#হয়ত
পর্ব:- ২৮
.
-‘ কিছু বললেন ভাইয়া?’
-‘ নাহ।’
-‘ কয়টার ট্রেনে যাওয়ার ইচ্ছা?’
-‘ সকালের।’
-‘ পালিয়ে যেতে চাইছ কেন, তাপোষি?’
-‘ কোথায় পালাবো ভাইয়া? কেনোইবা পালাবো? ‘
-‘ সেটা তো তুমি যান। একটা প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিবে?’
-‘ হুম বলুন।’
-‘ সত্যি অপেক্ষা করবে?’
তাপৌষির হয়ত এইমাত্র কোন ভ্রম কাটল। মন বলছে খুব বড় ভুল হয়ে গেছে ওর দ্বারা। রৌদ নিশ্চয় ওকে খুব খারাপ মেয়ে ভাবছে। এই রকম বেহায়ার মতো গান গাওয়া উচিত হয়নি।
-‘ ভাইয়া আপনি অনলাইনে টিকেট কেটে দিয়েন। আমার ব্যাগ গুছাতে হবে। আমি এখন উঠি, কেমন?’
রৌদ নিঃশব্দে হাসলো। মেয়েটাকে ওর মাঝে মাঝে বুদ্ধিমতী মনে হয় তো মাঝে মাঝে বড্ড বোকা মনে হয়।
-‘ অপেক্ষা করে কোন লাভ হবে না তাপৌষি। ভাইয়া অথৈকে কখনো ছাড়বে না। ইংরেজিতে একটি বাক্য আছে জানো, “Someone Somewhere Is Waiting For You….” ভাইয়ার জন্য অপেক্ষা না করে সেই সামওয়ানের জন্য অপেক্ষা করো।’
তাপৌষি উঠতে লেগেও রৌদের কথা শুনে বসে পড়লো।
-‘ আমি খুব ঘৃণ্য একটা কাজ করেছি তাইনা ভাইয়া?’
-‘ উঁহু। তবে বড্ড অসময়ে চলে এসেছ।’
-‘ আমার জীবনে তো সুসময়ের অস্তিত্বই নেই।’
-‘ কষ্ট হচ্ছে খুব? ভালোবাসা হয়ত এমনি। পোড়াবে, জ্বালাবে, প্রতিটা ক্ষণে তিক্ততা অনুভাব করাবে।’
তাপৌষি রৌদের কথার পিঠে কোন উত্তর করলো না। রাত প্রায় হয়ে এসেছে। দিশা, বর্ষণ এখনো কেউ আসেনি। আসলে ডিনারের জন্য ডাক পড়তো রৌদ, তাপৌষির।
.
গীটারের তারে আবার টুংটাং শব্দ করছে রৌদ। তাপৌষি চুপচাপ বসে আছে।
-‘ চার বছর আগে সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে আসার পথে আব্বা গ্রেফতার হয়েছিল ড্রাগ পাচারের অভিযোগে।’
তাপৌষি চমকে উঠে রৌদের কথায়। মুখ হা হয়ে যায়।
খালু জেলে ছিল? আর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, উনি ড্রাগ পাচারকারী?
রৌদ মনে হয় তাপৌষির মনের মধ্যে চলমান প্রশ্ন বুঝতে পারলো।
-‘ আব্বা ড্রাগ পাচারকারী নয় তাপৌষি। সেবার বাংলাদেশে ফেরার পথে সৌদি আরবে পরিচয় হওয়া এক বাংলাদেশি বন্ধু আব্বাকে কিছু জিনিসপত্র দেয়। কথা হয়েছিল এয়ারপোর্টে লোকটার পরিবারের মানুষের হাতে আব্বা সেই জিনিসপত্র দিয়ে দিবে। অন্যের জিনিস, আব্বা খুলেও দেখে নি প্যাকাটে কী ছিল।
সৌদি এয়ারলাইন্স টার্মিনালে দাঁড়ানো, বেল্টে লাগেজ দেওয়া, ইমিগ্রেশন পাড় করা থেকে চেক পোষ্ট অবধি অল ক্লিয়ার ছিল। কিন্তু যখন রানওয়ে তে যাওয়ার আগে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল তখন একদল এন্টি নার্কোটিক্স অফিসার আব্বাকে ধরে নিয়ে যায়। আব্বার লাগেজে নিষিদ্ধ কোকেন পাওয়া যায় সেই জিনিস পত্রের ভিতরে। আব্বার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে ড্রাগ পাচারের। মাত্র পরিচিত একজনকে ফোন করার সুযোগ দিয়েছিল ওরা। আব্বা ভাইয়াকে ফোন করে। সেই একটি ফোন কল আমাদের জীবন ওলট পালট করে দিয়েছিল, তাপৌষি। কী করবো আমরা কেউ বুঝতে পারছিলাম না। আম্মার শরীর খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বেড়ে অবস্থা খুব ক্রমাবনতিশীল। ভাইয়া, চাচা সবাই তখন আব্বাকে ছাড়াতে দৌড়া দৌড়ি করছে। ঠিক সে সময় আমাদের পাশে সাহায্যের হাত বাড়ায় অথৈর বাবা। কাস্টমসের কোন বড় অফিসার তার বন্ধু ছিল। তিনি আব্বাকে ছাড়াতে সাহায্য করেন। আব্বা ছয় মাসের মাথায় সমস্ত অভিযোগ থেকে রেহাই পায়। আব্বার মুক্তির বিনিময়ে ভাইয়া অথৈকে বিয়ে করতে রাজি হয়।’
তাপৌষি চুপ হয়ে শুনছে। এরা বর্ষণের সওদা করেছে। একজনের মুক্তির বদলে অন্য জনের বন্দি দশা। বাহ, চমৎকার জীবন!
-‘ খালু দেশে চলে আসছে না কেন?’
-‘ খুব অল্প বয়সে আব্বা প্রবাসে পাড়ি জমায়। ওদেশের জীবনযাত্রাতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। সেই পর ছয় মাস দেশে ছিল। কিন্তু এর বেশি থাকতে পারেনি।’
-‘ কত সুন্দর নিয়ম তাইনা?’
-‘ মানে?’
-‘ এই যে মুক্তির বদলে বন্দি। যাই উঠি আমি। ‘
-‘ অপেক্ষা করে লাভ নেই তাপৌষি।’
-‘ দেখি একবার। লাভ তো হয়েও যেতে পারে।’
.
দিশা, বর্ষণ ফিরেছে রাত আটটার দিকে। হাত মুখ না ধুয়েই দিশা খাবার টেবিলে বসে গেছে। ওর প্রচুর খিদা লেগেছে। বান্ধবীর মা অবশ্য খেয়ে আসতে বলেছিল। তবে দিশা ফর্মালিটি দেখিয়ে খাবেনা বলেছিল। ভদ্রমহিলা একবার জিজ্ঞেস করে আর জিজ্ঞেসই করেনি। এ কেমন মানুষ রে বাবা? জিজ্ঞেস করলে তো দিশা খাওয়ার জন্য হ্যাঁ বলে দিতো।
বর্ষণ হাত মুখ ধুয়ে এসে দিশার মাথায় টোকা মারল। চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলল,
-‘ যা হাত মুখ ধুয়ে আয়।’
-‘ আগে খেয়ে নেই…তারপর।’
-‘ গিধড় একটা।’
-‘ আমি রাতের বেলা হুক্কা হুয়া, হুক্কা হুয়া করে বেড়াই না।’
-‘ যা ভাগ।’
বর্ষণ অথৈর দিক তাকিয়ে বলল,
-‘ মা কোথায়?’
-‘ রান্নাঘরে।’
-‘ রৌদ, তাপৌষি এরা কোথায়?’
-‘ দিশার ঘরের বারান্দায়। প্রাইভেট গল্প করছে দুজন সেই সন্ধ্যা থেকে।’
দিশা প্লেটে ভাত বাড়তে বাড়তে অথৈর দিকে তাকাল। ওর মনে হলো অথৈ খুব খারাপ ভাবে তাপৌষি, রৌদের সম্পর্কটা বর্ষণের সামনে প্রেজেন্ট করতে চাচ্ছে।
বর্ষণ উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
-‘ আমি ডেকে নিয়ে আসছি। তোমরা খাওয়া শুরু করো।’
.
-‘ গীটার বাজানো কে শিখিয়েছে তোমাকে?’
-‘ গানের স্কুলে শিখেছিলাম।’
-‘ তুমি গান শিখতে?’
-‘ হুম। মা ভর্তি করিয়ে দিয়েছিল। কেন কী হয়েছে?’
-‘ আমি ভেবেছি গড গিফটেড গলা তোমার।’
-‘ ক্লাস এইটে ভর্তি হয়েছিলাম। নাইন অবধি শিখেছি। তারপর বন্ধ করে দেই। এর আগ অবধি মায়ের কাছেই শিখেছি।’
.
বর্ষণ বারান্দায় যখন প্রবেশ করলো তখন দেখতে পেলো রৌদ তাপৌষির ওড়নার নিচে লাগানো ঝলরগুলো নাড়াচাড়া করছে আর কী যেন বলছে। ভ্রু যুগল আপনা আপনি কুচকে গেল বর্ষণের। বড় বড় কয়েকটা কদম ফেলে এগিয়ে এলো রৌদ- তাপৌষির সামনে।
-‘ ডিনারের সময় পাড় হয়ে যাচ্ছে। এখানে বসে কীসের গল্প হচ্ছে?’
বর্ষণের গলায় রাগের অনল স্পষ্ট। রৌদ একবার বর্ষণের মুখের দিকে তাকাল। তারপর তাপৌষির ওড়না ছেড়ে হাতের আঙুল দিয়ে মাথার চুলগুলো ঠিক করে নিল। শেষে বলল,
-‘ যাচ্ছি। ‘
তাপৌষি বর্ষণকে দেখে আগেই জড়সড় হয়ে বসেছে। এই মানুষটার মুখের দিকে তাকাতেও ভয় লাগছে ওর। ও ধীরে রৌদের পাশে থেকে উঠে দাঁড়াল। ছোট ছোট পা ফেলে এগিয়ে যেতে লাগলো দিশার ঘরে। তবে যাওয়ার আগে ও একবার পিছন ফিরে বর্ষণের দিক চেয়েছিল। বর্ষণ তখন দেখতে পেয়েছিল তাপৌষির অন্তরাত্মার কষ্ট। চোখ, মুখ, নাক, কান লাল হয়ে গেছে তাপৌষির। ঘোলাটে দৃষ্টি, অনবরত কম্পমান ঠোঁট দেখে বর্ষণের মনের কোথাও সুরের তাল কাটল এইমাত্র। ও চোখ ফিরিয়ে নিল তাপৌষির দিক থেকে।
.
-‘ কী করছিলি তুই তাপৌষির সাথে এখানে? কী কথা হচ্ছিল তোদের মধ্যে? ওর ওড়না তোর হাতে ছিল কেন?’
-‘ রিল্যাক্স ভাইয়া। ওড়না ছিলনা। ওড়নার নিচে লাগানো ঝালর ছিল। আর তা ছাড়া আমি আমার খালাতো বোনের সাথে কী কথা বলবো তা তোমাকে জানাতে হবে? কে হও তুমি ওর? বয়ফ্রেন্ড নাকি জামাই?’
-‘ রৌদ বেয়াদবি করবি না।’
-‘ দুই নৌকায় পা দিয়ে চলা যায় না ভাইয়া। আসি, খেতে যেতে হবে।’
.
ডাইনিং টেবিলে তাপৌষির রাজশাহী যাওয়ার কথা উঠতেই তনয়া বেগম রেগে গেলেন। উনার মতে তাপৌষির আসার কয়েকটা দিন হয়েছে মাত্র। এর মধ্যে চলে যাওয়ার কোন মানেই হয় না। উনি নিজে ফরিদ সাহেবের সাথে কথা বলবেন বলে জানালেন। কিন্তু তাপৌষি নিজের সিদ্ধান্তে অটল। ও তনয়া বেগমকে রাজি করিয়ে ছেড়েছে।
বর্ষণ বুঝতে পারছে না ও ঠিক কী রিয়্যাকশন দিবে। এক দিক দিয়ে দেখতে গেলে ভালোই হবে। তবে কোথাও মনে হচ্ছে অপূর্ণতা থাকছে। মন চাইছে না তাপৌষিকে যেতে দিতে।
.
ঘড়িতে এখন সময় রাত এগারোটা বেজে বিশ মিনিট। তাপৌষি ডাইনিং এর বড় জানালাটার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ও আজ তনয়া বেগমের সাথে ঘুমাবে। দিশা, অথৈ এতক্ষণে গেট লাগিয়ে দিয়েছে। রৌদ সকালের কোন টিকিট পায়নি। তবে দুপুরে ২:৩০ এ সিল্কসিটি ট্রেনের টিকেট পাওয়া গেছে।
-‘ উঁহু উঁহু।
তাপৌষির থেকে একটু দূরে বর্ষণ দাঁড়িয়ে আছে। ডাইনিং অন্ধকার হলেও জানালা দিয়ে আসা আলোয় তাপৌষির বর্ষণকে চিনতে অসুবিধা হচ্ছে না।
-‘ কী করছো অন্ধকারে?’
-‘ এমনি দাঁড়িয়ে ছিলাম। অনেক রাত হয়ে গেছে না? যাই ঘুমাতে যাই। ‘
এতো দিন বর্ষণ তাপৌষির থেকে পালিয়ে পালিয়ে থেকেছে। আজ তাপৌষি বর্ষণের থেকে পালাচ্ছে।
-‘ কিছু কথা ছিল তাপৌষি।’
-‘ বলুন।’
-‘ আসো সোফায় বসি।’
-‘ না দাঁড়িয়ে থেকেই আমি বেশি কমফোর্টেবল ফিল করছি। আপনি বলুন।’
-‘ রাজশাহী যাচ্ছ কী কাজে জানতে পারি?’
-‘ না। বিষয়টা একান্ত ব্যক্তিগত।’
-‘ রুডলি কথা বলছো তুমি।’
-‘ সরি।’
-‘ ইট’স ওকে। তোমার ফোন নম্বর দাও তো।’
-‘ কেন?’
-‘ কেন মানে কী? যোগাযোগ রাখবো।’
-‘ নাহ কোন দরকার নেই। পিছুটান রাখতে ইচ্ছুক নই।’
-‘ আমি পিছুটান?’
-‘ উঁহু। শুধু পিছুটান নয়। সবচেয়ে বড় পিছুটান। আমি মনে হয় খুব বোকা। এই যে আপনি আমার সাথে কথা বলছেন, আমি মনে করছি আপনি আমাকে ভালোবাসেন। অথচ আপনার বিয়ে অথৈ আপুর সাথে ঠিক করা। আমি সব জেনেও বোকার মতো সব ভুলভাল বিষয় গুলোকে প্রশ্রয় দিচ্ছি। এই যে আপনার আমার মাঝে কিছু আছে এমন ফাউল টাইপ মনোভাব নিজের মনের মধ্যে পোষন করছি। বড্ড বোকা আমি তাইনা?’
-‘ তুমি বোকা নও তাপৌষি। সরি, আমার আগে জানানো উচিত ছিল। তবে আমি তোমাকে কখনো কোন মিথ্যা আশা দেইনি।’
-‘ তাই তো। এই এম রিয়েলি সরি..ভুল হয়ে গেছে। কাল তো চলেই যাব। আর এই ভুলভাল কথা বলবো না কখনো।’
-‘ কেন এমন করছো তাপৌষি?’
তাপৌষি বর্ষণের সামনাসামনি খুব কাছাকাছি এসে দাঁড়াল। মধ্যিখানে মাত্র পাঁচ ইঞ্চির মতো জায়গা।
-‘ আমি কী আপনাকে একবার জড়িয়ে ধরতে পারি? শেষ ইচ্ছা বলতে পারেন।’
বর্ষণ মুখ ডান দিকে ঘুরিয়ে ফেলেছে। তাপৌষির সুন্দর মুখটা ওকে দুর্বল করে দিচ্ছে। ও অথৈর সাথে অন্যায় করতে পারবে না। হাত জোর দিয়ে মুষ্টিবদ্ধ করে রেখে উত্তর দিল,
-‘ না পারোনা।’
-‘ তাহলে আমি কী আপনার জন্য অপেক্ষা করতে পারি?’
-‘ না। অপেক্ষাতে কোন লাভ হবে না।’
বর্ষণও আজ লাভ-ক্ষতির হিসেব করছে। চোখের কোণে জমে থাকা পানি বাম হাত দিয়ে মুছে ফেলল তাপৌষি। একটু হাসার চেষ্টা করে বলল,
-‘ ভালো থেকেন, সুখী পরিবার হোক আপনাদের। শুভ কামনা রইল।’
আজ বর্ষণের কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে খুব দামি কোন কিছু ওর কাছে থেকে চলে যাচ্ছে। মুষ্টিবদ্ধ হাত অবশ হয়ে আসছে। হঠাৎ ও নিজেই তাপৌষিকে বুকে টেনে নিল।
-‘ আর কয়েকটা বছর আগে এলেনা কেন তাপৌষি? জাস্ট কয়েকটা বছর আগে আসতে। এখন এসে আমার শূন্য হৃদয়কে কেন পোড়াচ্ছ? পারছি না আমি কোন কিছু সহ্য করতে। আমি ভিতরে ভিতরে মুষড়ে পড়ছি। মনে হচ্ছে বাঁচবো না তোমাকে ছাড়া। কেন এলে এত দেরিতে? আগে এলে খুব ক্ষতি হয়ে যেত? কীভাবে ভালোবেসে ফেললাম জানি না। সত্যি জানিনা। নিজেকে সব সময় তোমার থেকে দূরে রাখেছি। তাও…..তাও ভালোবেসে ফেলেছি। তবে….তবে আমি অন্যায় করতে পারবো না তাপৌষি। তোমাকে আপন করে নেওয়া মানে অন্য কারও সাথে অন্যায় করা। ‘
বর্ষণ কাঁদছে। ওর চোখের পানি তাপৌষির কাঁধে পড়ছে। আজ দুজনের নয়নের অশ্রু, চাপা কষ্টগুলোকে হৃদয় থেকে বের করে দিচ্ছে।
-‘ আমিও যে চাইনা আপনি অন্যায় করুন। দ্বিতীয় শুভ্রা হতে আমি পারবোনা বর্ষণ।’
তাপৌষি এই প্রথম বর্ষণের নাম ধরে ডাকলো। কান্নাকান্না কণ্ঠস্বরে বর্ষণের নিজের নাম তাপৌষির মুখ থেকে শুনতে খুব ভালো লাগছে। প্রথম ভালোবাসা, প্রথম স্পর্শ, প্রথম ভালোলাগা এক কথায় প্রথমবারের সব কিছুই মনে দাগ কেটে যায়। বর্ষণ আরও শক্ত করে তাপৌষিকে জড়িয়ে ধরলো। মনে হচ্ছে একটু হলেই তাপৌষি পালিয়ে যাবে।
.
তাপৌষি বর্ষণের কাছে থেকে দূরে সরে আসলো। আজ আর দুর্বল হলে চলবে না। ও দুর্বল হলে বর্ষণ বিপাকে পড়বে। এই সংসারে অশান্তি হবে। বর্ষণ একবারের জন্যও ওকে থেকে যেতে বলেনি। নিজের জীবনে তাপৌষিকে চলার পথের সঙ্গী হিসেবে চায়নি। তাপৌষি তো আর জোর করতে পারে না।
ঘরের দিকে যাওয়ার আগে তাপৌষি দুপায়ের গোড়ালি উঁচু করে দাঁড়িয়ে বর্ষণের কপালে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ালো।
-‘ ভালো থাকবেন।’
এই রাতটা বড়ই তমসাচ্ছন্ন। দুটি মানুষ, দুটি ভিন্ন আত্মা, দুটি ভিন্ন হৃদয়…অথচ আজ মনে হচ্ছে দুই আর দুই এ সব মিলিয়ে যেন এক হয়ে যাচ্ছে। চোখের জলে বালিশ ভিজছে দুজনেরই। তবে কিছু করার নেই কারও। এই জন্মে ভালোবাসার স্বাধ পেয়েও ভালোবাসা হারানোর কষ্ট তিলেতিলে শেষ করছে বর্ষণ-তাপৌষি নামের দুজন মানুষকে। হয়ত ভালোবাসা সত্যি মন পোড়াবে, অন্তর জ্বালাবে….. শেষে ভালোবাসার অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। বিচ্ছেদের পরও কী ভালো থাকবে দুজন?
.
.
চলবে…