#অদ্ভুতুড়ে
পর্ব-৫
বাবার ক্ষমতার জোরেই হোক আর অন্য কারনে হোক আমি জেল থেকে ছাড়া পেলাম দিন তিনেকের মধ্যে। প্রমাণ হলো যে লুনা যেদিন মারা গেছে সেদিন আমি ঘর থেকে বেরিয়েছি বিকেলের পর। আর পূর্বের ঘটনার কারনে এলাকার অনেকেই বলল যে আমার উপর ভালো জ্বীনের আছড় আছে বলে আমি সব ঘটনা আগে থেকেই টের পাই। কিন্তু পুলিশ সেসব জ্বীন-ভূত আমলে নিলো না খুব একটা। কিন্তু লুনাকে যারা খুন করেছে তাদের মধ্যে একজন কে পুলিশ প্রমাণসমেত হাতেনাতে ধরে ফেলেছে। লুনার ভাইয়ের ওই টিচার ই সেদিন নির্জনে গিয়েছিল লুনাকে নিয়ে হঠাৎ ফোন আসায় সে একটু দূরে চলে যায় কিন্তু পিছু ফিরে আর লুনাকে দেখতে পায় না। এমনকি ফোন করেও লুনার ফোন বন্ধ পায় তাই শেষমেস ফিরে যায়।
পুলিশ যা’কে লুনার খুনের সন্দেহে আটক করেছে সে লুনার পূর্ব পরিচিত। তার সাথেও লুনার প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। লুনা কোনো কারন ছাড়াই ছেলেটার সাথে সম্পর্ক শেষ করে তাই ছেলেটা রিভেঞ্জ নেয়ার জন্য ই বন্ধুদের নিয়ে লুনাকে তুলে নিয়ে যায়।
এসব কিছুই খুনী নিজে এসে স্বীকার করেছে। আমার কেন যেন মনে হলো অনু স্বীকার করতে বাধ্য করেছে বলেই ছেলেটা স্বীকার করেছে।
আমি বাড়ি ফেরার পর বাবা, মা ঘোষণা দিলেন যে আমাকে আর এদেশে রাখবেন না। আমেরিকা আমার মামার কাছে পাঠিয়ে দেবেন যত দ্রুত সম্ভব। আমি অনেক চেষ্টা করেও বাবা মা’কে তাদের সিদ্ধান্ত থেকে একচুল পরিমাণ ও নড়াতে পারলাম না। রাগে, দুঃখে আমার চোখে পানি এসে গেল। এইসব কিছু হয়েছে অনুর জন্য। অনু যেমন আমাকে দেখা দেয় তেমনি অন্যদেরও দিতে পারেনা! তাহলে তো আর আমাকে ঝামেলায় পড়তে হতো না। আমার বিদেশে যাওয়া নিয়ে ভাইয়ারও সাপোর্ট ছিলো। সে বলল, লাইফে জটিলতা না চাইলে দূরে চলে যাওয়াই ভালো হয়।
আমার ভীষণ রাগ হতে লাগলো। আমি মনে মনে অনুকে অনেকবার ডাকলাম। কিন্তু অনুর সাড়া পেলাম না। অনু এলো মাঝরাতে। কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল, ফাহিম আমি এসেছি।
আমার ঘুম ভেঙে গেল সাথে সাথেই। আমি উঠে বসে জিজ্ঞেস করলাম, এবার তোমার শান্তি হয়েছে?
অনু একটু হাসলো। সেই হাসির শব্দে আমার আরও রাগ লাগলো। আমি রাগী গলায় বললাম,
-তুমি আসলে কী চাও আমার কাছে?
-ফাহিম তুমি কিন্তু আমাকে কথা দিয়েছিলে যে আমাকে সাহায্য করবে।
আমার মনে পড়লো প্রমিসের কথা। আমি বললাম,
-বলো তোমার কী চাওয়ার আছে?
-ফাহিম আমার মৃত্যুটা যে স্বাভাবিক না সেটা কী তুমি বুঝতে পারছো?
আমি বেশ অবাক হলাম। আসলেই তো! অনুর মৃত্যুর ব্যাপারে আমি তো কখনো কিছু জানতে চাই নি।
আমি তোতলানো গলায় বললাম, তোমার মৃত্যুটা কীভাবে হয়েছে?
-আমি সুইসাইড করেছিলাম ফাহিম।
আমি আবারও অবাক হলাম। বিস্মিত গলায় বললাম কি?
-হ্যাঁ। আসলে সুইসাইড করতে বাধ্য হয়েছিলাম।
-কেন?
-সে এক লম্বা ঘটনা ফাহিম।
-যদি সমস্যা না থাকে তাহলে আমাকে বলো।
-বলবো ফাহিম। তোমাকে বলবো বলেই কিন্তু এতোসব কিছু।
-মানে? আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
-ফাহিম তুমি আগে তোমার মন কে শক্ত করো। আমি এমন কিছু তোমাকে বলতে যাচ্ছি যেটা শোনার পর তোমার মন মানতে না ও চাইতে পারে।
আমি কেমন যেন এক গোলক ধাধায় পড়ে গেলাম। কিছুই বুঝতে পারলাম না। তবে খুব ভয় লাগতে শুরু করলো। মন বলছে কিছু একটা খারাপ ঘটতে যাচ্ছে।
অনু আবারও বলল, ফাহিম তুমি হচ্ছো সরল মনের মানুষ। একদল মানুষ আছে যারা পার্থিব অপার্থিব কোনো কিছু নিয়েই ভাবে না। কোনো কিছুর মধ্যে কিন্তু ও খুঁজে বেড়ায় না। জগতের কোনো ব্যাপারে খুব একটা ইন্টারেস্ট থাকে না। তুমি হচ্ছো সেই ধরনের মানুষ।
আমি বিমূঢ় গলায় বললাম, আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
-তুমি কোনো কিছু বুঝতে চাও না তাই বুঝতে পারো না।
আমি চুপ করে বসে রইলাম। অনেকক্ষন পর বললাম, তুমি কী আমাকে ব্যাপার টা বলবে? আমি কিছু ভাবতে পারছি না।
-আমি আজ তোমাকে কিছুই বলবো না ফাহিম। শুধু একটা কথাই বলবো। তোমাদের বাড়িতে অনেক অনেক রহস্য আছে। তুমি সেটা বুঝতে পারছো না।
-কী রহস্য?
-একটা রহস্য হচ্ছে আমি মরে গিয়েছিলাম ছাদ থেকে লাফ দিয়ে পড়ে গিয়ে। আমি ছাড়াও আরও একজন এভাবে মারা গেছে। তাদের লাশ তোমাদের বাড়ির আশেপাশে আছে। তোমার কাজ হচ্ছে যে করে হোক সেটা খুঁজে বের করা।
আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। বললাম,
-আমি এসব কীভাবে করবো? আমি এমনিতেই অনেক সমস্যার মধ্যে আছি অনু।
-উঁহু ফাহিম। এরকম কোনো কথা কিন্তু ছিলো না। তুমি আমায় কথা দিয়েছিলে।
-তাই বলে এরকম? তাছাড়া তুমি বলে দিলেই তো ব্যাপার টা সলভ হয়ে যায়।
-আমি বলে দিলে যদি সলভ হতো তবে আমি আগেই বলে দিতাম। আমি চাই ব্যাপার টা তুমি নিজে থেকে সলভ করো।
-কীভাবে?
-সেটা তুমি ভেবে বের করো।
-একটা তো ক্লু দাও অন্তত।
অনু বিচিত্র ভঙ্গিতে হাসলো। হেসে বলল, তোমাদের বাড়ির সবচেয়ে রহস্য আছে কার মধ্যে জানো?
-কার মধ্যে?
-তোমার ভাইয়া। এটাই তোমার জন্য বড় ক্লু ফাহিম।
আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে সারারাত বসে রইলাম। কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। অনু’সহ আরও একজনের লাশ আমাদের বাড়ির আশেপাশে আছে কিন্তু সেটা আমি কীভাবে খুঁজে বের করবো। আর ভাইয়াকে নিয়ে কী ক্লু দিয়ে গেল!
হঠাৎই আমার মাথা খুলতে শুরু করলো। আচ্ছা অনু কীভাবে মারা গেছে সেটা তো আমি একবার ও জিজ্ঞেস করিনি। ও বলেছে ও সুইসাইড করতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু সেটা কেন?
আমি অনুকে অনেকবার ডাকলাম। বুঝলাম যে ও নিজে না চাইলে আসবে না। আর ও যেহেতু আসছে না সেহেতু বাকী রহস্য আমাকেই উদঘাটন করতে হবে।
আমি ওর দেয়া ক্লু নিয়ে দিনরাত ভাবতে থাকি। ভাইয়াকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে থাকি। কিন্তু কোনোভাবেই কোনো কিছু মেলাতে পারি না।
দুদিন পর আমার চোখের সামনে হঠাৎই যেন সব টা পরিস্কার হয়ে গেল। ভাইয়া রাতে ঘুমায় না। আগে ভাবীর সাথে ফোনে কথা বলে সময় কাটাতো আর এখন সময় কাটায় টিভি দেখে। এই ব্যাপার টা কী কাকতালীয়! রুবা আপুও রাতে ঘুমাতো না। তার ঘুমে সমস্যা ছিলো। প্রায় ই দেখা যেত সকালে গোসল করতো রাতের ঘুম না হওয়ার জন্য।
হঠাৎই চলচ্চিত্রের মতো চোখের সামনে একটা ব্যাপার ভেসে আসলো। যে রাতে গ্যাস লিক হওয়ার ঘটনা ঘটে সে রাতে রুবা আপু বলেছিল দিলি তো ঘুম নষ্ট করে। আর দক্ষিণ পাড়ায় আগুন লাগার দিন ও তো সে ঘুমিয়ে ছিলো। তাহলে তার ইনসমনিয়ার ব্যাপার টা মিথ্যে!
এসব ভাবার সময় হঠাৎই অনুর কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম। ওয়েল ডান ফাহিম। তুমি ঠিক দিকে যাচ্ছ।
চলবে……
(কাল এক পর্ব)