ছেলের দিকেও এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকো অত্রি?’

অত্রিয়া ঠোঁট টিপে হাসল।

‘ হ্যাঁ!কতশত ছেলের দিকেই তো তাকিয়ে থাকি।কেন?আপনি কোন মেয়ের দিকে তাকান না? এতটা লয়্যাল?ওয়াও!’

রায়মান গম্ভীর কন্ঠে বলল,

‘ তাকাই।একজনের দিকেই।’

অত্রিয়া খিলখিলিয়ে হাসল।ঠোঁট চেপে বলল,

‘ আপনার হবু স্ত্রী রাইট?অনেক ভালো একটা হাজব্যান্ড পাবে সে।সত্যিই দুনিয়াতে এমন ছেলেও থাকে?আমি শকড!আপনাদের এই বিয়েতে সত্যিই খুব খুশি খুশি ফিল হচ্ছে ভাইয়া।এতটা ভালোবাসা দুনিয়ায় থাকে?’

রায়মান নিরাশ হলো।নিজের থেকেও সাত বছরের ছোট পিচ্চি এই মেয়েটির কথাবার্তা, চালচলন সবটাতেই হতাশ হলো সে।সকাল সকাল সেই হতাশায় মুখ কালো করল সে।গম্ভীর গলায় বলল,

‘ বিয়েটা করব না আমি।’

‘ ওমাহ!কেন?জোর করে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে নাকি আপনাকে?’

রায়মান মাথা দুলাল।যার অর্থ হ্যাঁ।অত্রিয়া আকাশসমান অবাক হয়েই চোখজোড়া বড়বড় করল।তীব্র বিস্ময় নিয়ে বলে উঠল,

‘ ওমাহ!সে কি!এটাতো খুবই ডেঞ্জারাস কেইস!এতদিন শুনেছি মেয়েদের জোর করে বিয়ে দিয়ে দেয়।এখন দেখছি ছেলেদেরও বিয়ে দিয়ে দেয়।ইউনিক! ‘

রায়মান আরও একধাপ হতাশ হলো।এই পিচ্চি মেয়েটার প্রেমে পড়াই চরম রকমের ভুল হয়েছে। ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকা সেই চাহনির মজা নিতে গিয়েই কবে যে এই মেয়েটাকেই ভালোবেসে ফেলল কে জানে!এমন পিচ্চি মেয়েকে ভালোবেসে ফেলা একদমই উচিত হয়নি তার।চরম মাফের ভুল। এই মেয়েকে যে সে ভালোবাসে এটা বুঝাতেই তো তার বছর পেরিয়ে যাবে।আশ্চর্য!

#চলবে…..

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here