অদ্ভুত মুগ্ধতা -২ পর্ব ১০

অদ্ভুত মুগ্ধতা -২
পর্ব ১০
মিশু মনি
.
“আজ আমার বিয়ে। আজ এমন এক ধরণের অনুভূতি হচ্ছে যা একদম নতুন। বুকের ভিতরে এক ধরণের পূর্ণতা একইসাথে শূন্যতাও কাজ করছে। যে মানুষ টাকে আমি পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী ভরসা করি,আর সবচেয়ে বেশী ভালোবাসি তার সাথেই আমার বিয়ে হচ্ছে। এখন আমার মত সুখী বোধহয় কেউ নেই! কারণ আমি জানি আমি সত্যিই একজন ভালো মানুষ কে পেয়েছি। যে মানুষ টা রাতের পর রাত আমাকে একা পেয়েও নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে, যে মানুষ টাকে কাছে টেনে নিলেও সে সময়কে উপভোগ করতে চায়না। তার কাছে বিশুদ্ধতা সবার আগে। এরকম একটা মানুষ কে পেয়ে আমি সত্যিই অনেক বেশী খুশি। এতটা ভালো কখনো লাগেনি। এই একটা মাত্র মানুষ কেই আমি আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ অধ্যায় টার কথা বলেছি। এই একটা মানুষ কেই আমি ভালোবেসেছি, ওকে ছাড়া একটা সেকেন্ড ও আমার ভালো লাগেনা।এখন থেকে সবসময় আমি ওর সাথে থাকবো, সবসময়, সবসময়, সবসময়। কারণ আমি সবসময় ওকে চাই…..
এ পর্যন্ত লিখে আর লিখতে পারলো না মিশু। এখন আর কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে না। সব অনুভূতি প্রকাশ করা যায়না। ও ডায়েরি বন্ধ করে রেখে জানালার পাশে এসে দাঁড়ালো। এই জানালার সাথে একটা মজার স্মৃতি জড়িয়ে আছে। মাত্রার বিয়ের দিন এই জানালার পাশে দাঁড়িয়েই তো মৈত্রী ওকে প্রথমবার ভালোবাসি বলেছিলো!
মিশু মুচকি হেসে পিছন ফিরে তাকিয়ে চমকে উঠলো। মৈত্রী খালি গায়ে টাওয়েল পড়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেখেই মিশুর ইচ্ছে করছে একদম গিয়ে জড়িয়ে ধরতে। ওর বুকের লোমগুলো কি সুন্দর! হাত দিয়ে ছুঁতে ইচ্ছে করছে। আর নাভীর উপরেও হালকা লোম,দেখলেই শরীর শিউড়ে উঠে। মিশুর চোখ চলে গেলো মৈত্রীর পায়ের দিকে। পায়েও ভেজা লোমগুলো লেপ্টে রয়েছে। কি সুন্দর! কি সুন্দর!
মিশুকে এরকম ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আজ একটু ও লজ্জা হলোনা মৈত্রীর। বরং বেশ ভালো লাগলো। ওর ইচ্ছে করছে মিশু আরো অনেক্ষণ তাকিয়ে থাকুক এভাবে। কিন্তু সেটা তো এখন হয়না, মেয়েটার মাথা খারাপ আছে।
মৈত্রী মুচকি হেসে বলল, এ ঘরে কি?
– বারে, আমি বুঝি আসতে পারিনা?
– পারো, কিন্তু তুমিতো একটু আগেই বলেছো আর আসবা না।
মিশু লজ্জা পেয়ে বলল, ওটা তো আমি রাগ করে বলেছি।
– ওহ আচ্ছা।
মিশু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে মৈত্রীর দিকে। মৈত্রী হাসতে হাসতে বলল, মিশু ভাই এভাবে তাকাস না প্লিজ।আর তো মাত্র আধা ঘন্টার ব্যাপার। বিয়েটা করতে দে শান্তিমত। তারপর যত মনচায়, দেখিস।
মিশু লজ্জা পেয়ে হাসলো। তারপর মাথা নিচু করে বেড়িয়ে গেলো ঘর থেকে। মৈত্রী টেবিলের উপর তাকিয়ে দেখলো ডায়েরি রাখা। ও এগিয়ে এসে ডায়েরির পাতা উলটে মিশুর এইমাত্র লিখে রাখা কথাগুলো পড়ে ফেললো। পড়ার পর কেমন যেন মায়া কাজ করছে মিশুর প্রতি। মেয়েটা সত্যিই খুব ভালোবাসে ওকে!
তারপর খুশিমনে পাঞ্জাবী পড়ে ফেললো। হঠাৎ ঘুম ভাঙিয়ে দিয়ে বিয়ের সারপ্রাইজ দিলে সত্যিই খুব ভালো লাগে। অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে! দারুণ উত্তেজনা!
মৈত্রী কালো জিন্সের সাথে খয়েরী রঙের পাঞ্জাবী পড়লো। তারপর আয়নায় তাকিয়ে দেখলো আয়নার উপর একটা চিরকুট ঝুলছে। ও চিরকুট টা হাতে নিয়ে দেখলো, তাতে লেখা “দারুণ লাগছে!”
হাসি পেলো খুব। মিশুটা আচ্ছা পাগলী তো! ১৩ বছরের সিনিয়র একটা লোককে বিয়ে করতেও ওর এত আবেগ! এত ভালোবাসে কেন মেয়েটা?
তানিন ল্যাপটপে কিছু ছবি ইডিট করছিলো। এমন সময় ফোন বেজে উঠলো। ও স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখল বাবা ফোন করেছে। এত রাতে বাবার কল! বুকটা ধক করে উঠলো। ও রিসিভ করে বলল, হ্যা আব্বু।
– মা, একটা কাজ করে ফেলছি তোদের ছাড়া। রাগ করিস না।
– কি কাজ আব্বু?
– মৈত্রীর বিয়ে পড়াবো এখন।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


তানিন অবাক হয়ে বলল,সেকি! আমিতো সকালেই বেরোলাম। কই তখন তো এসব কিচ্ছু শুনলাম না।
– আসলে সিদ্ধান্ত টা নিলাম রাতে।হঠাৎ করেই..
– ওহ আচ্ছা। দিয়ে দাও,আমরা এখান থেকে দুয়া করে দিচ্ছি।
– হ্যা মা। মর্মকে ফোন দিয়ে পেলাম না, ওকে বলিস একবার মৈত্রীকে কল দিতে।
– আচ্ছা। মিশু বউ সেজেছে?
– হুম,লাল শাড়ি পড়েছে।
– ইস! আমার কলিজার টুকরা মেয়েটা। আব্বু ওকে কেমন দেখাচ্ছে? অনেক মিষ্টি তাইনা?
– হ্যা, একদম পুতুলের মতন।
– ইস! আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। ওর কিছু ছবি তুলে মেসেঞ্জারে পাঠিয়ে দাও তো,তুমি বিজি থাকলে খুজিন্তাকে বলো।
– আচ্ছা দিবো। এখন একটু মর্মকে জানা জলদি।
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব ফোন রেখে দিলেন। ফোন রাখতেই মর্ম’র জন্য মন কেমন করতে লাগলো। ছেলেটা মিশুকে অনেক পছন্দ করেছিলো। যদিও সেটা সাফায়েত উল্লাহ সাহেব আর মিশু ছাড়া কেউই জানেনা। কিন্তু তবুও মনের ব্যাপার তো! হয়ত মিশুর বিয়ের কথা শুনে মর্ম’র একটু খারাপ লাগবে। লাগাটাই তো স্বাভাবিক, তবে মর্ম তো নিজেই এই সিদ্ধান্ত দিয়েছে। খারাপ নাও লাগতে পারে।
এসব ভাবতে ভাবতে উনি মিশুর ছবি তোলার জন্য বেড়িয়ে আসলেন।
তানিন মর্ম’র ঘরে গিয়ে দুবার ডাকতেই মর্ম উঠে এসে বলল, এত রাতে কি চাস?
– ভাইয়া, বড় ভাইয়ার বিয়ে হচ্ছে।
– মানে!
– হঠাৎ ই বিয়ে পড়িয়ে দিচ্ছে।
– ওহ,কারণ কি?
– জানতে চাইনি, এটা ওদের ব্যাপার। বিয়েটা হচ্ছে এটুকু আমাদের জানা দরকার, জেনেছি। এখন দুহাত তুলে দুয়া কর ওদের জন্য।
মর্ম হেসে বলল, একগাদা বাচ্চাকাচ্চা হোক ওদের। হা হা হা।
তানিন ও হেসে বলল, তোর ও হবে। তোর আরো দুই হালি বেশি হবে।ভাইয়াকে কল দিস একটু..
বলেই হাসতে হাসতে নিজের রুমে চলে গেলো। মর্ম দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ। মিশুকে বউয়ের সাজে কেমন লাগছে দেখতে ইচ্ছে করছে ভীষণ! জীবনে এই একটা মেয়েকেই ও এতটা ভালোবেসেছিলো। সে যাই হোক, মৈত্রী ভাইয়ার মত একজন ছেলের সাথে মিশুর বিয়ে হচ্ছে এটা খুবই খুশির কথা! কারণ,মিশু পাগলীর জন্য মৈত্রীর মত একজন ডাক্তারকেই দরকার ছিলো। তাছাড়া মৈত্রী হচ্ছে হাজারে একটা ছেলে,এরকম ছেলেকে পাওয়া দুর্লভ! মিশুকে মৈত্রীর হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে এটা ভেবেই মর্ম’র আনন্দে বুকটা ভরে গেলো!
মর্ম মৈত্রীর নাম্বারে ফোন দিয়ে বলল,
“আই লাভ ইউ ভাইয়া”
মৈত্রী হাসতে হাসতে বলল, হঠাৎ?
– কথাটা মিশুর জন্য। ওকে খুব ভালবাসিস আর খুব যত্ন নিস। অনেক পাগল একটা মেয়ে।
– হুম, ওকে ভালোবাসিস?
মর্ম থতমত খেয়ে গেলো। এভাবে বলাটা বোধহয় ঠিক হয়নি। ও একটু উত্তেজিত কণ্ঠে বলল, ভাইয়া ও খুব ভালো একটা মেয়ে। আমরা সবাই ওকে অনেক ভালবাসি।
– আমি জানি রে। মিশুর মত বাচ্চা আমি নই। যেদিন প্রথম মিশুকে সাপ ভেবে চেঁচিয়ে উঠেছিলি সেদিন ই তোর মনের ঘন্টা বেজে গেছে, সেটা একমাত্র আমিই বুঝতে পেরেছিলাম।
মর্ম অবাক হয়ে বলল,ভাইয়া!
মৈত্রী বলল,আমি তোর জন্যই অনেক বার এভোয়েড করেছি মিশুকে। আর চেয়েছিলাম ও তোর সাথেই থাকুক। কিন্তু মিশুকে এভোয়েড করার ফলটা তো দেখেছিস। ও আয়নায় ঘুষি মেরে আয়না ভেঙে হাতে কাঁচ ঢুকিয়ে একাকার অবস্থা করলো। তবুও অনেক চেষ্টা করেছিলাম রে,কিন্তু ফাইনালি…
মর্ম হাসতে হাসতে বলল, আমার ক্রেডিট টা ফেলে দিস না। আমি নিজেই মিশুকে বলেছিলাম যেন আমাকে ভালো না বাসে। কারণ ডিরেক্টর দের লাইফে সিনেমার বাইরে কিছু থাকেনা।আমাকে বিয়ে করলে ও সুখী হতোনা। ওর দরকার তোকে।
মৈত্রী হেসে বলল, হুম। আমি জানি এটাও। একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অন্তত মনের এই একটা বিষয় বুঝবে,তাইনা?
– আচ্ছা, তাহলে কংগ্রাচুলেশনস ভাইয়া!
– হুম, তোকে চুমু দিতে ইচ্ছে করছে মর্ম।
– আমাকে না, ওটা আমার হয়ে মিশুকে দিস।
– এই ফাজিল, ও কিন্তু তোর ভাবি।
– হা হা হা, তোর ভাগ্য ভালো আমি ওকে কেড়ে নেইনি।
বলতে বলতেই দুভাই হো হো করে হাসতে লাগলো। আরো কিছুক্ষণ কথা বলে মৈত্রী ফোন রাখলো।
মর্ম ফোন কেটে দিয়ে দরজা বন্ধ করতে যাবে এমন সময় দেখলো, মুগ্ধতা দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
মর্ম একটু অপ্রস্তুত বোধ করলো। এসব একান্তই ব্যক্তিগত কথা।মেয়েটা কেন এসব শুনছিলো? এই প্রথম ওর মুগ্ধতার উপর রাগ হলো।কিন্তু মুখে কিছু বললো না।
মুগ্ধতা এগিয়ে এসে বলল, নিজের ভালোবাসাকে এভাবে কেউ বড় ভাইকে দিয়ে দেয়? তাও আবার নিজে সময় দিতে পারবে না বলে?
মর্ম বেশ বিরক্ত বোধ করলো। বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠেছে ওর চেহারায়। শুধু বলল, ফিল্ম মেকার আর ডিরেক্টর রা ফিল্মের নেশাতেই ব্যস্ত। এদের সংসার ভাঙে খুব। মূল কারণ ফিল্ম নিয়ে মগ্ন থাকা আর প্রিয়জন কে সময় না দেয়া। আর মিশু কখনোই এই কষ্ট সহ্য করে আমার সাথে এক সপ্তাহের বেশি থাকতে পারতো না। মরে যেতো।
– সবার ই কি এমন হয়? কেউ কি সুখী হয়না?
– ফিল্ম লাইনের ই কাউকে বিয়ে করতে হয়। যাতে ভূল না বুঝে। তবুও তো ডিভোর্স হয়েই থাকে, দেখো না?
– সবাই তো মিথিলা কিংবা সুজানা নয় যে তাহসান, হৃদয় খানকে পেয়েও ছেড়ে যাবে।
– কি বলতে চাইছো?
– কেউ যদি সব সহ্য করেও পাশে থাকতে চায়? যদি সবসময় আপনার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেয়?
মর্ম এক পলক মুগ্ধতার দিকে তাকিয়ে বলল, সেরকম কেউ নেই। কারণ মিডিয়ার লোকদের কেউ সহজে বিশ্বাস করেনা। তবে যদি সত্যিই ওরকম কেউ আসে, শুধু এটুকু বলতে পারি, আমার সবকিছুই তার নামে লিখে দিবো, আত্মা, দেহ, মন সব।
কথাটা বলেই মর্ম দরজা লাগিয়ে দিলো।কিন্তু মুগ্ধতা রুমে গেলো না। দরজার সামনে ই বসে পড়লো ধপ করে। মর্ম দরজা বন্ধ করার আগে একবার বলতে পারতো। ঠিকাছে, বলার দরকার নেই। তবে মুগ্ধতা সত্যিই ওকে দখল করে নেবে। ও ব্যস্ত থাকুক আর যাই থাকুক, সবসময় শুধু চোখের সামনে থাকলেই হবে। মিশুর মত এত কেয়ার পাওয়ার ইচ্ছে ওর নেই। ওর শুধু মন ভরে মর্মকে দেখতে পেলেই শান্তি! এটা কি মর্মকে কখনো বুঝানো সম্ভব? একবার যদি বুঝতো মর্মটা! তবে মরেও শান্তি পেতো মুগ্ধতা! এই দুনিয়ায় ওর কেউই নেই, শুধু মর্ম আছে। এই মানুষ টা একবার কি বুঝবে?
দরজায় বসেই হেলান দিয়ে এসব ভাবতে লাগলো মুগ্ধতা। ভাবতে ভাবতে দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো।
কাজী মিশুকে কবুল বলতে বলামাত্রই মিশু একবার মৈত্রীর দিকে তাকালো। তারপর টুক করেই বলে ফেললো, কবুল।
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব হাসলেন মুখ টিপে। মেয়েদের বিয়ের সময় সাধারণত বারবার বলতে হয়, বলোমা কবুল। মেয়ের আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব সব সুদ্ধ কনেকে কবুল বলতে বলার পর তারপর কনে কবুল বলে। আর মিশু! বাহ! ভালো তো!
বিয়ের পর মোনাজাত করা হলো। এরপর খাওয়াদাওয়া সেরে মিশু সাফায়েত উল্লাহ সাহেবকে একবার জড়িয়ে ধরলো। তারপর ওর আব্বু আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। কেন কাঁদলো ও নিজেই জানেনা।
কাঁদতে কাঁদতেই চোখ মুছে হঠাৎ মৈত্রীর দিকে তাকিয়ে বলল, ১ টা বেজে গেছে। আরো কতক্ষণ এখানে বসে থাকবো? সারারাত এখানে বসে থাকলে বাসর হবে কখন?
মৈত্রীর মুখ,কান, গাল সব একদম লাল হয়ে উঠলো। শুধু যে বাবা মা বসে আছে এখানে তা নয়, মিশুর বাবা মা আছেন, মিশুর ভাইয়া আছে,খুজিন্তা, মাত্রা, খুজিন্তার বাবাও আছেন! ও লজ্জায় মাথা তুলতেই পারলো না।
মিশু এগিয়ে এসে বলল, যাবা না? নাকি তোমাকে কোলে তুলে নিয়ে যাবো?
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব ওনার স্ত্রী’র দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন।কিছুতেই হাসি চেপে রাখতে পারছেন না উনি। অনেক কষ্টে হাসি চেপে রেখেছেন। ওনার স্ত্রী ইশারায় হাসতে মানা করছেন। কিন্তু নিজেও হাসছেন। মিশুর বাবা হা করে চেয়ে আছেন মেয়ের দিকে! এতটাও পাগল মানুষ দুনিয়ায় থাকে! মেয়েটা কি কখনো বড় হবেনা? আজীবন বাচ্চাই থাকবে?
মিশু গটগট করে সিরি দিয়ে হেঁটে হেঁটে উপরে মৈত্রীর রুমে চলে গেলো। মৈত্রী মাথা নিচু করে মেঝের দিকে চেয়ে আছে। সাফায়েত উল্লাহ সাহেব বললেন, মৈত্রী বাপ এবার রুমে যা। নয়ত মিশু এসে তোকে কোলে তুলে নিয়ে যাবে।
মৈত্রী উঠে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল,আব্বু তুমিও না…
তারপর একবার মাকে জড়িয়ে ধরে মায়ের কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল,আম্মু তোমার বড়ছেলে আজ একটা মেয়ের স্বামী হয়ে গেলো। দুয়া করো যেন আজীবন সবকিছু এমনই থাকে।
মা ও ছেলের কপালে একটা চুমু দিয়ে বললেন, দুয়া করি রে বাবা।
ওনার চোখ ছলছল করছে। মৈত্রী আবারো মাকে জড়িয়ে ধরলো।তারপর মিশুর আব্বুর কাছে গিয়ে ওনাকেও জড়িয়ে ধরে বলল,আজ থেকে আপনি ও আমার বাবা। দুয়া করবেন এই ছেলের জন্য।
মৈত্রীর কথা শুনে মিশুর ভাইয়া এসে ওকে জাপটে ধরে বলল,হ্যা রে ভাই। আমার পাগলী বোনটাকে সামলে রাখিস।
মৈত্রী লাজুক ভঙ্গিতে হাসি দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
রুমে এসে দেখল মিশু আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মৈত্রী সোজা গিয়ে মিশুকে কোলে তুলে নিয়ে বলল,পাজির পা ঝাড়া কোথাকার! আমাকে কোলে তুলে নিবা তাইনা?
মিশু মৈত্রীর গলা জড়িয়ে ধরে বলল, নাহ। আমি কি তোমাকে নিতে পারি?
– তাই না? তাহলে বড়দের সামনে ওভাবে বললি কেন পাজি মেয়ে? লজ্জা করেনা একটুও?
– লজ্জার কি আছে? আব্বু আব্বুর কি বাসর হয়নি?
– চুপ পাজি মেয়ে। এসব কথা বড়দের সামনে বলতে হয়না।
– আচ্ছা আর বলবো না। এবার আমাকে কোলে নিয়েছো কেন? এখন তোমার ভয় করছে না? সবসময় ই তো আমাকে ভয় পাও।
মৈত্রী হেসে বলল,নাহ। এখন যে তুই আমার বউ।
মিশু একটু মুখ বাঁকা করে বলল, তুই তুকারি করছো কেন?
– এরকম পিচ্চি বউকে সবই বলা যায়। শুধু আপনি বলা যায়না।
– আমি পিচ্চি? আমি পিচ্চি?
– তাছাড়া?
– একটু বড়গিরি দেখাবো?
মৈত্রী হেসে বলল,দেখাও দেখি। আজ আর বাধা দিবো না, ভয় ও পাবো না।
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here