অদ্ভুত মুগ্ধতা -২ পর্ব ৪

অদ্ভুত মুগ্ধতা -২
পর্ব ৪
মিশু মনি
.
রাত বেড়ে যাচ্ছে।
এত রাতে একজন অচেনা মানুষের সাথে গাড়িতে করে যেতে হচ্ছে।তবুও একটুও ভয় হচ্ছেনা মুগ্ধতা’র। বরং মনে হচ্ছে এই পথ যদি অনন্তকাল ধরে চলতো তবে খুবই ভালো হতো।মর্ম পাশে বসে থাকলেই হবে।আর কোনো দুঃশ্চিন্তাই নেই।যে মানুষ টা এতটা ভালো আর এত উদার মনের,তার সাথে যেকোনো জায়গায় যাওয়া যায়।
মর্ম বললো,এই রাত্রিবেলা আপনি কিভাবে অতটা পথ যেতেন?
মুগ্ধতা চমকে উঠে বললো,কতদূর?
– এই যে মনিরামপুর যাবেন বলছিলেন।এতদূর একা একটা মেয়ে কিভাবে যেতেন? এই রাস্তায় তো বাসও চলেনা,আর এখন তো রাস্তা একদম ফাঁকা।কোনো গাড়িও চলছে না।
মুগ্ধতা কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো।তারপর বলল,একটা কথা বলবো কিছু মনে করবেন না তো?
মর্ম মাথা নেড়ে জিজ্ঞেস করলো, বলুন।
মুগ্ধতা অপরাধীর মত গলার স্বর নিচু করে বলল,আসলে আমি মনিরামপুর যেতাম না।
– মানে! তাহলে কোথায় যেতেন?
– আপনার সাথে যেখানে দেখা হলো,সেখান থেকে আমার বাসা মাত্র দুই মিনিটের পথ।হেটে যেতে হয়ত পাঁচ মিনিট লাগতো।
মর্ম খুবই অবাক হয়ে গেলো।সন্ধ্যেবেলা এই মেয়েকে গাড়িতে তুলেছে ও।এখন রাত অনেক বেড়ে গেছে।আর মেয়েটা এখন বলছে তার বাসা সেখানেই ছিলো! তাহলে মনিরামপুরের কথা কেন বলল?
মুগ্ধতা বলল,আসলে আপনাকে দেখে আমার এতটা ভালো লেগেছে যে আপনি জিজ্ঞেস করামাত্রই আমি বলে দিলাম মনিরামপুর।এতে করে আপনি যদি আমাকে সেখানে পৌছে দিতে চান,আপনার সাথে অনেকটা সময় থাকতে পারবো। আর আমার এটুকু বিশ্বাস ছিল যে,যতদূর ই যেতে চাই না কেন,আপনি ঠিকই নিয়ে যাবেন।
মর্ম হা করে মুগ্ধতার দিকে তাকালো।কি আবোলতাবোল বকছে এই মেয়েটা? একসাথে অনেকটা সময় থাকার জন্য কেউ এভাবে মিথ্যে বলে?
মর্ম জিজ্ঞেস করলো, তুমি এখন কার বাসায় যাবে?
– জানিনা।
– মানে! মনিরামপুরে কে থাকেন? কোথায় যাচ্ছো তুমি?
মুগ্ধতা হেসে বলল,সেখানে আমার কেউ থাকেনা।আমি এমনি ই বলেছি মনিরামপুরে যাবো।দেখি আপনি আমাকে নিয়ে যান কিনা।
মর্ম অবাক হয়ে বলল,আজব! মনিরামপুরে আপনার কেউ থাকেনা? তাহলে গিয়ে থাকবেন কোথায় এত রাতে?
– আপনার সাথে যাবো।
– ওমা! আমি যদি না নিয়ে যাই?
– আপনি সেরকম মানুষ ই নন।একটা মেয়েকে এত রাতে রাস্তায় একা ফেলে যেতেই পারেন না।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



মর্ম পড়ে গেলো মহা দুশ্চিন্তায়। এরকম অদ্ভুত মেয়ে ও জীবনে দেখেনি।একেবারে মুগ্ধ হওয়ার মত অদ্ভুত! তার নামটাও আবার নাকি মুগ্ধতা। একেবারে অদ্ভুত মুগ্ধতা!
মুগ্ধতা মুখ টিপে হাসছে আর আড়চোখে মর্মকে দেখছে।মর্ম কি বলবে বুঝতে পারছে না।এরকম মেয়ের পাল্লায় কখনো পড়েনি ও।ওর জীবনে একজন অদ্ভুত মেয়েকে দেখেছিল।সে হচ্ছে মিশু।আরেকজন অদ্ভুত মানবী হচ্ছে এই মুগ্ধতা! রাত্রিবেলা অচেনা একজন মানুষের সাথে কোথায় যাবে,কোনো বিপদ ও তো হতে পারতো। সেসব কিছুই চিন্তা না করেই হুট করে বলে দিলো মনিরামপুর যাবো। এরকম মেয়েও হয়?
মুগ্ধতা বলল,কি ভাবছেন এত? আপনার যদি আমাকে বিরক্ত মনে হয় তাহলে আমায় রাস্তায় নামিয়ে দিন।
মর্ম রেগে বলল,লোকজন হাসছিল বলে সেখান থেকে তুলে নিয়ে এসে এখন রাস্তায় ফেলে দিয়ে যাবো?
মুগ্ধতা হো হো করে হেসে উঠল। ওর বেশ মজা লাগছে।প্রথম প্রথম মর্ম’র সাথে কথা বলতে ওর ভয় ভয় লাগছিল।এত বড় একজন ফিল্ম মেকারের পাশে বসে থাকতেও কেমন যেন বোধ হচ্ছিল।কিন্তু এতটা পথ আসার পর ওকে খুবই ভালো লেগে গেছে।আর ইচ্ছে করছে সারারাত এভাবে রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে।
মর্ম বললো,কোথায় যাবেন এখন?
– চলুন না সারারাত ঘুরে বেড়াই।
কথাটা শুনেই মর্ম’র মিশুকে মনে পড়ে গেলো। ওই মেয়েটাও রাত্রিবেলা ঘুরে বেড়াতে খুবই ভালোবাসতো! মিশুর কথা ভেবে একটু আনমনা হয়ে যেতেই মুগ্ধতা বলল,কি ভাবছেন?
মর্ম চমকে গিয়ে বলল,কিছুনা।মনিরামপুরে আমি যার বাসায় উঠবো, আপনি ও সেখানেই উঠবেন।
– ওকে,আমার কোনো আপত্তি নেই।
মর্ম এবারে খেয়াল করে দেখল,মুগ্ধতার কথা বলার ধরণ,হাত নাড়ানো, প্রতিটা বাক্য উচ্চারণ,ওর হাসি,সবকিছু তেই মিশুর সাথে বেশ মিল আছে।মিশু যেমন চঞ্চল,এই মেয়েটাও তেমন চঞ্চল।তবে কি মিশুর জায়গা দখল করতে এসেছে এই মেয়েটা? কখনো ই সেটা হতে দেয়া যাবেনা।নিজের ক্যারিয়ারের স্বার্থে মিশুকে সরিয়ে দিয়েছে মর্ম।সেখানে অন্য কাউকে কিছুতেই জায়গা দেয়া যাবেনা।কথাটা ভেবেই মনটাকে শক্ত করে নিলো মর্ম।

মিশু দরজা বন্ধ করে দিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে।মৈত্রীর কোনো সাড়াশব্দই কানে আসছে না।বেচারা বজ্রপাতে মরলো না তো?
মিশু এক লাফে উঠে বসলো বিছানার উপর।মৈত্রী মরে গেলে ওর কি হবে? কিন্তু এতকিছু ভাবনা থাকতে মরার কথাটাই কেন মনে এলো? তাহলে কি সত্যিই ও মরে গেলো?
মিশু ছুটে এসে দরজা খুলে বাইরে বেড়িয়ে আসলো।মৈত্রী বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছে।মিশু এগিয়ে এসে বলল,তুমি মরোনি?
এরকম প্রশ্ন সম্পূর্ণ জীবনে প্রথমবার শুনলো মৈত্রী।আচমকা কেউ এমন প্রশ্ন করলে অবাক হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মৈত্রী তেমন একটা অবাক হলোনা।ও খুব সহজে অবাক হয়না।জগতের সবকিছু ই ওর কাছে স্বাভাবিক। ও বেশ স্বাভাবিক গলাতেই বলল,না তো।আমার মরার কথা ছিলো নাকি?
মিশু লজ্জা পেয়ে বললো,না মানে তোমার কোনো সাড়াশব্দ কানে আসছিলো না।তাই ভাবলাম মরে গেলে নাকি?
– মরার চিন্তা কেন এলো? আমার মরণ টাই চাও নাকি?
মিশু চেঁচিয়ে বলল,না না।মরণ চাইবো কেন? আসলে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে তো।ভাবলাম বজ্রপাতে মরে যাও যদি।
মৈত্রী ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো ,বজ্রপাত হয়েছিলো? কখন হলো? আমিতো কিছুই শুনতে পাইনি।
মিশু লজ্জা পেয়ে মুখ টিপে হাসলো।সত্যিই তো,বজ্রপাত হলে তো ও শব্দ শুনতে পেতো। অযথাই ওর মাথায় এসব আজগুবি কথাবার্তা যে কেন আসে!
মৈত্রী বলল,খুব বৃষ্টি হচ্ছে।যাও গিয়ে ঘুমাও।
– বৃষ্টি হলে বুঝি ঘুমাতে হয়?
– তাহলে কি করতে হয়?
– নাচ গান করতে হয়।
মৈত্রী হেসে বলল,নাচ গান করতে হয়? কি বলো?
মিশু মাথা ঝাঁকিয়ে বললো,হ্যা হ্যা।নাচ গান করতে হয়।সিনেমায় দেখোনা,বৃষ্টি এলেই নায়ক নায়িকা নাচ গান করে।একে অপরকে ধরে দুলিয়ে দুলিয়ে নাচে,তা তা থই থই করে নাচে,ধেইধেই করে নাচে,এলুয়া ঢেলুয়া নাচ নাচে।
মৈত্রী হো হো করে হেসে উঠল।মিশুর কি আবারো মাথায় গণ্ডগোল হয়েছে নাকি? ওকে কিছুক্ষণ একা রাখলেই ভুলভাল কথা বলতে শুরু করে।সবসময় ওর সাথে কথায় ব্যস্ত থাকলে বেশ ভালো থাকে।কিন্তু ওর ভুলভাল কথাগুলোই যে বড্ড আনন্দ দেয়!
মিশু বলল,একটা গান শুনোনি? এই বৃষ্টিভেজা রাতে চলে যেওনা….
মিশুর গান শুনে আবারো শব্দ করে হাসলো মৈত্রী। তারপর বলল,তাহলে আমি গান গাই আর তুমি নাচো?
– না,আমি গান গাই আর তুমি নাচো।
মৈত্রী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো,কোনো মুভিতে দেখেছো নায়িকা গান গায় আর নায়ক নাচে?
– দেখিনি তো।আমরাই প্রথম সেরকম একটা সিনেমা বানাই না?
– সিরিয়াসলি? সে তো বেশ ভালোই হয়।তুমি গাইবে,আর আমি ধেইধেই করে নাচবো।
– হ্যা।তাহলে একটা গল্প বানিয়ে ফেলি কি বলো?
মৈত্রী মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,হ্যা হ্যা।লিখে ফেলো, তা গল্পের নাম হবে কি?
মিশু একটু ভেবে বলল,গল্পের নাম হবে “অদ্ভুত মুগ্ধতা ”
নামটা বেশ ভালো লাগলো মৈত্রীর।এ জগতের সবকিছু তেই অদ্ভুত মুগ্ধতা মিশে আছে।এই নামে একটা সিনেমা বানালে খুব যে খারাপ হবে,তা কিন্তু না।মর্মকে আইডিয়া দিতে হবে এই নামে একটা ফিল্ম বানানোর জন্য।
মিশু বললো,কি ভাবছো শুনি?
– ভালো হবে সেটাই ভাবছি।
মিশু একটু চুপ করে বাইরে বৃষ্টির দিকে তাকালো।তারপর বললো,আমাকে সেদিনের মত ঘুম পাড়িয়ে দিবে?
মৈত্রী এক পলক মিশুর দিকে তাকালো।মেয়েটার কখন কি ইচ্ছে হয় কিছুই বোঝা যায় না।এখুনি নাচতে চাইলো, এখুনি আবার ঘুমাতে চাইছে।আজব একটা মেয়ে!
মিশু ঘরে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লো।মৈত্রী ওর শিয়রে বসে আস্তে আস্তে চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।মৈত্রী গল্প বলছে আর মিশু শুনছে।শুনতে শুনতে একসময় ঘুমিয়েও পড়লো।ওর ঘুমন্ত মুখের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে এক ধরণের মায়া অনুভব করলো মৈত্রী।এই মেয়েটা কদিন আগেও একটা কঠিন অসুখে ভুগেছে,কত কষ্ট এই মেয়েটার!
কিছুক্ষণ ওর শিয়রে বসে থেকে পাশের রুমে এসে শুয়ে পড়লো মৈত্রী।চুপচাপ এটা ওটা ভাবতে ভাবতে একসময় ঘুমিয়েও পড়লো।

মনিরামপুরে রিকু ভাইয়ের বাসায় এসে পৌছল মর্ম।এত রাতে সাথে একজন মেয়েকে দেখে বেশ অবাক হলো রিকু ভাই।কিন্তু এ ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করলো না।ওদেরকে ভিতরে নিয়ে গিয়ে নাস্তার ব্যবস্থা করলো।
নাস্তা খাওয়া শেষ হলে মর্ম মুগ্ধতাকে একটা রুম দেখিয়ে দিয়ে বলল,আপনি ও ঘরে ঘুমিয়ে পড়ুন।
– আর আপনি?
– আমি নিশ্চয় ই আপনার সাথে ঘুমাবো না।আমি আমার বন্ধুর সাথে ঘুমাতে যাচ্ছি।আপনি আর কথা না বাড়িয়ে গিয়ে ঘুমান।
– থ্যাংকস।
মর্ম আর কথা না বাড়িয়ে পাশের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো। রিকু এসে ওর পাশে বসে বলল,কিরে মর্ম। জিএফ নাকি?
– আরে নাহ।রাস্তায় পড়ে ছিলো,তাই তুলে নিয়ে আসলাম।
রিকু হেসে বলল,সুন্দরী মেয়েও আজকাল রাস্তায় পড়ে থাকে জানা ছিলো না।
মর্মও হাসলো এ কথা শুনে।তারপর ফিল্ম নিয়ে কিছু কথা বলে অনেক পরিকল্পনা করে একসময় ঘুমিয়ে পড়লো।
চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here